গোধূলি বিকেলে তুমি আমি পর্ব-২৯+৩০

0
426

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ২৯
________________

অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদ্রিজা অভ্রের মুখের দিকে তাঁর যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না অভ্র তাঁকে বিয়ে করার কথা বললো মাত্র। পুরো বিস্ময় ভরা চেহারা নিয়ে তাকিয়ে রইলো সে অভ্রের মুখের দিকে।’

অন্যদিকে,

অভ্রের কথা শুনে খুশি মাখা মুখ নিয়ে এগিয়ে গেল অভ্রের মা অভ্রের দিকে। তারপর বললেন,

‘ তুই সত্যি বলছিস বাবা তুই রাজি এই বিয়েতে?’

উওরে অভ্রও বেশি না ভেবে বললো,

‘ হুম।’

খুশি হলো অভ্রের মা। আদ্রিজার মায়ের দিকে এগিয়ে এসে বললেন উনি,

‘ তাড়াতাড়ি চলুন ভাবি বিয়েটা দিতে হবে তো।’

উওরে আদ্রিজার মাও খুশি হয়ে বললো,

‘ হুম আপনি যান আমি আসছি।’

‘ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসুন অভ্রের বাবার সাথেও কথা হবে আমার।’

বলেই বেরিয়ে গেল অভ্রের মা আর আদ্রিজার মা আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ যদি উল্টো পাল্টা কিছু বলিস তাহলে কিন্তু আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না আদ্রিজা।’

মায়ের কথা শুনে জাস্ট অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আদ্রিজা তাঁর মায়ের মুখের দিকে কিছু বলতে পারলো না আর। তাঁর তো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে অভ্র রাজি হলো বিয়েতে। আদ্রিজার মা বেরিয়ে গেল। মা বের হতেই আদ্রিজা এগিয়ে গেল অভ্রের দিকে। তারপর বললো,

‘ আপনি বিয়েতে রাজি কেন হলেন অভ্র?’

এই প্রথম আদ্রিজা অভ্রের নাম ধরে ডাকলো। খানিকটা বিস্মিত হলো সে। ছলছল চোখে অাদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো অভ্র,

‘ অনেক সময় নিয়তির কাছে আমাদের হার মানতেই হয় মিস ব্ল্যাকবেরি।’

বলেই চলে গেল অভ্র। তৈরি হতে হবে যে তাঁকে। আদ্রিজা জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রের যাওয়ার যেন অভ্র কি বললো সব তাঁর মাথার উপর দিয়ে গেল।

‘ নিয়তি মানে! এ কেমন নিয়তি? যেখানে আগে থেকেই জানা অপর প্রান্তের ব্যক্তিটি কখনোই তাঁকে ভালোবাসতে পারবে না।’

অতঃপর কবুল বলার মাধ্যমেই আদ্রিজা অভ্রের বিয়ে হয়ে গেল। নিয়তির কাছে হার মেনে বিয়েটা করেই নিলো তাঁরা। আদ্রিজা চেয়েও কিছু করতে পারে নি তাঁর মায়ের জন্য। পরিস্থিতিটাই এমন ছিল যে আদ্রিজা চেয়েও কিছু করতে পারলো না। কিন্তু অভ্র? সে তো পারতো চাইলেই এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে কিন্তু করে নি কেন? তাহলে কি আদ্রিজার জন্য অভ্রের খানিকটা হলেও চিন্তা হয়।’

ভেবে পায় না আদ্রিজা। কিন্তু তাদের এই সম্পর্কের পরিনতিটা কেমন হবে। আধও কি অভ্র আদ্রিজা একে অপরকে ভালোবাসতে পারবে কোনোদিন।’

____

আদ্রিজাদের বাড়ির ছাঁদের ওপর বসে আছে আরু। বড্ড মন খারাপ হচ্ছে তাঁর চোখ বেয়ে পড়ছেও পানি। আদ্রিজা মেয়েটা বড্ড ভালো, আর ভালো মানুষের সাথেই সবসময় এমনটা হয় কেন? প্রথমেই শ্রাবণের থেকে ধোঁকা খেল আদ্রিজা তারপর সব ভুলে যখন বিয়েতে রাজি হলো নতুন জীবনে পা রাখার কথা ভাবলো তখনই এমনটা হওয়া লাগলো। আদনান এমন কেন করলো? ভেবে পায় না আরু।’

