কৃষ্ণডাহুক পর্ব-১২+১৩

0
227

#কৃষ্ণডাহুক – ১২
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)
ভোর হতেই সকলে পরিকল্পিত স্থানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিলো। তাদের পরিকল্পনা এতো দ্রুত হয়েছে যে মীরা হ্যাঁ বা না বলার সুযোগই পেলো না! পেলেও সকলে তাকে কোনো না কোনো ভাবে জোর করে নিয়ে যেতো।


শাল ভালো করে শরীরে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমু ঘুমু চোখে পরিবেশে এক নজর চোখ বুলালো মীরা। চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। দূর দূর নেই কোনো কিনারা। কুয়াশায় সম্পূর্ণরূপে আচ্ছন্ন চারদিক।

শীতল হাতের স্পর্শ কাঁধে পেয়ে মীরা ঘাড়কাত করলো। আদ্রিককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে উঠলো। আদ্রিক গম্ভির স্বরে বলে,’ এইভাবে স্বং সেজে না দাঁড়িয়ে থেকে গাড়িতে যেয়ে বসো। ‘

মীরা গাড়ির দিকে তাকালো। সকলে ঠেলাঠেলি করে জায়গা দখল করে বসেছে কোনো ভাবে। মীরা অসহায় দৃষ্টি আদ্রিকের দিকে ফেলে বলল,’ আমি না গেলে হয় না? ‘

আদ্রিক ধমকে উঠলো, দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’ কি বলেছি শুনতে পাওনি? যাও গাড়িতে উঠে বসো। ‘

মীরা গোমড়া মুখে বলল,’ বসার জায়গা থাকলে না বসবো। ‘

‘ আমার গাড়িতে বসো। ‘

আদ্রিকের কথায় মীরা কিয়ৎ চমকে তার দিকে তাকালো। আদ্রিকের গাড়ি থাকতে সবাই ঠেলাঠেলি করে কেনো এক গাড়িতে বসেছে?

‘ যাও বসো। ‘ মৃদু স্বরে বলল আদ্রিক

মীরা প্রশ্ন করার সাহস পেলো না। তটস্থ পায়ে গাড়িতে যেয়ে বসলো। মীরার বসতেই আচানক অরিন এসে বলল,’ মীরা তুমি বরং ওখানে যেয়ে বসো,আমি আদ্রিকের সাথে বসি। ‘

মীরা বিনা বাক্য ব্যয় করে উঠে যেতে নিলে মীরার হাত ধরে ফেললো আদ্রিক৷ গরম চোখে মীরার দিকে তাকিয়ে বলল,’ আমি তোমাকে উঠতে বলেছি? চুপচাপ বসো। ‘

মীরা শুকনো ঢোক গিলে অরিনের দিকে তাকালো। অরিন চোখের ইশারায় মীরাকে সরে যেতে বলল। মীরা নিজের ছাড়িয়ে যেতেই আদ্রিক মৃদু স্বরে ধমকে উঠলো মীরা। বলল,’ আমি তোমাকে একবারো যেতে বলেছি? ‘

বলেই অরিনের দিকে তাকিয়ে বলল,’ তুই উঠে এসেছিস কেনো? যা গিয়ে বস। মীরা আমার সাথেই বসবে। ‘

আদ্রিকের কথা গুলো অরিনের কাছে অপমান জনক লাগলেও সৌজন্য বজিয়ে রাখতে বলল,’ মীরা এখানে তোর সাথে একা থেকে কি করবে আদ্রিক? ওইখানে সবাই আছে মীরাও ওদের সাথে থেকে মজা করুক! তুই শুধু শুধু মেয়েটার ইঞ্জয়মেন্ট নষ্ট করছিস। ‘

‘ আই সেইড গো। ‘ আদ্রিকের কথা শুনে অরিনের ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে গেলো। থতমত মুখে আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আদ্রিক মীরাকে থমথমে গলায় বলল,’ গাড়িতে যেয়ে বসো। ‘

