ওহে প্রিয় পর্ব-০৬

0
1620

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৬

পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেলো আমার। আর কতো? শেষে কিনা আরো একটা নিকৃষ্ট লোকের হাতে পড়েছিলাম আমি ? শুধু তাই নয় আরো এক কঠিন সত্যের মুখোমুখিও যে হলাম। হায় পৃথিবী, হায় জীবন। এরই নাম জীবন? নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি৷ জিসানের বলা কথাগুলো আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলো সে সময়৷ আমাকে একদম ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো কিন্তু হ্যাভেনকে করে তুলেছিলো ভয়ংকর এক হিংস্র মানব৷ ওর সে ভয়ানক রূপ দেখে আমি আরো স্তব্ধ হয়ে যাই। কয়েকজন মিলে জিসানকে মাটিতে ফেলে দেয়। হ্যাভেন ক্ষিপ্ত হয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে ওকে। আহত গলায় জিসান বলে ওঠে,

-‘ বাঁচতে পারবি না কেউই। অনেক বড় দাম দিতে হবে তোদের৷ তোদের মৃত্যু হবে খুবই নৃশংস’।

কথা শেষ করতে না করতেই হ্যাভেন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে ওর জননেন্দ্রিয়তে একের পর এক আঘাত করতে থাকে আর বলে,

-‘ তাঁর পূর্বেই খুবই নৃশংস ঘটনা ঘটবে তোর সাথে। কিন্তু এ ঘটনা কারো সম্মুখে উচ্চারণও করতে পারবি না৷ দিন পেড়িয়ে তোর রাত চলে এসেছে জিসান আর আমার এসেছে রাত পেড়িয়ে দিন। এমপির ছেলে হয়ে এমন জঘন্য কাজ কি করে করতে পারলি তুই? ঘরে বউ রেখে অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিস? আজকে এখানে যা ঘটবে তা যদি প্রকাশিত হয় তাহলে মনে রাখিস তোদের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটবে এখানেই। সেই সাথে তোর অবৈধ সম্পর্কের বৈধতা তকমা দেওয়া সম্পর্কেরও বিনাশ হবে ‘।

জিসান আর্তনাদ করতে থাকে। হ্যাভেন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

-‘ তোর মতো বেঈমানের বাচ্চা কে একবারে শেষ না করে ধীরে ধীরে শেষ করা উচিত। আজকের পর তোকে দিয়ে তোর বউয়ের সব মিটলেও দৈহিক চাহিদা কোনদিন মিটবে না। দিনের পর দিন তোর বউয়ের চোখে স্পষ্ট দেখতে পারবি তোর অক্ষমতা ‘ বলেই পাশের ছেলেদের দিকে তাকালো ওদের মধ্যে একজন সঙ্গে সঙ্গে রড এগিয়ে দিলো। হ্যাভেন হোহো করে হাসতে হাসতে জিসানের জননেন্দ্রিয়তে রড দিয়ে আঘাত করলো। সাথে সাথে ভয়ানকভাবে ছটফট আর আর্তচিৎকার করতে শুরু করলো জিসান ।
______________
পুরো রুমে বিদঘুটে অন্ধকার ছিলো। দূর্বল শরীর নিয়ে ওঠে বসি আমি। হাত দিয়ে আশেপাশে স্পর্শ করতেই বুঝি মেঝেতে শুয়ে ছিলাম। মাথা চেপে ধরে মনে করতে থাকি সবটা। হ্যাঁ সেই নির্মম দৃশ্য টা দেখামাএই সেন্স হারিয়ে ফেলি আমি। সেন্স ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করি চারিদিকে বিদঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি রুমে। ভয়ে হাত,পা কাঁপতে থাকে। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝড়তে থাকে। বসা থেকে ওঠে দু হাত সামনে রেখে অন্ধের মতো দরজা খুঁজতে থাকি। অল্প আওয়াজে বলতে থাকি -‘কেউ আছো ‘।

এগুতে এগুতে দেয়ালে দুহাত আটকে যায়। বুঝতে পারি ওদিকটায় দরজা নেই। আবারো দরজা খুঁজতে থাকি সেসময়ই পুরো রুমে আলোর ঝলকানি দেয়। চমকে গিয়ে রুমে নজর বুলাতেই দেখতে পাই হ্যাভেন এক হাঁটু ভাজ করে তাঁর ওপর এক হাত রেখে আরেক হাঁটু মেঝেতে মেলে দিয়ে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। ওনার ঠিক পাশেই সেই রডটা রাখা। যা দেখে ভয়ে আমার শরীর অসার হয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে পুরো রুম দেখে দরজা দেখেই পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনা তাঁর আগেই হ্যাভেন আমাকে একটান দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। পেট বরাবর সাজোরে এক লাথি মারে। যার ফলে ছিটকে দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে মেঝেতেই পড়ে যাই। ব্যাথায় কুঁকাতে কুঁকাতে মা গো বলে আর্তনাদ করতে থাকি।

আমার সেই আর্তনাদে হ্যাভেন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে৷ আশে পাশে হিংস্র ভাবে তাকিয়ে রডটা হাতে তুলে নেয়। আমার দিকে তেড়ে আসতেই আমি ভয়ে চোখ, মুখ খিঁচে আল্লাহ বলে চিৎকার করে ওঠি। থেমে যায় হ্যাভেন, ওনার হাত থেকে রডটা পড়ে যায়। পরোক্ষণেই আবারো তেড়ে এসে চুলের মুঠি ধরে বলে,

-‘ পরপুরুষের স্বাদ নিতে মন চায় খুব? বল খুব শখ জেগেছে পরপুরুষের স্বাদ নেওয়ার’?

