কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে পর্ব-৩৪

0
798

#কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিতে
#পর্ব-৩৪

জুম্মন আলী ভদ্রলোকের সঙ্গে জুলিনার ভাব হলো অবশেষে। মাধ্যম হিসেবে কাজ করলো জুম্মন আলীর দুই নাতি নাতনি। এই বুদ্ধিও অবশ্য জয়ীতার। একদিন সকাল বেলা জয়ীতা দুটো বাচ্চা নিয়ে জুলিনার বাসায় হাজির হলো। জুলিনা বাচ্চা দুটোকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,

“এদের কই পাইছ?”

জয়ীতা হেয়ালি করে বলল,

“রাস্তায় কুড়িয়ে পাইছি আন্টি। তোমার বাসা তো খালিই আছে তাই নিয়া আসলাম।”

জুলিনা রাগারাগি করলো না। মিষ্টি বাচ্চাদের দেখে মন গলে গেল। ছেলেটার বয়স আট, আর মেয়েটার বয়স ছয়। কিন্তু দেখতে সুন্দর বাচ্চা দুটো সে মহা বিচ্ছু তা জুলিনা কিছুক্ষনের মধ্যেই টের পেয়ে গেল। প্রথম ত্রিশ মিনিট তারা চুপচাপ থাকলেও তারপর শুরু হলো বিচ্ছুপনা। জয়ী এদের রেখে চলে গেল। যাওয়ার সময় বলে গেল সন্ধ্যেবেলা নিয়ে যাবে। কিন্তু সন্ধ্যা হবার আগে জুলিনা জয়ীকে আটবার ফোন করলো। ফোন করে বলল,

“শয়তানের বাচ্চা দুইটারে আমার কাছে রাইখা গেছ ক্যান? নিয়া যা বদ দুইটারে। হার মাংস জ্বালায়ে খাইলো। শ্যাম্পুর বোতলে পানি গুলে ঘরের মধ্যে বাবল ফুলায় না কী করে। পাইছ কই এই ইবলিশের বংশধর রে। ”

সন্ধ্যেবেলা যখন জুম্মন আলী যখন বাচ্চাদের নিতে এলো তখন জুলিনা জয়ীতার শয়তানি ধরতে পারলো। ফোন করে আরেকদফা রাগারাগি করলো।

জুম্মন আলী ভদ্রলোকের স্ত্রী মারা গেছে বছর দুই হয়েছে। তার নিজের সমস্যা না হলেও বাচ্চা দুটো সামলাতে ভীষণ ঝামেলা হচ্ছে। বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য লোক রাখলেও এক সপ্তাহের বেশী কেউই টিকছে না। আর এই বাচ্চাদের দায়িত্ব ওদের বাবা মায়েরাও নিতে চাইছে না৷ জুম্মন আলীর ছেলের বাচ্চা এরা। বাচ্চাদের মা বাবা আলাদা হয়ে যার যার মতো সেটল হলেও বাচ্চাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। শুধুমাত্র টাকা খরচ ছাড়া আর কিছুই করছে না। এদিকে জুম্মন আলীর টাক মাথায় চুল গজাচ্ছে বিচ্ছুদের যন্ত্রণায়। তাই মেট্রিমোনি সাইটে জুলিনার বায়োডাটা পড়ে আগ্রহী হয়েছে। জয়ীতার সাথে কথা বলার পর তার মনে হয়েছে জুলিনাই ঠিকঠাক।

সব শুনে টাক মাথাওয়ালা জুম্মন আলীর উপর জুলিনার খানিকটা মায়া হলেও সে কঠিন গলায় বলে দিলো যে আর যেন তার সামনে না আসে। জয়ীতার মাথা খারাপ হলেও সে যথেষ্ট সুস্থ একজন মানুষ। এখন দাঁত পড়ার বয়স। বিয়ে করার বয়স না।

জুম্মন আলী সত্যিই আর যোগাযোগ করলো না। ফোন করাও বন্ধ করে দিলেন। কী ভেবে যেন জুলিনা একদিন ফোন করলো। জুম্মন আলী ফোন ধরার পর জুলিনা কঠিন গলায় বলল,

