কাব্য গোলাপ পর্ব-০৯

0
243

#কাব্য_গোলাপ

#Neel

কাব্য হাতে গোলাপ নিয়ে একবার রৌজী , একবার নিজের নেওয়া হাতে গোলাপ আর একবার মিতুর লজ্জা মাখা মুখে তাকাচ্ছে। কাব্য একটু বেশি ই হচকচিয়ে উঠলো। রৌজীর চোখ দুটো অশ্রুতে ভরে গেল। হাতের বা পাশ দিয়ে অশ্রু মুছে দ্রুত গেইট পার করে হাঁটা শুরু করলো।

কাব্য পড়লো মহাবিপদ এ। কাব্য নিজের হাতের গোলাপ ফুল টা মিতুকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল – আমি সরি মিতু। তুমি নিঃসন্দেহে একজন ভালো মেয়ে। দেখতে ও সুন্দর, পড়াশোনায় ও ভালো। আমি মনে করেছিলাম তোমার আমার পড়া ভালো লেগেছে বলে তুমি আমাকে ফুলটা দিয়েছো। আমি দুঃখিত, আমার মনে তোমার জন্য এরকম কোন ফিলিংস নেই। আমি আগে থেকেই অন্য কেউ কে ভালোবাসতাম।

মিতুর দুচোখ জুড়ে অশ্রুর বন্যা বইছে। হয়তো এমন ই হয়। যখন কৈশোরী বয়সের আবেগে কাউকে পছন্দ হয় আর তা প্রকাশ করলে বিরহের দ্বন্দ্বে দ্বন্ধিত হয়।

কাব্য হয়তো মিতুর পরিস্থিতি বুঝতে পারছে।
কাব্য বলল- ভুল সময়ে ভুল মানুষ এর প্রতি এই অনুভূতি আসতেই পারে তবে তা বলে ভেঙে পড়া যাবে না,মিতু। তুমি খুব ভালো একটা মেয়ে , পড়াশোনা করো , জীবনে বড় হও,দোয়া করি। আর সঠিক মানুষটার জন্য অপেক্ষা করো।(রাইটার -নীল)

মিতু হয়তো বুঝতে পারলো কাব্যের কথা গুলো। মিতু মুচকি হেসে চোখের পানি মুছে নিল। আবার ও কাব্যের দিকে ফুলটা এগিয়ে দিয়ে বলল – আপনার ভালোবাসার মানুষটির জন্য শুভকামনা। ভালো থাকবেন।
মিতু নিজের গন্তব্যে হাঁটা শুরু করলো।

মিতুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে কাব্য। এই গোলাপ ফুলের জন্য কাব্য কতজনকে ই রিফিউজ করলো। গোলাপ ফুল!!ইরেএএ,তার গোলাপ ফুল তাকে ভুল ভেবেছে। দ্রুত গোলাপ ফুলের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো।

অন্যদিকে রৌজী বাসায় এসে নিজেকে রুম বন্ধি করে ফেলে। ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো করে ফেললো। কান্না করতে করতে সেখানে ই বসে পড়লো।
কাব্য সারা রাস্তা তার গোলাপ ফুল কে খুঁজলো কিন্তু পেল না। অবশেষে রাতকে কল দিলো, আর সব কিছু খুলে বলল।রাত কাব্য কে চিন্তা করতে মানা করলো। বললো সে সামলে নিবে।

২দিন পর, রৌজীর রুমের বারান্দায় কাব্য আর রৌজী দাঁড়িয়ে আছে। দুজন ই চুপচাপ। কাব্য আড়চোখে একবার তার গোলাপ ফুলের দিকে তাকালো, তার গোলাপ ফুল অনেক টাই শুকিয়ে গেছে। নিরবতা ভেঙ্গে কাব্য তার গোলাপ ফুল কে বলল – গোলাপ ফুল?
গভীর ভয়েস, রৌজী একটু কেঁপে উঠল। রৌজী আড়চোখে কাব্যের দিকে তাকালো, দুজনের চোখাচোখি হতেই রৌজী আবার ও মাথা নিচু করে ফেলল।

কাব্য – গোলাপ ফুল, তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম মনে আছে? কাব্য_গোলাপ!!আজ তোমাকে কাব্য_গোলাপের কথা জানাবো , শোনাবা।(কি নিদারুন প্রস্তাব)

রৌজী আড়মোড়া ভেঙে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।অর্থাৎ রৌজী শোনার জন্য প্রস্তুত।