আমি আর সহ্য করতে পারিনা৷ চিৎকার করে বলতে থাকি,

-‘ বিশ্বাস করুন আমি আমার বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম। আপনার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পালিয়ে যাচ্ছিলাম অন্য কোন মতলব ছিলো না ‘।

কথাটা শুনে আরো ক্ষেপে যায় ওনি উন্মাদের মতো আবারো রডটা হাতে নেয়। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় আমার। বাঁচার জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ওঠে দাঁড়াই দৌড়ে দরজা খুলতে যেতেই আমার শাড়ির আঁচল টেনে সম্পূর্ণ শাড়িই নিয়ে নেয় ওনি৷ দরজার সিটকেরিতে হাত দেওয়ার আগেই পিছন থেকে শাড়ি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে হিংস্র গলায় বলে,

-‘ আমার থেকে রেহাই এ জীবনে আর পাওয়া হবে না এক মৃত্যু ছাড়া। তাই মৃত্যুকেই বরণ করে নে ‘। বলেই সর্বশক্তি দিয়ে শাড়ি পেঁচিয়ে গলা চিপে ধরে৷ পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে আমার। দু পা মেঝেতে ধাপড়াধাপড়ি করতে থাকি। দুহাত দিয়ে ওনার মুখে, গলায় খামচে ধরি। শেষ মূহুর্তে মা, বাবা,বোনের মুখটা স্মরণ করতেই আচমকাই ছেড়ে দেয় আমাকে৷ আমার শরীরটা নেতিয়ে পড়ে থাকে মেঝেতে। নিভু নিভু চোখে দেখতে পাই হ্যাভেনের রক্তিম দুটো চোখ। জ্ঞান হারানোর পূর্বে শুনতে পাই ওনার বলা কিছু কথা,

-‘ তোদের মতো মেয়ে জাতিকে ভালোবাসার মতো ভুল আর এই হ্যাভেন করবে না, করবে না, করবে না’ বলেই চিৎকার করতে থাকে।
.
যখন জ্ঞান ফেরে আমি মেঝের এক পাশে পড়ে ছিলাম। একটু দূরে আমার শাড়িটা পড়ে আছে। ওঠে বসলাম। হামাগুড়ি দিতে গিয়েও দিতে পারলামনা। তখনকার লাথির রেশ মারাত্মক ভাবে রয়ে গেছে।
মা বলে কুঁকিয়ে ওঠলাম। তলপেট চেপে ধরে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলাম। সে সময় অনুভব করলাম আমি খুব বেশীদিন বাঁচবো না৷ হ্যাভেনের হাতেই কোন একদিন কোন এক সময় মৃত্যু হবে আমার৷ ঐ মানুষ টা খুবই ভয়ানক খুবই ভয়াবহ তাঁর আচরণ গুলো। ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেলাম। সে মূহুর্তেই চমকে গেলাম আমি। আমি কোথায় আছি? হ্যাভেন আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে ভাবতেই বুকের ভিতর কি যেনো কামড়ে ধরলো। সত্যি মৃত্যু দিবে আমায় হ্যাভেন? এ জীবনে আর মা কে মা বাবাকে বাবা বলে ডাকা হবে না? একটি বার মায়ের বুকে মাথা রাখা হবে না? ছোট বোনকে পরম স্নেহে বুকে টেনে নেওয়া কি এ জীবনে আর হবে না? একটি মেয়ের জীবন কি করে এতোটা সস্তা হতে পারে? নিজের জীবনের প্রতি ঘৃণা ধরে গেলো ভীষণ।

রুমে প্রবেশ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো হ্যাভেন। ওনাকে দেখে ভয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিলাম। পুরো রুমে একটি হুইলচেয়ার আর মোড়া ছাড়া তৃতীয় কোন বস্তু ছিলো না। হ্যাভেন ঢুলো ঢুলো শরীরে এগুতে লাগলো। আমি ভয়ে ভয়ে তাকালাম ওনার দিকে। ওনার হাতে ছিলো মদের বোতল। অর্ধেক বোতল মদ বেশ শব্দ করেই মেঝেতে রাখলো।

বিয়ের পর থেকে কখনো ওনাকে সিগারেট খেতেও দেখিনি। যতোটুকু শুনেছি ওনার সিগারেট বা মদের নেশা নেই। সেদিনই প্রথম নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখি ওনাকে৷ ঘাড় বাঁকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে এগুতে থাকে আমার দিকে। আমি ভয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠি। ওনি হাঁটু গেড়ে বসে একহাত আগাতে থাকলো আমার দিকে আমি দুহাত জোর করে কাঁদতে লাগলাম। নেশাবিহীন যে মানুষ টা উন্মাদের মতো আঘাত করেছে আমাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সে ঠিক কি করবে ভাবতেই আমার শরীর অবশ হয়ে আসছিলো। আমার অসহায়ত্ব বোধ হয় একটু কড়া নাড়লো ওনার মনে। হাত থেমে গেলো ওনার। চুপচাপ নিঃশব্দে আমার পাশে দেয়ালে পিঠ,মাথা ঠেকিয়ে পা দুটো মেলে দিয়ে বসলো।
.
প্রায় ঘন্টাখানেক চুপ ছিলেন ওনি। আমিও প্রাণ হাতে নিয়ে দুহাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে ছিলাম ওনার পাশে। নিরবতা ভেঙে ওনি বললেন,

-‘ আমি কিন্তু মাতাল নই ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই ‘।

চমকে তাকালাম ওনার দিকে। গা ভাসিয়ে মদ্য পান করে শরীর ছেড়ে বসে বলছে, আমি কিন্তু মাতাল নই? এর থেকে বড় মাতাল আর কে হতে পারে?

