খুব ভালোবাসি তোকে পর্ব-২৯

0
4049

#খুব_ভালোবাসি_তোকে
#লেখকঃ- Tamim
#পর্বঃ- ২৯
,,
,,
,,
,,
–আমার মেয়ে কোথায় আছে.?

নীলার আব্বুর এমন রাগি কন্ঠে কথাটা শুনে নীলার আম্মুর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে নীলার আব্বু তার সব কথা শুনে ফেলেছেন।। এখন উনি নীলার আব্বুকে কি জবাব দিবেন নিজেই বুঝতে পারছেন না।।

নীলার আব্বুঃ চুপ করে আছ কেন বল আমার মেয়ে কোথায়.? (কিছুটা ধমকের শুরে)

নীলার আব্বুর ধমক শুনে নীলার আম্মু কিছুটা ভয় পেয়ে গেলেন তারপরও তিনি কিছু না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলেন।।

এদিকে নীলার আম্মুকে চুপ করে থাকতে দেখে নীলার আব্বুর মেজাজ বেশ খারাপ হয়ে গেল।। তারপরও তিনি নিজের মাথা ঠান্ডা রেখে নীলার আম্মুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে উনার হাত দুইটা নিজের কাছে নিয়ে আসলেন আর বললেন…

নীলার আব্বুঃ প্লিজ বল আমার মেয়ে কোথায়.? আমি আর আমার মেয়েটাকে না দেখে থাকতে পারছি না।। প্লিজ বল আমার নীলা কোথায়.? (বলতে বলতে উনার চোখে প্রায় পানি চলে এসেছে)

নীলার আম্মুঃ আরে তুমি কাদছ কেন.?

নীলার আব্বুঃ আমার মেয়ে কোথায় আছে বলে দাও।। নীলা যেখানেই থাকুক না কেন আমি ওকে বাসায় নিয়ে আসবো।। আর নীলা যদি কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে আমি তার সাথেই নীলার বিয়ে দিব।।

নীলার আম্মুঃ সত্যি বলছ তুমি.! নীলা কাউকে ভালোবেসে থাকলে তুমি তার সাথেই নীলার বিয়ে দিবে.? কথা দাও আমায়।।

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ আমি তার সাথেই নীলার বিয়ে দিব, কথা দিচ্ছি।।

নীলার আম্মুঃ নীলা একজনকে ভালোবাসে আর সে হলো আমাদের তামিম।। তামিমও নীলাকে অনেক ভালোবাসে।। তারা দুজন বাসা থেকে পালিয়ে বিয়েও করে ফেলেছে আর তাদেরকে পালাতে আমিই হেল্প করেছি।। এখন তারা কক্সবাজারের —– এই হোটেলে আছে।।

নীলার আব্বুঃ নীলা তামিমকে ভালোবাসে অথচ আমি এর কিছুই জানি না.! তামিমকে তো নীলার জন্য আমারও পছন্দ কিন্তু আপার কথা রাখতে গিয়ে আমি আর এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি নি।। যাইহোক আমি আজকেই ওদের দুজনকে বাসায় নিয়ে আসবো আর ধুমধাম করে ওদের বিয়ে দিব।।

নীলার আম্মুঃ ভাইজান কি তামিম আর নীলার সম্পর্কটা মেনে নিবে.?

নীলার আব্বুঃ ওইসব নিয়ে তুমি চিন্তা করিও না আমি ভাইজান কে বুঝিয়ে বলবো দেখবে উনি ঠিকই তাদেরকে মেনে নিবেন।।

নীলার আম্মুঃ আর বড় আপাকে কি বলবে.?

নীলার আব্বুঃ আগে তামিম আর নীলাকে বাসায় নিয়ে আসি তারপর দেখা যাবে আপাকে কি বলবো।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা তাহলে তুমি বরং কাল সকালে ওদেরকে আনতে যেও।। এখন আমি গিয়ে রাতের খাবারের আয়োজন করি।।

নীলার আব্বুঃ আচ্ছা যাও।।

তারপর নীলার আম্মু খুশি মনে নিচে চলে আসলেন।। নিচে এসে উনি আর তামিমের আম্মু মিলে সবার জন্য রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে সবাইকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকলেন।। নীলার আম্মুর চেহারায় খুশি খুশি ভাব দেখে তামিমের আম্মু একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে আজ তুমি এতো খুশি কেন।। তখন নীলার আম্মু জবাব দিলেন, সকাল হোক তারপর জানতে পারবেন।। এরপর সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার মতো ঘুমিয়ে পরলো।।

