গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-৪৯+৫০

0
366

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৪৯
________________

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা শ্রাবণের মুখের দিকে। সে ভাবতেও পারে নি এই মুহূর্তে শ্রাবণের সাথে দেখা হয়ে যাবে বা শ্রাবণ তাঁকে ডাকবে। আদ্রিজা একপলক শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে তক্ষৎনাত চলে যেতে নিলো যতই হোক শ্রাবণকে সে ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই করে না। আদ্রিজাকে যেতে দেখে আহত হলো শ্রাবণ, পরক্ষণেই আদ্রিজার সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

‘ একবার সরি বলারও সুযোগ কি দিবে না আমায়?’

‘সরি’ শব্দটা শুনতেই যেন পুরো দমে চমকে উঠলো আদ্রিজা। হাঁটা থামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ওখানেই। আদ্রিজাকে দাঁড়াতে দেখে শ্রাবণও খানিকটা খুশি হয়ে হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো আদ্রিজার মুখোমুখি। তারপর বললো,

‘ আমি তোমায় কিছু বলতে চাই আদ্রিজা?’

আদ্রিজা শুনলো শ্রাবণের কথা। সাথে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে নীরব কন্ঠে বললো,

‘ আমার সাথে এই মুহূর্তে আপনার কি কথা থাকতে পারে শ্রাবণ? আপনার মনে হয় না আপনার আমার কথা বলার সময় আরো আগেই শেষ হয়ে গেছে।’

শ্রাবণ আহত দৃষ্টিতে তাকালো আদ্রিজার মুখের দিকে তারপর বললো,

‘ আমি জানি আদ্রিজা আমি যেটা করেছি সেটা হয়তো আমার করা উচিত হয় নি। আই এম সরি।’

হাসলো আদ্রিজা। বললো,

‘ সরি, আপনার মনে হয় না আপনি খুব দেরি করে ফেলেছেন এই সরি শব্দটা উচ্চারন করতে।’

শ্রাবণ ভেবে পায় না কি বলবে এখন। শ্রাবণের ভাবনার মাঝেই আবারও বলে উঠল আদ্রিজা,

‘ যাক গে ওসব বাদ দিন আগে বলুন তো হুট করে সরি শব্দটা কেন উচ্চারন করলেন। হঠাৎ কি হলো আপনার?’

আদ্রিজার কথা শুনে খানিকটা উত্তেজিত কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল শ্রাবণ,

‘ আমি আমার ভুলটা বুঝতে পেরেছি আদ্রিজা, আসলে তুমি আমায় ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকেই বুঝতে পেরেছি আমি, আমি নিজ অজান্তেই তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম। সেদিন রাতে তোমার সাথে ওই অভ্র ছেলেটাকে চা খেতে দেখে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে পারি নি। আমি বুঝতে পারি নি আমি জ্বেলাস ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম আমি এমনি রেগে ছিলাম আর সেই রাগ থেকে আদনানের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করলাম আসলে আমি ভেবেছিলাম আদনানের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করে আদনান যখন যাবে না বিয়ে করতে তখন তোমার চরিত্র নিয়ে খানিকটা কথা উঠবে। লোকে তোমায় এটা ওটা বলবে এতটুকুই চেয়েছিলাম। কিন্তু মাঝখান দিয়ে যে তোমার সাথে অভ্রের বিয়ে হয়ে যাবে এটা আমি ভাবতে পারি নি। পরে আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পেরেছি আমি ভুল করেছি কারন আমি তোমার সাথে ভালোবাসার অভিনয় করলেও তুমি তো করো নি। আমি মন থেকে তোমায় সরি বলতে এসেছি আমায় কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না আদ্রিজা,

আদ্রিজা চুপ রইলো, নিশ্চুপে শ্রাবণের কথাগুলো শুনে শুঁকনো হেঁসে বলে উঠল সে,

‘ আপনার মনে হয় না আপনি খুব বেশি বেশি বলে ফেলছেন আর ভুলে কেন যাচ্ছেন আমি এখন বিবাহিত। আর কিসের সুযোগ চাইছেন আপনি?’ শুনুন ভেঙে যাওয়া হৃদয় কখনো জোড়া লাগে না। আর এখন যে পরিস্থিতি তাতে কোনোদিন আর জোড়া লাগবেও না। যাইহোক ভালো থাকবেন।’

‘ আমায় কি ক্ষমা করবে না আদ্রিজা?’