‘ অরিন আপনার হবু স্ত্রী! তার সাথে এইরকম আচরণ করা উচিত হয়নি আপনার। ‘

‘ কথা বাড়িও না মীরা। ‘

মীরা লম্বা শ্বাস টেনে গাড়িতে উঠে বসলো। আদ্রিকের সাথে কথা বাড়াতে যেনো মন চাইলো না তার।


‘ ইয়ামিন তোর বউ একটাও কাজ করে না, সারাদিন বিছানায় আর এর ওর সাথে ফোনে কথা বলে। তুই কিছু বল। ‘

বিরক্তিতে ইয়ামিনের কপাল কুঁচকে গেলো, ঝাঝঁমিশ্রিত গলায় বলল,’ তোমার কথাতেই তানহাকে বউ করে এনেছি! এখন কেনো এতো সমস্যা তোমার তাকে নিয়ে? ‘

আরমিনা বেগম আঁচলে মুখ ঢেকে ফ্যাচফ্যাচ শব্দ তুলে কেঁদে দিলেন, মন্থর গলায় বললেন,’ মীরা কি ভালো আছিলো! আমার কথার কোনো খেলাফ করতো না! আর এখন তুই একটা কালসাপ বউ করসোস। ‘

‘ মেয়েটা তোমার পছন্দের ছিলো আর তানহা এখন গর্ভবতী, বাড়ির কাজ ও করতে পারবে না। ‘

ছেলের এহেন রূপে আরমিনা বেগম হতবাক, নির্বাক ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলেন! যে ছেলে ছিলো তার বাধ্য আজ তার মুখের উপর কিভাবে জবাব দিলো ইয়ামিন?

‘ মা, আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে দিয়েন তো। ‘

বিরক্তি মাখা কণ্ঠে যেতে যেতে বলল তানহা। হাতে ফোন বহমান। ইয়ামিন তানহাকে ধমকে বলল,’ তুমি নিজে বানিয়ে নিতে পারো না তানহা? ‘

‘ ব্যস্ত আছি বলেই তোমার মাকে বানাতে বলেছি নাহলে আমি জীবনেও তাকে এক গ্লাস পানিও ঢেলে দিতে বলিনি। ‘

তানহার কথায় চোয়াল হা করে তাকিয়ে রইলেন আরমিনা! কিভাবে ছেলের সাথে তাকে মিথ্যে প্রকাশ করলো মেয়েটা! তবে কি মীরাকে বাড়ি থেকে বের করে তিনি কোনো ভুল করেছেন? ‘


‘ গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ‘

লম্বা শ্বাস টেনে বলল আদ্রিক। মীরা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’ এখন কি করবো আমরা? আমাদের কি এই রাস্তাতেই থাকতে হবে? ‘

‘ তাছাড়া উপায় নেই। ‘

আদ্রিকের কথায় হচকিয়ে গেলো মীরা। ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,’ কি বলছেন? শুধু শুধু ভয় দেখাবেন না। ‘

‘ ভয় না, সত্যিই! এমন একটা রাস্তায় এসে আটকিয়েছি যে রাস্তায় দিনে মাত্র ২/৩ টা গাড়িই চলাচল করে। ‘

‘ আদ্রিকাকে ফোন করুন। ‘

আদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,’ চেষ্টা করেছিলাম নেটওয়ার্ক পাচ্ছি না। এতোক্ষণে মনে হয় আদ্রিকারা পৌঁছেও গিয়েছে ওইখানে। ‘

মীরা গাড়িতে ধপ করে বসে পড়লো।

‘ এখন কি হবে? ‘

‘ কি আর হবে?এখানেই থাকতে হবে আমাদের এখন। ‘

আদ্রিকের কথায় মীরা বলল,’ আপনি গাড়ি ঠিক করতে পারেন না? ‘

‘ পারলে এখানে থাকতে হতো না এখন আমাদের। ‘

‘ কিছু তো করতেই পারেন। ‘

আদ্রিক মীরার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলল,’ তুমি যেইখানে আছো আমিও সেইখানেই অবস্থান করছি। ‘

