খড়কুটোর বাসা পর্ব-৫+৬

0
187

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৫
#Jhorna_Islam

যুথি ইরহান কে কথা গুলো বলতে বলতে প্লেটের প্রায় অর্ধেকের বেশি খাবার খাইয়ে ফেলেছে।ইরহান যুথির বলা সবগুলো কথা মনোযোগ সহকারে শুনেছে। পাল্টা কিছু বলেনি।

যুথির কথাগুলো চিরন্তন সত্যি ইরহান ও মানে। কিন্তু এতোদিন যে সে এদের আসল রুপটা দেখতে পায় নি। এদের জন্য এতোকিছু করে গেলো আর এরা এতোদিন মুখোশ পরে ছিলো।

এইযে এদের আসল মুখোশ ধীরে ধীরে সামনে আসছে ইরহান চেয়েও কিছু বলতে পারছে না। ইরহান বরাবর ই শান্তি প্রিয় লোক।ঝু’ট ঝামেলা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। ইরহানের বাবা মারা যাওয়ার আগে বলেছিলো ইরহান যেনো ওদের খেয়াল রাখে। ইরহান ভেবে পায়না এতোদিন কিছু না করে এখন কেনো তারা এমন করছে। তাকেই বের করতে হবে এর আসল কারণ।

এতোদিন ইরহানের সাথে এরা এমন ব্যবহার করেনি।ওদের সাথে সম্পর্কটা এতোটা কাছের না হলেও এমন আচরণ করে নি কেউ।ইরহানের মাথায় আসছেনা এদের এমন আচরণেের কারণ। ইরহান ঐসময় ওদের কথা গুলো শুনে চাইলেই প্রতিবাদ করতে পারতো কেন জানি মন সায় দেয়নি।

ইরহানের ভাবনার মাঝেই যুথি ইরহানের মুখের কাছে আবার খাবারের লোকমা তুলে ধরে।ইরহানের ধ্যা’ন ভাঙে।

এই দেখো যুথি তোমার কথার তালে পরে সব আমি একাই খেয়ে ফেলতেছি। তুমিতো এখনো এক লোকমা ও মুখে নাও নি।

আমি আর খাবোনা বাকি টুকু তুমি খাও।পেট ভরে গেছে আমার।

জানা আছে এই অল্প কয়টা খেয়ে কি পেট ভরেছে আপনার। চুপচাপ খেতে থাকেন।

তোমার না প্রচুর খিদে পেয়েছে? আমি আর খাবো না এবার তুমি খাও।

— নানা আপনি আরেকটু খান।

— এখানে অল্প খাবার আছে যুথি এটুকু তে তোমার পেট ভরবে না। তুমি খাও।

— আচ্ছা ঠিক আছে। দুইজন একসাথে খাবার টুকু শেষ করি।আপনি একবার আমি একবার।

— একদম না। এইটুকু খাবারে বাচ্চাদের ই পেট ভরবে না। আবার আমাকে কেনো জোর করছো? আমিতো খেয়েছি।তুমি একটুও খাওনি।

— আপনি আমার কথা শুনবেন না?

— নাহ্।

— দুইজন এক প্লেট থেকে একসাথে খেলে এইটুকুতেই পেট ভরবে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখেন।

ইরহান কে যুথির সাথে অগত্যা খেতেই হলো।কি সুন্দর করে যুথি নিজের মুখে একবার খাবার দিচ্ছে আবার ইরহানের মুখে একবার পরম যত্নে তুলে দিচ্ছে। ইরহানের জানা নেই কবে কেউ এতো যত্ন সহকারে তাকে খাইয়ে দিয়েছে। মা মারা গেছে সেই ছোট্ট বেলা ঐসময়ের তেমন কিছুই মনে নেই।শুধু মাঝে মাঝে অনেক চেষ্টা করলে ঝাপসা স্মৃতি ভেসে ওঠে চোখে।

