খুব ভালোবাসি তোকে পর্ব-২৫

0
5652

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২৫
,,
,,
,,
,,
–সাকিব ভাইয়া তুমি.! তুমি এইখানে কি করছ.? (কথাটা বলেই নীলা বসা থেকে উঠে দাড়ালো)

–এইতো বন্ধুদের সাথে এইখানে ঘুরতে এসেছি তুই.?

নীলাঃ আমিও

–এই ছেলেটা (তামিমকে দেখিয়ে) তোর ফ্রেন্ড.?

নীলাঃ না মানে হ্যাঁ ও আমার ফ্রেন্ড।।

নীলার মুখ থেকে এই কথাটা শুনে তামিম বেশ চমকে উঠলো আর সাথে সাথে বসা থেকে উঠে দাড়ালো।। এরপর তামিম কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই নীলা তাকে ইশারায় থামিয়ে দিল।।

–শুধু কি ফ্রেন্ড নাকি অন্য কিছুও.?

নীলাঃ অন্য কিছুও মানে.?

–মানে বয়ফ্রেন্ড

নীলাঃ না তেমন কিছু না ও জাস্ট আমার ফ্রেন্ড।।

–ওহ আচ্ছা তা তোরা আর কে কে এসেছিস এইখানে.?

নীলাঃ আরও অনেকেই এসেছি।।

–তো আর কাউকে তোদের সাথে দেখছি না যে।।

নীলাঃ আসলে ওরা কি যেন আনতে গিয়েছে তাই আমরা দুজন এইখানে এসে বসে আছি।।

–ওহ তা কয়দিন থাকবি এইখানে.?

নীলাঃ আজ থাকবো কাল চলে যাব।।

–ওহ তা কোথায় উঠেছিস.?

নীলাঃ এইতো —– এই হোটেলে, তুমি কোথায় উঠেছ.?

–আজকে চলে যাব তাই কোথাও উঠি নি।।

নীলাঃ ওহহ

–তা ফুফা আর ফুপি কেমন আছেন.?

নীলাঃ ভালোই, মামা-মামী কেমন আছেন.?

–ভালো, আচ্ছা তাহলে আমি এখন যাই থাক তোরা আল্লাহ হাফেজ (বলেই সাকিব নামের ছেলেটা সেখান থেকে চলে গেল)।।

তামিমঃ ওই ছেলেটা কে.? আর ওর কাছে আমায় তোমার ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিলে কেন.? (কিছুটা রাগ নিয়ে)

নীলাঃ তুমি চিন না উনাকে.? আরে উনি সাকিব ভাইয়া, আমার মামাতো ভাই।।

তামিমঃ মামাতো ভাই.! কই আমি তো উনাকে আগে কখনো দেখি নি।।

নীলাঃ দেখবে কীভাবে উনি কি কখনো আমাদের বাসায় এসেছেন নাকি।। উনি আমাদের বাসায় ২ বার এসেছেন।। ছোটবেলায় একবার, আরেকবার তুমি যখন আমেরিকায় ছিলে তখন, প্রায় দেড় বছর আগে।।

তামিমঃ দেড় বছর আগে.! তা কেন এসেছিলেন উনি.?

নীলাঃ উনার আম্মুকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন।।

তামিমঃ ডাক্তার দেখাতে আমাদের বাসায় আসার কি আছে, উনার শহরে কি ডাক্তার নেই.?

নীলাঃ উনারা শহরে থাকেন না গ্রামে থাকেন।।

তামিমঃ ওহহ আচ্ছা।। তা উনার কাছে তুমি আমায় ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিলে কেন.?

নীলাঃ তা ছাড়া আর কি করবো, উনাকে যদি বলতাম যে তুমি আমার স্বামী তাহলে উনি বিশ্বাস করতেন না।। কারণ আমার বিয়ে হলে তো আম্মু তাদেরকে দাওয়াত দিতেন ই।। তো উনি যদি উনার বাড়িতে গিয়ে উনার আব্বুকে মানে আমার মামাকে আমার কথা বলেন তাহলে তো ঝামেলা হয়ে যাবে।। কারণ তারা কেউ তো আর জানে না যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে।। তখন মামা আমার বিষয়টা নানু বাড়িতে পৌঁছে দিবেন আর নানু বাড়ির লোকজন আম্মু আব্বুকে ফোন করে আমার বিষয়ে জানাবে।। তখন তো আব্বু জেনে ফেলবে যে আমরা কোথায় আছি তাইনা.? এরপর আব্বু যদি এইখানে এসে আমাদের খুজে বের করে ফেলেন তখন কি হবে.?

