গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-২৭+২৮

0
481

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৭
________________

হঠাৎই অভ্রের ভয়েস কানে আসতেই পিছন ঘুরে তাকালো আদ্রিজা। সত্যি সত্যিই অভ্রকে তাঁর
সামনে দেখে বেশ খুশি খুশি ভাব ফুটে উঠলো তাঁর চেহারার।’

অন্যদিকে,

অভ্র পুরো মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার মুখের দিকে। আজ যেন আদ্রিজাকে পুরোই অন্যরকম লাগছে। গর্জিয়াস গোল্ডেন কালার ভাড়ি লেহেঙ্গা, চুলগুলো খোলা, হাতে ভাড়ি চুড়ি, গলায় ভাড়ি নেকলেস, মাথায় টিকলি, মুখে ভাড়ি সাজ, মেহেন্দি রাঙা হাত, চোখে চশমা না থাকায় আজই প্রথম আদ্রিজার মায়া ভরা টানা টানা চোখ দুটো খেয়াল করলো অভ্র। এতদিন যেন চশমার কারনে চোখ দুটো বড্ড আড়ালে ছিল আদ্রিজার। অভ্র আনমনাই এগিয়ে আসলো আদ্রিজার দিকে। আদ্রিজাও দু কদম ফেলে এগিয়ে আসলো সামনে। অভ্র আদ্রিজার মুখোমুখি হয়ে বললো,

‘ আজ তোমায় পুরোই অন্যরকম লাগছে ব্ল্যাকবেরি।’

অভ্রের কথা শুনে বিস্ময়কর একটা ভাব নিয়ে তাকালো আদ্রিজা অভ্রের মুখের দিকে। যদিও সেও ভেবেছিল অভ্র তাঁকে দেখে এমন কিছু একটাই বলবে। আদ্রিজা বেশি না ভেবে নীরর কন্ঠে বললো,

‘ খুব বেশি অন্যরকম লাগছে কি?’

উওরে অভ্র আনমনেই বলে উঠল,

‘ পুরোটাই। যাই হোক পুরনো সব স্মৃতি ভুলে তোমার নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভ্রেচ্ছা রইলো ব্ল্যকবেরি। দোয়া রইলো তুমি যেন সারাজীবন সুখে থাকো।’

অভ্রের কথার উওর হিসেবে শুঁকনো হাসলো আদ্রিজা। তারপর প্রসঙ্গে পাল্টে বললো,

‘ আপনি আমার বিয়েতে এসেছেন আমি খুব খুুশি হয়েছি। ধন্যবাদ আপনায়।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রও হাল্কা হেঁসে বললো,

‘ ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কেন যেন তোমার বিয়েটা সামনে থেকে দেখার খুব ইচ্ছে জাগলো আমার তাই আসলাম।’

‘ ভালো করেছেন।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রের কিছু একটা মনে পড়তেই বলে উঠল সে,

‘ এক মিনিট আমি তোমার জন্য কিছু একটা নিয়ে এসেছি আশা করি তোমার পছন্দ হবে।’

বলেই নিজের ডানদিকের প্যান্টের পকেটে হাত দিলো অভ্র। অন্যদিকে অভ্রের কাজ আর কথা শুনে অবাক হয়ে বললো আদ্রিজা,

‘ কি এনেছেন আমার জন্য?’

‘ দাঁড়াও দিচ্ছি ওয়েট।’

বলেই ডান দিকের পকেটটায় খুঁজে না পেয়ে বাম দিকের পকেটটায় হাত দিলো অভ্র। কিছুক্ষনের মধ্যে পেয়েও গেল। একটা ছোট্ট কালো বক্সের মধ্যে একটা সুন্দর ডায়মন্ডের গলার লকেট কিনে এসেছে অভ্র আদ্রিজার জন্য। অভ্র বক্সটা বের করে সেটাকে খুলে দেখালো আদ্রিজাকে তারপর বললো,

‘ এটা তোমার জন্য, আমার তরফ থেকে ছোট্ট গিফট।’

আদ্রিজা অবাক হলো, চরম অবাক হলো। বিস্মিত কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ এসব কেন এনেছেন আপনি?’

