খেলাঘর পর্ব-১৩+১৪

0
3021

#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ ১৩

লাজ রক্ত দিয়ে আসলো, মাথাটা একটু একটু করে ঝিমাচ্ছে। ফারাজ হাতটা ধরে বসিয়ে দিলো, তারপর জিজ্ঞেস করলো,”তুমি কিছু খাবে?আমি এনে দিবো?”
-“নাহ,আমি কিছু খাবো না।আমি ঠিক আছি।ফারাজ, আমি গুলিটা ইচ্ছে করে করিনি।আমি তোমাকে গুলি করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বোঝতে পারিনি ওনি কোথা থেকে চলে আসলেন।”
লাজ বলেই কান্না করে দিলো, ফারাজ লাজকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,”ইটস ওকে,আমি বোঝতে পারছি তুমি এসব ইচ্ছে করে করোনি, তুমি আমাকে ভুল বোঝেই এসব করেছো।এখন দোয়া করো মা’র যেন কিছু না হয়।”
ঘন্টা খানেক হয়ে গেল কিন্তু এখনো কোনো খোঁজ খবর পাওয়া গেলনা।অপারেশন থিয়েটারের ভিতরে কি হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই বোঝতে পারছে না তারা।লাজ আর ফারাজ একজন আরেকজনকে শক্ত দেখালেও দুজনের মনেই অজানা এক ভয় কাজ করছে।ওটির লাইট অফ হলো, ডাক্তার বেড়িয়ে আসলেন।ফারাজ দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন….
-“ডাক্তার, আমার মা ঠিক আছে তো?ওনার কিছু হয়নি তো?”
ডাক্তার সাহেব নিজের মাস্ক খুলছেন।লাজ জিজ্ঞেস করলো,”কি হলো চুপ হয়ে আছেন কেন? উত্তর দিচ্ছেন না কেন?বলুন কিছু!”
ডাক্তার সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালো,” রিল্যাক্স!চিন্তার কোনো কারণ নেই।অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।”
লাজ চোখ বন্ধ করে বলল,”আল্লাহ’র কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া!”
ফারাজ জিজ্ঞেস করলো,” আমরা কি ওনার সাথে দেখা করতে পারি?”
-“এখন না,কিছুক্ষণ পর ওনাকে কেবিনে দেওয়া হবে তখন দেখা করতে পারবেন কিন্তু হ্যা বেশী শব্দ করবেন না।”
ডাক্তার এতটুকু বলে চলে গেলেন। লাজ ফারাজের কাঁধে হাত রাখলে ফারাজ ওর দিকে তাকায়।

কেবিনে নিয়ে গেলো ফারাজ আর লাজ দুজনেই ভিতরে আসে। ফারাজের মা’র মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, এখনো জ্ঞান ফিরেনি।ফারাজ তার মায়ের পাশে গিয়ে বসে তার মায়ের হাত ধরে বলে…..
-“আই এম সরি মা, আমি তোমাকে অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।আমি পারিনি বাবা-র হাত থেকে তোমাকে রক্ষা করতে।প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও তুমি প্লিজ!”
ফারাজ তার পায়ের হাতে চুমু খেয়ে কান্না করতে করতে কথাগুলো বলল। লাজ ওর কাঁধে হাত রেখে বলল,”এখন এসব বলার সময় নয় ফারাজ, আগে তোমার মা ঠিক হোক তারপর সবকিছু জেনে আমি কিছু একটা করবো।”
-“শুধু তুমি একাই নও, আমিও আছি তোমার সাথে। আমি তোমাকে কথা দিয়েছিলাম তোমার বাবা মার খুনীকে আমি খুঁজে বের করে শাস্তি দেবো, আমাকে আমার কথা রাখতে দাও লাজ! এতদিন আমার বাবা আমাকে ব্যবহার করছে, ওরা শুধু আমার ভালো দিক দেখেছে এখন আমার খারাপ দিকটা দেখবে। তোমার সাথে হওয়া প্রতিটা অন্যায়,আমার মার সাথে হওয়া অন্যায়, তোমার বাবা মার খুন করার অপরাধ, সবকিছুর শাস্তি ওনাকে পেতেই হবে। তোমার সাথে এখন থেকে আমিও আছি, ওনার দিন শেষ এবার।”
ফারাজের কথাগুলো শুনে লাজ অবাক হয়ে তাকালে ফারাজ ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে….