এরই মাঝে সেখানে দৌড়ে এসে উপস্থিত হলো আশিক। আরুকে কাঁদতে দেখে মুচকি হেঁসে আরুর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো সে,

‘ তুই এখানে বসে কাঁদছিস আর নিচে কি ঘটে গেল জানিস কিছু?’

আশিকের ভয়েসটা কানে আসতেই বিরক্ত হলো আরু। বললো,

‘ তোর যদি কাজের কাজ কিছু থাকে তাহলে বল না হলে আমার সামনে থেকে যা আশিক এমনিতেই মন ভালো নেই তারপর ফালতু বকিস না।’

‘ আরে বাবা ফালতু বকলাম কোথায় উল্টো আরও সুন্দর কথা বলতে এলাম।’

আশিকের কথা শুনে বিরক্ত নিয়ে আশিকের দিকে তাকিয়ে বললো আরু,

‘ সুন্দর কথাটা কি শুনি।’

আশিক বসলো আরুর পাশ দিয়ে তারপর বললো,

‘ কথাটা হলো আদ্রিজার বিয়ে হয়ে গেছে।’

আশিকের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আরু,

‘ বিয়ে হয়ে গেছে মানে আদনান ফিরে এসেছে।’

‘ আরে না ও হনুমান আসে নি কিন্তু,

‘ কিন্তু কি?’

‘ কিন্তু,

‘ আশিক এখন তোকে থাবড়ামু কিন্তু,

‘ আদ্রিজা তোর ভাবি হয়ে গেছে আরু ছুনা। অভ্র ভাইয়া বিয়ে করে নিয়েছে আদ্রিজাকে।’

সঙ্গে সঙ্গে আরু উত্তেজিত হয়ে আশিককে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ কি সত্যি? ও মাই গড কিভাবে হলো, ভাইয়া যে বললো বিয়েটা করবে না।’

উওরে আশিক কাশতে কাশতে বললো,

‘ এভাবে জড়িয়ে ধরলে হার্ট অ্যাটাক করমু কিন্তু,

বিষম খেল আরু। এই মাত্র কি করো ভেবেই আশিককে ছেড়ে দু’কদম দূরে সরে আসলো সে। মিন মিন কন্ঠে বললো,

‘ সরি।’

‘ হুম হইছে।’

‘ সর তো তুই আমার ভাইয়ের বিয়ে হলো অথচ আমিই দেখতে পারলাম না।’

উওরে মুখটা একবার ফুলিয়ে বললো আশিক,

‘ এভাবে ছাঁদে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকলে বিয়ে দেখতে পাবি কেমনে ছুনা।’

‘ তুই আর একটু আগে আসবি না ইডিয়েট।’

‘ যা এখন আমি ইডিয়ট হয়ে গেলাম।’

আশিকের কথা শুনে আরু খুশি হয়ে আশিকের গাল দুটো টেনে দিয়ে বললো,

‘ আমার ছুনা বন্ধু।’

বলেই তক্ষৎনাত ছাঁদ থেকে দৌড়ে নেমে পড়লো আরু। আর আশিক ফ্যাল ফ্যাল চোখে গালে হাত দিয়ে আরুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ এইডা কি হইলো?’

আরু দৌড়ে আসার অনেক আগেই বিয়েটা কমপ্লিট হয়েছিল আদ্রিজা আর অভ্রের। এতে খানিকটা খারাপও লাগে আরুর কিন্তু পরক্ষণেই খুশি মনে মেনে নেয় সবটা যাক অবশেষে বিয়েটা তো হলো? কিন্তু অভ্র ভাই তো বিয়েটা করবে না বলেছিল তাহলে আবার রাজি হলো কেন?’

