কারণে অকারণে সে পর্ব-১১

0
579

#কারণে_অকারণে_সে
#পর্ব:১১
#লেখক:রিয়ান আহমেদ (ছদ্মনাম)
;
আরশি আর সাভাশ ছাদের সাইডে দাঁড়িয়ে আছে।সাভাশ অনেক কথাই বলছে কিন্তু আরশি বেশ চুপচাপ।সে নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে কিছু একটা ভাবছে।সাভাশ কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলো তার পাশের মানুষটা কথা বলাতে আগ্রহী না সে অন্য ভাবনায় ব্যস্ত।সাভাশ আরশির মনযোগ নিজের দিকে আনতে উস্কানিমূলক কথা বলে,
“আরু তুমি জানো তোমার ভাই যে একজন হিটলার টাইপ মানুষ?”
“হুম।”
আরশি মুখে হুম বললেও তার টনক নড়ে।সাভাশ তার ভাইকে হিটলার বলল আর সেও এমন কথায় সহমত পোষণ করলো।আরশি রেগে দাঁত কিড়মিড়িয়ে সাভাশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আপনার সাহস কি করে হয় আমার ভাইকে এসব বলার?”
“দেখো আমি যা বলেছি ঠিকই বলেছি।আরহাম ভাই কিভাবে আমাকে হুমকি দিয়েছে স্টেজে দেখেছো?”
“যা করেছে বেশ করেছে।আমার ভাই আমার বিষয়ে একটু বেশিই পজেসিভ তাই আমার সাথে কোনো অন্যায় সে মেনে নেয় না।”
“তো আমি তোমার সঙ্গে কোন অন্যায় করলাম শুনি।তোমার কি মনে হয় আমি ওরকম টাইপের লোক।”
“না হলেই ভালো।আশা আমার ভাইয়ের হাতে মরার ইচ্ছা আপনার নেই।”
সাভাশ মনে মনে বলে,
“ভাই বোন আমাকে ওপেনলি কিভাবে হুমকি দিচ্ছে।কিসের জন্য যে আরহাম ভাই আরশির বড় ভাই হলো?ছোট ভাই হলে ছোট শালাকে শাসন করা যায় কিন্তু শালা যদি বড় হয় তাহলে তো সে’ই নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাবে।”
সাভাশ বিড়বিড় করে বলল,
“হ্যা তোমার ভাই তো জল্লাদ।”
আরশির কান বেশ পরিষ্কার।সে কথাটা শুনে ফেলে সাভাশের হাতে থাপ্পড় মেরে বলল,
“কি বললেন?আমার ভাইকে ডাকবো?বলবো আপনি আমার সাথে বাজে আচরণ করেছেন?তখন দেখবেন এই ছাদ থেকে ফেলে দেবে আপনাকে।”
সাভাশ হাত ঘষতে ঘষতে বলল,
“কথায় মরার কথা বলো কেন?একদিন সত্যিই মরে যাবো তখন দেখবো তোমার কেমন লাগে।”
আরশি কথাটা শুনে কেমন মুখ কালো করে ফেলে।এরপর ধীর গলায় বলে,
“মরার কথা বলবেন না। আমি কখনোই আমার শত্রুরও মৃত্যু কামনা করি না করেন মরে গেলে আমার শত্রু সব কষ্ট শেষ হয়ে যাবে আর তার কাছের মানুষগুলো বিনা অপরাধে কষ্ট পাবে। কেউ অপরাধ করলে সেটা তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হয়।অনুতাপের মাঝে একদিন বাঁচা মানে প্রতি মুহূর্তে ডুকরে মরা।,,যেখানে আমি কখনো নিজের শত্রুর মৃত্যুই কামনা করি না সেখানে আপনি তো আমার অনেক প্রি,,,,।”
আরশি থেমে গেল কথাটুকু শেষ না করেই।সাভাশও কিছু বলছে না সে আরশির শেষ কথাটার ভাবার্থ জানে কিন্তু মেয়েটা কেন কথাটা পুরোপুরি না বলে থেমে গেল?সাভাশ মনে মনে ভাবে,
“আমি তোমাকে জোর করবো না কখনো।সময় অনেক পরে আছে।হয়তো কোনো নিস্তব্ধ বিকেলে তুমি আমার চোখে চোখ রেখে নিজের মনের কথা বলবে।আমি সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো।আর যদি সেই অপেক্ষাটার সময়টাতে তুমি পাশে থাকো তাহলে আমি অনন্তকাল অপেক্ষা করতে রাজি।”

