কাগজের তুমি আমি পর্ব-১০

0
2331

#কাগজের_তুমি_আমি
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#১০ম_পর্ব

সুরাইয়া বেগম এখনো তার সাথে দেইড়া কোনো কথা বলেন নি। এমনকি জিজ্ঞেস ও করেন নি সে কেমন আছে। ধারা তাই চুপচাপ শুধু একটা শৈবালের মতো ডাইনিং টেবিলে বসে রয়েছে। সে শুধু দিন গুনছে কখন এ বাড়ি থেকে যাবে। হঠাৎ অনল বলে উঠলো,
– মামী মা, আপনি আমাকে এতো কিছু সাধছেন, আমার বউ কে তো কিছুই বেড়ে দিচ্ছেন না। আমার বউএর সাথে কি আপনার কোনো ইস্যু আছে?

অনলের এরুপ কথায় বেশ হতচকিত হয়ে যান সুরাইয়া বেগম। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সবাই হতবাক হয়ে অনলের দিকে তাকিয়ে আছে। ধারা এতোক্ষণ মাথা নিচু করে খাচ্ছিলো। অনলের কথা শুনে তড়িৎ গতিতে অনলের মুখের দিকে তাকালো। অনলের বেশ ভাবলেশহীন ভাবেই সুরাইয়া বেগমের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়। সুরাইয়া বেগম অনলের প্রশ্নের ধারে বেশ অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। আমতাআমতা করে বলতে থাকেন,
– হঠাৎ এ কথা বাবা?
– কি করবো বলুন মামী মা, ধারা প্রেগন্যান্ট এ কথাটা জানা সত্ত্বেও ওর খাওয়া দাওয়ার কোনো খেয়াল আপনি করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে এই কথাটা বলতে হচ্ছে।

অনলের কথাটা শুনে বেশ লজ্জায় পড়ে যান সুরাইয়া বেগম। কথাটা একেবারেই ভুল বলে নি অনল, ধারার এখন যত্নটা আরো ও বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু ধারা আসার পর থেকে তার যত্ন তো দূরে থাক তার সাথে কথাটাও বলেন নি সুরাইয়া বেগম। তার খাওয়া দাওয়া যত্নের কোনো খেয়াল ই নেই সুরাইয়া বেগমের। অনলের এরুপ কথায় সেলিমের সাহেব ও চুপ হয়ে যান। বাবা হিসেবে এই দায়িত্বটা তার উপরও বর্তায়। হ্যা ধারা ভুল করেছে ঠিক ই কিন্তু তাদের সম্মানের কোনো ঘাটতি অনলের কারণে হয় নি। অথচ সুরাইয়া বেগম এবং সেলিম সাহেব উভয়ই ধারার প্রতি গম্ভীর মনোভাব ধরে রেখেছে। সুরাইয়া বেগমকে চুপ করে থাকতে দেখে অনল ভাবলেশহীন ভাবেই পুনরায় বলে,
– মামী মা, একটা কথা স্পষ্ট করে দেওয়াটা হয়তো ভালো হবে। বেয়াদবি নিবেন না তবে কথাটা বলতে বাধ্য হচ্ছি। ধারা ভুল করেছে এটা যেমন সত্যি, ধারাকে শাস্তি দেবার অধিকার যেমন আপনাদের আছে ঠিক তেমন ধারা এখন প্রেগন্যান্ট, তার যত্নের পরিমাণটা অধিক প্রয়োজন এবং তার এখন আপনাদের মেন্টাল সাপোর্টের প্রয়োজনটা ও অনেকগুণ বেশি হওয়া দরকার এটাও তেমন সত্যি। আপনারা তার প্রতি এখনো ক্ষুদ্ধ হয়ে আছেন, কিন্তু সেটায় কি আপনারা হ্যাপি আছেন নাকি ধারা হ্যাপি আছে। মামু,মামী মা আমি চাই না ধারার কোনো শারীরিক অসুবিধা হোক, এখন আপনাদের এই রূঢ় আচারণ তাকে মেন্টালি ভেঙ্গে ফেলছে। এই আচারণ গুলো আমি বা মা করলে যৌক্তিক হতো। কিন্তু আপনারা কেনো করছেন এটাই আমার মাথায় ঢুকছে না। ধারা অনেক বড় পাপ করেছে, সেটার গ্লানি তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু আপনাদের অবহেলা তাকে আরো ও ভেতরে ভেতরে মেরে ফেলছে। আপনারা যদি আমার বউ এবং বাচ্চার প্রতি এমন মনোভাব ই রাখেন তাহলে আমি আর এবাড়িতে আসবো না এবং আমার বউ বাচ্চাকেও এ বাড়িতে পা রাখতে দিবো না। যদি আমার কথায় আপনারা ক্ষুদ্ধ হয়ে থাকেন তবে আমাকে ক্ষমা করবেন

