গোধুলীর শেষ প্রহরে পর্ব-২৩+২৪

0
179

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ২৩
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

একদিন কেটে গেছে। ভোরের আলো ফুটতেই সারাফের জ্ঞান ফিরে এসেছে। জ্ঞান আসার পরেই ও যখন বুঝতে পারলো কথা বেরোচ্ছে না ওর কণ্ঠনালী থেকে তখনই হট্টগোল বাঁধলো। উত্তেজিত হয়ে সজোরে হাতের ক্যানালো টা এক টানে খুলে ফেললো সে। হসপিটালের সব কিছু ভাঙচুর শুরু করলো। নার্স ঘাবড়ে গিয়ে দৌড়ে বাইরে এলেন। ডক্টর কে ডাকলো সে। বাইরে সবাই বসে ছিলো। সারা রাত ঘুমের রেশ ছিলো না কারোর চোখেই। সবেই হইতো চোখ লেগে এসেছিলো সাহিরা, শাম্মী, সুপ্রিয়র। কুহু, আর প্রিতি মুহুর ক্যাবিনে ছিলো। মুহু আবার উত্তেজিত হয়ে বারবার বিলাপ করছিলো সারাফের জন্য। তখন বাধ্য হয়ে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পারিয়ে দেওয়া হয়েছে ওঁকে। মুহুর পাশে থাকতে থাকতেই কুহু আর প্রিতির ও একটু আগে চোখ লেগে এসেছে। তৌহিদ কাল আরও কিছুক্ষন থেকে চলে গেছিলো। কারণ তানহা বাড়িতে একা আছে। ভাঙচুরের আওয়াজে ওঁদের ঘুম ভেঙে যায়।।উপরন্তু আবার নার্সকে ছুটতে দেখলেন শাম্মী। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,

‘কি হয়েছে নার্স? আপনি এমন ঘাবড়ে গেছেন কেন?’

নার্স আতংকিত হয়ে বলে, ‘ এই ক্যাবিনের পেশেন্ট উত্তেজিত হয়ে ভেতরের সবকিছু ভাঙচুর করতে শুরু করেছে। প্লিজ আসুন আপনারা।’

সুপ্রিয় কে কল করতেই সুপ্রিয় ছুটে এসেছিলো। বড় ভাই বেঁচে আছে জেনে তার যেনো আকাশ সম আনন্দ। কিন্তু বাকি সব টা যখন শুনেছে তখন মা কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছিলো সে। তার মায়ের বিশ্বাস সত্যি হয়েছে তবে। মা দের কথার আর বিশ্বাসের অদ্ভুত একটা শক্তি থাকে। তার মায়ের বিশ্বাস অটুট ছিলো। ❝বিশ্বাসে মিলাই বস্তু তর্কে বহু দূর!❞ কথাটার প্রমান আজ সে পেয়েছে। সে যদি ভেঙে পরে তাহলে মাকে সামলানো মুশকিল হবে। কোনো রকমে নিজেকে সামলে নিয়ে তার মাকে শান্ত করার চেষ্টা করেছে। আগে কেন তাকে জানাইনি এসব নিয়ে সে অভিযোগ ও করেছে মাকে। কিন্তু শাম্মী এতো কিছুর মধ্যে সুপ্রিয় কে খবর দিতেই ভুলে গেছিলেন। এরপর মনে পরতেই তিনি সুপ্রিয় কে ফোন করে হসপিটাল আসতে বলেন। এরপর যা কিছু হয়েছে সব টা খুলে বলে। সুপ্রিয় নার্স কে বলে,

‘আমি যাচ্ছি। আমি যদি ভাইয়া কে বলি আমি তার ছোট ভাই সে শান্ত হবে। নিশ্চয়ই শান্ত হবে।’

সুপ্রিয় আর শাম্মী ক্যাবিনের ভেতরে গেলো। সাহিরা নিশ্চল, নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইলেন। কিন্তু যেতে পারলেন না। ভেতর টা আত্ম হাহাকারে ভরে উঠছে তার। খুব করে মন টা চাইছে যেতে। সারাফকে দু হাতে জড়িয়ে ধরতে। বলতে, ‘ইচ্ছে করছে একটিবার আমাকে মা বলে ডাকো বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দিও আঠাশ টা বছর তোমার থেকে কেড়ে নেওয়ার জন্য।’ কিন্তু হাই অনেক বলতে চাওয়া কথাও আজ গলায় কা’টা’র মতো বিঁধে আছে। খচখচ করছে হৃদয় টা। প্রতিনিয়ত র’ক্ত ঝড়ছে সেখান থেকে। প্রিতি এসে সাহিরার পাশে দাঁড়িয়ে উনার কাধে হাত রাখলেন। সাহিরা প্রিতির দিকে অশ্রু সজল চোখে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিলেন।

