খড়কুটোর বাসা পর্ব-৯+১০

0
174

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৯
#Jhorna_Islam

যুথি আসো তোমাকে তোমার দাদির কাছে দিয়ে আসি।

কথাটা বলেই ইরহান রুমে ঢুকে যুথির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

যুথির রা’গ উঠে যায় ইরহানের মুখে কথাটা শুনেই।চিললিয়ে বলে,,কি বললেন আপনি?..

ওরে বাবা আস্তে এতো রে’গে যাচ্ছো কেন যুথি রানী?

— রাগার মতো কথা বলবেন তো রাগবো না তো কি করবো?
কথাটা বলেই যুথি তার কাজে আবার মন দেয়। এখনো ফুপাচেছ মেয়েটা।ইরহান যুথির মুখের দিকে তাকিয়ে রয়।

মাত্রই ইরহান রুমে আসে।দরজার পাশে এসে দেখে যুথি এক হাতে চোখের পানি মুছে আর আরেক হাতে সব কিছু গোছগাছ করে ব্যাগে নিচ্ছে।

তাই ইরহান ইচ্ছে করেই যুথিকে তার দাদির কাছে দিয়ে আসার কথা বলেছে যুথিকে রাগানোর জন্য।

যুথি এক মনে তার কাজ করে চলেছে।ইরহানের দিকে ফিরে ও তাকাচ্ছে না। আর না ইরহানের সাথে কোনো কথা বলছে।ইরহান বুঝতে পারছে যুথি তার সিধান্তে প্রচুর কষ্ট পেয়েছে। সাথে রেগে ও আছে।তাই তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে অশ্রুরা এসে চোখের কোণে জায়গা করে নিয়েছে।

ইরহান যুথিকে ডাকে,,যুথি এদিকে এসোতো কথা আছে।যুথি তবুও ইরহানের কথা শুনে না।না ডাকে,সারা দেয় সে তারাতাড়ি তার কাজ করছে।

ইরহাম যুথির একটা হাত টান দিয়ে যুথিকে নিজের সামনে এনে দাঁড় করায়।যুথি ইরহানের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য মো’চড়া মো’চড়ি করে কিন্তু পারে না। প্রায় অনেক সময় করার পর ও যখন ছাড়াতে পারলো না তখন হা’ল ছেড়ে দেয়।চুপ করে মুখ টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখে।

যুথির কা’ন্ডে ইরহান মিটমিটিয়ে হাসে। কি হলো যুথি রানী শক্তি শেষ? এটুকুতেই হাঁপিয়ে হা’ল ছেড়ে দিলে?

দেখলে তো তোমার বরের হাতে অনেক শক্তি। তোমার মতো পুচকে মেয়েকে কিছু একটা করে ঠিক খাওয়াতে পারবে।

ইরহান যুথির থুতনিটা ধরে নিজের দিকে ফিরিয়ে বলে,,যুথি রানী আমার দিকে তাকাও। কথাটা বেশ সিরিয়াস ভাবেই বলে।এতোসময় ইরহানের কথায় রসিকতা থাকলেও এখন নেই। যুথি ইরহানের দিকে চোখ তুলে তাকায়।

আমার উপর কি খুব রা’গ হচ্ছে?

— জানিনা।

— রা’গ হলে এই যে এই অ’ধম তোমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে, যা শাস্তি দেওয়ার দিয়ে নিজের রা’গ কমিয়ে ফেলো।নিজের ভিতর রা’গ পোষে রাখতে নেই।এটা খুবই মা’রাত্মক জিনিস। একটা মানুষকে ধ্বংস করতে তার রা’গ ই যথেষ্ট।