পরিশেষে, কান্না মিশ্রিত মুহুর্ত কাটিয়ে গাড়ি করে পাঠিয়ে দেওয়া হলো বিয়ের কনে আর বরকে ওরোফে অভ্র আর আদ্রিজাকে। আরু আর আরুর মা অনেক আগেই চলে গেছে অনেক কিছুর আয়োজন করতে হবে কি না।’

____

নিজের রুমের আয়নাটাকে স্ব-জোরে একটা ফুলদানি মেরে ভেঙে ফেললো শ্রাবণ। রাগ হচ্ছে তাঁর, ভীষণ রাগ। কি ভাবলো আর কি হলো? ভেবেছিল বিয়েটা ভেঙে দিয়ে তাঁর নামের ট্যাগ লাগিয়ে আদ্রিজার নামে সমালোচনার পাহাড় তৈরি করবে সে। লোকে দুর’ছাই দুর’ছাই বলে বাজে মন্তব্য করবে কিন্তু কিছুই হলো না এসবের। শ্রাবণ ভাবতেও পারি নি এমন একটা মুহূর্তে এসে কেউ বিয়ে করে নিবে আদ্রিজাকে। রাগে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর, শ্রাবণ নিজেও বুঝচ্ছে না এত রাগ কেন হচ্ছে তাঁর। আদ্রিজার পাশে যে ছেলেটাকে সে সহ্য করতে পারে না সেই ছেলেটার সাথেই বিয়ে হলো আদ্রিজার। ভাবলেই রাগে মাথার রগ ফুলে উঠছে শ্রাবণের।’

রাত দেড়টার কাছাকাছি। বাসর ঘরে চুপচাপ বসে আছে আদ্রিজা। ভীষণ জোরে কান্না পাচ্ছে তাঁর। তাঁর জন্য অভ্রের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেল, অভ্র যাকে ভালোবাসলো তাঁকে পেল না– এই কথাটা ভাবলেই যেন ভিতরে ভিতরে গিল্টি ফিল হচ্ছে আদ্রিজার৷ বার বার মনে হচ্ছে সে যদি অভ্রকে বিয়েতে ইনভাইট না করতো তাহলে হয়তো এমনটা হতো না। কেন সে তাঁর মাকে জোর করতে পারলো না। অভ্র যদি বিয়েটায় রাজি না হতো তাহলে হয়তো আদ্রিজা ঠিক ম্যানেজ করতে পারতো বিষয়টায়। নানা কিছু ভেবে ভেবে মন খারাপ করছিল আদ্রিজা যতই নিজেকে সামলাতে চাইছে ততই যেন আরো বেশি করে চিন্তার জালে আটকা পড়ে মন খারাপ হচ্ছে তাঁর।’

___

নিজের রুমের সামনে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অভ্র। ভিতরেই আদ্রিজা বসে আছে। আপাতত আদ্রিজাকে নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবছে না অভ্র। সে তো ভাবছে অন্য কিছু। একটুখানি মুহূর্তের মধ্যে তাঁর সাথে কি ঘটে গেল। বিয়ে হয়ে গেল তাঁর, অভ্র নিজেও জানে না সে বিয়েতে রাজি কেন হলো? শুধুই কি সমালোচনার হাত রেখে আদ্রিজাকে বাঁচাতে নাকি অন্যকিছু। আদ্রিজার প্রতি অভ্রের ফিলিংসটা ঠিক কেমন এটাই যেন বুঝচ্ছে না অভ্র। আদ্রিজাকে বিয়ে করেছে এতে আদ্রিজার প্রতি বিন্দুমাত্র রাগ নেই অভ্রের। কারন আদ্রিজার কোনো দোষ নেই। অভ্র তো নিজে থেকেই বিয়েটা করলো। তপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো অভ্র। এমন সময় অভ্রের কাঁধে হাত রাখলো তুষার। কতক্ষণ আগেই এসব ঘটে যাওয়া অদ্ভুত ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে দৌড়ে আসলো তুষার। সে তো ভাবতেও পারে নি অভ্রের সাথে আদ্রিজার বিয়ে হবে।’

হুট করেই কাঁধে কারো স্পর্শ পেতেই পিছন ঘুরে তাকালো অভ্র। সামনেই তুষারকে দেখে শান্ত গলায় বললো সে,

‘ তুই?’