অস্বস্তিতে মীরা হাঁসফাঁস করতে লাগলো। আদ্রিক মীরার দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,’ এটা খেয়ে নাও, ভালো লাগবে। ‘

মীরা ছোঁ মেরে আদ্রিকের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে, ঢক ঢক করে বোতলের সম্পূর্ণ পানি শেষ করে ফেললো। তবুও যেনো গলা শুকিয়ে এসেছে তার। আদ্রিকের দিকে তাকিয়ে হতাশ স্বরে বলল,’ দু:খিত সব পানি খেয়ে ফেলার জন্য, আসলে ভয়ের জন্য অনেক তৃষ্ণা পেয়েছিলো। ‘

‘ সমস্যা নেই। ‘

‘ আপনার এখন খাওয়ার জন্য কিছুই নেই! সব আমার জন্য হয়েছে। আমি যদি না আসতাম তাহলে এতো ঝামেলা হতো না। ‘

নতজানু হয়ে অপরাধীর ন্যায় বলল মীরা, আদ্রিক বুকে হাত গুজে বলল,’ দোষ তো তাহলে তোমার একার না আমারো আছে। আমি তোমাকে আমার গাড়িতে বসার জন্য জোর করেছি। আমার জন্যই তুমি এখন এইখানে আমার সাথে আটকা পরে আছো। আমি দু:খিত৷ ‘

‘ দোষ আপনার না, ভাগ্যের! ভাগ্যে ছিলো বলেই এমন হয়েছে। অযথা নিজেকে দোষারোপ করবেন না। ‘

আদ্রিক হেসে বলল,’ তাহলে তুমিও অযথাই নিজেকে দোষারোপ করো না। কারণ খালি দোষ তোমার না আমারো আছে। ‘

এক ঘন্টা পর,

‘ মীরা দেখো কারা জানি এদিকেই আসছে। ‘

মৃদু চিৎকার করে বলল আদ্রিক! মীরা উৎসুক নয়নে তাকালো সেদিকে। এক সাদা রঙা গাড়ি তাদের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। আদ্রিক ও মীরা দ্রুত গাড়ি থেকে নামলো। গাড়িটি তাদের সামনে এসে থামতেই আদ্রিক গাড়ির চালককে বলল,’ আমাদের গাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা এখানে আটকা পরে গিয়েছি। যদি আপনার সমস্যা না হয় তাহলে কি আমাদের লিফট দিতে পারবেন? ‘

লোকটা তার স্ত্রীর দিকে তাকালো। তার স্ত্রী মাথা নাড়িয়ে অনুমতি দিতেই লোকটা বলল,’ মিস্টার, আপনার পাশে কি আপনার স্ত্রী? না মানে দুনিয়া এখন কেমন জানেনই তো! কাউকেই ভরসা করা যায় না৷ ‘

আদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মীরার দিকে তাকালো। মীরা অপ্রস্তুত হয়ে আদ্রিককে বলার অনুমতি দিলো। আদ্রিক ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল,’ জ্বী উনি আমার স্ত্রী, মীরা। ‘

‘ আদ্রিক এখনো আসছে না কেনো? ওরা আবার মাঝপথে কোনো বিপদে পড়লো না তো? ‘

চিন্তিত ভঙ্গিতে আদ্রিকাকে বলল অরিন। আদ্রিকা হেসে বলল,’ যেয়ে দেখো মীরা আর আদ্রিক রাস্তায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। ‘

আদ্রিকার রসিকতা যেনো পছন্দ হলো না অরিনের। অরিন মুখ বাকিয়ে বসলো। আদ্রিকা বুঝতে পেরে বলল,’ তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো, হয়তো ওরা বিশ্রাম নিতে নিতে আসছে তাই দেরী হয়েছে। আদ্রিককে তো তুমি চিনোই! ‘

চলবে?