সাভাশ সোজা হয়ে উঠে দাঁড়ায় মোবাইলে আভাসের ম্যাসেজ এসেছে তাকে যেতে হবে।সাভাশ বলল,
“কিউটি এখন আমাকে যেতে হবে।যাওয়ার আগে তোমার কাছে কিছু চাইতে পারি?”
আরশি কাট কাট জবাব দেয়,
“না।”
“একটু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে এই ধরো দুইদিন পর পর।তোমার যদি সমস্যা হয় তাহলে তিনদিন পর পর।আসলে তোমাকে না দেখে আমি থাকতে পারি না।আসছি ,,,আর রাতে ফোন দিলে রাগ করো না তোমার চাচাতো বোনের থেকে নাম্বার নিয়ে নিয়েছি।”

সাভাশ আর দাঁড়ায় না সেখান থেকে চলে যায়।আরশি চুপচাপ বসে বসে একাই বলতে থাকে,
“অদ্ভুত লোক আমি বললাম কিছু চাইতে পারেন না তবুও চেয়ে নিলো।হুহ আমার ঠ্যাকা পড়ছে আমি দেখা করবো।ভার্সিটি থেকে ফিরে বিছানায় শুলে ইচ্ছে করে সারাদিন সেভাবেই শুয়ে থাকি।আমার মতো অলস ব্যক্তির কাছে বাড়ির বাইরে যাওয়া মানেই তো প্যারা।”
;
;
;
;
আরহাম আরিয়ানার চেম্বারে এসেছে।তাকে আরিয়ানার পিএস সোফায় বসতে দিয়ে চলে গেছে।কিছুক্ষণের মাঝে আরিয়ানা চলে আসে।আরহাম বলে,
“হ্যালো ডক্টর।”
“হ্যালো,,আপনি আমাকে ডক্টর না আরিয়ানা বলেই ডাকতে পারেন যেহেতু আমরা এখন আত্মীয় হতে চলেছি।”
“জ্বী ঠিকাছে।”
“আচ্ছা এবার বলুন এই কয়েকদিন আপনি কি নিজের রাগটা কন্ট্রোলে রাখতে পেরেছেন?”
“জ্বী আমি আমার পুরো চেষ্টা করছি কিন্তু সেদিন হঠাৎ আমার নিজের অফিসের কিছু কর্মচারীর কান্ড কারখানা দেখে রাগ উঠে যায়।আমি অনেক চেষ্টা করে নিজের উপরে নিয়ন্ত্রণ করার কিন্তু শেষে যা হওয়ার তাই হয়।আমি সেদিনই আপনার চেম্বারে এসেছিলাম কিন্তু এটা বন্ধ ছিল।”
“আপনি বোধ হয় সোমবার এসেছিলেন আমি সেদিন একটা হসপিটালে ভিজিট করতে গিয়েছিলাম।,,,যাইহোক কি ঘটেছিল সেদিন?আমাকে পুরোটা সময় আপনার কি কি অনুভূতি হয়েছিল সেটাও বলুন।”
“আমি আমাদের গার্মেন্টসের কেবিনে বসে ছিলাম।আমার একটা জরুরি মিটিং ছিল তাই আমি পিয়নকে বললাম একটা কড়া লিকার দিয়ে চা এনে দিতে জলদি।কারণ আমার মাথাটা খুব ধরেছিল।কিন্তু পিয়ন চা আনতে গিয়ে সেখানকার কিছু ওয়ার্কার্সদের সাথে আড্ডা দিতে শুরু করে।ওরা তাস খেলছিল আর পিয়ন ওদের একজনকে জিততে সাহায্য করছিল।একেই কাজে ফাঁকি দেয়া ওয়ার্কার্সদের উপর আমি রেগে ছিলাম তার উপর পিয়নের এমন কাজ।আমার মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছিল আমি অনবরত বেল বাজাচ্ছিলাম কিন্তু পিয়ন সেটা কানে নেয় নি।এদিকে আমার চাও তার হাতে থেকে ঠান্ডা হচ্ছিল আর অন্যদিকে আমার মাথায় সেই মুহূর্তে বোধহয় গরম পানি ফুটছিল।এক পর্যায়ে আমি নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তাদের কাছে গিয়ে টেবিলটা উল্টে দেয় আর তাদের চাকরি থেকে বের করে দেই।সেদিন কারো কোনো শারীরিক ক্ষতি ঠিকই হয় নি আমার হাতে কিন্তু ওরা আমার সামনে আর দুই মিনিট থাকলে বোধহয় হয়েই যেতো।”