-“আমি জানি তুমি আমাকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছো না। কিন্তু আমি সত্যি বলছি আমি এসব জানতাম না,যদি জানতাম তাহলে তোমার সাথে কখনোই এই মিথ্যা ভালেবাসার নাটক করতাম না, তোমার মনের ফিলিংস নিয়ে কখনো খেলতাম না। আমি তো তোমাকে সত্যি….”
ফারাজ বাকি কথাগুলো বলতে গিয়েও বলল না। লাজ তার সামনে এসে জিজ্ঞেস করলো,”কি?থেমে গেলে কেন?বলো!তুমি তো আমাকে সত্যি কি?”
-“কিছু না!”
ফারাজ রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। সে সোজা তাকদিয়ার ম্যানসনের ড্রয়িং রুমে এসে ফারিদ তাকদিয়ারের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছে। ফারিদ তাকদিয়ার বের হয়ে এসে জিজ্ঞেস করে…
-“কি হয়েছে?এভাবে নাম ধরে ডাকছিস কেন?”
-“তুমি যা করেছো তার পর তোমাকে আমার বাবা ডাকতেও ঘৃণা করছে।”
-“কি করেছি আমি?”
-“একদম নাটক করবে না তুমি আমার সাথে, আমি তোমার ব্যাপারে সব জেনে গেছি। তুমি এত এত নিচে কি করে নামতে পারো? তুমি নিজের সত্য চাপা দেওয়ার জন্য লাজের বাবা মাকে মেরে ফেললে? কি এমন সত্য জেনে গিয়েছিল ওরা যার ফলে তোমার ওদের মারতে হলো? আর তুমি আমাকে কেন উল্টা পাল্টা বুঝিয়েছিলে লাজের বিষয়ে? ঐদিন কলেজে যা হয়েছিল সব সত্যিই ছিলো তাহলে কেন তুমি আমাকে মিথ্যা কাহিনী বলেছিলে?”
ফারিদ তাকদিয়ার ফারাজের কথা শুনে একদম ভয়ে চুপসে গেছে।ওনি মনে মনে ভাবছেন,”ফারাজ এসব জানলো কি করে?তাহলে কি মাহেরা ওকে সবটা বলে দিয়েছে? না না, সেটা কি করে সম্ভব?মাহেরা কি করে এতদিন পর ফারাজ কে চিনবে? আর চিনলেও লাজের কথাগুলো কি করে জানবে? তারমানে কি লাজ ওকে সবকিছু বলেছে আর লাজই মাহেরা কে নিয়ে পালিয়েছে?”
ফারাজ বলল,”তুমি মনে মনে যা ভাবছো আমি জানি। আর যা ভাবছে সব ঠিকই ভাবছো? মার সাথে আমার দেখা হয়েছে আর লাজই মাকে তোমার হাত থেকে উদ্ধার করেছে।”
-“দেখ বাবা, তোকে ও ভুল বোঝাচ্ছে। আমাদের মাঝের সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছে ও!”
