গোধুলীর শেষ প্রহরে পর্ব-১৮

0
180

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ১৮
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

তারপরের দিন সাহিরাকে দেখে প্রিতি অনেক টা অবাক হয়ে গেলেন। কারণ তার পিছনে আরেকটা ছেলে আর সাথে সারাফ। এমন সময় সাহিরার না বলে আসার কথা না। হঠাৎ এসময় সাহিরা? কিন্তু কি কারণ তা উদঘাটন করতে সক্ষম হয়না প্রিতি। সাহিরা ভেতরে এসে রয়ে সয়ে আমতা আমতা করে। এরপর সাহস করে বলেই ফেলে শৈবাল আর কুহুর বিয়ের কথা। এই কথাটি বজ্রপাতের ন্যায় আঘাত হানলো উপস্থিত সবার মস্তিষ্কে। কুহু, মুহু, শিউলী আপা, সালমান হোসেন, প্রিতি প্রত্যেকে অপ্রত্যাশিত কিছু শুনে ‘থ’ মেরে বসে আছে। কুহু শৈবাল কে দেখেই ভীষণ ভাবে আঁতকে উঠলো। বিরবির করে বলে,

‘শৈবাল সাহিরা খালামনির ছেলে?কিন্তু খালামনি এসব কি বলছে?’

‘এটা কোন বিবেচনায়, কোন বিবেক বুদ্ধি নিয়ে প্রস্তাব টা রাখলি তুই? যেখানে আমরা মুহু আর সারাফের বিয়ে টাই অনেকটা ভেবে ঠিক করলাম। আর এখন এসব কি আবোল তাবোল বলছিস? মাথা ঠিক আছে তোর?’

প্রিতির কথায় সাহিরা মাথা নত করে ফেলে। ছেলেটার কথা রাখতে হাজার দ্বিধা নন্দ নিয়েই কথাটা উঠালো। মুহু তো অবাক হয়ে শুধুই তাকিয়ে আছে। বুবুর থেকে সে জেনেছে, বাবা মা তার আর সারাফের বিয়েটা মেনে নিয়েছে৷ আর একই দিনে দুই বোনের বিয়ে। সে এইকথা শুনে সেকি খুশি হয়! এখন খালা মনির কথা শুনে যেনো সপ্তম আকাশ থেকে পরছে। সে জানতো শৈবাল সারাফের ভাই। কিন্তু শৈবাল তো সারাফের ছোট। সে হিসেবে বুবুর ও ছোট শৈবাল। তবে এই সম্পর্কের কথা কিভাবে বলছে খালামনি! এটা তো সম্ভব না একেবারেই। তাছাড়া বুবুর অলরেডি বিয়ের কথা পাকা হয়ে গেছে। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক। সুপ্রিয় ভাইয়া আর শাম্মী আন্টিকে কি জবাব দেবেন বাবা মা। সে ছোট। বড় দের মাঝে কথা বলাটা ঠিক হবে না। তাই শুধুই নিরব দর্শক হয়ে রইলো সে। এখন দেখার পালা কি হয় এরপর।

সালমান হোসেন কপট রেগে গেলেন। রাগে তার গালের মাংস পেশি কাঁপছে। তিনি ক্রুর গলায় বলেন,

‘দেখো সাহিরা? সারাফ আর মুহুকে মেনে নিয়েছি কিন্তু শৈবাল আর কুহুর কথা তুমি কোন আক্কেলে বলছো? শুনো আমার বড় মেয়ের বিয়ে অলরেডি ঠিক হয়ে গেছে। একই দিনে দুই মেয়ের বিয়ে সবাই সে কথা জেনে গেছে। এখন চাইলেই কি আর সে বিয়ে আমরা ভেঙে দিতে পারি? যাদের কথা দিয়েছি তাদের সাথে কথার খেলাপ করবো কিভাবে?’

‘দুলাভাই আমি সব বুঝতে পারছি কিন্তু শৈবাল আমাদের কুহুকে ভীষণ পছন্দ করে। ছেলেটা এই পর্যন্ত আমার কাছে কখনোই কিছু চাইনি। তাই আজ যখন কিছু চেয়েছে আমি না করতে পারিনি। নির্লজ্জের মতো তোমাদের কাছে এই প্রস্তাব টা রাখতেই হলো।’

‘চুপ কর সাহিরা। এভাবে চললে সারাফ আর মুহুর বিয়ে টা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে!’

