গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_৩
লেখক ঃ অভ্র নীল
শপিং শেষে, আমরা আবারও একটা রিকশায় উঠলাম। আমি সানজিদার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। তখন সে বলল–
সানজিদা– এই তোমার বাসার ঠিকানা বলো?
সানজিদা যে কিছু বলছে সেটা আমি বুঝতেই পারছি না। আমি শুধু তার দিকে তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। সে এবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে বললো–
সানজিদা– এই বলো?
অভ্র– কিছু বললেন?
সানজিদা আমার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো–
সানজিদা– এতক্ষণ ধরে কী বললাম হু!
অভ্র– প্লিজ কষ্ট করে আর একবার বলেন?
সানজিদা– তেমার বাসার ঠিকানা বলো?
অভ্র– কেন?
সানজিদা– আমরা সেখানে যাবো!
অভ্র– এই না না! প্লিজ! আপনি আমার জন্য যতটুকু করেছেন এটাই বেশি। আর না প্লিজ!
সানজিদা– তুমি বলবা? ( রেগে গিয়ে)
অভ্র– আচ্ছা বলছি! চলেন। (আমি দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বললাম কথাটা)
তারপর আমরা আমার বস্তিতে চলে আসলাম।
সবাই আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে সানজিদার দিকে সবাই কেমন করে তাকাচ্ছে আর কী যেন বলছে। তবে তাদের তাকানো টা স্বাভাবিক কারণ, এতো সুন্দর একটা মেয়ে এই বস্তিতে এসেছে। এখানে কোনো বড়লোকের পা তো দূরের কথা ছায়া ও পড়ে না।
আমি সানজিদার দিকে তাকালাম, দেখি সে স্বাভাবিক! সে কিছু মনেই করছে না।
আমরা আমাদের ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে চলে আসলাম। আমি বাসার ভেতরে ঢুকতেই জান্নাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল–
জান্নাত– ভাইয়া তুমি কোথায় ছিলে? আজ এতো দেরি করলে কেন?
সে এইবার কেঁদেই দিল। আমি তাকে কোলে তুলে নিলাম। আর বললাম—
আমি– আরে পাগলি আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই আসতে দেরি হয়ছে। এই সামান্য কারণের জন্য কেও কান্না করে। পাগলি একটা!
দূর থেকে সানজিদা আমাদের কথা শুনছিল। জান্নাত তখন কান্না থামিয়ে বলল–
জান্নাত– আচ্ছা ভাইয়া! ওই যে, ওই আপুটা কে? আর সে এখানে কী করছে?
অভ্র– সে হচ্ছে আমার ক্লাসমেট। মানে সে আমার সাথে একই ক্লাসে পড়ে।
সানজিদা তখন এগিয়ে এসে জান্নাত কে আমার থেকে তার কোলে নিলো। জান্নাতের গায়ে ধুলো বালি ভড়ে আছে। কিন্তু সানজিদা সেগুলো কিছুই মনে করলো না। সে জান্নাত কে বলল–
জান্নাত– তাহলে তোমার নামই জান্নাত। জান্নাত তুমি একটা কথা কী জানো, তুমি না দেখতে অনেক কিউট। ঠিক তোমার ভাইয়ের মতো।
সানজিদা এটা বলে তার জিহ্বায় কামড় দিল। আর আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি কিছু বলতে যাবো, তার আগেই সানজিদা কথা ঘুরিয়ে জান্নাত কে বললো–
সানজিদা– আচ্ছা জান্নাত আমি তোমার জন্য কিছু জামা নিয়ে আসছি তুমি সেগুলো পড়বে?
জান্নাত তখন আমার দিকে তাকালো। তার চাহনি দেখে বোঝা যাচ্ছে সে সেগুলো পড়তে চায়। আমি একটা মুচকি হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম।
জান্নাত ও একটা বিজয়ের হাসি দিয়ে সানজিদা কে হ্যা সূচক উত্তর দিল।
সানজিদা সব ব্যাগগুলো ঘরে নিয়ে গেল। সাথে জান্নাত ও!!
আমি একটা কথা ভাবছি, সানজিদা এসব কেন করছে? সে কী এসব কোনো কারণে করছে না কী অকারণে!ধেত মাথায় কিছু আসছে না!
আমি এসব আজাইরা চিন্তা-ভাবনায় ডুবে আছি। তখন সানজিদা বাইরে এসে বলল–
সানজিদা– এই অভ্র দেখতো জান্নাত কে কেমন লাগছে?
তখন জান্নাত সানজিদার পেছনে থেকে বের হলো। আমি তার দিকে একদম অবাক চাহনিতে তাকিয়ে আছি। সত্যি বলতে জান্নাত কে একদম আকাশ থেকে নেমে আশা একটা পরির মতো লাগছে।
জান্নাত আমার কাছে আসলো। আর বলল–
জান্নাত– ভাইয়া আমাকে কী পঁচা দেখাচ্ছে?
আমি তাকে কোলে তুলে নিয়ে বললাম—
অভ্র– না তো! তুমাকে একদম একটা পরির মতো লাগছে। একদম ছোট্ট একটা পরি।
জান্নাত– সত্যি!
অভ্র– হুম!
