খেলাঘর পর্ব-১৫+১৬

0
2833

#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৫
ফারাজ তার মা আর লাজকে নিয়ে তাকদিয়ার ম্যানসনের ঢুকার আগেই চিৎকার করে উঠলেন ফারিদ তাকদিয়ার।
-“দাঁড়াও!কোথায় ঢুকছো তোমরা?কার পারমিশন নিয়ে ঢুকছো?”
ফারাজ বলল,”আমাদের বাড়িতে আমরা ঢুকবো তাতে কারো পারমিশনের প্রয়োজন কেন হবে?”
-“কিহ বললে তুমি? তোমাদের বাড়ি, হা হা হা। তোমার বাড়ি ছিলো কিন্তু আজ থেকে প্রায় এক মাস আগে এই বাড়িটা আমার হয়ে গেছে।”
ফারিদ তাকদিয়ার কথা শুনে চমকে উঠে সবাই। লাজ ফারাজের দিকে তাকালে ফারাজ তার বাবার দিকে তাকায়। ফারিদ তাকদিয়ার বলে….
-“কি?অবাক হচ্ছিস? কি করে আমার হলো? তাহলে শোন কিছুদিন আগে আমি তোর থেকে নতুন কারখানার কাগজ করার জন্য সাইন নিচ্ছিলাম না তখনই তোর প্রোপার্টির সাইনও করিয়ে ফেলি। ভেবেছিলাম তোকে বাড়ি থেকে বের করে দিবো কিন্তু তুই আমার হয়ে ভালোই কাজ করছিলি। মাঝপথে চলে আসলো এই লাজ।”
ফারিদ তাকদিয়ার লাজের দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে কথাটা বলল। ফারাজ তার বাবা’র কলার চেপে বলল,” আমি তোমাকে ছাড়বো না, আমি তোমাকে শেষ করে দিবো।”
ফারিদ তাকদিয়ার এক ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলে দিয়ে বলে….
-“আগে নিজের মাথার ছাদ খোঁজ তারপর না হয় আমাকে ধরবি!”
-“ফারিদ তাকদিয়ার তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি এখনো বেঁচে আছি, আর আমার ২০% ও এখনো বাকি আছে।তাই এই বাড়িতে আমারও ভাগ আছে।”
মেহারা তাকদিয়ার ফারিদ তাকদিয়ারের সামনে গিয়ে কথাটা বলে।লাজ ওনার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে….
-“এই ২০% নিয়েই এই বাড়িতে থাকবো, আর আপনার প্রতিটা কুকর্মের পর্দা ফাঁস করবো। কাল যখন মা সবার সামনে এসে নিজের মুখ খুলবে তখন নিজের মুখ কোথায় লুকাবেন আপনি? কি জবাব দিবেন আপনি সবাইকে?”
লাজের কথা গুলো শোনে ভয় পাওয়ার বদলে উল্টো হেঁসে উড়িয়ে দেয় ফারিদ তাকদিয়ার তারপর বলে,” তোমার কি মনে হয় লোক ওর কথা বিশ্বাস করে নিবে, তাও আবার কোনো প্রমান ছাড়া।”
মাহেরা তাকদিয়ার বলে-“প্রমান আমি নিজেই!”
-“তোমার কথা সবাই জানে তুমি আমাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে চলে গিয়েছিলে? আজ এতদিন পর কেন আসলে কি করতে আসলে এগুলোর উত্তর কি দিবে? আর তাছাড়া সামনে নির্বাচন এখন আমার বিরুদ্ধে এসব উল্টো পাল্টা নিউজ স্বাভাবিক বলেই পাবলিক মেনে নিবে।তোমরা কিছু করতে পারবে না।”
-“আর যদি বলি এবারের নির্বাচনের আগেই আপনার পর্দা আমি খুলে ফেলবো তখন আপনি কি করবেন?”
লাজের কথা শুনে ফারিদ তাকদিয়ার ওর দিকে তাকিয়ে বলে,”আগে খুলে তো দেখাও!”
-“তাহলে চ্যালেন্জ নিলাম এবারের নির্বাচনের আগেই আপনার পর্দা ফাঁস হবে আর আপনি এমপি হতে পারবেন না!”