— আপনাকে আমার রা’গ নিয়ে না ভাবলেও চলবে।কি বলবেন বলুন।

আমি যে সিদ্ধান্ত টা নিয়েছি না? অনকে ভেবে চিন্তে নিয়েছি।এমনিতেও এই লোক গুলোর সাথে থাকলে ভালো মানুষ ও অসুস্থ হয়ে যাবে। মানসিক ভাবে এক সেকেন্ডের জন্য ও এদের জন্য শান্তি পাবো না। এরা অসুস্থ মস্তিষ্কের লোক এদের সাথে আমাদের একদম থাকা ঠিক হবে না। এই লোক গুলো টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। সম্পর্কের কোনো মূল্য বুঝে না এরা। অতিরিক্ত টাকা লোভী মানুষ গুলো খুব ভয়ংকর হয়। এরা টাকার জন্য কোনো পা’প কাজ করতে ও পিছ পা হয় না।

আমি চাইলে অনেক কিছু করতে পারতাম। কিন্তু এসব করতে আমার মন সায় দিচ্ছে না। এরা অনেক বুদ্ধি করে সব কিছু করেছে। আমি যেই একাউন্টে টাকা পাঠাতাম, কিছু দিন আগে কি একটা সমস্যার কথা বলে একাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে আরেক একাউন্টে জমা রেখেছে। জায়গা জমি সবই তো ঐ মহিলার নামে করেছে। এসব করতে গেলে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো।তাও সব ফিরে পেতাম কি না সঠিক জানা ছিলো না। এসব করতে ও,অথবা টাকার প্রয়োজন। টাকা ছাড়া মানুষ এখন এক পা ও এগুবে না।

এতোদিন ভালোবাসা পাওয়ার আশায় এতোটাই কাতর ছিলাম এদের ছ’লনা ধরতে পারি নি।

আমার বাবা হয়তো গরিব ছিলেন যুথি কিন্তু আমাদের গ্রামে উনার অনেক সম্মান ছিলো।সকলের প্রিয় ছিলেন তিনি।আমার বাবার কথার মূল্য ছিলো গ্রামের মানুষের কাছে। এসব করলে মানুষ কি বলবে? আমার বাবার রেখে যাওয়া সম্মান সব ধুলোর মিশে যাবে।ঐ লোকটার তো কোনো দোষ নেই।

আমার ভাবতে ও ঘৃ’ণা লাগছে ঐ অমানুষ গুলোর শরীরে আমার বাবার র/ক্ত বইছে।আমার বাবার সন্তান হয়েও দুইটার একটা ও আমার বাবার মতো হয়নি।সব ঐ তাছলিমা বানুর বৈশিষ্ট্য পেয়েছে।

এদের মুখ দেখতে ও আমার ইচ্ছে করছে না যুথি।আমি এখানে থাকলে দ’ম বন্ধ হয়ে ম’রে যাবো। আমার এসব কিছু চাই না। আমার বিলাসিতা লাগবে না।আমার শান্তি দরকার।

আমি কোনো প্রতিবাদ না করায় আমাকে তোমার কা/পুরুষ মনে হচ্ছে তাই না? খারাপের সাথে আমিও খারাপ হতে চাই না। কেউ কখনো কাউকে ঠকিয়ে বেঁচে যায় না। (লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম)একদিন না একদিন সেটার ফল ঠিক ভোগ করবে। আমি সব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম।উনিই এদের শাস্তি দিবে হয়তো দুইদিন পর নয়তো দুইবছর পর। কোনো না কোনো দিন ঠিক শাস্তি পাবে।

ওদের ভালো করে ডানা ঝাপটে উড়তে দাও যুথি।একদিন ঠিক ডানা ভেঙে পরবে।একটা কথা আছে জানতো,,”,পিপীলিকার পাখা গ’জায় মরিবার তরে।”

যুথি ইরহানের কথা গুলো মন দিয়ে শুনেছে। মনে মনে ভাবে লোক টা এতো ভালো কেন? তাই ঠিক করে নেয় ইরহান যা বলবে তাই সে মেনে নিবে। সবাইতো আর প্রতিশোধ পরায়ণ হয়না।

