কল্পকুঞ্জে কঙ্কাবতী পর্ব-৩৮ এবং শেষ পর্ব

0
407

#কল্পকুঞ্জে_কঙ্কাবতী
লেখনীতেঃ নবনীতা শেখ
|অন্তিম পর্ব|

“ইশ! স্টোর রুমে কী করছিস, বাপ? তোর না ডাস্ট অ্যালার্জি!”

কুঞ্জের কথা শুনে ইফতি তড়িঘড়ি করে ডায়েরিটা বুকশেলফের উপরে ছুঁড়ে মারল। শব্দ পেয়ে কুঞ্জ সেদিকে গেল। শুধাল, “কীসের শব্দ রে?”

স্বল্পভাষী ইফতি তাকিয়ে থেকে বলল, “মে-বি, র‍্যাট, বাবা।”

কুঞ্জ বিশ্বাস করে নিল। গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করল, “এখানে কী করা হচ্ছে? গতবার কীভাবে অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলি, খেয়াল আছে?”

“মা ক্লিন করেছে তো কাল। ডাস্ট নেই এখানে।”

“সে না-হয় বুঝলাম। কিন্তু, এখানে কী?”

ইফতি হাত উঁচিয়ে জানালার দিকে দেখাল। কাচের জানালার উপরের কোনা ভেঙে চুরমার হয়ে আছে। ভেতরের দিকে ভাঙা কাচগুলোর সাথে একটা বল পড়ে থাকতে দেখে কুঞ্জ ইফতির কান মলে দিয়ে বলল, “ওরে, দুষ্টু!”

ইফতি খিলখিল করে হেসে উঠল। কুঞ্জও সাথে হেসে দিল। এগিয়ে গিয়ে বলটা তুলে নিয়ে ছেলের হাত ধরে বলল, “চল, বাপ। এখান থেকে যাই। তোর মা এখনই চলে আসবে। মা দেখলে দুটোকেই বকুনি দেবে।”

“বাবা, মায়ের বকুনিগুলো ভীষণ সুইট হয়।”

“হ্যাঁ, তোকে বলেছে!”

ব্যাঙ্গ করে কথাটা বলল কুঞ্জ। ইফতি মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে। ভাগ্যিস বাবা আজ দেরি করে ফিরেছে। নয়তো ধরে ফেলত—সে স্টোর রুমে এই বিকেলে নয়, সকালে এসেছিল। মাঝে এক ফাঁকে দাদিমার কাছে দুপুরের খাবার খেয়ে আবারও এখানেই এসেছে। বয়স ৯-এর কোঠা পেরিয়েছে। অথচ ম্যাচিওরিটিতে, অনেকটা এগিয়ে। নবনী আর কুঞ্জর ছেলে তো! একটু অ্যাডভান্সড হবেই। তাই তো সকালে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বলটা তাদের বাড়ির স্টোর রুমে এসে পড়ায়, সে নিতে এসে নবনীর ডায়েরিটা পেয়েই শুরু থেকে সবটা পড়া শুরু করেছিল। যদিও শেষ করতে পারেনি। পরে এক সময় এসে বাকিটা পড়বে। মনে মনে মা আর বাবার আগেরকার এসব ঝগড়া ভেবে হাসছে, একদম এখনকার মতোই সেই ঝগড়াগুলো…

নবনীর হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেজে গেল সন্ধ্যা ছয়টা। রুমে ঢুকেই দেখতে পেল, কুঞ্জ কাউচে বসে আর ওপাশে ইফতি বিছানায় বসে ফোন টিপছে। দু’জনেই একে অপরের সাথে অনলাইনে গেইম খেলে যাচ্ছে। কারোর খেয়াল নেই, নবনী এসে গিয়েছে। বুঝতে পারলে, অবশ্যই দু’জন ফোনে ব্যস্ত থাকার দুঃসাহস দেখাত না।

নবনী ফ্রেশ হয়ে এসে যখন বুঝতে পারল, এতক্ষণেও কেউ তার দিকে খেয়াল দেয়নি, তখন সে এসির রিমোটটা নিয়ে পাওয়ার কমিয়ে দিল। রুমের প্রকৃতি ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হওয়ায়, কুঞ্জ বলল, “কী রে বাপ, খেলায় পারছিস না বলে এই কাজ?”