-“হাহাহা, শকুনের দোয়াতে গরু মরে না। যেখানে আমার কোনো প্রতিদ্বন্ধী নেই সেখানে আমাকে এমপি হওয়া থেকে আটকায় কে?”
-“শকুনের দোয়াতে গরু মরে কিনা জানি না কিন্তু এবার আপনি এমপি হতে পারবেন না!”
-“সময়েই সবটা বলবে!”
ফারিদ তাকদিয়ার লাজকে কথাটা বলে উপরে চলে যায়। লাজ মাহেরা তাকদিয়ার কে একটা রুমে রেখে নিজেদের রুমে আসে। এসে দেখে ফারাজ সোফায় বসে আছে,মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে সে কিছু একটা ভাবছে।
লাজ জিজ্ঞেস করলো,”কি ভাবছো?”
লাজের প্রশ্নে ফারাজ ওর দিকে তাকালো আর বলল,” আমি তোমার সাথে খুব বড় অন্যায় করে ফেলিছি!আমি সবটা না জেনেই তোমার সাথে এমন করেছি প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও!”
-“আমি এসব ভুলে গিয়েছি তুমিও সবকিছু ভুলে যাও,এতে তোমারই ভালো হবে।”
-“তারমানে আমরা সংসার করবো?”
ফারাজের প্রশ্নটা খুবই চঞ্চলতার সাথে করেছিল।লাজ ওর দিকে মলিন ভাবে তাকিয়ে বলে,” ভুলে গিয়েছি বলেই এটা নও যে আমরা স্বাভাবিক হয়ে যাবো। একটা জিনিস কি জানো, ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা একবার কারো প্রতি থেকে উঠে গেলে শত চেষ্টা করলেও আর আগের মতো করে করা যায় না। আর যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে সংসার কি করে হবে?”
-“আর যদি ঐ মানুষটা তার ভুল বোঝতে পেরে একটা ভালো মানুষ হয়ে যায় তাহলে? যদি সে সবসময় পাশে থাকে তার কেয়ার করে ভালো মন্দের দায়িত্ব নেয় তাহলে?”
-“ঐটা তখন যদি হয় তাহলে অন্য ব্যাপার এভাবে তো বলা যায় না!”
লাজ উঠে চলে যেতে নিলেই ফারাজ প্রশ্ন করে…
-“তাহলে এখন আমরা কোন সম্পর্কে থাকবো?”
লাজ পিছন ফিরে বলে,”যে সম্পর্ক নিয়ে এসেছিলাম এই বাড়িতে, বদলা আর প্রতিশোধের সম্পর্ক। যদিও এখন তোমার থেকে কোনো কিছু নেবার নেই কিন্তু তোমার বাবার থেকে আছে। ওনার প্রতিটা কাজের বদলা আর শাস্তি দেওয়ার।”
-“সেখানে আমিও তোমার পাশে আছি,যদি মরতে হয় তাহলে মরবো করিম এখন তোমার পাশ থেকে সরবো না!”
-“যে কথাটা বললে না,ঐটা বলা যতটা সহজ হয়েছে করে দেখানো টা তারচেয়েও বেশী কঠিন হবে।”
-“ওয়েট!”
ফারাজ লাজ কে দাঁড় করিয়ে সোফারা সামনে থাকা ফলের ঝুড়ি থেকে ছুড়ি নিয়ে আসে। তারপর একটান দিয়ে হাতের তালু কেটে ফেলে।টপটপ করে রক্ত পরতে লাগলো,লাজ ফারাজের হাত ধরে দেখে অনেকটাই কেটে গেছে। সে বলল,”তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?কি করলে এটা?কেন করলে?ইশ কতটা কেটে গেছে,কিভাবে রক্ত বের হচ্ছে তুমি দেখছো?এসব কোন ধরনের পাগলামি বলো তো!”
-“হতে পারে এটা পাগলামি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি এখন সত্যি তোমার পাশে থাকতে চায় আর থাকবো।”
-“তাই বলে তুমি এভাবে হাত কেটে বিশ্বাস করাবে? পাগল তুমি?”
