ভালোবাসার রঙে রাঙাবো পর্ব-০১

0
2159

#ভালোবাসার_রঙে_রাঙাবো❤️
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি🥀
#সূচনা_পর্ব।🌺

–” তাড়াতাড়ি ম্যারেজ পেপারে সাইন করো।আই সেইড সাইন দ্যা পেপার ড্যাম ইট।”

কথাটা যেন একেবারে কলিজায় গিয়ে লাগলো।
–“সাইন করতে বলেছি! নাহলে কি হবে জানোতো?” ছেলেটার কথায় কাঁদতে কাঁদতে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে দিলো মেয়েটি।
লাল ভারি লেহেঙ্গা গা ভর্তি গহনা নিয়ে বসে আছে একটি মেয়ে।আজ তার বান্ধুবীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।বিয়ে হয়েছেও কিন্তু ওর বান্ধবীর না স্বয়ং ওর নিজের বিয়ে হয়েছে।
মেয়েটা হিচঁকে তুলে কাদঁছে।
মেয়েটার পাশে একটি ছেলে বসে আছে।
তাকে এভাবে কাদঁতে দেখে ছেলেটা ধমকে বললো,

–” এভাবে কাঁদবেনা একদম।তোমার কান্না আমি সয্য করত পারছি নাহ।মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে আরো দুটা চর মারি।। তুমি একটু বুজার চেষ্টা করো কেন আমি তোমাকে ভালোবাসি?
তুমি অন্য একজনের সাথে বিয়ে করবে এটা আমি মেনে নিবো ভাবলে কি করে তুমি?এইজন্যেই বিয়ের আসর থেকে তোমাকে তুলে এনে বিয়ে করলাম।এখন থেকে আমার খাঁচায় বন্ধি থাকবে তুমি।”

পাশ থেকে আর একটি ছেলে ডেকে উঠলো ওই ছেলেটাকে।

–” মনির!”
–” হ্যা!”
–” সাক্ষী সদস্যের সাইন করে দিয়েছি।এইবার চল।
–” হুঁ!”

মেয়েটি চিৎকার করে বললো,

–” তুই এতো খারাপ ভাইয়া আমি জানতাম না।
তুই তোর বন্ধুর সাথে মিলে নিজের বোনকে এইভাবে
বিয়ে দিলে দিলি?আফরান ভাইয়া আর নিবির ভাইয়া তোদের আমি কখনো ক্ষমা করবো নাহ।আমার কথাটাতো অন্তত শুনতে আগে।নাহ তোমরা না জেনে শুনেই এমনটা কেন করলে?
আর আরিফ ভাইয়া মেরাজ ভাইয়া তোমরা কি করে পারলে এমনটা করতে। অবশ্য করবে না কেন? আমার আপন ভাই দুটোই আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো সেখানে আমি তো তোমাদের পর।”

আফরান এগিয়ে এসে বললো,

–” পিকু বোন আমার ভাইয়ারা যা করেছি ভালোর জন্যেই করেছি।ভাই’রা কখনো খারাপ চায় নাহ।আর তুই যেইন কাজ করেছিস?তাতে তোকে আরো দু-চারটে থাপ্পর বেশি দেওয়া উচিৎ ছিলো।
–“আরে আমার পুরো কথাটা তো শুনবি ভাই?”
–” ব্যাস! পিকু মার না খেতে চাইলে চুপ যা।”
–” ইয়াহ পিকু! তুই জানিস না তোর নিবির ভাইয়া তোকে কতো ভালোবাসে?” নিবির কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো।
–” সাদু আমরাও তোমাকে বোনের চেয়ে বেশি ভালোবেসেছি বনু।
তুমি আমাদের ভুল বুজো নাহ প্লিজ।” আরিফ আর মেরাজ করুনস্বরে বললো।

সাদু সবার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে গট গট পা ফেলে চলে গেলো।