শাম্মী আর সুপ্রিয় গিয়ে দেখলো সারাফ উম্মাদের মতো সব কিছু ছুড়ে ফেলছে। এরপর ব্যাডে বসে মাথা চেপে ধরে আ, আ, করছে। কারণ তার মুখ থেকে আ,আ, শব্দ ছাড়া আর কোনো আওয়াজ আসছে না। ওর মাথার চুল গুলো অপারেশন করার ফলে সব গুলো কেটে ফেলা হয়েছে। তার এক ঝাক সিল্কি চুল যেগুলো মৃদু মন্দ বাতাসেও ঢেউ খেলতো সে চুল নেই। কতই না প্রিয় ছিলো সে চুল তার। ন্যা’ড়া মাথার মাঝ বরাবর সেলাইয়ের চিহ্ন। প্রায় ছয় থেকে সাত টা সেলাই পরেছে মাথায়। যিনি সারাফের অপারেশন করিয়েছেন সে ডক্টর এখন ইমার্জেন্সি অটি তে আছেন সেজন্য আসতে পারেন নি। কিন্তু শাম্মী তো ডক্টর তিনিও তো একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে সারাফ কে ঘুম পারিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু একজন মা কি কখনোই তার সন্তানের এমন বিরুপ অবস্থা সহ্য করতে পারেন। ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি। কাঁন্নার শব্দ কানে আসতেই সারাফের হাত থেমে গিয়েছে। সে দেখলো তার জন্মদাত্রী মা জননী দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে আরও একটা ছেলে। কালকের ঘটনা আর শাম্মীকে দেখেই সে আরও বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলো। নিজের সন্তান কে অন্যের ভরসায় কেন রেখে গেছিলেন তিনি। হসপিটালে তো আরও অনেক ডক্টর ছিলেন উনার কর্মরত। তাহলে কেন তিনি নিজের সন্তান কে আগলে রাখতে গাফিলতি করেছিলেন।।হাতে নেড়ে আ আ করে কিছু বলার চেষ্টা করলো কিন্তু ব্যর্থ হলো। সে খুব করে চাইলো চিৎকার করে উঠতে। কিন্তু না পারলো না সে। যন্ত্রণায় মাথা চেপে ধরতে সুপ্রিয় এগিয়ে এলো। সারাফ কে দুহাতে আগলে ধরে বলে,

‘আমার ভাইয়া! দেখো আমাকে, আমি, আমি তোমার ছোট ভাই সুপ্রিয়। আমাদের বাবা মারা গেছে। কিন্তু আমি খুব করে চাইতাম আমার বড় ভাই থাকুক যে আমাকে বাবার মতো বটগাছ হয়ে ছাঁয়া দেবে। আজ দেখো সত্যিই আমার বড় ভাই আছে। আমাকে ছাঁয়া দেওয়ার জন্য আমার বড় ভাইকে পেয়ে গেছি আমি। আজ খুব কষ্টের মধ্যেও আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের একজন।’

সুপ্রিয় সারাফকে ঝাপটে ধরে কান্না করছে। শাম্মী মুখে হাত চেপে কান্না আটকে কিছু টা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। দুই ভাইকে এক সাথে দেখে যেমন আনন্দিত তিনি তার থেকেও বেশি ব্যথিত তিনি। কিন্তু তার ছেলে মাহেত কে কেন অন্য রকম লাগছে এতো। ওর চোখে স্পষ্ট অভিমানের ছোঁয়া লেগে আছে। কেন এই অভিমান?

এদিকে মাথা যন্ত্রণায় ছটফট করছে সারাফ। সে বুঝলো এই ছেলেটা তবে তার ছোট ভাই। তাই তার মায়ের সঙ্গে এসেছে। কিন্তু এতো কেন কষ্ট হচ্ছে তার মানতে ইনি তার মা! কি কারণে? শুধুই দায়িত্বহীনতার কারনে এই অভিমান জন্ম নিচ্ছে মনে?

