কাব্যের আঁধার ২ পর্ব-১২

0
624

#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-১২

কেটে গেছে ১ মাস।আর এই মাসে আঁধারের পরীক্ষাগুলোও শেষ হয়ে গেছে । আপাতত কলেজ কিছুদিনের জন্য অফ আছে।তাই আঁধার ছুটিতে আছে।

এই একমাসে কাব্য রোজ আঁধারের হোস্টেলের নিচে এসে বাইক নিয়ে দাড়িয়ে থাকতো।সারাদিন দাড়িয়ে থেকে রাতে চলে যেত।সারাদিন রোদে দাড়িয়ে থেকে থেকে কাব্যের ফর্সা উজ্জ্বল গায়ের রং আস্তে আস্তে ফিকে পরে যাচ্ছিল কিন্তু তাও কাব্য সরে যায়নি বরংচ আঁধারের অপেক্ষায় বসেছিল কিন্তু আজ দুইদিন ধরে আর হোস্টেলের নিচে এসে দাঁড়ায় না। আঁধার এই কয়েকদিন কাব্য নিচে দাড়িয়ে থাকলে আঁধার ভুল করেও বারান্দায় যেত না কিন্তু আজ দুইদিন ধরে কাব্য আসছেনা তখন কিন্তু আঁধার সারাদিন ধরে বারান্দায় দাড়িয়ে থেকেও লাভ হচ্ছে না। কোন পাত্তা নেই কাব্যর।
আঁধার বারান্দায় দাড়িয়ে থেকে মনে মনে ভাবে,
আঁধার, ( এই ভালোবাসা আমাকে?? এক মাস টানা রোজ এখানে এসে দাঁড়িয়ে থেকে থেকে এখন আর দুদিন ধরে কোনো পাত্তাই নেই । কি এমন হয়েছে যে আসলো না। আমাকে তো ভালোই বাসেনা। ওই তো সেদিন বলছিল যে আমাকে কত ভালবাসে ) আঁধার কিছুদিন আগের কথা ভাবতে ভাবতে অতীতে হারিয়ে যায়।

ফ্ল্যাশব্যাক,

যেদিন আঁধার কাব্যের বাড়ি থেকে চলে আসে সেদিন নাদিরা আর শমসের কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারেনা। কাব্য অনেক কান্নাকাটি করে।কিন্তু আঁধার সেসবে কান না দিয়ে বেরিয়ে চলে আসে।কলেজের হোস্টেলে উঠে।

পরেরদিনই কাব্য একেবারে গার্ড দারোয়ান সবাই কে পিটিয়ে আঁধারের ঘরে এসে হাজীর হয়।আঁধার তখন সবেমাত্র ওর রুমমেট মৃধা আর সৃজার সাথে বসে নাস্তা করছিল। কাব্য এসে ধড়াম করে দরজা ধাক্কাতে থাকে।মৃধা বিরক্ত হয়ে উঠে আরে আসছি বাবা বলে উঠে দরজা খুলে টাস্কি খেয়ে যায় কারণ ও ভাবতেও পারেনি ওদের ভার্সিটির এত হ্যান্ডসাম টিচার ওর রুমে আসবে তাও এভাবে কারণ কাব্যের পরণে একটা ফুল ব্ল্যাক ট্রাওসার আর মেরুন রঙের টি শার্ট।

কাব্য মৃধা কে ডিঙ্গিয়ে ঘরে ঢুকে আসে আর আঁধার সৃজা নিজেদের গায়ে ওড়না জড়িয়ে নেয়।আঁধার বিরক্ত হয়ে বলে,
আঁধার, আপনি এখানে কেন স্যার??
কাব্য আঁধার কে জোর করে জড়িয়ে ধরে বলে,
কাব্য, বিলিভ মি পিচ্ছি বউ আমি তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসি আর আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না। প্লিজ বাড়ি ফিরে চলো।