-“চুপ বাবা, আর একট কথা বলবেও না।আমার তোমার সাথে কোনো কথা বলতেই ইচ্ছে করছে না কিন্তু হ্যা একটা কথা শুনে রাখো তুমি যা করেছো তার প্রতিটা অন্যায় কাজের শাস্তি পাবে। আর সেটা আমি দিবো,তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম, আমি তোমার পাশে ততক্ষণ আছি যতক্ষণ তুমি ভালো কাজে আছো কিন্তু এখন আর আমি তোমার সাথে নেই।তাই নিজের পথ নিজে দেখো,যায় হয়ে যাক না কেন আমি তোমাকে তোমার প্রতিটা অন্যায় কাজের শাস্তি দিতেই থাকবো।”
ফারাজ কথাগুলো বলে বাড়ি থেকে বের হবার সাথে সাথেই ফারিদ তাকদিয়ার রাগে হুংকার দিয়ে সোফার টেবিলে লাথি মারে। কাচগুলো টুকরো টুকরো হয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,”লাজ!লাজ!লাজ! এই লাজের জন্য আমি প্রতিনিয়ত ফেইল হয়ে যাচ্ছি। এই লাজ আজকে আমার থেকে আমার ছেলেকে কেড়ে নিলো,এর মূল্য তো ওকে চুকাতেই হবে।পথের কাটা আমি খুব তারাতাড়ি সরিয়ে দিবো শুধুমাত্র সঠিক সময়ের অপেক্ষা।”
কথাটা শেষ করে নিজের চাদরটা শরীরে জড়িয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলেন।

ফারাজ লাজের হাতের উপর শুয়ে আছে, আর লাজ ফারাজের গালের উপর নিজের গাল দিয়ে। হঠাৎ করে বাহিরের হৈচৈ এ লাজের ঘুম ভেঙে যায়। সে নিজেকে ফারাজের সাথে এভাবে দেখে চমকে যায়। কাল সারাত তাহলে তারা এভাবেই ছিলো, ভাবতে লাগলো লাজ। তারপর যখন কিছু মনে আসলো না তখন আর ততটা জোর খাটালো না। লাজ নিজের হাত টান দিতেই ফারাজ আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। লাজের চোখ আটকে যায় ফারাজের ঘুমন্ত মুখটাই,একটা মানুষকে ঘুমের মাঝেই নাকি সবচেয়ে বেশী সুন্দর লাগে। লাজ আজকে তা নিজের চোখে দেখছে।ইচ্ছে করেও চোখ সরাতে পারছে না হাত তো দূরের কথা। লাজ ফারাজের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর একা একা মুচকি হাসতে লাগলো।
ঘুমের মাঝে কারো স্পর্শ অনুভব করছিল ফারাজ, চোখ খুলে দেখে লাজ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। দুজন দুজনের দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে আছে। তখনই একটা নার্স আসলো আর দুজন দুদিকে সরে বসলো।নার্স এসে বলল…..
-“আপনারা চায়লে আজকেই ওনাকে বাসায় নিয়ে যেতে পারেন।তেমন কোনো সমস্যা নেই এখন!”
ফারাজ অবাক হয়ে বলল,” কি বলছেন কি আপনি? এখনো মা’র জ্ঞান ফিরেনি আর আপনি বলছেন কোনো সমস্যা নেই!”
লাজ একটু মুচকি হাসি দিয়ে বলে,” ওনার জ্ঞান ফিরেছে, কালরাতেই ওনি চোখ খুলে তাকিয়ে ছিলেন।ওনি এখন ঘুমাচ্ছেন।”
নার্স বলল,”ডাক্তার স্যার সবকিছু দেখেই যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তারপরও যদি কোনো প্রবলেম হয় নিয়ে আসবেন।”
নার্স চলে গেলে।ফারাজ চোখ রাঙ্গিয়ে লাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। লাজ চোখে ইশারা করে জানতে চায় কি হয়েছে।ফারাজ বলে…..
-“মা’র জ্ঞান ফিরেছিল তুমি আমাকে ডাকোনি কেন?”
-“তুমি ঘুমাচ্ছিল, আর অনেক ক্লান্ত ছিলো বলে ডাকিনি। তোমার মাও ডাকতে নিষেধ করেছিল!”
-“আমার কাছে আমার মা সবথেকে বেশী দামী, আর তুমি আমার ঘুমের জন্য ডাকোনি?”