আমার দৃষ্টি তে দৃষ্টি ফেললেন ওনি। আমি চোখ সড়িয়ে নিলাম। আড় চোখে এক পলক তাকাতেই আঁতকে ওঠলাম। ওনি আমার দিকে মায়াবী এক দৃষ্টি ফেলে মৃদু হাসছে। কি অদ্ভুত সেই দৃষ্টি, কি অদ্ভুত সেই হাসি। এতোদিন কোথায় ছিলো এই দৃষ্টি এই হাসি? চোখ বুজে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো তাকালাম ওনার দিকে। ওনি বসা থেকে মেঝেতেই হাত, পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। পড়নে ধূসর রঙের শর্ট প্যান্ট সাদা রঙের টিশার্ট। বিয়ের অনেকগুলো দিন পর সেদিনই প্রথম খুব ভালো করে খেয়াল করলাম ওনাকে। ঘমঘন শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। কি অস্থিরতা তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসে এই অস্থিরতার কারণ যে শুধুই আমি তা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।

চোখ বুজে ছিলেন ওনি। আমি ভয় ভয় চোখে একটু পর পর ওনাকে দেখছিলাম। ফ্যানের বাতাসে ওনার কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো মৃদু উড়ছিলো। অশান্ত মানুষ টা হঠাৎই কেমন শান্ত হয়ে পড়ে আছে৷ ঘড়িতে সময় তখন ক’টা জানা ছিলো না আমার। তবে রাত ছিলো, হয়তো গভীর রাত। অনেকটা সময় ওনার দিকে চেয়ে থাকি আমি। ওনি মোটেই কুৎসিত নয় শুধু গায়ের রঙ সাদা হলেই তাকে সুদর্শন পুরুষ উপাধি দিতে হবে এমন তো নয়৷ ওনিও সুদর্শন লম্বাচওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী তিনি। শুধু মনটাই ওনার কুৎসিত যার ফলে ওনার সৌন্দর্য গুলো চাপা পড়ে গেছে। আমি যখন ওনাকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে ব্যাস্ত ওনি তখন চোখ মেলে তাকালেন আমার দিকে৷ ওনার চোখে চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সড়িয়ে নিলাম। ওনি শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় আমাকে ওনার কাছে ডাকলেন। আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। আমার সে ভয় দেখে ওনি খুব শান্ত গলায় বললেন,

-‘ আই লাইক ইট সুন্দরী ‘। বলেই আবারো ইশারা করলেন ওনার দিকে যেতে।

ভয়ে ভয়ে আমি ওনার দিকে সড়ে বসতেই ওনি একটানে ওনার বুকে ফেললেন। আমার মাথা গিয়ে ঠেকলো ওনার বুকে। ওনি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়৷ কি জানি তখন কি হলো আমার হুহু করে কেঁদে ওঠলাম। আমার কান্নায় ওনি শান্ত ভঙ্গিতেই বললেন,

-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট সুন্দরী ‘।

আমি কান্নার শব্দ কমিয়ে ফুপাতে লাগলাম। ওনি ধরা গলায় বললেন,

-‘ কিছু নারী ভালোবাসার পূজারি হয়, কিছু নারী অর্থ, সম্পদের পূজারি হয়,কিছু নারী হয় বহু পুরুষে আসক্ত। তুমি কোনটি সুন্দরী’?

চুপ হয়েই রইলাম কিছু বলতে পারলাম না শুধু অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ওনার বুক ভাসিয়ে দিচ্ছিলাম। ওনি লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

-‘ নারী মানে শুধু রূপবতী নয় নারী মানে ধ্বংসময়ী। নারী মানে শুধু মায়াবতী নয় নারী মানে রহস্যময়ী। নারীর এক নাম যদি হয় সৃষ্টিকুশলী তাহলে আরেক নাম হবে বিনাশকারী। নারী যেমন মা হয়ে একজন সন্তান জন্ম দান করে সুন্দর একটি জীবন উপহার দিতে পারে, সুন্দর একটি পরিবার গড়ে তুলতে পারে তেমনি নারী একজন মায়ের সন্তান কে ছিনিয়ে নিয়ে একটি পরিবার ধ্বংস করে দিতেও পারে। পৃথিবীতে নারীদের মতো সেরা অভিনয় বোধ হয় আর কোন প্রানীই করতে পারে না৷ নারী যখন মা হয় নিজে অভুক্ত থেকে ভুক্ত থাকার অভিনয় করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়। সেই নারীই আবার দিনের পর দিন শাশুড়ী কে অভুক্ত রেখে স্বামীর চোখে হয়ে ওঠে আদর্শ বউ। তাঁদের সেই নিখুঁত অভিনয় ধরার ক্ষমতা সব পুরুষের থাকে না। নারী মানেই সেরা অভিনেত্রী, সেই নারী তুমি। অভিনয় হবে খুব নিখুঁত অভিনয় ভালোবাসার অভিনয়। পারবে তুমি পারতে হবে তোমাকে। নিজ স্বামী কে ভালোবাসার অভিনয় করাটা খুব বেশী কঠিন হবে না ‘।
.
ওনার কথা শুনতে শুনতে কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি৷ যখন জেগে ওঠি নিজেকে আবিষ্কার করি হুইলচেয়ার বাঁধা অবস্থায়। হাত, পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছিলেন ওনি আমায়। যখন ওনি ফিরলেন তখন দূর্বল চোখে চেয়ে দূর্বল গলায় প্রশ্ন করলাম,

-‘ এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেনো আমায় ‘?