আঁধার কাব্য কে ছাড়িয়ে বলে,
আঁধার, দেখুন স্যার আমি পার্সোনাল আর প্রফেসনাল রিলেশন এক করতে চাই না।এখন এখানে আপনি আমার টিচার তাই নিজের লিমিট টা মনে রাখুন।এটা মনে রাখবেন যে টিচার আর স্টুডেন্টের রিলেশনের একটা লিমিটেশন থাকে আর সেটা আপনি পার করুন আমি চাই না।তাই আপনি প্লিজ চলে যান স্যার।

কাব্য আঁধারের হাত ধরে বলে,
কাব্য, আঁধার প্লিজ ডোন্ট লিভ মি। আই ক্যান্ট লিভ উইদাউট ইউ। প্লিজ বুঝার চেষ্টা করো। মা বাবা তোমার জন্য টেনশন করছে। মা বাবার জন্য নাহয় বাড়ি ফিরে চলো। তুমি তোমার বাবাকে ভালোবাসো তাই না তাহলে মা-বাবার জন্য ফিরে চলো। আমি না হয় তোমার কাছে কেউ না কিন্তু মা বাবা তো তোমার কাছে তোমার মা-বাবা তাহলে মা বাবার কথা কেউ চিন্তা করছ না। আমার কথা ভেবে ওদেরও ছেড়ে দিলে। মা বাবা তোমায় নিজের মেয়ে মানে। আমার সাথে যদি তোমার কোনো সম্পর্ক নাও থাকে তাও ওদের সাথে তোমার সম্পর্ক থাকার কথা তা নয় কি?? তাহলে তুমি কেন আমাদের ছেড়ে চলে আসলে?

আঁধার কাব্যের হাত ছাড়িয়ে বলে,
আঁধার, মা-বাবা যেহেতু আমায় নিজের মেয়ে মানুষ এইসব অনুযায়ী সম্পর্কে আমি আপনার বোন লাগী। আপনি কি বাড়িতে আমাকে আপনার বোন হিসেবে নিয়ে যাবেন?? আপনি যদি সেটা করতে রাজি হন তাহলে আমি নিশ্চয়ই যাবো বাড়িতে?? বলুন আপনি রাজ??
কাব্য, কক্ষনো না। আমি মরে গেলেও আমি কোনদিন তোমাকে নিজের বোন বানাবো না। তোমার কি মনে হয় আমাদের ভাই-বোনের মত সম্পর্ক?? আধার তুমি কেন এরকম করছ?? প্লিজ বাড়ি ফিরে চলো। মা-বাবা তোমার পথ চেয়ে বসে আছে। তুমি বাড়ি ফিরে চলো প্লিজ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না।
আঁধার, প্লিজ মিস্টার খান আপনি এখন এখান থেকে যাও। আমি এখানে আমার রুমমেটদের সামনে আপনার সাথে কোন সিন ক্রিয়েট করতে চাচ্ছি না। আর সিন ক্রিয়েট না করার কি আছে আপনি তো করেই ফেলেছেন। আপনি যদি আজকে না যান তাহলে আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি আমি এই ব্যালকনি থেকে ঝাঁপ দিয়ে সুইসাইড করবো। এখন আপনি ভাবেন কি করবেন?? আপনি কি আমাকে সুইসাইড করতে দেখবেন নাকি এখান থেকে যাবেন।

কাব্য, ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। তুমি আমাকে এখান থেকে যেতে বলেছ কিন্তু এখানে আসতে মানা করোনি তাই আমি রোজই এই হোস্টেলের নিচে এসে তোমায় দেখবো। তুমি যদি বাড়ী যেতে নাও চাও রোজ তোমায় এসে দেখে যাবো। তোমায় দেখে যদি নিজের মনটাকে শান্ত করতে পারি তাহলে তাই সই। নিজের অশান্ত মন কে শান্ত করা নেই একটাই মাত্র উপায়। আসছি…. কোনদিন যদি মনে হয় আমি তোমার ক্ষমা পাওয়ার যোগ্যতা হয় ফিরে এসো আমার কাছে আমি তোমার অপেক্ষায় থাকবো।

