কতোবার বোঝাবো বল পর্ব-৩৩+৩৪

0
2387

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৩

— বিশ্বাস করো মিষ্টি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি ।। প্লিজ আমাকে ছেড়ে চলে যেও না।।আমি বাঁচতে পারবো না তোমাকে ছাড়া।। (উঠে বসে আবির)

— আবির শান্ত হও।।আমি কোথাও যাচ্ছি না।। এই তো তোমার সামনে বসে আছি ।। দেখতে পারছো না আমায় ।।(আবিরকে আমার দিকে ঘুরিয়ে)

— সত্যি ই তুমি যাচ্ছ না তো।।

বলেই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।।আমিও জরিয়ে ধরে মাথায় হাত বোলাতে লাগলাম।। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর স্বাভাবিক হয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার গালে হাত দিয়ে বললো…

— তুই সত্যিই তো আমাকে ছেড়ে যাওনি।। আর কিন্তু যাতেও না,,বলে দিলাম।।(আবির)

— যাবো না বললাম তো!!(আমি)

— আর যদি চলে যাও তখন !! (আবির,)

— তাহলে আর কি দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন !!

বলতেই আমার ওরনাটা নিয়ে আমার কোমরের সাথে তার কোমর বেঁধে নিলো।। এতোক্ষণ একটু ফাঁক থাকলেই এখন একফোঁটাও ফাঁক নেই।। তারপর আমাকে শুয়িয়ে দিয়ে নিজে আমার উপর শুয়ে পড়ল।।
এমন ভাবে শক্ত করে ধরে আছে যেন জীবনটা এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।। কিছু বলতে পারছি না।। মা বলার কালকেই বলবো।।আমি আবিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর ঘুমানোর করছি।। আবির বুকে যেন আমি পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ প্রানী ,,,এরকম ভাবতে ভাবতে পা জমালাম দুজনে একসাথে ঘুমের দেশে।।

🌅 🌅 🌅

ঘুম থেকে উঠে আবিরের মুখটা দেখতে পেলাম।। এখনো জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে ।। রাতে ঠিক যেমন ভাবে ধরে ছিলো,, তেমনই আছে ,,একচুলও নড়ে নি ।। একদম বাচ্চাদের মতো,,যদি আমি চলে যাই ।। উঠতেই পারছি না।। অনেকক্ষন চেষ্টা করেও যখন বৃথা হলাম তখন একদম আশা ছেড়ে দিয়েছি।।এর মধ্যে কেউ দরজ ঠেলে রুমে ঢুকলো…

— হানি তুই কি ঘুম থেকে উঠেছিস !! একটু কথা ছিল…!!( হিয়া)

আর কিছু বলতে পারলো না,,তার আগেই মুখটা হা হয়ে গেল।। আমার আর আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।। কালকে রাতে ঘুমানোর আগে দরজা লক করতে ভুলে গেছিলাম।। যাতে এখন এই পরিস্থিতিতে পরতে হচ্ছে।।

— এখনো রোমান্স চলছে ।। আর আমার বউটাই রোমান্স করতে বলে এখন না এখন না।।(রুমে ঢুকতে ঢুকতে নিবিড়)

— আর রোমান্স ।। কালকে রাতে আপনার মা পাগলামো করেছে না ,,শুনলে মাথা নষ্ট হয়ে যাবে ।।

তারপর কালকে কি কি হয়েছিলো সবটা একে একে বললাম।।এরা তো বিশ্বাস ই করতে পারছিলো না।।

— সত্যি হানি আমার ভাইটা কিন্তু তোমাকে অনেক ভালোবাসে !!( নিবিড়)

— হম !! তাই তো দেখছি ।।(আমি)

— দেখছি না,, সত্যি বাসি তো ,, আমার লক্ষি সোনা বাচ্চা বউটা ।।(আমার নাক টেনে আবির)