‘এটা তুমি কি বলছো আপা। সারাফ আর মুহুর বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে মানে? ওঁদের বিয়ে তো আগে থেকে ঠিক হয়েই আছে। দেখো তোমরা চাইলেই কুহু আর মুহুকে আমার দুই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে পারি। দুই বোন দুই জা হবে। একই বাড়ির বউ হবে। এটাতে দোষের তো কিছু নেই।’

কুহুর আর সহ্য হলো না। সে ক্ষোভে ফেটে পরছে ভেতর থেকে। শৈবালের মতো একটা নোংরা ছেলেকে সে বিয়ে করবে? কখনোই না। সে তানহার সঙ্গে যা করেছে এটার পর সে কিছুতেই শৈবালের মতো ছেলে কে নিয়ে ভাবতেও পারবে না। হ্যাঁ তানহা তাকে সব টা বলে দিয়েছে। এরপর থেকে শৈবাল কে দেখলেই তার সারা শরীর রাগে, ঘেন্নায় রি-রি করে উঠে। সে অত্যন্ত ক্ষোভ আর তীব্র ক্রোধে বলে,

‘কিন্তু খালামনি শৈবাল কে আমি কোনো কালেই পছন্দ করিনি। সে আমার ভার্সিটির স্টুডেন্ট। আমার জুনিয়র শৈবাল, যেখানে শৈবাল আমার মিনিমাম এক-দুই বছরের ছোট সেখানে তাকে আমি বিয়ে করবো? লোকজন কি বলবে, কি চোখে দেখবে আমাদের কে এই সমাজ। নিশ্চয়ই এটা ভালো দেখাবে না শিক্ষিকা আর স্টুডেন্টের বিয়ে!’

শৈবাল শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো এতক্ষণ। সে মৌনতা কাটিয়ে বলে উঠলো,
‘কিন্তু কুহুলতা মেম আমি তো এসব ভাবি না। মানুষ কি বললো না বললো এসবের তোয়াক্কা কখনোই করি না আমি।সেটা তো তোমাকে আগেই বলেছি । তুমি শুধু একবার বলো তুমি রাজি ব্যস আর কিছুই চাই না।’

‘খালামনি তোমার গুনধর ছেলেকে বলে দাও সে এসবের তোয়াক্কা না করলেও আমি করি। তাই তাকে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। আমি আর কতবার বলবো যে আমি তাকে পছন্দ করি না। অত্যন্ত অপছন্দের একজন মানুষ সে।

সারাফ গলার স্বরে বিষ্ময় নিয়ে কুহুকে জিজ্ঞেস করে, ‘ আমার ভাইকে এতোটা অপছন্দের কারণ কি কুহুলতা? আপনি এমন ভাবে বলছেন যেনো মনে হচ্ছে ঘৃণা করেন কোনো বিষাক্ত কারণে। কি করেছে আমার ভাই?’

‘সেটা না হয় আপনি শৈবাল কেই জিজ্ঞেস করবেন। আমি তাকে পছন্দ কেন করি না।এটা মনে এবং মাথায় ঢুকিয়ে দিন আপনার ভাইকে তাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে ইম্পসিবল! আর ও এটা যতটা তারাতাড়ি মানবে এতে ওরই ভালো হবে। এখানে এসেছেন, একটা আত্মীয়ের সম্পর্ক আছে। আরেকটা হতে যাচ্ছে, আসবেন, থাকবেন কোনো বাধা নেই। আমরা যথাক্রমে আপ্যায়ন করবো আপনাদের। এতে কোনো ত্রুটি থাকবে না। কিন্তু এই বিষয় টা নিয়ে আর না এগোলে খুশি হবো আমরা প্রত্যেকে।’

‘হ্যাঁ কুহু ঠিক বলেছে সাহিরা। তুমি এই বিষয় নিয়ে যদি কথা বাড়াও তবে আমরা অন্য সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো। সারাফ আর মুহুর বিয়েটাও হওয়া সম্ভব হবে না দেওয়া। মুহু সারাফ ওঁদের বিষয় টা ঠিক আছে। কিন্তু কুহু আর শৈবাল এটা কি আদোও সম্ভব তুমিই ভেবে দেখো?’