-‘ অন্যায়ের শাস্তি তো শেষ হয়নি সুন্দরী। এতো স্বল্প শাস্তি দিলে একি অন্যায়, একি ভুল করতে দ্বিতীয় বার যে অন্তর কাঁপবে না তাই শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ‘।

আমি আমার দূর্বল চোখ জোরা টেনে তোলার চেষ্টা করছি ওনাকে দেখার জন্য। ওনি হাতে থাকা জিনিসপএ মেঝেতে রেখে হাঁটু মুড়িয়ে বসে বাঁধন গুলো খুলতে শুরু করলেন৷ আমি ছাড়া পেয়েও একিভাবে বসে রইলাম। নড়ার বিন্দুমাএ শক্তি পাচ্ছিলাম না। ওনি আমায় কোলে তুলে নিয়ে সেই পরিচিত বিশ্রি হাসিটা দিলেন৷ সে মূহুর্তে মনে পড়ে গেলো রাতের সেই অমায়িক মৃদু হাসিটা, মোহময় সে চাহনীটা। কি অদ্ভুত মাতাল অবস্থায় মানুষ টা স্বাভাবিক অথচ এমনিতে এতোটা অস্বাভাবিক? আমাকে অবাক করে দিয়ে দুটো ঘুরানি দিলেন। আচমকাই এমনটা করায় ভয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম ওনাকে৷ ওনি হোহো করে হাসতে হাসতে মাথা দুলিয়ে বললেন,

-‘ ওহে সুন্দরী! মদহীন মাতাল আমি ‘।
.
বাথরুম থেকে কাপড় পাল্টে বের হতেই ওনি টেনে হুইলচেয়ারে বসালেন। আবারো আগের মতো করে বেঁধে ফেললেন। আমি চুপচাপ শুধু ওনার কান্ডকারখানা দেখছিলাম৷ ওনি নিজ হাতে খাবার খাওয়িয়ে দিলেন আমায়৷ কতোদিনের খিদে ছিলো আমার নিজেও জানিনা কষা মাংস দিয়ে পুরো দু প্লেট ভাত খেয়েছি সেদিন। খাওয়া শেষে ওনি মিটিমিটি হাসতে হাসতে কয়েকটা ওষুধের ট্যাবলেট মুখের সামনে ধরলেন। আমি ভয়ার্ত চোখ মুখে তাকাতেই বললেন,

-‘ পেটে পেইন হচ্ছে, শরীর দূর্বল লাগছে, আই নো দ্যাট সুন্দরী ‘।

অবিশ্বাস নিয়েই ওষুধ গুলো খেয়ে নিলাম। তারপর ওনি পকেট থেকে মলম বের করে আমার খুব কাছে চলে এলো৷ গলায় মোটা লাল দাগ পড়ে যাওয়ায় আলতো ভাবে মলম লাগিয়ে দিলো। হাত, পা বাঁধা থাকায় শুধু চোখ, মুখ খিঁচে বসে ছিলাম। ওনার জুতো মেরে গরুদান করা শেষ হলে আমার ওষ্ঠে আলতো কামড় বসিয়ে দেয়। আমি নড়েচড়ে ওঠতেই গভীরভাবে ওষ্ঠে চুমু খায়।
.
পুরো সাতদিন ওভাবে পড়ে থাকি আমি। খাওয়ার সময় খাওয়িয়ে ওষুধ সেবন করিয়ে চলে যায়৷ কোনদিন রাতেও থাকেনা। বসেই ঘুমাতে হতো আমাকে। আসলে এটা শাস্তি ছিলো না৷ শাস্তি হলে এতো আদরযত্ন করার প্রশ্নই আসতো না। আসলে ঐ সাতদিন আমাকে বাড়ির বাইরে রেখে নিজের কাজ হাসিল করে নিয়েছিলো ওনি। পুরো বাড়িতে সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। বেডরুম থেকে শুরু করে পুরো বাড়িতেই সিসি ক্যামেরা সেটআপ করে রেখেছিলো। ছয়দিনের দিন ভার্সিটিতে আমার সব ডকুমেন্টস জমা দিয়ে এডমিশন নিয়ে দেয়। নিজের সমস্ত কাজ শেষ করেই বাড়ি নিয়ে যায় আমাকে। ঐ সাতটা দিন ঢাকাতেই ওনার ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিলো আমাকে।
________________
ও বাড়িতে ফেরার পর কেউ আমাকে কোন প্রশ্ন করেনি৷ না শাশুড়ী না ননদ একটা বার জানতেও চায়নি আমি কোথায় ছিলাম? কেনো বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম? কিন্তু দু দিন কেটে গেলে আমি প্রশ্ন করি হিয়াকে, তাঁর বড় দাদানের প্রথম স্ত্রী কে ছিলো? সে এখন কোথায়? বিবাহিত থাকা সত্ত্বেও কেনো পুনরায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে? প্রথম বউ চলে গেছে? না মরে গেছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে? একনাগাড়ে প্রশ্ন করেই গেলাম। হিয়া ঘাবড়ে গেলো ভীষণ। আমি ওর হাত চেপে ধরে বললাম,

-‘ প্লিজ হিয়া সবটা আমাকে বলো? আমার সবটা জানা প্রয়োজন দিনের পর দিন এভাবে ঠকতে ঠকতে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের মনের অবস্থা তুমি খুব ভালো করে বুঝতে পারবে হিয়া প্লিজ বলো আমায় তোমার দাদানের প্রথম স্ত্রী কোথায় ‘?

হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে আমার হিয়াকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হ্যাভেন বলে ওঠে,

-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট সুন্দরী নিজের স্বমীকে নিয়ে এতো বড় ষড়যন্ত্র তুমি না করলেই পারতে। বেডরুমে এসো অপেক্ষা করছি তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন ‘।

চলবে…

ভুলগুলো ধরিয়ে দেবেন শুধরে নেব।সেই সাথে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।
নেক্সট পার্টেই আহির অতিত শেষ।
আগের পার্ট-
https://m.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3085758144986250#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৬

