খুব ভালোবাসি তোকে পর্ব-১৯

0
3729

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ১৯
,,
,,
,,
,,
প্রায় অনেক্ষণ ধরে তামিম নীলার ঠোঁট জোড়া নিজের ধকলে করে রেখেছে।। নীলা নিজেকে তামিমের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু তামিম তাকে ছাড়ছেই না।। এদিকে নীলার শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, যেন এক্ষুণি তার দম বন্ধ হয়ে আসবে।। নীলা তামিমের এমন রোমান্টিক অত্যাচার আর সহ্য করতে না পেরে তামিমের ঠোঁটের মধ্যে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল।। কামড় খেয়ে তামিম সাথে সাথে নীলাকে ছেড়ে দিল।।

তামিমঃ ও মা গো আমার ঠোঁট, আহ্ কি ব্যাথা।। এই তুমি আমার ঠোঁটে কামড় দিলে কেন.?

নীলাঃ কামড় দিয়েছি বেশ করেছি, এ ছাড়া আর কি করবো আমি.? যেভাবে ধরেছিলে আরেকটু হলেই তো আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো।।

তামিমঃ আমি থাকতে তোমার দম বন্ধ হবে না জানপাখি (নীলার কাছে বসে)।।

নীলাঃ হবে কি হবে না আমার ভালো করেই জানা আছে।। এবার বল হঠাৎ আমায় কিস করলে কেন.?

তামিমঃ আইসক্রিম খাওয়ার জন্য।।

নীলাঃ আইসক্রিম খাবে এতে আমায় কিস করার কি আছে.?

তামিমঃ তোমাকে কিস না করলে আইসক্রিম কীভাবে খেতাম.?

নীলাঃ মানে.?

তামিমঃ মানে হলো তুমি যেভাবে বাচ্চাদের মতো আইসক্রিম খাচ্ছিলে এতে তোমার মুখের চারপাশে আইসক্রিম লেগে একাকার হয়ে গেছিল।। তাইতো তখন তোমায় কিস করলাম আর এর সাথে আইসক্রিমও খেয়ে নিলাম (দুষ্টু হাসি দিয়ে)।।

নীলাঃ শয়তান একটা।।

তামিমঃ হিহি

নীলাঃ হাসবে না একদম, যাও এখন আমার রুম থেকে বের হও আমি পড়তে বসবো।।

তামিমঃ তুমি তোমার পড়া পড়বে এর জন্য আমাকে রুম থেকে যেতে হবে কেন.?

নীলাঃ কারণ তুমি আমার সামনে থাকলে আমার পড়ায় মন বসবে না।।

তামিমঃ আরে বসবে না কেন অবশ্যই বসবে তুমি পড় তো।।

নীলাঃ উফফ তুমি কি যাবে.? (রাগ দেখিয়ে)

তামিমঃ আচ্ছা জান যাচ্ছি তুমি পড় (বলেই তামিম নীলার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো)।।

এইভাবেই তাদের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে কেটে গেল বেশ কিছুদিন।। প্রতিদিন নীলাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসা আর নিয়ে আসা যেমন তামিমের কাজ, ঠিক তেমনি প্রতিদিন সন্ধ্যার সময় নীলাকে ফুচকা আর আইসক্রিম এনে দেওয়াও তামিমের একটা দায়িত্ব হয়ে গেছে।। যদি কোনোদিন ভুল করেও তামিম নীলার জন্য ফুচকা আর আইসক্রিম না আনে তাহলে ওইদিন আর নীলা তামিমের সাথে কোনো কথাই বলে না।। তামিম আবার নীলার সাথে কথা না বলে এক মূহুর্তও থাকতে পারে না, তাই সে নীলাকে খুশি রাখতে কখনো তার জন্য ফুচকা, আইসক্রিম আনতে ভুলে না।।

তো আজ দুপুরের ঠিক পরন্ত বিকালে তামিম আর নীলা ছাদে বসে বসে গল্প করছিল, এমন সময় নীলা তামিমকে বললো…

নীলাঃ আমার না ভিষণ ভয় করছে।।

তামিমঃ কীসের ভয় কলিজা.? (নীলার এক হাত তার দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে)

নীলাঃ আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে।।

তামিমঃ মানে.?

