কারণে অকারণে সে পর্ব-০৪

0
699

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:৪
#লেখক:রিয়ান আহমেদ(ছদ্মনাম)
;
দোকানের সামনে সবাই ভীর করে দাঁড়িয়ে ঘটনা কি তা দেখার জন্য।আরহাম যেই লোকটাকে মেরেছিল সে কোনোমতে দাঁড়ায়।আরহাম আবার যেই গিয়ে মারতে যাবে তখনই এলাকার অন্যান্য লোকেরা তাকে এসে ধরে আর বলতে থাকে,”আরহাম ভাই থামেন কি করেন কি?ছেলে তো মরে যাবে।”
আরহাম সবার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তোরা আমাকে ছাড়।আজকে ওকে আমি জিন্দা কবর দেবো।ও যেই মুখ দিয়ে আমার বোনের নামে উল্টাপাল্টা কথা বলেছে ঐ মুখ কেঁটে ফেলবো।”
সেলুনের লোকটা আরহামকে উল্টা জবাব দেয়,
“আরহাম ভাই কাজটা ভালো করলেন না।আপনাদের টাকা আছে বলে আপনি যার তার গায়ে হাত তুলবেন?আমি ভুল কি বলেছি যা সত্যি তাই বলেছি।”
আরহামকে এবার আর কেউ ধরে রাখতে পারে না।অতিরিক্ত রাগের কারণে তার শক্তি বোধহয় তিনগুণ বেড়ে গেছে।সবার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,”তোকে তো আমি।”
ছেলেটাকে আর পায় কে সে আহত অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব দৌড়াতে শুরু করে কারণ সে জানে আরহাম তাকে হাতের কাছে পেলে শেষ করে দেবে।আরহাম ছেলেটার পেছনে দৌড়াতে যায় কিন্তু তাকে সবাই বাঁধা দেয়।

আরহাম বাড়িতে যেতেই বাবার কাছে তাকে এক গাদা বকা শুনতে হলো।রিজা আহসান বেশ কিছুক্ষণ বকে থেমে গেলেন।ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গেলে তাদের শাসন করা মুশকিল।গায়ে হাত তুলতে গেলে নিজের কাছেই লজ্জা লাগে।কিন্তু আরহাম এমন অপরাধ করেছে যে রিজা আহসান যদি এখন ছেলেকে লাঠি দিয়ে না পিটান তাহলে হয়তো তার মনে শান্তি হবে না।তবুও সাতাশ বছরের ছেলেকে তো আর লাঠি দিয়ে পিটানো যায় না।তিনি এবার গম্ভীর গলায় আরহামকে বলেন,
“আরহাম তুমি বড় হয়েছো।আমার অফিসে বসেছো সেই দায়িত্ব তুমি খুব ভালো ভাবে পালন করছো।কিন্তু তুমি আজ যেই immature আচরণটা করলে ভরা বাজারে তা আমার জন্য বেশ লজ্জাজনক।”
আরহাম বাবার কথার মাঝেই বলল,
“বাবা ছেলেটা আরুকে,,,,”
“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।তুমি যা বলবে তা আমি জানি।ছেলেটা আমাদের মেয়েকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলেছে বুঝলাম কিন্তু তাই বলে তুমি তাকে এভাবে মারবে?ছেলেটার গায়ে যদি কাঁচ ঢুকে সে যদি মারা যেতো তবে?তখন তোমার কি হতো?শোনো আরহাম ভবিষ্যতে তোমার রাগটা কমানোর চেষ্টা করবে।তোমাকে বিয়ে শাদি দিতে হবে।যদি মেয়ের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ছেলে গুন্ডামি করে,মানুষ মারে তাহলে কি তারা তোমাকে মেয়ে দেবে? সব বিষয়ের সমাধান ঠান্ডা মাথায় করার চেষ্টা করবে।গায়ের জোরে সবকিছু হয় না।তুমি একটা সময় যখন আমার বয়সে আসবে তখন আর শরীরের এই শক্তি থাকবে না বুঝলে?যাও এখন রেডি হয়ে এসো একটু পর হুজুর আসবে।”

আরহাম মাথা নাড়িয়ে চলে যায় সেখান থেকেচলে যায়।আসলেই সে নিজের এই অতিরিক্ত রাগটা নিয়ে বেশ চিন্তিত।অল্প সময়েই সে এতো বেশি পরিমাণে রেগে যায় যে তখন যেই ব্যক্তির উপরে রাগ উঠেছে তাকে না মারলে মাথা আর শরীর উভয়ই অদ্ভুতভাবে কিলবিল করতে থাকে।

