ওহে প্রিয় পর্ব-১০

0
1656

#ওহে_প্রিয়
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_১০
.
২০০৬ সাল। গ্রাম থেকে শহড়ে এসেছি পাঁচ দিন হলো। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমি। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরই আব্বা বিয়ের জন্য জোর করছিলেন। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিলো উচ্চ শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। আম্মা বাদে বাড়ির প্রতিটি সদস্যই বেশ চাপ দিচ্ছিলো বিয়ে করে নেওয়ার জন্য। মেয়ে মানুষ আমি অ,আ,ক,খ, A,B জানলেই হলো৷ এতো পড়াশোনা করে কি হবে? চাকরি-বাকরিই বা করতে হবে কেনো? মেয়ে মানুষ যদি চাকরি করে খায় পুরুষ মানুষ দুনিয়াতে আছে কেনো? ইত্যাদি নানারকম মন্তব্য করতে শুরু করে বাড়ির লোকেরা। দাদি বললেন, আঠারো বছর হয়েছে যখন বিয়েটা করতেই হবে। এ বয়সে বিয়ে না করলে পরে নাকি টান থাকবেনা। মেয়ে কুড়িতেই বুড়ি তাই লোকের মুখে বুড়ি শোনার আগেই বিয়ে করে নিতে হবে। ঠিক সময়ে বিয়ে না করলে পরে বিবাহিত, বাচ্চাওয়ালা পাএ ছাড়া ভালো কোন পাএ কপালে জুটবে না। আরো অসংখ্য নেগেটিভ কথাবার্তা বলতে শুরু করেন দাদি। কিন্তু আমি ছোট থেকেই বেশ জেদি ছিলাম। আমার জেদ, আমার মেধা, আমার স্বপ্ন আমার সহায় ছিলো। তাই তো সকল বাঁধা অতিক্রম করে মায়ের সহায়তায় স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্যে গ্রাম থেকে শহড়ে চলে আসি।

আমার বড় মামা বিদেশে থাকেন। বড় মামি আর মামাতো এক বোন ঢাকা শহড়ে থাকেন৷ মামির বাবার বাড়ি ঢাকাতেই। বাবার বাড়ি থেকেই মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন। ভার্সিটিতে এডমিশন নিবে বলেই শহড়ের দিকে ভাড়া বাসায় মা এবং মেয়ে ওঠেছেন। মামা যখন জানতে পারেন আমি পড়াশোনা করতে ভীষণ আগ্রহী এবং বাড়িতে বিয়ে নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে আম্মাকে বলেন আমাকে ঢাকা পাঠিয়ে দিতে। আম্মা তখন আমার চাচাতো ভাই সাব্বিরকে দিয়ে ঢাকা মামির ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে আব্বা-আম্মার সাথে কম ঝামেলা হয়নি। শুনেছিলাম আব্বা নাকি আম্মাকে মারধরও করেছেন। বলেছেন আমার মুখ তিনি বেঁচে থাকতে আর দেখতে চান না। আমিও আম্মাকে চিঠি লিখে স্বান্তনা দিয়েছিলাম ‘ চিন্তা করোনা আম্মা পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পেয়ে যখন ব্যাগ ভর্তি টাকা পাঠাবো তখন আর আব্বা এই কথা বলবেনা ‘।
২.
প্রথম দিন ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিয়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো একদম বিকেল পাঁচ’টায়। আমাকে ওঠতে দেখেই মামাতো বোন জেসমিন বললো,

-‘ এই সাবা তোর ঘুম ভেঙেছে চল ছাদে যাই ‘।

আমি হাই তুলতে তুলতে বললাম,

-‘ অন্যের বাড়ির ছাদে যাওয়া কি ঠিক হবে? বাড়িওয়ালারা কিছু মনে করবেনা ‘?

-‘ আরে বোকা বাড়িওয়ালারা তো এখানে থাকেই না৷ তাঁরা তো দেশের বাইরে থাকে ‘।

– ‘ সে কি রে তাহলে তোরা ভাড়া দিবি কাকে আর এতো বড় বাড়িতে বাড়িওয়ালাদের একজনও নেই ‘?

-‘ হিহিহি এই বাড়িতে মালিকের দুটো ভাগ্নে থাকে তাদের মধ্যে একজন আমাদের ভার্সিটিতেই পড়ে। সেম ভার্সিটি,সেম ডিপার্টমেন্ট, সেম এইজ আরেকজন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ছে। ভাড়া ওদের মধ্যে একজনকেই দিতে হবে অবিয়েসলি সে একজন বড়টা হবে নির্মল চৌধুরী ‘।

-‘ বাব্বাহ সব জানিস তো তাঁরা মাইন্ড করবেনা ‘?