নীলাঃ এই যে আমাদের সম্পর্কটার ব্যাপারে বাসার কেউ এখনো কিছুই জানে না।। কিন্তু বাসার সবাই যখন আমাদের সম্পর্কটার ব্যাপারে জানবে তখন কি হবে.? বাসার সবাই কি আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে.? (তামিমের দিকে তাকিয়ে)

তামিমঃ কেন মানবে না অবশ্যই মানবে।। এই বিষয়ে তোমাকে এতো চিন্তা করতে হবে না।। বাসার সবাইকে ভালো করে বুঝিয়ে বললে তারা অবশ্যই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিবে।। কারণ চাচ্চু, চাচি আর আম্মু-আব্বু তো আমাদেরকে ভালোবাসেন তাইনা.? তাহলে ওরা নিশ্চয়ই চাইবে যে আমরা জীবনে সুখে থাকি।।

নীলাঃ কিন্তু বাসার সবাই যদি আমাদের সম্পর্কটা মেনে না নেয় তখন কি হবে.? আর আম্মু-আব্বু যদি আমাকে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় তাহলে.? আমি তো তোমাকে ছাড়া থাকতেই পারবো না আর তোমাকে না পেলে আমি ম (নীলাকে থামিয়ে)

তামিমঃ এই চুপ ভুলেও এইসব কথা মুখে আনবে না।। বাসার সবাইকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার, আমি সবাইকে রাজি করিয়েই ছাড়বো।। দেখবে সবাই আমাদের সম্পর্কটা ঠিকই মেনে নিবে।।

নীলাঃ তাই যেন হয় (তামিমের বুকে মাথা রেখে)।।

তামিমঃ তাই হবে দেখিও (বলেই নীলার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে নীলাকে নিজের বুকের মধ্যে শক্ত করে চেপে ধরলো)।।

নীলাঃ বাসার সবাই যদি আমাদের সম্পর্কটা মেনে নেয় তাহলে আমাকে সারাজীবন তোমার এই বুকে আগলে রাখবে তো.?

তামিমঃ হুম সারাজীবন তোমাকে আমার বুকের মধ্যেই রাখবো, কথা দিলাম (নীলাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)।।

নীলাঃ সন্ধ্যা তো হয়ে আসছে যাও এবার আমার জন্য ফুচকা, আইসক্রিম নিয়ে আস।।

তামিমঃ আরেকটু পরে যাই.?

নীলাঃ নাহ তুমি এক্ষুণি যাবে নাহলে

তামিমঃ আচ্ছা কলিজা আমি এক্ষুণি যাচ্ছি।। তুমি গিয়ে তোমার রুমে বস আমি তোমার জন্য ফুচকা, আইসক্রিম নিয়ে আসছি।।

নীলাঃ আচ্ছা যাও আর তাড়াতাড়ি আসিও।।

তামিমঃ আচ্ছা বলে তামিম ছাদ থেকে নেমে বাসা থেকে বেরিয়ে নীলার জন্য ফুচকা, আইসক্রিম আনতে চলে গেল।।

তামিম চলে যাওয়ার পর নীলাও ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে আসলো।। এদিকে তামিম একটা রেস্টুরেন্ট থেকে নীলার জন্য ফুচকা আর আইসক্রিম নিয়ে কিছুক্ষণ পর বাসায় আসলো।। এরপর সেগুলো নিয়ে সোজা নীলার রুমে চলে গেল আর নীলার কাছে সেগুলো দিয়ে তামিম নিজের রুমে চলে আসলো।।

–কাল তোমাদের ফুপি কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশে আসছেন।। তামিম তুমি তোমার চাচ্চুর সাথে কাল এয়ারপোর্টে চলে যেও তোমার ফুপিকে পিক করতে।।