এদিকে নিবির,আরিফ,মেরাজ হয়ে তাকিয়ে আছে সাদু’র যাওয়ার দিকে।
মনিরের চোখ ভালোবাসা পাওয়ার এক তীব্র বেদনা সাথে রয়েছে ভয়ংকার রাগ।সেই রাগে সাদুকে ধ্বংস করে দিতে চাইছে সে।তবে সে যে ভালোবাসে সাদুকে।কিন্তু সাদু কি আদৌ ভালোবাসতে পারবে মনিরকে।
তবে কি মনির পারবে না নিজের ভালোবাসা কে আপন করে নিতে?
————-
হাত-পা ছড়িয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে সাদু।
আর তাকে ঘিরে ওর চার বেস্টু শান্তনা দিচ্ছে।
কান্না’র চোটে ওর কাঁজল ল্যাপ্টিয়ে চোখের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে।সেদিকে তার কোন ভ্রু-ক্ষেপ নেই।
সে কেঁদেই যাচ্ছে তো কেঁদেই যাচ্ছে।
নূর বিরক্ত হয়ে বললো,
–” তুই থামবি না-কি আমার হাতের থাব্রা খাবি?”
–” ওরে থামা আল্লাহ্ আমার কান ফেটে যাবে।” আলিফা বললো।
–” নূর তোর ফ্লাইং জুতা ফিক্কা মার। ” আলিশা রেগে বললো।
–” আমি কি বলবো ওকে?🙄” মিম ভাবনায় পড়ে গেলো।

এদিকে সাদু ড্যাবড্যাব করে কতোক্ষন ওদের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–” এই তুই বলবি? তুই এমন বিয়ের লেগেঙ্গা আর গহনা গাটি পড়ে সোজা বাড়িতে ঢুকলি তারপর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছিস। বল কি হয়েছে?” নূর কোমড়ে দু-হাত দিয়ে বললো।
–” এমন থাব্রা দিমু গালের গোস্ত ছিড়ে ফেলবো হ্রামী।” মিম বললো।

সাদু সোফা থেকে কুশন ছুড়ে মারলো মিমকে তারপর কান্নারত অবস্থায় রেগে বললো,

–” হ্রামী তুই আমার ডায়লগ আমাকে কেন বলিস?
তুই ডায়লগ বানিয়ে নেহ।”
–” কিন্তু আমি যে কিছু বানাতে পারি নাহ!” মাথা চুলকে বললো মিম।
–” গু কালার বিষ খেয়ে মরে যা।” নূর বললো।
–” ইয়াক! ওয়াল! ওয়াক!” আলিফা অদ্ভূত সব শব্দ করছে।তা দেখে আলিশা বললো,
–” কিরে কাল আরিফ ভাই চুম্মাচাটি বেশি দিয়ে ফেলেছে না-কি যে তুই এখনি প্রেগনেন্ট মহিলা গো মতো করতাছোস।”
আলিফা পানি খাচ্ছিলো আলিশার কথা শুনে বেচারি বিষম খেলো।কাশতে লাগলো।
–” ছিহ হ্রামী!” আলিফা ঘুশি দিলো আলিশার কাধে।
–” ও মা গো টুরু চুম্মা-চাটি! চুম্মায় এতোই পাওয়ার আমাগো আলিফা প্রেগনেন্ট।” নূর বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললো।
–” দোস্ত এটা ব্রেকিং নিউজ হওয়া চাই।” মিম বেজায় এক্সাইটেড।
–” হ্যা আর লাইন হবে হ্যাশটেগ ‘ বফ এর চুম্মা’র পাওয়ার এতো বেশি ছিলো যে আমাদের আলিফা চুমু খেয়ে প্রেগনেন্ট’ জোস নাহ!🐸” আলিশা হাসতে হাসতে বললো।

আলিফা রেগে মেগে একাকার হয়ে বললো,
–” আজ তোদের একটাকেও ছাড়বো নাহ কুত্তিগুলা।
তোদের লাগামছাড়া কথা বার্তা ঝাটা দিয়ে বাইরাইয়া দূর করবো।”
বলতে বলতে মিম,নূর আর আলিশাকে ঝাড়ু হাতে দৌড়ানি দিলো আলিফা
এদিকে সাদু মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
এ কাকে সে মনের দুঃক্ষ বলতে এসেছে?
তার ইমোশোনের কোন দাম নাই।
তারা তো নিজের মধ্যে ব্যস্ত।

