কালোবউ পর্ব-৩৪ এবং শেষ পর্ব

0
1813

🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ৩৪

মেঘলাঃ বাসা অন্ধকার কেন?? শুনছেন,,, (লাইট জ্বলে ওঠতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম সামনে তাকিয়ে। পাশে তাকিয়ে দেখি আকাশ নেই। সারা বাসা খুব সুন্দর করে সাজানো। বেলীফুলের ঘ্রাণ
ম-ম করছে সারা বাড়ি,,, চারদিকে শুধু সাদা বেলি আর সাদা বেলুনের সমাহার,,,,,, মনে হচ্ছে মেঘের দেশে চলে এসেছি । ধীরে ধীরে উপরে রুমের দিকে যেতে লাগলাম। এত সুন্দর করে বিয়ের দিনও সাজানো হয়নি। রুমের দরজা ঠেলে ভেতরে যেতেই সাদা গোলাপের পাপড়ি ঝরে পরলো আমার ওপর। রুমটা আরো বেশী সুন্দর করে সাজানো। সারা ফ্লোরে সাদা গোলাপের পাপড়ি আর সাদা বেলুন ছড়ানো,,,,, বেডটা সাদা পদ্মফুল দিয়ে সাজানো আর সারা রুম রজনীগন্ধা দিয়ে। আমি কী কোন মেঘের রাজ্যে চলে এসেছি?? বেডের ওপর একটা প্যাকেট দেখে হাতে নিলাম একটা হোয়াইট কালারের শাড়ী আর হোয়াইট ডায়মন্ডের জুয়েলারি। ফোনে ম্যাসেজের শব্দ হলে ওপেন করে দেখি আকাশের ম্যাসেজ।

আকাশঃ শাওয়ার নিয়ে শাড়ীটা পড়ো।

মেঘলাঃ(আমিও উনার কথামতো শাওয়ার নিতে চলে গেলাম। ওয়াশরুমেও সাদা গোলাপের পাপড়ি বেছানো। শাওয়ার শেষ করে কোন রকমে শাড়ীটা পরে নিলাম। আমি ভালো করে শাড়ী পরতে পারি না। শাড়ীটা পরে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আবার ম্যাসেজ)

আকাশঃ জুয়েলারি পরে নাও আর চোখে গাড়ো কাজল, চুলো ছেড়ে রাখো আঁচড়াবে না একদম শুধু ভালো করে মুছে নাও।

মেঘলাঃ উনি গেলেন কোথায়?? আর জানলেনই বা কেমন করে আমার শাওয়ার নেওয়া শেষ?? আবার ফোনে টুং করে ওঠলো।

আকাশঃ এত না ভেবে যা করতে বলছি করো।

মেঘলাঃ(উনি যা করতে বললেন তাই করলাম। সবার শেষে কাজল দিলাম। কাজলটা দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের ওপর রাখতেই রুমের সব লাইট অফ হয়ে গেলো। ভয় পেয়ে আকাশকে ডাকতে লাগলাম) শুনছেন,,,,,,,

আকাশঃ
তোমার বিচরণ সর্বদা আমার বুকে,,,,
যত্নে আগলে রাখি হাতে,,,,,
তবু একটুতেই বড্ড অভিমান তোমার,,,,,
ছেড়ে যাওয়ার হাজার বাহানা,,,,,,,,
তোমার আছে ভালোই জানা,,,,,,
তুমি কী বুঝো না,,,,,,,,
তুমি ছাড়া আমি শূন্য, রঙহীন
এসব কী তোমার অজানা,,,,,,
তবু তুমি ছেড়ে যাবেই,,,,,,,,,
ঝরে যাবে পৃথিবীর বুকে,,,,,,,,
রয়ে যাবো আমি একা,,,
তোমার যাওয়ার পথ চেয়ে,,,,,,,
যেথায় ইচ্ছে যাও তুমি,,,,
তোমার শেষ ঠিকানা যে আমি,,,,
যত দূরে যাওয়ার বাহানাই খোঁজো ,,,,,,,
বারবার ফিরতে হবে আমাতেই,,,,,,,,
মেঘের ঠিকানা যে আকাশের বুকেই,,,,,,

মেঘলাঃ (একটার পর একটা মোমবাতি জ্বালিয়ে দিচ্ছে আর কবিতা আবৃত্তি করছে আকাশ। সাদা পাজামা আর পাঞ্জাবিতে পবিত্র লাগছে দেখতে। যেন এই মেঘ রাজ্যের রাজকুমার)

