কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-১৮+১৯+২০

0
2355

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::১৮

— তুমি কি ভেবেছো ,, তোমার মতো একটা চিপ ক্লাস মেয়েকে আমি ভালোবাসি।। নো ওয়ে ,, তোমার মত থার্ট ক্লাস মেয়েকে ভালোবাসা যায় না।। আর আমি তোমাকে এটা পরিয়ে দিয়ে দেখলাম,,,আমার ভালোবাসা মানুষটি পড়লে তাকে কেমন লাগবে ।।(উঠে দাঁড়িয়ে আবির)

আবিরের করা বিহেব গুলো ,,যত্নগুলো দেখে এক সময় আমার সত্যিই মনে হয়েছিলো ,,সে আমাকে হয়তো ভালোবাসে ।। কিন্তু না সে আমাকে ভালো বাসে না।। চোখের কোনে পানি টলটল করছে,, কিন্তু কিছু বলছিল না।। তখনি আবির এসে আমার পাশে বসলো ,,, আমার কাঁধে হাত রাখলো।। কেউ কাঁধে হাত রাখতেই কল্পনা জগৎ থেকে ফিরে আসি।। উঠে দাঁড়িয়ে যাই ।। একবার আবিরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললাম…

— আমি জানি ,,,আপনি আমাকে ভালোবাসো না ।। তাহলে ভালোবাসার মানুষের জিনিস টা অন্য কাউকে দিবেন কেন??

বলেই পা থেকে নুপুরটা খুলতে নেই।। সাথে সাথে আবির আমার হাত টা ধরে ফেলে ।।।

— তুমি কি ভাবছো ,,এই টা এখন আমি আমার প্রিয় মানুষটিকে পরিয়ে দেব ,, কখনোই না।। আমি তাকে সেকেন্ড ক্লাস কিছু দিতে চাই না।। ভাই ভাবির জন্য এতো কিছু করেছে আর আমি তার জন্য এইটুকু করতে পারবো না।।(আবির)

— বলছিলাম কি,,এই যে বাড়ি গিফট করা এইটা কি আপনার আইডিয়া।। না মানে নিবিড় ভাইয়া তো এলওয়েজ বিজি থাকে ,,তার দ্বারা তো তা করা সম্ভব নয়।।(কৌতূহল নিয়ে আমি)

— হে ,,এইসব আমি করেছি ।।কেমন হয়েছে বলো।।(ভাব নিয়ে আবির)

— ভালো !!( একটা উষ্ণ হাসি দিয়ে আমি)

— শুধু ভালো ,,আর কিছু না।। (আবির)

— ভালোবাসা মানে কেড়ে নেওয়ার না ।। ভালোবাসা মানে প্রয়োজন না ।। সারাজীবন পাশে থাকা ।। এই যে দেখুন আপনি আপনার ভাইকে এই আইডিয়া টা দিয়েছিলেন।। যেটায় আমার আপি খুশি হয়েছে।। কিন্তু সেটায় আপনার বাবা মা খুশি হবে না।। সত্যি কারের ভালবাসায় দামী বাড়ি কিংবা গাড়ির দরকার হয়না।। একটা ছোট কুঁড়ে ঘর আর সাইকেলই যথেষ্ট।।(আমি)