ওদিকে ইফতিও বলল, “বাবা, চালাকি তুমি করছ। আমি নই।”

পরপরই আবার বলে উঠল, “উফফ! পাওয়ার বাড়িয়ে দাও!”

ততক্ষণে কুঞ্জ চোখ তুলে তাকিয়েছে। সামনে নবনীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে বোকা বোকা হাসল সে। বলল, “ওহ! ত..তুমি আসলে কখন?”

ইফতিও তাকাল। মাকে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বালিশের পেছনে ফোন লুকিয়ে পুরোনো কৌশল অবলম্বন করল, যেটাতে মা রাগতে পারে না। বলল, “আসসালামু আলাইকুম, মা।”

নবনী নিচু স্বরে সালামের জবাব নিল, “ওয়া-আলাইকুমুস সালাম।”

কুঞ্জ সালাম দিল, “আসসালামু আলাইকুম, নবনী।”

“ওয়া-আলাইকুমুস সালাম।”

ইফতি মিষ্টি করে হেসে বলল, “শান্তি এসেছে, মা?”

নবনী হাসবে না কি কাঁদবে বুঝে উঠতে পারছে না। এই ছেলেটা এত চালাক! অসহায় চোখে ইফতির দিকে তাকাল কেবল। কালো টি-শার্ট, ট্রাউজার আর গোল ফ্রেমের চশমা পরা ছেলেটা তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। শুভ্র গায়ের রঙ, বাদামী চোখ, মুখের আদল—দেখতে একদম কুঞ্জর মতোই হয়েছে। অথচ চুলগুলো দু’জনের কারো মতোই হয়নি। খুব ঘন আর কোঁকড়ানো।

নবনীকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইফতি আবার বলল, “মা, কেমন আছ?”

নবনী এগিয়ে গেল। সকালে যখন হসপিটালে যায়, তখন রত্নটা ঘুমে থাকে। দেখা হয় সন্ধ্যায়, অথবা রাতে। মাঝে মাঝে ইমার্জেন্সি পড়ে গেলে, দেখা হয় না। ইফতি প্রতিরাতে মায়ের যতই দেরি হোক না কেন, জেগে থাকে। এই জেগে থাকাটা এই পর্যন্তই। ঘুমপাগল ইফতি জাগতে পারে না। বসে বসেই ঘুমে তলিয়ে যায়। কুঞ্জ তখন ইফতিকে বুকে জড়িয়ে বসে থাকে।

নবনী ইফতির কাছে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল। ৯ বছরের এক গোলুমোলু বাচ্চা যথেষ্ট ভারি। নবনী সয়ে নেয়। মিষ্টি হেসে বলে, “ভালো আছি, বাবা। তুমি কেমন আছ?”

“ভালো আছি।”

“পড়তে বসোনি?”

“বসেছিলাম তো। তারপর ভাবলাম এখন রিফ্রেশমেন্ট দরকার। তাই গেইম খেলছি একটু। তাই-না, বাবা?”

কুঞ্জ জবাব দিল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ। তাই-ই।”

নবনী কুঞ্জর দিকে তাকিয়ে ছোট্টো শ্বাস ফেলে ইফতিকে বলল, “সন্ধ্যায় খেয়েছ?”

“হ্যাঁ, মা। দাদিমণি খাইয়েছে। তুমি আমাকে নামাও।”

“কেন? মায়ের কোলে ভালো লাগছে না বুঝি?”

