খুব ভালোবাসি তোকে পর্ব-২৭

0
4825

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২৭
,,
,,
,,
,,
–জানু তুই আমাকে এখনো চিনতে পারলি না.? আরে গাধি আমি মিতু এই দেখ (বলেই তার মুখের কাপড়টা সরিয়ে দিল)

মেয়েটাকে দেখে নীলা অবাক না হয়ে পারলো না কারণ মেয়েটা সত্যিই মিতু, তার স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড।। কিন্তু মিতু এইখানে কি করছে এটাই নীলা ভেবে পাচ্ছে না।।

নীলাঃ মিতু তুই.! তুই এইখানে কীভাবে এলি.?

মিতুঃ কেন পায়ে হেটে এসেছি।।

নীলাঃ আমি সেটা বলছি না, বলছি তুই এইখানে তাও আমাদের হোটেলে কীভাবে

মিতুঃ তোকে দেখতে আসলাম জানু।।

নীলাঃ আমাকে দেখতে আসছিস মানে.? তুই কি বলছিস আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।।

মিতুঃ বিয়ে করলি অথচ আমায় দাওয়াতও দিলি না তাই তোকে একটু দেখতে আসলাম।।

নীলাঃ তাহলে তুই যে বললি তুই উনার বউ আর এই চিঠি, এইসবের মানে কি.?

মিতুঃ এই যে তুই বিয়ে করলি অথচ আমায় জানালি না তাই তোকে একটু শায়েস্তা করার জন্য এই নাটকটা করেছি হিহি।।

নীলাঃ তাহলে এই চিঠি কে লিখেছে.?

মিতুঃ চিঠির লিখাটা আরেক বার মনোযোগ দিয়ে পড় তাহলেই বুঝতে পারবি।।

মিতুর কথায় নীলা গিয়ে তামিমের থেকে চিঠিটা নিয়ে আবার মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়তে লাগলো।। ১ লাইন পড়ার পরেই নীলা মুখে হাত দিয়ে ফেললো।।

নীলাঃ আরে এটা তো তোর লিখা।।

মিতুঃ হুম আমিই তো এটা লিখেছি।।

নীলাঃ তার মানে তুই এতক্ষণ ধরে আমাদের সাথে নাটক করছিলি.?

মিতুঃ হুম বলেই মুখ চেপে হাসতে শুরু করলো।।

মিতুর কথা শুনে আর তার হাসি দেখে নীলা এবার ভিষণ ক্ষেপে গেল আর সোজা গিয়ে মিতু কে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করলো।।

নীলাঃ কুত্তি এইভাবে কেউ কারও সাথে নাটক করে হে.? আমি তো তোর নাটক সত্যি সত্যি ভেবে নিয়েছিলাম।।

মিতুঃ তুই যে বিয়ে করেছিস এটা যদি আমায় বলতি তাহলে আর আমি এমন নাটক করতাম না।। আর এইখানে কিন্তু তুইও অনেক ভুল করেছিস।।

নীলাঃ এই আমি কি ভুল করেছি হে.? আর আমি যে বিয়ে করেছি এটা তুই কীভাবে জানলি.?

মিতুঃ কয়েকদিন আগে তোকে ফোন করেছিলাম একটা দরকারে।। অনেক্ষণ রিং হওয়ার পর আন্টি তোর ফোন ধরলেন, তখন আমি আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম তুই কোথায়।। এরপর আন্টি ই আমায় এই বিষয়ে বলেন।। তারপর আন্টিকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম তুই আর দুলাভাই বিয়ে করে নাকি কক্সবাজারের এই হোটেলে উঠেছিস।। আর তখন আমি কক্সবাজারই ছিলাম আমার খালার বাসায়।। এরপর তোকে খুজতে খুজতে আজ এইখানে চলে আসলাম।।

নীলাঃ বুঝলাম কিন্তু আমি কি ভুল করেছি এটা বল.?

মিতুঃ এই যে ১ম তুই আমার কন্ঠ শুনেও আমায় চিনতে পারলি না।। ২য় তুই আমার লেখাগুলো পড়েও বুঝতে পারলি না যে এটা কার লিখা।। আমি তো জাস্ট দুলাভাইয়ের সাথে একটু ফান করার জন্য এই নাটকটা করেছিলাম, আর তুই সত্যিটা না জেনেই এইখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য জামাকাপড় ঘুছিয়ে ফেললি.!