#কৃষ্ণডাহুক – ১৩
আয়ানা আরা (ছদ্মনাম)

মীরার মন অবাধ্য, অস্থির! অস্বস্তিতে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে সে। আদ্রিক চোখের ইশারায় ভরসা দিলো মীরাকে। মীরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বসলো।

মিত্রা মীরা আর আদ্রিকের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,’ বৌদির মনে হয় অসুবিধা হচ্ছে তাই না দাদা? ‘

আদ্রিক কিছুটা বেপাকে পড়লো! কি উত্তর দিবে সে মিত্রাকে? জোরপূর্বক হেসে বলে,’ হ্যাঁ। ‘

মিত্রা হালকা হাসলো, বলল,’ নিউলি ম্যারিড? ‘

আদ্রিক থমথমে মুখে জবাব দিলো,’ জ্বী। ‘

মিত্রা ঠোঁট কামড়ে বলল,’ তাহলে তো হলোই! বৌদি দাদা কেমন? ‘

মীরা চোখ বড়বড় করে তাকালো মিত্রার পানে। মিত্রা মিটমিটিয়ে হাসছে! মীরা এবার আদ্রিকের দিকে তাকাতেই আদ্রিক খুকখুক করে কেশে দিলো। মীরা তাড়াহুড়ো করে আদ্রিকের সন্নিকটে এসে বলল,’ কি হয়েছে? ‘

মীরার এই আচরণে যেনো দুষ্টুমি করার আরেকটি বাহানা খুঁযে পেলো মিত্রা। নিজের সঙ্গিকে হাত দিয়ে গুতো মেরে বলল,’ সুবত্র দেখলে বৌদি দাদাকে কত ভালোবাসে? আগের জন্মে মনে হয় দাদা খুব ভালো কাজ করেছিলো যে সে বৌদির মতো একজনকে সহধর্মিণী পেয়েছে! ‘

বলেই মুখ টিপে হাসলো মিত্রা। আদ্রিক আর মীরা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে মিত্রার দিকে! হুট করে মীরার লজ্জায় মূর্ছে গেলো! আদ্রিক আড়চোখে মীরার দিকে তাকালো।

প্রায় আধাঘন্টা পর তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে এসে পৌঁছালো! আদ্রিক বলে উঠলো,’ হ্যা এইটাই ধন্যবাদ, বৌদি আর দাদা আমাদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য! আপনারা না থাকলে আমাদের অনেক সাফার করতে হতো আজকে। ‘

মিত্রা ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে,’ ব্যাপার না! তবে দাদা আমরাও কিন্তু এই রিসোর্টেই উঠছি! ‘

‘ হোয়াট এ কয়েসিডেন্স! আরো কিছু মূহুর্ত আপনাদের সাথে কাটানোর সুযোগ পেলাম! ‘

মিত্রা ও সুবত্র আলতো হাসলো। মীরা নিজের ব্যাগ নিয়ে বলে,’ চলুন, সবাই অপেক্ষা করছে। ‘

মিত্রা সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’ সবাই? আপনারা হানিমুনে আসেননি? ‘

আদ্রিক চট করে বলল,’ হানিমুনে নয় আমরা ফ্যামিলি ট্যুরে এসেছিলাম। ‘

তখনই হুট করে অরিন এসে ঝাপটে ধরলো আদ্রিককে। হুহু করে কাঁদতে কাঁদতে বলল,’ আদ্রিক? তুমি ছিলে কোথায়? তুমি জানো আমি কতোটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম? এইভাবে আমাকে কষ্ট দিয়ে কি পাও তুমি! ‘

মিত্রা ও সুবত্রর সামনে আদ্রিককে জড়িয়ে ধরায় ওরা বেশ হলো! মিত্রা বলল,’ দাদা, মেয়েটা কে? ‘

আদ্রিক অরিনকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে,’ চাচার মেয়ে, আমার বোন! একটু বেশিই ভালোবাসে আমাকে তো তাই। ‘

বোন বলায় ভীষণ অবাক হলো অরিন। একবার মিত্রার দিকে তাকিয়ে আরেকবার আদ্রিকের দিকে তাকালো। অত:পর মীরার দিকে তাকিয়ে দেখলো মীরা নতজানু হয়ে আদ্রিকের পাশে গুটিসুটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে।