কাব্য – দিনটা ছিল ভার্সিটির প্রথম। গেইটে প্রবেশ করার সময় পনের বছর বয়সী এক মেয়ের তার ভাইয়ের নিকট হাজারো মুখের বুলি তে চাওয়ার আবদার, দেখে আমি নিজের গন্তব্যে হাঁটা ভুলে অন্য পথে হাঁটতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেলাম। সেদিন কী লজ্জা টা না পেয়েছিলাম। আশেপাশের সবাই হাসতেছিল কিন্তু আমি সেই পঞ্চদশী মেয়ের নজরে পরলাম না।
আফসোস এর বুলিতে নিজেকে ধাতস্থ করলাম, কতটা বেকুব আমি, সবে কৈশোরে পা দেয়া মেয়েটির জন্য আমি ২১ উর্ধ্বো ছেলে হুঁশ হারিয়ে ফেললাম।
সব কিছু পেরিয়ে উঠলাম হলে। ভাগ্য কতটা সহায় ছিল, সেই মেয়ের ভাই আমার সাথে ই আমার হলে রুমমেট হয়ে উঠলো। তার পর থেকে সেই মেয়েকে আমি চোখে আর দেখি নাই। তবে মোবাইল এর ফটোতে সর্বদাই সে আমার মনে ছিল। ছেলেটির সাথে বন্ধুত্ব হলো ,তার মুখে সবসময় তার বোনের কথা, বোন এটা ,বোন সেটা। আমার কী যে ভালো লাগতো। আস্তে আস্তে বন্ধুকে তার বোনের সম্পর্কে আমার মনোভাব পোষণ করলাম। বন্ধু ও খুশিতে রাজি হয়ে গেল।

রৌজ (কাঁপা কাঁপা গলায়)- আপনার সেই প্রথম প্রেম সে কি…

কাব্য – তুমি, গোলাপ ফুল।

রৌজ চমকে তাকালো। বলল- তার মানে আপনি ই shk । ভাইয়ের প্রিয় বন্ধু। আর আজ আমাদের বাসায় আমাকে দেখতে যারা এসেছে তারা…

কাব্য – হুম। আমার ফ্যামেলি। (মুচকি হেসে) তুমি জানো কি, যেদিন‌ আমাদের প্রথম দেখা, আমি রেস্টুরেন্টে এ যাওয়ার পথে তোমাকে দেখতে পাবো ভাবতে পারি নাই। সেদিন গাউন এ তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। আমি তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম, তুমি রৌজী কি না? কিন্তু তুমি যে আমাকে প্রথম এভাবে স্পর্শ করবে জানতাম না।

রৌজী লজ্জায় লাল হয়ে গেল। সত্যি ই তো সেদিন, সে যে কী করে ছিল।

কাব্য – এই গোলাপ ফুল? তুমি কি অন্য কেউ কে ও এরকম ভাবে কিস করেছো ,আগেও।

রৌজী চমকে উঠল কাব্যের কথায় ‌। মুখ ফুলিয়ে বলল-আমি করি নাই, করি নাই। সেদিন তো (আরেক টু হলে কেঁদে ফেলতো)

কাব্য এক টানে তার গোলাপ ফুল কে বুকের মাঝে বন্ধ করে ফেললো। দুহাত দিয়ে গোলাপ ফুলের মুখ ধরে বলল- হে গোলাপ ফুল, তুমি কান্না করছো কেন? আমি তো ফান করেছি । তোমার বন্ধু রা আমাকে এ সম্পর্কে বলেছে আগে থেকেই।

রৌজী কাব্যের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো – আপনি মিতুর প্রস্তাব গ্রহণ করলেন কেন? আপনি ফুলটি নিয়েছিলেন কেন? জানেন, আমার কি কষ্ট হয়েছিল, কতটা কষ্ট। আমি আরেকটু হলেই আত্মহত্যা করে ফেলেছিলাম।

কাব্য চমকে উঠল সাথে সাথে তার গোলাপ ফুল কে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেললো। যেন একটু হলে , গোলাপ ফুলের মুখে আত্নহত্যার কথা শুনে কলিজা উড়ে যেত।

কাব্য হঠাৎ রৌজী কে ছেড়ে দু কদম পিছনে গেল, কাব্য রৌজীর থেকে দূরে সরে গেল দেখে রৌজী ভুরু কুঁচকে কাব্যের দিকে তাকালো, হঠাৎ….

চলবে….