নীলাঃ আসলেই, ভুল তো আমার ই আমি তোর কণ্ঠ শুনে আর লেখাগুলো পড়েও বুঝতে পারলাম না যে তুই কে।। আসলে তোর কণ্ঠ অনেকদিন যাবত শুনছিলাম না তো তাই তোকে চিনতে পারি নি।। আর চিঠির লেখাগুলো এতো মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম যে এই লেখাগুলো কার হাতের লিখা সেটাও বুঝতে পারি নি।।

মিতুঃ তো এবার দুলাভাইয়ের রাগ ভাঙা গিয়ে দেখ আমার কিউট দুলাভাইটা মনে হয় তোর উপর রেগে আছে (নীলার কানে কানে)।।

মিতুর কথায় নীলা পিছনে ঘুরে তামিমের দিকে তাকালো।। নীলা তামিমের দিকে তাকাতেই তামিম পিছনে ফিরে একটা ব্যাগে তার জামাকাপড় ভরতে আরম্ভ করলো।। তামিমের এমন কাজে নীলা বুঝে গেল সে তার প্রতি ভিষণ পরিমাণে রেগে আছে।। নীলা তাড়াতাড়ি করে তামিমের কাছে তার পা জড়িয়ে ধরলো আর বললো…

নীলাঃ আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও, কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমায় অবিশ্বাস করবো না।।

তামিম নীলার কথা কোনো কর্ণপাত না করে তার কয়েকটা কাপড় একটা ব্যাগে ভরে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ভান ধরলো।। তামিম রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে নীলা দৌড়ে গিয়ে তামিমের পথ আটকে দাঁড়ায় আর তামিমকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।।

নীলাঃ বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে আর কখনো তোমায় অবিশ্বাস করবো না।। এইবারের মতো আমায় মাফ করে দাও প্লিজ আর আমায় ছেড়ে কোথাও যেও না প্লিজ নাহলে আমি

তামিমঃ এই পাগলি এইসব কি বলছ, তোমায় ছেড়ে আমি কোথায় যাব হুম.? শুন তোমায় ছেড়ে আমি কোথাও যাচ্ছিনা, গেলেও তোমায় সঙে নিয়ে যাব।। আর তুমি সঠিকটা না জেনেই আমায় অবিশ্বাস করেছ দেখে আমি একটু তোমায় কষ্ট দেওয়ার জন্য চলে যাওয়ার ভান করছিলাম।। তবে আর কখনো যদি তুমি আমায় অবিশ্বাস করেছ তো তোমায় একেবারে ছেড়ে চলে যাব।।

নীলাঃ নাহ আর কখনো আমি তোমায় অবিশ্বাস করবো না প্রমিস।।

তামিমঃ মনে থাকে যেন বলেই নীলাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নীলার চোখের পানি মুছে দিল।।

মিতুঃ বাব্বাহ দুজনের ভালোবাসা দেখে তো মন চাচ্ছে এক্ষুণি একটা বিয়ে করে ফেলি।।

নীলাঃ তোর বিয়ে করার স্বাদ আমি মিটাচ্ছি দাড়া (বলেই মিতুর দিকে তেড়ে যেতে লাগলো)।।

মিতুঃ এখন মারলে কিন্তু একদম ভালো হবে না বলে দিলাম।।

নীলাঃ আচ্ছা যা এবারের মতো মাফ করলাম।।

মিতুঃ আইছে আমার মাফ করনে ওয়ালা 😏

তামিমঃ আপনাদের কথা শেষ হলে কি আমি কিছু বলবো.?

মিতুঃ জি দুলাভাই বলেন কি বলবেন.? আর দুলাভাই একটু আগের ঘটনার জন্য I’m Really Sorry.

তামিমঃ It’s Okay, তা তুমি জানলে কি করে যে আমরা এই রুমে আছি.?

মিতুঃ হোটেলের ম্যানেজারকে তোমাদের কথা বলে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে তোমরা কোন রুমে উঠেছ, তখন ম্যানেজার ই আমায় তোমাদের রুম নাম্বারটা বলে দেয় আর আমি এইখানে চলে আসি।।

তামিমঃ ওহহ আচ্ছা, তা বোরকা কি সবসময় পর নাকি আমাদের সাথে মজা করার জন্য পরে এসেছ.?

মিতুঃ না এখন সবসময়ই বোরকা পরি, বাসায়ও সবসময় হিজাব পরে থাকি আর কোথাও বের হলে বোরকা পরে বের হই।।

তামিমঃ ওহহ তার মানে এখন নিশ্চয়ই ৫ ওয়াক্ত নামাযও পড়.?

মিতুঃ হ্যাঁ আল্লাহ পড়ান।।

নীলাঃ তুমি কি এখন ওর সাথে গল্পই করবে নাকি ফ্রেশও হবে.? যাও এখন ফ্রেশ হয়ে আস, এরপর আমিও ফ্রেশ হব।।

তামিমঃ হ্যাঁ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তোমরা গল্প কর।।

তারপর তামিম ফ্রেশ হতে চলে গেল আর নীলা আর মিতু বিছানায় বসে গল্প করতে লাগলো।। কিছুক্ষণ পর তামিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দেখে নীলা ওর মিতু বসে বসে গল্প করছে, সে কি গল্প নাকি অন্যকিছু এটা তামিমের বুঝে আসছে না।।

তামিমঃ আমাকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে তো এখন নিজেই গল্পতে লেগে গেলেন।। যান গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন তারপর যত মন চায় তত গল্প করিয়েন।।