বলেই আমার উপর থেকে উঠে পড়লো ।। তারপর কথা একবার ফেটে পড়লো।। আসলে আপি নাকি পেগন্যান্ট ।। তার জন্যই কিছু খেতে পারছিলো না,,সেটা কালকে রাতে জেনেছে ।। বাসাই সবাই জানে ,,আমরা কালকে একেই তো দেরি করে ফিরেছি আবার আবিরের পাগলামির জন্য জানতে পারি নি।।এখন ভাইয়া বায়না ধরেছে,,,গ্ৰামে যাবে না।। কিন্তু আপি যাবেই ।।তাই আমাদের কাছে আসা।। অবশেষে আপির জেদের কাছে হার মানতে হলো নিবিড় ভাইয়াকে।। তাই তারা মাএ ৩ দিনের জন্য যাচ্ছে।।আজকে বিকেলে যাচ্ছে।। নিবিড় ভাইয়া আর আপি দুজনেই অনেক খুশি বেবিটার জন্য।। নিবিড় ভাইয়া তো এরমধ্যে বেবিটার নামও ঠিক করে ফেলেছে ।। প্রথমে আমার একটু খারাপ লেগেছে ।। এই প্রথম আমাকে ছেড়ে আপি অন্য কাউকে ভালোবাসবে ।। তবুও মেনে নিয়েছি।।।

🍁🍁🍁

বিকেলে নিহাল আঙ্কেল,,নিলিমা আন্টি,, আপি,, ভাইয়া বেরিয়ে গেল গ্ৰামের উদ্দেশ্য।। একটা গাড়িতে গেছে ।।ফন্ট সিটে ভাইয়া আর নিহাল আঙ্কেল।।ব্যাক সিটে আপি আর নিলিমা আন্টি।। যাওয়ার আগে এক গাধা জামা কাপড় নিয়ে গেছে শীতের।। যাচ্ছে তো ৩ দিনের জন্য কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে সারা জীবনের জন্য যাচ্ছে।।
তাদের কে বিদায় দিয়ে পাশে তাকাতে আবিরকে দেখতে পেলাম না।। হয়তো আমার আগেই ভেতরে চলে গেছে।। ভেতরে গিয়ে বাঁধলো আরেক বিপওি ।। সালা শয়তান 😈।। সব কাজের লোকদের টাকা দিয়ে ৩ দিনের জন্য বিদায় করে দিলো।। তাও আমি ভেতরে আসার আগে।।

আবির বেডে হেলান দিয়ে ফোনে গেমস খেলছে আর আমি বই নিয়ে পড়ছি।। আগেই বইগুলো আবির আমার বাড়ি থেকে এনে রেখেছিলো।।

— মিষ্টি ,, মিষ্টি ।। তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসো।। আমার মাথা ঘুরছে।। পপপিজ।। বাঁচাও বাঁচাও.!!(আবির)

হঠাৎ আবিরের এমন চিৎকার শূনে আবিরের কাছে গেলাম আবিরকে আস্তে আস্তে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম..

— কি হয়েছে,, আবির!! শরীর খারাপ লাগছে।।

— না জ্বর এসেছে ।।দেখো !!( আমার হাত কপালে নিয়ে আবির)

কিন্তু না শরীর তো বরফের মতো ঠান্ডা লাগছে ।। তাহলে এমন কেন করছে ,,বুজতে পারছি না।। আমি আবিরের হাতটা তার মাথায় রেখে বললাম…

— আমার তো মনে হচ্ছে না আপনার জ্বর হয়েছে ।। তার চেয়ে বরং আপনি নিজেই নিজের জ্বর পরিক্ষা করুন।।

— হাত দিয়ে জ্বর মাপা যায়।। ঐ ড্রয়ারে থার্মোমিটার আছে ।। ঐটা নাও ,,তাহলে বুঝতে পারবে ।।