“আপনার খসখসে গলা শোনার জন্য ফোন করিনি। ফাজিন দুইটারে আমার বাসায় পাঠায়ে দিয়েন। আজ বাসায় মিলাদ আছে। ”

***
জয়ীতা সেজেগুজে আদনান কে নিয়ে অনীশের বিয়েতে এসেছে। ওর সঙ্গে সৌমিও এসেছে। জয়ীতা মন খারাপ করা গলায় আদনান কে বলল,

“আমি ভেবেছিলাম ক্যাবলাটার সঙ্গে সৌমির বিয়ে হবে। ”

আদনান মৃদু হেসে বলল,

“এই লোক টা’কে ক্যাবলা বলছ কেন? দেখতে তো জেন্টলম্যানের মতোই লাগছে।”

“উনি যখন আমাকে বিয়ে করতে চাইছিল তখন ক্যাবলার মতো তাকিয়ে থাকতো। ”

আদনান জয়ীর মুখ টা সামনের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলল,

“দেখো, উনি এখনো ক্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। ওনার বউয়ের দিকে। ”

জয়ীতা দেখলো অনীশ সত্যিই সেজেগুজে থাকা বউয়ের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। আদনান আবারও বলল,

“সুন্দর কিছু যদি বারবার দেখতে ইচ্ছে করে তাহলে সেটাকে ক্যাবলামি বলে না। ”

জয়ীতা জবাব দিতে গিয়েও থেমে গেল। মৃদু হেসে অন্যদিকে তাকালো।

***
লিজার হাটা, চলা করতে খানিকটা কষ্ট হয়। যদিও অনেক দেরি আছে তবুও শরীর ভারী হয়ে যাবার কারণে কষ্ট হচ্ছে। জয়ীতার সঙ্গে এবার অনেক দিন পর দেখা হলো। ভুলেও এখন আর ওদের বাসায় আসে না। লিজা মাঝেমধ্যে ফোন করে আসতে বললেও জয়ীতা ব্যস্ততার অজুহাত দেখায়। এতো কিসে ব্যস্ত সেটাই বুঝতে পারে না। ওর আগের করা আচরণ এর কারণেই কী এড়িয়ে চলছে! সেটা করার কারণ কী! লিজাকে তো ও কখনো ছাড় দেয় নি।

তাসিন, নওশিন কে জয়ীতা যে খুব আদর করে সেটা বুঝতে পারে। এই ব্যাপার টায় ও অবাকও হয়। লিজার সঙ্গে জয়ীতার মাখো মাখো সম্পর্ক কখনোই ছিলো না। কিছু ব্যাপারে জয়ীকে যেমন পছন্দ করতো তেমনি কিছু ব্যাপারে অপছন্দও ছিলো।

জয়ী লিজার কাছে এগিয়ে এলো। হেসে জিজ্ঞেস করলো,

“ভাবী অনেকক্ষন যাবত দেখছি তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আছ! ব্যাপার টা কী বলোতো? আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে?”

লিজা মৃদু হেসে বলল,

“না সুন্দর লাগছে। পয়সা আর আভিজাত্যের ভারে খুব সুন্দর হয়ে গেছো। ”

জয়ী হাসলো। ও’কে যে আজ সুন্দর লাগছে এই কথাটা লিজা সত্যি বলেছে। নীল সাদা শিফন জর্জেট আর হালকা গয়না, মেকাপে দারুন লাগছে।

জয়ী বলল,

“তোমাকেও ভীষণ ভালো লাগছে। সান্ত্বনা দেবার জন্য বলছি না। বেবির জন্য এক্সাইটেড বলে যে আনন্দ টা উপভোগ করছ সেটার জন্য ভালো লাগছে। সৌন্দর্য ব্যাপার টাও তেমন বুঝলে। পুরোটাই মনের ব্যাপার। মন ভালো থাকলেই জগৎ ভালো। ”

লিজা হাসলো। বলল,

“তুমি আজকাল খুব গুছিয়ে কথা বলছ। ”

“আফটার ম্যারেজ ইফেক্ট। ”

