খুব ভালোবাসি তোকে পর্ব-২০

0
4494

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২০
,,
,,
,,
,,
–আচ্ছা আপা ঠিক আছে তুমি যখন এতো করে বলছ তাহলে আমি রাফি সাথে নীলার বিয়ে দিতে রাজি।। কিন্তু রাফি আর নীলা কি এই বিয়েতে রাজি হবে.? এখনকার যুগের ছেলে-মেয়েরা তো আবার নিজের কাজিনদেরকে বিয়ে করতে চায়না (নীলার আব্বু)।।

ফুপিঃ এ নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না, রাফিকে আমি বুঝিয়ে বলবো দেখবি ও ঠিকই মেনে নিবে।। তুই গিয়ে নীলা মামনিকে রাজি করা তাহলেই হবে।। আমরা আরও ১ সপ্তাহ দেশে আছি এর মধ্যে যদি রাফির সাথে নীলার বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে নীলাকেও কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের কাছে আমেরিকায় নিয়ে যাব।।

ড্রয়িংরুমের ভিতর থেকে তার ছোট চাচ্চু আর তার ফুপির মধ্যে এইসব কথা শুনে তামিমের মাথা পুরো চক্কর দিয়ে উঠলো।। সে কি শুনলো এইসব.! যা শুনেছে তা কি ঠিক শুনেছে.? তামিমের মনে হয়না সে ভুল কিছু শুনেছে।। তামিম কি তাহলে নীলাকে হারাতে বসেছে.? সে কি তাহলে নীলাকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে পাবে না.? রাফির সাথে নীলার বিয়ে হবে এটা ভাবতেই কষ্টে তামিমের বুক ফেটে যাচ্ছে।।

তামিম আর ওইখানে এক মূহুর্তও দাড়ালো না সোজা নীলার রুমে চলে গেল।। নীলার রুমে এসে তামিম দেখলো নীলা টেবিলে বসে বসে পড়ছে।। এদিকে নীলা তামিমকে তার রুমে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বসা থেকে উঠে তামিমের সামনে এসে দাড়ালো।।

নীলাঃ আমার ফুচকা আর আইসক্রিম কোথায় গো.? (আদুরে গলায়)

নীলার এমন কথা শুনে তামিম মনে মনে ভাবে, নীলু হয়তো এখনো বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানে না, নাহলে সে এইসময় আমার কাছে এইসব চাইতো না।।

নীলাঃ কি হলো চুপ করে আছ কেন.? আর আমার (নীলাকে থামিয়ে)

তামিমঃ নীলু তুমি কি বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জান না.?

নীলাঃ বিয়ের ব্যাপারে মানে.! কার বিয়ের কথা বলছ.?

তামিমঃ তোমার বিয়ের কথা বলছি তাও

নীলাঃ কিহহ তার মানে বাসার সবাই আমাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছেন.! ইয়াহু কি মজা (বলেই তামিমকে জড়িয়ে ধরলো)।। কিন্তু তারা এতো তাড়াতাড়ি আমাদের বিয়ে দিতে চাচ্ছেন কেন গো.?

তামিমঃ আরে এইসব কি বলছ তুমি, আগে আমার পুরো কথাটা শুনবে তো নাকি.? আমার পুরো কথা না শুনেই উথলে পরছ কেন.? দেখি ছাড় আমায় আর আমার পুরো কথাটা শুন (বলেই নিজের থেকে নীলাকে ছাড়িয়ে নিল)।।

নীলাঃ কি কথা শুনবো বল.?

তামিমঃ চাচ্চু আর ফুপি মিলে ঠিক করেছেন রাফি ভাইয়ার সাথে নাকি তোমার বিয়ে দিবেন।। ফুপিরা তো আরও ১ সপ্তাহ দেশে আছেন, এর মধ্যে যদি তোমাদের বিয়েটা হয়ে যায় তাহলে কয়েক মাসের মধ্যে ওরা তোমাকেও ওদের কাছে আমেরিকায় নিয়ে যাবেন।।

তামিমের মুখ থেকে এইসব কথা শুনে মুহুর্তের মধ্যেই নীলার পুরো পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গেল।। তামিম তাকে এইসব কি বললো.! যা বলেছে তা কি সত্যি বলেছে নাকি সে তার সাথে মজা করছে.?