তাই যুথি চুপচাপ আবার সব গোছানোর কাজে মন দেয়।

——————————-

এই দিকে তাছলিমা বানু কে ঘিরে গোল বৈঠক বসিয়েছে বাড়ির সকলে।

ইশান হাতে মলম লাগাতে লাগাতে বলে,,অবশেষে বিনা ঝামেলায় আ’পদ বিদেয় হতে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম সহজে সব ছেড়ে দিতে রাজি হবে না।

হয়তো বুঝে গেছে ঝামেলা করে কোনো লাভ নাই।তাই চুপচাপ চলে যাচ্ছে। এখন শুধু টাকা দিয়ে আয়েশ করে জীবন চলবে।

তাছলিমা বানু চুপচাপ বসে আছে। কোনো কথা বলছে না।

ইমন তাছলিমা বানুকে লক্ষ করে বলে,,,মা তুমি চুপচাপ বসে আছো কেনো? তোমার তো এখন খুশি হওয়ার কথা।

তাছলিমা বানু ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোরা এবার নিজের রুমে যা আমি একটু বিশ্রাম নিবো।

তাছলিমা বানুর কথায় সকলেই সম্মতি জানিয়ে রুম থেকে চলে যায়। তাছলিমা বানু চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকে।

———————————–

যুথির গোছগাছ সব শেষ। তেমন কিছুই নেওয়ার নেই কিইবা নিবে। নিজের ২ টা জামা,,ইরহানের জামা কাপড় ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র কয়েকটা।

যুথি সব ঠিক ঠাক মতো নিয়েছো?

হুম।

আমার পাসপোর্ট আর কাগজপত্র গুলো ভালো করে আবার চে’ক করে দেখো নিয়েছো কিনা। পরে যেনো আর এখানে পা রাখতে না হয়। আমি আর চাই না এখানে পা রাখতে।

যুথি আবার সব চে’ক দিয়ে বলে নিয়েছি।

ওকে তো চলো যুথি রানী এবার বেরিয়ে পরি।কথাটা বলেই ইরহান হাত বাড়িয়ে দেয়।

যুথি ইরহানের হাতটা শক্ত করে ধরে বলে,, কোথায় যাবো আমরা বোকা পুরুষ?

দেখি কোথায় যাওয়া যায়। ভাবতেছি গাছ তলা গিয়ে থাকবো বউকে নিয়ে।তারপর খড়কুটো জোগাড় করে বাসা বানাবো “খড়কুটোর_বাসা”। দারুণ হবে না ব্যাপারটা?

আমার আর যুথি রানীর “খড়কুটোর বাসা “।

যুথি ইরহানের দিকে অপলকে তাকিয়ে রয়।

ইরহান যুথির চাহনি দেখে বলে,,কি ব্যাপার তুমিকি আমার খড়কুটোর বাসা তে থাকতে রাজি নও? বলতে পারো তাহলে তোমাকে তোমার দাদির কাছে পাঠিয়ে দেই?

যুথি ইরহানের পেটে চিমটি কেটে বলে,,,একদম মে’রে দিবো বোকা পুরুষ। আমাকে কোথাও দিয়ে আসার চিন্তা ও মাথায় আনলে। বোকা পুরুষ কোথাকার।

সব সময় আপনার বোকামি আমি সহ্য করবো না বলে দিলাম।

ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,

“আমার বোকামিতে যদি তোমার ভালোবাসার শাসনগুলো পাওয়া যায় তাহলে আমি সারাজীবন তোমার বোকা পুরুষ হয়ে থাকতে রাজি।”

আমার বোকা পুরুষ হয়ে আমার কাছেই থাকেন।এরপর অন্য কারো কাছে বোকামির পরিচয় দিলে মাথা ফাটিয়ে দিবো।আপনার এই দয়ালু মনোভাব যেনো আজই শেষ হয়।এরপর নিজের ব্যতীত অন্য কারো কথা আগে ভাববেন না।

ইরহান মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

তারপর ইরহান এক হাতে ব্যাগ আরেক হাতে যুথির হাত আবদ্ধ করে বেরিয়ে আসে সেই বাড়ি থেকে।