আচ্ছা সে কেন কথা বলতে পারছে না? তার মাথার চুল গুলো কেন ফেলে দেওয়া হয়েছে? কেন এই আহাজারি? তাকে জানতে হবে? শেষ বার তো সে মুহুকে দেখেছিলো। কোথায় সে? ওর কথা না বলতে পারার জন্য কি তাকে ছেড়ে চলে যাবে মুহু? অবহেলা করবে কি মুহু তার ফুলবাবু কে? আগের মতোই কি মুহু তাকে ভালোবাসবে? নাকি সত্যিই থেকে থেকে যাবে? যদি চলে যায় মুহু? তখন কি করবে সে? মুহুর্তের মধ্যে এতো এতো প্রশ্ন মনে জাগতেই মাথার যন্ত্রণা বেড়ে গেলো। মুহুর তাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই মাথার চাপ টা আরও বেড়ে গেছে। ভয় হচ্ছে খুব তার মুহুকে হারানোর ভয়। হৃদয়হরিনী কে হারানর ভয়। সে এবার কাশতে শুরু করলো। কোনো রকমে সুপ্রিয় কে হাতে ঠেলে সরিয়ে দিলো আস্তে করে।

আর তখনই তার চোখ গেলো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটির দিকে। মুহু দাঁড়িয়ে আছে। এটা তার হৃদয়ীনি। তার হার হাইনেজ! কেমন বিদ্ধস্ত লাগছে ওঁকে। মাথা যন্ত্রণা ভুলে সে অপলক নয়নে তাকিয়ে রইলো। তার প্রনয়িনীর মুখখানা ওমন বিষন্নতায় ছেঁয়ে গেছে কেন? তার জন্য কি? ক্লান্ত প্রনয়ীনির চোখ, মুখ ফুলে গেছে। কেঁদেছে খুব দেখেই বোঝা যাচ্ছে! মুহু টলমলে পায়ে হেঁটে এলো। শাম্মী আর সুপ্রিয় না চাইতেও বেরিয়ে এলো। কারণ তাদের মনে হলো মুহু সামলাতে পারবে সারাফকে। ওঁকে দেখতেই সারাফ শান্ত হয়ে গেছে। মুহু কাছে আসতেই সারাফ,

‘হাত নেড়ে আ আ করে বুঝালো চলে যাও এখান থেকে। তোমার আমার সাথে থাকা ঠিক হবে না। তোমার সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ সামনে পরে আছে। আমি আর আগের মতো নেই যে। মানুষ আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে। আমি কারোর হাসির খোড়াক হতে চাই না। যাবো না কারোর সামনেই। নিজেকে বন্দি করে নেবো চার দেয়ালের মাঝে!’

সারাফের আরও অস্থিরতা বাড়লো। সে ভেবে নিলো মুহু হইতো তাকে বলবে, আমি তোমার সাথে থাকতে পারবো না। লোকে কি বলবে তোমাকে নিয়ে রাস্তা ঘাটে বেরোলে। তোমার মতো বোবা ছেলের সঙ্গে থাকা যায় নাকি?’ এসব ভেবে এতোটাই অস্থিরতা বাড়লো যে হৃদস্পন্দন বিট করছে হাইলি। পালস রেট অনেক টাই বেড়ে গেছে তার। ওঁকে ছটফট করতে দেখে মুহু আরও ঘনিষ্ঠ হলো সারাফের। এখনো অব্দি একটাও শব্দ সে মুখ থেকে বের করে নি। শুধু পলকহীন তাকিয়ে আছে সারাফের নিষ্পাপ শুকনো মায়া ভরা মুখ, নিষ্প্রাণ চোখের দিকে। মুহুর চুপ থাকাটাই সারাফের অস্থিরতা কমেনি এতোটুকুও। ছটফট করছে ভীষণ ভাবে। মুহু সারাফের অতিব নিকটে এসে তার শুষ্ক ওষ্ঠাধরে চেপে ধরলো ওর সরু পাতলা ঠোঁট দিয়ে। সারাফ মূর্তির ন্যায় বসে রইলো। ওর ছটফট করা, সমস্ত অস্থিরতা, সমস্ত বিলাপ, সবটুকু বিষাদ শুষে নিচ্ছে তার ভালোবাসা। শিরদাঁড়া উঁচিয়ে উঠলো মুহুর্তের মধ্যে। রক্তের প্রবাহ সর্বাঙ্গে মুভ করতে লাগলো। অন্তস্থল হয়ে উঠলো সামালহীন। সারাফের চক্ষুদ্বয়ে ছড়িয়ে থাকা নোনাজল গড়িয়ে পরলো গাল বেয়ে। তিতকুটে অনুভূতির রেশ কেটে গেলো। সারাফ পুরো পুরি শান্ত হওয়ার পর মুহু ওঁকে ছেড়ে দিলো। ঠোঁট কামড়ে কিছু সময় ঘন নিঃশ্বাস নিলো দুজনেই। হাঁপাতে হাঁপাতে নিজেদের কপালে কপাল ঠেকালো। মুহুর চোখের অশ্রুকনারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না। টপটপ করে পরছে। সে শান্ত স্বরে বলে,