আকাশঃ(রুমের সব মোমবাতি জ্বালিয়ে মেঘলার সামনে দাঁড়ালাম)
“যেথায় ইচ্ছে যাও তুমি
তোমার শেষ ঠিকানা আমি”
(মেঘলার কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম)
আমার মেঘ রাজ্যের মেঘপরী
সারাজীবন আমার আকাশ যেন
তোমার মেঘে মেঘলা হয়েই থাকে

মেঘলাঃ সারাজীবন এই আকাশের বুকেই বিচরণ থাকবে এই মেঘের।

আকাশঃ সত্যি,,,,??

মেঘলাঃ হুম,,,,,,

আকাশঃ কথা দিলে??

মেঘলাঃ হুম,,,,

আকাশঃ(জড়িয়ে ধরলাম আমার মেঘপরীকে) কেমন লেগেছে এই মেঘরাজ্য আমার মেঘপরীর??

মেঘলাঃ স্বপ্নের মতো,,, মনে হচ্ছে সত্যি কোন মেঘের রাজ্যে চলে এসেছি।

আকাশঃ হুম,,,,, এই মেঘ রাজ্যের রানী তুমি আর আমি রাজা। এখন একটা রাজকন্যা হলেই কমপ্লিট।

মেঘলাঃ এসব করার মানে কী?? মা আর চাঁদ বাসায় এলে কী মনে করবে??

আকাশঃ আমার মেঘপরীকে মেঘ রাজ্যে কেমন লাগে দেখতে ইচ্ছে হলো তাই এতকিছু। চাঁদ মাহিনের সাথে লং-ড্রাইভে গেছে আর মা নানুকে দেখতে গেছে।

মেঘলাঃ আপনার নানু আছে???

আকাশঃ হুম নানু মামা সব আছে। কিন্তু যোগাযোগ নেই। বাবা চলে যাওয়ার পর কেউ পাশে দাঁড়ায়নি তাই আমরাও তাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি। দেখো সেসব বাজে সময়ের কথা মনে করে আমার মুড খারাপ করতে চাইনা।

মেঘলাঃ আচ্ছা,,,,,,,

আকাশঃ (মেঘলাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে চুলে মুখ গুঁজে দিলাম। চলো কেক কাটবে,,,)

মেঘলাঃ কিসের কেক,,,,

আকাশঃ আজকে আমাদের বিয়ের দুমাস হলো। আজ থেকে আমাদের নতুন জীবন শুরু হলো।

মেঘলাঃ( টেবিলের ওপর একটা চকলেট কেক দেখলাম। কেকের ওপর লেখা “welcome to our new life” উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলাম) এটা কখন আনলেন।

আকাশঃ যখন লাইট অফ হয়ে গেছিলো তখন। এখন চলো( কেক কেটে মেঘলা আমাকে খাইয়ে দিলো আর আমি মেঘলাকে একটু খাইয়ে বাকিটা সারা মুখে মেখে দিলাম।)

মেঘলাঃ এটা কী করলেন???

আকাশঃ তোমাকেই এখন আস্ত একটা চকলেট কেক লাগছে হাহাহা,,,,,

মেঘলাঃ(রাগে উনার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।) আপনি জানেন না আমার কেকের ক্রিমে এলার্জি? এখনতো মুখটা ফুলে ভূতের মতো হবে।

আকাশঃ জানিতো,,,,

মেঘলাঃ জানা সত্ত্বেও এমন করলেন??

আকাশঃ হুম করলাম কারণ এটাই এমন কিছুই হবে না। তোমার জন্য স্পেশালি বানানো বুঝতে পরেছো আমার চকলেট কেক।

মেঘলাঃ হুম (মুখ গুমরা করে টিসু দিয়ে মুছতে গেলে উনি হাত ধরে ফেললেন) এখন মুছতে তো দিবেন??