#চলবে,,,,,,,,,

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১০
#Jhorna_Islam

বর্তমানে ইরহান ও যুথি একটা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
যুথি ঘরটার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে উঠে,, বোকা পুরুষ এটা তো,,,, আর কিছু বলার আগেই ইরহান বলে উঠে,, এটা তোমার আর আমার নতুন ঠিকানা।

ইরহান যুথির পাশে নিজের ব্যাগ টা রেখে দেয়। তারপর যুথির হাত টা আলগোছে ছেড়ে দিয়ে ঘরের দরজার পাশে এগিয়ে যায়।

দরজার পাশে বসে পরে।কাঠের দরজার চৌকাঠের নিচ দিয়ে যে ফাঁকা জায়গা টা আছে সেইখান দিয়ে হাত টা একটু ভিতরে ঢুকায়।

যুথি চুপচাপ ইরহানের কাজ দেখছে।

ইরহান হাত দিয়ে দরজার নিচ থেকে কিছু একটা বের করে এনেছে। খুবই ছোট একটা জিনিস।যুথি বুঝতে পারলো না কি সেটা।ইরহানের হাতের দিকে তাকিয়ে মাথা উচিয়ে দেখার চেষ্টা করলো জিনিস টা কি।

যুথির উঁকি ঝুঁকি দেখে ইরহান নিজেই তার হাতে রাখা জিনিস টা যুথির সামনে তুলে ধরে ব্রু উচায়।

একটা ছোট চাবি।

বোকা পুরুষ কিসের চাবি এটা?

তোমার আর আমার খড়কুটোর বাসার চাবি এটা বুঝলে।

এই ঘরের চাবি?

হুম।

তারপর ইরহান চাবি দিয়ে খুব দ্রুত তালা টা খুলে ফেলে।দরজা না খুলেই পিছনে ফিরে যুথির দিকে তাকায়। তারপর কিছু একটা ভেবে বলে,,আমি দুই মিনিটে আসছি তুমি একটু দাঁড়াও যুথি রানী।এখানেই দাড়াবে ঘরে ঢুকবে না কিন্তু।

যুথি ইরহান কে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।

ইরহান কয়েক কদম গিয়ে ও আবার ফিরে তাকিয়ে বলে,, তুমি আবার ভ’য় পাবে না তো যুথি রানী?

ইরহানের কথায় যুথির মুখে হাসি ফোটে উঠে। আরে বোকা পুরুষ আপনি যান।আমি একটুও ভ’য় পাবো না। আপনার যুথি রানী এতো ভিতু না।

ইরহান একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।

যুথি ইরহানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আশে পাশে চোখ বোলায়।রাত প্রায় অনেক হয়েছে এদিক টাতে একটু অন্ধকার এতো সময় ইরহানের মোবাইলের আলো জ্বালানো ছিলো তাই সব দেখা গেছে। অন্ধকার দেখেই হয়তো তার বোকা পুরুষ টা ভেবেছে সে ভ’য় পাবে।

বেশি সময় অপেক্ষা করায়নি ইরহান।কিছু সময় পর ই ফিরে এসেছে। তবে এখন আর ইরহানের হাতের মোবাইলের আলো নেই।অন্ধকারে হালকা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ইরহানের হাতে কিছু একটা আছে। কিছু একটা এনেছে সে।তবে যুথি বুঝতে পারলো না ইরহান কি আনতে গিয়েছিলো।

আপনার হাতে কি বোকা পুরুষ?