সারাফ আর মুহু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহুর্তেই মুহুর চোখ টলটলে হয়ে গেছে। এখন কি তার ফুলবাবু আর তার বিয়েটা ভেঙে যাবে? শৈবাল সারাফ আর মুহুর দিকে তাকালো। এরপর সে তার প্রেয়সী কুহুলতার দিকে তাকালো। কেমন রাগে মুখে অন্ধকার নেমেছে কুহুলতার। তবুও কি যে মোহনীয় লাগছে তাকে তার কাছে। তার সব রকম রুপেই শৈবাল বার বার আকৃষ্ট হয়। কিন্তু তার জন্য সারাফ তার প্রান প্রিয় ভাইয়া কষ্ট পাবে এটা সে কখনোই মেনে নিতে পারবে না। কিছুতেই না। সে না হয় আড়াল থেকেই ভালোবাসবে তার কুহুলতাকে। আর কুহুলতা তো সবার সম্মুখে তাকে রিজেক্ট করেই দিয়েছে। এরপরেও কি তার উচিত কুহুলতাকে জোর করে বিয়ে করা। মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো সে এসব ভেবেই। শৈবাল অকপটে বলে উঠলো,

‘না না আংকেল এরকম টা করবেন না। ভাইয়া আর মুহর বিয়েটা হবে। এই আমি, এই আমি অপদার্থ টার জন্য আমার ভাইয়ার বিয়ে ভেঙে যাবে সেটা কখনোই মানতে পারবো না আমি। আমার শুধু কুহুলতার মুখ থেকে উত্তর শোনার ছিলো। উত্তর টা পেয়ে গেছি আমি। তাই আর এই বিষয় নিয়ে কেউই কথা বলবে না। যেদিন ভাইয়া আর মুহুর বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে সেদিনই হবে। আসছি আংকেল!’

‘কিন্তু ভাই তুই কষ্ট পাবি আর আমি বিয়ে করবো এটা তো হয় না।’

সারাফ শৈবালের কাধ হাত দিয়ে বললো। শৈবাল আড়ষ্টভাবে হাসলো। সারাফের কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে ক্ষীন স্বরে বলে,

‘মুহু আর তুমি দুজন দুজনকে পছন্দ করো। কিন্তু আমি কুহুলতা মেম ক পছন্দ করলেও আমাকে কুহুলতা মেম পছন্দ করে না। তাই আমাদের বিয়েটা হওয়াও পসিবল না। বুঝতে পেরেছি আমি এটা খুব ভালো ভাবেই।’

সবাই নিশ্চুপ। কুহু মুহু দুজনেই চুপ করে আছে। সারাফ কি বলবে ভেবে পেলো না। সে মুহুকে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসে। ওঁকে ছাড়া থাকতে পারবে না। ড্রয়িংরুমে জুড়ে পিনপতন নীরবতা। শৈবাল বুড়ো আঙ্গুলে চোখ মুছে বেরিয়ে এলো ওখান থেকে। যাওয়ার আগে শেষ বারের মতো সে তার কুহুলতা মেম কে দেখে নিলো। সে মনে মনে বলে,

‘কুহুলতা মেম তোমার মতো নিষ্ঠুরতম নারী আমি এই জন্মে দেখিনি। নারী হিসেবে যেমন তুমি রূপবতী প্রেমিকা হিসেবে তুমি ততটাই নির্দয় আর পাষান। তোমার সুরেলা কন্ঠে মানুষের হৃদয়ে যেমন প্রেমের ফুল ফুটে তেমনই তোমার সেই সুন্দর কথার ধারে কাটাও ফুটে। আমার ভালোবাসা বুঝলে না তুমি!’

আর দাঁড়ালো না সে। পিছনে পিছনে সারাফ ছুটলো শৈবালের দিকে। সাহিরা মাথা নত করে সবার থেকে ক্ষমা চাইলেন। এরপর তিনিও বেরিয়ে এলেন। তিনি কি সব টা ঠিক করতে এসে আরও এলোমেলো করে দিলেন। চিন্তায় মাথা ভোভো করছে। শৈবাল যদি এখন উল্টো পালটা কিছু করে বসে তখন? ছোট বেলা থেকেই কোনো কিছু চাওয়ার আগে সে পেয়ে গেছে। অপেক্ষা করতে হয়নি কোনো কিছু পাওয়ার। কিন্তু আজ ছেলেটা নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কে প্রত্যাহার করলো ভাইয়ের জন্য। যদিও সত্যিই অসম্ভব ছিলো কুহু আর শৈবালের বিয়েটা। তবুও তিনি তো চেষ্টা করলেন। কিন্তু এই চেষ্টা করতে গিয়ে কি আরও দু’টো জীবন নষ্ট করতে যাচ্ছিলেন তিনি?