-‘ ধূর এতো কথা না বলে চল তো আমার সঙ্গে ছেলে দুটো ভীষণ ভালো। আমার মায়ের সাথে তাদের গলায় গলায় ভাব হয়ে গেছে। আজ সকাল আর দুপুরে মায়ের হাতের রান্নাও খেয়েছে। আমরা যদি ওদের এতো আপ্যায়ন করতে পারি ওরা কেনো সামান্য ছাদ শেয়ার করবে না আমাদের সাথে ‘?

জেসমিনের সঙ্গে কথায় না পেরে ছাদে চলে যাই। কিন্তু বসার মতো বর্ডার ছাড়া আর কিছু নেই। জেসমিন ছোট থেকেই শহড়ে মানুষ হয়েছে। ভীষণ স্মার্ট একটা মেয়ে কিন্তু আমি গ্রামের মেয়ে। না ওর মতো স্মার্ট না শহড়ের আদবকায়দায় বড় হয়েছি। না এতো বড় বিলাসবহুল বাড়িতে আগে কখনো থেকেছি। সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠতেই ভীষণ ভয় পেয়ে যাচ্ছিলাম সেখানে বর্ডারে বসার সাহস করে ওঠতে পারলাম না। তা দেখে জেসমিন বললো,

-‘ তুই বোস আমি নিচ থেকে মোড়া নিয়ে আসছি আড্ডা দিব দুজন অনেকক্ষণ ‘।
.
সময়টি ছিলো শরৎকাল। শরৎকালের প্রকৃতি হয় কোমল,শান্ত-স্নিগ্ধ ও উদার। আকাশজুরে ছিলো সাদা মেঘের ভেলা। আকাশের বুকে আপন মনে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছিলো কাক আর চিলেরা। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির স্নিগ্ধ অনুভূতি অনুভব করছিলাম আমি। হঠাৎই কি হলো আমার কে জানে? বুকের ভিতর বয়ে চললো সুখময় মৃদু বাতাস। ইচ্ছে করলো খোলা আকাশের নিচে দুহাত দুদিকে মেলে দিয়ে প্রাণ ভরে অনেকটা সময় শ্বাস নিতে। ইচ্ছে কে কখনো নিজের মধ্যে দমিয়ে রাখতে নেই নিজের সর্বস্ব চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয় নিজ ইচ্ছে পূরণের জন্য। দুহাত দুদিকে মেলে প্রাণভরে শ্বাস নিচ্ছিলাম ঠিক সেময়ই এক জোরা শক্ত হাত পিছন থেকে আমার পেট জরিয়ে শূন্যিতে তুলে ঘোরপাক খেতে শুরু করলো। মাথা ভনভন করছিলো আমার আরেকটু সময় ঘুরলেই হয়তো বমি হয়ে পেট থেকে সব বেরিয়ে যেতো।

একজোরা হাত আমাকে ছাড়তেই আমি নিজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে পারছিলাম না। অতিমাএায় ঘোরানির ফলে পুরো পৃথিবীটাই ঘুরতে শুরু করেছিলো আমার৷ পড়ে যেতে নিতেই সেই শক্ত হাত আবারো জাবটে ধরে উৎকন্ঠে বললো,

-‘ চোখ বুজে শক্ত করে ধরে থাকো আমায় দুমিনিটেই সেড়ে যাবে ‘।

বেশ অনেকটা সময় ওভাবে থাকার পর যখন স্বাভাবিক হলাম এবং সামনে অতি সুদর্শন এক পুরুষের হাসি হাসি মুখ দেখতে পেলাম। মেজাজ ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। চোখ পাকিয়ে, আঙুল ওঠিয়ে, কঠিন গলায় বললাম,

-‘ এটা কি ধরনের অসভ্যতামি? আপনি আমায় স্পর্শ করলেন কোন সাহসে ‘?

-‘ কেনো ভালো লাগেনি? রোমাঞ্চকর মোমেন্টে রোমান্স না করলে কি ভালো লাগে নাকি রাগিনী’? বলেই মিষ্টি করে হাসলো।

আমি চোখ কটমট করে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

-‘ বেয়াদব কোথাকার। মেয়েদের সম্মান করতে জানেননা, আপনার ঘরে কি মা, বোন নেই ‘?

