কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-২৭+২৮

0
2347

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::২৭

আমি চোখ বন্ধ করে ঠান্ডা হাওয়া অনুভব করছি আর পেছন থেকে আবির আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে।। হঠাৎ কোমরে সাপের মতো কিছু একটা অনুভব করাতে লাফ দিয়ে ,, আবিরের থেকে ৩ ফুট দূরে সরে যাই।।

— ব্যাঙের মতো এতো লাফাচ্ছো কেন ?? (আবির)

— আসসসলেএ,, আমার পেটে ,, সাপ পেঁচিয়ে ধরেছিলো।।(ইনোসেন্স ফেইস করে আমি)

— ওয়াট ননসেন্স।। তুমি বলতে চাইছো ।। আমি সাপ ।।(আবির)

— না ,,,আমি সেটা বলি নি।। (মাথা নিচু করে আমি)

আর কিছু না বলে আবির আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো ,, তারপর নিজের হাতে লুকিয়ে রাখা বেলি চেইনটা সরিয়ে দিলো।। আবিরের স্পর্শ বারবার আমাকে শিহরিত করে দিচ্ছিলো । কোনো উপায় না পেয়ে আমি শাড়ির আঁচল টা মুচড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে ছিলাম।। এবার তিনি তার পকেট থেকে রুমাল টা বের করে রক্ত গুলো মুছে দিয়ে ,,আমাকে তার কাছে টেনে ,,আমার পেটে চুমু খেলেন ।। নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারলাম না,, সোজা আবিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩.৪৫ ।। এখানে এসেছি তাও অনেকক্ষন ।। আমি এখন প্রদীপ দিয়ে বানানো লাভটার মধ্যে বসে আছি আর আবির আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।। এতোক্ষণের আমার মাথা থেকে একটা কথা একদম বেরিয়ে গিয়েছিল,, মাএ মনে পড়লো!! তাই কৌতূহল নিয়ে আবিরকে জিজ্ঞাসা করলাম….

— আচ্ছা আবির ,,, সবকিছুই তো বুঝলাম কিন্তু প্রদীব দিয়ে “আমি বিষ্টির” মানেটা বুঝলাম না ।।

— এটার মানেটা তুমি এখনো বুঝলে না ,, একটা মানে হচ্ছে আবির আর মিষ্টি।।

— কিভাবে….!!

— এখনো তো প্রায় রাত শেষ হয়ে গেছে ,,চলো যেতে যেতে বোঝাই!!

তারপর আমরা একসাথে বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্য হাটা দিলাম আর আবির আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করল…

— যেহুতু আবির নামে ৩ টা ওয়ার্ড ।।তাই আগে আমার নামের একটা ওয়ার্ড নিলাম তারপর তোমার নামের একটা ওয়ার্ড নিলাম।। এভাবে একটা একটা নিতে নিতে হয়ে গেছে।। যেমন:: আবিরের থেকে ”আ” মিষ্টির থেকে ” মি”।। হলো তো আমি । তারপর “বির” এর মাঝখানে ষ্টি।। তাহলে বিষ্টির হলো তো।। এখন বুঝলে আমি বিষ্টির হলো কিভাবে।।

আমি নারিয়ে হ্যা বোঝালাম।। কথা বলতে বলতে কখন যে গাড়ির সামনে চলে এলাম। খেয়াল ই করি নি।। তারপর আবির গাড়ি ড্রাইভ করতে মন দিলেন।।আমি আবিরের বুকে মাথা দিয়ে আছি আর আবির আমাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরে অন্যহাতে ড্রাইভ করছে।।

অনেকক্ষন দুজনের মাঝে পিটপিটে নিরবতা বিরাজ করে ।। একসময় নিরবতা ভেঙ্গে আবির বলে উঠে…

— জানো মিষ্টি,, আমি কখনো তোমাকে অন্যকোনো ছেলের সাথে সহ্য করতে পারি না।। বুকে ভেতরে টিনটিন কষ্ট অনুভব হয়।। মনে হয় ,,কেউ যেন আমার মনটাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে।।