-“হুম পাগল আর সেটা তো…”
ফারাজের বাকি কথাটুকু না বলে আটকে গেল।লাজ ওকে জিজ্ঞেস করলো,”কি হলো?থেমে গেলে কেন? কি বলতে চায়ছিলে?”
-“কিছু না,তুমি বলো তোমার চোখে পানি কেন?কান্না করছো?”
-“কই পানি?আমি কেন কান্না করবো?চোখে কি একটা গেল তাই জ্বালা করে পানি বের হচ্ছে!”
-“তুমি মিথ্যা কেন বলছো? তুমি যতই বলো আমাকে ভালোবাসো না আমি জানি তুমি আজও আমাকেই ভালোবাসো।”
-“বেশী জানো বলেই আজকে এই অবস্থা,চুপচাপ এখানে বসো আমি ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছি।”
লাজ চোখের পানি মুছে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে আসলো।খুব যত্ন করে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে,ফারাজ ওর দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে। কি মায়া আছে এই মুখটাই ফারাজ নিজেও জানে না। ব্যান্ডেজ করা শেষ হলে ফারাজ বলে….
-“একটা সুযোগ কি দেওয়া যায় না আমাকে?”
-“আবার কিসের সুযোগের কথা বলছো তুমি?”
-“তোমাকে ভালোবাসার!”
-“ফারাজ, ভালোবাসাটা এত সহজ না বললেই হয়ে যায় না আর আমি যেই আঘাতটা পেয়েছি তারপর কেন জানি ইচ্ছে করছে না!”
-“প্লিজ লাজ, আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম, সেই প্রথমদিন তোমাকে দেখেই আমার ভালো লেগে যায়, ভার্সিটির প্রথমদিন আমি তোমার পিছু পিছু যাচ্ছিলাম তখন তোমার পারফিউমের গন্ধে আমার কেমন জানি নেশা ধরে যাচ্ছিল। নিজের অজানাতেই ভালোলাগতে শুরু করলো।কিন্তু যখন বাবা-র ভুল কথা মাথায় ঢুকলো আর বন্ধুদের উশকানিতে সবকিছু শেষ হয়ে যায়।”
-“তুমি ভালোলাগা পর্যন্ত ছিলো বলেই শেষ হয়ে যায় ভালোবাসলে শেষ হতো না।”
লাজ উঠতে নিলে ফারাজ ওর হাত দরে বলে…..
-“আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসতাম, তোমার সাথে ভালোবাসার নাটক করতে করতে কখন নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছিলাম নিজেও বোঝতে পারিনি। কিন্তু একদিকে বাবার অপমান আর অন্যদিকে বন্ধুদের উশকানি আমার মাথা পুরো শেষ করে দিয়েছিল। আমি বোঝতে পারছিলাম না কি করব? লাজ প্লিজ আমাকে আর একটা সুযোগ দাও ল, প্লিজ!”
-“সত্যি ভালোবাসো?”
-“কি প্রমান চাও বলো?”
-“সারাজীবন পাশে থাকতে হলে কিন্তু অনেক রাগ অভিমান ভাঙ্গতে হবে,অনেক ঝড় সহ্য করতে হবে!”
-“সবকিছুর জন্য প্রস্তুত!”
লাজ আর কিছু না বলে ফারাজকে জরিয়ে ধরলো। ফারাজও লাজকে জড়িয়ে ধরলো। লাজ এতদিন ফারাজের থেকে প্রতিশোধ নিতে চায়লেও তার ভালোবাসা একটুও কমেনি। সেই আগের মতো করেই ভালোবেসে গেছে। ফারাজ শুধরে যাওয়ায় লাজ আর তাকে দূরে সরিয়ে দিতে পারলো না। পুনরায় ফারাজের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরী করলো।
লাজ ফারাজকে ছেরে সামনে দাঁড়ালে ফারাজ খেয়াল করলো তার চোখে হালকা পানি। আসলে লাজ একটু বেশীই ইমোশনাল তাই সে সহজেই কেঁদে দেয়। ফারাজ তার চোখের পানিগুলো মুছে দিয়ে বলে…..