ছেলেটা আচমকাই আমার একহাত চেপে ধরে দুঃখী গলায় বললো,

-‘ বিলিভ মি সুইটহার্ট ঘরে বাইরে সব আছে আমার শুধু বউটাই নেই ‘।

-‘ আশ্চর্য আবার হাত ধরেছেন ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন ‘।

আমি হাত টানাটানি করে চিৎকার চেঁচামেচি করছি তখনি জেসমিন এসে বিস্ময় চোখে চেয়ে প্রশ্ন করলো,

-‘ একি এখানে কি হচ্ছে ‘?

-‘ কি হচ্ছে মানে দেখছিস না ছেলেটা অসভ্যতামি করছে হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে জুতো খুলে মারতে পারছিস না’

-‘ আরে সাবা কি বলছিস এ তো বাড়িওয়ালার ভাগ্নে নির্মল। আর নির্মল তুমি সাবার সাথে এমন করছো কেনো ‘?

তখনি বুঝতে পারি ছেলেটার নাম নির্মল বাড়িওয়ালার বড় ভাগ্নে। জেসমিনের কথা শুনে নির্মল আমার হাত ছেড়ে বললো,

-‘ আরে জেসি যে গুড ইভিনিং ‘। বলেই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো পা থেকে মাথা অবদি চোখ বুলিয়ে জেসমিনের দিকে চেয়ে জিগ্যেস করলো,

-‘ রাগিনীকে কোথায় পেলে ‘?

– ‘ ও আমার ফুপাতো বোন গ্রাম থেকে এসেছে। আমাদের সাথে একি ভার্সিটিতে একি ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হয়েছে কিন্তু ‘।

জেসমিন কে আর কিছু বলতে দিলো না নির্মল। বএিশটা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বললো,

-‘ কোন কিন্তু নেই তোমার ফুপাতো বোন বড্ড বেশীই রোমান্টিক তাই তাঁর সঙ্গ দিচ্ছিলাম ‘। বলেই চোখ মেরে পকেটে এক হাত গুঁজে চলে যায়।

আমি বিস্ফোরিত চোখে তাকাই জেসমিনের দিকে। জেসমিন আমতা আমতা করে বলে,

-‘ এতো রাগছিস কেনো নির্মল খুব ভালো ছেলে আমার সাথে এখন অবদি একটুও বাজে আচরণ করেনি৷ তোকে চিনতে পারেনি তো তাই হয়তো ‘।

-‘ তুই জানিস ছেলেটা আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে শূন্যিতে তুলে কতোবার ঘোরপাক খেয়েছে ‘?

-‘ বললাম তো চিনতে পারেনি তাই এমন করেছে আর কখনো এমন করবে না দেখিস ‘।

জেসমিনের ওপর চরম বিরক্ত হয়ে সেদিন নিচে নেমে পড়ি। তারপর আর কখনো ছাদে যাইনি। জেসমিনের সাথেও রেগে ছিলাম বেশ কিছুদিন। পরে অবশ্য রাগটা কমে যায়।
.
তাঁর দু’দিন পরের ঘটনা। জেসমিনের জ্বর হওয়াতে সেদিন ভার্সিটিতে যেতে পারেনি। আমি একাই চলে যাই ভার্সিটিতে। তখন অবদি তেমন কারো সাথে পরিচয় ছিলো না আমার৷ আমাকে একা পেয়ে নির্মল ছুটে আসে৷ আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে ক্লাসরুমে গিয়ে বসি। আমাকে ক্লাসরুমে বসতে দেখে মুচকি হেসে চলে যায়। ক্লাস শেষে ক্লাসরুম থেকে বের হতেই সামনে চলে আসে নির্মল। ওর পিছনে বেশ কজন ছেলেমেয়ে ছিলো। তাঁর মধ্যে চার জন ছেলে মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তাঁর মধ্যে একজনের নাম শেখর, আরেক জনের নাম সরস্বতী ওদের দুজনের ধর্মই হিন্দু। আর দুজন হলো রাব্বি,ফাহিম। আমি বেশ সৌজন্য বজায় রেখেই ওদের সাথে কথা বলি। আমাকে গেট অবদি এগিয়ে দেয় ওরা। নির্মল বাইকে বসে আমাকে ইশারা করে ওর পাশে বসতে বাসায় পৌঁছে দেবে। কিন্তু আমি মুখ ভেঙচি দিয়ে রিকশায় ওঠে পড়ি। কিন্তু নির্মল সেদিন রিকশার পিছু পিছু ধীরে ধীরে বাড়ি আসে এবং এক সঙ্গেই বাড়িতে প্রবেশ করে। এবং আধাঘন্টা ঝগরা করে তবেই উপরে যায়৷ মামি আর জেসমিন নিরব দর্শকের মতো আমাদের ঝগরা দেখছিলো সেদিন।