তামিমঃ কি আর হবে আমাদেরকে আবার বিয়ে দিয়ে দিবেন (মজা করে)।।

নীলাঃ আমি কিন্তু এখন মজার মোডে নেই।।

তামিমঃ তো আমি মজার মোডে আছি নাকি.?

নীলাঃ আচ্ছা বাদ দাও এখন এইসব কথা।।

তামিমঃ আমরা যে এইখানে আছি এটা ছোট চাচ্চু জেনে যাবেন বলে তুমি উনার কাছে আমাকে ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিয়েছ তাইতো.?

নীলাঃ হ্যাঁ

তামিমঃ এই ছোট্ট একটা বিষয়ের জন্য আমাকে উনার কাছে ফ্রেন্ড হিসেবে পরিচয় দিতে হয়.?

নীলাঃ এটা কোনো ছোট বিষয় না, উনি যদি বাড়িতে গিয়ে মামার কাছে আমার কথা বলেন আর মামা যদি আব্বুকে ফোন করে এই বিষয়ে জানান তাহলে যে কি হবে ভেবে দেখেছ কখনো.?

তামিমঃ এমনটা তো আর হবে না তাহলে ভেবে দেখার কি আছে.?

নীলাঃ কেন হবে না.?

তামিমঃ কারণ তুমি তো উনাকে আমাদের সম্পর্কে কিছুই বলনি।।

নীলাঃ হুম বাট যদি বলতাম তাহলে.?

তামিমঃ বলবে.? উনাকে ডাক দেই তাহলে.?

নীলাঃ থাক আর ডাক দিতে হবে না, ডাবটা এইদিকে দাও কথা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে গেছে এতক্ষণে।।

তামিমঃ এই নাও (ডাবটা এগিয়ে দিয়ে)।।

তারপর নীলা তামিমের থেকে সেই ডাবটা নিয়ে খেতে শুরু করলো।। নীলা ডাবের কিছু পানি খেয়ে বাকিটুকু তামিমকে দিয়ে দিল।। তামিমও ডাবের বাকিটুকু পানি খেয়ে ডাবটা দূরে ফেলে দিল।। এরপর তারা দুজনে সেখানে বসে প্রকৃতির নানান দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো।। দেখতে দেখতে একসময় সন্ধ্যা হয়ে আসলো তাই তারা দুজনেই আবার হোটেলে চলে আসলো।।

ওইসময় নীলা যার সাথে কথা বললো সে কে তা তো আপনারা জানলেনই।। ছেলেটা নীলার মামাতো ভাই ওর নাম সাকিব।। দেড় বছর আগে সে একবার তার আম্মুকে ডাক্তার দেখাতে নীলাদের বাসায় আসে।। নীলা তখন ইন্টার শেষ বর্ষের ছাত্রী আর সে তখন অনার্স ১ম এ পড়তো।। প্রথমদিন নীলাকে দেখেই তার ভালো লেগে যায়।। এরপর সে একদিন সুযোগ বুঝে নীলাকে নিজের কথাগুলো জানায়।। কিন্তু নীলা তাকে ওইদিন ফিরিয়ে দেয় আর বলে সে কখনো তার কাজিনদের সাথে এইসবে জড়াবে না।। এর কিছুদিন পরেই সাকিব তার আম্মুকে নিয়ে তাদের বাড়িতে চলে যায়।। তারপর থেকে আর তাদের দেখা হয়নি।। নীলা চায়না তামিম জানক যে সাকিব তাকে পছন্দ করতো, নাহলে তামিম কষ্ট পাবে।। তাই সে তামিমকে ওইসময় ওই মিথ্যা কথাটা বলেছে।।

এদিকে তামিম আর নীলাকে নিয়ে বাসার সবাই-ই এখন ভিষণ চিন্তিত।। চিন্তিত হবে না কেন সেই সকাল থেকে তাদেরকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না তার উপর আজ আবার নীলার বিয়ে হবার কথা ছিল রাফির সাথে।। নীলাকে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি বলে বিয়েটাও ভেঙে দিতে হয়েছে।। বিয়েতে যাদেরকে ইনভাইট করা হয়েছিল তাদেরকে নীলার আব্বু অনেক মিথ্যা বলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাসা থেকে বিদায় করেছেন।। বিয়েতে আমন্ত্রিত সবার কাছেই আজ নীলার আব্বু ছোট হয়ে গেলেন।। তারপরও নীলার আব্বু শুধু নীলার কথাই ভাবছেন, কোথায় আছে মেয়েটা, কার সাথেই বা আছে, সারাদিনে কিছু খেয়েছে কি না, ইত্যাদি ইত্যাদি।।