পরেরদিন সকালবেলা নীলার আব্বু ঘুম থেকে উঠে হালকা নাস্তা করেই উনার গাড়ি নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরেন।। নীলার আব্বু এর আগেও উনার বন্ধুদের সাথে কয়েকবার গাড়ি নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছেন তাই কক্সবাজারের রাস্তা চিনতে উনার কোনো অসুবিধা হবে না।। ৪ ঘন্টা পর নীলার আব্বু গিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছালেন।। তারপর তিনি সোজা ওই হোটেলে চলে গেলেন যেখানে তামিম আর নীলা রয়েছে।। হোটেলে ঢুকে তিনি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিলেন যে তামিম আর নীলা কোন রুমে উঠেছে।।

এরপর তিনি সোজা তাদের রুমের কাছে চলে আসলেন।। রুমের কাছে এসে নীলার আব্বু বাহির থেকে প্রথমে দরজার কলিং বেল বাজালেন।। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে নীলা এসে রুমের দরজা খুলে দিল।। দরজার সামনে নীলা তার আব্বুকে দেখে প্রথমে কিছুটা ভয় পেলেও পরক্ষণেই নীলা তার আব্বুর বুকে ঝাঁপিয়ে পরলো আর কেদে দিল।।

নীলার আব্বুঃ আরে আরে আমার আম্মুটা কান্না করছে কেন.? কেউ কি আমার আম্মুটাকে কিছু বলেছে.?

নীলাঃ নিশ্চুপ (শুধু কেঁদেই যাচ্ছে)।।

নীলার আব্বুঃ কি হলো আম্মু বল কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে.? ওহ বুঝেছি, তামিম তোমায় বকা দিয়েছে তাইনা.? দাড়াও আমি এক্ষুণি (উনার কথা শেষ হওয়ার আগেই নীলা উনাকে ছেড়ে দিল)।।

নীলা তার আব্বুকে ছেড়ে দিয়ে রুমে ঢুকে চুপচাপ এক কোণায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।। নীলার আব্বুও রুমে ঢুকে নীলার কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন আর তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নীলার থুতনিতে ধরে তার মুখটা হালকা উপরে উঠিয়ে বললেন…

নীলার আব্বুঃ আব্বুর উপর রেগে আছ তাইনা.? আব্বুর সাথে কি আর কথা বলবে না.?

নীলাঃ তুমি খুব পঁচা, তোমার সাথে কোনো কথা নাই (ছোট বাচ্চাদের মতো করে বললো)।।

নীলার আব্বুঃ ওহহ বুঝেছি আমার আম্মুটা তাহলে আমার উপর রেগে আছে।। আচ্ছা কি করলে আমার আম্মুটার রাগ ভাঙবে শুনি.?

নীলাঃ নিশ্চুপ

নীলার আব্বুঃ আমি এইখানে কীভাবে এলাম কেন এলাম জানতে চাইবে না.?

নীলাঃ কেন এসেছ এইখানে.? (অভিমানী কণ্ঠে)

নীলার আব্বুঃ এসেছি আমার আম্মুটাকে এইখান থেকে নিয়ে যেতে।।

নীলাঃ আমি কোথাও যাব না, আমি এইখানেই থাকবো।। চলে যাও তুমি এইখান থেকে (আরও অভিমান নিয়ে বললো)।।

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ চলে যাব তো তবে তোমাদেরকে সাথে নিয়ে যাব।।

নীলাঃ আমাদেরকে মানে.! (অবাক হয়ে)

নীলার আব্বুঃ আমার আম্মুটাকে আর আমার আম্মুটা এতদিন যার সাথে এইখানে থেকেছে তাকেও এইখান থেকে নিয়ে যাব।।

