কল্পনায় হলেও শুধু আমারি থেকো পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
1161

#কল্পনায়_হলেও_শুধু_আমারি_থেকো💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা
#পর্ব_২০(শেষ)

–তোমার মা যে তোমার সৎ মা সেটাকি তুমি জানতে?
–হ্যাঁ জানি আমার মা আমার মায়ের চাচাতো বোন।
–হ্যাঁ সেটাই তোমার মা সারাটা জীবন তোমায় হিংসা করে গেছে।
তোমায় আর রিমিকে শুধু উপর দিয়ে ভালোবেসে গেছে ওনার মনে কখনোই মেয়ের মতো হয়ে ওঠো নি তোমরা।
–তুমি কে? তুমি এগুলো কি করে জানলে?
–আমি সেই মেঘ তোমার সৎ মা সম্পর্কে আমার খালা হন।
তোমার সৎ মায়ের বোনের ছেলে আমি।
–তুমি সেই আমান খান?
–হ্যাঁ আমি সেই।
–তাহলে বিয়ে আগে এগুলো কেন বলেছিলে,
–কারণটা শুরু থেকে বলি
আমার মা তোমার আসল মায়ের থেকে কথা নেয় যে তার ছেলে মানে আমার সাথে বিয়ে একমাত্র তার মেয়ের ই হবে।
মানে তোমার বমার বিয়েটা ছিল আগে থেকেই ঠিক।
তোমার তখন ৪ বছর বয়স রিমি তখন মাত্র ১ বছর এখনো হয়ে পারে নি। ৷ আমি তখন ১০ বা ১১,
তোমার আসল মা তোমার বাবা।
আমি আমার মা আমার বাবা আর মাহিমা রহমান মানে তোমার সৎ মা গেছিলাম ঘুরতে।
কারন আমারা কোরিয়া থেকে বাংলাদেশ এসেছিলাম সে বার।
সবাই অনেক খুশি ছিল শুধুমাত্র মাহিম রহমান বাদে।
তোমার সৎ মা আমার বাবাকে পছন্দ করতো তিনি কখনোই আমার মাকে আমার বাবার সাথে দেখতে পারে নি।
সব সময় আমার মাকে হিংসা করতো।
নানা জান ভেবেছিল মাহিমা রহমান হয়ত সময়ের সাথে বদলে জাবে তাই অনেক গুলে ভুলকেও তিনি নিরদিধায় মাফ করে দেয়,
কিন্তু সে দিন মাহিমা বেগম সত্যি সব কিছুর উর্ধে চলে গেছিল।
সে দিন আমাদের গাড়িটাকে এক্সিডেন্ট করায় মাহিমা বেগম।
তোমার মা সহ আমার মা বাবা মারা যায়।
মাহিমা বেগম জীবনের মতো সন্তান হবার ক্ষমতা হারায়।
সেখানেই সব শেষ হয় নি।
ওর লোক গুলো আমায় এমন একটা জায়গায় বন্দি করে রেখেছিল সেখান থেকে বের হওয়া মুশকিল।
নানা জান জানত আমি মারা গেছি।
কিন্তু সে দিন এক জনের সুত্র ধরে জানতে পারে আমি বেঁচে আছি তখন সে আমায় নিয়ে মাহিম বেগমের সামনে দাড় করায়।
সে দিন মাহিমা বেগমের আসল রুপ আমি দেখেছিল।
অতিত,
–তুমি সারা জীবন এটা করে গেছো বাবা।
আমার কখনোই আমার বোবকে পছন্দ ছিল না।
আমার ভালোবাসার মানুষ টাকে তুমি আমায় দিলে না আর কি চাও তুমি,
–তোকে আমি পুলিশে দিবো মাহিমা তোর জন্য আজ এই ছোট্ট বাচ্চারা এতিম।
–তুমি বেঁচে থাকলে দিও।
আমানের নানাজান থ হয়ে যায় মেয়ের কথা শুনে,
–আমি কালি বমার নামে থাকা সম্পত্তির মালিক হিসাবে আমান আর মেঘের অনাগত সন্তান কে উইল করবো তুই কি করিস তার পর দেখবো,
বর্তমান,
সে দিন নানাজান তোমার বাবাকে কিছু বলে নি,