-“ব্যাপার টা তেমন না,তুমি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়েছিলে, আমি ডাকতে চায়লেও মা দেয়নি। তাছাড়া ওনি তেমন কিছু বলেনি পাঁচ মিনিটের মতো সজাগ ছিলো তারপর আবার ওনাকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়!কিছুক্ষণ পরেই ঘুম থেকে উঠে যাবে তখন না হয় কথা বলো!”
-“হুম!”
-“আচ্ছা,এখন যাও একটু মুখে পানি দিয়ে আসো, কেমন দেখা যাচ্ছে। মানুষের সামনে তোমাকে স্বামীর পরিচয় কিভাবে দিবো বলো তো, সেই কলেজের হট ড্যাশিং হ্যান্ডসাম হিরো এখন হিরো আলম হয়ে গেছে।”
-“বাহ,মনে হচ্ছে স্বামীর প্রতি ভালোবাসা উতলিয়ে পরছে,হুহ ডং!”
-“উতলিয়ে তো পরবেই যতই হোক স্বামী তো!”
-“ওহ আচ্ছা, তাহলে স্বামীকে তার অধিকার টুকু দিয়ে দাও!”
-“কোন অধিকার?”
লাজ বোঝতে পারছিল না কিসের অধিকার তাই জিজ্ঞেস করে, ফারাজ শয়তানি হাসি দিতে দিতে লাজের দিকে এগোতে লাগলো। লাজ এক পা এক পা করে পিছুতে লাগলো।দেয়ালের সাথে পিঠ আটকে গেল লাজের। সে সাইড দিয়ে চলে যাবে তার আগেই ফারাজ ঐদিকে হাত দিয়ে দেয়। লাজ শাড়ি পরা ছিল, পেটের একপাশ দেখা যাচ্ছিল। ফারাজ সে জায়গায় এক আঙ্গুলে খোঁচা দিতেই লাজ চোখ বন্ধ করে ফেলে। শাড়িতে খামচি দিয়ে ধরে।ফারাজ লাজের কানের কাছে গিয়ে বলে…
-“বউকে ইচ্ছে মতো করে পেটানোর!”
ফারাজের এমন কথা শুনে লাজ চমকে চোখ খুলে তাকায়। ফারাজ লাজের এমন রিয়েক্ট দেখে হো হো করে হেঁসে দেয়। লাজ বোঝতে পারছে না,সে হাসবে নাকি কাঁদবে। সে কি ভেবেছিল আর কি হলো? লজ্জায় একটু লাল হয়ে গেল সে, ফারাজ হাসতে হাসতে ওয়াশরুমের দিকে গেল।

#চলবে!

#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৪

মহিলাটিকে লাজের বাসায় আনা হলো।ফারাজ ওনার পাশে বসে হাতে হাত ধরে বসে আছে।লাজ একটা ট্রে তে করে গরম সুপ বানিয়ে আনলো। লাজ বলল,”বলি,যদি আপনাদের মা ছেলের ভালোবাসা শেষ হয়ে থাকে তাহলে এই গরম গরম সুপটা খেয়ে নিন তো দেখি!”
-“নাহ নাহ,আমি এখন কিছু খাবো না।কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা।”
-“সে কি, তোমার বউমা এত কস্ট করে সুপ বানিয়ে আনলো আর তুমি খাবে না বলছো!”
ফারাজ কথাটা বলেই লাজকে একটা চোখ টিপ মারে,লাজ বোঝতে পারে ফারাজ ওকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে কথা বলছে। লাজ এখন কিছু না বলে চমচে করে সুপটা খাইয়ে দিচ্ছিল।তখন মহিলাটি বলল….
-“বউমা আমার বড্ড লক্ষী! এমন সোনার টুকরা বউমা আর কতজন পায়?”
-“হুম,আর এমন অদ্ভুত বিয়ে আর কতজনের হয়?”
লাজ ফারাজের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল, ফারাজ চোখ নিচু করে ফেলল।ফারাজের মা বলল,”যা হবার হয়ে গেছে,তোরা আবার নতুন করে জীবন শুরু কর। সব রাগ অভিমান ভুল বোঝাবুঝি শেষ করে আর পাঁচ স্বামী স্ত্রী’র মতো জীবন যাপন কর!”