‘ হুম আমি। এসব কি করে হলো অভ্র? তুই বিয়ে করে নিলি আদ্রিজাকে।’

উওরে শান্ত স্বরেই জবাব অভ্রের,

‘ পরিস্থিতিই এমন ছিল যে আমাকে বিয়েটা করতেই হতো।’

‘ এইটা কোনো কথা।’

‘ তুই বুঝতে পারছিস না আমি বিয়েটা না করলে আদ্রিজাকে অনেক বাজে সময়ের ভিতর দিয়ে যেতে হতো, নানা লোকে নানা কিছু বলতো।’

‘ আদ্রিজাকে লোকে খারাপ বলতো বলে বিয়েটা করে নিলি তুই নিজের কথা ভাবলি না। লাবণ্যকে যে তুই ভালোবাসিস সেটা ভুলে গেলি।’

উওরে চুপ রইলো অভ্র। কি বলবে বুঝতে পারছে না। অভ্রকে চুপ থাকতে দেখে আবারও প্রশ্ন ছুড়লো তুষার। বললো,

‘ কি হলো চুপ করে আছিস কেন কথা বল অভ্র?”

তুষারের কথার আপাতত কোনো জবাব নেই অভ্রের কাছে। তাই জিনিসটাকে এড়িয়ে যেতে বললো অভ্র,

‘ আপাতত কিছু ভালো লাগছে না। আমরা পড়ে কথা বলি। বড্ড ক্লান্ত লাগছে, আমায় ঘুমাতে হবে আমি যাই বুঝলি।’

বলেই নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো অভ্র। আর তুষার অভ্রের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে বললো,

‘ তুই শুধুই আদ্রিজাকে সমালোচনার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিয়েটা করলি অভ্র নাকি অন্যকিছু? কেন যেন তোর চোখ দুটো অন্যকিছু বললো বলে মনে হলো।’

____

আচমকাই দরজা খোলার খক করে আওয়াজ পেতেই নড়েচড়ে উঠলো আদ্রিজা। সে বুঝেছে অভ্র এসেছে।’

#চলবে…..

#গোধূলি_বিকেলে_তুমি_আমি❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ৩০
________________

‘ আপনি এই বিয়েটা করতে রাজি কেন হলেন অভ্র?’

রুমের ভিতর ঢুকে টাওয়াল হাতে কেবল ওয়াশরুমের উদ্দেশ্যে যেতে নিয়েছিল অভ্র এরই মাঝে আদ্রিজার কথা শুনে থেমে গিয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো অভ্র। অভ্রকে দাঁড়াতে দেখে আদ্রিজা বিছানা ছেড়ে নামলো তারপর চুপচাপ এগিয়ে যেতে লাগলো অভ্রের দিকে। মুখোমুখি হলো সে অভ্রের তারপর আবার প্রশ্ন ছুড়লো অভ্রের দিকে। বললো,

‘ কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন?’

খানিকটা অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো অভ্র আদ্রিজার দিকে তারপর বললো,

‘ আমার বড্ড ক্লান্ত লাগছে আমরা পরে কথা বলি। আর এত ভাড়ি সাজে এখনো বসে আছো কেন? চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি রাত তো কম হয় নি।’

‘ আপনার মনে হয় আজ রাতে আমার ঘুম আসবে।’

প্রতি উওরে কি বলবে অভ্র ঠিক বুঝতে পারছে না। এরই মাঝে অভ্রের ফোনটা বেজে উঠলো অভ্র ফোনটা দেখলো লাবণ্য ফোন করেছে সঙ্গে সঙ্গে বুকটা যেন কেঁপে উঠলো তাঁর। তবে ফোনটা তুললো না, ফোনটা সাইলেন্ট করে আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছি,

