কাব্যের আঁধার ২ পর্ব-০৩

0
574

#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-৩

শাওনেরও খুব পছন্দ। তাই সেও আঁধার যখন গাড়ি শেয়ার করার কথা বলে তখন লাফিয়ে উঠে অ্যাকসেপ্ট করে নেয় কারণ তার এরকম গাড়ির খুব শখ ছিল।এমন না যে তার বাবা মার সামর্থ্য নেই এমন গাড়ি কিনার কিন্তু তারা মনে করেন এমন গাড়ির স্পীড নরমাল গাড়ির চেয়ে বেশি হয় তাই কিনে দেন নি।তারা এই গাড়ির কথা শুনে আপত্তি করেছিলেন কিন্তু শমসের তাদের বুঝিয়ে বলেন যে কোনো বিপদ হবে না।আর সেই থেকে এই গাড়ি ওরা দুজন চালাচ্ছে।গাড়িটা কিনেছে তার চারমাস হয়েছে।এই গাড়িতে অনেকেই উঠতে চেয়েছে কিন্তু আঁধার আর শাওনের ভয়ে উঠেনি কারণ ওরা কলেজের টপার তার উপর দিয়ে নিজে জিনিসে ওরা কখনো কোনো স্ক্র্যাচ অব্দি পড়তে দেয় না।

শাওন আর আধারের বেরিয়ে যেতেই কাব্য এসে ঢুকে দরজায় কড়া নাড়ে।নাদিরা মনে করে আবার দুজনে ঝগড়া করে তাই হাতে ঝাড়ু নিয়ে এসে দরজা খুলে।
দরজা খুলতেই কাব্যর চোখ বড় বড় হয়ে যায় কারণ ওর মা হাতে ঝাড়ু নিয়ে দাড়িয়ে আছে। নাদিরা কাব্য কে না দেখেই বলে,
নাদিরা, আঁধার শাওন এখন যদি কলেজ না যাস তাহলে দুটোকে লাত্থি মেরে কলেজ পাঠাবো, খালি সারাদিন ঝগড়া করিস তোরা।
কাব্য, মা এসব কি?? ঝাড়ু কেন হাতে??
কাব্যর গলা শুনে নাদিরা চোখ তুলে তাকিয়ে কাব্য কে দেখে চোখ বড় বড় করে ফেলে আর বলে,
নাদিরা, কাব্য তুই এখানে??
কাব্য, আজব তো এখন কি আমি আমার বাড়িও আসতে পারবো না??

নাদিরা গেটের কাছে থেকে ঝাড়ু হাতে সরে গিয়ে বলে,
নাদিরা, আয়না তুই আয়। কাব্য ব্যাগ কাধে ভিতরে ঢুকে জুতা খুলে ফেলে।

অন্যদিকে শাওন আর আঁধার কলেজে পৌঁছয়। আঁধার কে আজও as usual সবসময়ের মত ছেলেরা ড্যাবড্যাব চোখে গিলছে আর শাওন সমানে ওদের গালি দিয়ে চলেছে। শাওন বলে একটা ছেলেকে উদ্দেশ্য করে,
শাওন, ঐ শয়তানগুলো তোদের কী মা বোন নেই?? পর মেয়েকে চোখ দিয়ে গিলে খাস।বাড়িতে মা বোন নেই যে কলেজে নিজের বোনদের সমান মেয়েদের সম্মান নিয়ে টানাটানি করিস।শয়তান কোথাকার।

আঁধার, উফফ শাওন চুপ কর না । ওদের দেখার ওরা দেখুক, আমি যখন ধরব তখন বুঝবে আঁধার কি জিনিস আর ওরা দেখলেই তো আমার গায়ে ফোস্কা পড়ছে না তাই না।তুই ওদের কথা বাদ দে। যা মন চায় করুক। তুই তাকাস না ঐদিকে। ওগুলোর কাজই ওটা। চল ক্লাসে গিয়ে রিভাইজ করি পড়া কারণ টেস্ট আছে।
শাওন, তুই বলছিস বলে ছেরে দিচ্ছি আধু। নেক্সট টাইম কিন্তু ওগুলোর চোখ তুলে ফেলবো যে আমার আধু বেবির দিকে তাকাবে।

আঁধার, কতবার বলেছি আধূ বেবী ডাকিস না কিন্তু তুই তো শুনিসই না।এটা কোনো কথা হলো।এই নাম টা অনেক weird। এবার চল ক্লাসে গিয়ে রিভাইজ দিয়ে নি।পরে অর্পা, ফিহা, রায়হান এলে আর রিভাইজ দেওয়া হবে না।ওরা তো নিজেরা পড়েনা আর আমরা পড়লে আমাদেরও পড়তে দেয় না।

শাওন, ঠিক বলেছিস চল।আগে রিভাইজ করে নেই।তারপর দুজনেই ক্লাসে চলে আসে।দুজনে একসঙ্গে বসে পড়াটাতে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নেয় আর তখনই ক্লাসে এসে ঢুকে অর্পা,ফিহা আর রায়হান।

এবার পরিচয় দেই কারা এরা। অর্পা বিনতে নুরিন হলো ফরহাদ আহমেদের একমাত্র আদরের কন্যা।এমন কোনো কিছু নেই যার অভাব আছে অর্পার। অর্পা আগে সবসময় টাকা উড়াত কিন্তু আঁধার আর শাওনের পাল্লায় পরে কমে গেছে এসব।

ফিহা হলো মেহজাবিন আক্তার ফিহা। ফিহা তেমন বড়লোক না। মধ্যবিত্ত পরিবারের তবে তা নিয়ে ওর কোনো আক্ষেপ নেই কারণ ও ছোটো থেকে এটাই শিখেছে যে মানুষের চরিত্রই তার সবচেয়ে বড় সম্পদ।সেখানে টাকা আছে কিনা তাতে কি আসে যায়।