‘ বারে তোমার বিয়েতে এসেছি গিফট না আনলে হয় না কি।’

‘ এটার তো অনেক দাম আমি এত বড় গিফট নিতে পারবো না।’

‘ তুমি দামটা দেখছো কেন গিফটটা দেখ আর গিফট দেওয়া মানুষটাকে।’

আদ্রিজা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো লকেটটার দিকে কিন্তু পরক্ষণেই এত দামী গিফট নিতে তাঁর মন সায় দিচ্ছে না। আদ্রিজা খানিকটা বিষন্ন ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ গিফটটা না নিলে আপনার কি খুব খারাপ লাগবে?’

উওরে অভ্র বললো,

‘ খারাপ তো লাগবেই। আমি কাল সারাদিন বসে কতগুলো জুয়েলারির দোকান ঘুরে এটা তোমার জন্য পছন্দ করে নিয়ে আসলাম এখন তুমি যদি এটা না নেও তাহলে খারাপ তো লাগবেই আমার।’

অভ্রের কথা শুনে আদ্রিজা কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। তাই চুপ রইলো সে। আদ্রিজাকে চুপ থাকতে দেখে অভ্র বলে উঠল আবার,

‘ কি হলো নিবে না গিফটটা? জানো তো কেউ ভালোবেসে কোনো কিছু দিলে সেটা নিতে হয়।’

আদ্রিজা এবার আর বেশি ভাবলো না খুশি মনেই অভ্রের হাত থেকে বক্সটা নিয়ে লকেটটা দেখে বললো,

‘ ধন্যবাদ। এটা খুব সুন্দর।’

উওরে অভ্র বললো,

‘ তোমার থেকে নয়।’

অভ্রের কথা শুনে হাসলো আদ্রিজা। তবে কিছু বললো না এরই মাঝে অভ্রের ফোনটা বেজে উঠল অভ্রও বেশি না ভেবে ফোনটা দেখে বললো আদ্রিজাকে,

‘ তুমি তবে থাকো আমি একটু আসছি।’

উওরে আদ্রিজাও বললো,

‘ ঠিক আছে।’

আদ্রিজার কথা শুনে অভ্রও আর বেশি না দাঁড়িয়ে ফোনটা তুলে ‘হ্যালো’ বলতে বলতে বেরিয়ে যেতে লাগলো আদ্রিজার রুম থেকে অফিস থেকে ফোন এসেছে তাঁর। অভ্র নিজেও জানে না আজ কেন এইভাবে অফিসের সব কাজ ফেলে রেখে আদ্রিজার বিয়ে দেখতে এসেছে সে। কাল থেকে মনটা খচখচ করছিল অভ্রের। সেদিনের আদ্রিজার তাঁকে বিয়েতে আসার কথাটা বার বার মনে পড়ছিল খুব। তাই তো মনটাকে আর সামলাতে না পেরে চলেই এলো আদ্রিজার বিয়ে দেখতে। কোথাও একটা খারাপ লাগা কাজ করছে অভ্রের মাঝে কিন্তু সেই খারাপ লাগাটা যে আসলে কি এটাই যেন বুঝচ্ছে না অভ্র। অতঃপর আর বেশি ভাবলো না অভ্র তক্ষৎনাত বেরিয়ে গেল সে আদ্রিজার রুম থেকে।’

অন্যদিকে আদ্রিজা তাকিয়ে রইলো অভ্রের দেওয়া গিফটটার দিকে। এটাকে সে ভাড়ি যত্নে রাখবে নিজের কাছে। কারণ অভ্রই একমাত্র ছেলে আদ্রিজার লাইফের যে কি না আদ্রিজার সুখের চেয়ে দুঃখের সময় পাশে ছিল বেশি। সবাই যেখানে তাঁকে নিয়ে হাসাহাসিতে ব্যস্ত তখন অভ্রই ছিল তাঁর একমাত্র ঘুরে দাঁড়ানোর অস্ত্র।
দোয়া রইলো,

‘ সবসময় ভালো থাকুক এই অভ্র নামক মানুষটা।’

মনে মনে ভাবলো আদ্রিজা।’

___

সময় গড়াচ্ছিল! ধীরে ধীরে বিয়ের সময়ও পার হয়ে যাচ্ছিল যেন। কিন্তু বরপক্ষদের আসার কোনো নামগন্ধই পাওয়া যাচ্ছিল না তেমন। চারপাশে নিস্তব্ধতা ধীরে ধীরে ঘিরে ধরছিল খুব, আদ্রিজার বাবাও চিন্তিত হচ্ছিল সেও বুঝতে পারছে না বরপক্ষরা এখনো আসছে না কেন?’