— এটাকেই ভালোবাসা বলে।। ভালোবাসার মানুষকে আন্যকারো সাথে দেখলে ,,, সেটা সহ্য করা যায় না।।।

— মিষ্টি তুমি আজকে থেকে কোনো ছেলের সাথে কথা তো দূরে থাক তার দিকে একবারও তাকাবেও না,,মনে থাকবে ।। তবে হিয়ানের সাথে কথা বলতে পারবে ,,,সে তো তোমার ভাই ।। কিন্তু জানভির সাথে নয়!!

— আবির আপনার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।। জানভিও আমার ভাই ।। হে আমি ওকে জান বলে ডাকি তাতে কি ।। ভাই হয়তো আমার।। (আবিরের বুক থেকে মাথা তুলে তার দিকে তাকিয়ে বললাম আমি)

— আপন ভাইতো আর না ,,, ফুফাতো।। তাছাড়া আমি তো আর তোমাকে হিয়ানের সাথে কথা বলতে বারন করিনি ,,,আজব!!( আবির)

— দেখুন আবির,,, আপনার পড়ে যদি কোনো ছেলে আমার জীবনে আসে তাহলে তো আর আমি আপনাকে অবহেলা করতে পারবো না ,,,আর না ভুলতে পারবো ।।আর জান জীবনে আপনার অনেক আগে এসেছি,,,তাই ওকেও ভুলতে পারবো না।। জানেন আবির,,যখন আমি কোনো বিপদে পড়ি ,, তখন জান ম্যাজিকের মতো আমার কাছে এসে সমস্যা টা সমাধান করে দেয়।।( দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আমি)

— এখন তো আমি চলে এসেছি,, তাহলে এখন কেন ছাড়তে পারবে না।। আমি কথা দিচ্ছি,,আমি তোমার সব সমস্যা সমাধান করে দিবো।। পিলিজ( আমার কথাটা রাখো আমার হাত ধরে আবির।।)

— সরি আবির,,আমি আপনার এই কথাটা রাখতে পারবো না।। (অন্যদিকে ফিরে আমি)

আমার সরি শব্দ টা হয়তো আবিরের পছন্দ হয়নি ।। ঠাস করে গাড়িতে ব্রেক করে হঠাৎ ব্রেক করার কারনে আমি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে পড়ি।। কিন্তু হঠাৎ ব্রেক করার কারনটা বুঝতে পারলাম না,, তাই কৌতূহল মেটাতে আবিরের দিকে তাকালাম।। কিন্তু তিনি আমার দিকে একবার ও তাকালেন না ।। কড়া কড়া গলায় বললেন….

— গাড়ি থেকে নামো !!!

আবিরের কথায় আমি কি রিয়েক্ট করবো বুঝতে পারছি না।।

— আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।।কি বলছেন এই সব।। আমি তো বাড়ি এখান থেকে চিনি না।। হারিয়ে যাবো তো।।

— তোমার জানভি তো তোমার সব সমস্যা সমাধান করে দেয়।।আই হোপ এটাও দিবে ।। গুড বাই!!( আমি নামছি না দেখে আবার চেঁচিয়ে বলে উঠলো) আই সে আউট দা কার ।।

আবিরের কথায় আমার এক প্রকার কেঁপে উঠলাম।। তবুও নামলাম না ।। চুপ করে আগের নেয় বসে রইলাম।। আমাকে নামতে না দেখে আবির নিজেই গাড়ি থেকে নেমে এসে আমার হাত ধরে টেনে আমাকে নামিয়ে নিজে আবার ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করে চলে গেলেন।। আমার সামনে দিয়ে গাড়িটা চলে গেল কিছুই করতে পারলাম না।। একেই তো রাস্তা চিনি না।। অন্যদিকে এখন মাঝরাত ,, তার উপরে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় ভুল ফোনটা সাথে করে নিয়ে আসা হয়নি ।। সাথে তো একটা নিরিবিলি জায়গা।। ভয়ে তো আমি মরে।। সামনের দিকে যে এগুবো ,,রাস্তাটা মদি হারিয়ে ফেলি ।। তাই আর সামনের দিকে গেলাম না। মন বারবার একটা কথাই বলছে আবির আসবে । আমাকে একা ফেলে কিছুতেই যাবে না।। যদি জানভি আবিরের জায়গায় থাকতো তাহলে হয়তো আমাকে এভাবে মাঝ রাস্তায়,মাঝ রাতে কিছুতেই একা ফেলে যেতো না।।কি আর করার অপেক্ষা করছি আবিরের ফিরে আসার।।