এরপর আমরা তিনজন মিলে অনেক মজা করলাম। অনেক আড্ডা দিলাম। সানজিদা আর জান্নাত কে দেখে মনে হচ্ছে তারা একে অপরকে কতদিন ধরে চিনে! তারা একদম মিশে গেছে।
তবে বাস্তবেও মেয়েরা যেকোনো কাওকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারে। যেটা ছেলেরা পারে না। যাইহোক আমি মানুষকে জ্ঞান দিতে পারি না! এখন গল্পে ফেরা যাক!
সানজিদা এখন চলে যাবে। তাই সে আমাকে একটু সাইটে ডাকলো এবং একটা জায়গার ঠিকানা দিয়ে বলল–
সানজিদা– কাল বিকেল ৪টায় এই ঠিকানায় চলে আসবা। সেখানে একজনকে টিউশুনি পড়াতে হবে। তুমি এসো।
আচ্ছা জান্নাত তুমি থাকো আমি গেলাম। আমি আবারও আসবো!
এটা বলে সানজিদা চলে গেল৷ আমাকে কিছু বলারও সুযোগ দিল না!
*****
রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে আছি। আজকে শুধু সানজিদার কথাই মাথায় ঘুরছে। কেন সেটা আমি জানি না! সেও একজন বড়লোক বাবার মেয়ে। কিন্তু তার ভিতরে বড়লোকের কোনো দিকই মিলছে না! সে একদম নর্মাল! তাকে মনে হয় আমি ভালোবেসে ফেলেছি। আরে না না এটা আমি কী ভাবছি। ধুরর ঘুমাই কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে উঠে প্রতিদিনের মতো আমি রিকশা নিয়ে বের হলাম। তারপর যথারিতি সকল ক্লাস করে আমি আবারও রিকশা নিয়ে বের হলাম।
বিকেল ৪টায় আমি সানজিদার দেওয়া শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পড়ে, তার দেওয়া আড্রেসে রওনা দিলাম।
সেখানে পৌছে আমি যেই না ভেতরে ঢুকতে যাবো অমনি দারওয়ান বলল–
দারওয়ান– এই এই কই যান?
আমি তাকে বললাম—
অভ্র– এখানে আমি টিউশনি পড়াতে আসছি।
দারওয়ান– ওহ! তাহলে আপনিই সেই। আচ্ছা যান।
আমি দারওয়ানের কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না। আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম।
ভেতরে গিয়ে দেখি সানজিদা সেখানে আগের থেকেই বসে আছে। আমি তাকে দেখে বললাম–
অভ্র– আরে আপনি এখানে?
সানজিদা– আমি থাকবো না তো কে থাকবে?
অভ্র– আরে না আমি সেইভাবে কথা বলি নি।
সানজিদা– আচ্ছা তুমি এখানে বসো। আমি তোমার ছাত্রীকে নিয়ে আসছি।
এটা বলে সানজিদা চলে গেল। একটু পর সে একজন মেয়েকে নিয়ে আসলো। মেয়েটি এসে আমায় বলল–
মেয়েটি– আসসালামু আলাইকুম স্যার! কেমন আছেন?
অভ্র– ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি?
মেয়েটি– ভালো।
সানজিদা– আচ্ছা তোমরা তাহলে রুমে গিয়ে পড়াশোনা শুরু করো। আমি তোমার জন্য নাস্তা রেডি করছি।
মেয়েটি আমাকে একটা রুমে নিয়ে গেল। রুমটা খুবই গোছানো। আমি মেয়েটির থেকে জানতে পারলাম,, সে ক্লাস ৯ এ পড়ে। তার নাম সাদিয়া। আমি তাকে পড়াচ্ছি। তখন সানজিদা এবং তার পেছনে দুটো মধ্য বয়স্ক আঙ্কেল আন্টি আসলো। তারা এসে বলল–
আঙ্কেল– আচ্ছা বাবা তোমার আমার মেয়েকে পড়াতে কোনো সমস্যা নাই তো!
অভ্র– না আঙ্কেল!
আঙ্কেল– সমস্যা না থাকলেই ভালো। আচ্ছা তাহলে আমরা তোমার মাসিক বেতন সম্পর্কে কথা বলা যাক!
অভ্র– আপনি আমাকে যত দিবেন আমি সেটাতেই খুশি।
আঙ্কেল– আচ্ছা তাহলে ৫হাজার টাকা মাস শেষে দিলে চলবে?
আমিতো অনেক খুশি হলাম৷ কারণ আমি রোদে পুরে পানিতে ভিজেও এতটাকা ইনকাম করতে পারি না। আমি খুবই খুশি হয়ে বললাম–
অভ্র– জী আঙ্কেল সমস্যা নাই। এতপর আমার চলবে।
এটা বলে তারা চলে গেল। আমি তখন সানজিদা কে বললাম–
অভ্র– আচ্ছা এটা কী আপনাদের বাসা?
সানজিদা তখন হাসতে হাসতে বলল–
সানজিদা– আরে না। এটা আমাদের বাসা না। এরা আমার খালা-খালু হয়। আর এ হচ্ছে আমার খালাতো বোন। আর আমাদের বাসা এই বাসা থেকে দুই বাসা দূরে। বুঝেছো?
অভ্র– হুম।
****
আমি সাদিয়াকে পড়িয়ে বাসায় চলে আসলাম৷
চলবে….?
ভুলত্রুটি মার্জনীয় 🙂।