চারদিকে একটু একটু করে সমালোচনার পাহাড় তৈরি হচ্ছিল। আদ্রিজার বন্ধুমহলেরাও চিন্তায় পঞ্চমুখ হচ্ছিল ধীরে ধীরে। তাঁরাও বুঝচ্ছিল বরপক্ষরা এখনো আসছে না।’

সময় চলছিল, ঘড়ির কাটাও টিক টিক শব্দ করে বেড়ে চলছিল খুব। টেনশনে সবারই মাথায় হাত। এরই মাঝে আদ্রিজার বাবার ফোনটা বেজে উঠলো বরপক্ষরা ফোন করেছে তাঁকে। আদ্রিজার বাবা হাল্কা খুশি খুশি ভাব নিয়ে ফোনটা তুলে বললো,

‘ হ্যালো।’

এরই মাঝে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিদের কিছু কথা শুনে বুকে ব্যাথা উঠলেন ওনার। এমনিতেই এতক্ষণ টেনশনে বুকটা হাল্কা হাল্কা ধরেছিল তাঁর। হুট করেই আদ্রিজার বাবার চোখ মুখে বিষন্নতা ফুটে উঠতেই চিন্তিত মুখ নিয়ে এগিয়ে এলো আদ্রিজার মা। স্বামীকে ধরে বললেন উনি,

‘ কি হলো তোমার? কি বলেছে বরপক্ষরা?’

উওরে বুকে হাত দিয়েন বললেন আদ্রিজার বাবা,

‘ ওনাদের নাকি আমাদের মেয়েকে পছন্দ নয় তাই ওনারা আসবেন না। আদনান নাকি কাল রাতেই বাড়ি থেকে চলে গেছে আর ফেরে নি।’

সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবেশটাই ধমকে গেল ওখানেই। চারিদিকে সমালোচনার পাহাড় তৈরি হলো। এ কেমন কথা বিয়ের আগেই বর পালালো? নিশ্চয়ই আদ্রিজার কোনো খুদ আছে যার কারনে বর পালিয়েছে। না হলে খালি খালি বিয়ের দিনই বর পালাবে কেন? মেয়েটার কপাল গেল রে প্রথম বিয়েতেই এমন বাঁধা।’

এই রকম হাজারো কথা শোনা গেল সবার মুখে।’

নিজের রুমের খাটের ওপর বসে আছে আদ্রিজা টুকিটাকি বাহিরের খবরাখবর কানে আসছে তাঁর। আদনান নাকি তাঁকে বিয়ে করবে না বলে পালিয়েছে। বিয়ের আসরে যদি শোনা যায় কনেকে বিয়ে করবে না বলে বর পালিয়েছে তাহলে ঠিক কি রিয়েকশন দেওয়া উচিত আদ্রিজা জানে না। অনুভূতিটাও ঠিক কেমন হওয়ার উচিত এটাও বুঝতে পারছে না আদ্রিজা। কারন সে তো শুরু থেকেই অনুভূতিহীনভাবে বিয়েটা করছিল। এমন সময় বিছানার উপর থাকা ফোনটা বেজে উঠলো আদ্রিজার। আদ্রিজাও বেশি না ভেবে ফোনটা তুললো। ফোন তুলে কিছু বলার আগেই অপরপ্রান্তে থাকা শ্রাবণ বলে উঠল,

‘ তুমি এখনো আমার নাম্বারটা ব্লক কর নি আদ্রিজা?’

গলাটা চেনা চেনা লাগতেই সাথে এতদিন পর শ্রাবণের ভয়েসটা কানে আসতেই পুরো আঁতকে উঠলো আদ্রিজা। ফোনটা দেখলো একবার হ্যাঁ এটা শ্রাবণেরই নাম্বার। আদ্রিজা ব্লক করে নি নাম্বারটা আর শ্রাবণও সেদিনের পর আর ফোন করে নি আদ্রিজাকে। যার কারনে নাম্বার ব্লক করার কথাটা মাথাতেই আসে নি আদ্রিজার। আদ্রিজা পুনরায় ফোনটা কানে নিলো। এরই মাঝে শ্রাবণ বলে উঠল,

‘ শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে? অবশ্য বিয়েটা হলে তো। যাইহোক শুনলাম নাকি তোমার বর পালিয়েছে। জানো তোমার এই বর পালানোর পিছনে কার হাত আছে?’