পুরো পৃথিবী যেনো থমকে গেলো আমার। আর কতো? শেষে কিনা আরো একটা নিকৃষ্ট লোকের হাতে পড়েছিলাম আমি ? শুধু তাই নয় আরো এক কঠিন সত্যের মুখোমুখিও যে হলাম। হায় পৃথিবী, হায় জীবন। এরই নাম জীবন? নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি৷ জিসানের বলা কথাগুলো আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিলো সে সময়৷ আমাকে একদম ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিলো কিন্তু হ্যাভেনকে করে তুলেছিলো ভয়ংকর এক হিংস্র মানব৷ ওর সে ভয়ানক রূপ দেখে আমি আরো স্তব্ধ হয়ে যাই। কয়েকজন মিলে জিসানকে মাটিতে ফেলে দেয়। হ্যাভেন ক্ষিপ্ত হয়ে একের পর এক আঘাত করতে থাকে ওকে। আহত গলায় জিসান বলে ওঠে,

-‘ বাঁচতে পারবি না কেউই। অনেক বড় দাম দিতে হবে তোদের৷ তোদের মৃত্যু হবে খুবই নৃশংস’।

কথা শেষ করতে না করতেই হ্যাভেন উচ্চস্বরে হেসে ওঠে ওর জননেন্দ্রিয়তে একের পর এক আঘাত করতে থাকে আর বলে,

-‘ তাঁর পূর্বেই খুবই নৃশংস ঘটনা ঘটবে তোর সাথে। কিন্তু এ ঘটনা কারো সম্মুখে উচ্চারণও করতে পারবি না৷ দিন পেড়িয়ে তোর রাত চলে এসেছে জিসান আর আমার এসেছে রাত পেড়িয়ে দিন। এমপির ছেলে হয়ে এমন জঘন্য কাজ কি করে করতে পারলি তুই? ঘরে বউ রেখে অন্যের বউয়ের দিকে নজর দিস? আজকে এখানে যা ঘটবে তা যদি প্রকাশিত হয় তাহলে মনে রাখিস তোদের রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটবে এখানেই। সেই সাথে তোর অবৈধ সম্পর্কের বৈধতা তকমা দেওয়া সম্পর্কেরও বিনাশ হবে ‘।

জিসান আর্তনাদ করতে থাকে। হ্যাভেন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,

-‘ তোর মতো বেঈমানের বাচ্চা কে একবারে শেষ না করে ধীরে ধীরে শেষ করা উচিত। আজকের পর তোকে দিয়ে তোর বউয়ের সব মিটলেও দৈহিক চাহিদা কোনদিন মিটবে না। দিনের পর দিন তোর বউয়ের চোখে স্পষ্ট দেখতে পারবি তোর অক্ষমতা ‘ বলেই পাশের ছেলেদের দিকে তাকালো ওদের মধ্যে একজন সঙ্গে সঙ্গে রড এগিয়ে দিলো। হ্যাভেন হোহো করে হাসতে হাসতে জিসানের জননেন্দ্রিয়তে রড দিয়ে আঘাত করলো। সাথে সাথে ভয়ানকভাবে ছটফট আর আর্তচিৎকার করতে শুরু করলো জিসান ।
______________
পুরো রুমে বিদঘুটে অন্ধকার ছিলো। দূর্বল শরীর নিয়ে ওঠে বসি আমি। হাত দিয়ে আশেপাশে স্পর্শ করতেই বুঝি মেঝেতে শুয়ে ছিলাম। মাথা চেপে ধরে মনে করতে থাকি সবটা। হ্যাঁ সেই নির্মম দৃশ্য টা দেখামাএই সেন্স হারিয়ে ফেলি আমি। সেন্স ফিরতেই নিজেকে আবিষ্কার করি চারিদিকে বিদঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি রুমে। ভয়ে হাত,পা কাঁপতে থাকে। চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝড়তে থাকে। বসা থেকে ওঠে দু হাত সামনে রেখে অন্ধের মতো দরজা খুঁজতে থাকি। অল্প আওয়াজে বলতে থাকি -‘কেউ আছো ‘।

এগুতে এগুতে দেয়ালে দুহাত আটকে যায়। বুঝতে পারি ওদিকটায় দরজা নেই। আবারো দরজা খুঁজতে থাকি সেসময়ই পুরো রুমে আলোর ঝলকানি দেয়। চমকে গিয়ে রুমে নজর বুলাতেই দেখতে পাই হ্যাভেন এক হাঁটু ভাজ করে তাঁর ওপর এক হাত রেখে আরেক হাঁটু মেঝেতে মেলে দিয়ে সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। ওনার ঠিক পাশেই সেই রডটা রাখা। যা দেখে ভয়ে আমার শরীর অসার হয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে পুরো রুম দেখে দরজা দেখেই পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু পারিনা তাঁর আগেই হ্যাভেন আমাকে একটান দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। পেট বরাবর সাজোরে এক লাথি মারে। যার ফলে ছিটকে দেয়ালের সাথে বাড়ি খেয়ে মেঝেতেই পড়ে যাই। ব্যাথায় কুঁকাতে কুঁকাতে মা গো বলে আর্তনাদ করতে থাকি।

আমার সেই আর্তনাদে হ্যাভেন আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে৷ আশে পাশে হিংস্র ভাবে তাকিয়ে রডটা হাতে তুলে নেয়। আমার দিকে তেড়ে আসতেই আমি ভয়ে চোখ, মুখ খিঁচে আল্লাহ বলে চিৎকার করে ওঠি। থেমে যায় হ্যাভেন, ওনার হাত থেকে রডটা পড়ে যায়। পরোক্ষণেই আবারো তেড়ে এসে চুলের মুঠি ধরে বলে,

-‘ পরপুরুষের স্বাদ নিতে মন চায় খুব? বল খুব শখ জেগেছে পরপুরুষের স্বাদ নেওয়ার’?

