গাঙচিল পর্ব-০৮

0
2041

#গল্পের_নাম: ||গাঙচিল ||
#লেখিকা: অজান্তা অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____০৮ (বোনাস পার্ট)

১৩.

—“চাচাজী!কিছু দরকারী কথা বলবো।আমি অজান্তাকে বিয়ে করতে চাই!”

রোদ্দুরের কথায় জলিল কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না।যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই রইলো।রোদ্দুরের মনে ক্ষীণ সন্দেহ হলো চাচা শুনতে পেয়েছে কি না।রোদ্দুর আরেক বার বলল,

—“চাচাজী আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।”

জলিল এবারও কোনো উত্তর দিল না।তিনি কাছেই চেয়ারে বসে আছেন।মাথা অত্যধিক নিচু করে আছে।অন্ধকারে চোখও দেখা যাচ্ছে না।ঘুমিয়ে পড়েছে কি না কে জানে!

রোদ্দুর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অহির রুমের দিকে তাকালো। সে আর জলিল চাচা উঠোনে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে।এদিকটা অন্ধকার।ভেতর ঘরে অহির মায়ের রুম অন্ধকার।আলো জ্বলছে অহি আর শফিকের রুমে।শফিকের পরীক্ষার রুটিন দিয়েছে।সে দিনরাত এক করে পড়ছে।সেজন্য রোদ্দুর আর তাকে ডিস্টার্ব করছে না।সে বসে আছে জলিল চাচার সাথে।

রোদ্দুর কিছুক্ষণ অহির রুমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।এই মেয়ে সব বোঝার পরেও তাকে ইগনোর কেন করছে?এশার আযানের সময় জুতা বিক্রি করে সে এ বাড়িতে এসেছে।প্রেম-প্রকৃতি তার অনুকূলে ছিল না।সেজন্য দু জোড়া জুতো বিক্রি করতে পারেনি।তবে সে কায়দা করে অহিকে বিপদে ফেলার জন্য অবিক্রিকৃত দুই জোড়া জুতো লুকিয়ে ফেলেছে।জলিল চাচাও জানে না।অবশ্য সে সন্দেহ করেছিল।অবাক হয়ে বলেছিল,

—“বাবা জীবন, মাত্র না এখানে দুই জোড়া জুতো দেখলাম?”

রোদ্দুর বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলেছিল,

—“চাচাজী!মাত্র এক ভদ্রলোক গেল না!উনি কিনে নিয়ে গেল তো।ওনার বাসার কাজের বুয়ার জন্য একটা আর ওয়াশরুমের জন্য একটা!”

জলিল চাচা মাথা চুলকে ‘ওহ আচ্ছা!’ বলেছিল।ব্যস!রোদ্দুরের খুশি আর ধরে কে!সে তক্ষুনি চট, কাগজ ভাঁজ করে বাড়ি ফিরেছে।ফেরার আগে লক্ষী বাজারের সেরা মাছটা কিনেছে।সাথে কাঁচা বাজার!

এ বাড়িতে আসার পর থেকে অহি তাকে ইগনোর করছে।তার থেকে দূরে দূরে রয়েছে।সে খাওয়ার সময়ও ছিল না।দু বার ইচ্ছে কৃত ভাবে ওয়াশরুমে গেছে। তাও কথা বলার সুযোগ দেয়নি।টেবিলে এক টুকরো কাগজে থ্রেড দিয়ে কিছু লিখেছে সেটারও ফল পায়নি।

নাহ!এভাবে বসে থাকলে চলবে না।রোদ্দুর আস্তে করে জলিলের কাঁধে হাত রেখে বলল,

—“চাচাজি!ঘুমিয়ে পড়েছেন?উঠুন!রুমে গিয়ে ঘুমান।”

জলিল চোখ তুলে তাকালো।সংবিৎ ফিরে পেতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেল!যেন রোদ্দুরের সামনে ঘুমিয়ে পড়ে চরম অপরাধ করেছে।রোদ্দুর বুঝতে পেরে বলল,

—“আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে।আপনি বরং ঘুমিয়ে পড়ুন।রুমে যান!”

—“আজ অনেকদিন পর প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।বুঝতে পারছি না কেন!”