আদ্রিজা বেশ অবাক হলো। চোখে মুখে স্পষ্ট বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠলো তাঁর। তবে কিছু বললো না। এরই মাঝে শ্রাবণ আবারও বলে উঠল আদ্রিজাকে,

‘ কি হলো কথা বলছো না কেন নাকি বর পালিয়েছে বলে কথা বলাই বন্ধ হয়ে গেছে তোমার। আরে আদনান তোর হবু বউ দেখি বোবা হয়ে গেল।’


ঢাকা থেকে বেশ খানিকটা দূরে একটা ব্রিজের সামনে গাড়ি থামিয়ে ফোনে কথা বলছিল শ্রাবণ আর তাঁর সামনেই গাড়ির ওপর বসেছিল আদনান। শ্রাবণের কথা শুনে আদনান গাড়ি থেকে নামলো। তারপর বললো,

‘ কি বলিস শেষে কি না একটা বোবা মেয়েকে বিয়ে করতে গেছিলাম আমি। ভাগ্যিস বিয়ের আগে পালিয়েছিলাম না হলে তো সারাজীবন কষ্ট করতে হতো আমায়।’

বলেই আদনান, শ্রাবণ দুজনেই একসাথে উচ্চ স্বরে হেঁসে দিলো। অন্যদিকে,

ফোনের এপাশে আদ্রিজা পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার মানে এই বর পালানো তাকে দেখতে আসা সবটাই শ্রাবণের প্লান ছিল। এতক্ষণ পর আদ্রিজা মুখ খুললো নিস্তব্ধ হয়ে বললো,

‘ তাঁর মানে এগুলো সব আপনি করেছেন শ্রাবণ?’

এতক্ষণ পর আদ্রিজার কথা শুনতেই হাসতে হাসতে বলে উঠল শ্রাবণ,

‘ তাহলে আবার কে।’

‘ এমন কেন করলেন শ্রাবণ?’

মুহূর্তের মধ্যে চেহারার অঙ্গ ভঙ্গ পাল্টে গেল শ্রাবণের কাট কাট গলায় বললো,

‘ তুমি ভার্সিটিতে সবার সামনে আমায় থাপ্পড় মেরেছো আমার এতদিনের রেপুটেশন সব খারাপ করেছো। তোমায় এত তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেই কি করে। শ্রাবণের গালে থাপ্পড় মারার ফল কেমন হয় এবার তুমি দেখবে মিস আদ্রিজা। শুনেছি তোমার বাবা নাকি হার্টের অসুখ আছে। একবার ভাবো তোমার বিয়ে, এত লোকজন, আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী, চারিদিকে সমালোচনার পাহাড় এই লোক এটা বলছে তোমায় ওই লোক ওটা বলছে। তোমার বাবার মান সম্মান রেপুটেশন সব যাবে। সবাই ভাববে তোমার মাঝেই এমন কোনো খুদ ছিল যার দরুন এমন হয়েছে। তাছাড়া যদি কেউ এটা জানে তোমার প্রাক্তন প্রেমিকই তোমার বিয়েতে বাগরা দেওয়ার জন্য এমনটা করেছে কেমন হবে বলো তো। একমাত্র মেয়ে তুমি আঘাতটা যেন একটু বেশি লাগবে আদ্রিজা।’

আদ্রিজার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। সেদিনের থাপ্পড়ের প্রতিশোধ হিসেবে যে এমন বাজে একটা কাজ করবে শ্রাবণ এটা ভাবতেই পারে নি আদ্রিজা। আদ্রিজার ভাবতেও লজ্জা লাগছে এমন খারাপ আর বাজে একটা ছেলেকে সে ভালোবেসেছিল। আদ্রিজা ফোন কেটে দিল। কি করবে না করবে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর।’

অন্যদিকে,

আদ্রিজা ফোন কাটতেই শ্রাবণ বলে উঠল,

‘ যা ফোনটা কেটে দিল।’

পরক্ষণেই আদনান আর শ্রাবণ দুজনেই হাতে তালি দিয়ে হেঁসে দিলো। আদনান হলো শ্রাবণের এক পুরনো ফ্রেন্ড ভার্সিটি আলাদা হওয়ায় তেমন একটা কেউ চিনে না তাঁকে। সেদিন যখন আদ্রিজার হাতে থাপ্পড় খেয়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়েছিল শ্রাবণ তখন রাস্তায় আদনানের সাথে দেখা হয় তাঁর। আর তখনই শ্রাবণ সব বলে তাঁকে আর সব শুনে আদনানই এমন যঘন্য প্লানের কথা বলে তাঁকে। পর পর কথাগুলো শ্রাবণ হেঁসে বলে উঠল,

