কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-৩১+৩২

0
2452

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩১

— আপনার প্রতিটি ভালোবাসার স্পর্শ আমার কাছে শুধু ঘৃণা হয়ে আনে‌,, ভালোবাসা নয়।। আচ্ছা ,,, আপনার কি কোন আত্মসম্মান বোধ নেই ।। ছেলেদের লজ্জা নেই জানতাম,, কিন্তু আত্মসম্মান বোধ নেই,,সেটা জানতাম না।। আমি তো শুধুমাএ ,,পাপা, মাম্মাম আপি,, ভাইয়ার কথায়,,বাধ্য হয়ে এই বিয়েটা করেছি।। কিন্তু আপনি তো তা নয়।। আপনার সাথে থাকার চেয়ে,,এই পৃথিবীতে না থাকাই অনেক ভালো।। যদি সেই সত্যি আমি মরে যেতাম,, তাহলে আজকে আমাকে এই দিন দেখতে হতো না।। কেন বাঁচিয়ে ছিলেন আমাকে ।। যদি প্রয়োজন পড়ে ,,তাহলে আমার এই একই আজ করবো।। (আবিরের শার্টের কলার চেপে ধরে আমি)

— এইমুখে আর এইবার মরার কথা বল কি হাল করি ,, তুই নিজেই কল্পনা করতে পারবি না।। আর মরা তো দূরে থাক।। একবার মরতে গিয়ে তোর সাহস খুব বেড়েছে,, তাই না।। সেই একই সাহস দ্বিতীয় বার দেখাতে আসবি না।। (শার্টের কলার থেকে হাতটা সরিয়ে দিয়ে ,, আমার চুলের মুঠি ধরে আবির)

এমন ভাবে চুলগুলো টেনে ধরেছে ।। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠছি আমি।। কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে সে আরো শক্ত করে চেপে ধরে আছে।।চোখ দুটো যেনো মুহূর্তেই মধ্যে লাল হয়ে গেছে,,মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে।। কিছুক্ষণ পর নিজেই আমাকে ছেড়ে দিয়ে পিঠ দেখিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো ।। আমিও আর কোনো কথা না বাড়িয়ে লাইট টা অফ করে শুয়ে পড়লাম।।

গভীর রাতে মনে হচ্ছে ,,কেউ‌ একজন পারলে আমার শরীরে ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে।। চোখ দুটো খুলে আবিরকে দেখতে পেলাম।। সে একটু একটু করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।। আমি আবিরকে ঢেলে সরানোর চেষ্টা করছি,, কিন্তু পারছি না।। হয়তো ঘুমের ঘোরে এমনটা করছে ।।তাই আমি আরেকটু সরে চোখ বন্ধ করলাম।। কিন্তু আবার আমার দিকে এগুচ্ছে। আমি আবার একটু সরে এলাম।। কিন্তু আবিরের থামার কোনো চান্স নেই ।। সে এগুচ্ছে আর আমি সরছি।। সরতে সরতে এমন একটা অবস্থা হয়ে এমন যদি একটু সরতে যাই তাহলে ,, নির্ঘাত আমার কোমর ভাঙবে।। একবার তাকিয়ে দেখলাম,, আবিরের ওপাশে অনেক জায়গা ফাঁকা আছে ,,,তাই বেড থেকে নেমে আবিরের জায়গায় শুয়ে পড়লাম।। কি শান্তি লাগছে।। হঠাৎ ঠাস করে কিছু করার আওয়াজে ,,,লাফ দিয়ে উঠে বসলাম,, চারপাশে তাকিয়ে দেখলাম কিছুই পড়ে না ,,সব ঠিকঠাক আছে ।।পাশে তাকিয়ে আবিরকে দেখতে পেলাম না,,, একটু ঝুঁকে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে দেখি,, আবির ফ্লোরে বসে কোমর ঘসছে।। নির্ঘাত আবির নামের মহিষটাই পড়েছে।। হাসতে হাসতে শেষ আমি ।। আমাকে হাসতে দেখে আবির উঠে দাঁড়িয়ে আমার দিকে করুন চোখে একবার তাকিয়ে আবার বেডে শুয়ে পড়লো ।। আমিও হাসতে হাসতে বেডে পড়লো।।