যুথির এতো যত্ন সহকারে খাওয়ানো দেখে কেন জানি ইরহানের চোখ দুটি ছলছল করে উঠে। ইরহান খুব ভালোবাসার কাঙাল।নিজের মা কে ছোট বেলা হারিয়েছে। বাবা কাজের জন্য বাইরে থাকতো বেশি সময় দিতে পারতো না। তাছলিমা বানু ইরহানের ব্যাপারে সব সময় উদাসীন থাকতো।তাও ইরহান একটু ভালোবাসা পেতে কতো কি করতো। পিছন পিছন ঘুরতো মা মা করে।

এই যে নিজের সব শখ আল্লাদ বাদ দিয়ে প্রবাস পারি জমিয়েছিলো ভেবেছিলো এবার মা কাছে টেনে নিবে আঁচল তলে একটু ঠাঁই দিবে। প্রতিবার যখন মায়ের ফোন থেকে কল যেতো বা ভাইদের ফোন থেকে কল যেতো ইরহান কি খুশি হতো। কিন্তু ওরা ওদের প্রয়োজনে কল দিতো ইরহানের খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য না। তাছলিমা বানু যা বলতো ইরহান তাই করতো মনে মনে আশা ছিলো একদিন না একদিন ঠিক একটু ভালেবাসা দিবে কাছে টেনে নিবে।

কিন্তু আজ সকালে নিজের কানে সব শোনার পর ইরহানের সব ধারণা ভুল হয়ে গেছে।

ইরহান মুখে খাবার তুলতে তুলতে যুথির মুখের দিকে তাকায়। যুথি অতটা সুন্দরী না সাধারণ একটা মুখ অথচ ইরহানের কি যে ভালো লাগছে দেখতে। নিষ্পাপ মুখ’শ্রী।

যুথির দিকে তাকিয়ে তাকিয়েই ইরহানের মনে হলো ও এই মেয়েটাকে ঠকিয়েছে।চরম ভাবে ঠকিয়েছে। স্বামীর দায়িত্ব তো ইরহান পালন করতে পারেনি। প্রতিটা মেয়েরই স্বামী শ্বশুর বাড়ি নিয়ে হাজারো স্বপ্ন থাকে।যুথির ও নিশ্চই আছে।

খাবার আর গলা দিয়ে নামলো না ইরহানের।যুথি খাবারের লোকমা মুখের সামনে নিলে না করে দেয়।যুথি আর জোর করে নি।

নিজেও খাবার তারাতাড়ি শেষ করে হাত ধুয়ে প্লেট টা খাটের নিচে রেখে দেয় কাল সকালে নিয়ে জায়গা মতো রাখবে।এখন ঐ লোক গুলোর মুখোমুখি হওয়ার একটু ও ইচ্ছে নেই। ইরহানের মুখে টা ধুয়ে দিয়ে নিজের ওড়না দিয়ে মুছে দেয়।

যুথি তোমার এখানে এইভাবে এসে পরা একদম ঠিক হয়নি।

হুট করে ইরহানের এমন কথায় যুথি কিছুটা চমকে ইরহানের দিকে তাকায়।

মানে?

আমি অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলাম যুথি তুমি এখন এখানে এসে একদম ঠিক করোনি। তুমি পরিস্থিতি টা বুঝতে পারছোনা। তোমাকে আমি বলতেও পারবো না।

যুথি ইরহানের চোখে চোখ রেখে বলল আপনি যে কোন পরিস্থিতি তে আছেন সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি। আপনি না বললেও এই বাড়ির প্রতিটা লোক কেমন আমার জানা হয়ে গেছে। আর আপনার সাথে কি করেছে তা ও।

ইরহান কিছু টা অবাক হয় যুথির কথায়। তুমি জানো? না মানে কিভাবে?