কথাগুলো বলে আবিরের দিকে তাকাতে দেখতে পেলাম সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। হঠাৎ আবির আমার হাত ধরে টেনে তার কোলে বসিয়ে দিল।। আমি ভয়ে তাড়াতাড়ি তার শার্ট আঁকড়ে ধরলাম।। আমরা একে অপরকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। আমাদের এই ব্যস্ততার অবসান ঘটালো নিবিড় ভাইয়া ফোন।। হঠাৎ ফোন আসতেই আমি আবিরের থেকে উঠে যেতে নিলাম।। কিন্তু সে আমাকে ছাড়লো না,, বরং আমার কোমর আঁকড়ে ধরে ফোনটা রিসিভ করে নিলেন।।
নিবিড় ভাইয়া আমাদের ভেতরে যেতে বললেন।।আমরাও একে একে ভেতরে গেলাম।। সত্যি ভেতরে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছিল।। কিন্তু কেমন সাজানো হয়েছিল সেটা বলতে পারবো না,,কারন ,, এখন সব সাঝ নষ্ট হয়ে গেছে।। যেমন বেলুন গুলো ফুটানো অবস্থায়,, ফুলের পাপড়ি গুলো মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।।
নিবিড় ভাইয়া নিজ হাতে আপির জন্য নুডুলস বানিয়েছে।। সেটা আমরা সবাই একসাথে টেক্স করছি।। খুব ভালো হয়েছে।। আপি আর নিবিড় ভাইয়া একে অপরের খায়িয়ে দিচ্ছে।।আবির আর আমি নিজে নিজে খাচ্ছি ।। এর মাঝখানে হঠাৎ আবির বলে উঠলো…

— এভাবে বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছো কেন ?? খায়িয়ে দিতে হবে নাকি ।। দিলে বলতে পারো ,,আমি তো তোমার বিয়াই হই ।। এটুকু বেয়ানের জন্য করতেই পারি।।

আমি মুখ ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিলাম।। হঠাৎ আবির আমার প্লেটটা নিয়ে নুডুলস তুলে আমার মুখে তুলে দিলো।।আমি সাথে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছি।।

— পরে আবার বলতে পারো ,, আমি তোমার মন বুঝি নি।।

খাওয়া দাওয়া শেষ আমার বাড়ি ফিরে এলাম।। ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছে।। আবির আর নিবিড় ভাইয়া আমাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে।। এসে দাঁড়িয়েছে দেখি নিহাল আঙ্কেল আর নিলিমা আন্টি বাড়ি চলে গেছে।।আমিও ফ্রেশ হয়ে পড়তে বসলাম।।

🌅। 🌅। 🌅

বেশি রাত করে ঘুমানোর কারনে ঘুম থেকে উঠতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।।তার উপর আবার আজকে এক্সাম আছে।। তাই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে না খেয়েই আমি ভাইয়ার সাথে বেরিয়ে এলাম।।
কেন্টিনে বসে বসে আমি পড়ছি আর ভাইয়া আমাকে খায়িয়ে দিচ্ছে।। আমি খেতে ইচ্ছে করছে না কিন্তু ভাইয়া না খায়িয়ে আমাকে কিছুতেই ছাড়বে না,,তাই বাধ্য হয়েই খেতে হচ্ছে।। তখনি আবিরের আগমন…

— কেমন আছো হিয়ান !!( পেছন থেকে আবির)

— এই তো আলহামদুলিল্লাহ;! তুমি!!(হিয়ান)

— আলহামদুলিল্লাহ!! বলছিলাম কি,,হিয়ান,,এই যে তুমি প্রতিদিন মিষ্টি কে দিয়ে যাও ।। কিন্তু কেন??

— আসলে একদিন,,ও পড়া নিয়ে ব্যস্ত এতোটাই ছিলো যে ,,এদিকে বেল দিয়ে এক্সাম শেষ হয়ে আর সে এখনো পড়ছেই।। তার পর বাড়িতে গিয়ে সে কি কান্না ।। তখন থেকে ৬ মাস ভালো ভাবে পড়েছে ।। খাওয়া দাওয়া করছে তখনও ইভেন্ট শাওয়াল নিতে গেছে বই নিয়ে গেছে।। তাই পাপার কড়া নির্দেশ ,,আমাকে সবসময় ওর এক্সামের সময় আসতে হবে আর ওকে ক্লাস রুমে পর্যন্ত দিয়ে যেতে হবে।।(হিয়ান)

— থামবি তুই,, তোদের জন্য কি আমি একটু শান্তিতে পড়তেও

আর কিছু বলার আগেই বেল বেজে গেলো।।তার এক্সাম দেওয়ার উদ্দেশ্যে এ হল রুমের দিকে পা বাড়ালাম।।আমি আসতেই ভাইয়া আর আবির সেখান থেকে চলে গেছে।।