‘ ক্ষমা। কতজনের কাছে ক্ষমা চাইবেন আপনি না জানি আমার মতো কতশত মেয়ের ভালোবাসা নিয়ে খেলেছেন আপনি। আপনাকে মেরে ফেললেও হয়তো আপনার ভুলের শোধ তোলা হবে না। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে আমায় যেতে দিন। আর হা পারলে শুধরে যান, মেয়েদের ভালোবাসা নিয়ে খেইলেন না। একজনকেই ভালোবাসুন আর একজন নিয়েই সুখী থাকুন।’

বলেই আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না আদ্রিজা। তক্ষৎনাত চলে আসলো শ্রাবণকে পাশ কাটিয়ে। আর শ্রাবণ স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আদ্রিজার যাওয়ার পানে। হয়তো সত্যি বড্ড ভুল হয়ে গেছে তাঁর। জীবনের কিছু ভুলে মাসুল হয়তো সারাজীবনই দিতে হয়। কিছু ভুলের বার বার ক্ষমা চাইলেও শুধরে নেওয়া যায় না।’

‘ মাঝে মানুষের ভুলে শাস্তিসরূপ হিসেবে মারা বা মেরে ফেলার চেয়েও ভয়ংকর শাস্তি হলো নিশ্চুপ থাকা। মাঝে মাঝে নিশ্চুপ থাকার যন্ত্রটাও একটা মানুষকে ভয়ংকর ভাবে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।’

___

‘ আমার চিঠিটা একবার পড়ে কেন দেখলি না অভ্র?’

বুক ভরা চাপা কষ্টটাকে দমিয়ে রেখে কথাটা বলে উঠল লাবণ্য অভ্রকে। আর লাবণ্যের কথা শুনে খানিকটা হতাশা ভরা গলাতেই বলে উঠল অভ্র,

‘ আই এম সরি। আমার সত্যি মনে নেই তোর চিঠিটার কথা। আসলে হুট করেই জীবনে এতকিছু ঘটে গেল যে আমার সত্যি তোর চিঠিটার কথা মনে ছিল না।’

লাবণ্য আরো হতাশ হয়ে শুঁকনো কন্ঠে বললো,

‘ আমি কি তোর জীবনের সত্যি কোনো ইমপোর্টেন্স জিনিস ছিলাম না অভ্র?’

লাবণ্যের কথাগুলো আজ যেন কেমন একটু লাগছে অভ্রের কাছে। অভ্র বিস্মিত কন্ঠে বললো,

‘ তোর কি কিছু হয়েছে তোর কন্ঠটা এমন কেন লাগছে লাবণ্য?’

তক্ষৎনাত উল্টোদিক ঘুরলো লাবণ্য। চোখের পানি আর ধরে রাখা যাচ্ছে না তাঁর। লাবন্য উল্টোদিক ঘুরে তাঁর চোখের পানিটা মুছে নিলো তারপর বললো,

‘ না কিছু হয় নি তো।’

‘ তুই খুব রাগ করেছিস তাই না। সত্যি সরি দোস্ত মন থেকে সরি। তুই দাঁড়া আমি এক্ষুনি তোর চিঠিটা পড়ছি।’

বলেই নিজের টেবিলটার দিকে এগিয়ে গেল অভ্র। লাবণ্য চেয়েও আটকাতে পারে নি। গলা দিয়ে কেমন যেন স্বরই বের হতে চাইছে না আর। অভ্র ড্রয়ার খুলে লাবণ্যের চিঠিটা বের করলো। খুলে পড়তে যাবে এরই মাঝে লাবন্য এগিয়ে গিয়ে ছোঁ মেরে সেটা নিয়ে নিলো তারপর বললো,

‘ এটা আর তোকে পড়তে হবে না।’

আকস্মিক লাবণ্যের এমন কান্ডে চমকে উঠলো অভ্র। পাল্টা কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে লাবন্য বলে উঠল,

‘ আমায় কোনোদিনও ভালোবেসে ছিলি অভ্র?’

লাবন্যের কথাটা যেন ঝড়ের গতিতে ছুটে এলো অভ্রের কাছে তক্ষৎনাত চমকে উঠলো সে। এখন কি বলবে সে। অভ্রকে ভাবতে দেখে লাবণ্য আবারও বলে উঠল,

‘ আদ্রিজাকে ভালোবাসিস অভ্র? তোরা বিয়ে করে সুখী তো দুজন।’

অভ্র ভরাট চোখে তাকালো লাবণ্যের মুখের দিকে। কেমন যেন লাবণ্যের এক একটা প্রশ্নে অপ্রস্তুত ফিল করছে সে। অভ্র খানিকটা ভড়কানো গলায় বললো,

‘ আচমকা এসব প্রশ্ন কেন করছিল লাবণ্য?’

‘ তুই কি বুঝতে পারছিস না আমি এসব প্রশ্ন কেন করছি অভ্র?”