‘সুখ কাকে বলে জানো ফুলবাবু? সুখ হলো সঠিক মানুষের সান্নিধ্য লাভ করা। সঠিক মানুষ কে বাঁছাই করে তার সাথে সারাজীবন কাটানো। সেটা যেমন পরিস্থিত হোক না কেন! সুখ হলো সঠিক মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়া যে তোমাকে সঠিক ভাবে ভালোবাসে। সুখ এবং দুঃখ একে অপরের সাথে যত্ন এবং শেয়ার করে নেওয়া। ছোট ছোট আনন্দে অনেক বেশি খুশি হওয়া। নিশ্চয়ই সুখী ভালোবাসা সবসময় কল্পনায় থাকে না। তুমি কি ভেবেছো মুহু তোমাকে ছেড়ে চলে যাবে। মুহু এই অবস্থায় তার ফুলবাবু কে ছেড়ে চলে যাবে? আমার ভালোবাসার সেই সঠিক মানুষ টি হলে তুমি ফুলবাবু। যাকে কোনো পরিস্থিতিতেই এই মুহু ছাড়বে না। মুহুর ভালোবাসা এতোটাও ঠুনকো না। মুহু একবার কারোর সাথে থাকার জন্য প্রতিজ্ঞাবধ্য হলে সে শেষ নিঃশ্বাস অব্দি থাকে। ভেবো না এতো তারাতাড়ি আমার থেকে তুমি মুক্তি পাবে। তোমার মুক্তি মিলবে না এই মুহুর থেকে। মাথায় এবং মনে ভালো করে কথা গুলো রেজিস্ট্রার করে নাও!’

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো সারাফ মুহুর
দিকে। কান্নায় বিজড়িত হয়ে চোখের কোণে অশ্রু কনারা ভীড় জমালো। মুহু সেই অশ্রু গড়িয়ে পরবার আগেই সন্তর্পণে দুই হাতের বেষ্টনীতে মুছে দিলো। তারপর আলতো করে দু কাধে হাত রেখে শুইয়ে দিলো সারাফকে।
বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পরলো সে। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে প্রিয়তমাকে দেখে যাচ্ছে। আচ্ছা মুহু তাকে দয়া দেখাচ্ছে না তো? তার এই ধারণা টা এই যে একটু আগের ঘটনা ভুলিয়ে দিয়েছে। মুহুর্তেই মন থেকে বিলীন করে দিলো তেতো ভাবনা গুলো। সারাফ তাকিয়ে আছে এখনো মুহুর মুখপানে। মুহু সেই দৃষ্টির মানে বুঝে আবার বলে,

‘আমরা আজই বিয়ে করবো ফুলবাবু। তৈরি থাকো। তোমাকে কোথাও ছাড়ছি না আমি। সারাক্ষণ চিপকে থাকবো আমি তোমার সাথে। তাই তো পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করছি। বাবা এসেছিলেন তাকে কাজী ডাকতে পাঠিয়েছি। তারপর আশা রাখছি তোমার আর ভয় থাকবে না। আমি তোমাকে মিথ্যা কোনো আশ্বাস দিয়ে আশ্বস্ত করতে চাচ্ছি না বা দয়া দেখাচ্ছি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি! যে ভালোবাসার মাপ ঝোক করার পদ্ধতি নেই। সে ভালোবাসা যেটা সমুদ্রের স্রোতের চেয়েও অবিকল, অবিরত, অবিশ্রান্ত থাকবে আজীবন!’

#চলবে

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ২৪
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

মুহু সারাফের বিয়ের পর কেটে গেছে পুরো একটা মাস। এর মধ্যে বদলে গেছে অনেক কিছু। আবার অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। সারাফ এখন একদম সুস্থ। সে যে বাকশক্তিহীন এটা মুহু বুঝতেই দেইনা। ওর খেয়াল রাখা থেকে শুরু করে কখন কি প্রয়োজন সবটা নিজ হাতে করে। এতো ভালোবাসে মেয়েটা তাকে! সারাফের মাথায় নতুন করে ছোট ছোট চুলের আবির্ভাব হয়েছে। সারাফকে শাম্মী জোর করে তার বাসায় এনেছেন। অবশ্যই মুহুও সারাফের সঙ্গে এসেছে যেহেতু সে তার বিয়ে করা বউ। মুহুও চেয়েছিলো সে এখন নিজের বাড়িতে নিজের অধিকারে থাকুক। তার মায়ের কাছে এসে, মাকে, ভাইকে আপন করে নিক। মুহু ঠিকই ধরতে পেরেছিলো তার ফুলবাবুর অভিমান জন্ম নিয়েছে অনেকটা। এই অভিমান কাছে থেকেই মেটাতে হবে। এই অভিমান কি আর এতো সহজে কা’টে? সারাফের অবশ্য এখন আর কোনো রকম অভিমান নেই। সাহিরার উপর সে রেগে ছিলো। পরে যখন সে সবটা শুনেছে তখন সাহিরা কে জাপটে ধরে কান্না করে। এখন তো সে বলতে পারে না তাই লিখে দিয়েছিলো,