🍁🍁🍁

৩ দিন হয়েছে আমার এক্সাম শেষ হয়েছে।। এই এইদিনে আবিরের সাথে টুকটাক কিছু নিয়ে আমার সাথে বেজেই থাকতো ।। আজকে আপির বিয়ের শপিং করতে যেতে হবে ‌।। তাই সবাই রেডি হচ্ছে।। তাসফি আর ঋতু ও এসেছে।। ওরা আমাকে সাজাচ্ছে।। জানি না কেন।। একটু আগে মাম্মাম একটা শাড়ি দিয়ে গেছে আর সেটা আমাকে পড়তে বলেছে।। আয়নাতে একবার নিজেকে দেখতেই চমকে উঠলাম।। আমাকে দেখতে একদম মহিলা মহিলা লাগছে। হঠাৎ মাম্মাম কেনই বা আমাকে এইভাবে সাজতে বলেছে সেটাই বুঝতে পারছি না।

আমি একা কেন পড়বো তাই ,,তাসফি আর ঋতু কেও পড়াবো ।। আমি তাসফি আর ঋতু কে শুধু এই বাড়িতে আনি নি ,,তার ও একটা কারণ আছে।। সেটা পড়ে বলবো।।
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে ড্রয়িং রুমের দিকে গেলাম,, সেখানে সবাই একসাথে বসে আছে।। আমি যেতে সবাই আমার আমার দিকে তাকিয়ে আছে ।। যাতে আমার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।। এর মধ্যেই আবির বলে উঠলো….

চলবে….💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::১৯

— এই মেয়ে শোনো ,,আমরা ওখানে তোমাকে বিয়ে দিতে যাচ্ছি না। তোমার এই ড্রেস আপ দেখে মনে হচ্ছে,,, শপিং না তোমার বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছি।।।(আবির)

— মাম্মাম দেখেছো আবির ভাইয়া কি বলছে ।। আমি এই ড্রেস কিছুতেই পড়বো ।। আমি বরং গিয়ে তুলে রেখে আসছি ।। (আমি)

— এই একদম যাবি না।। তোকে অনেক সুন্দর লাগছে।। আর শোনো তোমাদের বলছি,, হানির পাপা হানির বিয়ে ঠিক করেছে।। আর আজকে ছেলে নিজে ওকে দেখতে আসছে।।(রাইসা)

মাম্মামের কথায় যেনো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।। সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি।।

— মাম্মাম তোমার মাথা ঠিক আছে।। এখনো আমার পড়াশোনা কমম্পিট হয়নি ,, তাছাড়া আপি আর ভাইয়ের এখনো বিয়ে হয়নি।।(আমি)

— বিয়ের পরও লেখাপড়া করা যায় বুঝলি ।। তাছাড়া তোর বোনের বিয়ে তো কিছুদিন পর হবেই ।।সেটা তোকে ভাবতে হবে না।। তুই চল!!( রাইসা)

— যাবো তাই না।। ওকে দেখো এই বিয়েটা হয় কি না।। ( মনে মনে বলে আমি একটা ডেভিল স্মাইল দিলাম)