-“এভাবে যদি কান্না করো তাহলে সামনে সবকিছু সামলাবে কি করে বলো।”
ফারাজের কথায় লাজ নিজের চোখ মুছে বলে,” কই কান্না করছি আমি তো কান্না করছি না।”
-“ওহ আচ্ছা, তাহলে সবকিছু যখন ঠিক হয়েই গেল তাহলে এখন অধিকার গুলোও ঠিক টাক মতো নিয়ে নেওয়া যাক দুজনের?”
ফারাজ শয়তানি হাসি দিয়ে লাজের দিকে তাকালো লাজ ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকায়।ফারাজ সামনে এগোতে লাগলে লাজ পিছুতে পিছুতে বলল,”কোন অধিকার?বউ পেটানোর!”
লাজের কথায় ফারাজ হেঁসে দিয়ে বলে,” আরে বউ কেন পেটাতে যাবো?”
-“তাহলে?”
-“বউকে আদর করার,ভালোবাসার!”
লাজের কোমড়ে ধরে টান মেরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলল ফারাজ। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে কথাটা বলল। লাজ ইতিমধ্যে কাঁপা শুরু করে দিয়েছে। ফারাজ নিজের গাল দিয়ে লাজের গালে ঘষতে লাগলো, হাত দিয়ে চুল গুলো এক সাইড করে পিঠে হাত নিতেই লাজ এক ধাক্কা দিয়ে তাকে সড়িয়ে দেয়। ফারাজ অবাক হয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে জানতে চায়লো,”কি হয়েছে?” লাজ একটু স্বাভাবিক হয়ে বলল,” আমি এখনো এসবের জন্য প্রস্তুত নয়!এসবের কথা এখনো মাথায় আনিনি, আশা করি বোঝতে পারছো!”
-“ওহ, আচ্ছা সরি, আমার উচিত ছিলো তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে নেওয়া।সরি!”
-“হুম!”
-“আচ্ছা,তাহলে ফ্রেশ হয়ে আসো।আজ থেকে এক সাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো। এতে তো কোনো সমস্যা নেই?”
-“তাতে সমস্যা নেই কিন্তু যদি কিছু…”
-“কিছু হবে না,প্রমিস!”
ফারাজ লাজকে তার কথা শেষ হওয়ার আগেই কথাটা বলল। লাজ ফারাজের দিকে তাকালে ফারাজ একটা কিউট স্মাইল দেয়, যা দেখে লাজের হার্টবিট বাড়তে শুরু করে। লাজ তারাতাড়ি সেখান থেকে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় শুয়া মাত্রই ফারাজ ওকে খপ করে জরিয়ে ধরে।লাজ প্রথমে ভয় পেয়ে গেলেও পরে ফারাজকে দেখে শান্ত হয়। তখন তার কেমন যেন একটা ভালোলাগা অনুভব হয়। আজ প্রথম ফারাজ তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে, আর তারা দুজন এতটা কাছাকাছি। ফারাজ চোখ বন্ধ করে আছে আর লাজ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ফারাজ চোখ খুলে বলে,”এভাবে তাকিয়ে থাকলে তো অনেকিছু করতে মন চায়বে মাই ডেয়ার চাশনি!”
লাজ কথাটা শুনে লজ্জায় তারাতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেলে।ফারাজ মুচকি হাসি দিয়ে সেও চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর চাশনি কথাটা লাজকে ফারাজ ভালোবেসে বলে, সেই প্রথম থেকেই এই নামে ডাকে ফারাজ।

#চলবে!

#খেলাঘর
লেখকঃ শাওন
পর্বঃ১৬
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ফারাজের বুকে আবিষ্কার করলো লাজ। ফারাজের বুকের স্পন্দন শুনতে পাচ্ছে লাজ, ইচ্ছে করছিল না উঠতে। ফারাজ লাজের চুলের সুরসুরিতে চোখ খুলে তাকালো। লাজকে নিজের বুকে দেখে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।কপালের চুলগুলো সরিয়ে ভালোবাসার চুম্বন একে দিতেই লাজ চোখ খুলে তাকালো।ফারাজ একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল…
-“ঘুম ভাঙ্গলো তবে?”