আকাশঃ আমি লাগিয়েছি আমি মুছে দিচ্ছি।

মেঘলাঃ আমি,,,,,,,(কিছু বলার আগেই আমার মুখ উনার দু’হাতের আযলে নিয়ে গালের চকলেট জিহ্বা দিয়ে খেয়ে নিলেন। আমি উনার হাত খামচে ধরলাম)

আকাশঃ(জিহবা দিয়ে ওর গালে লেগে থাকা চকলেট খেয়ে নিতেই মেঘলা আমার হাত খামচে ধরলো চোখ বন্ধ করে) এইটার টেস্ট পৃথিবীর সব চকলেটকে হার মানাবে ( মেঘলার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললাম)

মেঘলাঃ (উনার কথা শুনে সরে আসতে চাইলেও পারলাম না। উনি ওভাবেই ধরে রাখলেন।)

আকাশঃ(আস্তে আস্তে ওর সারা মুখের চকলেট জিহ্বা দিয়ে খেয়ে নিলাম। ঠোঁটের চারপাশে যখন জিহবা লাগাতে শুরু করলাম মেঘলা তখন কেমন মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো। ওর ছটফট আমাকে অজানা অনুভূতি দিচ্ছে)

মেঘলাঃ(উনার এই স্পর্শ আমি সয্য করতে পারছি না। শুধু ছটফট করে যাচ্ছি।)

আকাশঃ (ওর ঠোঁটগুলো অসম্ভব কাঁপছে যা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে। ঠোঁট মিলিয়ে দিলাম ওর ঠোঁটে। মেঘলা যেন এতক্ষন এটাই চাইছিলো। আমার সাথে পাল্লা দিয়ে কিস করে যাচ্ছে। অনেকসময় কিস করে ছাড়তেই ও পিছনে ঘুরে গেলো আমি পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ওর গলায় মুখ গুঁজে দিলাম)

মেঘলাঃ (গলায় একের পর এক কিস আর লাভ বাইট দিয়ে যাচ্ছে উনি। আর উনার হাত বিচরণ করছে আমার খোলা পেটে। এ কেমন অনুভূতি,,,, আজ এটুকুতে যেন মন ভরছে না মনে হচ্ছে আরো আদর চাই আমার।)

আকাশঃ(ওর গলায় কিস করে যাচ্ছি আজ মনই ভরছে না কিস করে। কিস করার সময় আপনাআপনি ওর শাড়ির আচল কাঁধ থেকে খসে পড়লো। ওর পেটে হাত বুলিয়ে আস্তে আস্তে হাত পেট থেকে উপরের দিকে আনতে শুরু করলাম)

মেঘলাঃ(উনি পেট থেকে হাত একটু একটু করে উপরে আনতে শুরু করেছে। একদম শেষ মুহূর্তে আমি উনার হাত আটকে ধরলাম।)

আকাশঃ(ও আমার হাত আটকে ধরতেই ওর বাহু ধরে এক ঝটকায় নিজের দিকে ফিরালাম। শাড়ীর কুচি খোলে একাই পরে গেলো। ও চোখ বন্ধ করে ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে) কীভাবে শাড়ি পড়েছো আমি ছোঁয়ার আগেই খুলে গেলো(কানের লত্তিতে একটা কামড়ে দিয়ে বললাম)

মেঘলাঃ জ,,জানি না,,,,,

আকাশঃ(ওর গলা থেকে নেকলেস খুলে গলায় একটা কিস করলাম। কানের দোলগুলো খোলে কানে একটা কিস করলাম। তারপর আবার ওর দিকে তাকালাম। ওর কাঁপা ঠোঁটগুলিতে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। একহাত ওর মাথার পেছনে ধরে আছি অন্যহাত ওর খোলা পেটে। আঙ্গুল দিয়ে ছুঁয়ে দিতে দিতে হাত উপরে আনতে গেলে আবার হাত আটকে ধরলো মেঘলা। ওর ঠোঁট ছেড়ে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিলাম। ওর দিকে ঝুঁকতেই চোখ পিটপিট করে তাকালো আমার দিকে) Now i need you fully,,,, (ফিসফিস করে বললাম)

মেঘলাঃ (উনার কথা শুনে আবার চোখ বন্ধ করে নিলাম “me also” মনে মনে বললাম )

আকাশঃ(হাত ওর পেটে রেখে গলায় মুখ গুঁজে দিলাম। হাত ওপরের দিকে আনতে গেলে এবার আর মেঘলা বাঁধা দিলো না। ছোট ছোট লাভ বাইটে যখন ও ব্যাথায় ওহ্ করে ওঠছে তা যেন আরো পাগল করে তুলছে আমাকে।)