অবশেষে চলে এলাম শপিং মলে।। আসার সময় ১ টা গাড়িতে আপি আমি আর তাসফি বসেছি পেছনের সিটে।। আবির আর নিবিড় ভাইয়া বসেছিল সামনের সিটে।। অন্য গাড়িতে পাপা মাম্মাম আর নিহাল আঙ্কেল আর নিলিমা আন্টি।।অন্য আরেকটা গাড়িতে হিয়ান ভাইয়া আর ঋতু।।।
আসলে আমার সন্দেহ হিয়ান ভাইয়া আর ঋতুর মধ্যে
রিলেশন চলছে ।। তাই ওদের একটু আলাদা পাঠিয়েছি আর ওদের গাড়িতে ক্যামেরা রেখেছো এটা জানার জন্য যে আমার সন্দেহ ঠিক কিনা ভুল।।
আমরা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তাদের জন্য।। আমাদের পৌঁছানোর প্রায় ১৫ মিনিট পর তারা এসেছে।। আসতেই সবাই ভেতরের উদ্দেশ্য এ হাঁটা দিলাম।। এর মাঝখানে কেউ এসে আমার না ধরে ডাক দেয়।।আমরা সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে যাই ,,, পেছনে তাকিয়ে একটা ছেলেকে দেখতে পাই।। তার পড়নে ওয়াইট শার্ট,,ব্লাক জিন্স ,,চোখে কালোর মাঝে নীল রঙের সান গ্লাস।।হাতে ব্যান্ডের ওয়াচ ।। পায়ে ব্লাক রংঙের সু।।গায়ের রং মাএা অতিরিক্ত ফর্সা।। মুখের কোনে মিষ্টি হাসি।। দেখতে আবিরের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।।বরং বেশি কারন সে খুব মিষ্টি করে কথা বলে।।
মাম্মামকে গিয়ে পা ধরে সালাম করলো । মাম্মাম ও তাকে জরিয়ে ধরলো।। তারপর ছেলেটি আমাদের কাছে এসে বললো….

— আচ্ছা ,, আপনাদের মধ্যে হানি কে ,, জানতে পারি!!

— আমরা ৩ জনই হানি ।।(ঋতু)

— আসল হানি কে !!( তাসফি)

— আপনি খুঁজে নিন!!(আমি)

ছেলেটা আমাদের দিকে কেবলার মতো তাকিয়ে আছে।। আমি ঋতু,,তাসফি এক সাথে থাকার কারধে ছেলেটা আমাকে চিনতে পারছে না।।

— হানি তুই কি তাহসিনের সাথে মজা শুরু করে দিয়েছিস নাকি ?? (ঋতু আর তাসফিকে উদ্দেশ্য করে রাইসা ) তাহসিন হানি সাথে দেখা করতে এসেছে,,তোমরা আমাদের সাথে আসো ,,আর হানি তুই তাসিনের সাথে যা ।।

এতোক্ষণে বুঝলাম ছেলেটার নাম তাহসিন।।
— কিন্তু মাম্মাম আমার তো ফোন কিনতে হবে !!(আমি)

— তুই তাহসিনের সাথে যা তাহসিন কিনে দিবে।।(তাহসিন কে উদ্দেশ্য করে রাইসা) বাবা তুমি পারবে না।।

— সিউর আন্টি,, আপনি যান আমি কিনে দিবো !!(তাহসিন)

বলতেই মাম্মাম ঋতু আর তাসফিকে নিয়ে চলে গেল।। সাথে সবাইকে নিয়ে গেল।। যাওয়ার আগে আবির একবার অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে গেছে।। জানি না, আবার কি বলে ।। যা বলে বলুক আমার কি তাতে ।। তাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে অন্যদিকে মন দিলাম।।

— তুমি দেখতে অনেক সুন্দর।। আমি আসার পর থেকেই শেষ্ঠাটার কাছে একটাই প্রার্থনা করেছি ,,যাতে তুমি হানি হও !!((অদ্ভুত দৃষ্টি দিয়ে তাহসিন)

— কেন??( কৌতূহল নিয়ে আমি)

— কারন ,, কোনো মেয়েকে রিজেক্ট করতে এসে তার উপর ক্রাশ খেয়েছি ।।(তাহসিন)

