কুঁড়েঘর পর্ব-০৫

0
497

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
। পর্ব ০৫ ।

নিশাদের খুব পছন্দের একটা গান শুনতে শুনতে রিধিশার দিকে চোখ পড়লো তার।
সাদা ড্রেস পড়েছে কানে এক জোড়া সিলভার ঝুমকা। চুল গুলো ঝুটি করে ভার্সিটি থেকে দেওয়া ক্যাপ পড়া। সব রঙ বেরঙ্গের মানুষের মধ্যে রিধিশাকে অন্যরকম মনে হলো নিশাদের কাছে।
সাদা মাটার মধ্যে অসাধারণ। বাসের বাইরের বাতাসে রিধিশার বাধা চুল গুলো উড়ছে হালকা হালকা।
নিশাদ চোখ সরিয়ে নিলো রিধিশার থেকে।
একঘন্টার মতো হয়েছে বসেই আছে। কেমন যেনো বোরিং লাগছে তার কাছে।

রিধিশার সাথে ঝগড়া করার ইচ্ছে হলো নিশাদের।
নিশাদ রিধিশাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো
” কি যে দিন কাল এলো! যার তার পাশে বসায় পুরো জার্নিটা খারাপ গেলো এবার। এরকম মানুষ কোথা থেকে আসে বুঝিনা”
রিধিশা রেগে নিশাদের দিকে তাকালো।
” এই আমি এখন আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি যে, আমার পেছনে লাগছেন?”

নিশাদ অবুঝ ভঙ্গিতে ভ্রু কুঁচকে বললো
” আমি তোমার পেছনে লাগলাম? আমি তো তোমার পাশেই বসে আছি আর তোমার সাথে কথা বলারই কোনো ইচ্ছে নেই আমার ঠিকাছে? আমার তো মনে হচ্ছে তুমিই কথা বলতে চাইছো!”
রিধিশা অবাক হয়ে বললো
” আমি কথা বলতে চাইছি? আপনার মতো ছেলের সাথে কথা বলার থেকে ভালো গলায় ফাসি দেই।”

নিশাদ হেসে বললো
” তো দাও না কেনো ফাসি? আমিও শান্তি পাই। তোমাকে দেখলে ইচ্ছে করে পানিতে চুবিয়ে দেই।”
রিধিশা তাচ্ছিল্য স্বরে বললো
” আপনার তো সবাইকেই পানিতে চুবাতে ইচ্ছে করে।”

নিশাদ আবারও কানে হেডফোন গুঁজে দেয়। কখন যে পৌঁছবে গন্তব্যে! জ্যামের জন্যে কিছুক্ষণ পর বাস থেমে যায়। রিধিশা বিরক্ত হলো জ্যামের জন্য। এমনিতেই বাসের বিরক্তির গন্ধের জন্য জার্নি বিরক্ত লাগে তার কাছে তার উপর জ্যাম! রিধিশা ডানে, বায়ে দু-দিকেই চোখ ঘুরিয়ে দেখলো কি কি দেখা যায়।
নিশাদ মুখে মাক্স পড়ে বসে আছে। সাথে অসহ্য এক গরম লাগছে নিশাদের।

ধীরেধীরে বাস এগোতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জ্যাম সরলে বাস ছাড়ল। রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে দেখে মাথা হেলিয়ে ঘুমিয়ে গিয়েছে। রিধিশা চোখ ঘুরিয়ে বাইরে তাকালো আবারও। জোতির উপর বিরক্তও লাগলো। বান্ধবীকে রেখে অপরিচিত ছেলের সাথে বসে রয়েছে। একটু খোঁজ নিলো না মেয়েটা!

.

বাসের ঝাঁকিতে শান্ত হয়ে বসা যাচ্ছে না। শক্ত হয়ে বসে থাকতেই চাইলেও সামনের দিকে ঝুকে যাচ্ছে।
বাসের ঝাঁকিতে নিশাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। চোখ বড় বড় করে নিশাদ কাধ ঝাঁকিয়ে সোজা হয়ে বসলো।
রিধিশা চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বারবার নিশাদের দিকে তাকাচ্ছে।
নিশাদ কিছুক্ষণ খেয়াল করে বললো
” কি এভাবে কি দেখো তুমি? আমার মুখে কি স্টিকার লাগানো?”

রিধিশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো
” বাস কি থামবে সামনে বা পড়ে?”
নিশাদ মেকি হেসে বললো
” না ম্যাম কারো জন্য এই বাস থামবে না।” রিধিশা মুখ বাকালো। পানি পিপাসার সাথে খুধাও পেয়েছে। খাবার না খেলেও পানিটা আবশ্যক তার জন্য।
নিশাদ রিধিশার শুকনো মুখ দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো
” কি? এভাবে মুখ শুকিয়ে বসে আছো কেনো? কিছু দরকার?”

“দরকার তবে সেটা আপনার ভাবতে হবে না। বাস থামাতে পারলে এক্তু থামাতে বলুন!”
নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে বললো
“তোমার মতো মেয়েদেরই উপকার করতে নেই। বেয়াদব মেয়ে! না বললে বাস থামানোই হবে না।”
রিধিশা রেগে বললো
” পানি চাই, পানি। আমি পানি আনতে ভুলে গিয়েছি। এবার দয়া করে থামান!”

” তো এটা বললে কি তোমার পানি খেয়ে ফেলতাম নাকি আমি? যত্তসব Uncultured মেয়ে একটা পানির বোতল আনতে ভুলে যায় আবার ভাবের ভার কমেনা তাদের।”
রিধিশা রেগে বললো
” আপনি কিন্তু বেশি বেশি করছেন! আপনাকে আমি পানি কিনে দিতে বলিনি।”

নিশাদ রিধিশার কথায় পাত্তা দিলো না। উঠে সামনে গেলো। রিধিশা ভাবলো বাস থামাতে গিয়েছে কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। নিশাদ দুটো ছোট পানির বোতল নিয়ে আসলো। রিধিশাকে বললো
” এই যে বোতলটা দিচ্ছি! এটা কিন্তু ভার্সিটি থেকে দেওয়া। তোমার জন্য আনিয়ে রেঝেছিলাম আমি, এসব ভুলেও ভাববে না। আমি আমার শত্রুদের হেল্প করি না কখনো।”
রিধিশা বিরক্ত হয়ে তাকালো। নিশাদ নিজের সিটে রাখলো একটা আরেকটা রিধিশার কাছে এগিয়ে দেয়। রিধিশা কেড়ে নেয় বোতলটা।
নিশাদ তার জ্যাকেট ঠিক করে সিটে বসে বিড়বিড় করে বললো
” মনে হচ্ছে সব পানি খেয়ে ফেলছি আমি!”
.

রিধিশা ঘুমে বিভোর হয়ে আছে। একটু আগেও একটা ঝাঁকিতে মাথায় বারি খেয়েছে জানলার সাথে কিন্তু তাতে কি? ঘুমের ঘোর তো একদমই ছাড়ছে না রিধিশাকে।
আরেকবার বারি খেতেই নিশাদের রিধিশার দিকে চোখ পড়লো। রিধিশার মাথাটা জানলার কাছ থেকে সরিয়ে সোজা করে রাখতেই রিধিশার মাথাটা নিশাদের কাধে পড়লো।
” এখন পর্যন্ত ইচ্ছে করে কাউকে হাত ধরার সুযোগ দিলাম না আর মেয়েটা শত্রু হয়েও কাধে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে। ঘুম ভাঙ্গার আগেই মাথা সরিয়ে ফেলবো নাহলে ভাব নিয়ে বলবে আমি ওর ঘুমের সুযোগ নিয়েছি।”

____________

দুঘণ্টা পর তিনটে বাস থামলো।
রাঙ্গামাটি এসে পড়েছে সবাই। নিশাদ বাইরে বেরিয়ে একে একে সবাইকে নামতে বলছে। রিধিশা বাস থেকে নেমে একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো। চারপাশে থাকা পাহাড় গুলো দেখে মনে মনে প্রজাপতি উড়তে শুরু করেছে।

রিধিশার পাহাড় খুবই পছন্দের। রিধিশা কাছ থেকে সাগর বা পানি দেখলে খুব ভয় পায় তাই তার মা, বাবা আগে সব সময় পাহাড়ে ঘুরতে নিয়ে যেতো।
রিধিশা মনে মনে হাসলো এখন সব আগের স্মৃতি হয়ে রয়েছে। দেড় বছর হলো এখন আর অহরহ পাহাড় দেখা হয় না।

” কিরে এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো তুই?”
রিধিশা জোতির ধাক্কায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।
রিধিধা ভ্রু কুঁচকে বললো
” তুই এতোক্ষণ পর কোথা থেকে আসলি? তোর ওই পার্টনার কোথায়?”
” তুই রাগ করেছিস রিধি! আরে সে বসেছিলো তো তাই আর না করতে পারিনি। যাক বাদদে, তোকে কিন্তু আজকে খুবই সুন্দর লাগছে। ড্রেসটা কবে কিনেছিস? আমাকে দেখাসনি তো!”