“মা, তোমার কষ্ট হচ্ছে।”

নবনী ইফতিকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, “না, বাবা। তুই আরও বড়ো হয়ে গেলেও আমার কষ্ট হবে না।”

ইফতিও সুন্দর মতো মাকে জড়িয়ে রইল। তারপর তাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “মা, আমি সব্বার চেয়ে ডিফারেন্ট। ভীষণ ইন্টারেস্টিং, না?”

“হুম, তা অবশ্যই। কিন্তু মাথায় কী চলছে?”

“সবার মামা আর বাবা আলাদা আলাদা হয়। কিন্তু আমার একই।” –কথাটা বলেই কুঞ্জের দিকে তাকিয়ে বলল, “তাই না, বাবা-মামা?”

কুঞ্জ বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে বলল, “কী বলিস, ব্যাটা?”

ইফতি মিটিমিটি হেসে বলল, “আমাদের মিস শিখিয়েছেন, মায়ের ভাই হচ্ছে মামা। মা তো তোমাকে ভাই ডাকে সেই হিসেবে তুমি আমার মামা।”

কুঞ্জ রাগী দৃষ্টিতে নবনীর দিকে তাকিয়ে দেখল, সে নির্বিকারভাবে ইফতির চুলগুলো এলোমেলো করছে। সেটা দেখে ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলল, “তা, বাপ! মিস শেখায়নি—বাপের বোনকে ফুপি ডাকতে হয়?”

“হ্যাঁ, শিখিয়েছেন।”

“আমি তোর মায়ের ভাই লাগলে, তোর মা আমার কী লাগে?”

“বোন।”

“আর তোর?”

“ফুপি!”

“ইয়াপ, বাচ্চা!”

ইফতি উল্লাসিত কণ্ঠে চিল্লিয়ে বলল, “ইয়েএএএ! আমার মা আর ফুপিও একই! কী মজা! আমি গিয়ে দাদিমণিকে বলে আসি।”

কথাটা বলে লাফ দিয়ে ইফতি দাদির রুমে চলে গেল। ও যেতেই, কুঞ্জ সেদিকে তাকিয়ে হেসে বলল, “ভাল্লাগছে?”

নবনী তীর্যক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “কচু লেগেছে।”

“আরে ওরকম করো কেন? মজা পাও নাই?”

“দেখ ব্যাটা কুঞ্জ, আরেকবার ওর সামনে উলটা পালটা কিছু বললে, আই স্যোয়ার, আই’ল কিল ইউ।”

“আর কত? খুন কি কম হচ্ছি?”

“বেশি কথা শিখে গিয়েছ! এসব ভাষণগিরি তোমার পার্লামেন্ট অফিসে চালায়ো। ভাইরাল হবে। এখানে না।”

নবনীর কথায় কুঞ্জ হো হো করে হেসে উঠল। হাসি থামিয়ে বলল, “ডাক্তার সাহেবা, এবার একটু বরের সেবা করো।”

নবনী মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল, “আজ এত জলদি বাসায় কী? মন্ত্রী মশাইয়ের কাজ নেই?”

কুঞ্জ নবনীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে নাক ঘষে বলল, “অন্য সবার জন্য ব্যস্ত আমি। তোমার জন্য অলয়েজ ফ্রি। অরুণকে বলে দিয়েছি, আগামী দু’দিন আমি বউকে নিয়ে ব্যস্ত থাকব।”

“ইশ! ঢং! বয়স কত হয়েছে—সে খেয়াল আছে?”

“আছে আছে। তোমার ১৭, আমার ২৩।”

“নো, মি. কুঞ্জ। ফ্লার্টিং ছাড়ো। তোমার ৩৬ আর আমার ৩০। এসব ঢংয়ের আলাপ বাদ দিয়ে ছেলের দিকে নজর দাও। ছেলে বড়ো হচ্ছে, সেদিকে খেয়াল আছে? কী-সব শিখছে!”

কুঞ্জ ততক্ষণে নবনীকে ছেড়ে বিছানায় পা তুলে বসেছে। গালে হাত রেখে বলে উঠল, “এমনভাবে বলছ, যেন আমি নিজে ওকে ধরে-বেঁধে শিখিয়েছি!”