‘ আমি সত্যি বুঝতে পারছি না তুই কি বলতে চাইছিস।’

‘ কেন বুঝতে পারছিস না তুই। আমি তোকে ভালোবাসি অভ্র। সেই কলেজ লাইফ থেকে ভালোবেসে আসছি তোকে। তুই কি একটিবারও এই জিনিসটা বুঝতে পারিস নি কি করে এইভাবে হুট করে বিয়ে করে নিলি।’

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়লো লাবণ্য। নিজেকে আর সামলাতে পারলো না সে। আর অভ্র স্তব্ধ হয়ে বসে পড়লো সামনের চেয়ারে। এসব কি বললো লাবণ্য? লাবণ্য ভালোবাসে তাঁকে। এই কথাটা শোনার জন্য একটা সময় কতটা ব্যাকুল ছিল অভ্র। কিন্তু আজ যখন সেই কথাটা শুনলো তখন কেন কোনো ভালো লাগার অনুভূতিটা কাজ করছে না অভ্রের মাঝে। উল্টো আরো খারাপ লাগা কাজ করছে গভীরভাবে।’

লাবণ্য তাঁর কান্না থামিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও বলতে লাগলো,

‘ এই চিঠিটায় আমি আমার ভালোবাসার কথাটাই লিখেছিলাম অভ্র। কিন্তু তুই তো পড়েই দেখলি না। আসলে আমি ভেবেছিলাম তুইও হয়তো আমার মতো আমায় ভালোবাসিস। কিন্তু আজ আমি বুঝতে পারছি তুই আমায় কখনো ভালোবাসিস নি। কারন তুই যদি আমায় এক মুহূর্তের জন্যও ভালোবাসতিস তাহলে আদ্রিজাকে বিয়েটা করতি না। আমি জানি তুই কোন পরিস্থিতিতে পড়ে বিয়েটা করতে রাজি হয়ে ছিলি। কিন্তু আমি যতই পরিস্থিতির দোহাই দেই না কেন তুই আমায় সত্যিকার অর্থে ভালোবাসলে কোনো পরিস্থিতি কোনো কিছুর সাথে ম্যাটার করে না। তুই ভাবিস না আমি তোর আর আদ্রিজার গল্পের ভিলেন হতে এসেছি। তবে তুই যদি আদ্রিজার সাথে সত্যি সুখী না হোস তাহলে হয়তো,

বলেও থেমে গেল লাবণ্য আর কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাঁর।’

এদিকে অভ্র ভাবছে, গভীর ভাবনায় মগ্ন হচ্ছে সে। এই প্রশ্নের উত্তর তো আছে তাঁর কাছে। কারন কতক্ষণ আগেও তো অভ্র আদ্রিজাকে ভালোবাসি কথাটা বলতে নিয়েছিল। আর আদ্রিজাকে যেহেতু সে ভালোবাসে তাহলে লাবন্যকে নিশ্চয়ই কোনোদিন ভালোবাসে নি সে, এতদিন ভালো লাগাকেই ভালোবাসা ভেবে ভুল বুঝেছিল অভ্র।’

অভ্র তাকালো লাবণ্যের চোখের দিকে, মেয়েটা আজ বড্ডই অগোছালো। অভ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সামনের পানি ভর্তি কাঁচের গ্লাসটা হাতে নিলো সে। তারপর এগিয়ে গেল লাবন্যের দিকে। তারপর বললো,

‘ এটা খা,,

লাবন্য তাকালো অভ্রের মুখের দিকে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে তক্ষৎনাত চোখ সরিয়ে অভ্রের হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিলো সে। ঢকঢক করে পানিও খেল সবটা। অভ্র লাবণ্যের হাত ধরে বসিয়ে দিল সামনের চেয়ারে। তারপর বললো,

‘ লান্স নিশ্চয়ই করিস নি আশ একসাথে খাবো, আদ্রিজার জন্য এনেছিলাম ঠিকই তবে তুই যখন এসেছিস আর ও যখন চলে গেছে তখন না হয় তুই আমি মিলেই লান্সটা সেরে নেই।’

উওরে লাবণ্য কিছু বলবে তাঁর আগেই অভ্র বলে উঠল,

‘ উম! আপাতত খাবার ছাড়া অন্য কোনো টপিক নিয়ে কথা হবে না। আগে খাওয়া শেষ করি তারপর বাকি কথা।’

অভ্রের কথা শুনে লাবণ্যও আর কিছু বলতে পারলো না। চুপচাপ বসে রইলো চেয়ারে। অভ্র লাবণ্যকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসে পড়লো নিজের চেয়ারে। তারপর অভ্র নিজেই খাবার পরিবেশন করে দিতে লাগলো লাবণ্যকে। লাবণ্য শুধু তাকিয়ে রইলো অভ্রের মুখের দিকে।’

‘ অভ্রের বিয়ে হয়ে গেছে জিনিসটা যেন এখনও মেনে নিতে পারছে না লাবন্য!’