সকালে যে আপনি আমার সাথে কথা বলতে বলতে আপনার মায়ের রুমে যাচ্ছিলেন সেটা নিশ্চই মনে আছে? আর ওদের কথা শুনে আপনি ভুলেই গিয়েছিলেন আমি অপর পাশে ছিলাম।কল টা কিন্তু না আপনি কেটেছিলেন না আমি।ওদের সব কথা শুনে তারপরই আমি কল কেটেছি।

আমি যুথি যেখানে অন্যের উপর করা অ’ন্যায় অ’ত্যা’চার সহ্য করতে পারিনা একদম সেখানে কি করে আমার নিজের মানুষটার উপর হওয়া অন্যায় মুখ বুজে মেনে নেবো,?
ঐ স্বা’র্থপর মানুষ গুলো দিনের পর দিন একজন মানুষ কে ঠকিয়ে যাচ্ছে। তার সুযোগ নিচ্ছে জেনেও আমি চুপ থাকবো?

আপনাকে আমার ভালো করেই চিনা হয়ে গেছে। আর আমি যে এভাবে আসা ছাড়া এই বাড়িতে সহজে পা রাখতে পারবো না সেটাও বোঝা হয়ে গিয়েছিলো আমার।

হ্যা আমি মানছি আমার এভাবে আসা উচিৎ হয়নি। কোনো মেয়েই হয়তো এমন করে তার শ্বশুর বাড়িতে পা রাখে না। আমি কি করতাম? ওদের কথা গুলো শুনে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। এখন আমি এমন ভাবে আসায় আপনার কি খুব অসুবিধা হচ্ছে? আপনি চাইলে আমায় শাস্তি দিতে পারেন।

আমি ওদের অন্যায় একদম মেনে নিবো না।আপনি মহান হতে পারেন আমি না।

এখন ওদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য আপনি কি আমায় তাড়িয়ে দিবেন?

এসব কি বলছো যুথি? আমি এসব ভেবে বলিনি। তোমারতো কতো স্বপ্ন ছিলো হয়তো শ্বশুর বাড়ি নিয়ে।খালি হাতে আসতে হয়েছে তোমাকে এখানে।এসেও তো কারো কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাওনি। ইমন আর ইশানের বউ তোমাকে অপমান করে চলেছে।

আমি ওদের কে গুনায়ই ধরি না। ওদের অপমানের যোগ্য জবাব দিতে জানি।কথাটা বলেই জুথি বিছানার এক পাশে গিয়ে শুয়ে পরে।

ইরহান ও বাতি বন্ধ করে অপর পাশে এসে শোয়।যুথি চুপচাপ শুয়ে আছে কোনো নড়াচড়া ও করছে না। ইরহান শুয়ে থাকলেও চোখে ঘুম নেই।তার মাথায় নানান চিন্তা। সে বুঝে গেছে তার এমনভাবে চুপ করে থাকলে চলবে না।

হঠাৎ করেই ইরহান ফোপানোর শব্দ শুনতে পায়। পাশ থেকেই আসছে যুথি হয়তো কাঁদছে।

— যুথি কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?

যুথি কোনো সারা দেয় না। সে কেদেই চলেছে অপর পাশে ফিরে।

ইরহান এবার যুথিকে টেনে নিজের দিকে ফিরায়।কি হয়েছে কাঁদছো কেনো? আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো? তাহলে আমি মাফ চাইছি কেঁদো না আর।

যুথি মাথা নাড়িয়ে জানায় সে ইরহানের কথায় কষ্ট পায় নি।

তাহলে কেনো কাদছো? বাড়ির কথা মনে পরছে? তোমার দাদির কথা?

যুথি হুট করে ইরহানের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আর হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। এসব কিছু না বোকা পুরুষ।

ওরা আপনাকে ঠকিয়ে দিলো।সব দিক দিয়ে ঠকিয়েছে। আপনি তো এমন জীবন পাওয়ার কথা না।আপনার মতো মানুষের জীবন টা খুব সুন্দর হওয়ার কথা।ওরা কিভাবে পারে এমন করতে?