নীলাঃ এএইসব ততুমি কি বলছ.! তুমি আমার সাথে মজা করছ তাইনা.? (কাঁপা কাঁপা গলায়)।।

তামিমঃ নীলু আমি তোমার সাথে মজা করছি না, আমি যা শুনেছি তাই তোমাকে বলছি।। চাচ্চু আর ফুপি মিলে ঠিক করেছেন রাফি ভাইয়ার সাথে তোমার বিয়ে দিবেন আর এটাই সত্যি।।

তামিমের কথাটা শেষ হতে না হতেই নীলা তামিমকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো আর বললো…

নীলাঃ কিন্তু আমি রাফি ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না, কারণ আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি আর বিয়ে করলে শুধু তোমাকেই করবো।। প্লিজ তুমি কিছু একটা কর নাহলে কিন্তু আমি নিজের কোনো (কথাটা বলার আগেই তামিম নীলার মুখ চেপে ধরলো)।।

তামিমঃ এই চুপ ভুলেও এইসব কথা মুখে আনবে না, তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।। আমি তো আছিই তোমার সাথে (নীলার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)।।

নীলাঃ কিছু না বলে তামিমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো।।

নীলা তামিমকে জড়িয়ে ধরে আছে আর তামিম নীলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, এমন সময় হঠাৎ তামিম কারও জুতার আওয়াজ শুনতে পেল।। তামিম বুঝতে পারলো কেউ একজন নীলার রুমে আসছে তাই তামিম নীলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল।।

নীলাঃ কি হলো এইভাবে ছাড়িয়ে নিলে কেন.?

তামিমঃ চুপ থাক কেও হয়তো তোমার রুমে আসছে, আর কেউ এসে আমাদেরকে ওইভাবে দেখলে বাসায় হৈচৈ পরে যাবে।।

নীলাঃ তাহলে তো ভালোই হবে বাসার সবাই মিলে আমাদের বিয়ে দিয়ে দিবে।।

তামিমঃ উফফ তুমি একটু চুপ থাক তো।।

তামিমের কথায় নীলা এবার চুপ হয়ে গেল।। এর একটু পরেই রুমের দরজা খুলে নীলার আব্বু এসে রুমে ঢুকলেন।।

নীলার আব্বুঃ আরে তামিম তুই এইখানে.!

তামিমঃ হে না মানে এমনিই দেখতে এসেছিলাম নীলা পড়তে বসেছে কি না।।

নীলার আব্বুঃ ওহহ আচ্ছা এখন তাহলে একটু রুম থেকে যা তো, আমি নীলার সাথে কিছু কথা বলবো।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচ্চু (বলেই তামিম রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো)।।

নীলার আব্বুঃ কি হয়েছে আমার আম্মুটার, তোমার চোখে পানি কেন.? (নীলাকে উদ্দেশ্য করে)

নীলাঃ পানি.! না মানে আসলে

তামিমঃ আমি বলছি, আসলে চাচ্চু ওর চোখে একটা পোকা না কি যেন পরেছিল তাই হয়তো চোখে পানি চলে এসেছে।।

নীলার আব্বুঃ ওহহ

তামিমঃ হুম আমি তাহলে গেলাম তোমরা কথা বল (বলেই তামিম রুম থেকে বেরিয়ে গেল)।।

নীলার আব্বুঃ আম্মু (নীলাকে উনি প্রায়ই এই নামে ডাকেন) আমি যে তোমাকে না জানিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।। তুমি তো আজ পর্যন্ত কখনো আমার সিদ্ধান্তের দ্বিমত পোষণ কর নি, আশা করি আজকেও তুমি আমার সিদ্ধান্তের দ্বিমত পোষণ করবে না।।

নীলাঃ কি সিদ্ধান্ত আব্বু.?

নীলার আব্বুঃ আসলে তোমার ফুপি চাইছেন তোমাকে রাফির বউ বানাতে।। তাই উনি রাফির সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাচ্ছেন।। আর আমিও তোমার ফুপির কথায়

নীলাঃ রাজি হয়ে গেছ তাইতো.? বাহ্ আব্বু বাহ্, বিয়ে হবে আমার আর রাজি হলে তুমি.! এই বিয়েতে আমি রাজি হব কি না এটা তুমি একবারও আমাকে জিজ্ঞেস করলে না।। আর রাফি ভাইয়া তো বয়সে আমার অনেক বড়, উনার সাথে আমার কীভাবে কি।।

নীলার আব্বুঃ এবার তিনি সাথে সাথে নীলার হাত চেপে ধরেন আর বলেন, দেখ আম্মু আমিও প্রথমে তোমার ফুপির কথায় রাজি হইনি কিন্তু তোমার ফুপি আমাকে বাধ্য করেছেন রাজি হতে।।

নীলাঃ বাধ্য করেছেন মানে.!

