কাশফুলের ভালোবাসা পর্ব-২২

0
673

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

অন্ধকারে মধ্যে ছুটে চলেছে মেহেক আর সৌন্দর্য।তারা কোথায় যাচ্ছে তারা নিজেরাও জানেনা।তাদের দুজনের মাথায় এখন একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর সেটা হচ্ছে পালাতে হবে,পালাতে হবে তাদের।

দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ মেহেক দাঁড়িয়ে পড়ে।মেহেক দাঁড়িয়ে পড়াতে সৌন্দর্যও দাঁড়িয়ে পড়ে।

” কি হলো দাঁড়িয়ে পড়লে কেন?চলো।” তাড়া দিয়ে বলে সৌন্দর্য।

” আমার চশমা।”

” চশমা কি হয়েছে?”

” চশমা পড়ে গিয়েছে।”

” কি?” অবাক গলায় বলে সৌন্দর্য। ” কি বলছো তুমি?এতো সিরিয়াস মোমেন্টে তুমি চশমা হারিয়ে ফেলছে!ও শেট,এখন দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি খোঁজা শুরু করো।”

মেহেক আর সৌন্দর্য দুজনেই চশমা খুঁজতে থাকে কিন্তু অন্ধকার হওয়ার কারণে তারা চশমাটা খুঁজে পাইনা।

” পেয়েছো?”

” না।”

সৌন্দর্য কিছু বলেনা।সে চুপ করে থেকে কিছু একটা চিন্তা করে তারপর মেহেকের হাত ধরে একটা ঝোঁপে পেছনে লুকিয়ে পড়ে।

কিছুক্ষণ পর হঠাৎ সৌন্দর্যের মাথায় আসে মেহেকের কেমন যেন চুপচাপ,নিস্তেজ হয়ে আছে।সৌন্দর্য মেহেক দিকে তাকাই।হঠাৎ তার নজর পড়ে তার হাতের দিকে,মেহেক শক্ত করে তার শার্ট চেপে ধরে আছে।সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে মেহেকের দিকে নেয়।মেহেকে দেখে তো সৌন্দর্য অবাক হয়েছে যায়।কারণ মেহেক চোখমুখ খিচে বন্ধ করে আছে,চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে তার।

” মেহেক এই মেহেক।কি হয়েছে তোমার?এভাবে বসে আছো কেন?ঠিক আছো তো তুমি?”

” আম…রা…. এখা…ন থে..কে.. ক..খন.. বের.. হ..বো..?” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেহেক।

সৌন্দর্য মেহেকের প্রশ্নের কোন উওর না দিয়ে ফোনে কিছু করে তারপর উঠে দাঁড়ায়।

” উঠো।”

এটাই শোনার অপেক্ষায় ছিল মেহেক।সে চট জলদি উঠে দাঁড়ায়।সৌন্দর্য আবারো মেহেক হাত ধরে হাঁটতে থাকে।সৌন্দর্য খুবই তাড়াতাড়ি হাঁটছে।মেহেক না পারতে বলে উঠে—-

” আস্তে হাঁটুন।চশমা ছাড়া আমি কিছুই দেখতে পারিনা।”

মেহেকের কথা শুনে সৌন্দর্য একবার তার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে সাবধানে মেহেককে জঙ্গল থেকে বাইরে নিয়ে আসে।

চশমা না থাকার কারণে মেহেক কোন কিছুই স্পষ্ট দেখতে পারছেনা।সে ঝাপসা ঝাপসা এতটুকু দেখতে পেয়েছে যে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে রাস্তায় অপজিটে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।সৌন্দর্য মেহেককে নিয়ে গাড়িটার কাছেই এসে দাঁড়ায়।গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে সৌন্দর্য মেহেককে উঠেতে বলে।

” আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

” বাড়িতে।” গম্ভীর মুখে বলে সৌন্দর্য।

মেহেকও আর কোন কথা না বলে উঠে নেয় কিন্তু ঠিক মতো দেখতে না পাওয়ার কারণে সে ঢুকার সময় মাথায় ভারী খাই।ব্যথায় হালকা চিৎকার করে ওঠে মেহেক।