আনুমানিক ২০-২৫ মিনিট হয়ে গেছে কিন্তু আবিরের আসার কোনো খবর নেই।‌এদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা যেনো ব্যাথা করছে।। গ্ৰামের রাস্তা হওয়ার কারনে ঘাস দেখা যাচ্ছে,,তাই ঘাসের উপর একটু বসলাম।। হঠাৎ মনে হচ্ছে,, কেউ আমার মুখে রুমাল চেপে ধরেছে ,,যাতে আমার শ্বাস আঁটকে আটকে আসছে।। কি হচ্ছে সেটা বোঝার আগেই সেখানে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে ঢুলে পড়লাম।।

🍁🍁🍁

চোখ খুলতেই নিজেকে একটা বদ্ধ ঘরে খুঁজে পেলাম।। বাহিরে এখনো রাত ,,তার কারনে কোন আলো ভেতরে আসতে পারছে না।। চারপাশে তাকিয়ে ততটুকু বুজতে পারলাম,, জঙ্গলের মধ্যে কোনো একটা পুরোনো বাড়ি ।। অনেক দিন হয়তো আকটানো ছিলো ।। কেমন যানো ধুলো পড়ে আর সাথে বাজে স্মেল। আমার ভাবনার অবসান ঘটিয়ে কেউ একজন দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে লাইটটা অন করে দিলো ।। লাইটটা অন করতেই সামনে থাকা মানুষটিকে দেখা আমার প্রান যায় যায় অবস্থা।। ওনি তো তাদের মধ্যে একজন যাকে সেদিন আমি বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছি ।। কিন্তু তারা এখানে কি করছে।। তাকে দেখে আমি একবার ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম…..

— আআপপননিই এএখানে ককি ককররছেএ!!

— তুই কি মনে করেছিস সারা জীবন হসপিটালে এডমিট হয়ে থাকবো।। একমাস হসপিটালে ছিলাম।। সেখানে থেকে বেরিয়ে তোর ব্যপারে খোঁজ খবর নেই,,, তারপর সারাক্ষণ তোকে চোখে চোখে রাখতার।। খুব অহংকার না তোর নিজেকে নিয়ে আজ তোর সব অহংকার আমি শেষ করে দিবো।। আরো আগেই সেই কাজটা করতে পারতাম ,, কিন্তু সেটা তো তুই নিজের চোখে দেখতে পারবি না ,,তাই তো এতোক্ষণ অপেক্ষা।।

— পপিলিজ আআমমাকে ছেড়ে দিন ,, ভাইয়া!! (করুন সুরে আমি)

— ছেড়ে তো দেবোই ,, তবে আগে নিজের চাহিদা টা মিটিয়ে নি।। কালকে সবাই দেখবে রাস্তার মোড়ে একটা মেয়ে পড়ে আছে।।( বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো)