নীলাঃ মানে তা

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ তামিমকে আর তোমাকে এইখান থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্যই আমি এইখানে এসেছি।। আর তোমরা যে এইখানে আছ এটা তোমার আম্মু ই আমাকে বলেছেন।। আর তোমরা যে বিয়ে করে ফেলেছ এটাও তোমার আম্মু আমাকে বলেছেন।। তাই আমি এখন চাচ্ছি তোমাদেরকে বাসায় নিয়ে যেতে আর বাসায় নিয়ে ধুমধাম করে তোমাদের দুজনের বিয়ে দিব।।

নীলাঃ সত্যি আব্বু.! তার মানে তুমি

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ আমি তোমাদেরকে মেনে নিয়েছি।।

নীলাঃ লাভ ইউ আব্বু তুমি অনেক ভালো (বলেই তার আব্বুকে জড়িয়ে ধরলো)।।

নীলার আব্বুঃ আমায় মাফ করে দাও আম্মু, তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি রাফির সাথে তোমার বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম যার ফলস্বরূপ

নীলাঃ আব্বু এখন এইসব কথা বাদ দাও তো।।

নীলার আব্বুঃ আচ্ছা তা তামিম কোথায় ওকে তো কোথাও দেখছি না।।

নীলাঃ উনি একটু ওয়াশরুমে গেছেন তুমি বিছানায় এসে বস।।

তারপর নীলার আব্বু বিছানায় গিয়ে বসে রইলেন আর তামিমের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন।। কিছুক্ষণ পর তামিম ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো আর বিছানার মধ্যে নীলার আব্বুকে বসা অবস্থায় দেখে একটা বড় ধরণের শক খেল।। তামিম এটাই ভাবছে যে চাচ্চু এইখানে কীভাবে এলেন.?

তামিমঃ চাচ্চু তুমি এইখানে.!

নীলার আব্বুঃ হ্যাঁ বাবা তোরা দুজনকে বাসায় নিয়ে যেতে আসলাম।।

তামিমঃ বাসায় নিয়ে যেতে আসছ মানে.? তুমি কীভাবে জানলে যে আমরা এইখানে আছি.?

নীলার আব্বুঃ তোর চাচি ই আমাকে বলেছেন যে তোরা এইখানে আছিস।। আর তোরা যে বিয়ে করেছিস এটাও বলেছে আমায় তোর চাচি।। বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে প্লিজ তুই আমাকে মাফ করে দে, আমি জানতাম না যে নীলা তোকে ভালোবাসে, যদি জানতাম তাহলে আমি তোর সাথেই নীলার বিয়ে দিতাম।। কিন্তু তোর ফুপির কথা রাখতে গিয়ে আমি নীলারও কোনো মতামত শুনতে চাইনি।। প্লিজ বাবা তুই আমাকে মাফ করে দে (বসা থেকে উঠে তামিমের হাত ধরে)।।

তামিমঃ ছিঃ ছিঃ চাচ্চু তুমি এটা কি করছ, আমি তোমাকে মাফ করবো মানে.? উলটা তুমি আমায় মাফ করবে কারণ আমি তোমাদের কারও কথা চিন্তা না করেই সেদিন নীলাকে নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে আসি।। আমার জন্য তোমাদেরকে না জানি কত মানুষের কাছে সেদিন ছোট হতে হয়েছে।।

নীলার আব্বুঃ না বাবা এইখানে তোর কোনো দোষ নেই, সব দোষ আমার, আমারই ভুল হয়েছে তোর ফুপির কথা শুনে।। তোরা আমাকে মাফ করে প্লিজ আর আমার সাথে এখন বাসায় চল।।

তামিমঃ চাচ্চু এইসব এখন বাদ দাও।। আর বাসায় গেলে আব্বু

নীলার আব্বুঃ তোর আব্বুকে আমি ম্যানেজ করে নিব শুধু তোরা দুজন বাসায় চল।।

তামিমঃ আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে চল, নীলু আমাদের

নীলাঃ আমাদের সব জামাকাপড় ব্যাগে ভরে ফেলেছি চল এবার যাওয়া যাক।।

তামিমঃ হাহা, হ্যাঁ চাচ্চু তাহলে চল এবার যাওয়া যাক।।

তারপর তারা ৩জন হোটেলের ম্যানেজারেরকে সবকিছু বলে হোটেল থেকে বেরিয়ে নীলার আব্বুর গাড়িতে উঠে বসে।। এরপর নীলার আব্বু গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।। দীর্ঘ ৪ ঘন্টা পথ পাড়ি দিয়ে তারা একেবারে সন্ধ্যার সময় তাদের বাসায় এসে পৌঁছে।। গাড়ি বাসার সামনে থামানোর পর নীলা গাড়ি থেকে নেমে বাসার দরজার কলিং বেলে চাপ দিল।। কিছুক্ষণ পর নীলার আম্মু এসে বাসার দরজা খুলে দিলেন।। নীলা তার আম্মুকে দরজার সামনে দেখেই জড়িয়ে ধরলো।।

নীলাঃ আম্মু কেমন আছ তুমি.?