___

খানিকটা বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে নিজের কাঁধের ব্যাগটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো আরু। চরমভাবে বিরক্ত সে, আর এই বিরক্তির একমাত্র কারন হলো আশিক। আজ কতদিন পর, আরু ভেবেছিল আশিকের সাথে দেখা হবে কিন্তু আশিকের বাচ্চা আজও ভার্সিটি আসে নি। সেই সিলেট থেকে ফেরার পর থেকে এখন পর্যন্ত আশিকের সাথে আরুর দেখা হয় নি। কারন আশিক কোথাও একটা গেছে কোথায় গেছে তা নাকি ওর বাবা মাও জানে না। ফোন করলে তাও বন্ধ। সেই সিলেট বসে যে একটুখানি কথা হয়েছিল ওতটুকই। এর মাঝে আর না দেখা হয়েছে না কথা হয়েছে। আরু ভেবেছিল আজ হয়তো আশিক ভার্সিটি আসবে তাই আজ আদ্রিজা ভার্সিটি যেতে না চাইলেও সে গিয়েছিল কিন্তু লাভটা কি হলো সেই তো আশিক গেলো না।

‘ একবার আশিকের সাথে দেখা হোক ওর এই নিরুদ্দেশ হওয়া হারে হারে বার করছি আমি?’

অস্থিরতায় মাথা কাজ করছে না আরুর।’

‘ এইভাবে নিরুদ্দেশ হওয়া কি খুব দরকার ছিল। তুই কোথায় আছিস আশিক প্লিজ সামনে আয়। আমার যে তোকে ছাড়া ভালো লাগছে না।’

বলতে বলতে বিরক্ত নিয়ে বসে পড়লো আরু বিছানায়। ভীষণ জোরে কান্না পাচ্ছে তাঁর। আরু নিজেও বুঝতে পারছে না এতটা খারাপ কেন লাগছে তাঁর।’

___

রাত ৯ঃ০০টা,

খানিকটা খুশি মাখা মুখ নিয়ে বাড়ি ফিরলো অভ্র। এক অদ্ভুত ভালো লাগা আর প্রশান্তিতা কাজ করছে তার মাঝে। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে তাঁর জীবনটাকে সবদিক দিয়ে একদম ঠিকঠাক মনে হচ্ছে। অবশেষে যেন নিজের মনটাকে বুঝতে পারলো অভ্র। তাঁর নিয়তিই যে তাঁর জন্য সঠিক ছিল এটা বুঝতে পেরে আনমনেই মুচকি হাসলো অভ্র। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো অভ্র এবার আদ্রিজাকে তাঁর মনের কথাটা বলে দিতে পারলেই সব একদম পারফেক্ট।’

ভেবেই বাড়ির ভিতর ঢুকলো অভ্র, আশেপাশে তাকালো সে। সচরাচর এইসময় আদ্রিজা রান্নাঘরে থাকে। অভ্র আশে পাশে তাকাতে তাকাতে ছুটে চলছিল সামনে। এরই মাঝে অভ্রের মা এসে বললো,

‘ তুই এসেছিস অভ্র?’

উওরে অভ্রও খুশি মাখা মুখ নিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ হুম মা।’

‘ ঠিক আছে তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোর জন্য খাবার বারছি,

মায়ের কথা শুনে অভ্র বেশি না ভেবেই বললো,

‘ মা ডিনার পরে করবো আদ্রিজা কোথায় ওকে বলো আমার জন্য ব্ল্যাককফি বানিয়ে নিয়ে আসতে,

প্রতি উওরে অভ্রের মা বললো,

‘ আদ্রিজা তো নেই?’

সঙ্গে সঙ্গে বুকটা যেন থমকে গেল অভ্রের। হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বললো,

‘ নেই মানে কোথায় গেছে ওর তো অফিস থেকে বাড়িতেই আসার কথা।’

‘ আসলে ব্যাপারটা তা নয় আদ্রিজার বাবা এসেছিল বিকেলে আদ্রিজার মা নাকি একটু অসুস্থ আদ্রিজাকে দেখতে চাইছিল একমাত্র মেয়ে কি না। তাই ওখানে গেছে তোকে বলে যেত কিন্তু আমি বারন করেছিলাম।’

মায়ের কথায় যেন হাসি মাখা মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল অভ্রের। যখনই ভাবে সবটা ঠিক করে নিজের এলোমেলো জীবনটাকে পুরোপুরি গুছিয়ে নিবে তখনই কিছু না কিছু ঘটে সবটা জগা খিচুড়ি পাকিয়ে যায়। এই প্রথম যেন অভ্রের মাঝে আদ্রিজার প্রতি অভিমানের দেয়াল এসে ভর করলো। যতই মা বারন করুক না কেন আদ্রিজা তো পারতো তাঁকে ফোন করে সবটা বলতে, সবটা বললে সে কি যেতে দিত না নাকি। এমনিতে দুপুরের আদ্রিজার ওইভাবে চলে আসাটা ঠিক নিতে পারে নি অভ্র। ভেবেছিল ফোন করবে কিন্তু পরে ভাবলো ফোনের চেয়ে সামনাসামনি কথা বলাই পারফেক্ট হবে। তাই আর ফোন করে নি।’

অভ্রের ভাবনাগুলো মাঝেই অভ্রের মা আবার বলে উঠল,

‘ আমি ব্ল্যাককফি বানিয়ে নিয়ে আসবো অভ্র?’