তারপর আমরা একসাথে ফোন কিনতে গেলাম।। ফোনের বিলটা আমিই সে করেছি ।। তাহসিন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি আমি অন্যোর জিনিস নিয়ে আগ্ৰহী নই।। ফোন কিনে তাহসিন আমাকে একটা জুয়েলারি দোকানে নিয়ে গেল।। আমি যেতে চাই নি,,,,জোর করে নিয়ে গেছে। সেখানে অনেক গুলো রিং বের করে আমাকে চুজ করতে বললো।। কিন্তু আমি তার দেওয়া জিনিস নিতে চাই নি,, কিন্তু সে দিবেই দিবে । তার কথাই একটা ।। প্রথম বার তোমার সাথে দেখা হয়েছে,,,খালি হাতে তোমার মুখ দেখি কি করে ।।
শেষে তিনি নিজেই একটা রিং পছন্দ করলেন ।। বিলটা পে করে যেইনা আমার হাতে রিংটা পড়িয়ে দিবে অমনি আবির এসে অন্য একটা রিং আমার হাতে পড়িয়ে দিলো।। কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম এটা।। আমি আর তাহসিন একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছি আর ঘটনাটা বুঝার চেষ্টা করছি।। আমি কিংবা তাহসিন কিছু বলবো তার আগেই আবির আমার হাত ধরে টেনে সেখান থেকে নিয়ে গাড়ির বসিয়ে দিয়ে গাড়ি ড্রাইভ‌ করতে মন দিলো ।। আমি স্পষ্ট ওর রাগ দেখতে পারছি ।। কিন্তু রাগ করার কারণটা ধরতে পারছি না।।
কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামালেন একটা ছোট নির্জন ব্রিজের উপর।। গাড়িটা থামিয়ে আবির গাড়ি থেকে নেমে সোজা ব্রিজের রেলিং এর উপর বসে বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।। অনেকক্ষন ধরে আবিরকে আসতে না দেখে আমিও গাড়ি থেকে নেমে আবিরের পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রাখতেই আবির আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।। ঘটনাচক্রে আমি পুরো জমে গেছি।। আমি আবিরের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।।তাই চেষ্টা করে নিজের শক্ত অপচয় করা বন্ধ করে দিলাম।। একসময় আবির নিজেই আমাকে ছেড়ে দিলো ।। আমি অনেক বার জানতে চেয়েছি কি হয়েছে কিন্তু কিছুই বলেনি।। সন্ধ্যার সূর্য অস্ত পর্যন্ত আমাকে ওখানে বসিয়ে রেখেছে,,পড়ে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে।।।। সাথে নিজেও বসে ছিলো ।।

সারা রুমে জামাকাপড়ের ছড়াছড়ি ।। কালকে সবাই একসাথে গ্ৰামে যাবে ,,, কিন্তু আমি যেতে পারবো না।।পরশু দিন আমার রেজাল্ট দিবে ,,তাই রেজাল্ট নিয়ে একসাথে যাবো ।। সব জামাকাপড় প্যাক করার জন্য নামিয়ে ছিলাম কিন্তু আহাদ ফোন করে জানিয়েছে ,, রেজাল্ট এর কথাটা ।। তাই আর যাওয়া হচ্ছে না ।। আর প্যাকিং করাও হচ্ছে না।। এর মধ্যে মাম্মামের আগমন….

— তুই যাবি না,,,সেটা জানি ।। কিন্তু প্যাকিং টা তো করতে পারিস ।। যাওয়ার সময় আমরা না হয় তোর জামাকাপড় নিয়ে যাবো ।। তুই রেজাল্ট নিয়ে ওখান থেকে সোজা চলে যাবি !!( রুমে ঢুকতে ঢুকতে রাইসা,)

একবার মাম্মামের কথাটা ভেবে দেখলাম।। তিনি ভুল বলছে না,, তাই আমিও রাজি হয়ে গেলাম।।তাই প্যাকিং করতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। হঠাৎ একটা ফোন আসার কারনে আমার প্যাকিং এ ব্যাঘাত ঘটে।। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখি ,,, অচেনা কোনো একটা নাম্বার থেকে।। প্রথমে রিংটোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো।। পরে আবার রিংটোন বাজতেই রিসিভ করে নিলাম।।

— আসসালামুয়ালাইকুম,,, কে বলছেন??(আমি)

— আলাইকুম সালাম!!আমি তাহসিন বলছি !!