নবনী ড্রেসিং টেবিলের সামনে ফেলে রাখা অদরকারী জিনিসগুলো সরাতে সরাতে বলল, “তা নয়তো কী!”

“বাহ রে! ছেলেও আমার, দোষও আমার। তাই না?”

নবনী দাঁত কেলিয়ে বলল, “জি।”

“ছি! নবু, ছি! শ্যেইম অন ইউ। এভাবে একটা নিরিহ ছেলেকে ফাঁসিয়ে দিতে লজ্জা করছে না?”

“মিসটেক। ছেলে না, লোক হবে। আপনাকে কোন অ্যাঙ্গেল থেকে ছেলে মনে হয়?”

নবনী আর কুঞ্জর এসব কথপোকথনের মাঝে কখন যে ইফতি এসে দাঁড়িয়েছে, কেউ বলতে পারবে না। ইফতি নবনীর কথা শুনে বরাবরের মতোই বলল, “হ্যাঁ, বাবা। মা ঠিক বলেছে।”

কুঞ্জ ইফতির দিকে তাকিয়ে মিনমিনে সুরে বলল, “শালা! কপালে জুটছে দুইটা মীর জাফর।”

নবনী ভ্রু কুঁচকে বলল, “কিছু বললে?”

“না না। কী বলব। তবে দোষ কিন্তু তোমারও আছে।”

ইফতি কুঞ্জর তালে তাল মিলিয়ে বলল, “হ্যাঁ, মা। বাবা ঠিক বলেছে।”

নবনী সরু চোখে ছেলেকে দেখল। এরপর কুঞ্জকে বলল, “তোমাদেরই বাসা, তোমাদেরই দিন। আমার কী! আমি তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছি। দোষ তো আমার ঘাড়েই চাপাবে! সবকয়টা পাষণ্ড!”

ইফতি এবারও মায়ের কথার তালে বলল, “হ্যাঁ, বাবা। মা ঠিক বলেছে।”

কুঞ্জ কপাল চাপড়ে বলল, “আরে, বেক্কলের বেক্কল! ওইটা শুধু আমাকে না, আমাদের দু’জনকেই বলেছে তোর মা।”

ইফতি শুধাল, “কোনটা?”

“পাষণ্ড।”

ইফতি মাথা চুলকাল। অবুঝ স্বরে বলল, “পাষণ্ড মানে কী, বাবা?”

কুঞ্জ গড়াগড়ি খাওয়া টাইপের কান্না পাচ্ছে। তবুও নিজেকে সংযত করে বলল, “পাষণ্ড মানে দয়াবান, বাপ। দয়াবান।”

“দয়াবান কী?”

“দয়ার সাগর।”

“সাগর তো পানি দিয়ে হয়, দয়া দিয়ে কী করা হয়?”

“আমি জানি না, বাপ। তোর মাকে জিজ্ঞেস কর।”

“মা, বলো।”

নবনী হাসছিল এতক্ষণ। ছেলের প্রশ্নের তির এদিকে আসায় থতমত খেয়ে বলল, “একচ্যুয়ালি, দয়ার সাগর মিনস.. অ্যা সাগর। জানোই তো, সাগরে শুধু পানি আর পানি।”

“হ্যাঁ, দেখেছিলাম সেবার।”

“হ্যাঁ। অ্যান্ড ওয়াটার সেভস আওয়ার লাইফ, রাইট?”

“ইয়েস, মা।”

“তো, ইটস অ্যা কম্প্যারিজন বিটউইন পানি ফর লাইফ অ্যান্ড ইউ ফর আওয়ার লাইফ। বুঝলে?”

“ইট মিনস, আমি তোমাদের কাছে দয়ার সাগর?”