উওরে গম্ভীর কণ্ঠ নিয়ে বললো অভ্র,

‘ না লাগবে না। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি তুমি খাবার বারো।’

বলেই তক্ষৎনাত চলে গেল অভ্র উপরে। আর অভ্রের মা ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসলো, সে বুঝতে পেরেছে তাঁর ছেলে বউয়ের ওপর অভিমান করেছে।

‘ এবার হয়তো একটু হলেও অভ্র বুঝবে আদ্রিজার শূন্যতা।’

#চলবে….

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৫০
________________

নিকষ কালো অন্ধকারে ঘেরা চারপাশ। জানালার কার্নিশ দিয়ে বাহিরের ল্যামপোস্ট বেয়ে আসছে মৃদু আলো। সেই আলোতে খানিকটা আলোকিত হচ্ছে অভ্রের রুমটা। চাঁদ মামা উঠেছে আকাশ জুড়ে সেও সূর্যের কাছ থেকে পাওয়া আলো থেকে খানিকটা আলো দিচ্ছে অভ্রের রুমের দৃষ্টি দিয়ে। ‘অভ্রের মন ভালো নেই’ কতক্ষন যাবৎ বিছানার এপাশওপাশ করছে সে। আদ্রিজা তাঁর রুমে থাকার পর থেকে আজই প্রথম আদ্রিজা ব্যতীত নিজের রুমে শুয়েছে অভ্র। বলতে গেলে বিয়ের পর আজই প্রথম আদ্রিজা ব্যতীত বিছানায় শুলো অভ্র।’

অভ্রের পুরো রুমটায় যেন শূন্যতা ধেঁয়ে আসছে খুব। অভ্র আর শুয়ে থাকতে পারলো না তক্ষৎনাত শোয়া থেকে উঠে বসলো সে। পুরো রুমটায় চোখ বুলালো একবার। আদ্রিজা ব্যতীত রুমটা যেন খাঁ খাঁ করছে। অভ্র তাঁর বুকে হাত দিলো, একরাতেই যেন আদ্রিজার শূন্যতায় বুকটা চিন চিন করছে অভ্রের। হঠাৎই অভ্রের চোখ গেল তাঁর ড্রেসিং টেবিলটার কাছে আদ্রিজার পুঁচকে কিটিটার দিকে। চুপচাপ মনমরা হয়ে বসে আছে সেটা হয়তো অভ্রের মতো একেও কিছু বলে যায় নি আদ্রিজা। সিলেট থেকে ফিরেই আরু গিয়ে আদ্রিজার বাড়ি থেকে নিয়ে আসে কিটিকে। অভ্র বেশি না ভেবে বিছানা থেকে নামলো তাঁরপর এগিয়ে গেল কিটির দিকে কিটি চুপচাপ বসে বসে ঝিমাচ্ছিল। অভ্র এগিয়ে গিয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে কোলে তুলে নিলো কিটিকে। এতে প্রথমে খানিকটা চমকে উঠলো কিটি। ঘুমটা উধাও হয়ে গেল নিমিষেই। অভ্র কিটির পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠল,

‘ জানিস তো কিটি জীবনে প্রথমবার কারো না থাকার শূন্যতা ফিল করছি আমি। আচ্ছা ব্ল্যাকবেরির কি আমার কথা একবারও মনে পড়ছে না। এখন পর্যন্ত একটাও ফোন করে নি দেখেছিস কতটা স্বার্থপর মেয়েটা। তবে আমি বুঝতে পেরেছি লাবণ্যকে দেখেই হয়তো ও ফোন করছে না আমায়। কিন্তু ওই ভীতু কাঠবিড়ালিকে বুঝাবো কি করে আমি লাবণ্য নয় তাঁকে মন দিয়ে বসে আছি আনমনে। সেই প্রথমদিন দেখা হওয়া ব্ল্যাকবেরির একদম সাদাসিধা সাজে ব্ল্যাক শাড়ি, চোখে চশমা, একদিকে বিনুনি করা চুল, হাতে কাঁচের চুরি। সেদিন ওর ওই সাজ দেখেই আনমনেই ওর নাম দিয়ে ছিলাম ব্ল্যাকবেরি। হুট করেই নামটা ঠোঁটে চলে আসায় বলে ফেলি। আদ্রিজাকে আমার শুরু থেকেই ভালো লাগতো। এরপর নানা ভাবে নানা সময়ে নানা জায়গায় ওর সাথে আমার সাক্ষাৎ সেই যে হোটেলে বসে হুট করে প্রপোজ করার মুহূর্তে ওর দরজার সামনে দাঁড়ানো, আমার আংটিটা সুইমিংপুল থেকে উঠাতে গিয়ে দুজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে যাওয়া, আমার গাড়ির জন্য ওর গায়ে কাঁদা লাগা, আমার রুমাল ওকে দেওয়া, জানিস তো কিটি আমি আমার নিজের জিনিস কাউকে দেওয়া পছন্দ করি না, কিন্তু সেদিন কি হয়েছিল জানি না হুট করেই রুমালটা দিয়ে বসি আদ্রিজাকে কোনো দ্বিধাই কাজ করে নি সেদিন। তারপর রেস্টুরেন্টে মিট ঝড় বৃষ্টির রাতে গাড়ি খারাপ হওয়া, আমরা একটা ছোট্ট বন্ধ হওয়া দোকানের ভিড়ে একসাথে আশ্রয় নেওয়া, সকালে ফুড়ফুড়ে শীতল ভেজা পরিবেশে একসাথে ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে চা খাওয়া তাঁর আগে ব্রিজ ওপর ওঠাতে গিয়ে কাছাকাছি হওয়া। সবই যেন আজ চোখের সামনে ভাসছে। আমি বুঝতে পারি নি এই সকল ঘটনা ঘটার মাঝে কখন যে আমি আদ্রিজাকে ভালোবেসে ফেলি। ওর সাথে বিয়ে হওয়াটা ছিল একটা নিয়তির ব্যাপার। হয়তো এর জন্য আমার শ্রাবণকে একটা ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। কি বলিস?’