আমার রানী কে তার খড়কুটোর রাজত্বে বরণ করার জন্য কিছু একটা। এখনই দেখতে পাবে।

আমি কিন্তু একটু একটু ধারণা করতে পারছি কি হাতে।মিষ্টি ঘ্রান টা কিন্তু নাকে লাগছে।

ইরহান যুথির কথার প্রতি উত্তরে কিছু না বলে,,দরজাটা কাধ দিয়ে ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে ঢুকে যায়।

যুথিও ইরহানের পিছন পিছন এগিয়ে গিয়ে ঘরের ভিতর পা রাখবে ঠিক সেই মুহূর্তে ইরহান বলে উঠে,,, যুথি একমিনিট ঢুকো না।যুথি ইরহানের কথায় ভরকে যায়। (লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম) কি করতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছে না।

তার মধ্যে হুট করে চোখের সামনে আলো জ্বলায় যুথি চোখ মুখ কোচকে ফেলে। তারপর কিছু টা স্বাভাবিক হয়ে চোখ পিটপিট করে তাকায়।ইরহান ঘরে বাতি জ্বালিয়েছে।

তারপর ইরহান যুথির সামনে এসে দাঁড়ায়। ইরহানের হাত ভর্তি বকুল ফুল।ফুলের মিষ্টি ঘ্রান এসে নাকে বারং বার বারি খাচ্ছে।

“এই ছোট্ট খড়কুটোর বাসা তে তার রানী সাহেবা কে স্বাগতম। ”

ফুল গুলো ছিটিয়ে ইরহান যুথির উপর ফেলে তারপর বলে,,ভিতরে প্রবেশ করুন আমার গরিব রাজ্যের রানী সাহেবা। বলে হাত বাড়িয়ে দেয়,,,,,

যুথি মুচকি হেসে ইরহানের হাতটা ধরে ঘরের ভিতর প্রবেশ করে।

প্রথম বার তো কিছুই করতে পারলাম না তোমার জন্য। তাই একটু ছোট্ট প্রয়াস চালালাম।

এটা ছোট্ট না বোকা পুরুষ। এটা আমার কাছে মহামূল্যবান।

যুথি ঘরের চার পাশে সব কিছু দেখতে থাকে।দুই রুমের ছোট্ট একটা দু-চালা ঘর। এই টা সেই ঘরটাই যেটা এই বাড়িতে ঢুকতে সর্বপ্রথম যুথি দেখেছিলো। কে জানতো এটাই যে তার ঠিকানা হবে?

ঐ বাড়িটা এই ঘর থেকে বেশ দূরে। এটা গেটের কাছাকাছি আর ঐটা অনেক টা ভিতরে। তবে এই ঘর উল্টো মুখি করে করা।এই ঘরের পিছন দিয়ে ঐ ঘরে যাওয়ার রাস্তা। এটা একটা ভালো ব্যাপার।ঐ লোক গুলো যাওয়া আসা দেখতে হবে না।

ঘরের ভিতর সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক জিনিস ই আছে দেখা যায়। ছোট ছোট হাড়ি পাতিল ও আছে। দুই জন বা তিনজনের সংসারের জিনিস পত্র।

সব কিছু খুব সুন্দর করেই সাজিয়ে রাখা। তবে অনেক দিন মনে হয় কেউ প্রবেশ করে নি তাই ধুলোবালি জমে আছে।

যুথি সব কিছু দেখার মাঝেই হুট করে হাতে টান অনুভব করে। ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে বলে,,, যুথি এটা আমার মায়ের ছোট্ট সংসার ছিলো। এই ঘরটায় আমার মায়ের ছোয়া রয়েছে।

আমার বাবা মায়ের ভালোবাসার সংসার ছিলো এই ঘরটায়।আমার ছোটোবেলা কেটেছে এখানে। আমরা তিনজন এখানে থাকতাম।আমার মা তার যত্ন ভালোবাসা দিয়ে এই ঘরটা সাজিয়ে ছিলো।এসব জিনিস পত্র আমার মায়ের করা।