আমি ড্রয়ার থেকে থার্মোমিটারটা বের করে আবিরের মুখের ভেতরে দিলাম।। এরমধ্যেই ফুলদানিটা নিচে পড়ে গেল।। ফুলদানিটা তুলে আবিরের মুখ থেকে
থার্মোমিটারটা বের করতেই চমকে গেলাম।। ১০৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা।। কিন্তু শরীর এতো ঠান্ডা কেন বুঝতে পারছি না।।ঠান্ডায় কাঁপছে আর বলছে জুস খাবো ।। আমি এখন পড়েছি বড় মুছিবাদে।। নিচে জুস আনতে গেলাম।। ফ্রিজারেটর খুলে জুসের কোনো চিহ্ন মাএ ও পেলাম না।। কিন্তু আবির তো জুস খেতে চেয়েছে ।। তাই নিজেই জুস বানাতে লাগলাম।। ফ্রিজারেটরে তো অনেক রকমের ফল ।। আবির কোনো জুস খাবে সেটা তো বললো না।। তাই আবার উপরে গেলাম জিজ্ঞাসা করতে । জিজ্ঞাসা করতে বললো ,, আমের জুস খাবে ।। তাই নিচে এসে আম বের করতেই আবার অসহায় হয়ে গেলাম।। কাঁচা আমের জুস খাবে নাকি পাকা আমের জুস খাবে সেটাই তো জানা হলো না।। আমি যতোদূর জানি জ্বরের সময় ঠান্ডা খাবার টাই পার্ফেক্ট ।। তাই কাঁচা আমের জুস বানিয়ে নিয়ে গেলাম।। কিন্তু মহারাজ বললো ,,সে পাকা আমের জুস খাবে,,,তাই আবার নিচে এসে পাকা আমের জুস বানিয়ে নিয়ে গেলাম।। এবার নাকি সে বিস্কিট দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খাবে ।।তাই বিস্কিট আনতে হবে।। কি বাচ্চাদের মতো সব আজবুড়ি খাওয়া।। আবার গিয়ে বিস্কিট নিয়ে এলাম।। জীবনটা যেন এখানেই শেষ হয়ে গেল।। তারপরও লান্তি নেই বিস্কিটও খায়িয়ে দিতে হচ্ছে।

বিস্কিট খায়িয়ে দিয়ে আমি বেডে টান টান হয়ে শুয়ে আছি ।। এই দিনও আমাকে দেখতে হচ্ছে।। খেয়ে আবার ফ্লোর পরিস্কার করতে হবে।। একটু আগে খায়িয়ে দিতে গিয়ে ইচ্ছে করে ফেলেছে। কিছু বললেই বলে ,,জ্বরের মধ্যে এমন করে বকে না গো বউ।। তাই বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে‌।। এখন আমার মনে হচ্ছে ,,আসলে ওর জ্বর হচ্ছে বাহানা ইচ্ছে করে আমাকে দিয়ে এইসব করাচ্ছে।। এই মধ্যে আবার আবিরের ডাক পড়লো।। তার শরীরটা নাকি জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে ,, তাই সে এখন শাওয়াল নিবে ।। আর আমাকে তাকে হেল্প করতে হবে।। কোনো উপায় না পেয়ে ধরে ধরে নিয়ে গেলাম ওয়াশরুমে।। সেখানে তাকে রেখে আবার এসে জামা কাপড় গুলো নিয়ে গেলাম।।

— আচ্ছা ,, আমি এখন আমি যাই আপনি শাওয়াল নিয়ে আসুন কেমন!!

— না তুমি থাকো ।। তুমি নিজে আমাকে সাহায্য করবে জ্বর তো বুঝতেই পারছো অসুস্থ মানুষ ।। হঠাৎ হঠাৎ,,যদি পড়ে যাই তখন।।

তারপর আর কি নিজে তো ভিজছে সাথে একটু পর পানি ছুড়ে আমাকেও ভেজাচ্ছেও ।। কিছু বলতে পারছিনা শুধু জ্বরের বাহানা দিচ্ছে।। একটু পর নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে আরো কতো গুলো ড্রেস এনে আমার সামনে ধরলো আর ধুতে বলে নিজে গিয়ে বেডে শুয়ে পড়লো।। কোনো কথা না বলে সেগুলো ধুতে লাগলাম।। একসময় আমি ভিজিয়ে রেখেছি আর তার মাম্মাম ধুয়েছে আর আজ আমাকে ধুতে হচ্ছে।। ততটুকু ভেজার বাঁকি ছিলাম,, সেটুকুই ভিজে গেলাম।।
ধুয়ে সেগুলোকে রোদে দিয়ে নিজের ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম।। আমি এখন ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছি ,,হাতে,,পায়ে ব্যাথায় টনটন করে ।।

— বলছিলাম কি মিষ্টি,, যাও তো কিচেন থেকে কিছু ফল কেটে নিয়ে আসো তো খাবো !!( আবির)

— ফল খাওয়ার খুব শক না তোর আয় তোরে ফল খাওয়াই তাছি ।। শালা খবিস।। দাড়া আজ তোর একদিন কি আমার যে কদিন লাগে ।।