—“আপনি উঠুন।রুমে যান।”

জলিল উঠলো।রোদ্দুর তাকে আরো একটু নিশ্চিন্ত করতে আমতা আমতা করে বলল,

—“চাচাজি!আমি আপনার মেয়ে অজান্তা অহিকে বিয়ে করতে চাই।আপনাদের সম্মতি নিয়ে।কাল সকালে আমরা কথা বলবো।আপনি এখন ঘুমান।”

জলিলের ঘুম যেন হুট করে কর্পূরের মতো উবে গেল।তিনি ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লেন।তার চোখে মুখে রাজ্যের বিস্ময়।আলো থাকলে হয়তো রোদ্দুর দেখতে পেত।তার যেন বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না।সত্যিই তার সামনে বসে থাকা বাচ্চা মনের মানুষটি তার মেয়েকে বিয়ে করতে চাচ্ছে?তার মেয়ের চলার পথের সঙ্গী হবে?

জলিল বিস্ময় নিয়ে বলল,

—“তুমি কি বলছো গো বাবা?আমি কি ভুল কিছু শুনলাম?তুমি কি সত্যি অহি মাকে বিয়ে করতে চাও বাবাজীবন?”

—“জ্বি চাচাজি!এত অবাক হওয়ার কিছু নেই।আপনার মেয়েকে ছাড়া আমার জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।আমার মায়ের ব্যাপারটা তো জানেনই!আপনি রাজি থাকলে পরশু দিন মাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করবো।সেদিন রাতেই বিয়ে হবে।”

—“আমি রাজি!আমি রাজি।আমি সুখবরটা রেখাকে দিয়ে আসি।বলে আসি যে অহির জন্য রাজপুত্র এসেছে।রাজপুত্র স্বয়ং এসে আমার মেয়েকে চাইছে!”

রোদ্দুর খুশি হলো।সে যদিও ধারণা করেছিল সবাই রাজি হবে,তবুও জানানোর পর আরো ভালো লাগছে।এখন একটা মানুষকে নিয়ে চিন্তা!যে সবসময় দেড় লাইন বেশি বোঝে।সে হলো অহি।অজান্তা অহি!

জলিল চেয়ার ছেড়ে উঠে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো।রোদ্দুরের দিকে চেয়ে বলল,

—“বুঝলে বাবাজীবন!অহির যখন জন্মের সময় অনেক সংকটাপন্ন সময়ে ছিলাম।এইট পাশের সার্টিফিকেট আর অহির মাকে নিয়ে গ্রাম থেকে সদ্য ঢাকাতে পা রেখেছি।অহি তখন ওর মায়ের গর্ভে।রেখা তখন প্রচুর বমি করতো।

কিচ্ছু খেতে পারতো না।হাতে পায়ে পানি ধরে ফুলে কলাগাছ হয়ে গেল।মুখে ঘা!উঠতে পারে না!বসতে পারে না।কি একটা অবস্থা।সেই সময় আবার পড়েছি অর্থ সংকটে।রেখাকে ভালো খাবার খাওয়াতে পারি না,ডাক্তার দেখাতে পারি না।চরম দুঃসময় যাকে বলে।রেখার তখন সব রাগ গিয়ে পড়লো গর্ভের সন্তানের উপর।যে পৃথিবীতে আসছে সে কুফা!

অহির জন্মের দিন বড় হসপিটালে নিয়ে যাই রেখাকে।ঢাকা মেডিকেলের স্বনামধন্য চিকিৎসক রেখার ডেলিভারি করে।আশ্চর্যজনক ভাবে রেখাও সুস্থ থাকে।দূর্বলতার জন্য রেখাকে কেবিনে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়।অহিকে তখন আলাদা কেবিনে স্থানান্তর করেছে।নার্সের পরামর্শে কেবিনে ঢুকতেই মধ্য বয়স্ক সুদর্শন ডাক্তার আমার কোলে ফুলের মতো একটা শিশু দিল।এতটুকুন বিড়ালের বাচ্চার মতো।কি নরম হাত পা!যেন একটু চেপে ধরলেই ফুলের মতো নেতিয়ে পড়বে।

কর্তব্যরত ডাক্তার আমায় হাসিমুখে বললেন,

“আপনাদের ঘরে সৃষ্টিকর্তার রহমত নাযিল হয়েছে।এক টুকরো জান্নাত দান করেছেন আল্লাহ।চাঁদের মতো এই মেয়ের কি নাম ঠিক করেছেন?”