আমি এবার ভালো করে বুঝতে পারছি কেনো আমার মতো গরিব ঘরের একটা মেয়েকে আপনার সাথে জড়ালো।ওরা চায়নি আপনি ভালো কিছু পান। আপনার জীবনে আমাকে এনেও ঠকিয়ে দিলো ওরা।না পাবেন শ্বশুর বাড়ির আদর আপ্যায়ন না পাবেন শ্বশুর শ্বাশুড়ির ভালোবাসা।

আমি আপনার কষ্ট টা খুব ভালো করে বুঝতে পারছি।আমিও যে আপনার মতো একা কেউ নেই। আপনার ও কেউ নেই আমারও কেউ নেই। আমাদের কষ্ট এই লোক গুলো বুঝবেনা।

আপনাকে ওরা সব দিক দিয়ে ঠকিয়ে দিলো যে বোকা পুরুষ!

কে বলেছে আমি ঠকে গেছি? আমিতো মনে হচ্ছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় জিনিস টা পেয়েগেছি। আমার মুখোশ দ্বারী মা আমার ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহারটা আমার কাছে এনে দিয়েছে। জানো আমি যখন ওদের আসল রুপটা দেখলাম এতো কষ্ট হচ্ছিল ভেবেছিলাম আমার জীবনে আর ভালো কিছু নেই সব অন্ধকার দেখছিলাম।কিন্তু না আমি আমার জীবনের আলো পেয়ে গেছি।আমার যুথি রানীকে।বলেই ইরহান যুথিকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে।

এবার আর কারো কথা ভাববোনা।এবার তোমার আর আমার জন্য যা করার করবো।ওদের জন্য তো অনেক করলাম।আশা করি ওদের আর অসুবিধা হবে না।

যুথি ইরহানের বুক থেকে নিজের মাথাটা একটু উচিয়ে বলে আপনি এতো ভালো কেনো বোকা পুরুষ?

#চলবে,,,,,,,

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam

প্রতিটি ভোর মানে একেকটা নতুন দিনের সূচনা।পাখির কিচিরমিচির ও মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় যুথির। চোখ পিটপিট করে তাকায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।
পাশে তাকিয়ে দেখে ইরহান গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। হয়তো শীত করছে।ভোর হলে এমনিতেও শীত শীত ভাব থাকে।

যুথি পাশে থাকা কাঁথাটা ইরহানের গায়ে ভালো করে দিয়ে দেয়। তারপর ইরহানের দিকে কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।

কাল ইরহানের বুকে পরে যখন যুথি কাঁদছিলো,,ইরহান তখন কতো শান্তনা দিতেছিলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ছিলো। কখন যে যুথি তার বোকা পুরুষের বুকে পরম শান্তিতে সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে নিজেও জানেনা।

এখন সময় ভোর সাড়ে পাঁচটা যুথি উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। দাঁত মেজে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে। তারপর নামাজ টা পরে নেয়।এখন কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। বাইরে গিয়ে হাটাহাটি করতে মন চাচ্ছে। কারণ যুথি প্রতিদিন খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে। তারপর একটু ঘুরতে বের হয়।

ঘুরে এসে রান্না বান্না করে। যুথির দাদি অন্যর বাড়িতে কাজ করতে চলে যায়। তাই বাড়িতে সব যুথিকেই করতে হয়। যুথি কতো করে দাদিকে বলতো এবার তুমি কাজ করা বাদ দাও দাদি বিশ্রাম নাও।অনেক তো কাজ করেছো।এবার আমি কিছু করি।

দাদি তখন বলতো খবরদার যুথি এমন চিন্তা মাথায় আসলেও ঝেড়ে ফেল।আমি যতোদিন আছি ততোদিন মানুষের বাড়িতে তোকে কাজ করতে দিবো না।

যুথি তখন বলতো আমিকি বলেছি তোমায় মানুষের বাড়িতে কাজ করবো?