” ইডিয়টে।” বিরবির করে বলে সৌন্দর্য।

এরপর সৌন্দর্য মেহেকে সাবধানে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পড়ে।গাড়ি চলতে শুরু করে।সৌন্দর্য আর যে গাড়ি চালাচ্ছে তার কথায় মেহেক বুঝতে পারে গাড়িতে সে আর সৌন্দর্য ছাড়াও স্পর্শও আছে।মেহেক আর এতোকিছু না ভেবে সিটে হেলাম দিয়ে চোখ বন্ধ করে থাকে।মেহেকের মাথায় এখনো ছেলেগুলো বলা কথাগুলো ঘুরছে।কথাগুলো তার বুকে তীরের মতো বিঁধেছে।আচমকা মেহেকের চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।

” মেহেক নামো আমরা চলে এসেছি।” সৌন্দর্য বলে।

কিন্তু মেহেকের কোন সাড়া নেই।সে এখনো চুপচাপ সিটে হেলাম দিয়ে আছে।

” মেহেক।আমরা বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছি নামো।”

কিন্তু এবারো মেহেক কিছু বলেনা।সৌন্দর্য মেহেকে হালকা করে ধাক্কা দেয় আর মেহেক হেলে পড়ে সৌন্দর্যের বুকে।এটা দেখে সৌন্দর্য ঘাবড়ে যায়।

” মেহেক,এই মেহেক।” মেহেক গালে হালকা থাপ্পড় মেরে বলে সৌন্দর্য।

” স্পর্শ,স্পর্শ।” স্পর্শ এতোক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে মেহেক আর সৌন্দর্যের অপেক্ষা করছিল।সৌন্দর্য চিৎকার শুনে সে দৌড়ে গাড়ির কাছে আসে।

” কি হয়েছে ভাইয়া?” তাড়াহুড়ো করে জিজ্ঞেস করো স্পর্শ।

” অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে ও।” দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে সৌন্দর্য।

” এটাই আশা করেছিলাম।তুমি ওকে কোলে করে নিয়ে এসো আমি ভাবীকে খবরটা দিয়ে আসছি।”

” ঠিক আছে যা।”

স্পর্শ তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে যায়।সৌন্দর্য মেহেককে সাবধানে কোলে তুলে নেয় আর বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে।

বোনকে এই অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে যায় সৃষ্টি।

” সৌ,আদু মৃদুর কি হয়েছে?”

” ভাবী ওসব পড়ে বলছি আগে ওকে রুমে নিয়ে যেতে হবে।” সৌন্দর্য বলে।

” হ্যাঁ ঠিক বলেছো।তুমি ওকে রুমে নিয়ে শুয়ে দাও,আমি আসছি।”

সৌন্দর্য মেহেককে রুমে নিয়ে শুইয়ে দেয়,পেছন পেছন স্পর্শও আসে।কয়েক সেকেন্ড পর তাড়াহুড়ো করে সৃষ্টিও আসে।সে একপলক মেহেকের দিকে তাকিয়ে সৌন্দর্যকে প্রশ্ন করে কি হয়েছে।সৌন্দর্য যতটুকু আন্দাজ করতে পেরেছে সে ততটুকুই সৃষ্টিকে বলে।সৌন্দর্যের কথা শুনে সৃষ্টি বুঝতে পেরে যায় আজ তার বোন অনেক বড় বিপদের মুখ থেকে ফিরে এসেছে।মেহেক যে এরকম কিছুর সম্মুখীন হয়েছে এটা জেনে সৃষ্টির চোখ ভিজে যায়।

.
.
.

—- কি সোনা যাবে নাকি?

—- চলো একটু মসতি করে আসি।

” প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন,আমাকে ছেড়ে দিন আমি যাবোনা আপনাদের সাথে।একটু দয়া করুন আমার উপর।না কাছে আসবেন না,আসবেন না কাছে।না….না….না…..।”

” মৃদু,মৃদু কি হয়েছে?মৃদু?”