আবেগে আমার চোখে পানি এসে গেল।জড়ানো কন্ঠে বললাম,

“কোনো নাম ঠিক করিনি স্যার।”

ডাক্তার প্রচন্ড অবাক হলেন।সন্তান পেটে আসলে বাবা-মার আগ্রহের সীমা থাকে না।বাচ্চার কাপড়চোপড় কেনা,নাম ঠিক করা,ছেলে বাচ্চা হবে না মেয়ে বাচ্চা হবে ইত্যাদি নিয়ে হাজারো খুনশুটি।এসব আমাদের মধ্যে ছিল না।ডাক্তার হয়তো মনের কথা পড়তে পেরেছিলেন।তিনি আমার কোল থেকে বাচ্চাকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছু একটা পড়লেন।মুখের উপর ফু দিয়ে বললেন,

“আজ থেকে এই চাঁদমুখীর নাম অজান্তা অহি।অজান্তা অহি,ওয়েলকাম!ওয়েলকাম টু দ্য বিউটিফুল আর্থ!ওয়েলকাম লিটল এঞ্জেল!”

তারপর কত ঝড়,তুফান গেল।মেয়েটার আশ্চর্য রকমের সহ্যশক্তি।ব্যথায় কুঁকড়ে গেলেও যেন উঁহু শব্দ করবে না।ছোট্ট বেলার একটা ঘটনা বলি।স্কুলের ছাত্র ছাত্রী দৌঁড়ঝাপের সময় ধাক্কা লেগে সে বেঞ্চের উপর পড়ে গেছিল।চোখ বাঁচিয়ে কপালের ডানপাশে টেবিলের কোণা লেগে রক্তে শরীর ভেসে গেছে।কিন্তু মেয়ে আমার উঁহু শব্দ করেনি।আমার তখন থেকেই ভয় শুরু হয় ওকে নিয়ে।নিজের কষ্ট গুলো প্রকাশ করতে পারে না ও।ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরে।তুমি ওকে সামলাতে পারবে তো বাবাজীবন?আগলে রাখবে তো গো বাবা?”

রোদ্দুরের বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো।তার ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে।পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে সব।সে কি অজান্তা অহি নামক ফুলটার যোগ্য?যোগ্য না হলেও তাকে যোগ্য হতে হবে যে।এই ফুলকে ছাড়া তো সে বাঁচবে না।তাকে বাঁচতে হবে যে!

সে জলিলের হাত চেপে ধরলো।আশ্যস্তের সুরে বলল,

—“আপনি একদম চিন্তা করবেন না চাচাজি।আপনার কলিজার টুকরোকে আমি সবটা দিয়ে আগলে রাখবো।ওকে আর কোনো অশুভ স্পর্শ করতে দিবো না।”

জলিলের চোখ জলে ভরে গেছে।নিজেকে তার আজ বড় বড় মনে হচ্ছে।সত্যি সে বয়স্ক হয়ে গেছে।তার মেয়ের বিয়ে হবে,সে নানু -দাদু হবে!তারপর উপরের টিকেট ধরে চলে যাবে।কত ক্ষণস্থায়ী জীবন!প্রতিটি সেকেন্ড জীবন যুদ্ধ করেও মানুষ বাঁচার আনন্দ উপভোগ করে।সীমাহীন যন্ত্রণা পেয়েও ছাড়তে চায় না এই মায়াময় পৃথিবী।এখানেই হয়তো সৃষ্টির সৌন্দর্য লুকিয়ে!

তিনি রোদ্দুরের মাথায় হাত বুলিয়ে মনে মনে বললেন,

—“আল্লাহ এদের তুমি সুখী করো।শান্তিতে রাখো!”

তারপর চট করে রুমের দিকে পা বাড়ালেন।পরম নিশ্চিন্তে সে ঘুমাবে আজ!

১৪.

রান্নাঘরে খুটখাট আওয়াজ হচ্ছে।রান্নাঘরটা অহির ঘরের সাথে প্রায়।সেজন্য ইঁদুর নড়ার শব্দ টুকুও কানে যায় তার।রান্নাঘরে একটু না!বেশ শব্দ হচ্ছে।তাও আবার অনেক্ক্ষণ যাবত!