“আসলেই বিয়ের পর মেয়েরা বদলে যায়।…

জয়ীতার খুব ইচ্ছে করলো লিজাকে একটু রাগাতে। তাই বলল,

“এক্সাক্টলি ভাবী, আমিও বদলে গেছি। বিভিন্ন রান্নার প্রিপারেশন শিখছি। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠছি, রাত জাগা টোট্যালি অফ। শরীরচর্চা, রুপচর্চা করছি। সব ই করছি শুধু একটা ব্যাপার করছি না। ননদ দের পেছনে লাগছি না। ”

লিজার ফুরফুরে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল। এই মেয়েটা জীবনে শোধরাবে না।

***
আদনান আর জয়ীতার সম্পর্কের সমীকরণ একরকম ই আছে। আদনান এখন খুব ব্যস্ত। এই নিয়ে জয়ীতার সূক্ষ্ম অভিমান থাকলেও সেটা বলছে না। অভিমান বুঝতেও দিচ্ছে না। প্র‍্যাকটিস, আরও কিছু ব্র‍্যান্ডের এন্ডোর্সমেন্ট সহ নানান কাজে সবসময় ই বিজি থাকে। প্রথম প্রথম জয়ীতার কাছে ব্যাপার টা স্বাভাবিক মনে হলেও আজকাল খুব ই বিরক্ত লাগছে।

আজ অনীশের বিয়েতেও আদনানের যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। জয়ীতা যাবার কথা বললে আদনান বলল,

“আমি না গেলে হয় না?”

জয়ীতা কঠিন গলায় বলল,

“কোনোভাবেই হয় না। এতো দামী গিফট নিয়ে যাব। আমরা কী রাক্ষুসে খাওয়া খেতে পারি? আর যদি রাক্ষুসে খাওয়া না খাই তাহলে টাকা উসুল হবে গিফটের! গিফটের টাকা উসুলের জন্য হলেও আপনাকে যেতেই হবে। ”

আদনান হেসে ফেলল। খেয়াল করে দেখলো যে জয়ীতা কথাগুলো মজার ছলে বললেও ওর চোখ, মুখ শক্ত হয়ে আছে। আদনান হাসতে হাসতে বলল,

“তুমি নরমাল হও। আমি তৈরী হয়ে নিচ্ছি। ”

অনীশের বিয়ের রিসিপশনেও জয়ীতা নরমাল থেকেছে। হেসে সবার সঙ্গে কথাও বলেছে। কিন্তু বাসায় ফিরেই সরাসরি আদনান কে বলল,

“আমি কয়েকদিনের জন্য বাইরে যাব। ”

আদনান স্বাভাবিক গলায় জিজ্ঞেস করলো,

“বাইরে কোথায়?”

“কক্সবাজার। ”

“ওকে। কবে যাবে বলো। আমাকে সময় বের করতে হবে তো। ”

“না আমি একা।”

“একা কেন?”

“নিরিবিলি তে স্ক্রিপ্ট টা কমপ্লিট করতে হবে তাই। ”

“আচ্ছা।”

আদনান আচ্ছা বললেও বেশ বুঝতে পারলো যে জয়ীতা ঝগড়ার ম্যুডে আছে। কিন্তু হঠাৎ কী হলো বুঝতে পারলো না। বোঝার অবশ্য চেষ্টাও করলো না। নিজের মতো থাকতে দিলো।

****
জয়ীতাকে কক্সবাজার যাবার সব ব্যবস্থা করে দিলো আদনান। জয়ীতার কক্সবাজার যাবার উদ্দেশ্য যে শুধু নিরিবিলি তে কাজ করা সেটা না। অনেকখানি অভিমানও আছে আদনানের উপর। শত শত অভিযোগ। অনেক অভিমান, শত শত অভিযোগ থাকা সত্যেও বাড়ি থেকে বের হবার পর জয়ীতার ভীষণরকম মন খারাপ হলো। আদনান এয়ারপোর্ট অবধি পৌছেও দিলো। জয়ীতা সিদ্ধান্ত নিলো আদনান যদি ও’কে থেকে যেতে বলে তাহলে ও আর যাবে না। নিরিবিলিতে থাকার চেয়েও বেশী যে ওর অভিমান হয়েছে সেটা আদনানের এখন আর না বুঝলেও হবে। শুধু থেকে যেতে বললেই থাকবে।