-“চায়লেই কি সব সম্ভব হয়ে যায়?যদি তাই হতো তাহলে একটাবার আমাকে বলেন ফারাজ কেন সবটা না জেনে আমার সাথে এমন করলো? এর কোনো উত্তর কি আছে আপনার কাছে?”
ফারাজ লাজের দিকে তাকিয়ে বোঝতে পারলো লাজ ঠিক কতটা কষ্ট নিয়ে কথাটা বলছে।লাজের চোখে পানি ছলছল করছে।কিন্তু সে কিছু বলতে পারছে না।ফারাজের মা বলল….
-“এগুলোর কোনো আমার উত্তর আমার কাছে না থাকলেও আমি একজন মা হয়ে তোমাকে এটা বলবো সবকিছু ভুলে যাও, যা হয়েছে এগুলো ফারাজ তার বাবা-র কথাতে করেছে।”
-“ভবিষ্যতে করবে না,তার কোনো গ্যারিন্টি আপনি দিতে পারবেন?”
-“এখন আমি যা বলতে যাবো তাতে আমি গ্যারিন্টি দিতে পারি ফারাজ তার বাবার সঙ্গ আর কখনো দিবে না। তুমি জানতে চেয়েছিলে না কি আমার পরিচয়? আমাকে কেন ওনি বন্ধি করে রেখেছিল?কি শত্রুতা? তাহলে শুনো তুমি,আর তুইও শোন ফারাজ!”
ফারাজের মা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে শুরু করলো…..
-“আমি মাহেরা তাকদিয়ার, মাহিম তাকদিয়ারের একমাত্র কন্যা সন্তান। যার নামে ছিলো পুরো তাকদিয়ার প্রোপার্টি। তা ছিলো আমাদের সবার অজনা।ফারাজের বাবা আমাকে ভালোবাসার নাটক করে বিয়ে করেছিল শুধু মাত্র এই প্রোপার্টি পাওয়ার আশায়। খুব ভালোই যাচ্ছিল আমাদের সংসার। হঠাৎ করে ফারাজের নানা মারা যাবার পর যখন ফারাজের বাবা নিজের নামে প্রোপার্টি করে নিতে চায় তখন জানতে পারে আমার নামে আগে থেকেই সবকিছু লিখে দিয়ে গেছে বাবা। তখন থেকেই ওনি চেয়েছিল আমার থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিতে কিন্তু সেটা আমি বোঝতে পারিনি। বোঝতে পেরেছিলাম সেদিন যেদিন ওনি ফারাজকে পৃথিবীতে আনতে নিষেধ করছিল। যেখানে সব বাবা খুশি হয় সেখানে তিনি আমার প্রতি রেগে গিয়েছিলেন। বার বার নষ্ট করে ফেলার কথা বলছিল এ নিয়ে প্রচুর ঝগড়া হয় আমাদের মাঝে একসময় ওনি মুখ ফসকে বলেই ফেলেন আমাকে বিয়ে করার কারণ। ওনার মুখ থেকে ঐকথা গুলো শুনে আমি খুব কেঁদে ছিলাম। নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলাম হঠাৎ করে ফারাজের কথা মনে এসেই শেষ করিনি। যে বাচ্চা টা এখনো পৃথিবীর আলো দেখেনি তাকে কিভাবে আমি মেরে ফেলি? ফারাজের চিন্তা করেই আমি কিছু করিনি, বেশকিছু দিন ওনার সাথে আমার কোনে কথা হয়নি৷ একদিন হঠাৎ করে ফোন আসে ওনি নাকি এক্সিডেন্ট করেছেন, যতই হোক ভালোবাসতাম তাকে ছুটে গিয়েছিলাম তার কাছে। অনেক কান্না কাটি করেছিল সেদিন আমার হাতে ধরে। ২য় বার বিশ্বাস করেছি তাকে আর সেটাই আমার ভুল হয়। কোন এক কাজের কথা বলে আমার থেকে প্রোপার্টির ২০% লিখে নেয়।কিন্তু আমি আজও জানি না ঐটা কিসের কাজের জন্য ছিলো? সত্যি কি কোনো কাজের ছিলো নাকি মিথ্যা কোনো চাল। ফারাজ হওয়ার বছর দুয়েক পর একদিন আমি ওনার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম,ওনি কারো সাথে ফোনে কথা বলছিলেন…..