আমি আর সহ্য করতে পারিনা৷ চিৎকার করে বলতে থাকি,

-‘ বিশ্বাস করুন আমি আমার বাবার বাড়ি চলে যাচ্ছিলাম। আপনার থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য পালিয়ে যাচ্ছিলাম অন্য কোন মতলব ছিলো না ‘।

কথাটা শুনে আরো ক্ষেপে যায় ওনি উন্মাদের মতো আবারো রডটা হাতে নেয়। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যায় আমার। বাঁচার জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ওঠে দাঁড়াই দৌড়ে দরজা খুলতে যেতেই আমার শাড়ির আঁচল টেনে সম্পূর্ণ শাড়িই নিয়ে নেয় ওনি৷ দরজার সিটকেরিতে হাত দেওয়ার আগেই পিছন থেকে শাড়ি দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে হিংস্র গলায় বলে,

-‘ আমার থেকে রেহাই এ জীবনে আর পাওয়া হবে না এক মৃত্যু ছাড়া। তাই মৃত্যুকেই বরণ করে নে ‘। বলেই সর্বশক্তি দিয়ে শাড়ি পেঁচিয়ে গলা চিপে ধরে৷ পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে আসে আমার। দু পা মেঝেতে ধাপড়াধাপড়ি করতে থাকি। দুহাত দিয়ে ওনার মুখে, গলায় খামচে ধরি। শেষ মূহুর্তে মা, বাবা,বোনের মুখটা স্মরণ করতেই আচমকাই ছেড়ে দেয় আমাকে৷ আমার শরীরটা নেতিয়ে পড়ে থাকে মেঝেতে। নিভু নিভু চোখে দেখতে পাই হ্যাভেনের রক্তিম দুটো চোখ। জ্ঞান হারানোর পূর্বে শুনতে পাই ওনার বলা কিছু কথা,

-‘ তোদের মতো মেয়ে জাতিকে ভালোবাসার মতো ভুল আর এই হ্যাভেন করবে না, করবে না, করবে না’ বলেই চিৎকার করতে থাকে।
.
যখন জ্ঞান ফেরে আমি মেঝের এক পাশে পড়ে ছিলাম। একটু দূরে আমার শাড়িটা পড়ে আছে। ওঠে বসলাম। হামাগুড়ি দিতে গিয়েও দিতে পারলামনা। তখনকার লাথির রেশ মারাত্মক ভাবে রয়ে গেছে।
মা বলে কুঁকিয়ে ওঠলাম। তলপেট চেপে ধরে ডুঁকরে কেঁদে ওঠলাম। সে সময় অনুভব করলাম আমি খুব বেশীদিন বাঁচবো না৷ হ্যাভেনের হাতেই কোন একদিন কোন এক সময় মৃত্যু হবে আমার৷ ঐ মানুষ টা খুবই ভয়ানক খুবই ভয়াবহ তাঁর আচরণ গুলো। ভাবনার মাঝেই দরজা খোলার শব্দ পেলাম। সে মূহুর্তেই চমকে গেলাম আমি। আমি কোথায় আছি? হ্যাভেন আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছে ভাবতেই বুকের ভিতর কি যেনো কামড়ে ধরলো। সত্যি মৃত্যু দিবে আমায় হ্যাভেন? এ জীবনে আর মা কে মা বাবাকে বাবা বলে ডাকা হবে না? একটি বার মায়ের বুকে মাথা রাখা হবে না? ছোট বোনকে পরম স্নেহে বুকে টেনে নেওয়া কি এ জীবনে আর হবে না? একটি মেয়ের জীবন কি করে এতোটা সস্তা হতে পারে? নিজের জীবনের প্রতি ঘৃণা ধরে গেলো ভীষণ।

রুমে প্রবেশ করেই দরজা লাগিয়ে দিলো হ্যাভেন। ওনাকে দেখে ভয়ে নিজেকে একদম গুটিয়ে নিলাম। পুরো রুমে একটি হুইলচেয়ার আর মোড়া ছাড়া তৃতীয় কোন বস্তু ছিলো না। হ্যাভেন ঢুলো ঢুলো শরীরে এগুতে লাগলো। আমি ভয়ে ভয়ে তাকালাম ওনার দিকে। ওনার হাতে ছিলো মদের বোতল। অর্ধেক বোতল মদ বেশ শব্দ করেই মেঝেতে রাখলো।

বিয়ের পর থেকে কখনো ওনাকে সিগারেট খেতেও দেখিনি। যতোটুকু শুনেছি ওনার সিগারেট বা মদের নেশা নেই। সেদিনই প্রথম নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দেখি ওনাকে৷ ঘাড় বাঁকিয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে এগুতে থাকে আমার দিকে। আমি ভয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠি। ওনি হাঁটু গেড়ে বসে একহাত আগাতে থাকলো আমার দিকে আমি দুহাত জোর করে কাঁদতে লাগলাম। নেশাবিহীন যে মানুষ টা উন্মাদের মতো আঘাত করেছে আমাকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় সে ঠিক কি করবে ভাবতেই আমার শরীর অবশ হয়ে আসছিলো। আমার অসহায়ত্ব বোধ হয় একটু কড়া নাড়লো ওনার মনে। হাত থেমে গেলো ওনার। চুপচাপ নিঃশব্দে আমার পাশে দেয়ালে পিঠ,মাথা ঠেকিয়ে পা দুটো মেলে দিয়ে বসলো।
.
প্রায় ঘন্টাখানেক চুপ ছিলেন ওনি। আমিও প্রাণ হাতে নিয়ে দুহাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে ছিলাম ওনার পাশে। নিরবতা ভেঙে ওনি বললেন,

-‘ আমি কিন্তু মাতাল নই ভয় পাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই ‘।

চমকে তাকালাম ওনার দিকে। গা ভাসিয়ে মদ্য পান করে শরীর ছেড়ে বসে বলছে, আমি কিন্তু মাতাল নই? এর থেকে বড় মাতাল আর কে হতে পারে?