🍁🍁🍁

ঘুম ভাঙতেই মনে হলে কেউ আমাকে বেঁধে রেখেছে।। কিছুক্ষণ ঐভাবে থাকার পর বুঝতে পারলাম,, আবির পেছনে থেকে আমাকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।। আবিরকে কোনোরকম সরিয়ে দিয়ে ,,আমি উঠে শাওয়ার নিয়ে নিলাম।।আজকে আমি একটা নীল রঙের শাড়ি পড়েছি ।। শাড়িটা পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ,, মাথা মুছছি।। আমি ইচ্ছে করেই চুলগুলো ঝারছি,, যাতে পানি গুলো আবিরের মুখে পড়ে । পানি পড়তেই লাফ দিয়ে উঠে বসে,,, পেছন থেকে আবির বলে উঠলো…

— প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নিচ্ছো ,, আবার নিজের চুলের পানি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙাচ্ছো ,,ব্যাপারটা কি রোমান্টিক,,তাই না।।

— কচুর রোমান্টিক!!

বলেই মুখ ভেংচি কেটে চলে আসবো ।।ঠিক তখনি পানি পা স্লিপ করে সোজা আবিরের উপরে ।। আবির নিচে আর আমি তার উপরে ।। তখন যে ইচ্ছে করে ওভাবে চুল ঝারছিলাম ।। সেই পানিতে যে ফ্লোর পুরো ভিজে একাকার হয়ে গেছে কে জানতো।।

— আমার বউয়ের যে রোমান্স করতে ইচ্ছে করছে,,তা আগে বলেই তো হতো , এভাবে আমার উপর পড়ে আমার কোমর ভাঙার কোনো দরকারই ছিলো না।।

বলেই ধাক্কা দিয়ে আমাকে নামিয়ে দিয়ে আমার উপর উঠে পড়লো।।আমি ছোটার চেষ্টা করেও ছুটতে পারছি না।। আমি হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছি ,, কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না।। সে আমার হাত বেডের সাথে চেপে ।। তার ঠোঁট দুটো আমার দিকে এগিয়ে আনতে লাগলো ।। তা দেখে আমি চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নিলাম।।

— বলছিলাম কি হানি !! তুই কি ঘুম থেকে উঠে প….!! সত্যি বলছি আমি কিছু দেখি নি ।।(অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে হিয়া)

আপির কথা শুনে সাথে সাথে আবির আমার থেকে ছিড়কে দূরে সরে গিয়ে ,,, দৌড় ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।। কিন্তু এখনো আপি চোখ বন্ধ করে উল্টো ঘুরে আছে।। তাই জোরে জোরে বললাম….

— তুই মা ভাবছিলিস তেমন কিছু হচ্ছিলো না।। জাস্ট এক্সিডেন্ট।।

— হয়েছে থাক ! আর লজ্জা পেতে হবে না।। (হিয়া)

— ফাজলামো বন্ধ করবি!! ভালো লাগছে না।। কি বলতে এসেছিলি সেটা বল ।। (আমি)

— ও হে ।। বলছিলাম জানভির সাথে তোর কোনো কথা হয়েছে!!( কৌতূহল নিয়ে হিয়া)

— না তো ।। তোর বিয়ের দিন থেকে কোনো কথা হয়নি ।। কেন বল তো !!(আমি)

— না আসলে ,, গত ১ সপ্তাহ ধরে জানভিকে ফোন দিলে রিসিভ করছে না। আর কালকে ফোন দিয়েছিলো ফুফা,,তখন জানভি বিজি আছি বলে ফোন যে রেখে দিলো।। পড়ে যতোবারই ফোন দিচ্ছি,,ততবারই নট রিচেবল বলছে।। বাড়িতে ,, ইভেন্ট কাজের লোকদের ফোন দিয়েছিলো।। তারা বলছে ,, সেদিন ফুফা ফোন দেওয়া পর এই কথাটা বলে ফোনটা ভেঙে কোথাও একটা চলে গেছে এখনো ফিরে আসেনি।। কোথায় গেলো ছেলেটা কে জানে !!(হিয়া)

— হয়তো অফিসের কাজে ব্যস্ত আছে ,,তাই হয়তো বাড়িতে ফেরে নি কিংবা ফোন করে নি !! (পেছন থেকে আবির)

— সেখানেও ফোন দিয়েছিলাম,, কিন্তু সেখানেও নেই।।তারাও বলছে ,, কালকেও নাকি সে অফিসে যায় নি।।(হিয়া)