‘আপনিই আমার প্রকৃত অর্থে আসল মা। জন্ম না দিলেও যে মা হওয়া যায় তার চুড়ান্ত প্রমান আপনি। আপনি আমার জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় উপহার। আমার মা! আমার মায়ের স্থানে সর্ব প্রথম আমি আপনাকে বসিয়েছি আর আপনিই থাকবেন! আপনার স্থান আমার হৃদয়ের সর্বোত্তম স্থানে!’

লেখাটা পড়ে সাহিরা কান্নায় আপ্লূত হয়ে যান। বাঁধনহারা সেই কান্না। তিনি মা না হয়েও মা হিসেবে স্বার্থক। এবার শৈবাল টাও যদি তাকে এতোটুকুও বুঝতো। এই আফসোস নিয়ে তার হইতো সারাজীবন কাটাতে হবে। মুহু এখন ভীষণ ব্যস্ত থাকে। ভার্সিটি, নতুন সংসার, নতুন একটা ব্যস্ত জীবন, এরপর বাসায় এসে তার ফুলবাবুর সেবায় নিয়জিত হয়। যতক্ষণ ভার্সিটিতে থাকে তার যেনো ছটফটানি তীব্র ভাবে অনূদিত হয়। বাসায় সারাফের কিছু লাগছে কিনা। বলতে তো পারে না। কখন কি প্রয়োজন হয় কে জানে! শাম্মীকে কিছুই করতে দেই না মুহু। গলায় গলায় ভাব শাশুড়ী বউয়ের। হবে না কেন সারাফ যে শাম্মীকে মা বলে পুরো আখ্যান দিয়েছে সেটা সম্পুর্ন তো মুহুর জন্যই। তাছাড়া শাম্মী এখন ভেবেই নিয়েছে হসপিটালের চাকরি টা আর সে করবে না। বাড়িতেই থাকবেন। সারাফের দেখাশুনা করবেন মুহুর অনুপস্থিতিতে।

মুহু ভার্সিটি থেকে ফিরলো। ঘেমে নেয়ে একেবারে যা-তা অবস্থা। সারা শরীরে গরমের তিক্ততা ছড়িয়ে পরেছে পুরো দমে। ব্যাগটা রেখেই ঘর্মাক্ত শরীরেই সারাফকে জড়িয়ে ধরলো। এটা তার রোজকার রুটিন। ভার্সিটি থেকে ফিরবে আর সারাফকে জাপটে ধরবে। সারাফ ও আগলে নেই মুহুকে। তারপর ইশারায় বুঝায়,

‘অনেক হয়েছে। তুমি ঘেমে গেছো। ইশ কি বাজে গন্ধ! যাও গোসলে যাও ফ্রেশ হও!’

মুহুর তাতে কি রাগ। সে তো আরও চিপকে থাকবে এই কথা বুঝতে পেরেই। মুহু সারাফ কে ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল মুছতে মুছতে বলে,

‘জানেন আমাদের ভার্সিটির বুড়ো স্যার! যার আটত্রিশ বছর বয়স হওয়ার পরেও বিয়ে করেন নি তিনি গত সপ্তাহে বিয়ে করেছেন। আমাদের সজল স্যার আর রেখা মেম ভাবা যায়।’

সারাফ মুহুর দিকে অপলক তাকিয়ে বিগলিত হাসলো। চকিত নজর সরিয়ে লিখে দিলো, ‘তা ভালো তো? আজ আসতে দেরি হলো যে এই কারনেই কি?’

মুহু একগাল হেসে বলে, ‘হোয়াই? ইউ মিস মি বেবস?’

‘হ্যাঁ অন্নেক!’