— ভাইয়া পিলিজ এমন করবেন না।।

বলতেই সাথে সাথে আমার গালে ২ টো ঠাস ঠাস চড় পড়লো।। আমি তার পায়ে ধরছি কিন্তু সেদিকে তার কোনো খেয়াল ই নেই,,সে আমার শাড়ির আঁচলটা ধরে টেনে আমার পুরো শাড়িটা খুলে ফেললো।। সেফটিপিন থাকার কারনে জায়গায় রক্তের দাগ গুলো ভেসে উঠছে।। হাত দিয়ে শরীর ঢাকার চেষ্টা করছি কিন্তু সবই যেনো বৃথা।। তিনি আমাকে বেডে ফেলে দিয়ে আমার উপর হিংস বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো।। তাকে একটা ধাক্কা দিয়ে সরে দরজার কাছে আসতেই পেছন থেকে মাথায় ফুলদানি দিয়ে আঘাত করলো।। আমি মাথায় হাত দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালাম।। জ্ঞান হারানো আগে চারদিকে তাকিয়ে আবিরকে খোঁজার চেষ্টা করছি,, কিন্তু সে এলো না ।। আর কিছু মনে নেই আমার….!!

চলবে…💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::২৮

নিজের স্বতিত্ত্ব হারিয়ে ৫ দিন ধরে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছি হসপিটালের বেডে।। চড়ের দাগগুলো ভেসে আছে দুগালে।। মাথায় ব্যান্ডজ,, হাতে স্যালাইন চলছে।। ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে দেহটা ।। কলিডোরে ভীর করে আছে আমার প্রিয়জনেরা ।।
চোখ দুটো খুলে তাকিয়ে সর্বপ্রথম আবিরের মুখটা দেখতে পেলাম।। আমার হাত দুটি শক্ত করে এখনো ধরে আছে।।কি অবস্থা করেছে নিজের।। এখনো‌ সেদিনের পড়া ,, আমার সাথে ম্যাচিং করা নীল পাঞ্জাব টা ।।চুল গুলো উস্কোখুস্কো।। মাথায় ব্যান্ডেজ ,,হাতে ব্যান্ডেজ ,,চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।। দেখে মনে হচ্ছে,,,কতোদিন যেনো নিজের যত্ন নেয় না।। বুকের ভেতরের শ্বাস যেন‌ ভারি হয়ে উঠেছে তাকে এইভাবে দেখে।।হঠাৎ কালকে রাতের ঘটনাগুলো মনে পড়তেই হাত দুটো ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।।স্যালাইনে টান পড়ার কারনে সাথে সাথে রক্ত বের হতে শুরু করে ।। এতোক্ষণ আমার দিকে খেয়াল না করলেও এবার খেয়াল করলো ।। কিন্তু আনন্দের চেয়ে হতাশ হয়ে পড়লো ,,, আমার হাতে রক্ত দেখে ।। তাই দৌড়ে ডাক্তারকে খবর দিতে ছুটলো।। কিছুক্ষণের মধ্যে ডাক্তার এসে স্যালাইনটা ঠিক করে দিতেই আমার বাড়ির লোকেরা কেবিনে ঢুকলো।। আমাকে দেখে তাদের বুকে হাজার কষ্ট লুকিয়ে থাকলেও মুখে একটু মলিন হাসলো ।। যেনো তাদের দেহে প্রান ফিরে আসলো।। সবাই চোখে তখনো চিন্তার ছাপ ।। এতোক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলেও ,, নিরবতা ভেঙ্গে ডাক্তার বলে উঠলেন…..

— পেসেন্ট তো চোখ খুলেছে দেখছি ।। আমরা তো আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।। আগের বারই মাথায় যে আঘাত পেয়েছিলো ,,সেটাই অনেক ডিফিকাল্ট ছিলো ।।তার উপর আবার এই আঘাত ।। এরপর যাতে কোনো আঘাত না লাগে খেয়াল করবেন ।। নাহলে পরে যদি খারাপ কিছু হয়ে যায় তার দায় আমরা গ্ৰহন করবো না।।আর হে চেকআপ টা সপ্তাহে সপ্তাহে কানটিনিউ করবেন!!

বলেই ডাক্তার চলে গেলেন।। মাম্মাম এসে আমার পাশে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো….