৩.
প্রায় তিন মাস কেটে যায়। তিনমাসে আমাদের বেশ শক্তপোক্ত বন্ধুমহলও তৈরী হয়ে যায়। সেখানের মধ্যেমনি হলাম আমি আর নির্মল। তবে আমাদের ঝগরা শুরু হলে বন্ধু মহল শূন্য হয়ে যায় পড়ে থাকি শুধু আমি আর সে। জেসমিন,শেখর, ফাহিম,সরস্বতি, রাব্বি প্রত্যেকেই ভীষণ ভালো। খারাপ শুধু একজনই সে হলো নির্মল। প্রত্যেকমাসে কমপক্ষে তিনটে ব্রেকআপ না করলে তাঁর যেনো পেটের ভাত হজমই হয় না৷ সব সহ্য করলেও ওর এই গার্লফ্রেন্ড জাতিকে সহ্য করতে পারতাম না৷ সুন্দর ছেলেদের ক্যারেক্টার কেনো সুন্দর হয় না? এই একটা প্রশ্নই সকাল বিকাল করে যেতাম জেসমিনকে। বেচারি বিরক্ত হয়ে কতোবার যে দেয়ালে কপাল ঠুকতো হিসেব নেই।

সেদিন নির্মলের বার্থডে ছিলো। নিজ হাতে কেক বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম। রাতে কেক কাটার কথা ভাবলেও কাটা হলো না। কারণ আমাদের বন্ধু মহলের বাইরের লোকও সেদিন এসেছিলো। রাগ করে আর উপরেই গেলাম না। শেষে সরস্বতী আর জেসমিন এতো করে রিকোয়েস্ট করলো যে ওদের উপরে পাঠিয়ে বাধ্য হয়ে হালকা সাজগোজ করে আমিও চলে গেলাম উপরে। নির্মলের রুমের দরজা খোলা ছিলো ভাবলাম সবাই সেখানেই রয়েছে। কিন্তু নিস্তব্ধতায় কেমন যেনো সন্দেহ হলো। দরজা অবদি যেতেই থমকে গেলাম আমি৷ নির্মল একটি মেয়েকে লিপকিস করছে। মেয়েটা কেমন উন্মাদের মতোন নির্মলকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরছে নির্মল ছাড়ানোর চেষ্টা করছে একসময় মেয়েটার দুহাত শক্ত করে পিছন দিক চেপে ধরে ওষ্ঠচুম্বনে মেতে ওঠলো। সে দৃশ্য দেখে নিজেকে চুপ রাখতে না পেরে উত্তেজনায় দুচোখ বন্ধ করে, দুকান দুহাতে চেপে ধরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে ওঠি । সঙ্গে সঙ্গে দুজন দুজনের থেকে ছিটকে দূরে সড়ে যায়। মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে আর নির্মল বড় বড় করে আমার দিকে চেয়ে এগিয়ে এসে পিঠে দরাম করে কিল বসিয়ে দেয়। ‘ওমাগো’ বলেই বসে পড়ি আমি। সঙ্গে সঙ্গে নির্মল চমকিত গলায় বলে ওঠে,

-‘ ইশ খুব লাগলো বুঝি ‘?

দুচোখ উপচে পানি বেরিয়ে এলো আমার। আমার চোখে পানি দেখে নির্মল পিছনের মেয়েটিকে বললো,

-‘ তৃষা আজ এসো কাল মিট করবো ‘।

মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আমি একহাতে পিঠে চেপে ধরে ওঠে দাঁড়াতেই নির্মল আচমকা কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে আমার সামনে বসে। বলে,

-‘ এভাবে চিৎকার করলে কেনো? বার্থডে গিফ্ট নিচ্ছিলাম ঠিকভাবে নিতেও দিলে না? এবার তুমি দাও গিফ্ট ‘।

চোখ কটমট করে চেয়ে বললাম,

-‘ ছিঃ এতো নীচ তুমি? আবার দেখে ফেলেছি বলে মারলে আমায় সড়ো তোমার মুখ দেখতেও ঘৃণা হচ্ছে। এই শহরের প্রেম মানেই কি শুয়ে পড়া নাকি? সেদিন ফাহিম রুমডেটে গিয়েছিলো আজ তুমি ছিঃ ছিঃ ‘।