-“হুম!”
লাজ উঠতে নিলে ফারাজ টান দিয়ে আবার বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে…
-“আরেকটু থাকোনা। খুব ভালো লাগছে আমার, মনে হচ্ছে এতদিনে কাছের মানুষ টাকে নিজের করেই পেলাম। কথা দিলাম আমাদের প্রতিটা সকাল এমন সুন্দর হবে!”
লাজ কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে থাকলো, কিছুক্ষণ পর ফারাজ আবার ঘুমিয়ে গেল।লাজ উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ফারাজ তখনো ঘুমাচ্ছিল দেখে লাজ নিজের ভেজা টাওয়ালটা ফারাজ মুখে ছুড়ে মারলো।ফারাজ মাথা তুলে বলে….
-“এটা কি হলো?”
-“এতক্ষণ পর্যন্ত পরে পরে ঘুমালে এমনই হবে।”
-“আজকে প্রথমদিন অন্তত আজকে একটু কাছে এসে কিস করে একটু রোমান্টিক ভাবে উঠাতে পারতে তাই না!”
-“হয়ছে,এত ডং না করে সোজা উঠো।আজকে আমাদের কে একটা জায়গায় বের হতে হবে।”
-“কিন্তু কোথায়?”
-“তা আমিও জানি না,কিন্তু জানি যে করেই হোক ঐ মেয়েগুলোর খোঁজ আমাকে বের করতেই হবে?”
-“কোন মেয়েগুলো? পাচার করতে চাওয়া মেয়েগুলো কে?”
-“হুম,এখন উঠে তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নেন!”
ফারাজ উঠে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে লাজের দিকে এগোতে লাগে, লাজ সোফা থেকে একটা বালিশ নিয়ে ওর দিকে ছুড়ে দিয়ে দৌড় দেয়৷ লাজের এমন কান্ড দেখে ফারাজ হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেল।
লাজও মুচকি মুচকি হাসি দিয়ে কিচেনের দিকে যেতে নিবে তার আগেই কলিং বেলের শব্দ হয়। দরজা খুলতেই দেখলো একজন লোক হাতে একটা পার্সেল নিয়ে দাড়িয়ে আছে।লাজ কে দেখে জিজ্ঞেস করলো….
-“ফারিদ তাকদিয়ার আছেন বাড়িতে?”
-“নাহ,ওনি তো মনে হয় এখন মর্নিং ওয়াকে গিয়েছেন।”
-“ওহ, ওনার নামে একটা পার্সেল ছিলো। আপনি কি হোন ওনার?”
-“ওনার ছেলের বউ।”
-“তাহলে আপনি ই ওনার পার্সেল টা রেখে দিন,ওনি আসলে দিয়ে দিবেন। নিন এখানে সাইন করে দিন!”
লাজ সাইন করে দিলে লোকটি পার্সেলটা দিয়ে চলে যাচ্ছিল তখনই লাজ দেখতে পেল পার্সেলে প্রেরকের নাম নেই।সে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে…
-“এক্সকিউজ মি! এখানে তো কে পাঠিয়েছে তা লেখা নেই!”
-” যিনি পাঠিয়েছেন ওনি প্রতিবার এভাবেই পাঠায়, ফারিদ তাকদিয়ার জানে কে পাঠায় তাই নাম লেখার প্রয়োজন হয় না!”
লাজ ওনার কথা শুনে কিছুটা অদ্ভুত মনে করলো।লোকটি চলে গেলে। সে পার্সেল টা খুলে, একটা চিঠি আছে। চিঠিতে লেখা,
ফারিদ তাকদিয়ার, খুব তো সুখে শান্তি তে আছেন। ভুলে যাচ্ছেন যে আপনার কেউ একজন আছে যে কিনা আপনার সমস্ত সুখ শান্তি একদম ধূলোই মিশে দিতে পারবে। পাঁচ মাস হয়ে গেল এর মধ্যে একবার খোঁজ খবর নাও নি, দেখা করার কথা বললাম ই না। তাই বলছি যত তারাতাড়ি সম্ভব এসে দেখা করে যাও নয়তো আমি চলে আসবো তাকদিয়ার ম্যানসনে। আর আমি আসলে ঠিক কি পরিমান ঝড় উঠবে তা তুমি খুব ভালো করেই জানো।
ইতি…..”