রিধিশা জোতির সাথে হাটতে হাটতে বললো
” পরীক্ষা শেষে ঢাকা আসার আগে আম্মু অনেক কিছু কিনে দিয়েছিলো। পড়া হয়নি তাই দেখানো হয়নি তোকে।”
” হ্যা তাই তো! তুই যে এসেছিলি তুই কতো বড় এক ব্যাগ নিয়ে এসেছিলি আমি পড়ে জিজ্ঞেস করবো ভেবে একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। যাই হোক তোকে দারুণ লাগছে।”

” এখানে দাঁড়িয়ে কি গল্প করতে এসেছো? সবার সাথে না থেকে হারিয়ে গেলে কি তোমাদের খোঁজার জন্য সোর্স লাগাবো নাকি?” নিশাদের কথায় রিধিশা রেগে জোতিকে নিয়ে বড় বড় পা ফেলে সবার কাছে চলে গেলো।
নিশাদ চারপাশ দেখতে দেখতে একা একা হাটছিলো শান্তিতে। হঠাৎ কোথা থেকে মিলি ছুটে আসলো।

” নিশু! তোমাকে আমি এসে খুঁজেই পেলাম না কোথায় ছিলে তুমি? জানো কতো প্ল্যান করেছিলাম আমি। আমি তুমি পাশাপাশি বিসে পুরো জার্নি ফিল করবো আরো কতো কি, কিন্তু তোমাকেই পেলাম না।”
নিশাদ জোরপূর্বক হেসে বললো
” আমিও তোমাকে দেখিনি কোথায় যে ছিলে তুমি!”
মিলি আহ্লাদী স্বরে বললো
” আরে নিশু কষ্ট পেয়ো না যাওয়ার সময় আমরা একসাথেই যাবো।”

নিশাদ দাঁতে দাঁত চেপে উপরে মুচকি হাসলো। এই ভার্সিটিতে আসার পর থেকেই এই মেয়ে চিপকে আছে নিশাদের সাথে। কতোশত চেষ্টা করেও এই মেয়েকে দূড়ে সরাতে পারেনি। নিশাদ মিলির উপর বিরক্ত ছাড়া আর কিছুই না। মিলি আহ্লাদীপনা ইগনোর করার চেষ্টা করে সব সময়। মিলি বাস ছাড়া এক মিনিট আগে এসেছিলো দৌঁড়ে দৌঁড়ে। মিলিকে দেখেই নিশাদ বাসে উঠেছিলো তাড়াতাড়ি।

সবাই আগে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো। খাওয়া দাওয়া করতে থাকে সবাই সবার মতো। কিন্তু নিশাদ শান্তিমতো খেতে পারছে না। তার সব ছেলে বন্ধুদের মাঝেও মিলি নিশাদের পাশে বসে একবার ছবি তুলছে তো খাচ্ছে। নিশাদ ভেবে পাচ্ছে একে সরাবে কিভাবে?
নিশাদ রেহানকে ইশারা করে অনেকবার কিন্তু রেহানও বুঝতে পারেনি প্রথমে। সূর্য ফিসফিস করে বলার পর বুঝতে পারে।
” আরে মিলি আমি আসার সময় দেখেছিলাম রেস্টুরেন্টের বা পাশে একটা খুব সুন্দর জায়গা আছে। এখানে তো অনেক ছবি তুললে তাহলে এখন সেখানে গিয়েও ছবি তুলে এসো! আমাদের তো পরে যাওয়া হবে না সেখানে তাই বললাম আরকি।”
রেহানের কথায় মিলি খুশি হয়ে তার ফ্রেন্ডদের নিয়ে বেরিয়ে গেলো লাফিয়ে লাফিয়ে।

নিশাদ সস্তির নিশ্বাস ফেলে বন্ধুদের সাথে আনন্দে মেতে উঠে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লো।

চলবে……..