-“আরে,তুমি এত রাগ করছো কেন? আর কয়েকটা দিন তো মাত্র তারপরেই এই সমস্ত সম্পত্তি আমার হয়ে যাবে। আর তুমি আমার! কোনো টেনশন করো না ফারাজকে সম্পত্তি লিখে দেওয়ার আগেই আমি সব নিয়ে নিবো আর তাছাড়া ফারাজ এখনো ছোট ওকে কিভাবে লিখে দিবে?”
এতটুকু শুনেই আমি বোঝতে পেরেছিলাম আমি আবারো ধোঁকার শিকার হয়েছি।সেদিনই আমি ফারাজকে নিয়ে চুপি চুপি ঐ বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরেছিলাম। আমার বিশ্বস্ত উকিলের কাছে গিয়েছিলাম আর ওনাকে সবটা খুলে বলি।ওনি সবটা শুনে বলেন…..
-“এখন তাহলে আপনি কি করবেন?”
-“সেটাই করবো যেটা করলে ওর মনের আশা কখনোই পূরন হবে না। আমার কাছে এখনো প্রোপার্টি আছে ৮০%, এখান থেকে আমি ৬০%ফারাজের নামে লিখে দিবো আর বাকি ২০% আমার নামেই থাকবে।”
-“কিন্তু ফারাজের এত অল্প বয়সে কি করে?”
-“১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত ওর সম্পত্তি কেউ নিতে পারবে না আর দিতেও পারবে না। এই ১৮ বছরে হয়তো সে তার বাবা-র আসল রুপ বোঝতে পারবে। আর যদি এই ১৮ বছরের আগেই ফারাজের কিছু হয়ে যায় তাহলে ওর ভাগের সমস্ত সম্পত্তি সরকারের কাছে চলে যাবে। আর আমার ভাগের টাও তেমনি হবে।আরেকটা কথা সম্পত্তি নেবার বা দেবার সময় কোনো টিপ সই চলবে এটাও উল্লেখ করে দিবেন।
-“আচ্ছা, আপনি এখানে সাইন করে যান। আমি আজকে বিকালের মাঝেই পেপার আপনার কাছে পাঠিয়ে দিবো।”
-“আপনার পাঠাতে হবে না, আমিই সময় মতো আসবো।”
উকিলের কাছ থেকে বের হতেই কতগুলো লোক আমাকে ধরে ফেলল। চোখে মুখে কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে ফেলল। ফারাজকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। যখন চোখ খুলে তাকালাম তখন নিজেকে একটা বন্ধ রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করলাম। সামনে এসে দাঁড়ালো ফারাজের বাবা মুখে সেই ভয়ংকর হাসি। আমার চেয়ারে জোরে ধাবা দিয়ে বলে,”নিজেকে খুব চালাক মনে করো তুমি? কি ভেবেছিলে আমি কিছু জানতে পারবে না আর তুমি তলে তলে গোল দিয়ে যাবে? আরে তোমার সাথে সবসময় আমার চারটা চোখ লাগিয়ে রাখতাম, তুমি খুব চালাক তা আমার জানাই ছিলো। কিন্তু তুমি আজকের কাজটা মোটেও ঠিক করোনি।”
-“আর তোমার কাজটা? তুমি এত নিচ আমার জানা ছিলো না,শুধু মাত্র সম্পত্তির জন্য তুমি আমাকে বিয়ে করেছিলে ভালোবাসার নাটক করেছিলে?”
-“এসব বাংলা আলাপ বাদ দিয়ে বলো,উকিলের কাছে কি বলে এসেছো?”