কিন্তু আদনান ও’কে আর থাকতে বলল না। ভালো থেকো, নিজের যত্ন নিও এই দুটো বাক্য ছাড়া আর কিছুই বলল না। অভিমানে জয়ীতার চোখ উপচে পানি পড়তে লাগলো। আদনান দেখেও যেন দেখলো না। হাসিমুখে বলল,

“যাও জয়ীতা। দেরী হয়ে যাচ্ছে। ”

জয়ীতা হাতের উল্টোপিঠে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেল।

***

এখনো পুরোপুরি শীত শেষ হয় নি। ছুটির মরসুম চলছে। তবুও রিসোর্ট টা বেশ ফাঁকা। জয়ীতার কাছে রিসোর্ট টা বেশ ভালো লাগছে। এখানেও উইন্ডোসাইডে বেড হবার কারণে চোখ খুলেই প্রথমে জানালা খুলে সকালের বিশুদ্ধ বাতাস টুকু উপভোগ করলো। তবে সকালের চা’টুকু মিসিং। জয়ীতা খানিকক্ষণ জানালার পাশে বসে আবারও শুয়ে পড়লো। আদনান ওর অগোছালো লাইফ টা’কে এমন ভাবে পালটে দিয়েছে যে আগের লাইফে ফিরতেও পারছে না। বেশি সময় ঘুমাতে চাইলেও তাই ঘুম টা ভেঙে যায়। বিছানায় গড়াগড়ি করেও লাভ হয় না, ঘুম আসতে চায় না।

রুম সার্ভিসের লোকের ধাক্কাধাক্কিতে জয়ীতাকে অনিচ্ছ্বাসত্যেও বিছানা ছাড়তে হলো।

চা বানানো যাবতীয় সরঞ্জাম রেখে গেছে। জয়ীতা হাত, মুখ ধুয়ে ফোন টা হাতে নিলো। না কেউ ফোন করে নি। ফোন টা রেখে চা বানাতে গেল। তখনই মাখন রঙা খাম টা চোখে পড়লো। খামের প্রাপকে ও’র নাম লেখা। প্রেরকে কোনো নাম নেই।

জয়ীতা খাম খুলল। একটা চিঠি আছে। চিঠির প্রথম লাইনগুলো না দেখে শেষ লাইন টা আগে দেখলো। চিঠির শেষে নাম না থাকলেও শেষ লাইনে বুঝে ফেলল এটা কার চিঠি।

চিঠি পড়ার আগেই আনন্দে জয়ীতার চোখে পানি এসে গেল। বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করে দিয়েছে। গভীর ভালো লাগায় হাত, পা কাঁপতেও শুরু করেছে। আজকের তারিখ টা ও জীবনেও ভুলবে না৷ নিজে তো মনে রাখবেই ছেলেমেয়েদেরও এই দিন টা মনে রাখতে বলবে।

জয়ীতা চিঠি পড়তে শুরু করলো।

জয়ীতা,

কিছু কথা মুখোমুখি বলা যায় না। দেখা গেল আমি বলতে শুরু করলাম তুমি হয়তো অদ্ভুত কোনো প্রশ্ন করে বসলে। তখন বলার ম্যুড টাই চলে গেল। ম্যাসেজে লিখতে গিয়ে দেখি আঙুল গুলো বিদ্রোহ করছে। এগোয় না।

জয়ীতা তুমি কী জানো তোমার সঙ্গে আমার যখন দেখা হয়েছে তখন আমি জীবনের সবচেয়ে খারাপ সময় পাড় করছিলাম। নোভার ছলচাতুরী, বাবার অসুস্থতা সবকিছু এক সঙ্গে। মায়ের ড্রয়ার থেকে টাকা চুরি করে প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে টাকা খুইয়ে আমি যখন ফিরছিলাম তখন তোমার সঙ্গে দেখা হলো। জীবনে আরেকবার যে তোমার সঙ্গে আমার দেখা হবে সেটা জানতাম না। সেই দিন থেকে আমার জীবনের আরেকটা অধ্যায় শুরু হয়েছিল। অসুস্থ বাবার ট্রিটমেন্ট চলাকালীন সময়ে আমার সুস্থ মা চলে গেলেন। সময়ের ব্যবধানে বাবাও। মামী আমাদের ছায়া হয়ে রইলেন। একেকটা ঘটনায় আমি অনেকখানি বড় হতে থাকলাম। একটা সময় খেয়াল করলাম যে এখন আর অল্পতেই কান্না আসে না। সময় যতই গড়াতে লাগলো ততোই আরও শক্ত হতে লাগলাম। ভেবেছিলাম সামনে হয়তো আরও শক্ত হবো। একপর্যায়ে দেখা যাবে শুধু বাইরের শরীর টাই রক্ত মাংসের। ভেতরের মন টা পাথরের হয়ে গেছে।