ভেবেছিল এক সব ঠিকঠাক করেই বলবেন কিন্তু যে দিন নানা উইল করলো সে দিন মাহিমা বেগম আমার সামনে নানাজান কে মেরেছিল,
ঘৃণা হয় জানো ওই মহিলাকে নিজের খালামনি বলতে,
আমায় সে নরকের থেকেও খারাপ জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছিল।।
আমি ত কতো রাত না খেয়ে কাটিয়েছি।
কতো রাত রাস্তায় কাটিয়েছি।
আজকের এই সফলার জন্য শুধুমাত্র তুমি দায়ি।
–আমি কি করে? ( মেঘ)
–কেন জানি না আমার পড়তে মন না চাইলে তোমার কথা ভাবলে পড়ায় মন আসতো।
আমি অনেক কষ্ট করেছি যেখানে ছিলাম
সেখান থেকে হয়ত বেরি হতে পারতাম না।।
ওরা খুন খারাপ ছিল শিশু শ্রম করাতো। নির্জাতন ও কম করে নি।
কিন্তু আমাকে ঘাবড়াতে পারে নি।
একদিন আমার বাবার এক বন্ধু আমায় বের করে সেখান থেকে আশ্রয় দেয়,
সেখান থেকেই বড়ো হওয়া। উনি কেরিয়া থাকতেন। সেখান থেকে আমিও কোরিয়াতেই আছি।
আমার দাদা দাদি তখন ছিলেন।। এতো কিছু হয়ে গেছে ওনারা জানতেন না।
ওনারাও ভেবেছিলেন আমি মারা গেছি।
কিন্তু আমার বাবার বন্ধু আমায় তাদের কাছে দিয়ে আসে।
তার পরে,
আমি জানতে পারি তোমার বাবাকে মিথ্যা কথার জ্বালে ফাঁসিয়ে উনি বিয়ে করে।
ওনার রাস্তা ক্লিয়ার হতে থাকে,
এভাবেই সময় কাটতে থাকে।
আমার তোমার প্রতি রাগ দেখে তোমার সৎ মা কিছু করছিলো না।
যদি দেখতো তুমি ভালো আছো বাংলাদেশে থাকা রিমির ও সমস্যা হতো সাথে তেমার এবং আমার অনাগত সন্তানের ও।
মেঘ কেঁদে দেয়।
–এতো কিছু আমি কেন জানতাম না আমান।
–তোমায় বলি নি তাই প্লিজ কেঁদো না।
-;আমার বোনটার কি হবে।
–আজি সব কিছুর শেষ হবে মেঘ।
রিমিকে আর বাবাকে আমি নিয়ে আসবো।
আর মাহিমা বেগম পালিয়েছে ওনাকে এক বার হাতের কাছে পাই দেখো কি করি।
আমান মেঘকে জড়িয়ে ধরে,
এই মুহুর্তে এটাই সব থেকে শান্তির স্থান মেঘের কাছে সত্যি,
সব থেকে সুরক্ষিত স্থান।
ছেলেটা কতো কষ্ট করেছে নিজের জীবনে।
মেঘ আমানের সার্ট আকড়ে ধরে,
আমান মেঘের কপালে হাত বুলায়।
মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।
এই মেয়েটার মধ্যে যা আছে তা সত্যি কারোর মধ্যে নেই,
মেয়েটা সত্যি অসাধারণ,
আমান চোখ বন্ধ করে নেয়,
হটাৎ কারোর ফোন পেয়ে আমান চোখ খুলে
ফোনটা ধরে ওপাশের কথা শুনে আমান বাকা হাসে,
–ওখানেই রাখো আমি আসছি,
ফেন কেটে দেয়
–মেঘ চলো
–কোথায়।
–এসো চলো দেখো সারপ্রাইজ আছে,
মেঘকে চোখ বেঁধে আমান নিচে নিয়ে আসে পাজজোল করে,
মেঘের চোখ খুলে দেওয়ার সাথে সাথে সামনে বাবা আর বোনকে দেখতে পায় মেঘ,
মেঘ গিয়ে রিমিকে আর বাবকে জড়িয়ে ধরে,
অনেক দিম পর বাবাকে দেখছে ভিশন খুশি লাগছে সত্যি,
–ধন্যবাদ আমান।
–ওরা আমারো পরিবার। ধন্যবাদ দিচ্ছো কেন?