— জানিস হানি কতোবড় একটা বিপদ থেকে তুই বেঁচে গেলি ।। আবির ঠিক সময় তোকে সেখান থেকে তোকে বাঁচিয়ে এনেছে।।

কিন্তু কারো কথা যেনো আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না।। আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে শুরু সেদিনের সিনটা ।। আচ্ছা যদি যদি সেদিন ঐ বাজে লোকটা আমার সাথে কিছু একটা করে ফেলতো তাহলে ,, কি আজ আমার পরিচয় হতো ,,এই সমাজের ধর্ষিতা মেয়ে নাকি অন্যকিছু।। সবাই আমাকে তাহলে কি ছোট চোখে দেখতো ।। নাকি করুনা করতো ।। আমার পাপার তৈরি করা এতো মান সম্মান কি সব নষ্ট হয়ে যেতো।। হলেও হতে পারতো ।। আমি শুধু এই চিন্তায় মগ্ন।।

— কি হয়েছে আলু (🥔) । আমার সাথে কথা বলবি না।। দেখ আমি কিন্তু তোকে আর বকবো না।। একটা বার কথা বল।।(হিয়ান)

— হানি তুই আমাদের ঘরে লুকিয়ে থাকবি না,, আমি তোকে আর একটা কথাও বলবো না।। সত্যি বলছি ,, একবার কথা বল।।

সবাই হয়তো ভেবেছিলো আমি জ্ঞান ফেরার পর কেঁদে ভাসিয়ে দিবো ,, কিন্তু না ।। আমার ক্ষেএে তেমন হয়নি ,, আমি শুধু বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছি।। আমার সামনে সবাই আছে ,,তারা কেউ না কেউ আমাকে কিছু একটা বলছে কিন্তু তা আমার কান অবধি পৌঁছাচ্ছে না।।আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।।

🍁 🍁 🍁

বাড়ি ফিরেছি তাও ১ মাস হতে চললো।। বদলে গেছে সব কিছু,, শুধু বদলায় নি আমার জীবনটা ।। হরতাল বদলে গেছে হতে আগের মত স্বাভাবিক এখনো হতে পারিনি।। বুকের ভেতর কোথাও না কোথাও একটা অনুসূচনা কাজ করছে ।। যদি আবিরের নেশায় নিজেকে না বিলিয়ে দিতাম তাহলে আজ নিয়ে এমন সব কিছু থেকে গুটিয়ে নিতে হতো না।। এই এক মাসে আবিরের সাথে দেখা হয়নি ,, সেখানে আমার ফ্রেন্ডদের সাথেই দেখা করি নি।। ভার্সিটিতে যাওয়া তো দূরে থাক সূর্যের আলো আর চাঁদের আলো আমার কাছে এখন স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়।। একেবারের জন্য নিজের রুমের দরজায় বাহিরেই পা দেই নি আমি।। ইভেন্ট বেলকেনিতেও না ,,আর পর্দা দিয়ে ভালোভাবে থাইগ্লাস ঢাকা।। কোনো আলো নেই আমার ঘরে ,, ঘরের এতো গুলো লাইট,, সবগুলো ভেঙে ফেলেছি ।। এখন সারাক্ষণ আমার ঘরে শুধু অন্ধকার বিরাজ করে।।যেখানে নিজের জীবনেই অন্ধকার ছাড়া কিছু নেই ,,সেখানে নিজের রুমের আলো দিয়ে কি হবে।। এলোমেলো হয়ে আছে আমার জীবন সাথে আমার রুম।।এখন আর আমি মন ভরে ঘুমাতে পারি না ,, চোখ বন্ধ করলেই সেই কলঙ্কিত অন্ধকার রাতের কথা মনে পড়ে।।আর বাকি রইল খাওয়া দাওয়া ওটা একটু জোর করে মাম্মাম খায়িয়ে দেয়।। এখন আমার ফ্যামিলির প্রতিটা মানুষের একটা চাইয়া যাতে আমি খুব তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হতে পারি ।। তাই পাপা ভাইয়া এখন বাড়িতেই থাকে অফিসটা ম্যানাজার দেখে নেয় ।। আর আপি,,, প্রতিদিন নিবিড় ভাইয়া অফিসে যাওয়ার সময় আপিকে আমাদের বাড়িতে দিয়ে যাই আবার ফেরার সময় নিয়ে যায়।। আর জানভি সে এখনো আমার ব্যাপারটা জানে না।। একবারও ওর সাথে কথা বলি ।। অতি প্রয়োজন ছাড়া এখন আর কথা বলি না।।

