গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_২
লেখক ঃ অভ্র নীল
সকালে ঘুম থেকে উঠে রান্নাবান্না করে হালকা খেয়ে আমি রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। আর জান্নাত কে বলে আসলাম সে যেন ঘুম থেকে উঠে খেয়ে নেয়।
আমি রিকশা চালাতে চালাতে দেখি আমার ভার্সিটির সময় হয়ে গেছে। তাই আমি বাসায় চলে আসলাম। তারপর ফ্রেশ হয়ে, রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
ভার্সিটিতে ঢুকতেই কে যেন পেছন থেকে ডাক দিল–
— এই ক্ষ্যাত এইদিকে শোন!
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি রোহান। সে আমারই ক্লাসমেট। সে এবং তার দল ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া নতুন ছাত্র ছাত্রীদের রেগিং করে। তবে আজ আমার কেন ডাকলো তা আমি জানি না! আমি এগিয়ে গেলাম–
অভ্র– জী ভাইয়া! কিছু বলবেন?
রোহান আমার দিকে একটা চিঠি এগিয়ে দিয়ে বলল–
রোহান– শোন এই চিঠিটা ওই যে দেখতে পাচ্ছিস ওই মেয়েটাকে দিয়ে আই! যা!
চিঠিটা দেখে মনে হলো লাভ লেটার। এমনিতেই কোনো স্যার আমাকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না! তারউপর এইটা যদি আবার ওই মেয়েটাকে দেই, আর পরে যদি রোহান পাল্টি খায় তাহলে তো স্যার আমাকে ভার্সিটিতে থেকেই বের করে দিবে।
আমাকে এইভাবে চিন্তা মগ্ন দেখে রোহান বলল–
রোহান– কি রে কী ভাবিস? যা!
অভ্র– না ভাই! এটা আমি করতে পারবো না। সরি!
আমার কথা শুনে পিছন থেকে রোহানের বন্ধু সাঈদ বলে উঠলো–
সাঈদ– কি রে তুই কী বললি? আর একবার বল তো! রোহান তুই শুধু একবার বল, এর হাড় হাড্ডি গুঁড়া গুঁড়া করে দিবো।
রোহান– তুকে আমি লাস্টবার বলছি যাবি?
আমি মাথা নিচু করে না সূচক মাথা নাড়ালাম।
আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই সাঈদ আর রোহানের অন্যান্য বন্ধু গুলো আমাকে মারতে শুরু করলো৷ ভার্সিটির সবাই ফ্রিতে সিনেমা দেখছে। কেও এগিয়ে আসছে না! কারও মনে সাহস নেই!
হঠাৎ কারও গালে থাপ্পড়ের শব্দে সাঈদরা থেমে গেল৷ আমি মাথা তুলে দেখি সানজিদা রোহানকে থাপ্পড় মেরেছে।
সানজিদার হাতে থাপ্পড় খেয়ে রোহান তো রেগে একদম ফায়ার হয়ে গেছে। সে যেই না সানজিদা কে থাপ্পড় মাড়তে যাবে ওমনি লিজা এসে রোহানের সামনে দাঁড়াই।
রোহান লিজাকে দেখে থেমে গেল সাথে ভয়ও পেল। ওহ আপনাদের বলতেই তো ভুলেই গেছি, লিজার বাবা এই এলাকার ওসি। তাই ভাসিটির সবাই তাকে ভয় পাই। লিজা বলল–
লিজা– কি রে তুই আমার বন্ধুর গায়ে হাত দিতে চাচ্ছিস। তুর বুকে এতো সাহস। আর তোরা অভ্র কে ওইভাবে মারছিস কেন? আর একদিন যদি তোরা অভ্র কে ডিস্টার্ব করিস, তাহলে কিন্তু তোদের খবর আছে? যাহ ভাগ!
লিজার এটা বলতে দেরি ওদের পালিয়ে যেতে দেরি নেই।
সানজিদা এসে আমাকে তুললো। ওরা সবাই চলে যাবার পরেও ভার্সিটির কেওই এগিয়ে এলো না সাহায্য করতে।
সানজিদা আর লিজা আমাকে নিয়ে ভার্সিটির একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে আসলো। ওদের মার খেয়ে আমার ঠোঁট কিছুটা কেটে গেছে। সানজিদা তার ওড়না দিয়ে সেটা মুছে দিলো। এটা দেখে আমি কিছুটা অবাক হয়ে গেলাম। তখন লিজা বলল–
লিজা– ওই অভ্র ওরা তুমাকে মারছিল কেন?
অভ্র– কিছুটা পানি পাওয়া যাবে?
সানজিদা তার ব্যাগ থেকে তৎক্ষনাৎ পানির বতল বের করে দিল। আমি পানি খেয়ে তাদের সব ঘটনা খুলে বললাম।
আমার কথা শুনে সানজিদা বলল–
সানজিদা– তুমি প্রতিবাদ করলে না কেন?