ঘুমের মধ্যে চিৎকার করছে মেহেক।সৃষ্টি তাকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করছে।আচমকাই মেহেক চোখ খুলে উঠে বসে।হাঁপাছে সে,মেহেক পাশে ফিরে সৃষ্টিকে দেখে জলদি তাকে জরিয়ে ধরে আর কান্না করতে শুরু করে।

” আপু,আমাকে বাঁচা।ওরা….ওরা আমাকে নিয়ে যাবে আপু।আমাকে বাঁচা।”

” শান্ত হ মৃদু,শান্ত হ।দেখ এখানে কেউ নেই,কেউ নেবে না তোকে।শান্ত হ।” মেহেক মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে সৃষ্টি।

” আপু…..ওরা….আমার….সাথে……” কান্নার কারণে আর কিছু বলতে পারেনা মেহেক।সৃষ্টিও কিছু না বলে মেহেকের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।

বিকেলবেলা,

চুপচাপ আকাশের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক।কাল রাতের ঘটনা সে এখনো বুলতে পারিনি,ছেলেগুলোর প্রতিটা কথা তার কানে বাজছে এখনো।

” একা একা ছাদে কি করছো?”

কারো কথা শুনে মেহেক পেছন ফিরে তাকাই।দেখে সৌন্দর্য আর স্পর্শ এসেছে।মেহেক কিছু না বলে মুচকি হেসে আবারো আকাশ দেখতে থাকে।সৌন্দর্য তার কথার জবাব না পেয়ে মেহেকের সামনে এসে দাঁড়ায়,স্পর্শ অন্যদিকে চলে যায়।

” শরীর কেমন আছে তোমার?”

” আছে বেশ।” ছন্নছাড়া হয়ে জবাব দেয় মেহেক।

মেহেকের কথার জবাব শুনে সৌন্দর্য বুঝতে পেরে যায় মেহেক এখনো কাল রাতের কথাটা ভাবছে।সৌন্দর্য আর কিছু না বলে চলে যেতে নিলে মেহেকের কথা শুনে থেমে যায়।

” কাল আপনি ওই সময় ওখানে কি করছিলেন?”

মেহেকের কথা শুনে সৌন্দর্য থমকে যায়।সে কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে—

” আসলে আমি কিছু কাজের জন্য ওই রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম।তখন দেখলাম রাস্তায় তুমি ছুটছো।”

সৌন্দর্যের কথা মেহেকের বিশ্বাস হলেনা বটে তবেও সে বললো—

” ধন্যবাদ আমাকে হেল্প করার জন্য।” তারপর একবার স্পর্শের দিকে তাকিয়ে বলে ” মিস্টার স্পর্শকেও আমার তরফ থেকে ধন্যবাদ দিয়ে দেবেন।” কথাটা বলে মেহেক নিচে নেমে যায়।

মেহেক চলে গেলে স্পর্শ একবার শান্তদৃষ্টিতে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।স্পর্শ এতোক্ষণ তাদের কথায় শুনছিল।স্পর্শের তাকানো দেখে সৌন্দর্য অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়।
__________________________________________

” না আপুনি আজ ভার্সিটিতে যেতেই হবে।এমনিতেই অনেকদিন ধরে যায়নি।”

” আর কিছুদিন রেস্ট নিলে হয়না।আচ্ছা কাল থেকে যায় আজ অন্তত বাসায় থাকায়।”

” না আপুনি সামনে পরীক্ষা।”

” আজ তোর সাথে বিশেষ কেউ দেখা করতে আসবে।”

” কে আসবে?আর আসলেও ওনাদের কিছুক্ষণ বসতে বলবি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে যা তবে টিউশনে যাস না।ভার্সিটি থেকে সোজা বাড়িতে চলে আসবি।আজ তোর সাথে স্পেশাল কেউ দেখা করতে আসবে।”

” যেভাবে বলসিস কেন আমাকে কেউ দেখতে আসবে।”

” সেরকমই কিছু মনে কর।”

” কি?”

” আরে মজা করছি।আচ্ছা সেসব ছাড় তোকে যেটা বলেছি সেটা মনে রাখবি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে বাবা।এখন বাই,নয়তো দেরি হয়ে যাবে।”
.
.
রিফার সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনের দিকে আসছে মেহেক কিন্তু তখনই ঘটে যায় এক অঘটন।আপুর কথা না শুনে ভার্সিটিতে এসে যে এমন ফল ভোগ করতে হবে সেটা মেহেক কখনই ভাবতে পারেনি।যদি আগে থেকে জানতো তবে সে আজ কোনমতেই ভার্সিটিতে আসতোনা।

চলবে……..