নীলার আব্বুঃ আসলে আজ আমার অফিসের সাথে ইংল্যান্ডের একটা অফিসের সাথে বড় এক ডিল হয়েছে তাই আমি আজ খুশি হয়ে বাসার সবার জন্য মিষ্টি নিয়ে বাসায় ফিরি।। বাসায় এসে সবাইকে আমার খুশির কারণটা জানালাম তখন তোমার ফুপি আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে বলেন, আজ তোর কাছে আমি একটা জিনিস চাইবো তুই কি দিবি.? আমি তখন এতোই খুশি ছিলাম যার কারণে তোমার ফুপির কথার উত্তরে বলে দেই, তুমি আজ যা চাইবে তাই দিব কথা দিলাম।। তখন তোমার ফুপি রাফি আর তোমার বিয়ের ব্যাপারে আমায় বলেন।। আমি প্রথমে না করলেও পরে উনি বলেন আমি যেহেতু উনাকে কথা দিয়েছি তাহলে উনার কথা আমায় রাখতেই হবে।। আমি অনেক্ষণ ভেবেও রাজি হতে না পেরে তোমার বড় চাচ্চুকে ফোন করে বাসায় আনলাম আর উনাকে সব বললাম।। তারপর উনিও তোমার ফুপির কথায় সায় দিলেন আর আমাকে বললেন রাজি হতে যেতে।। এরপর আমিও আর উপায় না পেয়ে তোমার ফুপির কথায় রাজি হয়ে গেলাম।। এখন তুমিই বল এইখানে আমার কি দোষ.?

নীলাঃ তোমার কোনো দোষ নেই, সব দোষ ফুপির।। কিন্তু যাইহোক আমি রাফি ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না এটাই আমার শেষ কথা।।

নীলার আব্বুঃ কিন্তু আমি যে তোমার ফুপিকে কথা দিয়ে ফেলেছি।।

নীলাঃ কিন্তু আমি রাফি ভাইয়াকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।।

নীলার আব্বুঃ আম্মু একবার ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ।।

নীলাঃ ভাবার কিছু নেই আমি যেটা বলেছি এটাই ফাইনাল, আমি রাফি ভাইয়াকে বিয়ে করতে পারবো না তো পারবো না ব্যস (রেগে গিয়ে)।।

নীলার আব্বুঃ তোমায় রাফিকে বিয়ে করতেই হবে আর এটাই আমার শেষ কথা।। আমার কথার উপরে যদি আর একটা কথাও বল তাহলে খুব খারাপ হবে বলে দিলাম।। আগামী শুক্রবারে তোমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে, বিয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নাও (কথাগুলো বলেই নীলার আব্বু রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন)।।

নীলার আব্বু চলে যাওয়ার পর নীলা বিছানার মধ্যে ধপাস করে বসে পরলো আর মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো এখন সে কি করবে।। তার আব্বু এর আগে কখনো তার সাথে এইভাবে কঠোর হয়ে কথা বলেন নি।। এই প্রথম তার আব্বু তার সাথে এতো কঠোর হয়ে কথা বললেন।। নীলা এখন ভালো করেই বুঝতে পেরেছে বিয়েতে তার মত না থাকলেও তাকে এই বিয়েটা করতেই হবে।।

এদিকে রাহিমা বেগমও উনার ছেলেকে অনেক বোঝাচ্ছেন বিয়েতে রাজি হয়ে যাওয়ার জন্য।।

ফুপিঃ দেখ বাবা নীলা অনেক ভালো একটা মেয়ে।। নীলার মতো ভালো মেয়ে এমন ২য় কোথাও খুজেও পাবি না।। প্লিজ তুই এই বিয়েতে রাজি হয়ে যা।। আমি মা হয়ে তোর কাছে একটা রিকুয়েস্ট করছি তুই কি তা মানবি না?