বলেই একপ্রকার পাশ কাটিয়ে চলে গেল অভ্র ওয়াশরুমের দিকে। কেমন একটা বিচ্ছিরি অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে তাঁর। লাবণ্যের ফোনটা আসায় যেন আরো বেশি ফিলিংসটা বেড়ে উঠলো অভ্রের।’

অন্যদিকে,

আদ্রিজা পুরো হতভাগ হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্রের যাওয়ার পানে সে দেখেছে লাবণ্য ফোন করেছে। আর লাবণ্যের ফোন আসাতেই অভ্র এমন অস্থিরতা নিয়ে চলে গেল ওয়াশরুমের দিকে। আদ্রিজার খারাপ লাগা আরো বাড়লো বুকের ভিতর যে ভাড়ি পাথরটা জমে উঠেছিল তাঁর সেটা যেন আরো প্রখর হলো আদ্রিজার।

ওয়াশরুমের ভিতরে থাকা আয়নাটার দিকে তাকিয়ে আছে অভ্র কেমন যেন খাপছাড়া আর অগোছালো লাগছে নিজেকে। অভ্র বেসিনের কলটা খুলে মুখে পানি দিলো খুব করে, মাথায়ও পানি দিলো। তারপর চোখ দুটো বন্ধ করে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেললো সে, কোথাও একটা খারাপ লাগা কাজ করছে অভ্রের মাঝে। তবে আদ্রিজাকে বিয়ে করেছে বলে তাঁর মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। অভ্র বুঝতে পারছে না তাঁর মন মস্তিষ্ক আসলে বলছে টা কি? ভুল করেছে সে আদ্রিজাকে বিয়ে করে নাকি সঠিক করেছে সবটা। উফ! মাথা যন্ত্রনা করছে অভ্রের ব্যাথায় যেন মাথাটা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম তাঁর।’
অভ্র তাঁর মাথাটা চেপে ধরে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।’

পাক্কা আধঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হলো অভ্র। গ্রীন কালার টিশার্ট সাথে রেড কালার ট্রাউজার পরে, টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছতে মুছতেই ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে অভ্র এরই মাঝে হঠাৎই চোখ গেল তাঁর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আদ্রিজার দিকে ভাড়ি লেহেঙ্গা খুলে ব্লাক শাড়ি পড়েছে সে। চুলগুলো খোলা, চোখের লেন্সও খুলে ফেলেছে সে, এই প্রথম আদ্রিজার ঘন কালো কোমড় পর্যন্ত ছড়ানো লম্বা চুলগুলোকে খেয়াল করলো অভ্র। তবে বেশিক্ষণ তাকালো না সে মাথার যন্ত্রণায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে অভ্রের। অভ্র বেশি কিছু না ভেবে গিয়ে বসলো বিছানায়।’

অভ্র ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে এটা অনেক আগেই টের পেয়েছিল আদ্রিজা তবে কিছু বলে নি সে। আদ্রিজা কিছু একটা ভেবে আবারও এগিয়ে গেল অভ্রের দিকে। যতক্ষণ পর্যন্ত না আদ্রিজা তার প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছে ততক্ষণে যেন শান্তি মিলছে না আদ্রিজার। আদ্রিজা তাঁর চুলে হাত দিয়ে খোঁপা করলো। আদ্রিজাকে পুনরায় নিজের দিকে আসতে দেখে হতাশ হলো অভ্র।

‘ এই মেয়েটা বোধহয় আজ রাতে তাঁকে ঘুমাতে দিবে না!’ (মনে মনে)

অভ্র তাকালো আদ্রিজার দিকে খোলা চুলেই তো সুন্দর ছিল খোঁপা করার কি দরকার ছিল অদ্ভুত মেয়ে একটা।’

আদ্রিজা অভ্রের পাশ দিয়ে বসে বললো,

‘ আপনি কিন্তু এখনও আমার প্রশ্নের উত্তর দেন নি অভ্র?’

‘ তোমার কি সত্যি ঘুম পায় নি ব্ল্যাকবেরি?’