‘ থ্যাংক ইউ দোস্ত।’

‘ ম্যানশন নট।’

প্রতি উওরে আদনানকে কিছু না বলে উঠল শ্রাবণ,

‘ এবার বুঝো মিস আদ্রিজা শ্রাবণকে থাপ্পড় মারার ফল কতটা কঠিন হয়।’

___

‘বর আসবে না’ কথাটা চারিধারে পুরো ভনভন করছে। আর এই ভনভনের মাঝেই স্তব্ধ হয়ে বসে ছিল আদ্রিজা। এমন সময় কাঁদতে কাঁদতে আদ্রিজার রুমে দৌড়ে আসলো আদ্রিজা মা। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন উনি,

‘ তোর কপালটা গেল রে আদ্রিজা, আদনানরা নাকি আসবে না। চারপাশের মানুষ সব তোকেই খারাপ বলছে, তোর বাবাও ভেঙে পড়েছে খুব এখন কি হবে তোর। তোকে কে বিয়ে করবে?’ আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেল রে আদ্রিজা।’

মায়ের কথা শুনে আদ্রিজাও কাঁদছে। আজ তাঁর জন্যই এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো। সেদিন যদি সে রেগে গিয়ে শ্রাবণকে থাপ্পড় না মারতো তাহলে হয়তো আজ এমন কিছুই হতো না। তাঁর জন্যই তাঁর বাবার সম্মান নিয়ে এখন টানাটানি হচ্ছে। কি করবে আদ্রিজা, চারদিকের মানুষের এত সমালোচনা সহ্য করবে কি করে?’

এমন সময় দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল অভ্রের মা,

‘ কিছু হবে না আদ্রিজার কারন এই বিয়ে হবে।’

#চলবে….

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৮
________________

হুট করেই অভ্রের মায়ের মুখে অর্থহীন কিছু কথা শুনে আদ্রিজা সাথে আদ্রিজার মাও বেশ অবাক হয়ে তাকালো অভ্রের মায়ের মুখের দিকে। আদ্রিজার মাই প্রশ্ন ছুঁড়ে বসলো অভ্রের মাকে। বললেন উনি,

‘ মানে কি বলতে চাইছেন ভাবি?’

উওরে অভ্রের মা এগিয়ে এসে বললো আদ্রিজার মাকে,

‘ আমি এটাই বলতে চাইছি আজ এই বিয়ের আসরেই বিয়ে হবে আদ্রিজার।’

‘ কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? আদনানরা তো আসবে না বললো,

‘ আদনান আসবে না তো কি হয়েছে আমার ছেলে অভ্র আছে তো।’

সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজার চোখমুখে আরো বিস্ময়ের ছাপ ফুটে উঠলো এসব কি বলছে আন্টি। না না এটা হতে দেওয়া যাবে না। যত যাই হোক আদ্রিজা কখনোই অভ্রকে বিয়ে করতে পারে না। এর দুটো কারন এক সে কিছুতেই অভ্রের জীবন নষ্ট করতে পারবে না আর তাছাড়া অভ্র তো লাবণ্যকে ভালোবাসে। না না সে যা ভাবছে তা যেন না হয়। আদ্রিজা কিছু বলতে নিবে। এরই মাঝে অাদ্রিজার হাতটা ধরে বসলো আদ্রিজার মা। আদ্রিজাকে চুপ করিয়ে দিয়ে অভ্রের মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন উনি,

‘ আপনি কি বলতে চাইছেন ভাবি?’