বায়ুবীয় প্রেম
আকাশ পাতাল সমতল,
বাস্তবতায় খাবী খায় শুধু
হারায় না তার মনোবল।

তোমাকে ছোঁয়ার নেইতো আমার সাধ্য
দেখতে পাওয়া সেই তো বড় ভাগ্য,
মনটা অবাধ্য, হচ্ছে প্রায়শ
কষ্টের বোঝা বেড়েই, যাচ্ছে ক্রমশ।

ঘুম চলে যায়
তোমার চোখে বেড়াতে,
পারিনা তাকে কোন ভাবে ফেরাতে।।

কেন যে তোমার সাথে
মনের এত টান,
কথা হয় নাই দেখেছি শুধু
তবুও কিসের অভিমান।

কাব্য যেতেই সৃজা মৃধা প্রশ্ন করে বসে,
সৃজা, এই লোকটা আমাদের ভার্সিটির টিচার না??
মৃধা, কত হ্যান্ডসাম রে…
সৃজা, তোর স্যার এর সাথে কি সম্পর্ক??
মৃধা, স্যার তোকে বাড়ি ফিরে যেতে কেন বলছিলেন??
সৃজা, স্যার নিজের মা-বাবার দোহাই কেন দিচ্ছেন??
মৃধা, স্যারের মা-বাবার সাথে তোর কি সম্পর্ক??
সৃজা, স্যার এভাবে তোর হাত কেন ধরছিলেন??
মৃধা, স্যার তোকে জড়িয়ে কেন ধরেছিলেন??
সৃজা, এই তুই সত্যি করে বলতো ছেলের সাথে তোর কি?? আমার এই মোটা মাথায় তো কিছুই ঢুকছেনা?? তাড়াতাড়ি প্রশ্নগুলোর উত্তর দে নাহলে আমার মাথা এখনই ব্লাস্ট হয়ে যাবে এত প্রেসারে।

আঁধার, দাঁড়া দাঁড়া তোর শান্ত হও। তোর এক জায়গায় বসে তার আগে আমি দরজাটা লাগিয়ে নি বলেই দরজার কাছে চলে যায় আর লাগানোর সময় দরজার বাহিরে থাকা বাকি মেয়েদের ইশারায় চলে যেতে বলে দরজা লাগিয়ে দেয়।তারপর বাথরুম থেকে হাতটা ধুতে এসে গায়ের ওড়না তো রেখে দিয়ে বিছানার উপর হেলান দিয়ে শুয়ে বলে,
আঁধার, উনি মিস্টার কাব্য আহমেদ খান, আমার হাজব্যান্ড। আমি লিগালি এখন পর্যন্ত ম্যারিড। উনার ওয়াইফ আমি। তবে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই কারণ আমি খুব শিগগিরই উনার কাছ থেকে ডিভোর্স নিবো। শুধু একবার পরীক্ষাটা যেতে দে তারপরে ডিভোর্স দিবো।
সৃজা, কি বলছিস?? স্যার যেভাবে তোর জন্য ছুটে এসেছেন সে তো মনে হচ্ছে স্যার তোকে অনেক ভালবাসেন সেখানে তুই আমাকে ডিভোর্স দিচ্ছিস কেন?? এটা কিন্তু ঠিক না

আঁধার, উনি আমাকে ভালোবাসেন না। উনি শুধু উনার পরিবার মানে উনার মা বাবার জন্য আমার সঙ্গে ভালোবাসার নাটক করছেন কারণ উনার মা বাবা আমাকে নিজের মেয়ে মানে। আর যাতে ওনার বাবা ওরা উপর রেগে না থাকে তাই উনি এরকম করছেন কিন্তু আমিও আধার চৌধুরী বর্ষা। আর আঁধার নিজের সাথে কখনো অন্যায় মেনে নেয় না।
ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড…

সেদিনের পর কেটে গেছে অনেক দিন। কাব্য রোজ এসে এখানে এসে বসে থাকতো। সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে থাকত বাইকের উপর কিন্তু আজ দুদিন ধরে আসছে না এর পেছনে কারন টা কি??

To be continued…..