আরও একগাল হাসলো মুহু। আয়নার সামনে থেকে এসে সারাফের গালে চুমু দিয়ে বলে,

‘আজকে লেট হলো এই জন্য যে, কিপ্টে সজল স্যার আজ ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের সকল স্টুডেন্ট কে ট্রিট দিয়েছেন। বেটায় বিয়ে করে পা’গ’ল হয়ে গেছেন। যে স্যার একটা টাকা খোসায় না পকেট থেকে তিনি আজ এতো গুলো স্টুডেন্ট কে ট্রিট দিলেন ভাবোতো। তার এহেন কান্ডে সব স্টুডেন্ট দের তো চক্ষুচড়ক গাছ।’

‘বিয়ে করে সব পুরুষ মানুষই পা’গ’ল হয়! এই যে আমি যেমন! ‘

লেখাটা পড়ে মুহু হেসে কুপোকাত। হাসতে হাসতেই সে বলে, ‘এহ পা’গ’ল না ছাই। ওহো! হ্যাঁ, আপনাকে বলা হয়নি বুবুর পরের সপ্তাহে বিয়ে! আমাদের আজকেই যেতে হবে আমাদের বাড়িতে! এতো কিছু হয়ে গেছে এর মধ্যে যে বুবুর বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে গেছে।’

সারাফ ইশারায় বুঝালো, ‘ওকে যাবো আমরা।’

মুহু বাইরে যাবে তখনই সারাফ মুহুকে এক টান দিয়ে কোলে বসিয়ে দিলো। কোমড়ে হাত চেপে ধরে ভেজা চুলে নাক ডুবালো। মুহুর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো এতেই। দরজা খোলা থাকায় আগমন ঘটলো সুপ্রিয়র!

‘ভাইয়া তোমাকে ও বাড়িতে যেতে হবে! তোমার শাশুড়ী মা ফো***!’

আর কিছু বলার আগেই তড়িঘড়ি করে উঠে পরলো মুহু। অত্যন্ত অপ্রস্তুত হয়ে পরলো সুপ্রিয়র আগমনে। সুপ্রিয় বিষম খাওয়ার অবস্থা! কাশি উঠে গেছে ওর। সে ঠোঁট চেপে হেসে মিনমিনিয়ে বলে,

‘ইউ গায়েস কন্টিউ! আই হ্যাভ টু গো আউট!’ স্যরি টু ডিস্টার্ব ইউ টু!’

মুহু তখনও বিমুঢ়। কিন্তু সে সুপ্রিয় কে বাঁধা দিয়ে আমতাআমতা করে বলে, ‘ভা-ভা-ভাইয়া আপনারা কথা বলুন আমি আসছি।’

ইশ কি লজ্জায় পরলো সে। এতো লজ্জায় সে কখনোই পরেনি। লজ্জায় কানের লতী গরম হয়ে উঠলো। সুপ্রিয়কে কোনো রকমে পাশ কাটিয়ে চলে এলো মুহু। আর সারাফ! সে তো নির্বিকার বসে ফোনে ঘাটছে। সুপ্রিয়র সঙ্গে তার জমেছে ভালো। দুই ভাইয়েতে মিলে জম্পেশ গল্প জুড়ে দেই। সুপ্রিয় একা একা বক বক করে আর সারাফ ইশারা করে বুঝাই, ‘তুই যাবি এখান থেকে? মেলা ফেচ ফেচ করে মাথা খাস না তো যাহ!’

‘আমার কি দোষ ভাইয়া! তোমরা যে দিন দুপুরে দরজা আনলক করে রোমান্স করবে সেকি আর আমি জানতাম!’

সারাফ টেক্সট করলো সুপ্রিয় কে, ‘তুই বিয়ে কর! তোর রোমান্সেরর বারোটা যদি আমি না বাজিয়েছি তো আমার নাম ও সারাফ নয় থুরি তোর ভাই মাহবুব মাহেত নয়!’

সুপ্রিয় ভ্রু সংকুচিত করে বলে, ‘হু’ম’কি দিচ্ছো? এটা ঠিক না ভাইয়া। তুমি তো আমার বউয়ের ভাসুর শশুড় হবে। ভাসুর হয়ে কেউ এমন করে?’

‘কেন করে না। আলবাত করে! আমি করবো!’

‘একদম না এসব কিছুই করবা না।’

‘করবো!’

