গ্রামের পিচ্চি বউ পর্ব :- ২৮ + ২৯ এবং ৩০

0
1167

গল্প :- গ্রামের পিচ্চি বউ
পর্ব :- ২৮ + ২৯ এবং ৩০
.
.
-:”আর বললাম একা একা কলেজের বাইরে বের হবে না ওকে…
রুমকি:বলল হুমমম ওকে আপনে তারাতাড়ি আইন যেনো..
ওর ঐ রকম কথা শুনে পাশের বসে থাকা কয়েকটি মেয়ে হু হু করে হেসে উঠলো..
আমি:রুমকি কে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম ,তুমি প্লিজ একটু শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করো ..দেখলে তো ওরা তুমার কথা শুনে কিরকম ঠাট্টা করে হাসতে লাগলো..
রুমকি:কেনে তে..
আবার ও মেয়ে গুলো হাসছে ..
আমি:ওর দিকে তাকিয়ে একটু রাগি টাইপের চোখ নিয়ে বললাম আমি যা বলছি তাই কর ওকে..
রুমকি: একটু ভয় পেয়ে গেল বলল, ওকে..
আমি:হুমমম আমি তাহলে গেলাম Bye..
রুমকি: Bye..
তারপর আমি অফিসে চলে আসলাম..

কিছু কাজ ছিলো সব কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ৪টা বেজে গেলো..
হঠাৎ ফোনটা হাতে নিয়ে টাইম দেখে তো আমার চোখ কপালে উঠে গেল..

এ কি ৪টা হয়ে গেছে ,রুমকি কে নিয়ে আসতে হবে কলেজ থেকে তা ছাড়া ও কলেজে নতুন গেছে আজ ..সব কিছু জানে না চিনে না কি না কি করে..
তারাতাড়ি গাড়ি টা স্টার্ট দিলাম অফিস থেকে বেরিয়ে..
ড্রাইভিং করছি গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিলাম আরেকটু বেশি..
কলেজের সামনে এসেই গাড়ি থামিয়ে, গাড়ি থেকে নেমে এক দৌড়ে কলেজের ভিতর ঢুকলাম..
রুমকির ক্লাসে ঢুকে দেখি রুমকি নেই..
কি করবো এখন কোথায় গেল ও,এত বড় কলেজের মধ্যে এখন কোথায় খুঁজবো ওরে..
হঠাৎ চোখ পড়লো সকালে যেই মেয়ে গুলো রুমকির কথা শুনে হাসছিল তাদের দিকে..
আমি:এই যে ইস কিউজ মি ..
মেয়ে গুলো:জি বলুন..
আমি: আচ্ছা আপনারা কি এইখানে সকালে একটা মেয়ে কে রেখে গেছিলাম দেখেছেন সে কোথায় গেছে..?
মেয়ে গুলো:জি ঠিক কোন মেয়ে টার কথা বলছেন এখানে তো অনেক মেয়েই আছে..
আমি:আসলে সকালে আপনারা যার কথা শুনে হাসছিলেন ,তার পরনে একটা হলুদ রঙের ড্রেস ছিল..
মেয়ে গুলো:ইয়ে হলুদ রঙের জামা পড়া মেয়ে..
আমি:জি হে ,দেখেন মনে পড়ছে..
মেয়ে গুলোর মধ্যে থেকে একটা মেয়ে বলল,হে ঐ মেয়ে টা তো শহীদ মিনারের পাশে বসে আছে দেখেছিলাম..
আমি ওহ থ্যাংকস ..বলেই শহীদ মিনার এর পাশে গেলাম এক দৌড়ে..
গিয়ে দেখি ও আরেকটি মেয়ের সাথে গল্প করছে আর হাসছে …
আমার তো রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে..
আমি ওকে খুঁজে বেরাচ্ছি পুরো কলেজ আর ও এখানে গল্প করে আড্ডা শুরু করছে..
আমি সামনে যেতে ই বলে উঠলো আপনার এখন আসার সময় হলো..?
আমি:সরি অফিসে একটু বেশি কাজ ছিলো তাই আসতে লেট হয়ে গেছে..
রুমকি কে পাশের মেয়েটা জিগ্গেস করলো আমি কে..
রুমকি আমার দিকে তাকিয়ে আছে..
আমি বললাম আমি ওর husband..
মেয়েটি ও আমি রুমকির নিউ ফ্রেন্ড তান্নি..
ওর সাথে একটু কথা বলে বিদায় জানিয়ে ,গাড়ির পাশে যাচ্ছি আমি আর রুমকি পাশাপাশি হেঁটে..