আজও এর কোনো ভিন্নতা হলো না।। অন্ধকার ঘরের এক কোণে ফ্লোরে গুটিশুটি মেরে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছি আমি ।। আর নিজের করা কাজের জন্য অনুসূচনা করছি ।। এর মধ্যে দরজা ঠেলে রুমে ঢুকলো আপি, মাম্মাম , ভাইয়া,পাপা।। আমি তাদের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ অন্যদিকে নিলাম।। আপি আমাকে টেনে নিয়ে বেডে নিয়ে বসিয়ে দিলো।। তারপর তার ব্যাগ থেকে একটা টিফিন ক্যারিয়ার বের করে ঢাকনাটা খুলে আমার সামনে ধরলো ।। সেখানে চিকেন কাটলেট দেখতে পেলাম।। চিকেন কাটলেট আমার প্রেবরেট একটা ডিস ।। চিকেন কাটলেট দেখলে আমি কখনোই লোভ সামলাতে পারি না,, কিন্তু আজকে খাওয়ার ইচ্ছেটাই নেই।। ভাইয়া টান দিয়ে আপির হাত থেকে বাটিটা নিয়ে খেতে লাগলো।। খাচ্ছে কম ,,আমাকে দেখিয়ে ডং করছে বেশি।।

— আপি এটা তুই বানিয়েছিস ।। প্রথম বার তোর হাতের কাটলেট খাচ্ছি,,কি টেস্ট হয়েছে রে ।।(খেতে খেতে হিয়ান)

— এই টা আমি স্পেশালি হানির জন্য বানিয়েছি ,, তুই কিন্তু একা সবটা আবার খেয়ে ফেলিস না হিয়ান!!( হিয়া)

— আমি খাবো না,, তুই খা ভাইয়া!!(আমি)

বলেই চোখ নামিয়ে নিলাম।। এরমধ্যে আপি বলে উঠলো…

— সরি পাপা , মাম্মাম আমরা ব্যর্থ।। আমার ছোট বোনটাকে আমরা আগের মতো স্বাভাবিক করতে পারলাম না।।

— সরি শুধু তুই কেন বলছিস,,,আমরাও তো পারলাম না।। আমার হাসি খুশি মেয়েরা শেষে এমন হয়ে গেল আর আমি কিছু করতে পারলাম না।।(তানজিম)

— তুই খাবি না তো ,,, তাহলে আমিও খাবো না।। তুই তো ভালো ভাবেই জানিস ,, আমি না খেয়ে একদমই থাকতে পারি না।। আজ নাহয় না খেয়েই থাকলাম ।।(হিয়ান)

— তাহলে তাহলে আমিও খাবো না,, (হিয়া)

— আমি কিভাবে আমার সন্তানদের ফেলে একা একা খাই ,, আমিও খাবো না।।।(রাইসা)

— তোরা যখন খাবি না,,তাই আমিও খাবো ।। না খেয়ে আমার পেশাব ফলস করে,, করুক তাতে কি ??( তানজিম)

বলেই সবাই আমার রুম থেকে চলে নেই,, আমি গিয়ে তাদের থামিয়ে ভাইয়ার হাত থেকে বাটিটা নিয়ে ভাইয়াকে খায়িয়ে দিতে লাগলাম,, কিন্তু ভাইয়া না খেয়ে আমার মুখে তুলে দিলো।। তারপর আমিও কাঁটা চামচ দিয়ে একটু তুলে ভাইয়ার মুখে দিলাম,, ভাইয়াও খেয়ে নিলো।।