-“তোমার মনের আশা বান্চার করে এসেছি।”
-“তুই ভালোই ভালোই বলবি নাকি আমি অন্যকিছু ট্রাই করবো।”
চুলের মুঠি ধরে কথাটা বলল।
-“যা করার করো কিন্তু ফারাজের কিছু করলে কিন্তু তোমার সব আশা শেষ হয়ে যাবে।”
-“মানে?”
-“মানে টা না হয় নিজেও জেনে নিও!”
-“মানে তো আমি বের করবোই,তার পর তোর কি হাল করবো তা শুধু দেখবি!”
ওনি বের হয়ে গেলেন,তারপর হয়তো কোনো ভাবে আমার বলা আসা কথাগুলো জেনে গেলেন। আমাকে এভাবেই বেঁধে রেখেছিলেন আর ফারাজ পরম যত্নে নিজের কাছে আগলে রেখেছিলেন। ঐটা ওর ভালোবাসা না বরং সম্পত্তি পাওয়ার লোভ।”

ফারাজের মা কথাগুলো শেষ করেই নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলেন।ফারাজ তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। লাজ ফারাজের মার কাঁধে হাত রেখে বলে,”ভালোবাসা! এই জিনিসটাই মানুষকে সহজে বোকা বানাতে পারে!”
লাজের কথাটুকু ফারাজের বুকে গিয়ে লাগলো। লাজ নিজের ছলছল চোখের পানি গড়িয়ে পরার আগেই মুছে নিলো। তারপর বলল,” এসব কান্না কাটি করার দিন শেষ। এখন বদলা নেবার সময় হয়ে গেছে। আমার বাবা মা’র হত্যার বদলা! ফারাজকে তার মায়ের স্নেহ থেকে বঞ্চিত করার বদলা! মায়ের সাথে হওয়া অবিচারের বদলা! কতগুলো মেয়ের জীবন নিয়ে খেলার বদলা আরো না জানা কতগুলো কুকর্মের বিচার!”
লাজ কথাগুলো বলে সামনে হাত ধরলে ফারাজের মা তার হাতের উপর হাত রাখে। লাজ আর ফারাজের মা দুজনই ফারাজের দিকে তাকালে সেও নিজের হাত ওদের সাথে এক করে। ফারাজ বলে,” যে বাবাকে এত সম্মান করতাম তাকেই শেষ করার জন্য হাত মিলাচ্ছি!”
মাহেরা তাকদিয়ার বলে,” অন্যায় এর শাস্তি পেতেই হয়। আর যদি নাম দেওয়া হয় তাহলে সেও সেই অন্যায়ের ভাগিদার হয়ে যায়।কথায় আছে অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে দুজনেই সমান পাপী!”
ফারাজ আর কোনো কথা বলল না। সবার মাঝে কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর লাজ বলল……
-“মিশন নাম্বার ওয়ান হলো আমাদের আগে তাকদিয়ার ম্যানসনে উঠতে হবে। তারপর যা করার ঐখানে থেকেই করতে হবে।”
ফারাজ বলল,”তোমার কি মনে হয় তুমি ঐখান থেকে কিছু করতে পারবে? ঐখানে প্রতিটা লোক তোমার বিরুদ্ধে!”
-“তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো,ঐ বাড়িতে থেকেই আমি তোমার মাকে উদ্ধার করেছিলাম আর তার সাথে অনেককিছু জানতেও পেরেছিলাম।তুমি তো জানোই আমি তোমাদের বাড়িতে ঢুকার আগে একটা সাধারাণ ডিটি করে এসেছিলাম সেটার ভয়ে তোমার বাবা আমাকে কিছু করার সাহস করতে পারবে না। তাছাড়া এখন তুমিও আমাদের পাশে আছো আশা রাখছি কিছু করতে পারবে না।”
লাজের কথাতে ফারাজ বোঝতে পারলো লাজ ওকে বিশ্বাস করেই কথাটা বলেছে ফারাজ একটা মুচকি হাসি দিলো।

#চলবে!