আদ্রিকের কথায় মিত্রা বলল,’ তাও ভালো তবে এতো ভালোবাসা কখনো কখনো আপনার জীবনে বিষাদের ছায়াও এনে দিতে পারে। এই দিকটা নজরে রাখবেন, দাদা। ‘

আদ্রিক জোরপূর্বক হাসলো। সৌজন্য রক্ষার্থে মীরার হাত ধরে বলল,’ মীরা! তোমার বিশ্রামের প্রয়োজন আমার সাথে রুমে চলো। ‘

মীরার প্রতি যত্ন দেখে রাগে কেঁপে উঠলো অরিন! ক্রোধিত দৃষ্টিতে মীরার দিকে তাকালো। মিত্রা গাঢ় হেসে বলল,’ আপনাদের ভালোবাসায় যাতে কোনো কালসাপের নজর না পরে! সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি। ‘

কথাটা যে তাকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে বুঝতেই অরিন মিত্রার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে হনহন করে চলে গেলো। মিত্রা অরিনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ভেংচি কেটে বলে,’ দাদা, বৌদি, চলুন। ‘

ঘটে যাওয়া সব ঘটনা সবাইকে খুলে বলল সবাই যেনো স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে, অরিন যেনো প্রাণ ফিরে পায়! মিত্রার তখনকার কথায় অরিন ভীষণ অবাক হয়েছিলো।

‘ তোরা সবাই মিত্রা বৌদি আর সুবত্র দাদার সামনে এমন আচরণ করবি যাতে তারা ভাবে মীরা আমার স্ত্রী! কারণ আমি চাই না তারা সত্যিটা জানতে পেরে মনে আঘাতপ্রাপ্ত হয় আর পরবর্তীতে কাউকেই বিশ্বাস না করে। ‘

আদ্রিকের কথা মেনে নিলেও অরিন মানতে নারাজ। তাকে সবাই বুঝিয়ে শুনিয়ে রাজী করালো অবশেষে।


সবাই ঘুরতে বের হয়েছে! সাথে রয়েছে সুবত্র ও মিত্রা। ক্ষণিক সময়েই যেনো তারা রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে। দুজনেই ভীষণ মিশুকে প্রকৃতির! মিত্রা তো মীরাকে ক্ষণিক পরপর আদ্রিকের সাথে থাকতে বলছে কারণ মীরা আদ্রিক থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।

ছবি তোলার পালা আসতেই মিত্রা মীরাকে টেনে আদ্রিকের পাশে দাঁড় করিয়ে বলল,’ তোমরা দুজন দাঁড়াও আমি তোমাদের কাপল পিক তুলে দেই। ‘

মীরা সাথে সাথে মানা করে উঠলো বলল,’ এইসবের কি প্রয়োজন বৌদি? বাদ দেই না? ‘

মীরার কথা যেনো মানতে নারাজ মিত্রা। মীরা মানা করলেও মিত্রা নাছোড়বান্দা! নিজের কাজ আদায় করতে জানে সে। বাধ্য হয়ে মীরা ছবি তুললো আদ্রিকের পাশে দাঁড়িয়ে। মিত্রা কিছুটা চিন্তিত হয়ে বলল,’ এতো লজ্জা পাচ্ছেন কেনো বৌদি? দাদা আপনি বৌদিকে নিজের কাছে টেনে নিন তো। ‘

আদ্রিক না চাইতেও মীরাকে ছুঁলো! মীরা কেঁপে উঠলো আদ্রিকের স্পর্শে! আদ্রিক এক হাত দিয়ে মীরাকে তার কাছে টেনে নিলো। হুট করে টেনে নেওয়ায় মীরা প্রস্তুত ছিলো না, আদ্রিকের টানে মীরা যেয়ে আদ্রিকের বুকে আঁছড়ে পড়লো সাথে সাথে মিত্রা লাফিয়ে বলে উঠলো,’ বাহ! এইবারের ছবিটায় রষ কষ আছে! বাকি সবগুলোতে যেনো আপনাদের স্বামী স্ত্রী না ভাই বোন লাগছিলো। ‘