বলেই হেঁসে ফেললো অভ্র। আজ যেন আদ্রিজার ভাবনায় পাগল হয়ে যাচ্ছে সে। আদ্রিজাকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইছে খুব। তাঁর ভীতু মার্কা বউটাই ঠিক আছে ভূতের ছবি দেখিয়ে যখন তখন জড়িয়ে ধরে ঘুমানো যাবে।’

‘ বউদের একটু হলেও ভীতু হতে হয় তাই না কিটি। তোকে যখন বিয়ে দিবো তখন তুইও তোর জামাই কাছে ভীতু সেজে যাবি, তাইলে না জামাইর তোকে জড়িয়ে ধরতে একটু সুবিধা হবে।

বলেই হাল্কা শব্দ করে হেঁসে ফেললো অভ্র কিসব উল্টো পাল্টা ভাবছে সে। আদ্রিজার শূন্যতায় মাথাটা বোধহয় পুরোপুরি গেছে তাঁর। অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ পথে তাকালো সাথে বললো,

‘ কবে আসবে তুমি? নাকি আমি যাবো তোমার কাছে।’

উওরে আপাতত কিছু ভাবলো না অভ্র। আদ্রিজার একরাতের শূন্যতাই তাঁকে পাগল করে দিচ্ছে।’

___

ঘড়ির কাঁটায় রাত এগারোটা বেডে সাইত্রিশ মিনিট। নিজের রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিজা হাতে রয়েছে তাঁর অভ্রের বিয়ের দিন দেওয়া সেই লকেটটা। খুব যত্ন করেই রেখেছিল এটাকে আদ্রিজা। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আদ্রিজা বুঝতে পেরেছে অভ্রকে ছাড়া তাঁর জীবনটা শূন্য। শ্রাবণের আঘাতের থেকেও অভ্রের শূন্যতা ভয়ংকরভাবে যন্ত্রনা দিচ্ছে আদ্রিজাকে। আদ্রিজা বুঝে গেছে একসাথে থাকতে থাকতে গভীর মায়ায় জড়িয়ে অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছে আদ্রিজা। কিন্তু আদ্রিজা জানে এই ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। যতই হোক লাবণ্য আপু এখন ফিরে এসেছে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে অভ্রকে নিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন বোনা একমাত্র বোকামি ছাড়া আর কিছুই না। দীর্ঘ শ্বাস ফেললো আদ্রিজা। লকেটায় একটা চুমু এঁটে গলায় জড়িয়ে নিলো সেটা। তারপর বললো,

‘ আমায় বিয়ে কেন করলেন অভ্র? কি হতো যদি সত্যি সত্যি আমাদের বিয়েটা সেদিন হতো। ভেঙেই তো গিয়েছিল ভেঙেই না হয় যেতো। লোকে দু’চার কথা শোনাতো মেনে নিতাম কিন্তু এখন,, আপনার শূন্যতা যে আমায় তিলে তিলে শেষ করে দিবে এটার কি করবো? শ্রাবণের ক্ষেত্রে তো আপনি আমায় সামলেছিলেন কিন্তু এখন কে সামলাবে আমায়?’

চোখ থেকে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো আদ্রিজার। কষ্টে বুক ফেটে আসছে তাঁর। ভেবেছিল অভ্রের থেকে কিছুদিন দূরে থাকলে হয়তো ভালো থাকবে কিন্তু এখন বুঝচ্ছে ভালো তো দূরে থাক, শূন্যতায় হৃদয়টা ছিঁড়ে যাচ্ছে তাঁর।’

মাঝপথে কাটলো দু’দিন!

এই দুইদিনে আদ্রিজা অভ্রের সাথে কোনো যোগাযোগ হয় নি। অভ্র মাঝে একদিন ফোন করেছিল আদ্রিজার মাকে। কিন্তু আদ্রিজার সাথে কথা বলেনি শাশুড়ির সাথে কথা বলেই ফোন কেটে দিয়েছিল অভ্র। এরপর আর কল করে নি। আর আদ্রিজার কল করার ইচ্ছে থাকলেও লাবন্যের কথা ভেবে আর করে নি।’

বিকাল ৪ঃ০০টা!