নীলাঃ মিতু তুই বস আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি (বলেই সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল)।।

প্রায় ৫ মিনিট পর নীলা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।। এর মধ্যে হোটেলের একজন স্টাফ এসে তাদেরকে নাস্তাও দিয়ে গেছে।। এরপর তামিম আর নীলা সেই নাস্তাটা ভাগ করে খেয়ে নিল।। মিতু সকালে নাস্তা করেই এসেছে তাই সে আর তাদের সাথে খায়নি।।

নাস্তা খাওয়া শেষ করে তারা ৩জন বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো।। এরপর মিতু তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।।

এদিকে তামিম আর নীলার খুজ না পেয়ে বাসার সবাই বেশ চিন্তিত।। তামিমের আব্বু অনেকবার তামিমের নাম্বারে কল দিয়েছেন কিন্তু তার নাম্বার বন্ধ দেখাচ্ছে।। তামিমের আব্বু তো মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন যদি তামিম নীলাকে নিয়ে পালিয়ে যায় আর তিনি যদি একবার তামিমকে পেয়ে যান তাহলে তাকে আর আস্ত রাখবেন না।। তিনিও আরও কয়েক থানার পুলিশ স্টেশনে তামিম আর নীলার মিসিং ডাইরি লিখিয়েছেন।। রাহিমা বেগমের ছেলে রাফিও কিছুক্ষণ পর পর নীলার আব্বুকে জিজ্ঞেস করে নীলাকে খুজে পাওয়া গেছে কি না।। নীলার আব্বু মন খারাপ করে ভাগিনাকে না সূচক জবাব দেন।। তামিমের আম্মু তো নামায পড়ে সবসময় আল্লাহর দরবারে কেঁদে কেঁদে ফরিয়াদ করেন উনার ছেলে আর নীলা যেখানেই থাকে না তারা যেন ভালো থাকে।। নীলার আম্মুও নামায পড়ে সবসময় নীলা আর তামিমের জন্য দোয়া করেন।।

এইভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেল ৩ দিন।। আগামীকাল রাহিমা বেগম আর উনার ছেলের আমেরিকা যাওয়ার পালা।। নীলাকে তারা এখনো খুজে পায়নি তাই তিনি আরও ১ সপ্তাহে দেশে থাকার ডেট বাড়িয়েছেন।। যদি এর মধ্যে নীলাকে পাওয়া যায় তাহলে তো ভালো আর না পেলে তখনকার বিষয় তখন ভেবে দেখবেন কি করা যায়।।

এদিকে তামিম আর নীলার হোটেলে রুম বুকিং করা ছিল ৩ দিনের।। সেই দিন পেরিয়ে আজ আরও ৩ দিন হয়ে গেছে।। সেই ৩ দিনের রুম বুকিংয়ের টাকা তার বন্ধুরাই দিয়ে দিয়েছে।। এখনকার রুম বুকিংয়ের টাকা তামিম তার কাছে থাকা টাকা থেকেই দিয়েছে।। রুম বুকিং করা হয়েছে আরও এক সপ্তাহের জন্য।। যার মধ্যে আরও ৪ দিন তারা হোটেলে থাকতে পারবে।। এক সপ্তাহের রুম বুকিংয়ের জন্য পুরো ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাদের।। আর মাত্র ২-৩ হাজার টাকা রয়েছে তামিমের কাছে।। এগুলো ফুরিয়ে যাওয়ার আগে তাকে আবার টাকা নিতে হবে তার চাচির থেকে।।

আজ সকালের ঘটনা…

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে তামিম নীলাকে রেখেই বাহিরে চলে যায় একটু হাটাহাটি করার জন্য।। বাহিরে এসে হাটাহাটি করার এক পর্যায়ে হঠাৎ তামিমের চোখ পরে দেয়ালে থাকা একটা পোস্টারের দিকে।। পোস্টারটা দেখেই তামিমের চোখ কপালে উঠার উপক্রম কারণ পোস্টারে স্পষ্টভাবে তার এবং নীলার ছবি দেওয়া আর ছবির নিচে লিখাঃ ছবির ২ জনের মধ্যে যেকোনো একজনকে যদি কেউ খুজে পান তাহলে —- এই নাম্বারে যোগাযোগ করবেন।। ছবির মানুষকে খুজে দেওয়া লোককে ১০ হাজার টাকা পুরুষ্কার দেওয়া হবে।।

তামিম চারপাশে তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কেউ আছে কি না, ঠিক তখনই সে দেখলো ২ জন পুলিশ তার দিকেই এগিয়ে আসছে।। পুলিশকে দেখেই তামিম উলটো দিকে ফিরে হাটা শুরু করে ঠিক তখনই পিছন থেকে একটা পুলিশ তাকে ডাক দিয়ে দাড়াতে বলে।। তারপর…
.
.
.
.
.
Loading…….