অভ্রের কথায় যেন ভিতর থেকে ভেঙে পড়ছে আদ্রিজা। খানিকটা হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল সে,

‘ আপনি কেন বুঝতে পারছে না আমার অবস্থাটা আমার ভিতর থেকে গিল্টি ফিল হচ্ছে বার বার মনে হচ্ছে আমার জন্য আপনার জীবনটা নষ্ট হয়েছে। আমার জন্য আপনি আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে পান নি, আপনি কেন বুঝতে পারছে না আমি আপনার ভালোবাসার মাঝে বিচ্ছেদের কারণ হয়েছি এই জিনিসটা ভাবলেই ভিতর থেকে আমি,

বলতে বলতে কেঁদে উঠলো আদ্রিজা। খারাপ লাগছে তাঁর, ভীষণ ভাবে খারাপ লাগছে। কারন সে তো জানে ভালোবাসার বিচ্ছেদটা ঠিক কতটা যন্ত্রণার। হুট করেই আদ্রিজাকে কাঁদতে দেখে হতভম্ব হয়ে বললো অভ্র,

‘ আরে তুমি কাঁদছো কেন?’

‘ আপনি বুঝতে কেন পারছেন না অভ্র, আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে আপনি বিয়েটা কেন করলেন। আমার জন্য নিজের জীবটা কেন নষ্ট করলেন।’

বলেই ঠুকরে কাঁদতে লাগলো আদ্রিজা। আদ্রিজার কান্না দেখে অভ্র বিস্মিত হয়ে বলে উঠল,

‘ এভাবে কাঁদে না ব্ল্যাকবেরি যা হয়েছে তাতে তোমার কোনো দোষ নেই। তাই তোমার জন্য আমার জীবন নষ্ট হয়েছে এমনটা ভেবে কষ্ট পেও না প্লিজ।’

বলেই আদ্রিজার চোখের পানি মুছে দিলো অভ্র। তারপর বললো,

‘ এভাবে সবসময় কাঁদতে নেই, আজ সারাদিন অনেক কেঁদেছো আর কাঁদে না ঘুমাও এখন। কষ্ট পেও না দেখবে সময়ের সাথে সাথে সবটা ঠিক হয়ে গেছে।’

‘ কিভাবে কি ঠিক হবে অভ্র আমি যে,

আদ্রিজার পুরো কথা শেষ আগেই আদ্রিজার ঠোঁটে হাত দিয়ে বললো অভ্র,

‘ হুস অনেক হয়েছে আর এসব নিয়ে ভাবে না।’

অভ্রের কাজে ছলছল চোখে তাকালো আদ্রিজা অভ্রের দিকে। অভ্রও তাকিয়ে রইলো আদ্রিজার চোখের দিকে। কেঁদে কেঁদে চোখের কাজল সব লেপ্টে ফেলেছে। অভ্র আদ্রিজার দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ এখন ঘুমাও পরে কথা হবে এস..।’

আর কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেল অভ্র। মাথাটা বোধহয় ছিঁড়েই যাবে তাঁর। অভ্র আদ্রিজার ঠোঁটের থেকে হাত সরিয়ে তাঁর মাথাটা চেপে ধরলো। অভ্রের কাজ দেখে আদ্রিজা খানিকটা হতভম্ব হয়ে বললো,

‘ কি হয়েছে আপনার?’

উওরে খানিকটা বিচলিত কন্ঠ নিয়ে বললো অভ্র,

‘ তেমন কিছু না খানিকটা মাথাটা ধরেছে আমার।’

‘ আপনার মাথা ব্যাথা করছে এটা আগে বলবেন না তাহলে তো আমি এতকিছু বলতাম না। দাঁড়ান।’

বলেই বিছানার উপর থেকে বালিশটা এনে মাঝ বরাবর খাটে রাখলো আদ্রিজা। তারপর বললো,

‘ আপনি এখানে ঘুমানোর চেষ্টা করুন অভ্র, দেখবেন সকালের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবেন আপনি।’

অভ্র শুনলো আদ্রিজার কথা। তাঁর সত্যিই অসম্ভবভাবে মাথা ব্যাথা করছে। অভ্র বেশি কিছু ভেবে না শুয়ে পড়লো বিছানায়। মাথাটায় হাত দিয়ে চাপতে লাগলো সে। অভ্রের কাজ দেখে আদ্রিজার কেমন যেন লাগলো। আদ্রিজা অভ্রের মাথার কাছ দিয়ে বসে বললো,

‘ আমি আপনার মাথা টিপে দিচ্ছি আপনি ঘুমান অভ্র?’