ক্লান্তমাখা শরীর নিয়ে গাড়িতে গা এলিয়ে দিল অভ্র। বড্ড ক্লান্ত লাগছে আজ। মন মস্তিষ্ক সব যেন আজ নিস্তেজ প্রায়। অভ্রের অবস্থা বুঝতে পেরে ইউনুস পানির বোতলটা এগিয়ে দিল অভ্রের কাছে তারপর বললো,

‘ আজ আপনায় বড্ড বেশিই ক্লান্ত লাগছে স্যার?’

উওরে ইউনুসের কাছ থেকে পানির বোতলটা নিয়ে ঢকঢক করে পুরো পানিটা শেষ করে বললো অভ্র,

‘ বুঝলে ইউনুস জীবনে একটা জিনিস করতে নেই সেটা হলো বিয়ে। আর সেটা যদি না হয় তাহলে বউকে আঁটকে রাখতে হয় নিজের কাছে। শালার সারাবছর পর একটা বিয়ে করলাম কোথায় বউটা পাশে বসে আদর করবে, দু’ একবার বিনা অজুহাতে হুটহাট জড়িয়ে ধরবে তা না শাশুড়ীর অসুস্থতার অজুহাত নিয়ে বাপের বাড়ি বসে আছে।’

অভ্রের কথা শুনে হেঁসে ফেললো ইউনুস। সে বুঝলো তাঁর অভ্র স্যার তাঁর বউকে মিস করছে। ইউনুস খানিকটা উদাসীন গলায় বললো,

‘ এতই যখন ভাবিকে মিস করছেন স্যার তাহলে ভাবিকে বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে কেন আসছেন না?’

‘ হুম আনবো তো, আর এইবার আনলে আগামী পাঁচ বছরেও যেতে দিবো না আর। মেয়েটার বড্ড সাহস বেড়ে গেছে। তবে যাই বলো আমার ভীতু বউটা কিন্তু বড্ড ভালো মনটা দারুণ ফ্রেশ।’

এবার উচ্চস্বরেই হেঁসে উঠলো ইউনুস। ইউনুসের হাসি দেখে খানিকটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো অভ্র,

‘ তুমি হাসছো কেন ইউনুস?’

‘ না মানে,

‘ একদম হাসবে না আমি কিন্তু রেগে আছি। তারপর বউয়ের রাগ সব তোমার ওপর ঝেড়ে দিবো কিন্তু।’

‘ বলছিলাম কি শুনেছি আপনার শাশুড়ী নাকি অসুস্থ ছিলেন তা ওনায় দেখার অজুহাতেও তো বউকে গিয়ে দেখে আসতে পারেন।’

‘ এটা দেখে আসার প্রশ্ন নয় ইউনুস। আমার কথা আদ্রিজা কেন এখনও আমায় ফোন করলো না। ওর তো উচিত ছিল আমায় ফোন করা। মেয়েটা এত বুঝে কেন?’

‘ কি বুঝেছে স্যার।’

‘ আমার মাথা।’

ইউনুস চুপ হয়ে গেল কারন সে বুঝতে পেরেছে তাঁর বস ধীরে ধীরে রেগে যাচ্ছে। তারওপর রাস্তায় জ্যাম। রাস্তায় জ্যামে পড়েছে অভ্র ওরা। প্রায় দশ মিনিট হয়েছে তাঁরা জ্যামে আঁটকে আছে। এর জন্য হয়তো আরো বেশি রেগে যাচ্ছে অভ্র। এমন সময় হঠাৎই হুট করেই কোথা থেকে তুষার এসে সোজা ঢুকে পড়লো গাড়ির ভিতর বসলো অভ্রের পাশ দিয়ে বললো,

‘ হেই ব্রো কেমন আছিস?’

হুট করেই তুষারকে গাড়িতে ঢুকতে দেখে খানিকটা চমকে উঠলো ইউনুস অভ্র দুজনেই। অভ্রই আগে বলে উঠল,

‘ হুট করে তুই কোথা থেকে এলি।’

‘ এসেছি তো ভার্সিটি থেকে,

‘ ভার্সিটি এই বিকেল বেলা ভার্সিটিতে কেন গিয়েছিলি?’

‘ গিয়েছিলাম একটা কাজে তা তুই কোথা থেকে ফিরছিস আর কোথায় যাচ্ছিস?’

‘ আমি মিটিং সেরে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্য রওয়ানা হচ্ছি।’

এবার তুষার খানিকটা সিরিয়াস গলায় বললো,

‘ ললিতা সরি লাবণ্য সেদিন তোর অফিসে গিয়েছিল তাই না।’

অভ্র দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

‘ হুম গিয়েছিল,

‘ কিছু বলেছে তোকে?’