সারাফ দাঁত কে’লি’য়ে হাসলো। সুপ্রিয় ও ভাইয়ের হাসি দেখে হাসলো শব্দ করে। এরপর দুইহাতে জড়িয়ে ধরলো একে অপরকে।

শৈবাল এক ঘন্টা আগে এসে বসে আছে একটা ক্যাফেটেরিয়া তে। শুধু এক ঘন্টা কেন যুগ যুগ অপেক্ষা করে দিতে পারবে এই একজন মানবীর জন্য। কিন্তু সে কি আদোও তাকে বুঝবে। সেদিনও তো সে তাকে রিকোয়েস্ট করেছে। ভালোবাসলে বোধহয় মানুষ এমনই নির্লজ্জ আর বেহায়া হয়। কেমন বেহায়ার মতো সে বার বার ছুটে যায় কুহুলতার কাছে। আজ যখন কুহুলতা তাকে নিজ ইচ্ছেতে দেখা করার কথা বলেছে বিনাবাক্যে সে চলে এসেছে। এক মুহুর্ত দেরি করেনি। বরং আরও এক ঘন্টা আগে এসে বসেছে। অপেক্ষার প্রহর কা’ট’লো শেষমেষ। কারণ কুহু আসছে। পরনে ফর্মাল ড্রেস-আপ। ভার্সিটি থেকে সরাসরি আসছে হইতো এখানে। শৈবাল এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো তার কুহুলতার আসার পানে। কুহুলতার মতো মেয়ে যে তাকে দ্বিতীয় বার ডাকবে সেটা ওর কল্পনাতীত। যেমন অবাক হয়েছে তেমন খুশিও হয়েছে। কুহু এসে চেয়ার দেখিয়ে মিষ্ট ভাষায় বলে,

‘ক্যান আই?’

‘ইয়াহ শিওর! তোমার কন্ঠ সেই এখনো আগের মতোই আমার হৃদয়ে ঝংকার তুলে। এটা কি জানো তুমি?’

কুহু নড়বড়ে হাসলো। হাসির শব্দ হয়নি। শৈবাল সেই হাসিতে ঘায়েল হলো। সে কুহুর দিক থেকে নজর সরাইনি মিনি সেকেন্ডের জন্যও। এতে কুহুর বিড়ম্বনা বাড়ছে তরতর করে। যত গুলো কথা সাজিয়ে এনেছে তা যেনো গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে সব। শৈবাল কে অন্য রকম লাগছে কেমন। ভালো করে লক্ষ্য করতেই সে দেখলো শৈবাল পাঞ্জাবি পরেছে। মাথায় টুপি। সুগন্ধি আতরের ঘ্রান এসে তাল লাগছে তার নাকে। মুখ টা জ্বল জ্বল করছিলো ওর। কুহু জিবের ডগা দিয়ে ওর ভারী ঠোঁট জোরা ভিজিয়ে নিলো। এরপর রয়ে সয়ে বললো,

‘দেখো শৈবাল তুমি বুদ্ধিমান ছেলে আশা রাখছি আমি যা বলবো তা তুমি বুঝবে। আমি তোমার শিক্ষিকা, তুমি আমার স্টুডেন্ট এটা কোনো বড় বিষয় না। বড় বিষয় হলো আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবো না। কারণ আমি তৌহিদ কে ভালোবাসি। তুমি যেমন আমার জন্য আত্মহত্যা করতে গেছিলে আমি কিন্তু তেমন কিছুই করতাম না তৌহিদের ভালোবাসা না পেলে। কারণ তৌহিদ আমার ভালোবাসা আর আমি তোমার জেদ। তুমি আমাকে ভালোবাসলে নিজেকে শেষ করতে চাইতে না। যে নিজেকে ভালোবাসে না সে কি করে অন্য একজন কে ভালোবাসতে পারে!’

শৈবাল ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে,

‘তৌহিদ? কোন তৌহিদ?

কুহু শ্লেষাত্মক হাসলো,

‘হ্যাঁহ ভুলে গেছো দেখছি। সেই তৌহিদ যার বোন কে তুমি জোর করে তারই সামনে বিচ্ছিরি ভাবে অপমান করেছিলে। একটা ভাই এটা কি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারে? সবচেয়ে বড় কথা হলো একটা মেয়ের সঙ্গে যখন এরকম একটা তিতকুটে ঘটনা ঘটে তখন তার মধ্যে ঠিক কি রকম প্রভাব পরতে পারে তা কি জানো? জানো না। কারণ এই তোমাদের মতো কিছু ছেলেরা দাবড়ে বেড়াবে, ঘুরবে ফিরবে কোনো দিক তাদের নজর দেওয়ার সময় নেই। কার কি হলো, কে কষ্ট পেলো, কে তোমাদের এই জঘন্য কাণ্ডে গলায় দ’ড়ি দিলো সেটা তোমরা দেখতে যাও না। শুধু নিজেদের মতো ফুর্তি করে তাকে আস্তা কুড়ে ছুড়ে মারো। একবারও ভেবেছো কি সেই মেয়েটার তোমার উপর কি পরিমাণ ঘৃণার উদ্রেক হবে? মেয়েটার শারীরিক, মানসিক কতটা ক্ষতি হয়। সমাজে তাদের কি চোখে দেখা হয় ভেবেছো? যাক গে সেসব ছাড়ো। যদি তোমার সামনে তোমার বোনকে তৌহিদ ওইভাবে চু’মু দিতো তোমার মধ্যে কিরুপ প্রভাব ফেলতো সেটা? উত্তর দাও তো বিবেক থেকে?’