বলেই অভ্রের কপাল স্পর্শ করলো আদ্রিজা। আদ্রিজার হাতের স্পর্শ পেতেই অভ্র তাকালো আদ্রিজার মুখের দিকে। ভালো লাগছে তাঁর। অভ্র চেয়েও বারণ করতে পারলো না আদ্রিজাকে। কোথাও এক ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর মনে। অভ্র নীরবেই তাঁর চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো। আর আদ্রিজা চুপচাপ তাঁর কপাল টিপতে লাগলো।’

জোৎসা ভরা আলোর রাত তখন। চাঁদ মামাটাও আকাশের বুকে জ্বলছিল খুব। চারপাশে হিম শীতল ঠান্ডা বাতাস বইছিল, বাতাসের তীব্রতায় জানালার পর্দাগুলো উড়ে চলছিল বারংবার। অভ্রের হাল্কা শীত শীত লাগছিল তখন, অভ্রের শীত করছে বিষয়টা বুঝতে পেরে আদ্রিজা আশেপাশে তাকালো হঠাৎই চোখ গেল তাঁর বালিশের নিচে থাকা কাঁথাটার দিকে। আদ্রিজা বেশি কিছু না ভেবে কাঁথাটা বের করে জড়িয়ে দিলো অভ্রের গায়ে। তারপর পুনরায় অভ্রের মাথাটা টিপতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সে।’

আদ্রিজার চোখে ঘুম নেই আধও আজ ঘুম আসবে কি না জানে না সে। সে তো এটাই বুঝে উঠতে পারছে না তাদের এই নিয়তির সম্পর্কটা আধও টিকবে কতদিন?’ যতই হোক সে তো আর অভ্রের জীবনের একটা কাটা হয়ে সারাজীবন থাকতে পারে না।’

____

সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ঘুম ভাঙলো আদ্রিজার। অভ্রের মাথার কাছেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে নেই আদ্রিজার। আদ্রিজা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তারপর বেশি কিছু না ভেবেই ব্যাগ থেকে লাল টুকটুকে একটা শাড়ি বের করে সেটা নিয়ে ঢুকে পড়লো সে ওয়াশরুমের দিকে।’

”’

আচমকাই ঘুমের মধ্যে চোখে পানির ছিটে লাগতেই হকচকিয়ে উঠলো অভ্র। তবে চোখ খুললো না,পাশ ফিরে অন্যদিক ঘুরে ঘুমালো সে। এরই মাঝে হাতের ঝুনঝুন কাঁচের চুড়ির শব্দ ভাসলো অভ্রের কানে। এতে অভ্র বিরক্ত হলো খুব, এত সকালে তাঁর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে কে?’

ধীরে ধীরে যেন এই শব্দের প্রবণতা আরো বাড়লো অভ্রের। এতে ভয়ংকরভাবে বিরক্ত হলো অভ্র। চোখ মুখ কুঁচকে এলো তাঁর। অভ্র গায়ের কাঁথাটা সরিয়ে প্রচন্ড বিরক্ত নিয়ে হাল্কা উচ্চস্বরে বলে উঠল,

‘ হচ্ছেটা কি এইভাবে ঘুমের মধ্যে বিরক্ত করছো কেন?’

আচমকাই অভ্রের চেঁচানো শুনে থমকে গেল আদ্রিজা। পিছন ঘুরে তাকালো সে, হাত থেকে চিরুনিটা পড়ে গেল আনমনেই।’

#চলবে….