‘ হুম বলেছে তো অনেক কিছু্।’

বলেই তুষারকে সব খুলে বললো অভ্র। তুষারও সবটা শুনলো কারণ সেও জেনেছিল লাবণ্য নাকি অভ্র ভালোবাসতো সেই কলেজ লাইফ থেকে। এটা তুষার অভ্রের বিয়ে হওয়ার পরই জেনেছিল। তুষার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

‘ তারপর কি ভাবলি তুই?’

‘ ভেবেছি অনেক কিছুই তবে তোকে বলবো না।’

অভ্রের কথা শুনে তুষার বলে উঠল,

‘ বলবি না কেন?’

উওরে অভ্র কিছু বলবে এরই মাঝে ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে ঈশান আর আদ্রিজাকে একসাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলতে বলতে যেতে দেখে মুহূর্তের মধ্যে রাগে আগুন হলো অভ্র। যে মেয়ের জন্য সে ডিপ্রেশনে পড়ে কেঁদে নেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দিন পার করছে সেই মেয়ে নাকি অন্য ছেলের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলে হেঁটে যাচ্ছে। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে আবারও বললো তুষার,

‘ কি হলো কিছু বলছিস না কেন,

তুষারের কথা শুনে আর বেশি দেরি না করে তক্ষৎনাত গাড়ির দরজা খুলতে খুলতে বললো অভ্র,

‘ আমি একটু আসছি।’

বলেই তুষারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল অভ্র। আর তুষার জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রের যাওয়ার পানে যেন কি হলো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল। তুষার তাকিয়ে আছে, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অভ্রের যাওয়ার পানে। কারন সে দেখতে চাইছি অভ্র ঠিক কোথায় যাওয়ার জন্য পা বারিয়েছে,,

___

‘ আজকে তুমি না থাকলে কিন্তু সত্যি সত্যি টমেটো বেডায় আমায় ঠকিয়ে দিয়ে চলে যেত ঈশান ভাইয়া।’

খানিকটা ভারাক্রান্ত গলায় কথাটা উঠলো আদ্রিজা ঈশানকে। আর আদ্রিজার কথা শুনে ঈশানও বলে উঠল,

‘ তা তো দেখতেই পাচ্ছি। সত্যি কোনটা ভালো টমেটো আর কোনটা পঁচা সেটার তফাত আজও বুঝলি না আদ্রিজা।’

মাথা চুলকে হাসলো আদ্রিজা। আসলে কতক্ষণ আগেই হাল্কা পাতলা বাজার করতে এসেছিল আদ্রিজা। আর তখনই একটা টমেটো বিক্রেতার দোকানে বসে ঈশানের সাথে দেখা হয়। ঈশানও কিছু কিনতে এসেছিল ওখানে। ঈশান দেখছিল আদ্রিজাকে টমেটো বিক্রেতা কিছু পঁচা টমেটো ভালোগুলোর ভিড়ে দিচ্ছিল আর তখনই সেইক্ষেত্রে প্রতিবাদ জানায় ঈশান। আর তা নিয়েই হাসাহাসি হচ্ছে দুজনের মাঝে। এরই মাঝে হঠাৎই তাদের সামনে এসে দাড়ালো অভ্র। হুট করেই অভ্রকে সামনে এসে দাঁড়াতে দেখে খানিকটা ভড়কে গেল আদ্রিজা। থমথমে গলায় বললো,

‘ আপনি এখানে এইসময়?’

উওরে গম্ভীর কণ্ঠে বললো অভ্র,

‘ হুম আমি এখানে কি করছো তুমি?’

___

রাগান্বিত চেহারা নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো আরু। তাঁর কাছে খবর আছে আশিকের বাচ্চা আজ কোন মেয়ের সাথে নাকি রেস্টুরেন্টে খেতে এসেছে।’ তাই জন্মের খাবার খাওয়াতে এসেছে আরু? আজ আশিকের একদিন কি তাঁর একদিন। শালায় বহুত জ্বালান জ্বালাচ্ছে কিছুদিন যাবৎ আজ সেই সবকিছু শোধ নিবে আরু!’

কতক্ষণ এদিক ওদিক চোখ বুলাতেই একদম মাঝখানে সারিতে একটা মেয়ের সাথে বসে থাকা আশিকের দিকে চোখ থেমে গেল আরুর। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর রাগান্বিত চেহারা আরো তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলো। আরু হন হন করে এগিয়ে গেল আশিকের দিকে। পাঁচ দশ কিছু না ভেবেই ফট করে ভরা রেস্টুরেন্টের ভীড়ে আশিকের কলাট চেপে ধরে বললো সে,

‘ শালা, বান্দর,অসভ্য, ছাগল,বেয়াদব ভার্সিটি না গিয়ে এখানে বসে বসে গেলা হচ্ছে তোকে আজ জন্মের খাবার যদি না খাওয়াইসি তাহলে আমার নামও আরু না।’

#চলবে…..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। গল্প কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে।]

#TanjiL_Mim♥️