আমি একটু মুচকি হেসে বললাম–
অভ্র– গরিবের আবার প্রতিবাদ! আমারা প্রতিবাদ করলেও সেটাকে কোনো মূল্য দেওয়া হয় না! তাই আর প্রতিবাদ করি ও না। যা হয় মুখ বুঝে সহ্য করে নেই। আর
লিজা– আচ্ছা অভ্র! একটা কথা জিজ্ঞেস করি? মন খারাপ করবে না তো?
অভ্র– নাহ বলেন?
লিজা– আগে এই আপনি বলাটা ছাড় প্লিজ!
আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম। তখন লিজা বলল–
লিজা– আচ্ছা তুই প্রতিদিনই একই শার্ট প্যান্ট পড়ে ভার্সিটিতে আসিস কেন? আর তুই রিকশা চালাস কেন? তুই তো খুব ভালো স্টুডেন্ট। তুই তো ইচ্ছে করলে টিউশুনি করাতে পারিস!
অভ্র– টিউশনি করাতেই তো চাই। কিন্তু আমার এইরকম ড্রেসআপে কোনো ছেলেমেয়ে পড়তে চাই না প্লাস কোনো বাবা মাও আমার কাছে তাদের ছেলেমেয়েদের টিউশুনি দিতে চাই না। তাই বাদ্য হয়ে রিকশা চালায়।
সানজিদা– আচ্ছা তোমার জীবন কাহিনীটা শুনতে পারি?
অভ্র– হুম তার আগে আবারও একটু পানি পাওয়া যাবে?
সানজিদা আবার আমাকে পানির বোতল বের করে দিলো। আমি পানি খেয়ে আমার সমস্ত জীবন কাহিনীটা বললাম। আমার জীবনে এযাবৎ পর্যন্ত যা কিছু হয়ছে! কীভাবে আমি এতো দূর পর্যন্ত পৌছালাম। এই আর কী..!
আমার সব কথা শুনে সানজিদা আর লিজা স্তব্ধ হয়ে গেল। স্তব্ধতা ভেঙে আমি বললাম–
অভ্র– কী হলো? আপনারা দুজন চুপ মেরে গেলেন কেন?
আমার কথা শুনে ওরা দুজন স্বাভাবিক হয়ে গেল। সানজিদা লিজাকে ইশারা করে সাইটে যেতে বলল। ওরা দুজন সাইটে চলে গেল। আমি সেখানেই বসে রইলাম।
ওদের কথা শেষে সানজিদা এসে বলল–
সানজিদা– তাহলে লিজা তুই যা! আর অভ্র তুমি আমার সাথে চলো।
অভ্র– কই যাবো?
লিজা– সানজিদা তুমাকে যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে্ যাও!
অভ্র– আরে কোথায় যাবো! আমার ত রিকশা নিয়ে বের হওয়ার সময় হয়ছে। আজকে তো ক্লাস করতে পারলাম না!
সানজিদা আমার কথা শুনে বেশ রেগে গিয়ে বলল–
সানজিদা– এই তুই যদি আর একটাও কথা বলিস তাহলে তোকে এখানেই মেরে পুতে রাখবো। চল আমার সাথে।
আমি সানজিদার কথা শুনে চুপ মেরে গেলাম। তবে সানজিদা রাগলে কিন্তু তাকে দেখতে খুবই সুন্দর লাগে।
সানজিদা আর আমি রিকশায় উঠলাম। আমি সানজিদা কে বলেছিলা আমরা দুজনে দুই রিকশা নেই! কিন্তু সে শুনেনি। আমরা দুজন রিকশা নিয়ে রওনা দিলাম। গন্তব্য আমার অজানা!
***********
সানজিদা আমাকে নিয়ে একটা হাসপাতালে আসলো। তারপর ভেতরে নিয়ে গিয়ে কিছু ঔষুধ আর মলম নিলো। তারপর আবারও রিকশায় উঠে বসলাম।
এবার রিকশা এসে থামলো বিশাল একটা মার্কেটের সামনে।
আমার দুজন ভেতরে প্রবেশ করলাম। এর ভেতরে আমি সানজিদা কে অনেকবার বলেছি সে আমাকে এখানে নিয়ে আসছে কেন? এখানে সে কী করবে? এইরকম আরও অনেক প্রশ্ন করেছি। কিন্তু সানজিদা একটা প্রশ্নেরও উত্তর দেই নি।
সে আমাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে আমার মাপের বেশ কিছু জিন্স ও শার্ট নিলো। আমি কিছু বললেই সে আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিচ্ছে।
সে আমার থেকে আমার ছোট বোন জান্নাতের বয়স জানতে চাইলে, আমি বললাম–
— ১০ বছর।
সে আমাকে নিয়ে আরো একটা দোকানে গেলো। এটা আবার ছোট বাচ্চাদের জামাকাপড়ের দোকান। সেখান থেকে সে জান্নাতের মাপে বেশ কয়েকটা জামা নিলো। আমি শুধু অবাক চোখে সানজিদার কর্মকাণ্ড দেখছি।
শপিং শেষে,,,,,🤐🤐
চলবে…?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।