কাব্যের আঁধার ২ পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
750

#কাব্যের_আঁধার_২
#লেখনীতে: আঁধার চৌধুরী বর্ষা
#পর্ব-১৩ ( অন্তিম পর্ব )

সেদিনের পর কেটে গেছে অনেক দিন। কাব্য রোজ এসে এখানে এসে বসে থাকতো। সারাদিন রোদে দাঁড়িয়ে থাকত বাইকের উপর কিন্তু আজ দুদিন ধরে আসছে না এর পেছনে কারন টা কি??

আঁধার এসবই ভাবতে থাকে তখনই ওর ফোনে এক Unknown নাম্বার থেকে ফোন আসে।প্রথম কয়েকবার ফোন কেটে দিলেও পড়ে বারবার ফোন দেওয়াতে বাধ্য হয়ে আধার ফোনটা ধরে। আধার বলে,
আঁধার, এই যে ব্যাপারটা কি আপনি বারবার আমাকে ফোন কেন দিচ্ছেন??
ওইপাশে, ম্যাম ম্যাম প্লিজ ফোনটা কাটবেন না। আমার আপনার সাথে একটু অনেক জরুরি কথা আছে।
হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠ শুনে আধার কৌতূহলবশত ফোনটা আর কাটে না আর বলে,
আঁধার, কে আপনি??
ঐপাসে, আমি হলাম কাব্যর ফ্রেন্ড। বলাবাহুল্য বেস্ট ফ্রেন্ড তাই বেস্ট ফ্রেন্ডই বললাম। আর আমি জানি আপনি ওর বউ মানে স্ত্রী। আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড ও আমার সঙ্গে সব কথাই শেয়ার করে তাই আপনাদের মধ্যে কি প্রবলেম চলছে সেটাও আমি জানি।
আঁধার, এখন আপনি আমাকে কেন ফোন করেছেন?? নিজের বন্ধুর হয়ে তরফদারি করতে। আপনি যদি ভেবে থাকেন আপনার বন্ধু হয়ে কিছু বলবেন আর আমি সেটা মেনে নিব তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।
ঐপাশে, না ম্যাম আপনি যেটা ভাবছেন সেটা পুরো ভুল। আমি ভুলেও আমার বন্ধুর হয়ে তরফদারি করতে ফোন করিনি। আমি ফোন করেছি আপনাকে আসল সত্যিটা বলতে। কারণ আপনি সত্যি টা না জানলে আপনাদের দুজনেরই ক্ষতি ।

আঁধার, কি এমন ক্ষতি যেটা না জানলে আমাদের ২জনের ক্ষতি হয়ে যাবে??
ঐ পাশে, কাব্য আপনাকে সত্যি সত্যি ভালোবাসে। আর সেগুলোর প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি আপনাকে কিছু প্রমাণ দিচ্ছি ।
তারপর কাব্যের প্রথম প্রেমে পড়া, মেয়েটাকে ম্যাসেজ করে জানানো, ওদের বিয়ের খবর দেওয়া সহ যাবতীয় যত ম্যাসেজ আছে সবকিছুর স্ক্রীনশট আঁধার কে পাঠায় আর তারপর ফোনটা ধরে বলে,
ঐপাশে, ম্যাডাম এখানে সব প্রমাণ আছে। কাব্যর আপনার প্রেমে পড়ার থেকে শুরু করে বিয়ে করে দেশে ফিরে সব কিছু খবর আমাকে দিয়েছে আর সেগুলোর সব প্রমাণ আমার কাছে ছিল সেগুলোই আমি এখন আপনাকে দিয়েছি। বিশ্বাস করুন ম্যাডাম আপনাকে খুব ভালোবাসে। আমি জানি ও হয়তো আপনার সঙ্গে যা করেছে তা ঠিক করেনি কিন্তু আপনাকে খুব ভালোবাসে আর আপনার ভালোর জন্যই এসব করেছিল তবে ও বুঝতে পারেনি যে আপনার ভালো করতে গিয়ে কখন যে ও খারাপ করে ফেলল। তবে নিজের ভুলের শাস্তি ও এখন কড়ায়-গণ্ডায় শোধ করছে। আপনাকে ভালোবেসে দিনের পর দিন আপনার হোস্টেলে নিচে কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো আর তার কারণে আজ কদিন ধরে ওর অনেক জ্বর উঠেছে। এই দুই দিন হল ওর জ্বর। তাইতো আপনার কলেজের সামনে যেতে পারছেনা আর হোস্টেলের নিচেও যেতে পারছিনা। ফোন করে আমার কাছে আফসোস করছিল যে যেতে পারছে না।
আঁধার, ও আমাকে ফোন করেছিল?? আরো যখন আমায় এতোই ভালবাসে তাহলে একবার বললে কি হতো নিজের মুখে যেও আমায় ভালোবাসে??