তানহা নতুন একটা টিউশনি করাচ্ছে এখন। টিউশনি শেষে সে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। মাথায় রাজ্যের চিন্তা। কুহু বুবুর বিয়ের কথা শুনেও তার ভাইয়া কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। বড্ড বেখায়ালি পনায় বিষয় টাকে এড়িয়ে গেছে কেবল। আর ঐ মানুষ টা নাকি তাকে ভালোবাসতো! তবে যে সে দিব্বি কুহু বুবুকে বিয়ে করতে চলে এসেছে। বিয়ের ডেট ও ফিক্সড করে রেখে গেছে। তাহলে তাকে যে প্রনয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সেগুলো মিথ্যা ছিলো? কোনো টাই সত্যি না। সব টা অভিনয়। সে কেনো মানুষ টাকে আলাদা ভাবতো নিজেও জানে না। আসলে সব ছেলেরাই এক রকম এটা সে ভুলে গেছিলো। সদ্য কিশোরী মনে প্রথম প্রনয়ের ফুল ফুটতে শুরু করেছিলো তখনই শৈবাল নামের বারুদ এসে তার জীবন টা জ্বালিয়ে দিয়েছিলো। এরপর ছেলেদের উপর থেকে বিশ্বাস নামক জিনিস টা চিরতরে মুছে গেলো। সুপ্রিয় নামের মানুষ টাকে কড়া কথা শুনিয়ে তার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিলো সে। চার মাস পর যে তার সাথে এভাবে দেখা হবে সেও মোটেও আশা করেনি। সত্যিই ছেলেরা শুধুই সৌন্দর্যের পুঁজারি । তা না হলে তার চেয়ে সুন্দরী কাউকে পেয়েই তাকে ভুলে গেছে সুপ্রিয়। এসব ভাবতে ভাবতে আনমনে হাটছিলো সে। হাঁটতে গিয়েও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হলো সে। হুট করে জোরে ব্রেক করে একটা বাইক থামলো তার সামনে। সে ক্ষুব্ধ হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো,

‘চোখে অন্ধ নাকি হ্যাহ? দেখে বাইক চালাতে পারেন না। যত্তসব ফা’উ’ল লোকজন!’

লোকটির মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখলো না তানহা। লোকটি হ্যালম্যাট খুলতে খুলতে বলে,

‘তাই আমি, আমি ফাউল লোক?’

কথাটা তার কর্ণগোচর হতেই বুকের হৃদস্পন্দন থেমে গেলো তানহার। থেমে গেছে শ্বাস প্রঃশ্বাস। থেমে গেছে সময়! মনে হচ্ছে এক্ষুনি সে লুটিয়ে পরবে জমিনে। কথা বলা ব্যক্তি টিকে সে খুব ভালো করে চেনে। সুপ্রিয়! সুপ্রিয় এতো দিন পর কেন তার সামনে? লোকটা এখন আবার কি চাই তার কাছে? দিব্বি তো বিয়ের আসরে বসবে। সত্যিই ফালতু আর ছেচড়া লোক সে। সে বাইকের সাইড কাটিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে এলো। ভাব এমন যে সে সুপ্রিয় নামের কাউকে সে চেনেই না। দেখেও নি আগে। বাইক থেকে নেমে সুপ্রিয় দৌড়ে ওর পিছনে এলো।

‘দাঁড়িয়ে যাও তানহা। তোমার সাথে আমার কথা আছে।’

তানহা দাঁড়ালো না। যত দ্রুত সম্ভব পা চালিয়ে আসছে। আর দুই মিনিট হাঁটলেই তার বাড়ি।সুপ্রিয় দৌড়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পরলো। তানহা কটমট করে তাকিয়ে ওঁকে ক্রস করে চলে আসতে চাইলো। কিন্তু পারলো না। একটা শক্ত হাত ওর ডান হাত আঁকড়ে ধরেছে। তানহা আশেপাশে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

‘হাতটা ছাড়ুন মিষ্টার হুশেইন।’

‘উম হুম ছাড়বো না। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।’

‘কিসের উত্তর হ্যাঁহ? আপনার লজ্জা করছে না? দুদিন পর বিয়ে করছেন আর এখন অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে আছেন।’

‘বিয়ে করছি তাতে তোমার কি? তুমি তো আর আমায় ভালোবাসো না। সেসব ছাড়ো। আগে বলো তুমি তো তোমার মামা বাড়ি থাকতে। এখানে কবে এলে?’

‘সেটা আপনাকে কেন বলবো?’

‘আমাকে কেন বলবে? তুমি জানো আমি তোমাকে কত খুঁজেছি। হন্যে হয়ে খুজেছি। আর তুমি কি না এখানে। কোনো কন্টাক্ট নাম্বার নেই। কোনো যোগাযোগের মাধ্যম নেই।একটা মানুষ এভাবে বলা নাই কওয়া নাই উধাও হয়ে গেলে!’