রাফিঃ But Mom নীলা কি আমায় বিয়ে করতে রাজি হবে.? হতেও তো পারে ওর কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে।। First নীলার মতামত নাও, সে যদি রাজি হয় তাহলে আমিও রাজি, আর সে যদি রাজি না হয়

–নীলা রাজি আছে বাবা, তুমিও এবার রাজি হয়ে যাও (নীলার আব্বু তাদের রুমে ঢুকে বললেন)।।

রাফিঃ সত্যি নীলা রাজি এই বিয়েতে.! (কিছুটা খুশি হয়ে)

নীলার আব্বুঃ হে বাবা ও রাজি।।

ফুপিঃ দেখলি তো নীলা রাজি হয়েছে, এবার তুইও রাজি হয়ে যা বাবা।।

রাফিঃ Okay Mom আমিও রাজি।।

ফুপিঃ আলহামদুলিল্লাহ, যাক তাহলে তুইও রাজি হয়ে গেলি।। শুন আমরা চাচ্ছি সামনের শুক্রবারে তোদের বিয়ের কাজটা কমপ্লিট করে ফেলবো, তোর কি আর কিছু বলার আছে.?

রাফিঃ No Mom

নীলার আব্বুঃ আচ্ছা তাহলে আপা আমি এখন আসি।।

ফুপিঃ শফিক দাড়া তোর সাথে একটু কথা আছে।।

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ আপা বল.?

ফুপিঃ আয় আমার সাথে (বলেই উনি নীলার আব্বুকে টেনে রুমের বাহিরে নিয়ে আসলেন)।। আচ্ছা নীলা কি সত্যি রাজি হয়েছে নাকি তুই

নীলার আব্বুঃ না আপা আসলে নীলা রাজি হয়নি কিন্তু ও কোনোদিন আমার কথা অমান্য করেনি, আমি ওকে বলে দিয়েছি ওকে বিয়েটা করতেই হবে।।

ফুপিঃ আচ্ছা ঠিক আছে তাদের বিয়েটা হোক তাহলে নীলাও সব মেনে নিবে।।

নীলার আব্বুঃ আপা বিয়েতে তো তারা কেউ-ই রাজি নয়, আমরা জোর করে তাদেরকে রাজি করিয়েছি, এটা কি আমরা ঠিক করছি.?

ফুপিঃ আমরা তো তাদের ভালোর জন্যই এমনটা করছি তো এইখানে ঠিক আর বেঠিকের কি আছে.? শুন এইসব নিয়ে তুই অযথা চিন্তা করিস না।। একবার তাদের বিয়েটা হোক তারপর দেখবি দুজন দুজনকে একে অপরের সাথে ঠিকই মানিয়ে নিয়েছি।।

নীলার আব্বুঃ তাই যেন হয়।।

ওইদিনের মতো রাতটা কেটে গেল।। কিন্তু তামিমের রাতটা অনেক কষ্টে কেটেছে।। সারা রাত তামিম বসে বসে এটাই ভেবেছে রাফির সাথে নীলার বিয়ে হয়ে গেলে তার কি হবে।। যদিও নীলা এখন বিয়েতে রাজি না কিন্তু বিয়েটা হয়ে গেলে তো নীলা তাকে সারাজীবনের জন্য ভুলে যাবে, তখন নীলাকে ছাড়া তামিম থাকবে কি করে.?

সকালবেলা…

তামিম আর নীলা ছাড়া বাসার সবাই আজ অনেক খুশি।। অনেক আনন্দের সাথে সবাই মিলে ডাইনিং টেবিলে বসে একসাথে নাস্তা করছে।। সবার মুখেই হাসির চাপ শুধু তামিম আর নীলা ছাড়া।।
নাস্তা খাওয়া শেষ হলে রাহিমা বেগম রাফি, তামিম আর নীলাকে নিয়ে বিয়ের শপিং করতে চলে গেলেন।। নীলা প্রথমে যেতে চায়নি কিন্তু তার ফুপি তাকে জোর করে নিয়ে গেছেন।। তামিমকেও সাথে নিয়ে গেছেন কারণ তারা শহরের কোনো শপিংমল ভালো করে চিনেন না তাই।।

সারাদিন কেনাকাটা করার পর একেবারে সন্ধ্যাবেলায় তারা সবাই বাসায় ফিরলো।। বাসায় এসে সবাই যার যার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিল।।

এইভাবেই আরও একটা দিন কেটে গেল।। আজ বৃহস্পতিবার, কাল শুক্রবার মানে কাল রাফি আর নীলার বিয়ে।। বিয়েতে নীলার মত না থাকলেও রাফির মত আছে।। কারণ নীলাকে রাফির একটু একটু ভালো লাগে।। যদিও নীলা বয়সে তার থেকে ৬-৭ বছরের ছোট তারপরও সে নীলাকে বিয়ে করতে রাজি।।

বিয়ের উপলক্ষে বাসাটা হালকা বিয়ের সাজে সাজানো হয়েছে।। বাসার একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা, না সাজিয়ে তো হয়না।।