ঐপাশে, হ্যাঁ ও আমাকে ফোন করেছিল কিন্তু ওকে বলেছিল কোনদিনও যেন আমি আপনাকে ওর হয়ে কিছু না বলি কিন্তু পারলাম না বন্ধুর এই কষ্ট দেখতে তাই বলে দিলাম শেষ পর্যন্ত। আর ওতো আপনাকে অনেকবারই বলেছি যে আপনাকে ভালোবাসে কিন্তু আপনি বিশ্বাস করেননি ওর কথা কিন্তু আমি সত্যি বলছি আপনাকে খুব ভালোবাসে। আপনাকে ছাড়া কি করে যে আছে এটাও নিজেও জানে না তাইতো রোজ রোজ আপনার পোষ্টের নিচে গিয়ে কড়া রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থাকব আর তার কারণে ওর চেহারার উজ্জলতা হারিয়ে যেতে শুরু করেছে কিন্তু সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ওতো আপনাকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়।

আঁধার, কাব্যের অনেক জ্বর তাই না?? আপনি ফোনটা রাখুন আমি এক্ষুনি ওর কাছে যাবো আর আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আমাকে সবটা জানানোর জন্য আপনার এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারব না। আর যদি কোনদিন আপনার সাথে কোন অন্যায় করে থাকি তাহলে তার জন্য সরি আমায় ক্ষমা করবেন বলেই ফোনটা রেখে ছুট লাগায় আধার।
মিনিট দশেকের মধ্যেই খান বাড়ি পৌঁছে যায় আঁধার। ছুটতে ছুটতে বাড়িতে ঢুকে কাব্যের ঘরের দিকে ছুটে যায়। কাব্যের ঘরে ঢুকে থমকে যায় আঁধার কারণ নাদিরা জ্বরে আক্রান্ত কাব্যকে জলপট্টি দিচ্ছে আর কাব্য শীতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।

এই দৃশ্য দেখে আঁধারের চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ে। আঁধার বলে উঠে,
আঁধার, মা….
আধারের গলার আওয়াজ পেয়ে কাব্য আর নাদিরা ঘুরে তাকায় পেছনে। আঁধারকে দেখতে পেয়ে নাদিরা বলে,
নাদিরা, আঁধার মা তুই এসেছিস?? দেখ না তোর হোস্টেলের সামনে রোজ রোদের মধ্যে দাড়িয়ে থেকে থেকে ছেলেটা নিজের শরীরে কি অবস্থা করেছে। জ্বরে গা টা পুরো পুড়ে যাচ্ছে।

আধার হাত দিয়ে নিজের চোখের অশ্রুকণাগুলো মুছ নাদিরাকে বলে,
আঁধার, মা তুমি এখন ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও উনার সেবা আমি করছি।
নাদিরা, আচ্ছা ঠিক আছে তাই কর তাহলে আর তোরা দুটিতে মিলে নিজেদের মধ্যে সব সমস্যা মিটিয়ে নে তো আমি ঘরে গেলাম বলেই বেরিয়ে যায়।