নিচের লাইন টুকু পড়ার আগেই কেউ একজন টান মেরে চিঠিটা নিয়ে যায়। সে আর কেউ না ফারিদ তাকদিয়ার, রাগান্বিত ভাবে তাকিয়ে আছে লাজের দিকে। ধমকের সুরে বলল,” তোমার সাহস কি করে হয় আমার পার্সেল খুলে দেখার,!”
-“আমি সাইন করে রেখেছি তো আমার দেখার রাইট তো হবেই!”
-“সাইন করলেই কোনো রাইট হয়ে যায় না, নেক্সট টাইম থেকে আমার কোনো জিনিসে তুমি হাত দিবে না!”
একথা বলে চলে যেতে নিলেন ফারিদ তাকদিয়ার কিন্তু তার আগেই লাজ ওনার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে…
-“কে পাঠিয়েছে পার্সেল টা?”
ফারিদ তাকদিয়ার থমকে দাঁড়ায়, কি জবাব দিবে মাথায় আসছে না,তাহলে কি লাজ চিঠি টা পরেছে, যদি পরে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। এসব মনে মনে ভাবতে লাগলো ফারিদ তাকদিয়ার। লাজ কোনো উত্তর না পেয়ে ওনার সামনে গিয়ে বলল….
-“কি হলো?চুপ করে আছেন কেন?”
-“আমি তোমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়!”
ফারিদ তাকদিয়ার এতটুকু বলে চিঠিটা নিয়ে উপরে চলে গেল।লাজ মনে মনে বলতে লাগল….
-“কে পাঠালো এই পার্সেল? আর কার সাথেই বা এতট গভীর সম্পর্ক? ওনার পুরনো কোনো শত্রু নাকি বন্ধু?যেই হোক না কেন,আমাকে জানতেই হবে কে সে? আর কি তার পরিচয়?কি এমন জানে যার জন্য এভাবে ব্লাকমেইল করছে?”
পিছন থেকে মাহেরা তাকদিয়ার বলল,” কি হলো লাজ? তুমি কি এত ভাবছো?”
-“আব, না মা কিছু না। আপনি রুমে যান আমি নাস্তা বানিয়ে দিয়ে আসবো।”
-” নাস্তা বানানো হয়ে গেছে,তুমি ফারাজ কে নিয়ে আসো আমি খাবার রেডী করে রাখছি!”
-“কিন্তু মা,কে বানালো খাবার? আপনি নয়তো?”
-“কেন? আমি বানালে কোনো সমস্যা নাকি? নাকি খাবারে কিছু মিশাবো ভাবছো?”
-“নাহ মা, আচ্ছা আপনি যান আমি ফারাজকে নিয়ে আসছি।”
লাজ ফারাজ কে ডাকতে নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে ফারিদ তাকদিয়ারের রুম থেকে আওয়াজ আসে। গলা শুনেই বোঝা যাচ্ছে কারো সাথে রেগে কথা বলছে কিন্তু কাউকে সে ঐ রুমে যেতে না দেখে লাজের একটু সন্দেহ হলো তাই সে রুমের সামনে গেল। ফারিদ তাকদিয়ার ফোনে কথা বলছে….
-“তোমাকে আমি না করেছিলাম না এভাবে হুটহাট কোনো পার্সেল না পাঠাতে!… আমি কল করি না বলে তুমি এমন করবে? তুমি জানো আজকে লাজের সামনে পরে গেছে চিঠি টা। যদি ও পড়তো তাহলে কি হতো একবার ভেবে দেখেছো।….আচ্ছা বাবা আচ্ছা, আমি তোমার সাথে খুব শীগ্রই দেখা করবো।…আর হ্যা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে করে তোমাকে,আমাকে আর ফারিন কে সমস্যায় পরতে হয়।….নিজেকে খুব বেশি চালাক মনে করলে ফল কেমন হয় তা তুমি ভালোই জানো।রাখি বাই!”
