কাশফুলের মেলা পর্ব-০২

0
390

#কাশফুলের_মেলা
#পর্ব_২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরের এক প্রান্তে ইশান আরশিকে পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু কোথায়ও নেই সে। মায়ের কথা অনুযায়ি ইশান আশেপাশেই ওকে খুজছে। জয়া আরশিকে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেছিলো মিনিট পাঁচেক লাগে ওদের বাসায় যেতে কিন্তু ইশান আরশিকে খুজতে খুজতে দুই মাইল দূরে চলে এসেছে।ব্লক করে দেওয়া নাম্বারটা আনব্লক করে সে অনবরত আরশিকে ফোন আর মেসেজ করে যাচ্ছে কিন্তু ফলাফল শুণ্য।
একরাশ রাগ আর অভিমানে পুনরায় বাড়ি ফিরে এলো সে।

এতটুকু ভেবেই চোখের জল ফেলল ইশান। আরশিকে পাওয়ার কথা সে একেবারে ভুলে গিয়েছিলো। যে মনটা সর্বদা আরশিকে দেখার জন্য চটপট করতো,ব্যাকুল হয়ে থাকত সেই মন থেকে আরশিকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছিলো।নিয়তি আবার তাদের এক করে দিলো। ইশান কাঁপাকাঁপা পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলল।দরজার পাশে দেয়ালে মাথা টেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে আরশি। মুখে কালো কালো দাগ পড়ে গেছে কান্না করার ফলে।গায়ের শাড়িটাও এলোমেলো হয়ে গেছে,কুচিও হাল্কা খুলে গেছে।ইশানের আরশিকে দেখে কেমন যেন মায়া মায়া জন্মে গেলো সে আরশিকে কোলে নিতে গিয়েও থেমে গেলো।

—-নাহ ওকে আমি টাচ করতে পারবনা।হাত ধরতাম বলেই চরিত্রহীন বলতো আর এখন কোলে নিলে তো,,,,
ইশান আরশির সামনে হাঁটু ঘেরে বসে ওকে ডাকতে লাগল।

—-এই মেয়ে এই!উঠো।

ইশানের ডাক শুনে আরশি পিটপিট করে চোখ তুলে তাকালো।ইশান খেয়াল করলো আরশির চোখ ফুলে গেছে হয়তো বেশি কান্না করার কারনে।

—-এই উঠে এসে রুমে শুয়ে পড়ো।

—-আমি রুমে শুলে তুমি কোথায় ঘুমাবে?

—-এসব নিয়ে তোমায় চিন্তা না করলেও চলবে৷

আরশি উঠতে যাবে ওমনি ওর শাড়ির সব কুঁচি খুলে গেলো।কুচি খুলে যাওয়াতে পেটও দেখা যাচ্ছে।একরাশ ভালো লাগা আর মুগ্ধতায় ইশান আরশির পেটের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। ইশানকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরশি তারাতাড়ি শাড়িটা টেনে পেট ঢাকলো
ইশান একবার ভ্রু কুঁচকে আরশির দিকে তাকিয়ে তারাতাড়ি পিছন ফিরলো।বড় বড় কয়েকটা শ্বাস নিয়ে টেনে বলল,,,,,

—-পরবর্তীতে কাপড়চোপড় ভালো করে মেইনটেইন করবে৷

কথাটা বলে সে আরশির সামন থেকে চলে গেলো।টলমল হয় রুমে ঢুকে চারিদিকে একবার চোখে বুলালো রাতে পড়ে ঘুমানোর মতো কিছু আছে কী না? না নেই চারিদিকে শুধু ইশানের জামা কাপড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আরশি নিজের পরনে থাকা শাড়িটাকেই ভালো করে সেফটিপিন দিয়ে আটকে নিলো।খিদাও লেগেছে অনেক।রাত সোয়া বারোটা বাজে মাথা ব্যাথাও করছে।আরশি আর কোনো উপায় না পেয়ে খাটে শুয়ে পরলো।

ইশান প্লেটে করে ভাত আর মাংসের ঝোল এনে রুমে ঢুকলো।প্লেটটা সেন্ট্রার টেবিলের উপর রেখে খাটের দিকে তাকিয়ে দেখলো আরশি এলোমেলো হয় ঘুমিয়ে আছে।ইশানের ইচ্ছে হচ্ছে আরশির চুল গুলোতে একবার হাত বুলিয়ে দিতে। কপালে পড়ে থাকা বেবি হেয়ারগুলোকে ঠিক করে দিতে।কপালে একটা একটা চুমু দিতে কিন্তু সে পারবেনা। ইশান ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ চোখবন্ধ করে দুইহাত মুঠো করে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করলো। কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম হাত দিয়ে মুছে আরশির কাছে গিয়ে ওকে ডাক দিলো।

—-এই আরশি উঠো উঠো

আরশি শুধু মাত্র তখন ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেছিলো যেটাকে কাঁচা ঘুম বা গভীর ঘুম বলে। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সে চোখ মেলে তাকালো।ইশানকে ওর সামনে দেখে কিছুটা হকচকিয়ে গেলো।জলদি করে শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে উঠে বসলো।
ইশান আরশির দিক থেকে চোখ সরিয়ে বলল,,,,

—-টেবিলে খাবার রাখা আছে ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে শুয়ে পরো।কেউ আর ডাকবেনা।আর তোমার সব কাপড়চোপড় মা’র রুমে আছে। সকালে সব কাপড় পেয়ে যাবে।

—-তুমি খেয়েছো???

