#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::২৯
শাড়ির একটা কোন মাথার উপর থাকা সিলিং ফ্যান টার সাথে ভালোভাবে বেঁধে নিলাম,, আরেকটা কোন গলায়।।একবার নিজের অবস্থাটা যাচাই করছি আমি।।
একদিন আমি ঠিক এই শাড়িটা পড়েই আবিরের সাথে নতুন জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখেছি,,আজ এই শাড়িটা
পড়েই টানতে হচ্ছে জীবনের ইতি।। যদি এই জীবনে আবিরকে ভালোবাসার মতো ভুল না করতাম ,,তাহলে আমার সাথে আজ এটা কিছুতেই হতে পারতো না ।। কিন্তু আবিরেরই বা দোষ টা দেই কি করে যেখানে আমার নিজের দোষ।। ভালো থাকুন আপনি আবির ,,ভালো থাকুন সবাই ।। আল্লাহ হাফেজ ,, পৃথিবী।।
আর কিছু মাথায় আসার আগেই চোখ দুটো বন্ধ করে পায়ের নিচে থাকা টুলটাকে জোরে একটা লাথি দেই।। সাথে সাথে সেটা আওয়াজ করে নিচে পড়ে যায়।। ফ্যানের সাথে জুলতে থাকে আমার দেহটা ।। মনে হচ্ছে এই বুঝি প্রানটা দেহ থেকে বেরিয়ে গেল।। অনেক বার সংবাদ পএ ,, রেডিও ,, খবর,,বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় দেখেছি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার কথা ।। কিন্তু নিজের জীবন দিয়ে তা উপভোগ করবো কখনো ভাবতে পারিনি।। একটা মানুষ কতটা আঘাত পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ,,সেটা এখন আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।।যখনি দেহটা নিস্তেজ হয়ে ঝুলে পড়বে ঠিক তখনি কেউ একজন এসে আমাকে তুলে ধরে ।। পা দুটো জরিয়ে ধরে উঁচু করে রেখেছে আমাকে ।। একটু নিচু হয়ে টুলটা পা দিয়ে এনে আমার বরাবর রেখে আমাকে নামিয়ে আনলো সেখান থেকে।।কাশতে কাশতে গলাটা যেন সেখানেই আঁটকে গেছে।। একবার তাকিয়ে সামনের থাকা মানুষটিকে দেখবো ,,তার আগে ঠাস করে একটা চড় পড়ে আমার গালে ।। সাথে সাথে ছিটকে পড়ে যাই নিচে ।। একটু আগে ভাঙা কাঁচ গুলো হাতে ঢুকে রক্ত বের হতে শুরু করে দেয়।।
ঠাস করে কিছু একটা ভাঙার শব্দে তাকিয়ে দেখি ,,বেডের উপর টুলকা বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে।। এতোক্ষণে মানুষটাকে খেয়াল করলাম,,,সে আর কেউ না আবির।।
— হে দোষ করেছি আমি ।। অনেক বড় অন্যয় করেছি তোমাকে একা ওখানে ফেলে রেখে এসে।।আমি জানি,, তুমি আমার জন্য অনেক অপেক্ষা করেছি ।। কিন্তু এক্সযেকলি কি হয়েছিলো,সেটা তো একবার শুনবে।। আমাকে মারতে চাও মেরে ফেলো ,, কিছু বলবো না তোমায়।। কিন্তু আমাকে ছেড়ে চলে গিয়ে ,,, আমাকে এতোবড় শাস্তি দিও না।।।
আমাকে নিচ থেকে তুলে কথাগুলো বলেই শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো।। আমি জরিয়ে ধরলাম।। মনে হচ্ছে,,,এক নিমিষেই আমার সব কষ্ট দূর হয়ে গেছে।। কিন্তু পরক্ষনে আবিরের করা কাজগুলোর কথা কথা মনে পড়তেই ,, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে,,তার শার্টের কলার চেপে ধরলাম বলতে লাগলাম…..