— তুই এতো কিপ্টা কেন রে ।। এটা তো আপি বানিয়েছে।। তাহলে একটু দিস কেন??( বলেই একটা তুলে হিয়ান মুখে দিতে নেয়)

— ঐ তো এটা ।। শুনিস নি আপনি কি বললো এটা আমার জন্য বানিয়েছে।। তাই সবটা আমি খাবো ।। (ভাইয়ার হাতেরটা টেনে নিয়ে আমি )

শুরু হয়ে গেলো দুজনের টানাটানি একটা কাটলেট নিয়ে।। টানতে টানতে একটা সময় মাঝখান থেকে ভাগ হয়ে দু টুকরো দু’জনের হাতে চলে এলো ।। আমি আর ভাইয়া কিছুক্ষণ একসাথে এভাবে তাকিয়ে থেকে হেসে দিলাম।। অনেক দিন পর এভাবে হাসলাম।। নিজের কষ্টটাকে যেনো ভুলেই গেলাম কিছুক্ষণের জন্য।। তারপর আমরা একে অপরকে খায়িয়ে দিলাম।। সবাই খেয়েছে ১ টা আমি একা খেয়েছি ৯ টা ।।হিহিহি।।
অনেক দিন পর এভাবে পেট পুরে খেলাম।।
খাওয়া শেষে মাম্মাম আমাকে তার কোলে শুয়িয়ে দিয়ে মাথা হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।। আমি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।। অনেকদিনতো হলো ঘুমাই আজ নাহয় একটু পাড়ি জমাই ঘুমের দেশে।।।

🍂 🍂 🍂

— পপিলিজ আআমমাকে ছেড়ে দিন ভাইয়া।।।

— ছেড়ে তো দেবোই তবে আগে নিজের চাহিদা টা মিটিয়ে নি।। তারপর।।

বলেই সামনে থাকা লোকটার আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার শাড়ির আঁচলটা টেনে শাড়িটা খুলে নিচে ফেলে দিয়ে আমার উপর হিংস বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো।।।

নাহহহহ বলে একটা চিৎকার দিয়ে উঠে বসলাম আমি ।। এখনো এই দুঃস্বপ্ন টা আমাকে কেন যে বারবার তাড়া করে সত্যি ই আমি জানি না।। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি আমি ।। টেবিলের উপর রাখা জগটা থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে ,,এক টানে পুরো গ্লাসটা ফাঁকা করে নিলাম।।মাথার উপর সিলিং ফ্যান আর এসি চলার পড়ও আমি ঘেমে একাকার।। চোখ গেলো সামনে থাকা ড্রেসিং টেবিল টা দিকে ।। সেখানে আমাকে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে।। সেদিনের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে।। স্পস্ট আমার গালে দাগ ,,আর ক্ষতগুলো দেখা যাচ্ছে।। আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না হাতে থাকা কাঁচের গ্লাসটা ছুড়ে পারলাম।। সাথে সাথে যনযন শব্দ করে ভেঙে গেল গ্লাসটা ।। অন্যদিকে তাকাতেই চোখ গেলো আবিরের দেওয়া সেই শাড়িটার দিকে ।। ডাক্তারের নিদেশে সেদিন আমার থেকে হাতের রিং,,নুপুর,, বেলী চেইন খোলা হয়েছিল ঠিকই ,, তারপর আর তা পরি নি।। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম শাড়িটা দিকে ।। শাড়িটা হাতে নিয়ে একবার শাড়িটা দিকে তাকাচ্ছি তো আরেকবার মাথায় উপর থাকি সিলিং ফ্যান টার দিকে তাকাচ্ছি।। সুইচ দিয়ে ফ্যানটা অফ করে ,,একটা টুল এনে ফ্যান বরাবর রাখলাম।। উদ্দেশ্য জীবনের সমাপ্তি এখানেই টানবো।। চলে যাবো না ফেরার দেশে।। মৃত্যু টাই হয়তো আমার ভুমিত্ত্ব।।

চলবে…💞💞