রায়হান হলো রায়হান রায়জাদা। বড়লোক বাবা মার একমাত্র আদরের ছেলে। ছোটো থেকে এমন কিছু নেই যা ও পায়নি। ও হলো অর্পার খালাতো ভাই। দুজনেই এই ধাঁচের ছিল কিন্তু বর্তমানে আঁধারের সংস্পর্শে এসে বদলেছে খানিক টা। খানিক টা বলা ভুল হবে কারণ পুরাটাই বদলেছে তবে বিচ্ছুর বিচ্ছুই রয়ে গেছে। দুজনে যতই বড়লোক হোক না কেন পড়ালেখার দিক দিয়ে তেমন সুবিধার না।কারণ তেমন একটা সুবিধা করে উঠতে পারেনি আজ অব্দি।তবে আঁধারের সংস্পর্শে এসে খানিকটা সুধরেছে।

রায়হান, ঐ আধু বেবির বাচ্চা আজও কি ছেলেগুলো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড কাম ভাবির দিকে তাকিয়েছিল??

শাওন, আধু বেবী বলবি না আর ঐ ছেলেগুলো একটা লুইচ্চা কোম্পানির toto ম্যানেজার তাইতো এভাবে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কাম ভাবির দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর তুই আধু বলিস কেন??

রায়হান, আচ্ছা বাবা সরি আর বলব না এবার ক্ষ্যামা দে ।আমায় তোর এই আধু বেবী বললে তুই যে কেন এত রেগে যাস আমি বুঝিনা?? তোর এত রেগে যাওয়ার কারণটা কি???

শাওন, কিছুই না তুই আমার ভাবীকে এই নামে ডাকবে আর আমি এটা সহ্য করে নেব। তোর কি মনে হয় আমার ভাবী তোর বউ নাকি আমার ভাইয়ের বউ??
রায়হান, তোর ভাবি তো তোর বউ না তাহলে তুই কেন আধু বেবি ডাকিস??

শাওন, ও আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড তাই আমি দেখতেই পারি আর ও আমার ভাইয়ের বউ মানে আমার ভাবি তাই আমি ডাকলে কিছু হবে না।কিন্তু তুই ডাকলে অনেক কিছুই হবে কারণ পুরো কলেজ জানে আঁধার বিবাহিত আর আমি ওর দেওর হই কিন্তু তুই তো ওর ফ্রেন্ড হস তাহলে তুই ডাকলে তো ঝামেলা বাধবেই।

রায়হান, আমি ডাকলে কোন ঝামেলা বাধবে না কারণ আমার বেবি ডাকার জন্য মানুষ আছে।
আঁধার, ও….. অর্পা…..
শাওন, অর্পা……

অর্পা, এই তোরা চুপ করবি কখন থেকে বকবক করেই যাচ্ছিস। আমি কিন্তু এবার সবকটাকে ধরে এমন জোরে জোরে উষ্টা মারবো যে সবকটা গিয়ে রেললাইনে তলায় পড়বি। আমার কিন্তু এসব মজা একদম পছন্দ না।

ফিহা, ও এখন তো মজা পছন্দ হবে নাই তাই না। আমাদের অর্পা রানী লজ্জা পেয়েছে গো লজ্জা পেয়েছে। আইকিউ এখনই কাজী দেখো ওকে বিয়ে দিয়ে দিই।
অর্পা, ফিহা…..

ফিহা, আচ্ছা সরি বাবা আর করব না সরি আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর এরকম করবো না, ঘাট হয়েছে আমার।আমায় মাফ কর তুই।

রায়হান, আচ্ছা অর্পা এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে আমি তো এটা বুঝতে পারছিনা। সবাই তো জানে যে উই আর ইন রিলেশনশিপ তাহলে এটা লুকাচ্ছিস কেন?? লুকানো কোন কারণে দেখতে পাচ্ছি না। তুই এমন তো নয় যে আমরা রিলেশনে আছি আর তোর বাবা মাসে যা জানলে আমাদের আলাদা কোনো কারণ আছে বল?? উল্টো আমাদের বাবা-মা রায় ত আমাদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে তাহলে সেখানে ভালবাসার সম্পর্ক লুকানোর দরকারটা কি?? তুই কি এর জন্য কোন এক্সাক্ট কারন বলতে পারবি।
অর্পা,……

রায়হান, জানতাম তুই বলতে পারবি না তাই সেই আশাও রাখি না তোর কাছে। আমি এটাই বুঝতে পারছি না যে তুই এখন পর্যন্ত আমাদের রিলেশনটা কি একসেপ্ট করতে পারিস নি কেন?? আছে কি কোন কারণ?? না তোর কাছে কোনো কিছুরই কোন কারনে তবুও তুই আমার ভালোবাসা টাকে পূরণ করতে পারছিস না কেন??

আঁধার, হয়েছে আবার তোরাই ঝগড়া তোদের বাইজি এখন এখানে নয়। এই অর্পা রায়হান ফিহা ভুলে গেছিস আজ যে টেস্ট আছে??
রায়হান,অর্পা, ফিহা একসাথে মাথা নাড়ায় মানে ওরা ভুলে নি।

আঁধার, তাহলে তোরা কি পরেছিস??
ফিহা,আমি পড়েছি।
আঁধার নিজের কোমরে হাত দিয়ে অর্পা আর রায়হানের দিকে চোখ পাকিয়ে বলে,
আঁধার, তারাতারি আমার নোটস নিয়ে তোরা দুটো পরে নেয়।

To be continued….