আমি কোনো কথা বললাম না আর ওর সাথে , ভিতরে অনেক রাগ জমেছে ওর প্রতি..
একটা কথা ও বুঝে না এত বেশি পিচ্চিদের মতো আচরণ করে ..
দেততত ভালো লাগছে না, গাড়িতে উঠলাম ও উঠে বসলো..
.
.
#Part :- 29
.
.
-:”গাড়িতে আমি আর ওর সাথে বেশি কথা বললাম না..ও অবশ্যই কথা বলতে চেয়েছে কয়েকবার আমি শুধু হুমমম, হে, না, দিয়েই উত্তর দিলাম..
আমার এরকম কথা শুনে ও আর কিছুই বলল না ,বাকি পথ কথা না বলেই কাটিয়ে দিলো..
বাসায় পৌছে গেলাম,গাড়ি থেকে নেমে ও আমার আগেই রুমে চলে গেল..
আমি ও রুমের দিকে রওনা দিলাম, তারমধ্যেই আম্মু বলল ..
আম্মু:কি রে রাফসান রুমকির ভর্তির কি হলো..?
আমি: ভর্তি করে দিলাম,কাল থেকে ক্লাস করতে পারবে..
আম্মু:ওহ আচ্ছা তাহলে যা ফ্রেশ হয়ে ,রুমকি কে নিয়ে খাবার টেবিলে আয়..
আমি:ওকে আম্মু..
রুমে এসে সোজা ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম..
তারপর হঠাৎ খেয়াল করলাম রুমকি রুমে নেই..
কোথায় গেল আবার ,খাবে না নাকি ..?
সারাদিন তো কিছুই খায় নি আমি ও খাই নি..
কোথায় গেল এখন আবার, একটু বেলকুনিতে গিয়ে দেখি..
যা ভাবছি তাই ,ও এইখানে দাঁড়িয়ে আছে..
আমি: রুমকি..
রুমকি: আমার কথায় প্রকৃতির মায়া কাটিয়ে বাস্তবে ফিরে এলো বলল..জি বলুন..
আমি:খাবে না ..
রুমকি:নাহ আমার খিদে নেই , আপনি খেয়ে নিন..
আমি:খিদে নেই মানে সকালে নাস্তা করে বেরিয়ে গেলাম , সারাদিন তো কিছুই খাও নি এখন বলছো খিদে নেই..
রুমকি:হুমমম ..
আমি:(এবার মাথা টা গরম হয়ে গেল ওর কথা শুনে..) একটু ধমক দিয়ে বললাম ,নেকামি না করে আসো বলছি আমার সাথে..
রুমকি: সত্যি আমার খিদে নেই..
আমি: ফাজিল মেয়ে চর মেরে দাঁত ফেলে দেবো,আর একবার যদি বলো খিদে নেই চল আমার সাথে..
বলেই ওর হাত ধরে নিচে নেমে আসলাম..
আব্বু আম্মু রুমে চলে গেছে,ওনারা আগে খেয়ে নিছেন..
আমি রুমকি কে চেয়ার এ বসালাম , পাশের চেয়ারে আমি বসলাম..
রুমকির প্লেটে খাবার বেড়ে দিলাম, আমার প্লেটে ও নিলাম..
(মনে মনে বললাম , মানুষের বউ খাবার বেড়ে দেয় স্বামীকে আর আমি আমার বউ কে দিচ্ছি.. কপাল আমার কবে যে এই পিচ্চি বউ টা একটু বুঝবে..)
রুমকি বসে আছে চুপ করে..
আমি:কি হলো খাচ্ছ না কেনো,খাও..
রুমকি:হুমমম , খাচ্ছি ..
বলেই খাওয়া শুরু করলো, আমি ও খাচ্ছি..
খাওয়া শেষে রুমকি আবার রুমে চলে গেল..
আমি সব কিছু হালকা গুছিয়ে রেখে ,রুমে আসলাম..
রুমে এসে দেখি আমার পিচ্চি বউ টিভি তে কার্টুন দেখছে আর দাঁত বের করে হাসছে..

আমাকে দেখেই টিভি টা অফ করে দিয়ে চুপ করে শুয়ে রইলো বিছানায়..
আমি পাশে গিয়ে বসলাম , বললাম কি হয়েছে তুমার..
কোনো শব্দ নেই..
আমি বুঝতে পারলাম আমার পিচ্চি বউ টা আমার উপর অভিমান করেছে..
আমি ওর পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম ওই পিচ্চি বউ রেগে আছো কেন..?
রুমকি:আপনে আমার সাথে কথা বলবেন না ওকে..
আমি: কেন..
রুমকি:আপনে আমারে বকা দিছেন , আমার সাথে Missbehave করছেন তাই..(কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল..)
আমি:ওরে আমার পিচ্চি বউ টা এর জন্য রেগে আছো,আর এরকম করবো না.. আর রাগ করে থেকো না..
তবে হে তুমি আমার কথা শুনতে হবে, তাহলে আর এরকম করবো না..
.
.
#Part :- 30
.
.
-:”রুমকি বলল, কি কথা..?
আমি: আমি যা বলবো তাই করবে আর আমি যা নিষেধ করবো তা একদম ভুলে ও করার চেষ্টা করবে না ওকে..
রুমকি:হুমমম ওকে..