রাতেরবেলা ডাইনিং টেবিলে বসে বাসার সবাই খাবার খাচ্ছিল ঠিক তখনই তামিমের আব্বু উপরোক্ত কথাটা বললেন।। তামিম তার আব্বুর কথা শুনে অনেকটাই অবাক হয়ে গেল সাথে নীলাও।। তাদের ফুপি কাল দেশে আসছেন আর এই কথাটা তাদেরকে আজ জানানো হচ্ছে, এর জন্যই হয়তো।।

তামিমঃ ফুপি দেশে আসছেন এই কথাটা তুমি আমাদেরকে আজ জানাচ্ছ.! এতোদিন ধরে বল নি কেন যে ফুপি দেশে আসবেন.?

তামিমের আব্বুঃ এই কথাটা আমি আজ সকালেই জানলাম তাহলে তোমাদেরকে জানাবো কি করে.?

তামিমঃ মানে.?

তামিমের আব্বুঃ তোমার ফুপি আজকেই আমাকে ফোন করে বলেছেন যে উনি কাল দেশে আসছেন।।

তামিমঃ ওহহ কিন্তু হঠাৎ ফুপি দেশে আসছেন কেন.?

তামিমের আব্বুঃ বেড়াতে আসবেন আর কি।।

তামিমঃ ওহহ তা ফুপি কি একাই আসবেন.?

তামিমের আব্বুঃ নাহ তোমার রাফি ভাইয়াও (ফুপির ছেলে) সাথে আসবে।।

তামিমঃ আর ফুফা.?

তামিমের আব্বুঃ উনি আসলে ওদের অফিস কে সামলাবে.? তাই উনি আসবেন না।।

তামিমঃ ওহহ

তামিমের আব্বুঃ নীলা মামনি কাল তোমায় ভার্সিটিতে যেতে হবে না।। তোমার ফুপি যেহেতু কাল দেশে আসছেন তাই কালকে আর ভার্সিটিতে যেও না কেমন।।

নীলাঃ আচ্ছা চাচ্চু।।

তামিমের আব্বুঃ আর তুমি (তামিমকে উদ্দেশ্য করে) কাল সকাল ৯ টায় তোমার চাচ্চুর সাথে এয়ারপোর্টে চলে যেও ওকে।।

তামিমঃ ওকে আব্বু।।

তারপর আর কেউ কোনো কথা বললো না, সবাই যার যার খাবার খেয়ে উঠে পরলো।।

পরেরদিন সকালবেলা তামিম ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে তার ছোট চাচ্চুর সাথে এয়ারপোর্টে চলে এলো।। প্রায় আধা ঘন্টা এয়ারপোর্টে দাড়িয়ে থাকার পর তামিমের ফুপির প্লেন এয়ারপোর্টে এসে লেন্ড করলো।। তামিম প্রথমে গিয়ে তার ফুপিকে সালাম দিয়ে উনার সাথে ভালো-মন্দ কিছু কথা বললো আর সাথে তার ফুফাতো ভাইকেও ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করলো।। নীলার আব্বুও উনার সাথে ভালো-মন্দ কথা বলে ভাগিনা কেও ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলেন।। তারপর তারা তাদের ব্যাগপত্র নিয়ে গাড়িতে উঠাল আর তাদেরকে নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসলো।।

বাসায় আসতেই রাহিমা বেগমকে (তামিমের ফুপির নাম) তামিমের আম্মু আর নীলার আম্মু এসে সালাম করে উনার সাথে কুশল বিনিময় করলেন।। তারা দুজন রাফিকেও ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলেন।। রাফিও তাদেরকে সালাম দিয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো।। এর মধ্যে নীলাও তার রুম থেকে বেরিয়ে এসে তার ফুপিকে সালাম করে তাকে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করলো।।

নীলাঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম, কেমন আছেন ফুপি.?

ফুপিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম, এইতো মা ভালো তুমি কেমন আছ.?

নীলাঃ জি আমিও ভালো আছি।।

ফুপিঃ কতো বড় হয়ে গেছে আমার আম্মুটা, আর কতো সুন্দর হয়েছে এখন (নীলার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে)।।

নীলাঃ তার ফুপির কথা শুনে লজ্জায় তার চেহারা একেবারে লাল হয়ে গিয়েছে।।

এরপর তামিমের আম্মু তাদের দুজনকে ২টা রুম দেখিয়ে বললেন তারা যেন ফ্রেশ হয়ে নেয়।। তারা দুজন ফ্রেশ হতে চলে গেলে তামিমের আম্মু আর নীলার আম্মু মিলে দুপুরের খাবার রেডি করতে রান্নাঘরে চলে গেল।।

দুপুরবেলা…

বাসার সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে, তাদের সাথে আজ তাদের বড় বোন আর উনার ছেলেও রয়েছে।। সবাই বেশ আনন্দের সাথে গল্প করতে করতে খাবার খাচ্ছে।। রহিমা বেগম তো শুধু নীলার খাবার খাওয়া নিয়েই কথা বলে যাচ্ছেন।। মেয়েটা এতো কম খায় কেন.? তাইতো এতো শুকনা হয়ে গেছে, ইত্যাদি ইত্যাদি।। নীলাও উনার কথার উত্তরে কিছু বলতে পারছে না।। এইভাবেই তাদের দুপুরের খাবার খাওয়ার পর্বটা শেষ হয়ে গেল।।

এইভাবেই কেটে গেল ১ সপ্তাহ।। তামিমের ফুপিরা ২ সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছেন।। এর মধ্যে তাদের হাতে রয়েছে আর মাত্র ১ সপ্তাহ।। এদিকে আজ নীলার আব্বুর অফিসের সাথে ইংল্যান্ডের একটা অফিসের বড় এক ডিল হয়েছে।। নীলার আব্বু আজ অনেক খুশি তাই উনি উনার অফিসের ম্যানেজারকে অফিস দেখে রাখার কথা বলে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু মিষ্টি কিনে সোজা বাসায় চলে গেলেন।।

নীলার আব্বু বাসায় যাওয়ার আধা ঘন্টা পর তামিমের আব্বুর মোবাইলে একটা কল আসলো, কলটা নীলার আব্বু ই দিয়েছেন।। তিনি কলটা রিছিভ করতেই নীলার আব্বু তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসতে বললেন।। তামিমের আব্বুও আসছি বলে কলটা কেটে দিলেন।।

তামিমের আব্বুঃ আমি এখন বাসায় চলে যাচ্ছি তুমি কিছুক্ষণ পর অফিস বন্ধ করে বাসায় চলে এস ওকে।।

তামিমঃ আচ্ছা আব্বু।।

তারপর তামিমের আব্বু অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে গেলেন।। সময়টা এখন সন্ধ্যার, এই সময় প্রতিদিনই অফিস বন্ধ করে তামিমের আব্বু বাসায় চলে যান।। তামিমও আজ এর ব্যাতিক্রম করলো না, সেও অফিস বন্ধ করে তাদের গাড়িটা নিয়ে সোজা বাসায় চলে আসে।। বাসায় ঢুকে তামিম ড্রয়িংরুম থেকে কার বিয়ের কথা শুনতে পায়।। ড্রয়িংরুমে যাদের গলার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে তারা আর কেউ না তার আব্বু, চাচ্চু আর ফুপির।। তামিম এবার কৌতুহল নিয়ে ড্রয়িংরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।। এরপর তামিম ভিতর থেকে এমন একটা কথা শুনতে পেল যা শুনে তামিমের মাথা ঘুরতে শুরু করলো।। তামিমের মনে হচ্ছে তার চারপাশে যেন শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার বিরাজ করছে।।
.
.
.
.
.
Loading…….