আরিয়ানা মন দিয়ে কথাগুলো শুনে বলল,
“আচ্ছা আপনি ওদেরকে না মারায় কি আপনার খারাপ লেগেছে?আর কাউকে মারলে আপনার কেমন লাগে?”
“সত্যি বলতে ওদেরকে না মারতে পেরে আমি সারারাত ঘুমাতে পারি নি।আমার মাথা কেমন যেন করছিল আর হাতটা নিশপিশ করছিল।,,,আমার যখন কারো উপরে রাগ উঠে তখন তাকে মেরে আমি একটা অদ্ভুত শান্তি পাই।আপনাকে বলেছিলাম আমাদের মহল্লার এক ছেলে আমার বোনকে নিয়ে বাজে কথা বলেছিল।ছেলেটাকে যখন আমি মারলাম তখন অদ্ভুতভাবে আমার মস্তিষ্ক কেমন ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল।”
আরিয়ানা সবকিছু শুনে বলে,
“ওকে আমি আপনার কথাগুলো নোট করেছি।আমার মনে হয় আপনার হাওয়া বদলের প্রয়োজন আছে আপনি চাইলে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন বাকিটা আপনার ইচ্ছা আর আমি মেডিসিন চেন্জ করে দিয়েছি।”
“জ্বী ঠিকাছে।আসছি।”
আরহাম চলে যায়।আরিয়ানা আরহামকে হাওয়া বদলের কথা বললেও আরহাম তা করতে পারবে না অথবা চাইছে না।সামনে আরুর বিয়ে কাজের চাপ তাই বাড়বে এই অবস্থায় বাবাকে ফেলে কোথাও যাওয়া যাবে না। এমনিতেই রিজা আহসান হাইপার টেনশনের রোগী।
;
;
;
দেখতে দেখতে তিন দিন পেরিয়ে গেল আরশির এংগেজমেন্টের।আরশি ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে হাতের আংটিটা দেখছিল।ফোনে সাভাশের ম্যাসেজ আসে তখন,
“আরু চন্দ্রিমা উদ্যানে একটু আসতে পারবে।আমি সেই কখন থেকে তোমার অপেক্ষায় আছি তা তুমি হয়তো জানো না।যাইহোক আমি জানি তোমার এতে যায় আসে না।প্লিজ জলদি চলে এসো আজকের সূর্যটা আমাকে গ্রিলড সাভাশ বানিয়ে দিচ্ছে।আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করলে আমি সান স্ট্রোক করবো।গত তিন দিন ধরে তোমাকে দেখি না আজ না দেখলে আমি সত্যি বলছি তোমার বাসায় গিয়ে বিয়ের আগেই ঘর জামাই হবো।”
আরশি ম্যাসেজটা দেখে হেসে দেয়।
“নাহ্ সিরিয়াস ব্যাপার।এডভোকেট সাহেবকে এখন দেখা না দিলে সে যা বলেছে তাই করে ফেলবে।”
আরশি স্কুটার নিয়ে চন্দ্রিমা উদ্যানের দিকে রওনা হয়।
;
;
আরশি চন্দ্রিমা উদ্যানে পৌছে সাভাশকে খুজছে।এক সময় পেয়েও গেল সে।সাভাশ কাঁধে কোর্ট ঝুলিয়ে পথ শিশুদের সঙ্গে আইসক্রিম খাচ্ছে।ইসস ঘেমে কি অবস্থা হয়েছে ছেলেটার।মুখটা একদম লাল হয়ে গেছে।আরশি দূর থেকে ডেকে উঠলো,
“সাভাশ আপনি আমাকে ছাড়া এতো আনন্দ কিভাবে করতে পারেন?আমার অপেক্ষা করলেন না কেন?”
আরশি দৌড়ে দৌড়ে সাভাশের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার আইসক্রিম দিন।এই রোদের মধ্যে কতো কষ্ট করে এখানে এসেছি জানেন?”
সাভাশ হেসে বলল,
“ধন্যবাদ আসার জন্য।কোন আইসক্রিম খাবে বলো।”
“অরেন্জ ফ্লেভার।”
আরশি আইসক্রিম নিয়ে খেতে লাগলো।সাভাশ আইসক্রিম বিক্রেতাকে টাকা পরিশোধ করে বাচ্চাগুলোর উদ্দেশ্যে বলল,
“বায় বাচ্চারা।”
সবাই হাত নেড়ে তাদের দুজনকে বিদায় দিল।