চলবে…💞💞

#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::৩৪

— এটা কেমন ব্যবহার বউজান।। স্বামীকে কেউ তুই তুকারি করে।। একটু সেবাই তো করছো।। স্বামীর সেবার করলে পূর্ণ হয়।। আমার সোনা বউটা রাগ করে না ।।(আমার গাল টেনে আবির)

— আমার পূর্ণ লাগবেনা সরুন ঘুমাবো ।।

বলেই বেডে শুয়ে পড়লাম।। আবির শুয়েছে কিনা তা দেখার চেয়ে ঘুমটাই বেশি গুরুত্ব আমার কাছে । তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।। ক্লান্ত থাকায় সহজেই ঘুমে তলিয়ে গেলাম।।
🍁 🍁 🍁

ঘুম থেকে উঠেই নামাজ আদায় করেই খাবার জন্য ব্রেক ফাস্ট করতে চলে গেলাম।। যেহুতু বাড়িতে কোনো কাজের লোক নেই তাই আমাকে এই কাজগুলো করতে হবে,,তাই আগেই কাজে নেমে পড়লাম।। আমি মাঝে মাঝেই রান্না করতাম ,,, কিন্তু অনেক দিন তো হলো কোনো রান্নাই করি না ।। কিচেনে গিয়ে আগে এক কাপ কফি বানিয়ে ঘুমের রেশ কাটিয়ে নিলাম।। তারপর ২ টো ডিমের অমলেট করে নিলাম।। কিভাবে যে আমার শ্বশুরি মা রান্না করে তা আল্লাহ মালুক।। কি গরম রে বাবা।। মাএ ২ টা ডিম আর ১ কাপ কফি বানাতে গিয়েই আমার এই অবস্থা।। আমাদের বাড়িতে তো টেবিল ফ্যান আছে।। সেটা স্পেশালি আমার রান্না করার জন্য।। যখনি রান্না করতে যাই ,,সেটা অফ করে নেই।।আমার রান্না করতে কষ্ট হয় তাই জানভি ফ্যানটা কিনে এনেছিলো।। কিন্তু এখানে কি করবো।। সারা বাড়ি খুঁজে একটা ফ্যান পেলাম। সেটা এনে কোনো রকম সেট করে রান্না করে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।। বাতাসের কারনে চুলগুলো উড়ছে ,,,তার চুলগুলো হাত খোঁপা করে ,,, শাড়ির আঁচলটা কোমরে গুজে নিলাম।। আগের চুলায় বাজিটা বসিয়ে দিলাম ।। তারপর ময়দা মাখানো শুরু করালাম।। অনেক রান্না করলেও পরটা কখনো বানাইনি।। উপরের তাকে ময়দা রাখা।। কিছুতেই সেটা নামাতে পারছি না।। লাফ দিয়ে যখন ভয়মটা নামটা নামাবো তখন ভয়মের ,,ঢাকনা খুলে কিছু ময়দা আমার গায়ে পড়লো।। সেদিকে তোয়াক্কা না করে ময়দা একটা পাএে রেখতে শুরু করলাম,,সেখানেও ঘটলো আরেক বিপত্তি।। বাতাসে ময়দা গুলো উড়ে এসে আমার জামা কাপড় নষ্ট করছে ।। তাই ফ্যানটা অফ করে দিয়ে আবার ময়দা মাখতে লাগলাম।।
কখনো ময়দায় মানিতে কম হচ্ছে তো কখনো বেশি হচ্ছে।। এদিকে ঘেমে তো আমি পুরো একাকার ।। তার উপর সামনে থাকি চুলগুলোর বিরক্ত ,,একদম ভালো লাগছে না।।
অবশেষে ২ ঘন্টা যুদ্ধ করার পর ময়দা মাখা কমম্পিট ।। মা মেখেছি,,তা দিয়ে পুরা আমার বংশ খেতে পারবে।।।এবার বেলবো আর ভাজবো।।
একটা তাভা নিয়ে নিয়ে চুলায় দিয়ে যেইনা ময়দাতে হাত লাগাবো,,,ওমনি কেউ আমার মাখানো ময়দার মধ্যে পানি ঢেলে দিলো।। তাকিয়ে আবিরকে দেখতে পেলাম।। এতো কষ্ট করে পারফেক্ট মাখালাম আর সে সব কষ্টে পানি ঢেলে দিলো।।
মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।। এরমধ্যে আবির এক হাত দিয়ে আমাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ,,আমার কাঁধে থুতনিটা রাখে ,,আরেক হাত দিয়ে আমার হাত ধরে,, আগের ময়দা মাখাতে শুরু করলো।। কিন্তু সেজা করছে ,,তাতে পরটা হবে না।। হবে গোলা রুটি।। আমি নিজের মধ্যে আমার প্রশ্ন ধমে রাতে পারলাম বলেই ফেললাম…