আরশি বসে আছে আর তার মা তাকে দোয়া দুরূদ পড়ে ফু দিয়ে দিচ্ছে।আরশি আরহামের করা ঘটনা জেনে অনেক ভয় পেয়ে আছে।আরশি মনে মনে ভাবছে,
“ভাই যদি জানে আমি নাটক করছি তাহলে তো আমাকে কি করবে তা আল্লাহ্ ভালো জানেন।,,,কিন্তু আমিও কি করতাম?এরা আমাকে বিয়ে দেয়ার জন্য যেভাবে উঠে পড়ে লেগেছে!তীব্র ভাই নেহা আপুকে বিয়ে করবে এক দিক দিয়ে আর অন্যদিকে আমি পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা হবো যেখানে না থাকবে সাভাশ আর না থাকবে আমার পরিবার।”

তীব্র অফিসে বসে বসে ভাবছে,
“আরশিকে কি সত্যিই জ্বীনে ধরেছে?না কি মেয়েটা পাগল হয়ে গেছে।আমি রিজেক্ট করেছি বলেই কি ও এমন অদ্ভুত আচরণ শুরু করেছে?আচ্ছা আরশি কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে?নাহ্ ওর মতো narcissist মানুষের ভালোবাসা এক্সেপ্ট করা মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।ও সবসময় সেভেজ আচরণ করে।আমার এখনো মনে আছে আমার যখন প্রথম দাড়ি উঠেছিল তখন ও সবার সামনে কিভাবে আমাকে নিয়ে মজা করতো।,,,এখনো মানুষ ভালো কিছু বললে সেটা নিয়ে তাদের উল্টো শুনিয়ে দেয়।,,সারাদিন নিজের দুনিয়াতে ব্যস্ত থাকে।এর চেয়ে নেহা হাজার গুন ভালো।একজন বুঝদার,মিষ্টি ভাষার মেয়ে যে সবার সঙ্গে মানিয়ে চলতে জানে।”

তীব্র আর কিছু না ভেবে কাজে মনোযোগ দেয়।আসলে তীব্রর মতে আরশি ভীনগ্রহী এলিয়েন।তীব্রর মতে যেই ছেলে আরশিকে বিয়ে করবে সে তীব্র কখনোই হতে পারে না।আরশির বর হবে আরশির মতোই অদ্ভুত যে আরশির সঙ্গে টক্কর দিতে পারবে।
;
;
;
হুজুররা মিলাদ পড়িয়ে চলে গেছে।হুজুররা বলেছেন তেমন কোনো সমস্যা নেই শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে বাড়ির সবাইকে।আর মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে মাদ্রাসায় একটা ছাগল দিয়ে দিতে।

আরহাম হুজুররা চলে যেতেই অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়ে।আজ কয়েকদিন যাবত তার অফিসের কাজ ঠিকমতো করা হচ্ছে না।তাই সে আজ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো দমে কাজ শুরু করবে।
দুপুর ঠিক তিনটার দিকে বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠে।আরশি বিউটি খালাকে না দেখতে পেয়ে নিজেই গেল দরজা খুলতে।দরজা খুলে যে এতো বড় শক পাবে তা সে আশা করে নি।সাভাশ এসেছে হাতে বড় একটি ফুলের তোড়া নিয়ে পেছনে ড্রাইভারের হাতে ফল।আরশি হা করে আছে সে ঠিক শকটা নিতে পারছে না।সাভাশ হাসিমুখে বলল,
“আরু মেহমানকে এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় বুঝি?”
আরশির কথাটা শুনতেই হুস ফিরলো।সে খানিকটা লজ্জা নিয়ে দরজা থেকে সরে দাঁড়ালো আর ছোট্ট করে বলল,
“ভেতরে আসুন।”
সাভাশ আর তার পেছনের ড্রাইভার ভেতরে প্রবেশ করলো।আরশি দৌড়ে মায়ের কাছে গিয়ে সাভাশের আগমন বার্তা দিলো।আয়েশা বেগম হলরুমে গিয়ে হাসিমুখে সাভাশের সঙ্গে কুশল বিনিময় করলেন।সাভাস বলল,
“আন্টি আরু কোথায়?ওকে একটু আসতে বলুন মা ওর সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন।”
“কেন বাবা?তোমার মাকে সাথে আনলেই তো পারতে।”
“আসলে আরুর জ্বর তাই মা আমাকে বললেন এসে দেখা করে যেতে ওনার আসার ইচ্ছে ছিল কিন্তু বাবার হঠাৎ পিঠে ব্যাথা শুরু হয়েছে তাই মা বললেন তিনি অন্য একদিন আসবেন।”