বাবা যখন মা কে বিয়ে করে তখন বাবা তেমন কোনো কাজ করতো না।ছোট খাটো কাজ করে দুইজনের সংসার চালাতো।দাদা দাদি বাবার বিয়ের আগেই মা’রা গেছে। আত্নীয় স্বজন রা জোর করে বাবা কে মায়ের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়।নয়তো কে দেখবে বাবা কে? তেমন কেউ ছিলো না বাবার খেয়াল রাখার। আত্নীয় রা তো আর বাবার জন্য সব ছেড়ে এখানে পরে থাকবে না।আর বাবা কে যে ওদের সাথে নিয়ে যাবে সেই সামর্থ্য ও ছিলোনা।তখন সময়টা ই এমন ছিলো সকলের অভাবের সংসার। একজন মানুষ মানেই অনেক খরচা তার খাওয়া পড়ার।

তাই সকলে ভেবে চিন্তা করে মাকে পছন্দ করে বাবার সাথে বিয়ে দেয়।বাবা রাজি হতে চায় নি কারণ সে তখনো তেমন কোনো কাজই করতো না। কি খাওয়াবে বিয়ে করে? এক বেলা খাবার দিতে পারলে পরের বেলা দিতে পারবে কি না সন্দেহ তাই জন্য। পরে সকলের জোরাজোরি তে অবশেষে মা কে বিয়ে করে ঘরে আনে।

আমার মা তারপর বাবার পাশে থেকে হাতে হাত রেখে এই সংসারটার হা’ল ধরে।সব কিছু করে।বিয়ের কিছু দিন খুব কষ্টে পার করে দুইজন। তারপর বাবার কাজ হয়।দিন ঘুরতে থাকে।ভালো সময় আসতে থাকে। তখনই জানতে পারে আমার পৃথিবীতে আসার খবর।

বাবার হাতে টাকা হয়।ঠিক করে ছোট্ট দু-চালা ঘর থেকে চৌচালা ঘর দিবে। কিন্তু মা এই ঘরটা ভাংতে দেয়নি।যেহেতু বাড়িতে অনেক জায়গা আছে তাই বলেছে অন্য দিকে তুলতে এটা যেন না ভাঙে।এটা তার এই বাড়িতে আসার প্রথম স্মৃতি। কতো ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। নতুন ঘরে বেশি দিন থাকতে পারে নি মা তার আগেই,,,

কথাটা বলতে গিয়ে ইরহানের গলা টা ধরে আসে।

যুথি এগিয়ে এসে ইরহানের কাঁধে হাত রাখে। ইরহান যুথির দিকে তাকিয়ে আবার বলতে শুরু করে,,

বাবা মা কে অনেক ভালোবাসতো।আমার জন্য শুধু ঐ মহিলা কে বিয়ে করেছিলো।আমি তখন একা বাবা কাজে চলে গেলে আমাকে দেখার কেউ ছিলো না। তাই করেছে।বাবা থাকতে ঐ মহিলা কি যে ভালো ছিলো। তবে আমার ব্যাপারে সব সময় উদাসীন ছিলো কাউকে সেটা বুঝতে দিতো না। আমিও বলিনি ভেবেছি সব ঠিক হয়ে যাবে। একদিন ঠিক ভালোবাসবে। বাবা আমাকে প্রায় ই জিজ্ঞেস করতো উনি কেমন খারাপ ব্যবহার করে কিনা।আমি তখন বলতাম অনেক ভালো আমাকে খুব ভালোবাসে আদর করে। আমি এগুলো ই কল্পনা করতাম উনাকে নিয়ে। সেই কল্পনা থেকেই খুবই গভীর ভাবে কথা গুলো বলতাম।তাই বাবা ও ভেবেছে সত্যি বুঝি সব। হাহ্ বাদ এসব কথা।

এখন যে ঘর টা তুলেছেনা? ঐটার সামনেই ছিলো চৌ-চা’লা ঘর টা। ঐ ঘরের পিছন দিয়ে জায়গা কিনে ঘরটা তৈরি করা হয়েছে। আর বাবার বানানো চৌ-চা’লা টা ভেঙে ফেলে ঐখানে উঠুন বানানো হয়েছে।