নির্মল আমার মুখ চেপে ধরে চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বললো,

-‘ ইশ রাগিনী ঘৃণার দৃষ্টি ফেলো না আমি একদম ফাহিমের মতো শুয়ে পড়িনি জাষ্ট লিপটেষ্ট চলছিলো ‘।

আমি ঠাশ করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম ওর গালে। মুখের ওপর থেকে হাত সড়িয়ে অবাক চোখে চেয়ে রইলো নির্মল। আমি ঘৃণার সুরে বললাম,

-‘ সামনে থেকে সড় আমাকে যেতে দে তোর মুখ যেনো আর না দেখি ‘।

আমার রাগ দেখে কেমন ভয় পেয়ে যায় নির্মল। আচমকাই আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। বলে,

-‘ বিলিভ মি সাবা গার্লফ্রেন্ডদের খুশি করতে এই কিসটুকুই করি এর বেশী ওরা আমার থেকে কিছু পায় না ‘

-‘ শয়তান ছাড় আমায় কয়টা মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করেছিস তুই ছিঃ আমাকে ছাড় আমাকে কি গার্লফ্রেন্ড পেয়েছিস যে লুইচ্চামি করবি আর আমি মেনে নেবো ‘?

নির্মল আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার চুলগুলো শক্তকরে হাতের মুষ্টিতে নিয়ে টেনে ধরে আর বলে,

-‘ একদম তুই তুকারি করবি না। অন্তত তোর মুখে তুই মেনে নেবো না ‘।

-‘ তুইও তো করছিস ছাড় বলছি’।

-‘ আমি করলেও তুমি করবেনা সাবা। আর এভাবে রাগ বা ঘৃণাও দেখাবেনা সরি আর কখনো কাউকে স্পর্শ করবো না ‘।

আমি ওর কথা শুনে শান্ত হয়ে বলি,

-‘ দেখো নির্মল স্পর্শ করো তবে একজনকে হাজার জনকে নয় এবং সে একজন যেনো অবশ্যই তোমার স্ত্রী হয় হাজার হাজার মেয়ের সাথে প্রেম করা তাঁদের নোংরা ভাবে ছোঁয়া কোন পুরুষ জাতির কাজ নয় ‘।

-‘ একজনকে স্পর্শ করতে চাই একজনকেই স্ত্রী রূপে পেতে চাই, একজনকেই ভালোবাসতে চাই একজনকেই আমার সকল প্রেম দিতে চাই সে একজনই হয়ে যাও তুমি ‘।

কথাটা শুনে এক ধাক্কা মেরে সড়িয়ে দিয়ে বিছানা থেকে ওঠে পড়ি তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলি,

-‘আমি তোমার সাথে বন্ধুত্ব ছাড়া কোন রিলেশনে জড়াতে পারবোনা। তোমার ঠোঁট দেখলেই আমার বমি আসছে। কতো বেটিগোর সেপ খেয়েছো কে জানে?

-‘তোমাকে রিলেশন করতে কে বলছে? আমি বলছি? আর তোমাকে তো দিনে রাতে আমার ঠোঁট খেতেও বলিনাই৷ তুমি শুধু আমার বুকে মাথা রেখে আমার অশান্ত বুক শান্ত করবে’।

-‘আমার মাথা অতো সস্তা না যে তোমার বুকে রাখতে যাবো’৷

-‘কিল,গুতা দিয়া নাক, মুখ ফাটাই ফেলবো। এমন মার মারবোনা জীবনে আর মুখের উপর কথা বলার সাহস দেখাবেনা৷ আসো বুকে আসো’। ধমকের সুরে বললো নির্মল।

আমি ওকে পাত্তা না দিয়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াই। ছাদে বাকিরা আড্ডা দিচ্ছে সেখানে যাবো ভেবেই দ্রুত পা ফেলি। কিন্তু নির্মল আচমকা আমাকে টেনে পিঠে তিনটে কিল বসায় আর বলে,

-‘ আজ থেকে সবগুলো গার্লফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ করে দিলাম। সেই সাথে আমার ন্যাকা গার্লফ্রেন্ডদের কিসসি করাও বন্ধ করে দিলাম। তুমি যেহেতু আমার গার্লফ্রেন্ড বা বউ কোনটাই হবে না সেহেতু তোমাকে কিসসি করতে পারবোনা তাই বন্ধু হিসেবে তুমি আমার থেকে পাবে শুধুই কিললি ‘।

চলবে..