উওরে অভ্রের মা খানিকটা হতাশ হয়ে বললো,

‘ আমি কি বলতে চাইছি আপনি এখনও বুঝছেন না ভাবি। আমার ছেলে অভ্রকে দেখেছেন তো আপনি আরুর ভাই। পড়াশোনা কমপ্লিট করে বর্তমানে বাবার অফিস সামলাচ্ছে। আমি মনে মনে অনেক আগে থেকেই আদ্রিজাকে পছন্দ করেছিলাম অভ্রের জন্য। কিন্তু আপনাদের কিছু বলার আগেই আদ্রিজার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল তাই আর কিছু বলতে পারি নি। কিন্তু এখন যেন মনে হচ্ছে এটাই মুখ্য সময় আপনাদের কথাটা বলার। আমি আমার ছেলে অভ্রের জন্য আপনার মেয়ে আদ্রিজাকে চাইছি। আমি ওকে আমার ঘরের বউ বানাতে চাই।’

সঙ্গে সঙ্গে পুরো স্তব্ধ হয়ে গেল আদ্রিজা। যেটা ভেবে ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো। আদ্রিজা ভাবলো এভাবে চুপ থাকা যাবে না। তাঁকে মুখ খুলতেই হবে। আদ্রিজা অভ্রের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলতে নিলো,

‘ আন্টি,,,

সঙ্গে সঙ্গে আদ্রিজার হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো আদ্রিজার মা। এতে আদ্রিজা অসহায় দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। এরই মাঝে অাদ্রিজা মা আবারও বলে উঠল অভ্রের মাকে,

‘ কিন্তু আপনার ছেলে রাজি হবে কি?’

‘ ওসব নিয়ে আপনি ভাববেন না আপনি শুধু আদ্রিজার বাবার সাথে কথা বলুন আমি আসছি।’

বলেই একটা খুশি খুশি ভাব নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল অভ্রের মা। আদ্রিজাকে শুরু থেকেই অভ্রের মায়ের ভীষণ পছন্দ ছিল, মেয়েটার চলাফেলা, কথা বলার ধরন, শান্ত স্বভাব সবকিছুই পছন্দ ছিল অভ্রের মায়ের। সে মনে মনে ভেবেছিল অভ্রের জন্য আদ্রিজাকে তাদের বাবা মার কাছে চাইবে অভ্রের মা। কিন্তু কোনো কিছু বলার আগেই আদ্রিজার বিয়েটা হুট করেই শুরু হয়ে গেল যে অভ্রের মা চেয়েও কিছু করতে পারলো না। কিন্তু এখন যখন একটা সুযোগ এসেছে তখন আর বেশি ভাবলো না আদ্রিজার মা। নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চললো অভ্রের মা অভ্রকে খুঁজতে। ছেলেটাকে অনেকক্ষণ যাবৎই চোখে পড়ছে না তাঁর।’

এদিকে,

অভ্রের মা বের হতেই আদ্রিজা তাঁর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি এই বিয়েতে রাজি কেন হলে মা?’

‘ তাহলে আর উপায় কি ছিল বল,

‘ তাই বলে তুমি। আমি তোমায় একটা কথা বলে দিচ্ছি আমি আরুর ভাইকে কিছুতেই বিয়ে করবো না। শুরুতেও তোমরা আমায় না জিজ্ঞেস করে আদনানদের বিয়েতে রাজি হয়েছিলে। আমি কিছু বলে নি কিন্তু এখন আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না মা।’

‘ এভাবে বলিস না তোর বাবার সম্মানটা জড়িয়ে আছে এমনিতেই মান সম্মান সব তো চলে যাওয়ার উপক্রম।’

‘ তুমি যত যাই বলো আমি এই বিয়ে করছি না মানে করছি না আমি এক্ষুনি অান্টিকে গিয়ে সব বলছি।’

বলেই আদ্রিজা রুম থেকে বের হতে নিবে এরই মাঝে আদ্রিজার পথ আটকালো আদ্রিজার মা। বললেন উনি,

‘ তুই এখন কোথাও যেতে পারবি না। আচ্ছা আগে তো এটা জানি অভ্র এই বিয়েতে রাজি কি না তারপর না হয় বাকিটা দেখা যাবে।’

মায়ের কথায় চরম বিরক্ত হলো আদ্রিজা। তবে মনে মনে সে ভেবেই নিয়ে অভ্র কিছুতেই এই বিয়েতে রাজি হবেন না সে অভ্রের মা যতই বলুক, অভ্র লাবণ্য আপুকে ছেড়ে কিছুতেই তাঁকে বিয়ে করতে পারবে না।’

____

‘ আদ্রিজাকে বিয়ে করবি বাবা?’