–” চান্দেও চিনে না, সূর্যেও চিনে নাহ।
চিনবো কেমনে আজ আমার বেস্টিরাও আমারে চিনে নাহ।
লে সাদু জোড়ে জোড়ে কান্না কর।তোর কেউ নাই তুই হয়ভাগা এক মহিলা থুক্কু বাচ্চা!” বলেই সাদু আবার হাত-পা ছড়িয়ে ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে লাগলো।
কিছুক্ষন কাঁদার পর আবার তাকালো বাকি চারজনের দিকে।
একি এরা তো একে-অপরের সাথে মারামারিতে ব্যস্ত।
একিরকম বন্ধু জুটলো তার।আর তার ভাইয়েরা বা কি তার পুরো কথা না শুনেই তাকে জোড়জবদস্তি বিয়ে দিয়ে দিলো।
——–
আসলে সাদু ওর একটা ক্লাসমেটকে হেল্প করতে এসেছিলো। মেয়েটি একটা ছেলেকে ভালোবাসে।আর সেটা ওরা সাদুকে বলে।ওদের বাবা,মা রাজি নাহ।তাই সাদু বুদ্ধি দেয় ওরা পালিয়ে বিয়ে করতে আর তাতে হেল্প করবে সাদু।
ছেলেটার বাড়ি সাদুদের বাড়ির থেকে প্রাই কাছে।
সাদুর ক্লাসমেট আগেই পৌছে যায়।
আর ওর ক্লাসমেটের বয়ফ্রেন্ড ওদের বাড়ির কাছে থেকে সাদুকে পিক-আপ করে নেয় যেহেতু সাদুদের বাড়ি যাওয়ার পথেই পড়ে।
সাদু ছেলেটার সাথে বাইকে উঠে চলে যায়।
আর এই দৃশ্য মনির দেখে ফেলে কারন মনির আর সাদুদের বাড়ি পাশাপাশি বিল্ডিং।
সাদুকে নিয়ে ওর ক্লাসমেটের বয়ফ্রেন্ড কাজি অফিসে আসে।সেখানে ভালোভাবেই ওদের দুজনের বিয়ে দিয়ে দেয় সাদু।বিনিময় তারা সাদুকে অনেক ধন্যবাদ জানায়।আর ওকে দুটো গোলাপ ফুল দেয়।সাদুও ভালোমন্দ বুজিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।কিন্তু বাড়ির কাছে আসতে আর ভীতরে যেতে পারে নাহ তার আগেই ওকে মনির,আফরান,আরিফ,মেরাজ,নিবির মিলে চোখ বেধে,মুখ বেধে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
আসলে মনির সাদুকে ওই ছেলেটার সাথে যেতে দেখে প্রচুর রেগে যায়। তারপরেও কিছু বলে নাহ।
পরে যখন দেখে সাদুর হাতে গোলাপ ফুল তখন তার মাথা আরো খারাপ হয়ে যায়।হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সে আফরানকে বলে সাদুকে সে এক্ষুনি বিয়ে করতে চায়।
আফরান অনেক বুজালো তাতেও লাভ হলো নাহ।
আফরানও রাজি হয়ে যায় কারন তাদের পুরো ফ্যামিলি জানে যে মনির সাদুকে ভালোবাসে তাই আফরান আর দ্বিমত করলো নাহ।
মনির যখন সাদুকে বিয়ে করবে বলে সাদু কিছুতেই রাজি হচ্ছিলো নাহ।পার্লারের মেয়েরা ওকে জোর করেও লেহেঙ্গা পড়াতে পারছিলো নাহ।
মনির এইকথা শুনে রেগে যায়।তারপর একটা একলা রুমে সাদুর সামনে গিয়ে একবার জিজ্ঞেস করে যে বিয়ে করবে কি না?সাদু না করার সাথে সাথে ওর জামার হাতাটান দিয়ে ছিড়ে ফেলে মনির।
প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায় সে।
তারপর মনির বলেছিলো যে সাদু যদি ওকে বিয়ে না করে তাহলে আরও খারাপ কিছু হবে ওর সাথে।
সাদু ভয়ে ভয়ে লেহেঙ্গা আর গহনা পড়ে নেয়।কিন্তু কেউ আর সাজানোর জন্যে জোড় করেনি।
তারপরেই মনির সাদুকে বিয়ে করে ফেলে।

চলবে।