— আচ্ছা ,,আপনি কি গোরা রুটি খাবেন ।। না মানে এভাবে তো গোলা রুটি বানায়,,মাম্মামকে দেখেছিলাম।।আর গোলা রুটি তো আমার খুব ফ্রেবারেট।।

— হম।। গোলা রুটি আমারও ফ্রেবারেট।। তাই গোলা রুটি বানাতে তোমাকে হেল্প করছি।।

গোলা রুটির ময়দা বানানোর পর যা করলো সেটা আমার ভাবনার বাহিরে ছিলো।। হাতে লেগে থাকা ময়লাগুলো আমার শাড়ির ফাঁক দিয়ে পেটের ভেতরে লাগিয়ে দিলো।। আমি তো সেখানে শকট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।। তারপর হাতটা সরিয়ে আমার ঠোঁটে লাগাতে নিতেই আমি সরে আমার চেষ্টা করি ।। হাতে লেগে মরিচের গুঁড়ো পড়ে গিয়ে তা উরে এসে আবিরের চোখে মুখে পড়ে।। আবির সেখানে চোখ মুখ স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।। আমি করবো বুঝতে পারছি না।। একদিকে আবিরের এই অবস্থা অন্যদিকে চুলাতে বসানো বাজি পুরছে।। যাতে বাজে স্মেল এসে আবিরের কাশি শুরু হয়ে গেলো।। কোনো উপায় না পেয়ে আমি হাত দিয়ে তাভাটা ধরে নামাতে গেলে হাতে ছেঁকা খাই ।। চারপাশে কিছুই দেখতে পারছি ,,এই মুহূর্তে চলা অফ করার কথাটাও মাথায় আসছে না।। কিন্তু তবুও দমে যাইনি।। হাত দিয়ে ধরে নামিয়ে ফেলি ,,যাতে হাতের অনেক টা অংশ পুড়ে যায়।। নামিয়েই আবিরকে টেনে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে ওর চোখে মুখে পানি দিতে লাগলাম।। গুড়োগুলো নেই ঠিকই কিন্তু জ্বলছে ।। যাতে তার চোখ ,,মুখ জ্বালে অগ্নিরুপ ধারন করেছে।। আমি আবিরকে টেনে রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে আবিরদের পার্সোনাল ডাক্তারকে ফোন দিলাম।। আবির তো আমার কোলে মাথা রেখে আমার কোমর আঁকড়ে ধরে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।।এমন শক্ত করে চেপে ধরে আছে,,,তার নখের দাগ আমার পেটে স্পস্ট।। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার এসে হাজির হলেন ।। কিন্তু তার আগেই আবির জ্ঞান হারালো।।ডাক্তার এসে পরিক্ষা করে বললেন….

— আমি যতটুকু জানি,,,ঝালে তো আবিরের এলার্জি আছে।। আর সেখানে মরিচের গুঁড়ো।। এতোবড় বেডরুম থাকতে কিচেনে যাওয়ার কি দরকার ছিলো।। তাই হোক আমি আবিরকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি ,,আপনি ওর যত্ন নিবো কেমন ।। এবার আসি ।।

বলেই চলে গেল।। লোকটা কথায় আমার প্রচুর লজ্জা করছিলো।।এখনো গায়ে ময়দা লেগে আছে ।। কিন্তু আবিরের কথা মনে পড়তেই কষ্ট হচ্ছে।। চোখ থেকে অশ্রু ঝরছে।। আমি সত্যি ই একটা ওয়ার্ক ল্যাস ।। যদি তখন মরিচের গুঁড়ো সাবধানে রাখতাম ,,তাহলে এমন হতো না ।। আমি আবিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আর ওর মুখটা দেখছি ।। একদম বাচ্চাদের মতো লাগছে।। আবিরকে সরিয়ে উঠার শক্তি বা ইচ্ছে কোনোটাই নেই আমার।। তাই চুপচাপ বসে আছি।।হাতটা পুড়ার কারনে প্রচুর জ্বলছে।। কিন্তু সেদিকে কোনো আক্ষেপ নেই আমার।। আবিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেই জানিনা।।