হুট করেই মায়ের মুখে এমন ভয়ানক কথা শুনে পুরোই চমকে উঠলো অভ্র। খানিকক্ষণ আগেই জেনেছে অভ্র আদ্রিজার যার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল সে নাকি আসবে না। অভ্র একটু বাড়ির বাহিরে গিয়েছিল ফোনে কথা বলতে আর ওইটুকু সময়ের মধ্যে যে এতকিছু ঘটে গেছে এটা বুঝতেই পারি নি অভ্র। পরমুহূর্তেই মায়ের ডাক শুনে অভ্র এগিয়ে আসে, অভ্র ভেবেছিল বিয়েটা হবে না বলে তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য হয়তো ডাকছে অভ্রের মা। কিন্তু মা যে ফাঁকা রুমে নিয়ে এসে এমন ভয়ানক একটা কথা বলবে এটা কল্পনাও করতে পারে নি অভ্র। পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো সে মায়ের মুখের দিকে। অভ্রকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবারও বলে উঠল অভ্রের মা,

‘ কি হলো অভ্র তুই কথা বলছিস না কেন? মেয়েটাকে বিয়ে করে নে না মেয়েটা খুব ভালো।’

অভ্র মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় এটাই বলে,

‘ তোমার মাথা ঠিক আছে মা তুমি এসব কি বলছো।’

‘ আমার মাথা ঠিকই আছে অভ্র করে নে আদ্রিজাকে বিয়ে?’

‘ এটা সম্ভব না মা।’

বলেই মায়ের থেকে ঘুরে উল্টোদিকে তাকালো অভ্র। ছেলের কাজে অভ্রের মাও ঘুরে এসে অভ্রের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,

‘ কেন সম্ভব নয় অভ্র। আদ্রিজা যথেষ্ট ভালো মেয়ে। ওকে বিয়ে করলে তুই সুখী হবি দেখিস।’

‘ আমি জানি মা আদ্রিজা ভীষণ ভালো মেয়ে কিন্তু এটা ভালো মন্দের প্রশ্ন নয় মা সারাজীবনের প্রশ্ন। আর তাছাড়া আমি লা…

অভ্র আরও কিছু বলবে এরই মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আরু বড্ড মন খারাপ আর কান্না ভেজা কন্ঠ নিয়ে বললো সে,

‘ বিয়েটা করে নেও না ভাইয়া? আদ্রিজাকে বাহিরের মানুষজন খুব খারাপ বলছে তুমি বিয়েটা করে নিলে আর কোনো সমস্যা হতো না।’

বোনের কথায় অসহায় দৃষ্টিতে আরুর দিকে তাকিয়ে বললো অভ্র,

‘ আরু তুইও?’

ভাইয়ের কথা শুনে আরু এগিয়ে আসলো অভ্রের দিকে সে জানে সে যেটা বলছে সেটা ঠিক নয়। কারন আরু তো জানে অভ্র লাবণ্যকে কতটা ভালোবাসে। কিন্তু পরিস্থিতিটাই এমন যে আরুর না চেয়েও মায়ের আবদারে সায় দিচ্ছে। বোনের মতো বেস্টফ্রেন্ডটাকে এত এত বাজে সমালোচনা হচ্ছে যে আরুর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। তাই ভাইকে বলতে এলো সে। আরু অভ্রের হাত ধরে বললো,

‘ আদ্রিজা খুব ভালো ভাইয়া, সহজ সরল ওকে নিয়ে মানুষের সমালোচনা যে সহ্য হচ্ছে না আমার। তুমি বিয়েটা করে নেও না ভাইয়া।’

বোনের কথা শুনে অসহায় দৃষ্টিতে একবার আরু আর একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো অভ্র,

‘ কিন্তু আরু, মা তোমরা কেন বুঝতে পারছো না এই বিয়েটা হয়ে গেলে আমি আদ্রিজা কেউই সুখী হতে পারবো না।’

উওরে অভ্রের মা বললো,

‘ কেন সুখী হবি না আদ্রিজা খুব ভালো তোকে খুব যত্নে রাখবে দেখিস।’

‘ তোমারে আমি কিভাবে বুঝাই? আমি আদ্রিজাকে কেন বিয়ে করতে পারবো না।’

ছেলের কথা শুনে অভ্রের মাও বললো,

‘ তাঁর মানে তুই এই বিয়েটা করবি না অভ্র।’

উওরে অভ্রের স্ট্রিট জবাব,

‘ না।’