— তোর ফোনটা দে তো একবার ট্রাই করে তো দেখি।।(আমি)

— আমার টা তো রুমে রেখে এসেছি ,, কেন তোরটা কই।।(হিয়া)

— আমার কোনো ফোন নেই !! অন্যর ফোন ইউজ করি না।। ( আমি)

— এই নাও,,আমারটা দ য়ে ট্রাই করে দেখ!!( নিজের ফোনটা এগিয়ে দিয়ে আবির)

আমিও ফোনটা নিয়ে অনেকগুলো ফোন করলাম,, কিন্তু একটা রীচ হচ্ছে।। তাই একটা মেসেজ করলাম।।

দুপুরে সবাই একসাথে বসে লান্ধ করছি ।। আপির নাকি সকাল থেকে মাথা ঘুড়ছে ,,,বমি বমি পাচ্ছে।। কিছু খেতে পারছে না,, তাই নিবিড় ভাইয়া একটু একটু করে খায়িয়ে দিচ্ছে।। আর আমরা যে যার মত করে খাচ্ছি।। আমাদের নিরবতা ভেঙ্গে নিলিমা আন্টি বলে উঠলো….

— কিছুদিন পর আমার ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে ।। তোমাদের এই অবস্থা ছিলো ,,তাই যেতে চাইনি ।। কিন্তু এখনো তো তোমরা দুজনেই স্বাভাবিক হয়ে গেছো ।। তাই বলছিলাম ,,চলো কিছুদিন থেকে আসলে আরো ভালো লাগবে!!( আমাকে আর আবিরকে উদ্দেশ্য করে)

— সরি আন্টি আমি যেতে পারছি না।। আমার কোলাহল একদম পছন্দ নয়।। আপনারা পিলিজ যান আর আপিকেও নিয়ে যান ,, সেখানে গেলে হয়তো ওর শরীরটা ভালো লাগবে।। না লাগলে নিবিড় ভাইয়া নিয়ে আসবে।। ( আমি)

— আমিও বলি কি মাম্মাম,,তোমরা যাও।‌ সামনেই তো আমার ফাইনাল এক্সাম ,, তাই আমি গেলে পড়াশোনায় অনেক ক্ষতি হবে ।। আর মিষ্টি গেলে রান্না কে করবে।।(আবির)

— তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে বাড়িতে এতো গুলো কাজের লোক থাকতে হানি রান্না করবে ।। (নিহাল)

— সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না,,তোমরা যাও।।(আবির)

হঠাৎ আপির ফোনে পাপা ফোন করে।। আপি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করে নিলো ।। পাপা তা বললো তাতে আমরা একদমই প্রস্তুত ছিলাম না।। জানভি নাকি কিছুক্ষণ আগে আমাদের বাড়িতে এসেছে।। কারো সাথে কোনো কথা বলছে না,, শুধু জিনিস পএ ভাঙছে।। আমার কথা জানতে চাইলে ,,বলেছে আমি আবিরদের বাড়িতে আছি আর আমার বিয়ে হয়ে গেছে।। সেটা শুনে নাকি জানভি পাগলের মতো বিহেব করছে।। কেউ ওকে থামাতে পারছে না।। বারবার একটা কথাই বলছে ,,,এটা কিছুতেই হতে পারে না,,আমি নাকি জানভিকে ঠকিয়েছি।।
আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে হাত ধুয়ে রুমে চলে এলাম।। শাড়িটা চেন্জ করে একটা চুড়িদার পড়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এলাম।। আপি আসতে চেয়েছিল কিন্তু ওকে বারন আসতে দেখনি কেউ।। হাজার বার বারণ করার পরও আবির এসেছে।। মেজাজ খারাপ করা যওোসব কাহিনী।।
বাড়িতে ফিরে কোথাও জানভিকে দেখতে পেলাম না,, সবাই চিন্তিত হয়ে ,, মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে।। অনেক জিনিস পএ ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে ।। জানভি এইসব জানা ভেঙে নাকি রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।। আর খোলার নামই নেই।। আমি আস্তে আস্তে দরজার সামনে গিয়ে দরজা নক করতে লাগলাম।। কিন্তু ভেতর থেকে খুলছেই না।। তাই বলতে লাগলাম….