“জি, বাবা।”

“ইয়েএএ, মা। তারমানে আমিও পাষণ্ড। বাবা, মা এবারও ঠিক বলেছে।”

কুঞ্জ নবনীর দিকে হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইল। একই দৃষ্টিতে নবনীও তাকিয়ে রইল। এর মাঝে ইফতি লাগাতার বলে বেড়াচ্ছে, ‘আমি আর আমার বাবা পাষণ্ড।’

নবনী এগিয়ে গিয়ে বলল, “না বাবা, তুমি পাষণ্ড নও। তোমার বাপ পাষণ্ড।”

ইফতি অবুঝের মতো মাথা নেড়ে বলল, “না না, আমি পাষণ্ড।”

কুঞ্জ মিটিমিটি হেসে বলল, “আরও ছেলের সামনে এসব বলো!”

নবনী চেঁচিয়ে উঠল, “আমি ছেলেকে এসব ভুজুংভাজুং শিখিয়েছি? না কি তুমি শিখিয়েছ?”

কুঞ্জ ঠোঁট চেপে হেসে যাচ্ছে। এদিকে নবনীর অবস্থা ছেলেকে এই বোঝাতে বোঝাতে আধমরা হয়ে গিয়েছে যে, সে পাষণ্ড নয়। অবুঝ ইফতি মানতে নারাজ।

জীবনের প্রতিটি স্টেজে মানুষ ইনজয় করে। বাচ্চা থেকে বুড়ো হওয়া অবধি, সবটাই। বাচ্চাকালে খেলে-টেলে, বিন্দাস লাইফ কাটায়। একটু বড়ো হলে, পড়াশোনা আর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে কাটায়। তারপরের সময়টা বড্ড অদ্ভুত। এখানে গিয়ে মানুষ অন্যরকম অনুভূতির সাথে সাক্ষাৎ করে। এখানে গিয়ে তারা প্রেমে পড়ে। চিত্তাকর্ষক অনুভূতি সেটা! প্রেমে মজে, প্রেমে মরে। এরপর বিয়ে। দায়িত্ব আর দাম্পত্য জীবন। সাংসারিক বোঝাপড়া। নিজের হাতে নিজের সংসার গুছিয়ে নেওয়া। এই সময়ে গিয়ে একটা মেয়ে পরিপূর্ণ নারীতে পরিণত হয়। হেসে-খেলে ঘুরে বেড়ানো মেয়েটা জননী হয়। ছোট্টো প্রাণকে নিজের মাঝে পোষার অনুভূতিটা সত্যিই উপভোগ্য! সেখানে একটা ছেলে পৃথিবীর সমস্ত সুখ অর্ধাঙ্গীর ওই ফুলে ওঠা পেটের মাঝে পায়। নিজের অস্তিত্ব বলে কথা!
জীবন এখান থেকে অন্যরকম সুন্দর। নিজস্ব একটা ছোট্টো পরিবার। নিজের মতো করে বাড়িয়ে তোলা এক প্রাণ। তার মুখে মা/বাবা ডাকটা শুনতেই অন্তর জুড়িয়ে যায়। এরপর স্বীয় সন্তান বড়ো হয়। বার্ধক্যে পৌঁছে অর্ধাঙ্গিনীর হাত ধরে সেই পুরোনো দিনগুলো স্মৃতিচারণ করাটা একটু বেশিই সুন্দর।
তেমনইভাবে, একদিন নবনীতা আর কুঞ্জ শেষ বয়সে পৌঁছবে। পিছে ফেলে রাখা জীবনে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসবে।
কুঞ্জ তখন বারান্দায় নবনীর পাশে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলবে, “মনে আছে তোমার? একসময় কী পাগলামিই না করতে!”

নবনী হাসতে হাসতে বলবে, “ওসব কী ভোলা যায়!”

দূর হতে ভেসে আসবে তাদের সময়েরও আগের, অথচ ভীষণ প্রিয় একটি গান…

পুরোনো সেই দিনের কথা
ভুলবি কিরে হায়,
ও সেই চোখের দেখা, প্রানের কথা,
সে কি ভোলা যায়…

~সমাপ্ত~