‘তুমি আমাকে এসব বলতেই ডেকেছো? এসব কারণেই কি তুমি আমাকে বার বার রিজেকশন দিচ্ছো? দেখো আমি বদলে গেছি। আগের করা সব কিছুর জন্য আমি অনুতপ্ত। আল্লাহ্ তায়ালা রাব্বুল আলামীনের কাছে এর জন্য আমি ক্ষমা চেয়েছি। আমি জানি আমার অন্যায়ের পাল্লা অনেক ভারী কিন্তু নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ক্ষমাশীল। তুমি চাইলে আমি তানহা আর তৌহিদ এর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো। শুধু তুমি আমাকে গ্রহণ করো! প্লিজ!

‘এতো কিছুর পরেও তুমি এটা কি করে বলছো? শুধু ক্ষমা চাইলেই কি তুমি সেই মেয়েটির মন থেকে তিক্ততা মুছে দিতে পারবে? এই পর্যন্ত যত গুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করে দিয়েছো তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবে? পারবে না মিষ্টার শাহরিয়ার শৈবাল। আর তুমি আমাকে কোনো দিন ও পাবে না। কারণ আমি তোমাকে আজও ঘৃনা করি৷ নিজেকে এখন যেমন বদলেছে এমনই থেকো।

‘আমি বদলেছি তোমার জন্য কুহুলতা মেম।আর দেখো তুমিই নেই।’

‘তাও ভালো বদলেছো তো। আর তুমি সুপ্রিয় কে চেনো?’

শৈবাল মনে করার চেষ্টা করে বলে, ‘হ্যাঁ আমার ভাইয়া সারাফের আপন ভাই সুপ্রিয় তার কথা বলছো?’

‘হ্যাঁ। ও কিন্তু তোমার প্রতি প্রতিশোধ পরায়ণ ছিলো। জানো?’

‘কেন আমার জানা মতে আমি তো তার কোনো ক্ষতি করিনি?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলো শৈবাল।

‘তুমি তার ক্ষতি করেছো? সে তানহাকে ভালোবাসতো। তানহা এক মাত্র তোমার করা বাজে ব্যবহারের জন্য সুপ্রিয় কে ফিরিয়ে দিয়েছিলো। ওঁকে বিশ্বাস করেনি শুধু মাত্র তোমার জন্য। তাই সুপ্রিয় তোমাকেও সেইম কষ্ট দিতে চেয়েছিলো তোমার ভালোবাসা কে তোমার থেকে কেড়ে নিয়ে। মানে আমাকে বিয়ে করে। কিন্তু পরে আমি তাকে বুঝিয়েছি যে তুমি বদলে গেছো। তাছাড়া তুমি ওর ভাইকে আগলে রেখেছো এটা ভেবে সুপ্রিয় দয়া দেখিয়েছে। তোমার উপর দয়া দেখিয়েছি আমিও। সারাজীবন তুমি সবার কাছ থেকে শুধুই দয়া পাবে। ছটফট করবে, কাঁদবে, হাহাকার করবে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য। কিন্তু পাবে না। আর এটাই তোমার শাস্তি। চলি!’

শৈবালের গাল বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরলো৷ সে কান্না মুছে বলে,

‘আমি মাথা পেতে নিলাম এই শাস্তি। তুমি আমার জেদ না কুহুলতা মেম। তুমি আমার ভালোবাসা! সত্যি কারের ভালোবাসা। এই শৈবাল শুধুই এই কুহুলতাকে ভালোবাসবে।’

কুহু তাচ্ছিল্য হাসলো।বেরিয়ে আসার জন্য উদ্যত হতেই কিছু মনে পরলো। সে দাঁড়িয়ে পরলো। সামনে ঘুরে বলে,

‘হিয়াকে নিশ্চয়ই মনে আছে তোমার? পারলে হিয়াকে বিয়ে করে নিও। মেয়েটা তোমার সন্তানের মা হতে চলেছে! হতে পারে এটাই তোমার প্রায়শ্চিত্তের প্রথম ধাপ।’

#চলবে