অহির ঘুম আসছে না কিছুতেই।দুই ঘন্টা যাবত সে বিছানার এপাশ ওপাশ করছিল।চোখ একটু ভারী না হতেই রান্নাঘরের শব্দ!সে বিরক্ত হয়ে উঠে পড়লো।

অন্ধকারে কিছুটা সময় সে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো।জানালার ফোঁকর দিয়ে চোখে পড়া এক টুকরো আকাশ অন্য রকম লাগছে তার কাছে।মনে হচ্ছে আকাশ একদম নিচে নেমে এসেছে।জানালা দিয়ে হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাবে।সে উঠে গিয়ে হাত বাড়ালো না।অপলক চেয়ে রইলো শুধু!

রান্নাঘরের আওয়াজ বেড়ে চলেছে।অহির একবার মনে হলো তার দরজার সামনে এসে কেউ ইচ্ছে কৃত ভাবে বাজাচ্ছে।সে বালিশের তলা থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে চাপ দিল।অনেকগুলো মিসড কল!সে পাত্তা দিল না।ঘড়িতে রাত দেড়টার কাছাকাছি।সে কি!এত রাত হয়ে গেছে?অথচ আজ ঘুমেরা ধরা দিচ্ছে না?

সে আস্তে করে দরজা খুলে বের হলো।রান্নাঘরে আলো জ্বলছে।রোদ্দুর এ বাড়িতে আছে বলে রান্নাঘরের আলো সারাত জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে।যাতে বারান্দার দিকটা অন্ধকার না হয়।যাতে অন্ধকারে মানুষটার কষ্ট না হয়।

মা-বার রুমের দরজ বন্ধ।তারা এতক্ষণে গভীর ঘুমে।শফিকের রুমে ক্ষীণ আলো।ছোট লাইট জ্বালিয়ে শফিক পড়ছে হয়তো।

অহি রান্নাঘরের দরজায় উঁকি দিতে চমকে উঠলো।রোদ্দুর স্টিলের কাঁটা চামচ আর ম্যালামাইনের খালি মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছে।মগের উল্টো পাশে চামচ দিয়ে ঢোলের মতো ক্রমাগত শব্দ করে যাচ্ছে।তাকে বিধ্বস্ত লাগছে।চুলগুলো এলোমেলো।টিশার্টের কলার এবড়োথেবড়ো।টিশার্ট কোমড়ের কাছে অনেখানি উঠে আছে।ফর্সা পেটের কিছুটা অংশ চোখে পড়ছে।অহি চোখ সরিয়ে নিল।

অহি কপাল কুঁচকে গলার স্বর নামিয়ে বলল,

—“আপনি মানুষ হবেন না?মাঝরাতে কি ধরনের পাগলামো শুরু করেছেন?দয়া করে কাল ভোরে চলে যাবেন।আর যেন আমাদের বাড়িতে না দেখি।দেখলে কিন্তু ভা………..”

অহির কথা সম্পূর্ণ হতে দিল না।রোদ্দুর এগিয়ে এসে অহিকে গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো।কিছুটা পা বাঁকিয়ে অহির কাঁধে নিজের মুখ রেখে চোখ বন্ধ করলো।এলোমেলো কন্ঠে বলল,

—“আধঘন্টা হলো শব্দ করছি।এতক্ষণ লাগে বের হতে?কতগুলো মেসেজ করেছি,ফোন করেছি অজান্তা!আমি সত্যি সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছি বোধ হয়!আমাকে বাঁচাও!”

রোদ্দুরের কন্ঠে গভীর আকুতি।অহির বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে গেল।রোদ্দুরের হাত শক্ত হয়ে আসছে।তাকে যেন আজ বুকের খাঁচায় ঢুকিয়ে ছাড়বে।অহির পিঠের কাছে কাঁটা চামচের মুখ বিঁধে যাচ্ছে।মগের কোণা গায়ে চেপে যাচ্ছে যেন।এই ছেলে এমন গাধা কেন?হাতের জিনিস গুলো কি ছুঁড়ে ফেলে জড়িয়ে ধরা গেল না?

সে নিজেকে শক্ত করে রোদ্দুরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলল,

—“আমার সাথে পাগলামি করবেন না।আমি কারো পাগলামির অংশ হতে চাই না।চুপচাপ গিয়ে শফিকের রুমে ঘুমিয়ে পড়ুন।এতরাতে শব্দ করছেন যদি মা বা বাবা জেগে যেত?”