নীলার আব্বু তার পুলিশ বন্ধুকে তামিম আর নীলার একটা ছবি আর তামিমের নাম্বারও দিয়েছেন নীলাকে খুজে বের করার জন্য।। উনার বন্ধু নীলাকে অনেক জায়গায় খুজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি।। পাবে কি করে উনি তো আর জানেন না যে তারা কোথায় আছে।।

বাসার সবাই-ই নীলা আর তামিমের জন্য চিন্তিত।। কোথায় আছে তারা, কি করছে এইসব কথাই সবাই ভাবছে।। নীলার আম্মু তো একটু পর পর-ই নীলার জন্য ন্যাকা কান্না করে বসেন আর নীলার আব্বু উনাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।। নীলার আম্মু স্বাভাবিক থাকলে তো বাসার সবাই উনার উপর সন্দেহ করবে তাই তিনি মাঝেমধ্যে একটু কান্নার অভিনয় করছেন আর কি।।

এদিকে তামিম আর নীলা হোটেলে এসে হাত-মুখ ধুয়ে রুমের মধ্যে বসে আছে।। হঠাৎ নীলা তামিমকে বললো…

নীলাঃ এই তোমার ফোনে টাকা আছে.?

তামিমঃ হ্যাঁ আছে তো কেন.?

নীলাঃ আসলে আম্মুর কথা খুব মনে পরছে তাই উনার সাথে একটু কথা বলতে চাচ্ছিলাম আর কি।।

তামিমঃ ওহ এই কথা কিন্তু চাচির নাম্বার যে আমার ফোনে নেই।।

নীলাঃ তাতে কি আম্মুর নাম্বার তো আমি জানি।।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে এই নাও ফোন আর কথা বল (নীলার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে)।।

নীলাঃ তামিমের থেকে ফোনটা নিয়ে তার আম্মুর নাম্বার তুলে কল দিল।।

কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর নীলার আম্মু কল রিছিভ করলেন।।

নীলার আম্মুঃ হ্যালো কে বলছেন.?

নীলাঃ আম্মু আমি নীলা বলছি, তুমি কেমন আছ আম্মু (কাদো কাদো কণ্ঠে)।।

নীলার আম্মুঃ নীলা.! তুই কেমন আছিস মা.? আর তোর কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন কি হয়েছে তোর.? (কিছুটা অস্থির হয়ে)

নীলাঃ আমি ভালো আছি আম্মু আর আমার কিছু হয়নি।। আসলে এতোদিন পর তোমার সাথে কথা বলতে পেরে খুশিতে কণ্ঠ এমন হয়ে পরেছে।।

নীলার আম্মুঃ ওহহ তা তোরা এখন কোথায় আছিস মা.?

নীলাঃ এখন আমরা কক্সবাজার আছি আম্মু।। তুমি এখন কোথায় আছ বাসার কেউ তোমার পাশে নেই.?

নীলার আম্মুঃ নাহ আমি একটু বারান্দায় আসছিলাম তামিম বাবার নাম্বার খুজে উনাকে ফোন দেওয়ার জন্য।। তার মধ্যেই তুই ফোন দিয়ে দিলি তা এই নাম্বারটা কার.?

নীলাঃ উনার ই, উনার আগের সিমটা খুলে নতুন আরেকটা সিম ঢুকিয়েছেন।।

নীলার আম্মুঃ ওহহ তা তোদের কাছে টাকা-পয়সা আছে তো নাকি আরও লাগবে.? লাগলে বল আমি আরও টাকা পাঠিয়ে দিব।।

নীলাঃ নাহ আম্মু টাকা-পয়সা লাগবে না আমাদের কাছে আছে।।

নীলার আম্মুঃ আর কতো টাকা আছে.?

নীলাঃ দাড়াও আমি জিজ্ঞেস করে বলছি, এই আমাদের কাছে আর কতো টাকা আছে আম্মু জিজ্ঞেস করছেন (তামিমকে বললো)।।

তামিমঃ উনি যত টাকা দিয়েছিলেন তার সব টাকাই রয়ে গেছে।।

নীলাঃ আম্মু তুমি যত টাকা দিয়েছিলে তার সব টাকাই নাকি রয়ে গেছে।।

নীলার আম্মুঃ ২ দিন হলো তোরা বাহিরে আছিস আর এখন বলছিস যত টাকা দিয়েছি তার সব টাকাই রয়ে গেছে, এটা কীভাবে সম্ভব.?