যুথির দাদি কথা শোনা তো দূর কিছু বলতেই দিতো না।এটা বোঝাতে পারতো না যুথি যে কোনো ভালো কিছু করতে পারবে।

কালকের রাখা প্লেট নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে যুথি। আশে পাশে তাকিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। এখনো একটা ও ঘুম থেকে উঠে নি।

যুথি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এমন করে বসে থাকতে ও ভালো লাগছে না।

সকাল সকাল উঠলে এমনিতেই তারাতাড়ি খিদে লেগে যায়।
বাড়ির কারো উঠার নাম গন্ধ নেই।আটটা নয়টার আগে যে কেউ ঘুম থেকে উঠবেনা বুঝে গেছে যুথি।সব গুলো জ’মি’দারের বে’টি।

এদের কথা না ভেবে নিজেদের জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করে আগে খেয়ে নিবে ঠিক করে নেয়। তারপর ভাবতে থাকে কি করা যায়। তখনই চোখের সামনে আটার ব’য়াম দেখতে পায়। ভেবে নিলো পরোটা আর ডিম ভেজে নিবে।অন্য কিছু করতে গেলে বেশি সময় লাগবে এখন আপাতত এগুলোকে দিয়ে পেট ঠান্ডা করবে। যেই ভাবা সেই কাজ ঝটপট আটা গুলিয়ে দুই জনের জন্য চারটা রুটি বেলে নেয়।তারপর ফ্রিজ থেকে দুটো ডিম নিয়ে ভেজে নেয়। পরোটা আর ডিম ভেজে রান্না ঘর টা আগের মতো গুছিয়ে রাখে যেনো বুঝাই না যায় এখানে অন্য কেউ রান্না করেছে।

খাবার নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে যেতে যেতে মনে মনে আওড়ায় তোমরা আমাদের কথা ভাবোনি আমিও ভাববো না।তোমরা যদি ভালো হইতা এতোসময়ে আমি সব করে তোমাদের মুখে খাবার ধরতাম।ঘুম থেকে উঠেই সামনে খাবার পাইতা।

খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে ইরহান রুমে নেই।বাথরুম থেকে পানির শব্দ ভেসে আসছে। যুথি প্লেট টা রেখে খাটে বসে । কিছু সময় পরই ইরহান বেরিয়ে আসে যুথির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

খাবারের প্লেটের দিকে চোখ পরতেই বেশ অবাক হয়। এতো সকাল সকাল খাবার? সবাই উঠে গেছে? কিন্তু ওদের তো নয়টার আগে কারো ঘুম ই ভাঙে না।

আমি করে নিয়ে এসেছি। ওরাতো ন’বা’বের বংশের লোক। আসেন খাবেন একদম ওদের কথা আর ভাববেন না।

এখন খেতে ইচ্ছে করছে না যে।

আসেন আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তারপর একটু বাইরে থেকে দুজন ঘুরে আসবো। এটুকুই তাছাড়া খেতে অনেক দেরি আছে এগারোটার আগে যে খাবার জুটবে না জানা আছে।

ইরহান আর কিছু বলেনি দুইজন এক সাথে খেয়ে নেয়। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে হাঁটার জন্য।

দুইজন সকালের পরিবেশ উপভোগ করছে নানান ধরনের কথা বলছে। কথার এক পর্যায়ে ইরহান জানায় সে ঠিক করে এসেছিলো দেশ ছেড়ে আর যাবে না।

অনেক তো অন্য দেশে ছিলো এখন নিজের দেশেই কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা।যদিও তার মাকে ছাড়া এই বিষয় টা কাউকে বলেনি। তাছলিমা বানু কে বলার পর চুপ ছিলো কিছু বলেনি। দেশে আসার পরের দিন টুকটাক কথা বলার মাঝখানে বলেছিলো। টাকা পয়সা তো অনেক করেছে।ব্যাংকে যে টাকা আছে তা দিয়ে অনায়াসে কিছু একটা করতে পারবে।

যুথি সব শুনে বলে,,টাকা তো সব ব্যাংকে তাই না?

— হুম।

— কার নামে?

— ইরহান বলে মায়ের নামে।

যুথি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।আপনার কি মনে হয় উনি টাকা দিবে আপনাকে?