রোদ্দুর সুবোধ বালকের মতো বলল,

—“বলতাম চা বানানোর জন্য উঠেছি।আর যদি শব্দ করা দেখে ফেলতো তাহলে বলতাম, ‘আমার দাদু মরার আগে বলেছে চা বানানোর আগে গভীর মনোযোগ দিয়ে পাঁচ মিনিট টুংটাং আওয়াজ করবি।তাহলে চায়ের স্বাদ দূর্দান্ত হবে।দাদুর ধারণা এই মধুর শব্দে জ্বীন জাতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।জ্বীন জাতির নজর পড়লে এমনিতে সব সুস্বাদু হয়ে যায়।’অজান্তা বলো তো ব্যাখ্যা কেমন হয়েছে?তোমার ভাই বলেছে, আমি নাকি গুছিয়ে মিথ্যে বলতে পারি না।সেজন্য চেষ্টা করছি গুছিয়ে মিথ্যে বলার।”

অহি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই রোদ্দুর জিভ কাটল।আমতা আমতা করে বলল,

—“ভেরি স্যরি অজান্তা!একবার তুমি আমার হয়ে যাও!কসম!আমি আর মিথ্যা বলবো না।বিশ্বাস হচ্ছে না তো?এই মগ ছুঁয়ে বলছি!তুমি আমার হলেই আর মিথ্যা বলবো না।”

—“মিথ্যের ঝুড়ি খালি হলে এবার ঘুমাতে যান।”

—“বারে!এত কষ্ট করে জ্বীনের ঘুম ভাঙালাম।জ্বীন পুরষ্কার স্বরূপ একটু অমৃত খাওয়াবে না?”

অহি চরম বিরক্ত হলো।মনে মনে রোদ্দুর হিমকে জঘন্য একটা গালি দিল।তার পিঠ জ্বলছে।কাঁটা চামচের ঘা লেগেছে।চামড়া ছিঁড়ে টিড়ে গেছে বোধ হয়।এই ছেলে তার কাছে আসলেই কোনো না কোনোভাবে কষ্ট দেয়।সে নরম গলায় বললো,

—“আপনি সারারাত এখানে থাকুন বা জাহান্নাম করুন।আমার কিচ্ছুটি আসে যায় না।আমি এখন রুমে গিয়ে ঘুমাব।খবরদার!ঢোল পিটিয়ে জ্বীন ডাকুন বা পাশের বাসার রিনা ভাবিকে ডাকুন আই ডোন্ট কেয়ার!শুধু আমার কানে যেন না যায়।”

অহি সরে আসতে নিতে রোদ্দুর বাম হাত চেপে ধরলো।অহি তার ধরে রাখা হাতটার দিকে তাকালো।তার হাগ ধরে রাখা রোদ্দুরের ফর্সা লোমযুক্ত হাতটা ঠকঠক করে কাঁপছে।রোদ্দুর যতবার তার কাছে আসে ততবার সে এভাবে কাঁপে।তারপরো কাছে আসা বাদ দেয় না।

অহি গম্ভীর হয়ে বলল,

—“আপনার কি কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে?কাঁপছেন কেন ঠকঠক করে?”

রোদ্দুরের চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।সে অহির হাত ছাড়লো না।তবে নিজের বাম হাতে ধরে রাখা মগ আর কাঁটাচামচ নিচু হয়ে ফ্লোরে নামিয়ে রাখলো।

অহি ভেবেছিল হাত মুক্ত করে হয়তো বাম হাতেও তার হাত চেপে ধরবে।কিন্তু অহিকে অবাক করে দিয়ে রোদ্দুর বাম হাতে নিজের ঠকঠক করে কাঁপতে থাকা হাতের কবজি চেপে ধরলো শক্ত করে।কাঁপুনি থামানোর জন্য।তবুও তার হাতের কাঁপুনি কমছে না।এখন অহির ধরে রাখা হাতসহ দুই হাতই ক্রমাগত কাঁপছে।

অহির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।রোদ্দুরের রক্তহীন ফ্যাকাশে মুখ দেখে তার নিষিদ্ধ একটা কাজ করতে মন চাইলো।বহু বছর পর সে নিজের মনের কথা শুনলো।উঁচু হয়ে রোদ্দুরের বাম গালে চুমু খেল

(চলবে)

রিচেক করার সময় পাইনি।ছোট করে হয়েছে বেশি!