— আমি কি চাই আমার কাছে ।। কিছু নেই।। তাহলে কেন বাঁচিয়ে দিলেন আমায় ,, চলে যেতে দিন না এই কলক্তিত জীবন থেকে।।(কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি)
এতোক্ষণে সবাই এসে আমার রুমে হাজির হয়েছে।। যতোটা না অবাক হয়েছে এতো রাতে আবিরকে আমাকে রুমে দেখে তার চেয়ে বেশি হবাক হয়েছে এই অবস্থায় দেখে।। মাম্মাম তো রীতিমত কান্না শুরু করে দিয়েছি,, পাপা আর ভাইয়া মুখের চিন্তায় ছাপ ।। একটু আগেই আমি হেসে হেসে কাটলেট খেলাম ,,আর এখন কি না আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছি।।
— হানি তুই এটা কিভাবে পারলি করতে ,,এটা নিচ কাজটা করার আগে ,, আমার মুখ টা তোর মনে পড়লো না,,,মনে পড়লো না কতো আদর ভালোবাসা দিয়ে তোকে মানুষ করেছি !! (কাঁদতে কাঁদতে রাইসা)
— হানি মা জানি ,, তুই ডিপ্রিশনে আছিস,, কি সেই সমস্যার মানে এই নয় যে নিজেকে শেষ করে দেওয়া
।(দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে তানজিম)
— এই তুই আমাদের ভালোবাসিস,, সারাজীবন তোকে হারানোর কষ্ট কিভাবে মেনে নিতাম বল….!!( হিয়ান)
সত্যি এতোটা নিচ আমি কিভাবে হয়ে গেলাম।। আমার একবারও আমার পরিবারের মানুষগুলো কথা মনে পড়লো না।। একবারও ভাবলাম না ,, তারা কতোবার কষ্ট পাবে।। ঠাস করে নিচে বসে পড়লাম আমি ।।
— আঙ্কেল ,,আমি আজ আপনার কাছে আপনার একটা অতি মূল্যবান জিনিস চাইবো দিবেন।। আমি কথা দিচ্ছি ,,সারা জীবন আগলে রাখবো।।প্রমিজ!!( করুন সুরে আবির)
— কি জিনিস বাবা !!( কৌতূহল নিয়ে তানজিম)
— বাহিরে চলুন বলছি!!
তারপর পাপা মাম্মাম, ভাইয়া বাহিরে চলে গেলো ।। যাওয়ার আগে আবির নীল শাড়িটা ফ্যান দিয়ে খুলে নিয়ে গেলো ,,সাথে আরো নিয়ে গেলো তার দেওয়া সব জিনিস গুলো।। নিজের করা নিচ কাজগুলোর কথা ভাবতে ভাবতে বেডের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে পড়লাম।।
🍁🍁🍁
সকালে হতে না হতেই আমাদের বাড়িতে হাজির হয়েছে আপি ,, হয়তো কালকে রাতের ঘটনা আবির তাকে বলে দিয়েছে।। এসেই জানালার পর্দা গুলো খুলে দিলো সে ।।সাথে সাথে রুমের ভেতরে উঁকি দিলো সূর্যের রশ্মি।। অনেকদিন পর চোখের পাতায় সূর্যের আলো পড়তেই ঘুমের দেশ থেকে বিদায় নিলাম আমি।। তাকিয়ে দেখলাম,, পুরো রুম আলোকিত আর আমার হাতে ব্যান্ডজ করছে আপি।। সাথে মাম্মাম,পাপা, ভাইয়া।। মাথাটা নিচু করে রেখেছি আমি।। কিন্তু কেউ কোনো কথা বলছে না।।
— সরি ,, আমি ভুল করে ফেলেছি।। আর কখনো এমন করবো না।। আগের মতো সৎবাবা হওয়ার চেষ্টা করবো সবসময়!! এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।। (মাথা নিচু করে করুন সুরে আমি)
— ভুল যখন করেছিস,,,শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে ।।(তানজিম)
— ঠিক আছে ।। আমি সব শাস্তি মাথা পেতে নিবো (আমি)
— প্রমিজ করছিস তো!!( হিয়া)
— প্রমিজ!!(আমি)