(আজ মেঘলা আর আকাশ মিলেমিশে এক হয়ে গেছে। পূর্ণতা পেয়েছে ওদের ভালোবাসা, পূর্ণতা পেয়েছে ওদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। ভালোবাসার সাগরে সাঁতারে বেড়াচ্ছে তারা। আমরা নাহয় তাদের একা ছেড়ে দিয়ে অন্যদিক থেকে ঘুরে আসি)

রবিনঃ বাসায় ফিরে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে রুপ। ফ্রেসও হয়ে নেয়নি। আজ আমরা আমাদের বাসায় চলে এসেছি। একটা টাওয়েল ভিজিয়ে ওর শরীর মুছিয়ে দিয়ে শাড়ী চেঞ্জ করে নাইটি পড়িয়ে দিলাম। গভীরভাবে ঘুমিয়ে আছে রুপ। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক ক্লান্ত। জানি না কবে তোমার থেকে ক্ষমা পাবো তবে চেষ্টা করবো যতদিন বেচে আছি ততদিন।
,,,,,,

(খোলা মাঠের মাঝখানে পাশাপাশি শুয়ে আছে মাহিন আর চাঁদ। পূর্ণিমার ভরা চাঁদ দেখতে ব্যস্ত তারা)

চাঁদঃ আপনি একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছেন আর-একবার আমার দিকে কেন তাকাচ্ছেন??

মাহিনঃ বুঝার চেষ্টা করছি কোন চাঁদটা বেশী সুন্দর আমার পাশে শুয়ে থাকা চাঁদ নাকি দূর আকাশে উঠা ঐ চাঁদ।

চাঁদঃ ঢং,,,,,,

মাহিনঃ তুমি খুব আনরোমান্টিক,,,,,,

চাঁদঃ তাহলে রোমান্টিক কাউকে খোঁজে নিয়েন,,,,

মাহিনঃ আমার আনরোমান্টিক চাঁদই ভালো। আমার ছোঁয়ায় এমনিতেই রোমান্টিক হয়ে যাবে,,,,

চাঁদঃ(উনার কথা শুনে লজ্জায় অন্যদিকে মুখ ফিরালাম)

মাহিনঃ (ওকে আবার আমার দিকে ফিরালাম) ভালোবাসি,,,,

চাঁদঃ আমিও,,,,

মাহিনঃ আমিও কী,,,??

চাঁদঃ ভালোবাসি,,,,,,,

মাহিনঃ(বুকে জড়িয়ে নিলাম আমার চাঁদকে)
,,,,,,,,

রিয়াদঃ তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো লিজা,,,

লিজাঃ জী বলুন,,,,,

রিয়াদঃ আমার একটা অতীত আছে,,,,,

লিজাঃ শুনতে চাই না,,, আমি শুধু আপনার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হয়ে থাকতে চাই।

রিয়াদঃ কখনো ভুল বুঝবে না তো।

লিজাঃ ভুল বুঝলে ভুল ভাঙিয়ে দিয়েন,,,, আমারও কিছু,,,,

রিয়াদঃ একই উত্তর,,,, আমিও তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যৎ হয়ে থাকতে চাই।

লিজাঃ আমিও একই কথা বলবো ভুল বুঝবেন না তো??

রিয়াদঃ আবারও একই উত্তর,,, ভুল ভাঙিয়ে দিয়ো,,,(জড়িয়ে ধরে চাঁদ দেখতে লাগলাম দুজনে)

#_৬_বছর_পর

মেঘলাঃ রোদ দাঁড়াও বলছি,,,,,,,,

রোদঃ আমি আর থামু না(খাবো না)।

মেঘলাঃ আজকে তোমার রুপক ভাইয়া আসবে,,,, তারপর মাহি আর রিধিও আসবে। যদি না খাও আসবে না কিন্তু।

রোদঃ সত্যি আদবে থবাই(আসবে সবাই)

মেঘলাঃ হুম সত্যি তো,,,, তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে রেডি হয়ে নাও।

রোদঃ আমি দিম থামু না দিম পতা। (আমি ডিম খাবো না ডিম পঁচা)

মেঘলাঃ এই ছেলের জন্য আমি পাগল হয়ে যাবো। ডিম খাবে না, দুধ খাবে না, মাছ খাবে না,,,, সব নাকি পঁচা। তাহলে ভালোটা কী তুই বল বাপ আমার।

আকাশঃ কী হয়েছে,,,, মা-ছেলে আবার যুদ্ধ লেগেছো কেন??