— জান আমি তোমার মিষ্টি জান ।। পিলিজ দরজাটা খোলো।।

সাথে দরজাটা খুলে গেছে।। তারপর যা হলো সে আমার ধারনার বাহিরে ছিলো।।।

চলবে…💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩২

দরজা খুলেই জানভি আমার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।। আমি ছিটকে নিচে পড়ে যেতে নিলেই আবির আমাকে ধরে ফেলে।। পরক্ষনেই কিছু একটা মনে করে ,, আমার গালে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিল জানভি।। পরম আবেশে বুকে জড়িয়ে নিলো আমার।। কিন্তু আমি এখনো মাথা নিচু করে রেখেছি,, বুঝতে পারছি না,, জানভি কেন আমার গায়ে হাত তোললো।। এই নিয়ে ৪টা চড় আমার খাওয়া হয়ে গেলো।।

— মিষ্টিজান আই এম এক্সটেমলি সরি।। আমি বুঝতে পারি নি রাগের বসে কিনা কি করে ফেলেছি ।। পিলিজ ক্ষমা করে দে!! আসলে তুই বলেছিলি ,,আমি বিদেশে যাওয়ার পর রোজ আমার সাথে কথা বলবি ,,, কিন্তু একদিনই বললি না,, যে আমি তোর কথা না শুনে একটা দিনও থাকতে পারিনা।। সে আমি একটা মাস ছিলাম।। ফোন দিলে তোকে পেতাম না,,কি হয়েছে জিজ্ঞাসা করলে ,,বলতো তুই নাকি বিজি আছিস,,, খুব কষ্ট হতো আমার !! আমি যে খুব ভালোবাসি তোকে কেন বুঝিস না তুই!! এসে যখন শুনলাম ,,তোর নাকি ঐ আবিরের সাথে বিয়ে হয়ে গেছে ,,তখন আমি পাগল হয়ে গেছিলাম।।আচ্ছা,,ওরা আমাকে মিথ্যা বলছিলো ,,,তাই না তুই বল।। দেখছিলো আমি কি রিয়েকশন দেই ।। তুই তো ঐ বাড়িতে যেতেই পারিস ,,ওটা তো তোর আপির শ্বশুরবাড়ি।।(আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার বললো)পিলিজ কিছু অন্তত বল ।।(আমার গালে হাত দিয়ে করুন সুরে)

ভালোবাসি কথাটা যেন আমার বুকে তীরের মতো বিঁধছে,, কি বলবো জানভিকে আমি যে আমার বিয়ে হয়নি ।। কিন্তু এটা তো সত্যি নয়।। আমি কিভাবে জানভিকে মিথ্যা বলবো।।

— আমি বুঝতে পারছি,, তোর গায়ে হাত তুলেছি তাই তুই রেগে আছিস।। দাড়া এই হাতই আমি রাখবো না।। তাহলে আর কোনোদিন তোকে চাইলেও মারতে পারবো না।।

বলেই জানভি একের পর এক দেয়ালের সাথে আঘাত করে যাচ্ছে।। কিছুক্ষণ এর মধ্যে হাত থেকে রক্ত ঝরতে শুরু করে দিয়েছে।। জানভিকে এভাবে দেখে একদম ভালো লাগছে না।। ওর হাতের রক্ত যেন সহ্য করতে পারছি না,,তাই তাড়াতাড়ি ওকে থামিয়ে,,বেডে বসিয়ে দিয়ে,,ফাস্ট এইড বক্স দিয়ে হাতটা ব্যান্ডজ করে দিলাম,,তার পর বললাম…

— জান আই এম এক্সটেমলি সরি,,আমি এতোটাই ড্রিপিশনে ছিলাম,,তোমার সাথে একবার ও কথা বলতে পারি নি।। এরপর থেকে আর কখনো এমন হবে ,,প্রমিজ!!(জানভি কোলে উঠে বসে)