— ও আচ্ছা আপনি ,, আপনি আমার ফোন নাম্বার টা কোথায় পেলেন!(আমি)

— আন্টি দিয়েছে।।

— ওয়াট ,,আপনি আমার মায়ের কাছে থেকে আমার ফোন নাম্বার নিয়েছেন।।কি এমন বলবেন ,,যে আমার মায়ের কাছ থেকে আমার ফোন নাম্বার নিলেন??(কৌতূহল নিয়ে আমি)

চলবে….💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::২০

— তুমি একদম রসগোল্লার মত,, কিন্তু পুরাই হট ।। যে খাবে সেই বুজবে ,সেটা কতো টেস্টি।।তোমার এই টেস্টটা না নিয়ে থাকতে পারছিলাম না।।তাই তো তোমার মায়ের কাছ থেকে ফোন নাম্বার টা নিলাম।।(তাহসিন)

— আমি জানি ,,এই ধরনের ভাষা ব্যবহার করা আজকাল কমন একটা বিষয় কিন্তু এতে আমি অভ্যস্ত নই ,,তাই পিলিজ আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন না।।

রাগ দেখিয়ে বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে মাথা ঠান্ডা করে আবার প্যাকিং এ ব্যস্ত হয়ে গেলাম।।

🌅 🌅 🌅
অলরেডি দুপুর ২ টা বেজে গেছে।। সবাই রেডি হয়ে গেছে।। কিন্তু এদিকে আমার কোনো খবর নেই।। আমি আমার মতো নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছি।। কি করবো কালকে যখন আমি প্যাকিং শেষ করে ঘুমাতে গিয়েছিলাম তখন ই সেই মিষ্টি প্রেমিকের মেসেজ চলে আসে।। এতো দিন এক্সাম তার উপরে আবার ফোন ছিলো না,,তাই একদমই কথা হয়নি।। যতোকথা জমে ছিল সব এক রাতেই শেষ করেছি ।। এখন রাতের সেই ঘুম ঘুমাচ্ছি।।
হঠাৎ কোথা থেকে ভাইয়া এসে আমার মুখে পানি ঢেলে দিলো। আমি লাফ দিয়ে উঠে বসলাম।। চারদিকে চোখ বুলিয়ে আপি আর ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। আমার ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দিয়ে ,,তারা দাঁত কেলিয়ে হাসছে।।

— সারা রাত বুঝি হবু জিজুর,,আই মিন তাহসিনের সাথে কথা বলে ।।এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস !!( হিয়া)

— আরে বেচারি প্রথম তো এতো কথা বলেছে তাই তো দিনে এমন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।।(হিয়ান)

— একদম ঠিক বলেছিস তোরা,, আমি তো আর আগে কখনো তোদের মতো নিবিড় ভাইয়া কিংবা ঋতুর সাথে রাত জেগে কথা বলনি,,তাই এই টুকু ।।নো প্রবলেম একদিন আমার টাও ঠিক হয়ে যাবে ।।(প্রিন্ট করে আমি)

ঋতুর কথা বলতেই হিয়ান ভাইয়ার কাশি শুরু হয়ে গেলো।।আপি তো আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।।আমি কি বোঝাতে চাইলাম,,সেটা সে এখনো বুঝতে পারে নি।।

— ককে বলেছে আমি ঋতুর সাথে রিলেশন করি !!(তুতলিয়ে হিয়ান)

— কে বলেছে,, আমি তো একবার ও বলি নি যে তুই ঋতুর সাথে রিলেশন এ আছিস।। তুই তো নিজের মুখে নিজেই এইমাএ বললি ।।(ইনোসেন্স ফেইস করে আমি)

ভাইয়া এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছে,,যে আমি তার সত্যি টা ধরে ফেলেছি ,,তাই পানি খাওয়ার অজুহাত দিয়ে পালিয়েছে।। আর আপি সেও মাম্মাম ডাকছে বলে পালিয়েছে।।
তারপর আমি শাওয়াল নিয়ে একসাথে সবার সাথে লান্ধ করে নিলাম।। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিকেলের দিকে পাপা মাম্মামদের সাথে আমিও আবিরদের বাড়িতে গেলাম।।সবাই যেহেতু একসাথে গ্ৰামে যাবে সেহেতু আগে সবাই একসাথে থাকলেই ভালো হয়।।