মেঘ পেছনে ফিরে,
–মেঘ আসল উপহার এখনো বাকি আছে।
–মানে।
–বাবাকে ভেতরে নিয়ে যাও ওনাকে রেস্ট করতে দেও,
আমানের এক জন গার্ড আজিজ রহমান কে নিয়ে চলে যায়,
–চলো তোমরা।
আমান মেঘ আর রিমিকে নিয়ে বেরিয়প আসে,
বেশ কিছু সময় ড্রাইভ করার পরে ওরা পৌঁছায় একটা জেলে,
মেঘ অবাক হয় এখানে কেন আনা হয়েছে তাদের,
আমান মেঘ রিমিকে নিয়ে ভেতরে আসে,
একটা স্পেশাল রুমে মাহিমা রহমান কে রাখা হয়েছে,
মেঘ রিমি মাহিমা রহমান কে দেখে অবাক হয়,
–উনি সব গুনাহ কবুল করেছে এখন ওনার শাস্তি এটা।
–কিন্তু কখন কি করে?(রিমি)
–ওনার ভিশ শখ ছিল কোরিয়া আসার।
আমি ওনাকে কোরিয়া নিয়ে এসেছিলাম
তার পর ওনাকে ড্রিংক করিয়ে আমার গার্ড রা সব ভুল শিকার করিয়ে রেকর্ড করে নেয়,
–তোমায় মা বলেছি আমি এটা ভাবলেও রাগ হয় জানো মাহিমা বেগম।
কেন করলে এটা কখনো জেনেও তোমায় বুঝতে দেয় নি যে তুমি আমার সৎ মা আর তুমি করলে ছি মাহিমা তোমায় মা বলার থেকে মরে যাওয়া ভালো।
মেঘ কথা গুলো বলার সময় চোখ দিয়ে কিছু পানি গড়িয়ে পরে,
–কাঁদিস না আপু কাঁদছিস কেন এই মহিলার জন্য কিসের কান্না।
তুমি এখানেই পস্তাও মাহিমা।
আমান মাহিমা বেগমের কাছে আসে,
–মনে আছে তোমায় বলেছিলম আজ থেকে ১৫ বছর আগে কেঁদে কেঁদে বলেছিলাম,
আমার সময় আজ খারাপ কাল তোমার হতে পারে।
সেদিন তুমি হেসেছিলে মাহিমা আজ আমার হাসার দিন।
মাহিমা রহমানের মনে পরে যায় সেদিনের স্মৃতি,
সত্যি ছোট আমান সে দিন কেঁদে কেঁদে বলেছিল,
হিংসা সত্যি মানুষের পতনের মুল
হিংসায় মানুষ এতো হিংস্র হয়ে পরে
যে সত্যি খারাপ ভালোর তফাত খুঁজে পায় না।
এটাই হিংসা।
,
,
৫ বছর পর,
মেঘ তার ৪ বছরের ছেলে আর ২ বছরের মেয়কে নিয়ে খেলা করছে,
রিমি এসে তুবা (মেঘের মেয়ে)
কে কোলে নেয়,
–আমার মা টা কি করে,
মনি মাকে মিস করেছে আমার বাচ্চা টা?
–হ্যাঁ মনিমাকে অনেক মিস করেছে তুবা।
–আর আমার রিহাম বাবা কি করেছে?
–রিহাম ত মনিমাকে ভিশন ভালোবাসে
–ওলে আমার বাবা টা চলো আমরা ঘুরে আসি,
–হ্যাঁ চলো মনি মা।
রিমি ওদের কে বেরিয়ে মেঘের কানের কাছে আসে,
–টেক উওর টাইম বেবি ভাইয়াকে আর তোকে আজ একা ছেড়ে দিলাম
–মরবো ফাজিল,
রিমি খিলখিল করে হেসে দেয়
তার পর বেরিয়ে আসে,
রিমি বেরোতে আমান আসে রুমে,
মেঘকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
–বউটা কতো ভালোবাসি।
–কতো ভালোবাসো বলো ত।
–অনেক,
–তাই।
–হুম
–#কল্পনায়_হলেও_শুধু_আমারি_থেকো মেঘ,
–তুমিও তোমায় ছাড়া আমি অচল বুঝেছো মিস্টার খান
–হুম মিসেস খান,
আমান মেঘকে জড়িয়ে ধরে এমন ভাবে যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছাড়বে না এভাবে আগলে রাখবে,
বেঁচে থাকুক পৃথিবীর বুকে হাজারো ভালোবাসা।

সমাপ্ত