বলে থামতেই সাথে সাথে জানভি আমাকে জরিয়ে ধরলো।। তারপর জানভিকে আমি শুরু থেকে শেষ অবধি সবটা খুলে বললাম।।সাথে সাথে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে পা বাড়ালো ড্রয়িং রুমের উদ্দেশ্য।।নামতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছুতেই নামাবে না ,,তার কথাই একটা মিষ্টি তার জানের কোলে ইচ্ছে করে উঠেছে,,তাহলে নামবে কেন?? সেখানে সবাই বসে আছে চিন্তিত হয়ে।আবিরও,,হয়তো আমাকে জানভির সাথে এতো ক্লোজ সহ্য করতে পারেনি তাই চলে এসেছে।।আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে জানভি ভেতরে চলে গেল।। কিছুক্ষণ পর হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে ফিরলো।। সেটাকে টি টেবিলের উপর রাখলো।। তারপর আমার হাতটাকে শক্ত করে ধরে আবিরকে বললো…

— আবির আমি জানি ,,বিয়েটা কিভাবে হয়েছিলো ।। এখানে শুধুমাত্র মিষ্টিজান কে স্বাভাবিক করার জন্য তোমাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে।। কিন্তু এখন তো মিষ্টির জান ফিরে এসেছে।। তাই তুমি মিষ্টিকে ডিভোর্স দিয়ে দাও ।। (আবির কিছু বলবে ,,তার আগে জানভি হাত দিয়ে ইশারা করে থামিয়ে দিয়ে বললো) আমি জানি,তুমি শুধু শুধু রাজি হবে না,, তাই একটা তোমার জন্য ( ব্যাগটাকে উদ্দেশ্য করে) এখানে আমাকে দেওয়া সব ব্যাংক ব্যালেন্স,,প্রোপাটি আছে ।।এখানে আনমানিক ,, ২২০ কোটা তো হবেই ,,আশা করি তাতে তোমার হয়ে যাবে,, শুধু মিষ্টি জানকে ফিরিয়ে দাও।।

— মিষ্টি কোনো প্রোডাক্ট নয় যে তাকে তুমি টাকা দিয়ে কিনতে পারবে ।। যদি তোমার মনে হয় পারবে তাহলে একটা কাজ করো ,,বাজার থেকে দেখতে সেইম এমন দেখতে একটা মিষ্টি কিনে নিয়ে এসো।।।আমি কিছুতেই আমার ওয়াইফ কে ছাড়তে পারবো না।। আর কে বলেছে ওকে আমি স্বাভাবিক করার জন্য বিয়ে করেছি,, আমি আমার ভালোবাসাকে বাঁচাতে ওকে বিয়ে করেছি।। (জানভির হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে একহাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে আবির)

— মামা তুমি আবিরকে বলো দাও ,,মিষ্টিকে ছেড়ে দিতে !!( জানভি)

— সরি রে ছোট আমি সেটা পারবো না,, যদি হানি কিংবা আবির চাই তাহলেই সম্ভব।।(তানজিম)

— মিষ্টি তুই সবাইকে বলে দে,,তুই আমার সাথে থাকবি !!তুই তো এই বিয়েটা কে মানিস না( জানভি আমার হাত ধরে)

— জান দেখো বিয়ে একবারই হয় বারবার নয়।। আর সেটা আমার হয়ে আবিরের সাথে।। আর আমার মানা না মানা তে কিছু যায় আসেনা।। (মাথা নিচু করে আমি)

— তার মানে তুই আমার কাছে ফিরে আসবি না!! ( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জানভি)

আমি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি,,তা দেখে আবার জানভি বলে উঠলো…

— আমি আমার উওর পেয়ে গেছি। congratulations 🎉 for you marige life !! ভালো থাকো হানি ,, আবির।। সুখের হোক তোমাদের বিবাহিত জীবন।

হানি নামটা যেনো বুকের ভেতরে তীরের মতো আঘাত করছে ।। আজ পর্যন্ত কাখনো জানভি আমাকে হানি বলে ডাকেনি।।

— জান …

— না ,,আজ থেকে জানভি ভাইয়া।। আর তুই ও আমার কাছে হানি হয়েই থাকবি।। আর কখনো আমার জীবনের নাক গলাতে আসবি না।। এবার থেকে অন্যভাবে আমার জীবন শুরু করবো আমি।। নিজের মতো করে ।।(অজয় আর জেরিন কে উদ্দেশ্য করে) চলো বাড়ি ফেরা যাক।।

বলেই বেরিয়ে গেল জানভি ।। পেছনে গেল।।তার বাবা মা।। আমরাও এই মুহূর্তে অপেক্ষা করলাম না বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য বেরিয়ে এলাম।।

