ক্ষ্যাত ছেলে পর্ব-০৭

0
161

গল্প ঃ ক্ষ্যাত_ ছেলে
পর্ব ঃ_ ৭
লেখক ঃ অভ্র নীল

বাসায় এসে আমিতো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না। এ কী আমার বাসার সকল জিনিস পত্র কই গেলো। আর বড়কথা হচ্ছে জান্নাত কই।
আমি তাকে বাড়ির সব জায়গায় খুজলাম। কিন্তু কোথাও পেলাম না। জান্নাত কই গেলো। আমার মাথা কাজ করছে না। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমি রুমে গিয়ে আমার চৌকির নিচে থাকা টিনের একটা বক্স বের করলাম। একি সেখানেও কিছু নেই। এবার আমার বুক ফেটে কান্না বের হচ্ছে। সেখানে আমার মায়ের একটা ছবি ছিল। আজ আমি আমার মায়ের শেষ স্মৃতিটুকুও হারিয়ে ফেললাম। আমি এইসব ভাবছি আর আমার চোখ দিয়ে অঝোড় ধারায় অশ্রু গরিয়ে পড়ছে।

হঠাৎ, সানজিদার ফোন। আমি ফোনটা রিসিভ করে হাউমাউ করে কেঁদে দিলাম। আর বললাম—

অভ্র– সানজিদা আমার বাসার সকল জিনিস কে যেন নিয়ে গেছে। আর জান্নাত কেও খুজে পাচ্ছি না। তাকে আমি বাসার সব জায়গায় খুজেছি। কিন্তু কোথাও পাই নি৷ সানজিদা এখন আমি কী করবো। প্লিজ কিছু একটা বলো সানজিদা……

আমি এইভাবে কান্না করছি দেখে সানজিদা তো অনেকটাই অবাক হয়ে গেল। তারপর সে শান্ত গলায় বলল–

সানজিদা– এই অভ্র শোনো, তুমি আমাদের বাসায় আসো। তারপর আমি দেখছি কী করা যাই””

অভ্র– কিন্তু,,,,,,

সানজিদা– কোনো কিন্তু না তুমি আমাদের বাসায় চলে আসো।

এটা বলে সানজিদা ফোন কেটে দিল। আমার মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল। আমি নিজেকে আর সামলাতে পারছি না। তারপরেও নিজেকে সামলিয়ে নিলাম। আর সানজিদা দে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম।
রাস্তায় আমার প্রতিবেশিদের বলেছিলাম, তারা কিছু দেখেছে কী না! কিন্তু তারা বলল, যে তারা না কী কিছুই দেখে নি।

যাইহোক, আমি অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে সানজিদা দের বাসায় চলে আসলাম। দেখি সানজিদা আমার জন্য অপেক্ষায় ছিল। আমি সোজা গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরলাম। আর বললাম—

অভ্র– সানজিদা প্লিজ তুমি কিছু একটা করো। জান্নাত কে তুমি আমার কাছে এনে দাও!

আমি সানজিদা কে জড়িয়ে ধরেছি বলে সানজিদা তো অবাকের চরম শিখরে পৌছে গেছে। তারপরেও সে বলল–

সানজিদা– আরে তুমি শান্ত হয়।৷ আর আমার সাথে আসো।

এটা বলে সে এগোতে শুরু করলো। আমিও তার পিছন পিছন যেতে লাগলাম। সে তার বাসার কোনার একটা রুমে আমায় নিয়ে আসলো। আর বলল–

সানজিদা– এই নাও চাবি। আর এই তালাটা খুলো।

আমি তাকে চোখের ইশারায় বললাম, কেন?

সেও মাথা নাড়িয়ে আমাকে খুলতে বলল। তাই আমি তালাটা খুললাম। খুলে আমি যা দেখলাম। তাতে আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না।

আমি একবার সানজিদার দিকে আর একবার রুমটার দিকে তাকাচ্ছি। আমার ঘরের সকল জিনিসপত্র এখানে। আর খুবই গোছানো অবস্থায় আছে। আর সবচেয়ে বড় জিনিস আমার মায়ের ছবিটা ঠিক খাটের উপরের দেওয়ালে টাঙানো আছে। আমি সবকিছু অবাক এবং মুগ্ধতার সাথে দেখছি। তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– এই নাও তোমার বোন জান্নাত কে।

জান্নাত তখন সানজিদার পিছন থেকে বের হয়ে আসলো। আমি আার নিজেকে আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। আমি দৌঠে গিয়ে জান্নাত কে কোলে তুলে নিলাম। তখন জান্নাত বলল–

জান্নাত– ভাইয়া তুমি কান্না করেছো কেন? তোমার চোখ দেখি ফুলে গেছে। কেও কী বকা দিছে?

অভ্র– না রে বোন।

এটা বলে আমি আবারও জান্নাত কে জড়িয়ে ধরলাম। জান্নাত আবারও বলল–

জান্নাত– ভাইয়া তুমি জানো সানজিদা আপু কত্তো ভালো। সে আমাকে এই এত্তোগুলো চকলেট দিয়েছে।

অভ্র– হুম রে তুমার আপু খুব ভালো।

আমি আর জান্নাত কথা বলছি, তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– এই শোনো এখন থেকে তুমি এই রুমে থাকবে। আর জান্নাত আমার সাথে। বুঝেছো?