— এই নে শাড়িটা পড়ে রেডি হয়ে নে !! কিছুক্ষণ পর কাজি আসবে তোদের বিয়ে পড়াতে !!( একটা লাল রঙের শাড়ি এগিয়ে দিয়ে রাইসা)
— ওয়াট বিয়ে!!( অবাক হয়ে আমি) দেখো মাম্মাম আমি বিয়ে করতে পারবো না।।
— তুই কিন্তু প্রমিজ করেছিস ।। আর কাউকে প্রমিজ করলে তা রাখতে হয় ।। (হিয়ান)
— যদি এই বিয়েটা না করিস তাহলে তুই কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারবি না,, কিছুদিন পর দেখা যাবে তুই আবার সুইসাইড করার চেষ্টা করবি ।। মা হয়ে নিজের সন্তানের মৃত্যু টা নিজের চোখে দেখতে পারবো ।। তাই তুই যদি আজকেই বিয়েটা না করিস তাহলে এই পৃথিবী আমাকে ছাড়তে হবে।।(রাইসা)
নিজের চোখে নিজের মায়ের মৃত্যু কোনো সন্তানই দেখতে পারে না ।। তাই হাজার না চাওয়ার সওেও নতুন জীবন শুরু করার জন্য রাজি হয়ে গেলাম।।
লাল শাড়ি ,,হালকা সাজে আপি তৈরি করে দিলো আমাকে ।। ঘরোয়া ভাবেই বিয়ের সব তোরজোর চলছে ।। তবে খামতি নেই কোনো বিষয়ে।। শুধু নেই মুখের সেই তৃপ্তিকর হাসি ।। আচ্ছা ,, আমার বিয়েটা কি তাহসিনের সাথে হচ্ছে।। হতেও পারে ,,পাপা তো আগেই তাহসিনের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো।। নাকি অন্যকেউ।।
একটু পর কাজি এসে বিয়ে পড়াতে শুরু করলেন।। কবুল ৩ টা বর্ন হলেও মনে হচ্ছে ,,একটা ইতিহাস বইয়ের থেকেও বেশি ,, মুখ থেকে বের করতেই পারছি না।। ধলা পাকিয়ে যাচ্ছে গলায়।। অবশেষে কবুল বলেই দিলাম। ৩৫ মিনিটের বেশি সময় লেগেছিলো । এই তিনটা বর্ন উচ্চারণ করতে।। ব্যাস হয়ে গেলাম অন্য কারো বউ।।
থমকে গেলাম তখন,,যখন আমি আমার পাশে আবিরকে বসানো হলো ।। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না,,এখন আমি কার পরিচয়ে পরিচিত হবো।। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম।।চাইনা সবার সামনে এভাবে সিন ক্রেট করতে ,,তাই চুপ করে সব সহ্য করে নিলাম।।
গাড়ি চলেছে নিজের আপন গতিতে।। এগিয়ে চলেছে সময়।। আমি চলেছি আর শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্য এ।। খুব কষ্ট হচ্ছিলো সবাইকে ছেড়ে আসতে কিন্তু তবুও আসতে হলো।। শুনেছিলাম ,,যখন মেয়েরা নিজের বাড়ি ছেড়ে শ্বশুরবাড়িতে যায় ,,তখন তাদের একমাত্র ভরসায় মানুষ হয় তার স্বামী ,, কিন্তু আমার ক্ষেএে তা আলাদা।। অবশেষে এসে পৌঁছালাম নিজের নতুন গন্তব্য এ।।।
🍂🍂🍂
বউ সেজে বসে আছি বাসর ঘরে ।। তবে ভয়,, সংকোচ, কিংবা ভালোবাসা নিয়ে নয় বরং একরাশা ঘৃণা আর অভিমান নিয়ে।। আজকে আসুক আবির আজ ওর একদিন আর আমার যেকদিন লাগে লাগুক।।।
চলবে….💞💞
#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩০
বাসর ঘরে কেউ হয়তো তার স্বামীকে এমন উপহার দেয় না,,যেটা আমি দিলাম।। বাসর ঘরে আবির পা রাখতেই ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলাম তার গালে।। কিন্তু তার ভাবের কোনো পরিবর্তন হলো না।। দেখে মনে হচ্ছে ,,,এটা সে আগেই ভেবে রেখেছিলো ।।
তার পাঞ্জাবির কলার টা টেনে ধরে জোরে জোরে বললাম….