রাত জাগার কারণে এদিকে আমি সোফার উপর বসে হাই তুলছি তো অন্যদিকে আমার মুখোমুখি সোফায় আবির বসে সেও হাই তুলছে।। বাকি সবাই একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার আবিরের দিকে তাকাচ্ছে।। সবার নিরবতা ভেঙ্গে আমি বলে উঠলাম…..

— তোমরা কখন যাবে যাও তো ,, আমি বাড়ি ফিরবো ।। তারপর একটু ঘুমাবো তো ।। (হাই তুলতে তুলতে আমি)

— বাড়ি যাবে মানে ,,, তুমি কি তোমার বোনের বিয়েতে যাবে না,,নাকি !!!(নিহাল)

— কালকে ও ঠিক প্লেনে করে চলে যাবে ।। আসলে কালকে ওর এক্সামের রেজাল্ট দিবে,,আর সে তা নিয়ে কিছুতেই যাবে না।।(তানজিম)

— আর ইউ সিউর ,,তুমি একা যেতে পারবে !!! না যেতে পারলে বলো ,, আবির তোমাকে কালকে নিয়েই না হয় একসাথে যাবে !!(নিলিমা)

— না আন্টি দরকার নেই।। আমি ঠিক পৌঁছে যাবো । তার চেয়ে বরং আপনারা চলে যান ।(আমি)

— সে চিন্তা তোমাকে করতে হবে না,, কালকে ফাস্ট ইয়ারের রেজাল্ট দিবে।। সিনিয়র হিসেবে তো আমার একটা দায়িত্ব আছে।। স্যার আমাকে বলেছিলো ,, কিন্তু সেটা আমার মাথা থেকে একদম বেরিয়ে গিয়েছিল।।কালকে নাহয় রেজাল্ট দেখে তারপর তুমি আর আমি একসাথে যাবো ‌।

বলেই আবির হনহন করে বেরিয়ে গেল।। সবাই একবার আবিবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেদের মতো গ্ৰামের উদ্দেশ্য এ বেরিয়ে গেল।। আমি বাড়ি ফিরতে চেয়েছিলেন কিন্তু রাত হওয়ার আর যাওয়ার হলো না।। আবিরের পাশের রুমটা নিবিড় ভাইয়ার।। সেটাতেই আজকের রাতটা থাকতে হবে।। কি আর করার এখন বেডে শুয়ে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি ।। একদম ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন নেই ,,নাহলে মিষ্টি প্রেমিকের সাথে কথা বলতাম।। আচ্ছা ,, মিষ্টি প্রেমিকের কাছে আমার সব খবর আছে,, কিন্তু আমার সিম কার্ডের নাম্বার টা নেই কেন?? আর কোনো চিন্তা না করে সোজা বেডে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম,, হঠাৎ ই পানির তৃষ্ণা পায়।। কিন্তু আফসোস রুমে এক ফোঁটাও পানি নেই ।। কাজের লোকদের ছুটি দিয়ে দিয়েছি এক সপ্তাহের জন্য তাই পানি আনতে আমাকে নিজেরই নিচে যেতে হবে।।
তাই আস্তে আস্তে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।। সারা বাড়ি অন্ধকার।। হয়তো আবির সব লাইট অফ করে দিয়েছে।। কি কিপ্টারে বাবা ।। অন্ধকারে গেলে পড়ে যেতে পারি তাই রুমে এসে ফোনটার ফ্ল্যাশ লাইট টা অন করে নিচে গিয়ে পানি নিয়ে এলাম।। পানি নিয়ে রুমে ঢুকতেই গিটারের টুংটাং শব্দ শুনতে পেলাম।। শব্দ টা আবিরের রুমের থেকে আসছে।। তাই আর রুমে না ঢুকে আবিরের রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।। রুমে ঢুকতেই রুমের লাইট অফ দেখতে পেলাম।। বেলকেনিতে ডিম লাইটের আলো দেখা যাচ্ছে আর গিটারের শব্দ টাও সেখান থেকে শোনা যাচ্ছে,,তাই আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলাম।। আবির দোলনায় বসে হাতে গিটার নিয়ে গান গাইছে।।