মেঘলাঃ এই নিন খাবার,,, আপনার ছেলেকে আপনিই খাওয়ান,, আমি পারবো না। এটা পঁচা, ওটা পঁচা, খাবেটা কী আপনার ছেলে??

আকাশঃ তোমার কাছেই বলে আমার কাছেতো কখনো বলে না কিছু।

মেঘলাঃ(সেটাইতো প্রবলেম বাপের কাছে গেলে মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ছেলে। কোন বায়না নেই,,, আমার কাছে এলেই যত ফাজলামো। সারাজীবন বাবা আর মেয়ের ভালোবাসা দেখেছি এখানে ওল্টো। আমার থেকে আকাশের সাথে বেশি খুশি আর শান্ত থাকে রোদ। দেখতে আমার মতো হলেও গায়ের রং আর স্বভাব বাপের মতো পেয়েছে। আল্লাহ আমার কথা শুনেছে। আল্লাহর কাছে দিনরাত বলতাম আমার সব গুণ আমার সন্তান পেলেও গায়ের রং যেন না পায়। এই রঙের জ্বালা আমার সন্তানকে যেন ভুগতে না হয়। কোন রাজপুত্রের থেকে কম নয় আমার ছেলে,,, আল্লাহ আমার কথা শুনেছে) তো আপনার এত ভালো ছেলে আপনিই খাওয়ান না। আমার আরও অনেক কাজ আছে। (খাবার আকাশের হাতে ধরিয়ে চলে এলাম)

আকাশঃ আরে শুনো না,,,,, যা চলে গেলো। মায়ের সাথে দুষ্টুমি করেছো পাপা,,,,

রোদঃ আমি তি দুতুমি করি তুমি বলো বাবা(আমি কী দুষ্টুমি করি তুমি বলো বাবা??)

আকাশঃ একদম না,,,, আসলে তোমার মা-টাই পঁচা।

মেঘলাঃ কী বললেন আপনি??

আকাশঃ ক,,,কই কী বললাম?? কিছু বলিনিতো,,,, পাপা খাবারটা শেষ করো এখনই,,,,, সুপারম্যানের মতো।

রোদঃ এখনই থেষ করততি(এখনই শেষ করছি)

(রোদ চৌধুরী ,,,, আকাশ আর মেঘলার ভালোবাসার প্রতিক। আজ রোদের চতুর্থ জন্মদিন। মাহিয়া হাসান,,,,, মাহিন আর চাঁদের ছয় মাসের মেয়ে। রিধিয়া রায়হান,,,,,,, রিয়াদ আর লিজার ১ বছরের মেয়ে। রুপক মির্জা,,,,,,রবিন আর রুপের ৫ বছরের ছেলে। আজ সবাই আসবে রোদের জন্মদিনে)

মেঘলাঃ(বিকেল হতেই গেস্ট আসা শুরু হয়ে গেলো। অনুষ্ঠানে আসা বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে রোদ। ওরা কেউ এখনো এলো না কেন??)

চাঁদঃ ভাবি,,,,,,,,,

মেঘলাঃ চাঁদ,,,,,,, কেমন আছো???(চাঁদকে জড়িয়ে ধরলাম। ভাইয়ের কোল থেকে মাহিকে কোলে নিলাম) কেমন আছিস ভাই??

চাঁদ+মাহিনঃ আলহামদুলিল্লাহ,,,,

চাঁদঃ আমার রোদ বাবা কোথায়??

মেঘলাঃ বাচ্চাদের সাথে খেলছে,,,,,,,,,,,

রোদঃ ফুপি,,,,,,,,,,

চাঁদঃ এইতো আমার বাবাটা,,,,,কেমন আছে আমার বাবাটা???

রোদঃ ভাল,,,,,

মেঘলাঃ রোদ ফুপিকে জিজ্ঞেস করো কেমন আছে,,,,,

চাঁদঃ থাকনা ভাবি আস্তে আস্তে শিখে যাবে,,,,

আকাশঃ চাঁদ,,,,, মাহিন এখন এলে??