অভ্র– এটা কীভাবে হয়?

সানজিদা– এই জন্যেই ত আমি তোমাকে কিছু না জানিয়েই তোমার বাসার সব জিনিস নিয়ে আসছি। এখন তুমি থাকলে থাকো না থাকলে নাই। জান্নাত তো আমার সাথেই থাকবে। জান্নাত তুমি থাকবে না?

জান্নাত– হুম থাকবো। ভাইয়াও আমাদের সাথে থাকবে।

আমি জান্নাত এবং সানজিদার হাসিমাখা মুখ দেখে আর না করতে পারলাম না। আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ উত্তর দিলাম। তখন সানজিদা বলল–

সানজিদা– আচ্ছা জান্নাত এখন চলো। তোমার ভাইয়া ফ্রেশ হয়ে নেক।
আর তুমি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসো। বুঝেছো!

এটা বলে সানজিদা জান্নাত কে কোলে নিয়ে চলে গেল। আমি কিছুক্ষণ বসে থেকে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।

ওয়ারুম থেকে বের হয়ে বসে আছি। আর ভাবছি সানজিদা এতোকিছু কেন করছে? এইরকম আরও হাজারও প্রশ্ন আমার মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। তখন জান্নাত এসে আমায় টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

আমি গিয়ে দেখি, আঙ্কেল আন্টি সানজিদা সবাই আছে। সানজিদা জান্নাত কে খাবার খাওয়াচ্ছে, সেও মজা করে খাচ্ছে। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– কী হলো অভ্র? বসো?

আমি একটু আন কনফ্টেবোল বোধ করছি। কারণ এইরকম দামি কোনো জায়গায় বসে কোনোদিন খাবার খাই নাই তাই আর কী! তখন সানজিদা তার হাতে থাকা খাবারের থালাটা রেখে আমায় টেনে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দিল। তখন আন্টি বললেন–

আন্টি– বাবা আমাদের কী তোমার আপন মনে করতে কোনো সমস্যা হচ্ছে?

আমি তখন একটু অবাক হয়ে বললাম–

অভ্র– কেন আন্টি?

আন্টি– তুমি খাবার খাচ্ছো না কেন?

অভ্র– আসলে আন্টি এইরকম খাবার আমার তো কোনোদিন কপালে জোটে নি। তাই একটু অন্যরকম ফিলিংস কাজ করছে!

তখন আঙ্কেল বলে উঠলেন–

আঙ্কেল– আরে তুমি তোমার অতিতকে বাদ দিয়ে বর্তমান নিয়ে বাচতে শিখো। অতিতে যা হওয়ার হইছে? এখন তুমি নিজের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে লিখতে পারবে। কী পারবে না?

আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালাম। তখন আঙ্কেল বললেন–

আঙ্কেল– তাহলে টেনশন কিসের খাবর খেয়ে নাও!

আঙ্কেলের এমন কথাই আমি নিজেকে একটু কাম্ফিটেবল মনে করলাম। আর খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলাম। তারপর শুয়ে পড়লাম। আর আস্তে আস্তে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম।

আজকে শুধু সানজিদা আর সাদিয়ার টিউশনি আছে। তাই আমি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে রইলাম।

বিকেল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সানজিদা আর সাদিয়াকে প্রাইভেট পড়ালাম।

পড়া শেষে সানজিদা আর সাদিয়া জেদ ধরলো তারা বাইরে বেড়াতে যাবে। আমি প্রথমে না করলেও পড়ে তাদের জেদের কাছে হেরে যাই।

বাইরে এসে আমরা কয়েকটা জায়গায় ঘুরলাম। তারা দুইজন ফুসকা আর আইসক্রিম খাইলো। আমি সেগুলোর বিল দিতে চাইলাম। কিন্তু সানজিদা দিতে দেই নি।

তারপর সাদিয়াকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমি আর সানজিদার বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। আমরা দুজন হেটে যাচ্ছি৷ কারণ সাদিয়াদের বাসা হতে সানজিদা দের বাসা মাত্র ৫ মিনিট রাস্তার। যাইহোক আমরা হাঁটছি তখন সানজিদা বলে উঠলো–

সানজিদা– আচ্ছা অভ্র তুমি কী কাওকে ভালেবাসো?

অভ্র– হঠাৎ এই প্রশ্ন?

সানজিদা– আরে বলো না!

অভ্র– নাহ! আমি নিজেই চলার মতো টাকা পাই না আবার gf এটা একটা হাস্যকর ব্যাপার!

সানজিদা তখন ফিসফিস করে বলল–

সানজিদা– তাহলে আমার রাস্তা ফাঁকা!

তখন আমি বললাম–

অভ্র– কী হলে নিজে নিজে কথা বলছো যে!

সানজিদা– আরে তেমন কিছু না। শোনো কাল আমার শপিং করতে যাবো আচ্ছা!

আমরা কথা বলতে বলতে সানজিদা দের বাসার সামনে চলে এসেছিলাম। সানজিদা এই কথা বলে এক দৌড়ে বাসার ভেতরে চলে গেল। সে আমাকে কিছু বলার সুযোগই দিল না!

চলবে……?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়🙂।