রাতেরবেলা…

ঘড়িতে তখন ১টা ছুই ছুই, এমন সময় নীলা তার রুম থেকে বেরিয়ে তামিমের রুমে এসে ঢুকলো।। তামিম তখন জেগেই ছিল আর বিছানায় শুয়ে শুয়ে নীলাকে হারানোর কষ্টে মনে মনে কান্না করছিল।। এমন সময় তামিম হঠাৎ নীলাকে তার রুমে দেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়।। তামিম উঠে দাড়াতেই নীলা দৌড়ে গিয়ে তামিমের বুকের মধ্যে ঝাপিয়ে পরলো।।

তামিমঃ আরে তুমি এতো রাতে আমার রুমে কি করছ.! কেউ দেখে ফেললে তো পরে সমস্যা হতে পারে।। দেখি ছাড় আমায় এইভাবে জড়িয়ে ধরেছ কেন.? (নীলাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে)

নীলাঃ দেখলে দেখুক তাতে আমার কি আমি তোমাকে ছাড়বো না (বলেই তামিমকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো)।।

তামিমঃ নীলু এইসব কেমন পাগলামি করছ তুমি.?

নীলাঃ এইসব তোমার কাছে পাগলামি মনে হচ্ছে তাইনা.? আমার বিয়ে হলে কি তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে.? (তামিমের দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

তামিমঃ থাকতে না পারলেও থাকার চেষ্টা করবো।।

নীলাঃ কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না।। প্লিজ তুমি কিছু একটা কর আমি রাফি ভাইয়াকে কিছুতেই বিয়ে করবো না।। উনার সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তাহলে আমি নিজেকে

তামিমঃ এই চুপ কি উলটা পালটা কথা বলছ এইসব.? ভুলেও এইসব কথা আর মুখে আনবে না।।

নীলাঃ তাহলে আমাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাও যেখানে শুধু আমি আর তুমি থাকবো আর কেউ থাকবে না।।

তামিমঃ আমি এটা পারবো না নীলু।।

নীলাঃ কেন পারবে না.?

তামিমঃ কারণ (পুরোটা বলার আগেই কেউ একজন তামিমের রুমে এসে ঢুকলো)।।

তামিম ওই মানুষটাকে দেখে সাথে সাথে নীলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে দাড়ালো।। কারণ ওই মানুষটা হলো নীলার আম্মু।। নীলার আম্মুকে তামিমের রুমে দেখে তামিম আর নীলা দুজনেই কিছুটা চমকে উঠলো।। এদিকে নীলার আম্মু তাদের কাছে এসে কিছুক্ষণ তাদের দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন…

নীলার আম্মুঃ বাহ ভালোই তো প্রেম চলছে দুজনের মধ্যে।। কাল নীলার বিয়ে আর তুমি আজ তার সাথে ছিঃ ছিঃ।।

তামিমঃ চাচি আসলে (তামিমকে থামিয়ে)

নীলার আম্মুঃ চুপ কর তোমাকে তো আমি নিজের ছেলের মতো ভাবতাম আর তুমি আমার মেয়ের সাথে ছিঃ ছিঃ।।

তামিমঃ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইলো।।

নীলাঃ আম্মু আমি উনাকে ভালোবাসি (নিচু গলায়)।।

নীলার আম্মুঃ চুপ ভুলেও এই কথাটা আর মুখে আনবি না নাহলে খুব খারাপ হবে।।

নীলাঃ তার আম্মুর কথায় সেও মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।।

নীলার আম্মুঃ তুমি কি সত্যিই নীলাকে ভালোবাস.? (স্বাভাবিক গলায়)

তামিমঃ নিশ্চুপ।।

নীলার আম্মুঃ কি হলো কথা বল.? (হালকা রেগে)

তামিমঃ মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।।

তারপর নীলার আম্মু কিছুক্ষণ চুপ থেকে তামিমকে এমন একটা কথা বললেন যা শুনে তামিম অবাক হয়ে নীলার আম্মুর দিকে তাকালো আর সাথে সাথে কয়েক পা পিছিয়ে গেল।। তামিমের ভাবতেও অবাক লাগছে যে নীলার আম্মু তাকে এই কথাটা বলেছেন।। নীলার আম্মু তো তাকে ছেলের মতোই ভাবেন তাহলে উনি কীভাবে এই কথাটা বলতে পারলেন.? এই কথাটা বলতে কি উনার একটুও খারাপ লাগলো না.?
.
.
.
.
.
Loading…….