মেঘলাঃ( আকাশ ওদের সাথে গল্প করতে শুরু করলো। মাহিকে আকাশ কোলে নিতেই রোদ চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। ছেলে মানুষ এতো হিংসুটে হয় নিজের ছেলেকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। বাপের কাছে কাউকে ঘেঁষতে দেবে না। একটু পর লিজা আর রিয়াদ ভাইয়াও এলো। আমি তাকিয়ে আছি গেটের দিকে। আমার আপুর শেষ স্মৃতি রুপকের আশায়। হ্যাঁ শেষ স্মৃতি,,,,,)

মণিমা,,,,,,,

মেঘলাঃ (গেটের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম রুপক দাঁড়িয়ে আছে পাশে রবিন ভাইয়া,,, দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম রুপককে) এসেছিস বাবা,,,,

রুপকঃ মণিমা,,,,,

মেঘলাঃ( বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি,,,, জীবনটা কতো অদ্ভুত। আজ ৫ টা বছর হয়ে গেলো মেঘমনি বলে কেউ ডাকে না। রুপকের মুখে যখন মণিমা ডাকটা শুনি মনটা একটু হলেও শান্ত হয়। আজও সেই ভয়ংকর দিনের কথা মনে পড়লে বুকটা ফেটে যায় কষ্টে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে একটা ফোন কল সব এক পলকে পাল্টে দিয়েছিলো। সকালে আকাশ অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল আর আমি বেডে বসে ছিলাম তার নির্দেশ অনুযায়ী। আকাশের ফোন বেজে ওঠে,,,, আমি রিসিভ করেছিলাম। ওপাশের কথা শুনে হাত থেকে ফোন পড়ে গিয়েছিলো। রুপ আপু সিড়ি থেকে পড়ে গেছে,,, হাসপাতালে আছে। ফোনটা রবিনের ফোন থেকে সজীব করেছিলো। যখন আমরা হাসপাতালে পৌঁছাই রুপ আপু অপারেশন থিয়েটারে। অপারেশন থিয়েটারের দরজার সামনে বিধস্ত হয়ে বসে আছে রবিন ভাইয়া। আমিও বসে পড়লাম পাশের চেয়ারে। একটু পর নার্স একটা ছোট্ট পুতুল,,, তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে বের হয়ে আসে। আপুর কথা জিজ্ঞেস করতেই মাথা নিচু করে রুপককে কোলে দিয়ে চলে যায়। তোয়ালে দিয়ে মুড়ানো পুতুলের দিকে তাকিয়ে মনে হলো এ রুপ আপুর প্রতিবিম্ব।)

রবিনঃ ডক্টর আমার রুপ,,,, আমার ওয়াইফ,,,,,।

ডক্টরঃ সরি,,,,, সি ইজ নো মোর,,,,

রবিনঃ রুপ,,,,,

মেঘলাঃ(রবিন ভাইয়ার সেই আত্ম চিৎকার আজও কানে বাজে। জ্ঞান ফিরে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করেছিলাম। জেনেছিলাম মা হতে চলেছি আমি। রুপ আপুর চলে যাওয়া দেখে আকাশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। বলেছিলো আমার বাচ্চা চাই না। আমার জন্য হার মানতে বাধ্য হয়েছিলো আকাশকে কিন্তু এক মিনিটের জন্যেও চোখের আড়াল করেনি আমাকে। যার ফল আজ আমি আর আমার রোদ। সেদিন যদি রবিন ভাইয়াও আপু কাছে থাকতো তাহলে হয়তো রুপ আপুও আমাদের সাথে থাকতো,,,)
,,,,,,,,,,,

রবিনঃ খুব ভালো আছো তাইনা রুপ আমাকে একা ফেলে,,,,। দেখেছো রুপ পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না। তোমার সাথে ৩ বছর অন্যায় করার শাস্তি সারাজীবনের জন্য দিয়ে গেছো। সজীবও তার পাপের শাস্তি পেয়েছে জানো,,,?? অনেক মেয়ের মন ভেঙেছিলো আর একজন ওকেই ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে গেছে। বাকি সবাই ভালো আছে। সেদিন আমি ভুল না করলে আমরাও আজ ভালো থাকতাম। তোমাকে তো বলছিলাম রুপ একা কখনো সিঁড়ি দিয়ে নেমো না। আমার কথাটা যদি শুনতে আজ তুমি আমার বুকে থাকতে আর রুপকটা তোমার কোলে। ছেলেটা আমাকে বাবা বলে ডাকে না। ৫ বছর বয়সেই সে অনেক বড় হয়ে গেছে। কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে সবসময়। বাচ্চাদের কোন দিক নেই ওর মাঝে,,, তুমি নাকি আমার জন্য চলে গেছো তাই সে আমার সাথে কথা বলে না। হ্যা আমার জন্যই চলে গেছো তুমি। সেদিন যদি সিঁড়ির কাছে তোমাকে দাঁড় করিয়ে রুমে না আসতাম তাহলে তুমি একা নামার চেষ্টাও করতে না আর,,,,,,,,,,। তোমার শূন্যতা আমাকে কুড়ে কুড়ে খায় রুপ। আজ আমার চারদিকে শুধু শূন্যতা। তবে তোমার সেই শেষ কথা আজও বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। এম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার রুপ তার রক্তাক্ত হাতে আমার হাতে আঁকড়ে ধরে)