— কি বলে আমার পাপা মাম্মাম কে রাজি করিয়েছেন।। আমার জীবনটা তো আগেই নষ্ট করে দিয়েছেন ,, এখন কি মেরে না ফেলা অবধি শান্তি পাবেন না আপনি ।। জানি পুরুষ দের লজ্জা নেই আপনার কি আত্মসম্মান বোধ ও নেই।। কেন অভিশাপ হয়ে আমার জীবনে এসেছিলেন আপনি ।। আমি কি আপনি ভালোবেসে ভুল করেছিলাম,,,মার মাসুল আমাকে সারাজীবন ধরে দিতে হবে।।(কাঁদতে কাঁদতে বললাম আমি)
আমার কথায় সামনে থাকা লোকটার কোনো ভাবাবেগ হলো না,,, সে আস্তে করে আমার হাতটা তার কলার থেকে ছাড়িয়ে ,,, আলমারি খুলে একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন।। আমি নামক যে একটা প্রানী আছি ,,,তার ভাব দেখে তা বোঝা যাচ্ছে না। আচ্ছা আমি যে ওনার গালে চড় মারলাম ,,সেটা কি ওনার গালে লাগে নি ।। না কি আমি মরে টরে গেছি।। কিন্তু তবুও আমি দমে গেলাম না,,, ওয়াশরুম থেকে আবির বের হলেই আজ একটা বিহিত করে তারপর যা করার করবো ,,,এই ভেবে বেডে বসে পড়লাম।। এতোক্ষণে খেয়াল করলাম,,,রুমটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো।। হাজার গোলাপ ফুলের সংখ্যা অনেক বেশি।। এই হাজার গোলাপ ফুল টা আমার বরাবারই খুব পছন্দের।। একটা থোকায় অনেক গুলো রং বেরঙের গোলাপ ফুল ফুটে থাকে ,,যেটা সহজেই আমার মন কেড়ে নেই ।। কিন্তু আজকে আমার মন আর কেড়ে নিতে পাড়লো না,,,সব ফুল গুলোকে ছিঁড়ে নষ্ট করে দিয়ে বেডে বসে আছি আমি।। দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে এই ফুল গুলোর উপর দিয়ে বর্ন্যা চলে গেছে।।
প্রায় ২০ মিনিট পর ওয়াশরুমের দরজা খুলে আমি বেরুলো।। পানিতে ভারী হয়ে চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে,, আর সেই পানি বেয়ে তার টি শার্ট ভিজে যাচ্ছে।। শরীরে পশমের গোড়ায় গোড়ায় বিন্দু বিন্দু পানি।। হাতে টাওয়াল ।।আবিরকে দেখতে সত্যি ই অনেক মোহনীয় লাগছে।।দেখে মনে হচ্ছে ,, এখনি শাওয়াল নিয়েছে।। অন্যকোনো দিন হলে আমি গিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরতাম,,, কিন্তু সেটা আর সম্ভব নয়।। আমার ভাবনার অবসান ঘটালো আবির…
— যাও অজু করে এসো ।। একসাথে নামাজ আদায় করবো।। আর হে আজকে থেকে যেন এক ওয়াক্ত নামাজ ও মিস না যায়।। (আলমারি থেকে জায়নামাজ বের করতে করতে আবির)
কিছু বলবো তার আগেই নামাজের কথাটা বলায় আর কিছু বলা হয়ে উঠে নি।।তাই আমিও অযু করতে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম।। কিন্তু এতো ভারী শাড়ি পড়ে কিভাবে নামাজ আদায় করবো তাই একবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে পেছনে তাকাতেই,,, আবির আলমারি থেকে একটা চুড়িদার বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো আর বললো….
— তোমার প্রয়োজনীয় সব জিনিস আলমারিতে রাখা আছে।। যখন যেটা লাগবে নিয়ে নিবে।। আর এখন গিয়ে শাওয়াল নিয়ে নাও,, আমি অপেক্ষা করছি।।
শাওয়াল নিয়ে ২৫ মিনিটের মাথায় বেরিয়ে এলাম।। এখন নিজের ওজন ১০ কেজি কম মনে হচ্ছে।। এসে দেখলাম,,, পুরো রুম গোছানো।। ফুলের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না,, হয়তো গুছিয়ে ফেলে দিয়েছে।।ফ্লোরে দুটো জায়নামাজ বেছানো ।। তাই আর দেরি না করে আবিরের সাথে নামাজ আদায় করে নিলাম।। কিন্তু এই ছেলে যে আমাকে শান্তি কিছুতেই দিবে না।। আগে যখন আবিরের রুমে এসেছিলাম তখন সোফা দেখেছিলাম,, কিন্তু আজকে তার চিহ্ন মাএ নেই।। সেখানে এখন একটা বড় পড়ার টেবিল রাখা।। নিচে যে শুবো ,,বালিসটা রাখার আগেই আবির এসে সেখানে এক বালতি পানি ঢেকে দিলো।। আমি একবার আবিরের দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার ফ্লোরের দিকে তাকাচ্ছি ,, তারপর কড়া কড়া গলায় বললাম….