আমার দৃষ্টি তে দৃষ্টি ফেললেন ওনি। আমি চোখ সড়িয়ে নিলাম। আড় চোখে এক পলক তাকাতেই আঁতকে ওঠলাম। ওনি আমার দিকে মায়াবী এক দৃষ্টি ফেলে মৃদু হাসছে। কি অদ্ভুত সেই দৃষ্টি, কি অদ্ভুত সেই হাসি। এতোদিন কোথায় ছিলো এই দৃষ্টি এই হাসি? চোখ বুজে এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো তাকালাম ওনার দিকে। ওনি বসা থেকে মেঝেতেই হাত, পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লেন। পড়নে ধূসর রঙের শর্ট প্যান্ট সাদা রঙের টিশার্ট। বিয়ের অনেকগুলো দিন পর সেদিনই প্রথম খুব ভালো করে খেয়াল করলাম ওনাকে। ঘমঘন শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। কি অস্থিরতা তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসে এই অস্থিরতার কারণ যে শুধুই আমি তা স্পষ্ট বুঝতে পারলাম।

চোখ বুজে ছিলেন ওনি। আমি ভয় ভয় চোখে একটু পর পর ওনাকে দেখছিলাম। ফ্যানের বাতাসে ওনার কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুলগুলো মৃদু উড়ছিলো। অশান্ত মানুষ টা হঠাৎই কেমন শান্ত হয়ে পড়ে আছে৷ ঘড়িতে সময় তখন ক’টা জানা ছিলো না আমার। তবে রাত ছিলো, হয়তো গভীর রাত। অনেকটা সময় ওনার দিকে চেয়ে থাকি আমি। ওনি মোটেই কুৎসিত নয় শুধু গায়ের রঙ সাদা হলেই তাকে সুদর্শন পুরুষ উপাধি দিতে হবে এমন তো নয়৷ ওনিও সুদর্শন লম্বাচওড়া সুঠাম দেহের অধিকারী তিনি। শুধু মনটাই ওনার কুৎসিত যার ফলে ওনার সৌন্দর্য গুলো চাপা পড়ে গেছে। আমি যখন ওনাকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে ব্যাস্ত ওনি তখন চোখ মেলে তাকালেন আমার দিকে৷ ওনার চোখে চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত হয়ে চোখ সড়িয়ে নিলাম। ওনি শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় আমাকে ওনার কাছে ডাকলেন। আমি ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। আমার সে ভয় দেখে ওনি খুব শান্ত গলায় বললেন,

-‘ আই লাইক ইট সুন্দরী ‘। বলেই আবারো ইশারা করলেন ওনার দিকে যেতে।

ভয়ে ভয়ে আমি ওনার দিকে সড়ে বসতেই ওনি একটানে ওনার বুকে ফেললেন। আমার মাথা গিয়ে ঠেকলো ওনার বুকে। ওনি খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়৷ কি জানি তখন কি হলো আমার হুহু করে কেঁদে ওঠলাম। আমার কান্নায় ওনি শান্ত ভঙ্গিতেই বললেন,

-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট সুন্দরী ‘।

আমি কান্নার শব্দ কমিয়ে ফুপাতে লাগলাম। ওনি ধরা গলায় বললেন,

-‘ কিছু নারী ভালোবাসার পূজারি হয়, কিছু নারী অর্থ, সম্পদের পূজারি হয়,কিছু নারী হয় বহু পুরুষে আসক্ত। তুমি কোনটি সুন্দরী’?

চুপ হয়েই রইলাম কিছু বলতে পারলাম না শুধু অশ্রু বিসর্জন দিয়ে ওনার বুক ভাসিয়ে দিচ্ছিলাম। ওনি লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

-‘ নারী মানে শুধু রূপবতী নয় নারী মানে ধ্বংসময়ী। নারী মানে শুধু মায়াবতী নয় নারী মানে রহস্যময়ী। নারীর এক নাম যদি হয় সৃষ্টিকুশলী তাহলে আরেক নাম হবে বিনাশকারী। নারী যেমন মা হয়ে একজন সন্তান জন্ম দান করে সুন্দর একটি জীবন উপহার দিতে পারে, সুন্দর একটি পরিবার গড়ে তুলতে পারে তেমনি নারী একজন মায়ের সন্তান কে ছিনিয়ে নিয়ে একটি পরিবার ধ্বংস করে দিতেও পারে। পৃথিবীতে নারীদের মতো সেরা অভিনয় বোধ হয় আর কোন প্রানীই করতে পারে না৷ নারী যখন মা হয় নিজে অভুক্ত থেকে ভুক্ত থাকার অভিনয় করে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেয়। সেই নারীই আবার দিনের পর দিন শাশুড়ী কে অভুক্ত রেখে স্বামীর চোখে হয়ে ওঠে আদর্শ বউ। তাঁদের সেই নিখুঁত অভিনয় ধরার ক্ষমতা সব পুরুষের থাকে না। নারী মানেই সেরা অভিনেত্রী, সেই নারী তুমি। অভিনয় হবে খুব নিখুঁত অভিনয় ভালোবাসার অভিনয়। পারবে তুমি পারতে হবে তোমাকে। নিজ স্বামী কে ভালোবাসার অভিনয় করাটা খুব বেশী কঠিন হবে না ‘।
.
ওনার কথা শুনতে শুনতে কখন যে চোখ লেগে গেছে বুঝতেই পারিনি৷ যখন জেগে ওঠি নিজেকে আবিষ্কার করি হুইলচেয়ার বাঁধা অবস্থায়। হাত, পা বেঁধে বসিয়ে রেখেছিলেন ওনি আমায়। যখন ওনি ফিরলেন তখন দূর্বল চোখে চেয়ে দূর্বল গলায় প্রশ্ন করলাম,

-‘ এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেনো আমায় ‘?