রবিনঃ ক,,,,,কিচ্ছু হবে না তোমার। আমি হতে দিবো না,,, সব ঠিক হয়ে যাবে,,,একটু ধৈর্য্য ধরো লক্ষীটি।

রুপঃ এ,,,,এ,,ক,,টু ব,,,,,বু,,কে ন,,নে,,বে ত,,,তো,মার??

রবিনঃ(আস্তে করে বুকে নিলাম রুপকে। চোখ মুছে শেষ করার আগেই আবার ধরে ওঠছে)

রুপঃ ভ,,,,ভা,,লো,,বা,,সি অ,,অ,,নে,,ক ব,,বে,,শি।

রিয়াদঃ(চোখ বন্ধ করতেই চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে গেলো নোনাজল। চোখ বন্ধ করলে আজও সেই কথাটা কানে বাজে। সেটাই ছিলো রুপের শেষ কথা। তারপর জ্ঞান হারিয়ে ঢলে পড়ে রুপ আমার বুকে । আবার যখন রুপ আমার বুকে এলো তখন আমার রুপ ছিলো গভীর ঘুমে নিমগ্ন ,,,,,, আজও তার ঘুম ভাঙেনি আর কোনদিন ভাঙবেও না। মাটির নিচে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে সে। আর আমি তার শূন্যতায় জ্বলছি প্রতিনিয়ত। রুমে এসে ঘুমিয়ে থাকা রুপকের দিকে তাকালাম। ছেলেটা দেখতে যেমন তোমার মতো হয়েছে,,,, তোমার মতো অভিমানীও হয়েছে রুপ। তাইতো কিছুই বলিনা ওকে। কিন্তু বাবা ডাক শুনার জন্য বুকটা বড্ড হাহাকার করে।)
,,,,,,

আকাশঃ মেঘলা,,,,,,, তুমি আবার কান্না করছো??

মেঘলাঃক,,,কই নাতো,,,(অনুষ্ঠান শেষে সবাই চলে যেতেই রোদকে ঘুম পাড়িয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আপুর কথা ভাবছিলাম। আকাশের ডাকে ঘোর কাটলো,,,,)

আকাশঃ তাহলে তোমার চোখে পানি কেন???

মেঘলাঃ(চোখে হাত দিয়ে দেখি সত্যি পানি) এটা হয়তো,,,,,,,

আকাশঃ রুপ চলে গেছে ৫ বছর হয়ে গেছে মেঘলা। তুমি আর রবিন এখনো নিজেদের সামলাতে পারলে না।

মেঘলাঃ আর কোনদিন হয়তো পারবোও না,,,

আকাশঃ রুপ না থাকার কষ্ট আমাদের সবারই আছে কিন্তু আর কতদিন ওর কথা ভেবে চোখের পানি ফেলবে,,??

মেঘলাঃ আজ রবিন ভাইয়ার জায়গায় আপনি থাকলে কী করতেন??

আকাশঃ রবিন এখনো নিশ্বাস নিচ্ছে আমার নিশ্বাস তোমার সাথেই বন্ধ হয়ে যাবে।

মেঘলাঃ তাহলে রবিন ভাইয়া নিজেকে অনেক সামলে নিয়েছে। যেটা আপনিও পারবেন না।

আকাশঃ(মেঘলাকে একটানে বুকে জড়িয়ে নিলাম) এই মেঘপরী আকাশের বুক থেকে উড়ে গেলে আকাশের নিশ্বাসও তার সাথেই চলে যাবে।

মেঘলাঃ (আমিও উনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম) ভালোবাসি,,,

আকাশঃ নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি আমার #কালোবউ,,,,,,,

★সমাপ্ত★