বলেই নিজে ধারার প্লেটে খাবার বেড়ে দেয় সে। ধারার মুখে কোনো কথা নাই, কৃতজ্ঞতার নজরে শুধু অনলকেই দেখে যাচ্ছে সে। অনল তখন বেশ ধমকের স্বরেই নিচু গলায় বললো,
– আমার মুখে না তাকিয়ে এই সম্পূর্ণ খাবারটা শেষ করো। একটা খাবার যাতে প্লেটে না থাকে।

বলেই একগাদা খাবার ভর্তি প্লেট এগিয়ে দিলো তার সামনে। এতো খাবার ধারা কেনো দুটো ধারাও খেতে পারবে না। ধারা তার দিকে অসহায় চাহনী দিতেই কড়া এক নজর দিয়ে তাকালো অনল তার দিকে তাতেই মোটামুটি কাজ হয়ে গেলো। ধারা কোনো কথা না বলে রোবটের মতো অনলের কথামত খেতে লাগলো। সে জানে যদি অনলের কথা না শুনে কপালে দূর্ভোগ আছে। সেলিম সাহেব এবং সুরাইয়া বেগম বিমুগ্ধ নজরে অনলধারাকে দেখছেন। অনলের মতো জামাই পেয়ে তাদের মন যেনো নিশ্চিন্ত। যেমন পরিস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়েছে সেই পরিস্থিতিতে কেউ যে ধারাকে বিয়ে করবে এটাই যেনো কল্পনার বাহিরে ছিলো তাদের। তার উপরে অনল যেভাবে তার মেয়েকে সহযোগিতা করছে এটা যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। আজ অনল ভুল কিছুই বলে নি, তার কথাগুলো তাদের ভেতরটাকে নাড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। সত্যি ই তো এখন রাগ দেখিয়ে কি হবে, যে আসছে তার তো কোনো দোষ নেই। আর ধারার ভুলের শাস্তি সে পাচ্ছে, বিশ্বাস করে যে ভুলটা সে করেছিলো তার কারণে আজ সে নিজের বাচ্চাকে বৈধ বলে দাবি অবধি করতে পারছে না। যে সময়টা সব মেয়েদের কাছে সুখময় মূহুর্ত হয় সেই সময়টা তার গলার কাটা হয়ে গিয়েছিলো। তাই এখন তার উপর ক্ষুদ্ধতা দেখিয়ে মেয়েটাকে কষ্ট দেওয়া বাদে আর কিছুই হবে না। একে অপরের দিকে তাকিয়ে নিজেদের আশ্বস্ত করলেন তারা।

আয়নার সামনে হাসপাতালের জন্য তৈরি হচ্ছে অনল। ধারা এক নজরে তাকে দেখেই যাচ্ছে। শ্যাম বর্ণের উচু লম্বা পুরুষটিকে বেশ নিপুণ নজরে দেখে যাচ্ছে সে। নীল শার্টে বেশ মানিয়েছে তাকে। অনলের প্রতি যে মেয়েরা দূর্বল ব্যাপারটা আন্দাজেও আচ করতে পারছে ধারা।
– আমার কি রুপ গজিয়েছে? হঠাৎ এভাবে হা করে দেখার কি হলো?

আয়নার দিকে তাকিয়ে কপালের উপরের চুলগুলো হাত দিয়ে ঠেলে পেছনে সরাতে সরাতে বলে উঠলো অনল। ধারাও চুপ না থেকে কথার পেছনেই বলে উঠলো,
– নিজের জিনিস দেখতে কি কারোর পারমিশন লাগবে? আমার তো মনে হয় না এতে কোনো বিশেষ কারণের দরকার হয়।

ধারার তড়িৎ উত্তরে মুচকি হাসি টেনে পেছনে ফিরলো অনল। গালটা টেনে বলতে লাগলো,
– বেশ পেকেছিস তো, আমার কথার উপরে কথা বলতেও শিখেছিস। এখন আমাকে আর ভয় লাগে না বুঝি?
– ভয় লাগবে কেনো গো?
– ওমা তোর থেকে পাক্কা এগারো বছরের বড় আমি।
– তো?
– তো কি? আমার কথার পিছে কথা বলছিস, সম্মান বলেও তো জিনিস আছে নাকি?

অনলের কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠলো ধারা। যেনো অনল খুব মজার একটা জোক্স বলেছে তাকে। ধারার উচ্ছলতা দেখে অনলের ও ভালো লাগছে। এখন তার মন ভালো থাকাটা অধিক দরকার। মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
– থাক আমি হাসপাতালে যাচ্ছি।

বলে যেতে নিলেই….

চলবে