নীলার আম্মুঃ ভালো মা, তোদের আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো.?

নীলাঃ না আম্মু কোনো অসুবিধা হয়নি।।

নীলার আম্মুঃ আচ্ছা সবাই ভিতরে আস।।

তারপর সবাই বাসার ভিতরে গিয়ে ঢুকলো।। তামিম আর নীলাকে বাসায় দেখে তামিমের আম্মু উনার রুম থেকে দৌড়ে এসে তামিমকে জড়িয়ে ধরলেন আর কেঁদে ফেললেন।।

তামিমের আম্মুঃ বাবা কোথায় ছিলি তুই এতোদিন.?

তামিমঃ আম্মু কান্না কর না প্লিজ, তোমাদেরকে সব বলবো তুমি এখন শান্ত হও।। আর আব্বু কোথায়.?

তামিমের আম্মুঃ তোর আব্বু তো অফিসে।।

তামিমঃ ওহহ

তামিম আর নীলার গলার আওয়াজ শুনে তাদের ফুপি আর উনার ছেলেও এতক্ষণে তাদের রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে।। রাহিমা বেগমও তামিম আর নীলাকে একটা কথাই জিজ্ঞেস করছেন তারা এতোদিন কোথায় ছিল কিন্তু তারা দুজনেই বলছে এইসব কথা পরে বলবে।। তারপর সারা বাসায় তামিম আর নীলাকে নিয়ে হৈচৈ পরে গেল, তামিম আর নীলাকে খুজে পাওয়ার আনন্দে।।

কিছুক্ষণ পর তামিমের আব্বুও বাসায় চলে আসলেন আর তামিম আর নীলাকে বাসায় দেখে বেশ চমকে উঠলেন।। তারপরও তিনি নিজেকে শান্ত রেখে কারও সাথে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলেন।। এরপর তিনি নিজের অফিসের কাপড় পালটে অন্য কাপড় পরে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসলেন।। উনার পিছনে পিছনে বাসার সবাই ড্রয়িংরুমে গিয়ে ঢুকলো।। সবাই এখন চুপচাপ কারও মুখে কোনো কথা নেই।। নিরবতা ভেঙে তামিমের আব্বু বললেন…

তামিমের আব্বুঃ এরা এতোদিন কোথায় ছিল আর এখন এরা বাসায় কীভাবে এলো.?

নীলার আব্বুঃ ভাইজান এরা এতোদিন কক্সবাজার ছিল, আজকে আমিই ওদেরকে সেখান থেকে বাসায় নিয়ে এসেছি।।

তামিমের আব্বুঃ কেন এনেছিস এদের বাসায়.? (কিছুটা রাগী শুরে)

নীলার আব্বুঃ আসলে ভাইজান এরা যেদিন বাসা থেকে পালিয়ে যায় সেদিনই এরা একটা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে।। এদের জন্য তো আমারও কষ্ট হয় তাই আমি এদের বিয়েটা আবার দেওয়ার জন্য এদেরকে বাসায় নিয়ে এসেছি।। তামিমকে নীলার জন্য আমারও পছন্দ কিন্তু আপার কথা রাখতে গিয়ে আমি আর এই বিষয়ে কিছু বলতে পারি নি।। এখন যদি আপনি রাজি থাকেন তাহলে আমি আবার এরা দুজনের বিয়ে দিতে চাই।।

নীলার আব্বুর কথাগুলো শুনে তামিমের আব্বু কিছুক্ষণ চুপ থেকে হঠাৎ এমন একটা কথা বললেন যা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে গেল।। তামিম আর নীলা শুধু অসহায়ের মতো তাদের ফুপির দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে না জানি এখন ফুপি কি বলে।।
.
.
.
.
.
Loading……