তখনই অরিন এসে বলল,’ আদ্রিক আর আমারও ছবি তুলে দিন। ‘

মিত্রার অরিনের গায়ে পড়া স্বভাবটা পছন্দ হলো না। ভ্রুকুঁচকে বলল,’ কেনো? দাদার কাছে কি মধু? দেখো মেয়ে ভালোয় ভালোয় বলছি শুধরে যাও নয়তো তোমার মতো মেয়েদের কি করে শুধরাতে হয় আমি, মিত্রা চট্টোপাধ্যায়ের খুব ভালো করেই জানা আছে! ‘

মিত্রার কথায় থমথমে মুখে তাকালো অরিন! অপমানিতবোধ করলো যেনো তবুও জোরপূর্বক হেসে বলল,’ আপনি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছেন! ‘

‘ ও বাবা, আপনার কোনো আত্মসম্মান আছে নাকি ইনসাল্ট ফিল করলেন? ‘

অরিন কথা ব্যয় না করে চলে গেলো তা দেখে মিত্রা হাসতে লাগলো, সুবত্র খানিক বিব্রত হয়ে বলল,’ উনাকে এইভাবে অপমান করা কি ঠিক হয়েছে মিত্রা? ‘

‘ দেখো আমি অযথা কিছু করছি না, এইরকম মেয়েরা কেমন হয় আমার খুব ভালো করেই জানা আছে বুঝলে সুবত্র! এরা মানুষের সুখের সংসারে থার্ড পার্সন হয়ে আগুন ধরিয়ে চলে যায়। আমি এইসবের একদম বিরুদ্ধে জানোই তো। ‘

মিত্রার কথায় সমর্থন দিলো সুবত্র! ইতস্তত করে বলল,’ হ্যাঁ মানছি, তবুও মেয়েটা তো দাদার বোন লাগে। ‘

মিত্রা গরম চোখে তাকালো সুবত্রের দিকে, সুবত্র আর কিছু বলল না।

রাতে

ক্লান্ত শরীর নিয়ে সবাই রিসোর্টে ফিরে এসেছে। কাকতলীয় ভাবে আদ্রিকের রুমের পাশেই সুবত্র আর মিত্রার রুম। মীরা যখন আদ্রিকার সাথে তার রুমে যাচ্ছিলো তখন মিত্রা তাকে ডেকে বলে,’ বৌদি যাচ্ছেন কোথায়? আপনার রুম তো এটা না। ঘুরতে যেয়ে কি সব ভুলে গেলেন নাকি? ‘

মিত্রাকে মীরা কি বলবে ভেবে পেলো না। আদ্রিকা ফট করে বলল,’ আসলে মিত্রা মীরা আমার সাথে ফ্রেশ হতে যাচ্ছে পরে আদ্রিকের রুমেই যাবে। মীরার অনেক কিছুই আমার ব্যাগে আছে। ‘

মিত্রা মাথা নাড়িয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো। মিত্রার যেতেই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো মীরা! আদ্রিকা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল,’ মেয়েটা যা চালাক, বাবারে! ভয়ে আছি কখন জানি সত্যিটা টের পেয়ে যায়। ‘

রিসোর্টের মধ্যেই একটা ঝিল রয়েছে। ঝিলের পাশেই ফায়ার ক্যাম্পিং করার জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। আদ্রিকরা ঠিক করলো তারা সেইখানে ফায়ার ক্যাম্পিং করবে তাদের সাথে রয়েছে মিত্রা ও সুবত্র!

ফায়ার ক্যাম্পিং এর জন্য তাদের প্রয়োজন মতো সব এনেছে আদ্রিকরা।

আড্ডা দিতে দিতে মিত্রা বলল,’ আড্ডা তো দেওয়াই যাবে আমরা ট্রুথ অর ডেয়ার খেলি! ‘

চলবে?