আধার কাব্যের কাছে এসে নিজের উন্নত কোমরে বেঁধে নিয়ে কাব্যের কাছে বসে ওর মাথায় জলপট্টি দিতে দিতে বলে,
আঁধার, আমাকে যে এত ভালবাসো সেটা মুখে বললে কি হতো অন্য কাউকে বলা লাগল কেন?? তুমি যে আমায় এতো ভালোবাসো সেটা কি আমার অন্য কারো কাছ থেকে শোনা কথা নাকি তোমার মুখ থেকে শোনা কথা??? আমি কি তোমার কাছ থেকে এতটুকু আশা করতে পারি না??
কাব্য, ঐশী তোমাকে তাহলে সব বলে দিয়েছে?? ওকে বলেছিলাম কিছু না বলতে তোমাকে তাও ও বলে দিল?? আমার একটা কথা শুনে না কোনদিন।
কাব্যের মাথায় পট্টি দিতে দিতে আঁধার বলে,
আঁধার, শুনে না বলেই তো আজ তোমার সত্যিটা জানতে পারলাম। আর যাই হোক তোমার থেকে এটা আশা করিনি আমি। ভেবেছিলাম আমার একমাত্র ভালোবাসো আমায় নিজে জানাবে যে সে আমায় ভালোবাসে কিন্তু যে কি সেই। একটু ঠিকঠাক মত প্রপোজ করতে পারলে না। তোমার জন্য অন্য একজনের কাছ থেকে আমায় সব সত্যি জানতে হল। আর কি দরকার ছিল দিনের-পর-দিন হোস্টেলের সামনে কড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকার। দিলেতো জ্বরটা বাঁধিয়ে। এখন কি করবে তোমার সেবা??

আধারের কথা শুনে কাব্য আঁধারকে হেঁচকা টান মেরে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
কাব্য, কেন আমার আধার করবে। আছে তো আমার আধার সে করবে আমার সেবাটা। আর আধার থাকতে কাব্যের কি কখনো কষ্ট হতে পারে??
আধারের চোখের পানি এখন বাঁধ ভেঙে গরিয়ে পরে। আঁধার কাব্যকে সপাটে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠে বলে,
আঁধার, এই আধারইত তোমায় কষ্ট দিলো তার বেলা?? আমি তোমায় এত কষ্ট দিলাম তাও তুমি আমার কাছ থেকে কোন নালিশ করলে না। তুমি কেন এত ভালো?? আমাকে এতটা ভালো কেন বাসলে?? আর আমি তো খুব অহংকারী।তোমার কম কষ্ট দিইনি আমি। তাও আমায় এত কেন ভালোবাসো। আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।তুমি আমায় যেই শাস্তি দিবে আমি সেটা মেনে নিবো।কিন্তু প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।তুমি যদি বলো আমাকে তোমার জন্য জীবন দিতে তাহলে তাও দিবো।

কাব্য, কারণ তুমি যে #কাব্যের_আঁধার। আর ভালোবাসা মারতে নয় বাঁচতে শিখায়।একে অপরের কাধে কাধ মিলিয়ে সব কঠিন রাস্তা পার হতে শিখায়।আর আমিও তোমার সাথে কম খারাপ ব্যবহার করিনি সেখানে তুমি যদি করো তাহলে খারাপ কিছু না সেটা। আর আমি সে জন্য তোমায় কোনো শাস্তি দিবো না। আমি চাই তুমি চিরকাল হয়ে থাকো #কাব্যের_আঁধার।

তুমি আমার চিরসাথী
শুভসকাল শুভরাতি
এই জীবনে পেয়েছি তোমায়
তুমি আমার আমি তোমার

তুমি আমার চিরসাথী
শুভসকাল শুভরাতি
এই জীবনে পেয়েছি তোমায়
তুমি আমার আমি তোমার

( সমাপ্ত )