-‘ অন্যায়ের শাস্তি তো শেষ হয়নি সুন্দরী। এতো স্বল্প শাস্তি দিলে একি অন্যায়, একি ভুল করতে দ্বিতীয় বার যে অন্তর কাঁপবে না তাই শাস্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ‘।

আমি আমার দূর্বল চোখ জোরা টেনে তোলার চেষ্টা করছি ওনাকে দেখার জন্য। ওনি হাতে থাকা জিনিসপএ মেঝেতে রেখে হাঁটু মুড়িয়ে বসে বাঁধন গুলো খুলতে শুরু করলেন৷ আমি ছাড়া পেয়েও একিভাবে বসে রইলাম। নড়ার বিন্দুমাএ শক্তি পাচ্ছিলাম না। ওনি আমায় কোলে তুলে নিয়ে সেই পরিচিত বিশ্রি হাসিটা দিলেন৷ সে মূহুর্তে মনে পড়ে গেলো রাতের সেই অমায়িক মৃদু হাসিটা, মোহময় সে চাহনীটা। কি অদ্ভুত মাতাল অবস্থায় মানুষ টা স্বাভাবিক অথচ এমনিতে এতোটা অস্বাভাবিক? আমাকে অবাক করে দিয়ে দুটো ঘুরানি দিলেন। আচমকাই এমনটা করায় ভয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম ওনাকে৷ ওনি হোহো করে হাসতে হাসতে মাথা দুলিয়ে বললেন,

-‘ ওহে সুন্দরী! মদহীন মাতাল আমি ‘।
.
বাথরুম থেকে কাপড় পাল্টে বের হতেই ওনি টেনে হুইলচেয়ারে বসালেন। আবারো আগের মতো করে বেঁধে ফেললেন। আমি চুপচাপ শুধু ওনার কান্ডকারখানা দেখছিলাম৷ ওনি নিজ হাতে খাবার খাওয়িয়ে দিলেন আমায়৷ কতোদিনের খিদে ছিলো আমার নিজেও জানিনা কষা মাংস দিয়ে পুরো দু প্লেট ভাত খেয়েছি সেদিন। খাওয়া শেষে ওনি মিটিমিটি হাসতে হাসতে কয়েকটা ওষুধের ট্যাবলেট মুখের সামনে ধরলেন। আমি ভয়ার্ত চোখ মুখে তাকাতেই বললেন,

-‘ পেটে পেইন হচ্ছে, শরীর দূর্বল লাগছে, আই নো দ্যাট সুন্দরী ‘।

অবিশ্বাস নিয়েই ওষুধ গুলো খেয়ে নিলাম। তারপর ওনি পকেট থেকে মলম বের করে আমার খুব কাছে চলে এলো৷ গলায় মোটা লাল দাগ পড়ে যাওয়ায় আলতো ভাবে মলম লাগিয়ে দিলো। হাত, পা বাঁধা থাকায় শুধু চোখ, মুখ খিঁচে বসে ছিলাম। ওনার জুতো মেরে গরুদান করা শেষ হলে আমার ওষ্ঠে আলতো কামড় বসিয়ে দেয়। আমি নড়েচড়ে ওঠতেই গভীরভাবে ওষ্ঠে চুমু খায়।
.
পুরো সাতদিন ওভাবে পড়ে থাকি আমি। খাওয়ার সময় খাওয়িয়ে ওষুধ সেবন করিয়ে চলে যায়৷ কোনদিন রাতেও থাকেনা। বসেই ঘুমাতে হতো আমাকে। আসলে এটা শাস্তি ছিলো না৷ শাস্তি হলে এতো আদরযত্ন করার প্রশ্নই আসতো না। আসলে ঐ সাতদিন আমাকে বাড়ির বাইরে রেখে নিজের কাজ হাসিল করে নিয়েছিলো ওনি। পুরো বাড়িতে সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছিলো। বেডরুম থেকে শুরু করে পুরো বাড়িতেই সিসি ক্যামেরা সেটআপ করে রেখেছিলো। ছয়দিনের দিন ভার্সিটিতে আমার সব ডকুমেন্টস জমা দিয়ে এডমিশন নিয়ে দেয়। নিজের সমস্ত কাজ শেষ করেই বাড়ি নিয়ে যায় আমাকে। ঐ সাতটা দিন ঢাকাতেই ওনার ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিলো আমাকে।
________________
ও বাড়িতে ফেরার পর কেউ আমাকে কোন প্রশ্ন করেনি৷ না শাশুড়ী না ননদ একটা বার জানতেও চায়নি আমি কোথায় ছিলাম? কেনো বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছিলাম? কিন্তু দু দিন কেটে গেলে আমি প্রশ্ন করি হিয়াকে, তাঁর বড় দাদানের প্রথম স্ত্রী কে ছিলো? সে এখন কোথায়? বিবাহিত থাকা সত্ত্বেও কেনো পুনরায় বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে? প্রথম বউ চলে গেছে? না মরে গেছে নাকি মেরে ফেলা হয়েছে? একনাগাড়ে প্রশ্ন করেই গেলাম। হিয়া ঘাবড়ে গেলো ভীষণ। আমি ওর হাত চেপে ধরে বললাম,

-‘ প্লিজ হিয়া সবটা আমাকে বলো? আমার সবটা জানা প্রয়োজন দিনের পর দিন এভাবে ঠকতে ঠকতে আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের মনের অবস্থা তুমি খুব ভালো করে বুঝতে পারবে হিয়া প্লিজ বলো আমায় তোমার দাদানের প্রথম স্ত্রী কোথায় ‘?

হঠাৎই ফোন বেজে ওঠে আমার হিয়াকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হ্যাভেন বলে ওঠে,

-‘ আই ডোন্ট লাইক ইট সুন্দরী নিজের স্বমীকে নিয়ে এতো বড় ষড়যন্ত্র তুমি না করলেই পারতে। বেডরুমে এসো অপেক্ষা করছি তোমাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন ‘।

চলবে…