🍂🍂🍂

আছরের আযানের ধ্বনি কানে আসতেই ঘুমটা ভেঙে গেল।। আবির এখনো ঘুমিচ্ছে।। হয়তো ঘুমের ডোসটা দেওয়ার কারনে।। আমি আবিরকে আমার কোলের থেকে সরিয়ে বালিশে মাথা দিয়ে উঠে গেলাম।। সকাল থেকে আবির কিছু খাইনি ।। ঘুম থেকে উঠলে নিশ্চয়ই ক্ষুদা লাগবে তাই ,,, তাই উঠে শাওয়ার নিয়ে হাতে ব্যান্ডেজটা করেই আবিরের জন্য স্যুপ বানাতে কিচেনে গেলাম।। কিচেনের অবস্থা নাজেহাল।। আবিরের জন্য স্যুপ বানিয়ে রুমে এসে দেখি সে উঠে শাওয়ার নিয়ে নিয়েছে ।।আমি শাড়ির আঁচল দিয়ে পোড়া হাতটা ঢেকে স্যুপের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে খেতে বললাম।।।

— না আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।। তুমি নিয়ে যাও!!

— কি বলছেন আপনি এইসব।। কিছুই তো খাননি ।।প্লিজ এটা নিন ।।

— খেতে পারি যদি তুমি খায়িয়ে দাও।।

— ঠিক আছে তবে আপনি চোখ বন্ধ করবেন আমি তারপরই খায়িয়ে দেবো।।(একবার পোড়া হাতটার দিকে তাকিয়ে বললাম আমি)

পোড়া হাতটা দিয়ে স্যুপের বাটিকা ধরে অন্য হাত দিয়ে খায়িয়ে দিতে লাগলাম।। খুব জ্বলছে ,, তবুও বলতে পারছি না।।
খায়িয়ে আচলটা দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে আবার হাতটা ডেকে বাটিটা নিয়ে নিচে চলে এলাম।। এর মধ্যেই আবির বলে উঠলো..

— মিষ্টি জামা কাপড় গুলো ওয়াশরুমের পানিতে ভিজিয়ে রাখা আছে ।। একটু ধুয়ে রোদে দিয়ে দিয়ো।।

আমার নেড়ে হ্যা বুঝিয়ে চলে এলাম নিচে।। বাটিটা রেখে উপরে গিয়ে জামা কাপড় গুলো কোনো রকম ধুয়ে রোদে দিয়ে ,,আপির রুমে এসে ব্যান্ডেজটা খুলে নিলাম।। পানিতে ভেজার কারনে আরো জ্বলছে ।। ড্রয়ার থেকে একটা মলম বের করে আস্তে আস্তে হাতে লাগাচ্ছি আর ফু দিচ্ছি।।

— মিষ্টি,, তুমি এই রুমে কি করছো ।। (পেছন থেকে আবির)

প্রথমে কারো গলা পেয়ে ভয় পেয়ে গেলেও পরক্ষনে আবিরের গলার আওয়াজ পেয়ে শান্ত হয়ে হাতটা পেছনে লুকিয়ে তার দিকে তাকি বললাম…

— না মানে এই রুমে অনেক ময়লা জমেছে তো তাই ক্লিন করতে এলাম।। এই অবস্থায় আপির এমন ঘরে একদম ঠিক না তো তাই।।

— ও আচ্ছা,,তাই বুঝি ।। তো ঝারু কিংবা সাবান ,,পানি তো দেখতে পাচ্ছি না।। তুমি কি ঐ ফাস্ট একইড বক্স দিয়ে রুম পরিস্কার করো ।। সুন্দর আইডিয়া তো।।
(আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে আবির)

এসেই আমার পোড়া হাতটা পেছন থেকে সামনে এনে জোরে চেপে ধরলো ।। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি।।।

চলবে….💞💞

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,, ধন্যবাদ)