সঙ্গে সঙ্গে হতাশ হলো অভ্রের মা। আর আরুও হতাশ তবে এবার আর ভাইকে জোর করলো না হয়তো সত্যি ভাইয়ের উপর আদ্রিজাকে চাপিয়ে দেওয়াটা ঠিক হবে না। আরু আর বেশি ভাবলো না তক্ষৎনাত রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আরুকে বেরিয়ে যেতে দেখে অভ্র হতাশ হলো। আর আদ্রিজার মা বললো,

‘ তোর কাছে একটা মেয়ের মান সম্মান চলে যাওয়ার কোনো দাম নেই অভ্র। এতটা মনুষ্যত্বহীন কি করে হলি তুই। আজ বিয়েটা না হলে আদ্রিজা যদি ভুলভাল কিছু করে ফেলে তখন কি হবে বুঝতে পারছিস।’

‘ তুমি আমায় ইমোশনালি ব্ল্যাকমেল করছো মা।’

আরো হতাশ হলো অভ্রের মা। তবে কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল অভ্রের মা আর অভ্র স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ। কাজটা ঠিক করছে কি? কিন্তু বিয়েটা হলে আরো বেঠিক হতো তো। যতই হোক সে তো আদ্রিজাকে ভালোবাসে না, ভালো তো বাসে লাবণ্যকে।’

অভ্র রুম থেকে বের হলো। বাহিরে এখনও নানা মানুষের আনাগোনা অনেক। প্রায় সবাই এটা ওটা নিয়ে কথা শোনাচ্ছে আদ্রিজার বাবাকে। আদ্রিজার বাবা অসহায় অবস্থায় চুপচাপ শুধু শুনছে লোকেদের কথা। আচ্ছা সত্যি কি সে যদি আদ্রিজাকে বিয়ে করে নেয় তাহলে কি এই লোকদের বাজে মন্তব্য করা শেষ হবে। কেউ কিছুই বলবে না আর। অভ্রের চোখের সামনে আদ্রিজার কান্না ভেজা মুখটা ভেসে আসছে বার বার। সত্যি সত্যিই যদি মায়ের কথা মতো আদ্রিজা না না এসব কি ভাবছে অভ্র? আদ্রিজা সহজ সরল হয়েও সহ্যের দিক থেকে যথেষ্ট স্ট্রং। অভ্র তাঁর চোখ বন্ধ করে ফেললো, চোখ বন্ধ করতেই আবারও আদ্রিজার মুখটা ভেসে আসছে সামনে। অভ্র বুঝচ্ছে না এই মুহূর্তে তাঁর ঠিক কি করা উচিত। অভ্র বুঝে না তাঁর সামনে আদ্রিজার ফেসটাই কেন ভেসে আসছে বার বার। হঠাৎই আনমনে ভাবলো অভ্র,

‘ তবে কি তুমিই আমার নিয়তিতে ছিলে মিস ব্ল্যাকবেরি?’

___

বেশ খানিকক্ষন যাবৎই মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা। এখন বেশ বিরক্ত লাগছে না তাঁর। সেই কখন থেকে সেইম ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে সে। নিজেও যাচ্ছে না আর তাঁকেও বের হতে দিচ্ছে না। ওদিকে অভ্র কি বললো সেটাও জানে না আদ্রিজা। তবে আদ্রিজা মনে মনে চায়, খুব করে চায় অভ্র যেন কিছুতেই বিয়েতে রাজি না হয়। যদিও সে ভেবে নিয়েছে অভ্র নাই বলে দিয়েছে তাঁর মাকে। এরই মাঝে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো অভ্রের মা। খানিকটা চোখে মুখে হতাশাই দেখা গেল তাঁর। অভ্রের মাকে দেখেই আদ্রিজার মা এগিয়ে গেল অভ্রের মায়ের দিকে তারপর বললো,

‘ কি বললো অভ্র ভাবি, ও কি বিয়ে করতে রাজি আমার মেয়েকে?’

অভ্রের মা চুপ। অভ্রের মাকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো আদ্রিজার মা,

‘ কি হলো আপনি কথা বলছেন না কেন? অভ্র রাজি নয় বিয়েতে,

আদ্রিজার মায়ের কথা শুনে হতাশ দৃষ্টিতে তাকালো অভ্রের মা। তারপর বলতে নিলো,

‘ আসলে অভ্র,,

অভ্রের মা আর কিছু বলার আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে উঠল অভ্র,

‘ আমি রাজি এই বিয়েতে।’

#চলবে……