ফারিদ তাকদিয়ার কথা বলা শেষ করে ফোন কেটে দিলো। পিছন ঘুরার আগেই লাজ ঐখান থেকে সরে যায়। নিজের রুমে এসে ভাবতে লাগলো….
-“এটা কোন নতুন রহস্য আমার সামনে আসছে। আর যায় হোক এটা স্পষ্ট ঐ ব্যাক্তিটা ওনার কোনো শত্রু না আবার মিত্র ওনা। কারন শত্রু হলে ফারিদ তাকদিয়ারের কথা মানতো না, মিত্র হলে এভাবে ব্লাকমেইলও করতো না।আমাকে এই বিষয়টা মাথায় রাখতেই হবে,ফারিদ তাকদিয়ারকে চোখে রাখতে হবে।”
লাজ কথাগুলো চুপচাপ দাড়িয়ে ভাবছিলো তখনই ফারাজ একটানে দেয়ালে মিশিয়ে ফেলল। মুখটা লাজের মুখের সামনে নিয়ে বলল….
-“কি এত ভাবছো মিস চাশনি, ওহ সরি মিসেস চাশনি?”
-“ফারাজ, আমাকে ছাড়ো,আমার তোমাকে কিছু বলার আছে!”
-“হুম বলো শুনতেছি তো!”
ফারাজ লাজকে ঘুড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে পেটে হাত দিয়ে কথাটা বলল।লাজ একটু কেঁপে উঠলো, ফারাজ লাজের পেটে হাত দিয়ে ঘষতে লাগলো আর ঘাড়ে একটা কিস করে দিলো। লাজ চোখ বন্ধ করে অনুভব করতে নিলো। লাজকে সামনে ঘুড়িয়ে ঠোঁটের দিকে এগোতে নিলে লাজ বলে….
-“ফারাজ!প্লিজ আমার কথাটা শুনো!”
লাজের কথাতে ফারাজের ধ্যান ভেঙে গেল। মুখটা মলিন হয়ে গেল।লাজ বোঝতে পারলো ফারাজ নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না,মনের আশাটা নষ্ট হয়ে গেল। লাজ ফারাজের সামনে গিয়ে বলল…
-“ফারাজ,আমি জানি তোমার এখন খুব কষ্ট লাগছে কিন্তু আমার কাছে কোনো উপায় নেই। আমাকে আগে তোমার বাবার কাজের ফল দিতে হবে তারপর এসব সংসার নিয়ে ভাববো।”
-“হুম,বলো কি বলতে চায়ছিলে?”
লাজ একটা শ্বাস ফেলে পার্সেলের ঘটনাগুলো আর ফারিদ তাকদিয়ারের ফোনে বলা কথাগুলো বলল। সবটা শুনে ফারাজ বলল,”তারমানে এখন থেকে বাবার দিকে নজর রাখতে হবে।”
-“হুম,কিন্তু তার আগে আমােরকে আমার বাবা মা’র খুনীর কাছে যেতে হবে। ও যদি একবার হাত ছাড়া হয়ে যায় তাহলে অনেক মুশকিল হয়ে যাবে।”
-“তাহলে আজকে আর ঐ মেয়েদের খুঁজে যাবে না!”
-“যাবো,কিন্তু আগে খুনীর কাছে যেতে হবে। আচ্ছা চলো মা ডাকছে, খাবার খেতে।”
-“হুম, এই খাবারইতো খেতে হবে এখন ঐ খাবার তো আর পাবো না।”
ফারাজ শয়তানি করে এই কথাটা বলে একটা শ্বাস ফেলল। লাজ চুপিচুপি ফারাজের সামনে গিয়ে তার গালে হুট করে কিস করে বসলো। ফারাজ অবাক হয়ে তাকালে লাজ বলে…..
-“এখন এতটুকুই, সময় হলে সব পেয়ে যাবেন!”
-“তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমি আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকায়নি।”
-“আচ্ছা, আগে যা হয়েছে তা বাদ দাও, এখন থেকে আর কোনো মেয়েকে চোখেও তুলে তাকাবে না।”
-“আচ্ছা!”
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে হাতে হাত ধরে খেতে গেল।

#চলবে!