এ কেমন ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
537

#এ_কেমন_ভালোবাসা
পর্ব-০৪
লেখিকা-#খেয়া

সকাল থেকেই মামনি রান্নাবান্না নিয়ে খুব ব্যস্ত।আংকেল তো বন্ধু আসবে বলে পুরো বাজার উঠিয়ে এনেছে।
আমিও মামনিকে টুকটাক রান্নার কাজে সাহায্য করছিলাম।
রুদ্ধ ভাইয়া হাসপাতালে গেছেন।আংকেলেও একটু আগেই গেছেন।
আমি আর মামনি সবজি কাটছিলাম তখনই রুদ্ধ ভাইয়ার ফোন এলো।উনি নাকি কী কাগজ রেখে গেছে।দীপ্তকে দিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে বললেন।
মামনি আমাকে বলল

—- রাত মা,রুদ্ধর আলমারিতে একটা নীল ফাইল আছে।একটু নিয়ে আসবি।

—- হুম।নিয়ে আসছি।

আমি রুদ্ধ ভাইয়ার ঘরে এসে আলমারি খুলতেই একটা লাল ওড়না চেখে পড়ল।এটা তে আমার ওড়না।এটা আমি কাল দীপ্তকে দিয়েছিলাম।কিন্তু এটা রুদ্ধ ভাইয়ার কাছে কেন।তাও আবার এত যত্ন করে তুলে রেখেছে।
আমি বেশি কিছু না ভেবে ফাইলটা নিয়ে দীপ্তর রুমে গেলাম।
গিয়ে দেখি মহারাজ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে আর নিজেও গুনগুন করে গান গাইছে।

—- এই যে, মিস্টার।

আমায় দেখে কান থেকে হেডফোন খুলে বলল
—- কিছু বলবে?

—- আপনার খারাপ লাগছেনা, আমি যে মেডিকেলে চান্স পেলেন না।

—- শোনো মেয়ে,ওসব ডাক্তার হওয়ার শখ আমার কোনো কালেই ছিলনা।শুধু বাবার কথায় পরীক্ষাটা দিয়েছি।তাছাড়া আমাদের বাড়িতে দুটো ডাক্তারতো আছেই।

—- দুটো ডাক্তার মানে?

—- কেন আমার ভাই আর ভাবীও তো একদিন ডাক্তার হবেই, তাইনা।

—- ভাবীও ডাক্তার হবে মানে?

—- না, মা মানে,,,ভাইয়া যখন ডাক্তার তখন তো সে বউ হিসেবে কোনো ডাক্তারকেই চাইবে।বাই দ্যা ওয়ে তুমি এখানে কেন এসেছিলে।

—- ওহ। এই যে ফাইলটা রুদ্ধ ভাইয়া আপনাকে হসপিটালে দিয়ে আসতে বলেছে।

—- আচ্ছা দাও।

—- হুম,নিন।

—————-

বাবা মা এলো এগারোটার দিকে।তারা আজ থেকে কাল যাবে।

আংকেল আর বাবা তে এসে থেকেই গল্পে মজেছেন।আমি মামনি আর মা দুপুরের খাবার সাজাচ্ছিলাম টেবিলে। তখনই দরজায় বেল বাজলে আমি গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম।
রুদ্ধ ভাইয়া ছিলেন দরজায়।দরজা খুলে দেওয়া মাত্রই উনি ভেতরে ঢুকে গেলেন।কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগছিল তাকে।

দুপুরে সবাই একসাথে খেলাম।কিন্তু রুদ্ধ ভাইয়া তেমন কিছুই খেলেন না।মামনি সবাইকে রেস্ট করতে বললেও আংকেল বললেল তার নাকি কী জরুরী কথা আছে।

সবাই একসাথে বসে আছি।নিরবতা ভেঙে আংকেল বলে উঠলেন

—- রাহাত ( আমার বাবা) তোর মেয়েকে যে এতদিন আমাদের বাড়িতে থাকতে দিলাম,খেতে দিলাম তার বদলে তো আমাদের ও কিছু পাওনা থাকে।

আংকেলের এমন কথায় আমি, মা, বাবা,রুদ্ধ ভাইয়া চরম অবাক হলেও বাকি সবাই নরমাল ছিল।বাবা আংকেলকে উদ্দেশ্য করে বলল

—- বল তোর কী চায়।তোরা এতদিন আমার মেয়ের খেয়াল রেখেছিস, তোরা যা চাইবি তাই দিবো।

—- যদি তোর মেয়েটাকেই চায়।

আংকেলের কথা শুনে আমি অবাক হলেও বাবা উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলল

—-আমার মেয়েকে তো অনেক আগেই তোদের দিয়ে দিয়েছি।

আমাকে অবাক হতে দেখে আংকেল আমাকে তার কাছে ডেকে বসিয়ে বললেন

—- রুদ্ধরর দিকে একবার তাকা।তুই শুধু কাল চলে যাবি শুনে নিজের কী হাল করেছে।তুই যদি চলে যেতি তাহলে কী হতো, বল।

—- আজব তো! আমি চলে গেলে রুদ্ধ ভাইয়ার কী হবে।

—- তুই এখনো পিচ্ছি থেকে গেলি।আমার ছেলেটা যে তোকে কতটা ভালোবাসে সেটা তুই এখনো বুঝলিনা।

আংকেলের কথায় আমি একদম বিষম খেলাম।মামনি তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে এসে আমায় খায়িয়ে দিলো।রুদ্ধ ভাইয়া কী সত্যি আমায় ভালোবাসে?

আমি আর ওখানে না থেকে ঘরে চলে এলাম।
ওখানে পরে আর কী কথা হয়েছে সেটা আর আমার শোনা হয়নি।
সন্ধ্যাবেলা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।পাশে তাকিয়ে দেখি দীপ্তর বেলকনিতে রুদ্ধ ভাইয়া ছিলেন।
কৌতুহলি মন নিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলাম

—- আমাকে সত্যি ভালোবাসেন?

রুদ্ধ ভাইয়া খানিক চুপ থেকে বললেন

—- হুম।

—- কতটা ভালোবাসেন?

—- জানিনা

—- তাহলে আমি যেদিন আপনাকে বলেছিলাম ভালোবাসি তখন না করে ছিলেন কেন?

—- তখন যদি হ্যা বলতাম তাহলে তুমি এসব নিয়েই পড়ে থাকতে।তখন মেডিকেলে চান্স কেন এডমিশন টেস্টে পাশ মার্ক ও পেতে না।

—- কীহহহ,,,

—- ঠিকই বলেছি আমি।তুমি যে শুধু জেদের বশে এত ভালো পরীক্ষা দিয়েছো সেটা আমি জানি।

—- আমি চলে গেলে কী আপনার মন খারাপ হবে।

—- জানোতো রাতপাখি,রোজ রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে তোমায় দেখা, তোমাকে কোচিংয়ে ছাড়তে যাওয়া,তোমার দুষ্টুমিতে রাগ দেখানো আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।মানুষ অভ্যাসের দাস।আমিও তাই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবনা।
তোমার ঐ হাসি দিয়ে যে আমার দিনশুরু হয়।তোমাকে না দেখে দিন শুরু হলে ঐ দিনটা আমার বড্ড খারাপ যায়।
আচ্ছা তুমি কী কালোযাদু জানো বলোতো?

—- এসব কী কথা।

—- তাহলে আমাকে তোমার মাঝে বন্দি করলে কীভাবে।

আমি রুদ্ধ ভাইয়ার কথার কোনো উত্তর না দিয়েই চলে এলাম।আসলে উনি রোমান্টিক মুডে কথাগুলো বলছিলেন নাকি উনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে সেটাই বুঝতে পারিনি এখনো।
ভাবলাম মামনি আর আম্মুর সাথে গিয়ে গল্প করে আসি।আবার দুপুরের কথাটা মনে পড়তেই লজ্জায় গেলাম না।

শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছিলাম তখনই দীপ্ত এলো আমার রুমে।বলল

—- তোমার কী ব্যাগ গোছানো হয়ে গেছে। নাকি আমি গুছিয়ে দিবো,,,ভাবীইই,,

—- কী সমস্যা।এখন আবার কী চায়।

—- আরেকটা ওড়না।কালকেরটা তো ভাইয়া নিয়ে নিলো এখন ক্যান্ডি আমাকে জ্বালিয়ে মারছে।

—- তোমার কী মনে হয়, আমার ওড়নার ফ্যাক্টরী আছে।

—- এখন একটা দিয়ে দাও। পরে ভাইয়ার টাকায় দশটা কিনে নিও।দাও না,, ভাবী।

—- এই ছেলে আমি তোমার কোন জন্মের ভাবী লাগি।

—- দেখো,,আগের জন্মের কথা আমার মনে নেই। ভবিষ্যতের কথা আমি জানিনা। সো তুমি আমার এজন্মের ভাবী লাগো।গট ইট।

আমি কোনো কথা না বলে দীপ্তকে আরেকটা ওড়না দিয়ে দিলাম।

রাতেও সবাই একসাথে খেলাম।টেবিলে বসে একবারও রুদ্ধ ভাইয়ার দিকে তাকায়নি।
কাল সকাল সকাল আমরা বেরিয়ে পড়বো।
খাওয়ার পর খানিকক্ষণ গল্প করে সবাই ঘুমাতে চলে গেলো।