নীলাঃ আমি জানি না তুমি উনার সাথে কথা বল এই নাও (তামিমকে ফোন দিয়ে)।।

তামিমঃ জি চাচি বলেন.?

নীলার আম্মুঃ আব্বু তোমাকে আমি যত টাকা দিয়েছি তার সব টাকাই নাকি রয়ে গেছে এটা কীভাবে সম্ভব, তোমরা কি টাকা খরচ কর নাই.?

তামিমঃ আসলে চাচি আমার বন্ধুরা আমাদেরকে এইখানে দিয়ে যাওয়ার সময় আমায় কিছু টাকা দিয়ে যায় সেই টাকাই এখন খরচ করছি।। আর হোটেলের মেনেজারের থেকে জানতে পেরেছি ওরা নাকি ৩ দিনের জন্য আমাদের রুমটা বুকিং করেছে আর ওরা ৩ দিনের টাকাটাও দিয়ে দিয়েছে।।

নীলার আম্মুঃ ওহহ এই ব্যাপার, আচ্ছা ঠিক আছে তোমাদের টাকা ফুরালে আমায় বলিও আমি আরও টাকা পাঠিয়ে দিব তোমার বিকাশে।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচি আর চাচি বাসার লোকদের কি খবর.?

নীলার আম্মুঃ তোমাদেরকে বাসায় না পেয়ে নীলার আম্মু উনার এক পুলিশ বন্ধুর কাছে তোমাদের মিসিং ডাইরি লিখিয়েছেন।। পুলিশের কাছে তোমরা দুজনের ছবিও রয়েছে, তোমরা একটু সাবধানে থেক বাবা, আর হোটেল থেকে বেশি বেরিও না।।

তামিমঃ আচ্ছা চাচি আর আম্মু-আব্বুর কি খবর.?

নীলার আম্মুঃ ওরাও তোমায় আর নীলাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত আছেন।। আচ্ছা এবার নীলার কাছে একটু ফোনটা দাও তো।।

তামিমঃ হুম এই নিন, নীলা কথা বল (নীলাকে ফোনটা দিয়ে)।।

তারপর নীলা তামিমের থেকে ফোনটা নিয়ে তার আম্মুর সাথে কথা বলতে লাগলো।। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে নীলা ফোনটা রেখে তামিমকে তার ফোনটা দিয়ে দিল।। তামিমও ফোনটা নিয়ে তার কয়েকটা বন্ধুকে কল করে তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বললো।।

রাত ৯টার সময় হোটেলের একজন স্টাফ এসে তাদেরকে খাবার দিয়ে গেল।। এরপর দুজনে সেই খাবার খেয়ে ওইদিনের মতো ঘুমিয়ে পরলো।।

সকালবেলা…

ঘুমের মধ্যে হঠাৎ তামিমের মনে হলো কে যেন তাদের রুমের কলিং বেল বাজাচ্ছে।। তামিম ঘুম ঘুম চোখে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো সকাল ৮টা বাজে।। এতো সকাল কে তাদের রুমের কলিং বেল বাজাচ্ছে দেখার জন্য তামিম বিছানা থেকে উঠতে যাবে তখন-ই সে দেখলো নীলা তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকের উপর শুয়ে আছে।। তামিম আস্তে আস্তে নীলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাড়ালো।। এরপর সে রুমের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে দরজাটা খুলে দিল।।

রুমের দরজা খোলার সাথে সাথে একটা কালো বোরকা পরা মেয়ে তাদের রুমে ঢুকে পরলো আর রুমের দরজাটা লাগিয়ে দিল।। তামিম তো মেয়েটার কাজে পুরাই অবাক, কে এই মেয়ে আর আমাদের রুমেই বা কেন এসেছে.?

তামিমঃ এই মেয়ে কে আপনি আর এইভাবে আমাদের রুমে ঢুকেছেন কেন.?

তারপর মেয়েটা তামিমের প্রশ্নের উত্তরে এমন একটা কথা বললো যা শুনে তামিম পুরাই টাশকি খেয়ে গেল।। তামিম মনে মনে ভাবতে লাগলো, এ আবার কোন বিপদ এসে ঘাড়ে পরলো.?
.
.
.
.
.
Loading…….