আসার পর থেকেই বেলকেনির দোলনায় একা একা বসে আছি।।কিছুই ভালো লাগছে না,,এখনো ড্রেস চেঞ্জ করা হয়নি।। খুব করে জানভির কথা মনে পড়ছে।। ওর বিহেবগুলো।। আচ্ছা ,,জানভি যেই মেয়েটাকে ভালোবাসতো ,,সেই মেয়েটা যে আমি।। সেদিন জানভি বলা কথাগুলো শুনে আমার খুব কষ্ট হয়েছিলো,,যেখানে আমি জানভিকে ভালোবাসি না।।আর আজ তার ভালোবাসার মানুষটি অন্য একজনের তাহলে তার কতোটা কষ্ট লাগছে ।। চোখের অশ্রু যেনো কিছুতেই বাঁধ মানছে না,, বারবার হাত দিয়ে মুছছি,, আবার গড়িয়ে পড়ছে।। আচ্ছা,,আমারকি জানভির কাছে চলে যাওয়া উচিত।। ভালো লাগছে না কিছু ভাবতে তাই চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম।। হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুলে দেখি,, আবির আমার পাশে বসে আছে।। তাই হাতটা সরিয়ে ,,চোখ দুটো ফিরিয়ে অন্যদিকে নিলাম।। আবির আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো তারপর আমার হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে বললো….

— আমি জানি তুমি কি ভাবছো ,,জানভির কাছে চলে যেতে চাইছো।। কিন্তু পিলিজ মিষ্টি এতোবড় শাস্তি আমাকে দিও না ।। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না,, খুব ভালোবাসি যে তোমাকে। তুমি আমাকে ঘৃণা করো ,,মুখ ফিরিয়ে থাকো,,আমি কিছু বলবো না।। শুধু আমার পাশে থাকো।। আমি জানি ,, আমি তোমাকে জানভির মতো ওতো ভালোবাসি না,,তবে কথা দিচ্ছি,, সারা জীবন তোমাকে আগলে রাখবো ।। যেখানে জানভিকে হার মানাবো।। (করুন সুরে আবির)

শুনেছিলাম,, আল্লাহ নাকি ৭ জনকে দেখতে একরকম সৃষ্টি করেছে।। তাহলে তার থেকে আরেকজনকে কি আদো আনা সম্ভব।। তাহলে একজনকে এনে আমার শূন্যতা পূরণ করার চেষ্টা করতাম।। আবির কিংবা জানভি কারো কষ্টই যে আমি সহ্য করতে পারি না।। আবিরের প্রতি রাগটা থাকলেও আমি যে ওকে ভালোবাসি।। মানুষ তো তার ভালোবাসার মানুষটির দেওয়া আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় ।।আর সেখানে আমি নিজে তাদের দুজনকে কষ্ট দিচ্ছি।। তাহলে কতটা কষ্ট আমি সহ্য করছি।।তাই আমিও দোলনা থেকে নেমে আবিরের পাশে নিচে বসে বললাম….

— আবির আমি আপনাকে ভালোবাসি।। আপনাকে ছাড়া আমি কোথায় যাবো।। তাছাড়া আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে,,, যেখানে হাজার বার চাইলেও আমি আপনাকে ছাড়তে পারবো।। সেখানে চলে যাওয়ার তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।।

সাথে সাথে আবির আমাকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে ধরলো।। হয়তো আমার কথায় একটু হলেও শান্তি পেয়েছে।। অনেকক্ষন ধরে জরিয়ে ধরে আছে ,,ছাড়ার কোনো নামই নেই,,

— ছাড়ুন আমার খুব ঘুম পেয়েছে।। ঘুমাবো।। আর আপনিও চলুন ঘুমাবেন।।

তারপর আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।।

🍁🍁🍁

— পপিলিজ আআমমাকে ছেড়ে চলে যেওনা মিষ্টি আমি থাকতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।। এই মিষ্টি পিলিজ হাতটা ছেড়োনা ।।জানভি তোমাকে নিয়ে যাবে।।(ঘুমিয়ে ঘোরে আবির)

বলেই লাফ দিয়ে উঠে বসলো আবির।। আবিরের এমন রিয়েকশন দেখে ,,আমিও উঠে বসলাম।। ঘেমে পুরো একাকার হয়ে গেছে।। দেখেই না বোঝা যাচ্ছে।।।

চলবে…💞💞

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)