— ইরহান থমকে যায়।আসলেই তো দিবে না। কাল তো টাকা পয়সা নিয়েই ওরা ভাগাভাগি করছিলো।তাছলিমা বানু তো স্পষ্ট বলল সব তার নিজের নামে করেছে যেনো ইরহান না পায়।

ইরহানের ভাবনার মাঝেই বলে৷ উঠে,,,, এখনো বুঝলেন না আপনার সাথে এখন কেন এমন ব্যবহার করছে? আপনি দেশে থেকে যাবেন।তাদের আর বিদেশি টাকা পয়সা পাওয়া হবে না। আপনার টাকায় রাজত্ব করতে পারবে না।আপনি দেশে থাকলেই তো সমস্যা সব কিছু তে ভাগ বসবে।

আপনাকে মিথ্যা বলে নানান অজুহাত দিয়ে টাকা পয়সা নিতে পারবে না।

জানি আপনি আর একটা টাকা ও পাবেন না ওদের থেকে। তবুও আজই সুযোগ বুঝে চেয়ে দেইখেন।

তারপর দুইজন বাড়ির রাস্তা ধরে।

—————————————————–

বিকেলের দিকে ইরহান সকলের উপস্থিতি তে তাছলিমা বানুর কাছে গিয়ে বলে,,তার আর প্রবাস যাওয়ার চিন্তা ভাবনা নেই।দেশেই ছোট খাটো একটা ব্যবসা করবে।তাকে যেনো ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা দেয়।

ইরহানের কথা শুনেই তাছলিমা বানু আঁতকে উঠে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে দুই ছেলের দিকে তাকায়। ওরাও কেমন করে তাকিয়ে আছে।

টাকা চাই মানে? তুই কি বলছিস ইরহান? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?

মাথা খারাপের কি আছে মা? আমি দেশেই কিছু একটা করতে চাইছি স’ন্দিহান গলায় বলে ইরহান।

দেশে তুই কোন রাজ কার্য উদ্ধার করবি শুনি? এসব ভূ’ত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। সুখে থাকতে ভূ’তে কিলায় না? চুপচাপ ছুটি শেষে চলে যাবি মন দিয়ে কাজ করবি।

মানে কি মা? আমি আর দেশের বাইরে যাবোনা ঠিক করেছি। আমি দেশে থাকবো এতে তো তোমার খুশি হওয়া দরকার তাই না?

তাছলিমা বানু ইরহানের কথায় হকচকায়। আরো কিছু বলতে নিবে তখনই ইরহানের ফোন টা বেজে উঠে।

ইরহান কথা থামিয়ে ফোন হাতে তুলে দেখে বিদেশ থেকে সে যে কোম্পানি তে কাজ করে সেই কোম্পানির ম্যানেজার ফোন করেছে।হয়তো জরুরি কিছু তাই ইরহান বলে আমি একটু আসছি বলেই নিজের রুমে চলে যায় কথা বলার জন্য।

তাছলিমা বানু এই সুযোগে যুথির কাছে এগিয়ে আসে।যুথি এতক্ষন একটা কথা ও বলেনি।চুপচাপ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

তাছলিমা বানু যুথিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,, নিজের স্বামী কে বোঝায় মেয়ে।এমন বো’কামো করতে বারণ করো।দেশে কিছুই করতে পারবে না। বিদেশি ড’লার কামাবে।দেশে আর কয় টাকা পাবে? নুন আনতে পান্তা ফুরাবে। কিন্তু ঐদেশে ফিরে গেলে রানীর হা’লে থাকতে পারবে।

ভালো করে বুঝাও।নয়তো পস্তাতে হবে।খুব ভালো হবে না। এর জন্য আগেই বলছি চুপচাপ বলো আমি যা বলছি যেন মেনে নেয়। নয়তো এই তাছলিমা বানু কি করতে পারে তা তোমাদের ধারণার ও বাইরে।

যুথি তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে রয়।

#চলবে,,,,,,,