আয়েশা উদাসীন হয়ে বললেন,
“কি আর বলবো বাবা মেয়েটার এমন একটা সময় জ্বর হলো!যাইহোক তুমি বসো আমি আরুকে পাঠাচ্ছি।এতক্ষণ অনেক অসুস্থ ছিল জ্বরটা একটু আগে নেমেছে।তা আজ আমাদের বাসায় লাঞ্চ করো। ”
“না আন্টি খেয়ে এসেছি।”

কিছুক্ষণ পর বিউটি খালা নাস্তা পানি মিষ্টি মন্ডা নিয়ে এলেন।তিনি সাভাশকে বললেন,
“বাবা তুমি কি কাজ করো?”
“জ্বী আন্টি আমি এডভোকেট।”
“ওওও কিন্তু তোমার চেহারা কিন্তু অনেক ফাইন নায়ক হইতে পারবা।আমার দেখা তিনজন সুন্দর পোলার মধ্যে তুমি একজন।”
“বাকী দুজন কে?”
“তীব্র বাবা,আরহাম বাবা।”
সাভাশের মনে পড়লো তীব্রর কথা সেদিন রেস্টুরেন্টে দেখা হয়েছিল।
আরশি এসে ধপ করে সাভাশের সামনের সোফায় বসলো।সে চশমাটা নাকের ডগায় এনে খুঁটে খুঁটে সাভাশকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“কি বলবেন জলদি বলুন।আমার ভালো লাগছে না।”
সাভাশ মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
“কেমন আছো?”
আরশির কাট কাট জবাব,
“বললাম না ভালো লাগছে না।”
“সত্যি বলতে তোমার সবকিছুতেই আমি ভালোবাসা খুঁজে পাই।এই যে তুমি ঝাড়ি মারলে এটাতেও।”
ড্রাইভার মধ্যবয়স্ক একজন লোক সে গলা খাকাড়ি দিয়ে আরশি আর সাভাশকে নিজের উপস্থিতি বোঝালেন।আরশি সাভাশের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।সাভাশ নিজেকে সামলে নিয়ে মাকে কল দিল।কিছুক্ষণ বাদে সাভাশের মা ফোন রিসিভ করতেই সাভাশ বলল,
“মা এই নেও আরশির সাথে কথা বলো।”
আরশি সাভাশের মায়ের সঙ্গে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলল।এর মধ্যে আয়েশা বেগম চলে এলে আরশি আয়েশা বেগমকে দেয় কথা বলার জন্য।আয়েশা বেগম বললেন,
“আপা কেমন আছে?”
“এই তো আপা ভালো।আপনি কেমন আছেন?”
“ভালো।ভাইয়ের শরীরটা নাকি ভালো না।”
“হ্যা আপা পিঠে অনেক ব্যাথা।”
এরকম ফর্মাল আলাপ চলতে থাকলো দুজন গুরুজনের মধ্যে।
সাভাশ আয়েশা বেগম সাথে আছে দেখে সুযোগ বুঝে বলল,
“আরু তোমাদের বাড়িটা আমি ঘুরে দেখতে চাই।”
আরশি মাকে সামনে দেখে না করতে পারলো না সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“কেন নয়।”
সাভাশ আরশির পেছন পেছন পুরো বাড়ি ঘুরে দেখলো।

আরশি সাভাশকে নিয়ে ছাদে আসে।আরশি মনে মনে বলে,
“পারলে তো তোকে এই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম।কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য তাই পারছি না।”
আরশি হঠাৎ পেছন থেকে সাভাশের গলা চেপে ধরে বলল,
“তোকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।আরশিকে বিয়ে করতে চাইছিস তাই না?এই আরশির বডিতে আমি থাকা অবস্থায় ওকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না।”
সাভাশ আরশিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“আরশি করছো কি এসব?”
“আমি আরশি না আরশির ভেতরের জ্বীন।তুই যদি বিয়ের জন্য নিষেধ না করিস তাহলে আমি তোকে এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।”

কথাগুলো শুনতেই সাভাশ বুঝতে পারলো আরশি ইচ্ছে করে এসব বলছে।সে তৎক্ষনাৎ আরশির হাত ধরে আরশিকে নিজের সামনে আনলো পেছন থেকে আর বাঁকা হেসে বলল,
“আমার সঙ্গে নাটকবাজী করছো আরশি জান।কিন্তু আমি তো তোমার নাটক বুঝে ফেলেছি।আমি তোমাকে পছন্দ করি আর তুমিও আমাকে পছন্দ করবে।”
আরশি বিস্ফারিত চোখে সাভাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।সাভাশ চোখ টিপ্পনি দেয় আর ঠোঁট কিস করার মতো করে।যা দেখে আরশির চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
;
#চলবে!