আমার ছন্দছাড়া জীবনে তোমার সঙ্গে আবারও দেখা হলো। এটা কী তোমার কাছে কাকতালীয় মনে হয়? আমার কিন্তু একদমই হয় না। সেই ট্রেনে দেখা হওয়া, পাশাপাশি সিটে দুজন বসা, ছয়শ বিশ টাকার ঘটনা, দিল্লীর ঘটনা, এমনকি মামীর সাথে তোমার আলাপ হওয়া সবটাই সৃষ্টিকর্তার প্ল্যান। ঢাকা শহরে এতো মেয়ে থাকতে তোমার সঙ্গেই কেন জুলিনা মামীর দেখা হতে গেল বলোতো! আমি বিশ্বাস করি যে এটা স্রষ্টার প্ল্যান। সে চাইছিল আমরা যেন একে অপরের হই।

এই কথাগুলো আমি অনেকদিন আগেই ভেবেছি। নিজের মন কে বারবার প্রশ্ন করেছি, সবগুলো ঘটনা পর পর সাজিয়ে মেলানোর চেষ্টা করেছি। আমার অবচেতন মন একটা কথাই বলেছে, আদনান ইউনিভার্স চাইছে তোমরা একে অপরের হও।

এবার তোমার কিছু কথা বলি। তুমি যেমন আছ তেমনই থেকো। শুধু একটা বিষয় খেয়াল রেখো যা কিছু করবে সেটা শুধু নিজের জন্য, নিজের ভালোলাগার জন্য করবে। কাউকে দেখানো কিংবা প্রমাণ করার কিছু নেই। তুমি ভালো আছ, আনন্দে আছ এটাই বড় ব্যাপার।

যাদের পছন্দ না, যারা অতীতে আমাদের সঙ্গে ভালো করে নি তাদের মনে রেখে বর্তমানের সময়টাকে নষ্ট করা ঠিক না। সাইমুন নামের ভদ্রলোক কে আমি চিনিনা। তার বিষয়ে কোনো কিছু জানার ইচ্ছেও আমার নেই। তাকে ভেবে কোথাও না যাওয়া, কাউকে ফেস না করা মানে কিন্তু তাকে গুরুত্বই দেয়া। আমি চাইছি সেটা না হোক। আমি চাই তার সঙ্গে দেখা হলে তুমি তার চোখে চোখ রেখে কথা বলো।

আয়নায় আঠা লাগানো চিরকুটগুলোর সন্ধান নওশিন দিয়েছে। আমার বোনেরা একেবারেও পর হয়ে যায় নি তাহলে! কী বলো! চিরকুট গুলো পাওয়ার পর রাতটা কিন্তু নির্ঘুম ই কেটেছে। অপেক্ষা করেছি সকাল হবার।

আর হ্যাঁ তোমার দেয়া ছয়শ টাকার সব টা সেদিন খরচ করিনি। কিছু টাকা আজও আছে। ওই টাকা জীবনেও পাবে না।

এখানে আসার আগে সেদিন যে কাঁদলে সেটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আমার জীবনের খুব সুন্দর মুহুর্তগুলোর একটি। তোমাকে কাঁদতে দেখে এতো খুশি হয়েছি সেটা ভেবো না। তুমি আমার জন্য কেঁদেছো সেজন্য।

সুইমিংপুলের পাশে বসে কফি খেতে খেতে বোর হয়ে যাচ্ছি। চিঠি পড়া শেষ হলে চলে এসো। একটা গোপন কথা বলেই চলে যাব।

***
জয়ীতা নীল সাদা শাড়িটা পরে এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে আস্ত আকাশ টা হেটে হেটে আদনানের সামনে চলে আসছে।

চলবে…..