— কি হচ্ছে টা কি,,আপনি কি আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে ও দেবেন না নাকি!!থাকবো না আমি এখানে ,,এখনি বাড়ি চলে যাবো !!!
আমি কথায় কোনো রিয়েকশন না করে বালতিটা ওয়াশরুমে রেখে কানে ইয়ারফোন গুজে ওপাশ ফিরে বেডে শুয়ে পড়লো।। রাগটা যেনো মুহূর্তেই মধ্যে আরো বেড়ে গেল।। আমি বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম,, কিন্তু না দরজা ভেতর থেকে চাবি দিয়ে লক করা।। আমি আবিরের সামনে গিয়ে কান থেকে ইয়ারফোন খুলে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে রইলাম।। তিনি উঠে বস বললেন….
— আমার ইচ্ছে,,তাই আমি আমার রুমে সোফা রাখি নি ।। বেড আছে ,,তাতে শুয়ে পড়।। আর যদি আমার সাথে শুতে না চাও ,,তাহলে ফ্লোরে পানির মধ্যে শুয়ে পড়ো ।।আর যদি সেখানেও শুতে না চাও তাহলে বেলকেনিতে মশার কামড় খেয়ে সেখানে শুয়ৈ পড়ো।। আর বাড়ি যাওয়ার কথা বলছো ,,আমি না চাইলে তুমি এই রুমের বাহিরেও যেতে পারবে না।।
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলেই আর শুয়ে পড়লো ।। আমিও মুখ গোমড়া করে শুয়ে পড়লাম,,, চারদিকে খুঁজেও একটা কোলবালিশ পেলাম না ,,যে মাঝে রাখবো।।
🍁🍁🍁
সূর্যের আলো চোখে পড়তেই আসতেই ঘুমটা ভেঙে গেল আমার।। চোখ দুটো খুলে আবিরকে দেখতে পেলাম।।আর তার বুকের উপর শুয়ে তাকে জরিয়ে ধরে আছি ।। আর তিনিও জরিয়ে ধরে আছে ।। তাকে ধাক্কা দিয়ে সময় দেখলাম।। ১০ টা বেজে গেছে।।তাই শাওয়াল নিয়ে নিলাম।।শুনেছি বিয়ের পর প্রথম রাতে শাওয়াল নিতে হয়।। শাওয়াল নিয়ে একটা লাল রঙের শাড়ি পড়ে নিলাম।। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মাথা মুছছি ,,এমন সময় পেছন থেকে আবির বলে উঠলো….
— কালকে রাতে তো কিছুই করলাম না,,আর তুমি শাওয়াল নিয়ে নিলে ।। এখন কিন্তু করতে ইচ্ছে করছে।।(আয়নাতে আমার দিকে তাকিয়ে)
তার বলা গা জ্বালানো কথা একদমই ভালো লাগছে না,,,
— আপনি হয়তো জনেন না,,এটা নিময়।।
— নিয়ম এটা নয় ,,, কিছু করলে তখন শাওয়াল নিতে হয় ।।না করে নয়!!