মায়ের মৃত্যুর পর বাবা ও এই ঘর টা ভাংতে দেয়নি। মায়ের হাতের সব জিনিস পত্র এই ঘরে সব যত্ন সহকারে রেখে দিয়েছে। নিজে সব কিছু পরিষ্কার করে রাখতো। তালা দিয়ে রাখতো কাউকে ঢুকতে ও দিতো না।আমি ছাড়া।

কে জানতো আমার মায়ের রেখে যাওয়া সেই ছোট্ট সংসার টা ই এখন আমাদের হবে? আমি বিদেশে যাওয়ার আগে সব পরিষ্কার করে রেখে গিয়েছিলাম।পরশুদিন ও ঢুকেছি।কিছু কিছু পরিষ্কার করলেও সব করা হয়নি।ধুলো বালি লেগে আছে।

আরে বোকা পুরুষ যুথি থাকতে চিন্তা কিসের? যুথি নিজের ওড়না টা কোমড়ে ভালো করে বেঁধে কাজে লেগে পরে।

সবকিছু ঝেড়ে ঝুড়ে পরিষ্কার করতে থাকে।

ততক্ষণে ইরহান তাদের ব্যাগের ভিতর থেকে একটা বিছানার চাদর বের করে।যুথিকে নিতে দেখেছিলো সে চাদর টা। হয়তো ভেবেছে রাস্তাতেই থাকতে হবে তাই নিয়েছিলো।ইরহান হাতে চাদর টা ধরে হাসে।

রুমে একটা আলমারি রয়েছে বেশ মজবুত ও দামি কাঠের তৈরি বোঝাই যায়। রুমে রাখা চৌকি টা ও আলমারির কাঠের তৈরি। যুথি বুঝতে পারলো।

ইরহান চাদর টা এনে বিছানায় বিছাতে গেলে যুথি টেনে নিয়ে যায় বলে,,আপনাকে কিছু করতে হবে না আমি একাই করতে পারবো।

মোটেও না আমি জ’ল’জ্যা’ন্ত মানুষ টা উপস্থিত থাকতে আমার বউ কে সব কাজে আমি সাহায্য করবো।

কেন? আমি একাই করতে পারি।

তোমার কথা কে শুনে? আমি তোমাকে সাহায্য করবো এর উপরে কোনো কথা হবে না।

তারপর আর কি সব কিছু দুইজন মিলে মিশে করে ফেলে।

আজকের জন্য আপাতত যা বেশি দরকার তা শেষ। দুইজনেই হাফ ছাড়ে। যুথি কোমড়ে বাঁধা ওড়না টা খুলে ফেলে।ইরহানের দিকে তাকিয়ে দেখে ইরহানের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। যুথি এগিয়ে গিয়ে যত্ন সহকারে কপালের ঘাম টুকু ওড়না দিয়ে মুছে দেয়।

ইরহান যুথির দুই গালে হাত রেখে বলে,, আমি তোমার জন্য তেমন কিছুই করতে পারলাম না যুথি।তোমার কোথায় থাকার কথা ছিলো অথচ,,,,,
তোমাকে শ্বশুর বাড়ির যোগ্য সম্মান টুকুও দিতে পারলামনা।এই পুরনো ভাঙা ঘরে থাকতে হবে।।

এখন একটু মানিয়ে নাও।সব ঠিক হয়ে যাবে। এই ছোট্ট ঘরটায় কখনো ভালোবাসার অভাব হবে না। আর একদিন ওদের থেকে ও বড় বাড়ি করবো ইনশাআল্লাহ। সেই বাড়ির একমাত্র মালকিন হবে আমার যুথিরানী।এখন যেমন এই ছোট্ট ঘরের রানী সে।

যুথি ইরহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,,,,,,,,

” ও আমার বোকা পুরুষ গো!
আমার লাগি খড়কুটো দিয়ে বাঁধিলা তুমি ঘর!
জোসনার আলো গায়ে মেখে, তোমার বু’কে মাথা রেখে,,
কাটিয়ে দিবো সেথায় আমি জনম ভর! ”

#চলবে,,,,,,,,,