——————-

এখন সকাল এগারোটা বাজে।আমি বাবা- মায়ের সাথে বাড়ি চলে এসেছি।এতদিন নিজের গ্রামে এসে মনটা ভালো হয়ে গেলো।তবে আসার আগে একবারও রুদ্ধ ভাইয়ার সাথে দেখা হয়নি বলে মনটা খারাপ।উনার নাকি কাজ ছিল তাই সকালেই চলে গেছেন।
আজও কী উনি একটাবার আমার সাথে দেখা করতে পারতেন না।

অনেকদিন পর বাসায় এসেছি বলে কাজিনদের সাথে আড্ডা দিয়েই দিন পাড় করে দিলাম।রাতে আম্মু আমার পছন্দের সব খাবার রান্না করেছিল।অনেকদিন পর মেয়ে বাড়ি এসেছে বলে বাবা- মায়ের যেন আনন্দ ধরছেনা।

আজ জার্নি করে এসেছি তাই খুব ক্লান্ত থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম।মাঝরাতে ফোন বাজার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো।রুদ্ধ ভাইয়ার ২২৩ টা মিসকল দেখে খুব অবাক হলাম।
এখন রাত একটা বাজে।তারমানে উনি অনেকক্ষন ধরে কল করছেন আমায়।আমিও দেরি না করে কলটা ধরলাম।

—- রাত! কী হয়েছে তোমার।কখন থেকে ফোন করছি।ফোন ধরোনা কেন? কী করছিলে বলোতো।

—- মানেটা কী? রাত একটার সময় মানুষ কী করে হ্যা।ঘুমাচ্ছিলাম আমি।

—- ওহ,সরি।ফোন ধরছিলে না বলে টেনশন হচ্ছিল।আচ্ছা তুমি ঘুমাও। আমি সকালে ফোন দিব।

—- হুম।

রুদ্ধ ভাইয়া ফোনটা রেখে দিলেন।আমিও আর জিঙ্গেস করলাম না এতবার কল করার কারণ।এখন কিছু বললেও আমার মাথায় ঢুকতোনা।আমার এখন প্রচুর ঘুম দরকার।

———————

সকালে একটু দেরিতেই ঘুম থেকে উঠলাম।রুম থেকে বেরিয়েই দেখলাম বাড়িতে বেশ তোড়জোড় চলছে।মেহমান আসবে হয়ত।

আমি আবার রুমে চলে গেলাম।একটু পর আমার কাজিন মাহি দুটো শাড়ি নিয়ে গিয়ে আমার সামনে রেখে বলল

—- কোনটা সুন্দর বল।তুই বরং আজ লালটা পড়।খুব সুন্দর লাগবে তোকে।

—- আমি হঠাৎ শাড়ি পড়তে যাবো কেন

—-তুই জানিস না আজ তোকে দেখতে আসছে।সব ঠিকঠাক থাকলে খুব দ্রুতই বিয়েটা দিয়ে দিবে।

—- কীহ।আমায় দেখতে আসছে আর আমি কিছু জানি না।আমাকে আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।

আমি রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম আম্মু খুব বিজি।আমার দুই ফুফুও সাথে আছে।আমি আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম

—- এসব কী, আম্মু। তোমরা আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো।এত কম বয়সে কেউ বিয়ে করে।

—- আমার তো ১৭ বছরে বিয়ে হয়েছিল।

—- আমার এখনো পড়াশোনা বাকি।তুমি বলো আমার কী বিয়ের বয়স হয়েছে?

—- বিয়ের বয়স হয়নি মানে।১৮ বছর তো হয়ে তোর।এখন বিয়ে দিলে কোনো সমস্যা হবেনা।

—- আজব তো! আজ আঠারে হলে কী কালই বিয়ে দিয়ে দিতে হবে।আমি কিছুতেই এবিয়ে করব না।তুমি বাবাকে বলো , ওদের না করো দিতে।

—- সম্ভব না।তোর বাবা ওদের কথা দিয়েছে।আর তোর বাবা যে কথার খেলাপ করেনা সেটা তুই জানিস।

—-কিন্তু মা,,,

—- কথা না বলে কাজে হেল্প কর নয়তো এখান থেকে যা।

আমি রেগে চলে এলাম ওখান থেকে।আচ্ছা বাবা এমন কেন করল? বাবা তো রুদ্ধ ভাইয়ার ব্যাপারে সব জানে।বাবার কী রুদ্ধ ভাইয়াকে পছন্দ হয়নি তাই এমন করল নাকি,,,,,

( চলবে)