ওর শুদ্ধ করে কথা বলতে শুনে মনে মনে অনেক খুশি হলাম..
আমার বিয়ের খবর অফিসের কেউই জানে না এখন ও..
তাই ভাবছি আগামি সপ্তাহে একটা পার্টি দেবো রেস্টুরেন্টে ,আর সেই পার্টিতে অফিসের সবাইকে দাওয়াত দিয়ে রুমকির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব..

এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম,রুমকি আমার আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে আমার পেটের উপর একটা হাত রেখে..

ঘুম থেকে উঠে দেখি ৫টা বাজে,রুমকি কে ডাকলাম নামাজ পড়ার জন্য..
ও উঠে গেল, একসাথে দুজন নামাজ পড়ে একটু গল্প করলাম ..
আমি রুমকি কে বললাম কলেজে নতুন তুমি , কোনো ছেলের সাথে একদম কথা বলবে না ..আর হে কেউ কিছু বললে সোজা প্রিন্সিপাল স্যার কে গিয়ে বলবে..আর আমি আসার আগমুহূর্ত পর্যন্ত তুমি কলেজের ভিতর থাকবে ,ভুলে ও বাইরে বের হবে না..ওকে যা বলছি মনে থাকবে তো..?
রুমকি:হুমমমম থাকবে..
আর যদি আমার কথা গুলো না শুনো আর কখনো কথা বলবো না কিন্তু তুমার সাথে..

তারপর রেডি হয়ে খাবার টেবিলে গেলাম দুজন..
আব্বু আম্মুর সাথে গল্প করতে করতে নাস্তা সেরে নিলাম ..
আম্মু আব্বু কে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠলাম আমি ও রুমকি..
রুমকির কলেজের সামনে এসে রুমকি কে নামিয়ে দিলাম আর ওর সাতে কিছু টাকা দিলাম..
ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে..
আমি: বললাম, এইটা রাখো আমার আসতে দেরি হলে ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিও ওকে বায়…
রুমকি:হাত নেড়ে বায় জানালো..
আমি গাড়ি স্টার্ট দিলাম, অফিসে চলে আসলাম..
ম্যানেজার কে পার্টির ব্যাপারে সব খুলে বললাম, এবং ওনাকেই সব ব্যবস্থা করতে হবে বললাম..
ম্যানেজার: টেনশন করবেন না স্যার আমি ঠিকমত সব কিছুর আয়োজন করবো..
আমি: গুড..
ম্যানেজার : স্যার গেস্ট কত জন কে বলতে হবে যদি একটু বলতেন..?
আমি: অফিসে কর্মরত সকল সদস্যকেই ইনবাইট করবেন ওকে…
ম্যানেজার:জি স্যার ওকে..
ম্যানেজার চলে যাওয়ার পর আমি কয়েকটা ফাইল পূরণ করলাম…
ফাইলের কাজ শেষ করতে করতে প্রায় ৪টা হয়ে গেছে আজ ও..
আমি তারাতাড়ি করে গাড়ি বের করলাম..
রুমকির কলেজের সামনে গাড়ি টা থামালাম, কলেজের ভিতর ঢুকে যা দেখি তাতে আমার মাথা খারাপ হয়ে গেল..
কয়েকটা ছেলে মিলে রুমকি কে টিস করছে..
আমি সামনে যেতেই ওরা পালিয়ে গেল..
আমি রুমকির দিকে তাকিয়ে দেখি ও ভয়ে কান্না করছে,সবার সামনে ই ওকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম..
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে, আমার কি তাতে দেখুক না আমার বউ কে আমি কোলে নিচি তাতে কার কি..
ওকে কোলে করে নিয়ে গাড়িতে বসালাম..
আমি ও পাশের সিটে বসলাম, গাড়ি স্টার্ট দিলাম..
ও চুপ করে আছে বাট চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে..
আমি বললাম রুমকি কান্না থামাও ,কি হয়েছে এইভাবে কান্না করছো..
এবার একটু বাড়িয়ে দিল কান্নার স্পিড..
.
.
চলবে……………….