—-আমি খাওয়া না খাওয়া তাতে তোমার কী?আর শুনো আরশি তুমি আমাকে তুমি করে বলবেনা।

—-তাহলে কী বলব?

—-আপনি করে বলবে কারন আমি তোমার,,,,

—-কী????

—-নাথিং।আর বেশি প্রশ্ন না করে এসে খাবার খেয়ে আমায় উদ্ধার করো।তা নাহলে তো কয়দিন পর পাড়ায় পাড়য় রটিয়ে পরবে ইশান খারাপ ছেলে।

আরশি ভেঙচি কেটে উঠে বাথরুমে চলে গেলো। ইশান ফ্লোরে একটা বালিশ ফেলে দিলো আর নিজে খাটে শুয়ে পরলো।মুখটা হাত দিয়ে মুছতে মুছতে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসছিলো আরশি।ফ্লোরে বালিশ আর খাটে ইশানকে শুয়ে থকতে দেখে সে ভালোভাবে বুঝতে পারলো তার জায়গা মেঝেতে। কোনো রকমে খাবারটা খেয়ে মেঝেতেই সে শুয়ে পরলো।

সকালে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভাঙলো ইশানের। নিবুনিবু করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখলো ওর বুকে আরশি মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। ইশানের মনের মাঝে ভালো লাগা কাজ করছে।এই দিনটির জন্য সে কতো অপেক্ষা করেছিলো।হঠাৎ কী মনে হতেই সে আরশিকে দুহাত দিয়ে টেলে দূরে সরিয়ে দিলো।কাঁধের কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে আরশিরও ঘুম ভেঙে গেলো। সেও ইশানকে তার কাছে দেখে চমকে গেলো।

—-তুমি নিজে জেনে আমাকে কষ্ট দিতে চাও তাই না??

—-আমি আপনাকে কখন কষ্ট দিলাম?।

—-তোমার সাহস হয় কী করে আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর।এই বুকে মাথা রাখার অধিকার তুমি হারিয়েছো আরশি।তোমাকে আমি মেঝেতে শুয়ার জন্য বলেছি কিন্তু তুমি আমার খাটে কী করছো?।

—-ওই আসলে আমি মেঝেতে কখনো ঘুমাইনি তো তাই শরীরটা ব্যাথা করছিলো বলে খটে গিয়েছিলাম কিন্তু আপনার বুকে কীভাবে মাথা রাখলাম বুঝতে পারিনি৷ আমি দুঃখীত।এমন ভুল আর কক্ষনো হবেনা। শরীর হাজার ব্যথা করলেও আমি মেঝেতেই শুবো।

আরশি মুখটা গোমড়া করে বাথরুমে চলে গেলো। ইশান চোখ বন্ধ করে আছে হয়তো আরশিকে সে একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।কিন্তু সেই বা কী করবে এতো কাছে ভালোবাসার মানুষটাকে দেখলে যে কেউই ইমোশনাল হয়ে যাবে প্রিয় মানুষটাকে একবার ছুঁয়ে দেখবার শখ জাগবে।
ইশান এসব ভাবতে ভাবতে আবারও ঘুমিয়ে গেলো।
আরশি অনেক্ষন ধরে বাথরুমে দাড়িয়ে আছে।এক শাড়ি পড়ে থাকতে থাকতে এখন শরীর চুলকাচ্ছে। শাওয়ার করতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু তার কাপড়ই তো নেই।আস্তে আস্তে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে সে ইশানের কাবার্ড খুললো যদি কিছু পড়ার মতো পাওয়া যায় তো। কাবার্ডের সব জায়গা দেখলো সে কিন্তু কোথায়ও কিছু নেই পড়ার মতো৷ হঠাৎই তার চোখ পড়লো কাবার্ডের এক কোনার দিকে যেখানে দুটি শাড়ি রাখা একটা লাল আর আরেকটা নীল সাথে আবার ম্যাচিং করে ব্লাউজও আছে। এইদুই কালার আরশির খুব পছন্দের সে খুশি মনে নীল শাড়িটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।

চোখে মুখে পানির ছিটে পরতেই ইশানের ঘুম ভেঙে গেলো।দুই চোখ ঢলে সামনে থাকাতেই দেখলো আরশি চুল ঝারছে।আর তার চুলের পানিই ইশানের চোখে মুখে পড়ছে।পিঠ বেয়ে বিন্দু বিন্দু পানির কনা নিচে গড়িয়ে পরছে।বেবি হেয়ার গুলো লেপ্টে কপালে বসে আছে।ইশান একমুহূর্তের জন্য ঘোরে চলে যাচ্ছে।আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আরশিকে।হঠাৎ এভাবে আরশিকে জড়িয়ে ধরাতে আরশি হকচকিয়ে গেলো পাশাপাশি রাগও হচ্ছে তার।৷ ইশানের হাত পেট থেকে সরানের চেষ্টা করছে কিন্তু ইশান নড়ছে অব্দি না।আরশি আর কোনো উপায় না পেয়ে ইশানের হাতে চিমটি বসিয়ে দিলো। হাতে চিমটি কাটাতে ইশান আরশিকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো। এতক্ষন কী করছিলো সেটা ভেবেই নিজের চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।আর এদিকে আরশি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করছে দেখে তার আরও ভিষণ রাগ হচ্ছে৷ সে আরশির দিকে দু কদম এগিয়ে গিয়ে বলল,,,

চলবে,,,,