আরশি আর সাভাশ আইসক্রিম খাচ্ছে আর হাটছে।আরশি বলল,
“আপনি তো পুরো ঘেমে গিয়েছেন রুমাল দিয়ে মুখটা মুছেন ঘামাচি হবে তো।”
“আজ রুমালটা বাসায় ফেলে এসেছি।”
“ওহ আচ্ছা দাঁড়ান আমার কাছে টিস্যু আছে।”
আরশি নিজের ব্যাগ থেকে টিস্যু বের সাভাশের দিকে এগিয়ে দেয়।সাভাশ বলল,
“তুমি মুছে দেও।”
আরশি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আমি কেন মুছবো?অ্যাহ টিস্যু দিয়েছি এটাই বেশি।খাইতে দিলে বসতে চায় বসতে দিলে শুইতে চায়।”
সাভাশ কথাটা শুনে হা হয়ে যায়।মেয়েটা রোমান্টিকতার কিছুই দেখি বোঝে না।সাভাশ নিজেই টিস্যু মুখ মুছে নিয়ে সামনে হাঁটতে থাকে।হঠাৎ দুজনের সামনে তিনজন গুন্ডা চলে আসে।দুজনে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে তেমন কোনো মানুষ এই সাইডটাতে নেই।তার উপর দুপুরের এই রোদের কারণে মানুষ অনেক কম।

গুন্ডাগুলো সাভাশকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“সাভাশ চোধুরি আজকে তোর শেষ দিন।তুই আমার ভাইয়ের কেসটা নেস নাই এই কারণে আমার ভাই এখন দশ বছরের জন্য জেলে।আজকে আমি পৃথিবী থেকে তোর লাইফ নট করে দেবো।পাশে এইটা কে?”
সাভাশ আরশির নিরাপত্তার জন্য যেই বলতে যাবে,”আমি একে চিনি না।”
আরশি নিজেই বলে দেয়,”আমি এর ফিয়ান্সে।”
গুন্ডাটা মাথা চুলকে বলে,
“ফি,,য়াস এইটা কি?”
“আরে হবু বউ গাধা কোথাকার।দুইশ কেজির শরীর ঠিকই বানাইছো পাঁচশ গ্রামের ব্রেনটা বানাইতে পারো নাই।”
গুন্ডাগুলো রেগে গেল এমন কথায়।একটা গুন্ডা বলল,
“এই এই মেয়েরে ধর তো অনেক চটর চটর কথা বলে।”
সাভাশ আরশির সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওর গায়ে হাত দিলে তোদের কি করবো তা তোরা ভাবতেও পারবি না।”

এরপর শুরু হলো তিনজনের সঙ্গে সাভাশের মারামারি।সাভাশ আরশিকে চলে যেতে বলছে কিন্তু আরশি যাচ্ছে না দাঁড়িয়ে আছে।গুন্ডাটা নিজের পকেট থেকে গুলি বের করে যেই সাভাশকে মারতে যাবে তখন দেখে তার হাতে গুলি না একটা কলা।
আরশি নিজের হাতের বন্দুকটা দেখিয়ে বলল,
“এটা খুঁজছো জাম্বু।আম্মু সকালে নাস্তা করতে পারি নি বলে কলা আর রুটি দিয়েছিল।সময়ের অভাবে খাই নি।তোমার বন্দুকটা পছন্দ হয়েছে তাই এটার সাথে অদলবদল করে নিলাম।”

সাভাশ সহ বাকি তিন গুন্ডাও অবাক।এই কাজ কখন করলো আরশি কেউই টের পায় নি।আরশি নিজের হাতের বন্দুকটা দেখিয়ে বলল,
“আমার চোখে চশমা বলে ভেবো না গুলি মিস যাবে চশমা তো পড়েছি নিজেকে ইন্টেলিজেন্ট দেখানোর জন্য।চুপচাপ সাভাশকে ছেড়ে দেও না হলে প্রথমে জাম্বু,এরপর এই পাট কাঠি আর লাস্টে টিপু সুলতানকে মারবো।”
সবাই আরশির কথায় ভয় পেয়ে যায়।সাভাশকে ছেড়ে দিতেই আরশি ওদের চোখে হাতে থাকা পেপার স্প্রে মেরে সাভাশের হাত ধরে দেয় এক দৌড়।সাভাশ অবাক হয়ে আরশির দিকে তাকিয়ে আছে।
;
#চলবে!