🎶 ওরে ইচ্ছে করে বুকে ভেতর
‌‌ লুকিয়ে রাখি তারে ,,,
যাতে না পারে সে যেতে আমায়
কোনোদিন ও ছেড়ে 🎶

আবির সত্যি ই এতো সুন্দর গান গাইতে পারে জানতাম না।। এটা হয়তো ওর + পয়েন্ট।। আমি চোখ বন্ধ করে ওর গান অনুভব করার চেষ্টা করছি।। হঠাৎ হাতের সাথে টেবিলে রাখা ফুলদানিতে লেগে ,,,সেটা পড়ে যায়।। কিছু পড়ার আওয়াজে আবির গান থামিয়ে রুমে এসে বলতে থাকে ।।

— কে ওখানে!!!

— আমি!!( মাথা নিচু করে আমি)

— ও তুমি ।। জানো না বুঝি,,আরেক জনের রুমে আসার আগে নক করে তার পারমিশন নিয়ে হয় ।। নাকি সেটাও জানা নেই তোমার ।। তাহলে জানো টা কি বলতে পারো ।।( চেঁচিয়ে বললো আবির)

— সসরি ,,আসলে ভুল হয়ে গেছে।। খুব পানির তৃষ্ণা পেয়েছিলো ,তাই নিচে থেকে পানি এনে যখন জিজুর রুমে ঢুকছিলাম তখন আপনার রুম থেকে গিটারের আওয়াজ আসছিলো,,তাই পারমিশন নিয়ে ভুলে গেছি ।।(মাথা নিচু করে করুন সুরে আমি)

আর কিছু বলার আগেই আমি আবিরের রুমে থেকে বেরিয়ে আসতে পা বাড়াতেই পেছন থেকে আবির টেনে আমাকে তার রুমে নিয়ে আসে।।

— এই মেয়ে আমি তোমাকে যেতে বলেছি ,,যে তুমি চলে যাচ্ছো।।(অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে আবির)

আর কিছু বলবো তার আগেই আমার ফোনটা বেজে উঠলো।। তাকিয়ে দেখি ,, তাহসিন ফোন করেছে ,,তাই ফোনটা কেটে দিলাম।। সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠল।। আবার কেটে দেওয়ার আগেই আবির আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে ছুড়ে ফেলেদিলো।। সাথে ফোনটা ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে গেলো।।

— রুমে গিয়ে প্রেম আলাপ করবেন তাই ,,আমাকে ইগনোর করে চলে যাচ্ছো তাই না!!( আমার দুই বাহু ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে চেচিয়ে বললো আবির)

— তাতে আপনার কি?? আর আপনি কেন আমার জিনিস টাচ করেছেন ?? একটু আগে না আমাকে মেনায সেখালেন তাহলে এখন কোথায় আপনার মেনায।। (অন্যদিকে তাকিয়ে আমি)

তারপর আবির আমার হাত থেকে পানির জগটা নিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দিয়ে নিজে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে,, আমার হাত দুটো ধরে করুন সুরে বলল….

— আমি সবসময় তোর সাথে বাজে বিহেব করি তাই না।। আমি খুব খারাপ তাই না ।। তুই কি সত্যি আমাকে বুঝতে পারিস না ।। বুজতে পারিস না আমার মন কি চাই ।। সত্যি ই কি বুঝিস না কেন আমি তোর সাথে এমন করি ।। আমাকে কি তোকে বলে বোঝাতে হবে বল…..।। তাহলে #কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿আমাকে তাহলে ততবারই তোকে বোঝাবো ।।

চলবে….💞💞

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)