তানহা নিজের হাত ঝামটা মেরে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,

‘এতো খুজেছেন কেন? একদিন খুজেই হাঁপিয়ে গেছিলেন? আর চার মাস পর দেখে এখন এসেছেন খোঁজ নিতে! চার মাস দেখেন নি আমায়। আর চার মাসের মধ্যে আমাকে ভুলে নিজের বিয়েও ঠিক করে ফেলেছেন। এই আপনি নাকি আমাকে প্রানের চেয়েও ভালোবাসেন? কোথায় গেলো সে ভালোবাসা। সুন্দরী মেয়ে পেয়েই সে ভালোবাসা ফুস!’

‘ওরেহ বাপরে। খুব কথা শিখেছো দেখছি। কোনো ভাবে তুমি কি জেলাস! আমার বিয়ে তে অখুশি তুমি?’

‘বাজে কথা ছাড়ুন। আমাকে যেতে দিন।’

‘যাও কে আটকেছে।’

হনহনিয়ে বাড়ির দিকে চলে এলো তানহা। কান্না পাচ্ছে। ভীষণ ভাবে কান্না পাচ্ছে তার। হৃদপিন্ডের রক্ত ছলকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। সুপ্রিয় দীর্ঘশ্বাস ফেলে তানহার যাওয়া দেখলো। প্যান্টের পকেটে দু হাত পুরে যতক্ষন ওঁকে দেখা গেলো সে তাকিয়ে রইলো। মনে মনে ভাবলো,

‘একদিন খুঁজি নি তোমাকে। খুঁজে তো আমি তোমাকে অনেক। পেয়েও গেছিলাম। কিন্তু তোমার রিজেকশন মেনে নিতে পারিনি তানহা। তোমার আমাকে ধিক জানানো টা মেনে নিতে পারিনি। তোমার চোখে তো আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছিলাম। তবে কেন এই রিজেকশন? এর শেষ আমি দেখবো। কতদিন পালাবে তুমি আমার থেকে?’

বাড়ি ফিরে শৈবাল নিজের মতো ঘরে চলে গেলো। সারাফ ডাকলো কয়েকবার কিন্তু কাজ হলো না। বাধ্য হয়ে সে নিজের ঘরে চলে গেলো। থাক একা। একা থেকে নিজেকে হালকা করুক। কিছু সমস্যার হইতো সমাধান হয়না। কিছু প্রশ্নের হইতো উত্তর হয় না। সব আবেগ হইতো ভাগ করে নেওয়া যায় না। সব কিছুরই ব্যতিক্রম থাকে। সব সম্পর্ক পরিনতি পাই না। সব পরিস্থিতি হইতো সামলানো যায় না। তৃষিত মনের তৃষ্ণা শুধু বেড়েই চলে নিরন্তর। মিউজিক সিস্টেমে গান চালিয়ে নিজের ক্লান্ত শরীর টাকে সোফার উপর ডুবিয়ে দিলো শৈবাল। মৃত্যু দূত কেন আসে না তার কাছে। মৃত্যু টা কেই এখন নিজের করে পেতে ইচ্ছে করছে তার। সে বিরবির করে বলে,

‘কেন এলে তুমি আমার জীবনে। এই বিষাক্ত হৃদয়ে প্রেমের বার্তা নিয়ে। ভুল টা আমারই। এটা তো আমার প্রাপ্য ছিলো। কেন এলে তুমি আমার এই জীবনে যদি আমার ই না হবে?’

চুড়ান্ত হতাশা গ্রস্ত তার মন। হৃদয় পাথরের ন্যায় ভারী হয়ে আসছে। আসার সময় এক পাতা ঘুমের ওষুধ এনেছে সে সবার অগোচরে। প্যান্টের পকেট থেকে সেটা বের করলো সে। বের করে এক পাতা ঘুমের ওষুধ খেয়ে নিলো। আস্তে আস্তে ওর দু চোখ বন্ধ হয়ে এলো। ঘুম ধীরে ধীরে ওঁকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো।

সাউন্ড বক্সে তখনও গান বাজছে,

~ বে-জান দীল কো
তেরে ইস্ক নে জিন্দা কিয়া__
ফীর তেরি ইস্ক নেহি
ইস দীল কো তাওবা কিয়া__

তারাক তারাক কে ইস দীলসে
আহ নীকালতে রেহি__
মুঝকো সাজা দি পিয়ার কি,
এইসা কিয়া গুনাহ্ কিয়া__

তো লুট গায়ে,
হাহ লুট গায়ে,
তো লুট গায়ে হাম তেরি মোহাব্বত মে__

#চলবে

হিন্দি গান শোনা হয় না। লিরিক্স ভুল হতে পারে।