বলেই আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার নাক ডাকা শুরু হয়ে গেলো।।এতো জোরে জোরে ডাকছে যে,,, রুমে আর থাকা যাবে না।। তাই নিচের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম।।
নিচে যেতেই শুরু হয়ে গেলো আপির প্রিন্ট করে বলা কথা।।
— এতোক্ষণে ঘুম ভাঙলো।আমি তো মনে করলাম ভাঙবেই না।। আচ্ছা আবির কোথায় ওকে দেখছি না যে।।।(হিয়া)
— ঘুমাচ্ছে !!( পরটা ছিঁড়ে মুখে দিতে দিতে আমি)
— আচ্ছা।। বিয়ের পর প্রথম প্রথম দিনেই একজন ড্রিরিপেশন থেকে বেরিয়ে এলো,,আরেকজন মে কিনা রাতেই ঘুমায় না সে এখন দিনে ঘুমাচ্ছে।। তো কাল কি বেশি রাত অবধি জেগেছিলি।।(কৌতূহল নিয়ে হিয়া)
আপির কথায় একদিকে যেমন লজ্জা করছে অন্যদিকে রাগও হচ্ছে।।পাশে যে নিহাল আঙ্কেল আর নিলিমা আন্টি আছে তাই কিছু বলতে পারছি না ।। মাথাটা নিচে দিয়ে খেয়ে চলেছি।।
বিকেল হয়ে গেছে কিন্তু এই আবিরের এখনো উঠার নাম নেই ।। আপি তো নিচে গেলেই আমাকে প্রিন্ট করছে ।। তাই রুমে রুমে আছি ।। হঠাৎ ই জয়িতার (কাজের মেয়ে) আগমন।। পাপা মাম্মাম ভাইয়া এসেছে আমাকে দেখতে ।। তাই আমিও তাদের সাথে দেখা করতে নিচে গেলাম।। পাপা মাম্মাম ভাইয়া আমাকে এই অবস্থায় দেখে অনেক খুশি হয়েছে।। তাদের তো কথাই একটা যদি জানতে বিয়ে দিলে আমি নরমাল হতো তাহলে আগেই আবিরের সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিতো।।আমরা একসাথে বসে ড্রয়িং রুমে কথা বলছিলাম।। এমন সময় আবিরের আগমন ।। চোখ মুখ ফুলিয়ে এক একটা কুমড়ো কুমড়ো করে ফেলেছে।।
— মা খেতে দাও ক্ষুধা লেগেছে!!( সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে আবির)
— আয় দিচ্ছি।। (নিলিমা)
— আরে বিয়ান আপনি বসুন গল্প করুন।। হানি তুই যা!!( রাইসা)
— আমি কেনো যাবো !! যার টা সে বেড়ে খাক!!( ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আমি)
— যেতে বলছি যা!!( রাইসা)
— জানো মাম্মাম বিয়ের একদিন পরই হানি স্বাভাবিক হয়ে গেছে।।আর যে আবির রাতে ঘুমাতে পারতো না সে এখন ঘুমিয়ে দিনও শেষ করে দেয়।।(প্রিন্ট করে হিয়া)
তাকিয়ে দেখি বড়রা মিটমিট করে হাসছে ।। এই আমাকে লজ্জায় না ফেলা পর্যন্ত আপির শান্তি নেই।।
— চুপ !! আবির এমনিতেই ঘুমিয়েছে আর হানি এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে গেছে।। বুঝেছিস !! এখন চুপ কর।। (রাইসা)
তারপর আবিরকে খাবার সার্ভ করে দিলাম।। খেয়ে আমাদের সাথে আড্ডায় যোগ দিলো ।। পাপা মাম্মাম তো আবিরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে।। স্বাভাবিক হয়েছি আমি আর ধন্যবাদ দিচ্ছি আবিরকে । মেজাজ গরম করা যওসব কাহিনী ভালো লাগে না।।
🍂🍂🍂
মাম্মামরা চলে গেছে সন্ধ্যায়।। এখন রাত ১১ টা বাজে আবিরের কোনো খবর নেই কোথায় গেছে কে জানে ।। আমার লক্ষ্য ঘুমানোর চেষ্টা করা ,,,আবির আসার আগেই।। ওর মুখটাও দেখতে চাই না।।
হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে তাকিয়ে দেখি,, মহারাজ এসেছে।। তাই ব্লাকেটটা টেনে মাথা টা ঢেকে নিলাম।। আবির আমার ব্লাকেটটা টেনে সরিয়ে দিয়ে টেনে উঠিয়ে বসিয়ে বললেন….
— কালকে তোমার বিয়ে হয়েছে,,,আর আজকে এমন সেজেছো দেখে মনে হচ্ছে,,,তোমার জামাই মারা গেছে।। (একটা বক্স আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে) এগুলো সবসময় পড়ে থাকবে ।। আমার কাছে এসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।। (আমার হাতে একটা চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে)
আমি সাথে সাথে হাতটা ঝটকা দিয়ে ছুয়ে ফেললাম আর কড়া কড়া গলায় বললাম……
চলবে ….💞💞