চন্দ্রপুকুর পর্ব-৩১+৩২+৩৩

0
228

#চন্দ্রপুকুর
||৩১ ও ৩২তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
বেগম লুৎফুন্নেসা অন্দরমহলে ফিরেছেন। তাঁর চোখে-মুখে এক তৃপ্তি বহু বছর পর। কতো কাল পর কণ্ঠ শ্রবণ করলো প্রিয় মানুষটির।

আয়েশা খাতুন এগিয়ে আসেন তাঁর দিকে। তিনি দ্বিধান্বিত।

“আসসালামু আলাইকুম, বেগম। আল্লাহ আপনাকে এভাবে হাসিমাখা রাখুক।”

“হুম, তুমি জানো না আজ কতো বছর পর আমি স্বস্তি বোধ করছি। হৃদয় যেন থমকে ছিল আমার আরামানের উদ্দেশ্যে। তবে আফসোস একটাই, আমায় আজও ভুল বুঝে সে। তাই তো বেগম বলে সম্বোধন করলো।”

“হতাশ হবেন না বেগম। আল্লাহ সাক্ষী, আপনি যা করেছেন তা আরমান বাবুর মঙ্গলের উদ্দেশ্যেই করেছেন। তবে আমার… আসলে আমার আপনাকে কিছু জানানোর আছে।”

ভ্রু কুঁচকে ফেলেন বেগম।
“মানে? কী হয়েছে? যা বলার পরিস্কার ভাবে বলো আয়েশা।”

আয়েশা খাতুন ছোট্ট এক শ্বাস ফেলে ব্যক্ত করে সম্পূর্ণ পরিস্থিতি। বেগম লুৎফুন্নেসা নির্বিকার।

“আমি কক্ষে যাচ্ছি। আমার জন্য আহারের ব্যবস্থা করতে বলো রন্ধনশালায় যেয়ে।”

তিনি হনহন করে নিজের কামরায় চলে যায়। পিছন পিছন যান আয়েশা খাতুনও।

“তবে আপনি কি বেগম শাহাজাদি মেহনূরকে রক্ষার উদ্দেশ্যে কিছু করবেন না?”

“এক মেয়ের অনেক প্রিয় একখান পোষা মুরগি ছিল। বারবার জঙ্গলে চলে যেতো। মেয়েটা বারবার তার পিছন পিছন যেয়ে ফিরিয়ে আনতো। বোঝাতো সেখানে শিয়াল আছে, খেয়ে ফেলবে। মুরগি বুঝতো না। এমন একবার, দু’বার, তিন বার হয়।

তারপর মেয়েটা মুরগিটার পিছন আর যায়নি। কারণ সে বুঝতে পেরেছিল কারো মরণের নেশা ধরলে তাকে একবার, দুইবার, খুব বেশি হলে তিনবার ফেরানো যায়। তারপর একদিন না একদিন সে নিজ কর্ম দোষে ধ্বংস হবেই। তাকে সময় দেওয়াই সময়ের অপচয় বটে।

বরং তার চেয়ে ভালো হয় যে কয়লাটি হিরা হওয়ার পথ ধরেছে তাকে নিজেকে যোগ্য করতে সহায়তা করা।”

মনিবের কথার মূলভাব বোধগম্য হয় আয়েশা খাতুনের। নৈশব্দে কক্ষ ত্যাগ করেন।

___

যামিনীর ক্ষততে ঔষধি লাগাচ্ছে দিলরুবা। সে বাদে কাউকেই কক্ষে রাখেনি কিশোরী।

“আহ!” কোঁকিয়ে উঠে সে।

“লাগছে বেগম? বৈদ্য বলেছে খুব শিঘ্রই সেড়ে যাবে। তবে একটা বিষয় বুঝলাম না আপনি কীভাবে এতোটা নিশ্চিত ছিলেন যে শাহাজাদি মেহনূর একা একা আসবেন? যদি জমিদার বাবু না আসতেন তখন…?”

“যতোটুকু আমার বাবু মশাইয়ের কথা। তাঁর নিকট আমিই আবদার করেছিলাম আজ ভোজনসভার পর শিকারে যাব একসাথে। তিনি যেন কোথাও না যান। তাই তাঁর অন্দরমহলে থাকা এবং চেঁচামেচি শুনে নিশ্চয়ই ঘরে বসে থাকবেন না।

আর এতো বড়ো একটা কাণ্ড ঘটনার পর, তাঁদের সর্বোচ্চ প্রয়াশ থাকবেই লোকসমাজে নিজেকে আবার উত্তম প্রমাণ করার। তাই ঝামেলা কিংবা সকলে একত্রে অনুপস্থিত থাকার ভুল করবে না। আর আম্মিজান অর্থাৎ বেগম নূর বাহারের তো দম্ভে ভূমিতে চরণ টিকে না। তিনি কখনোই আসতেন না।

বাকি রইলেন দাদীজান ও শাহাজাদি। দাদীজান আজ অন্দরমহলের বাহিরে যাবে তা আমি জানতাম। তাই সবকিছু অনেকটাই নিশ্চিত ছিল।”

“কিন্তু বেগম লুৎফুন্নেসা বাহিরে যেতো তা কী করে জানলেন আপনি বেগম? এই বিষয়ে তো অন্দরমহলের কাউকেই বলতে দেখলাম না।”

“মোহিনী জানিয়েছে।”

“কী! মোহিনী!” বিস্মিত দিলরুবা। তার বয়সে কনিষ্ঠ এই কন্যা একদিনেই এমন কর্ম করলো। অবিশ্বাস্যকর তার নিকট।

“হুম, সে আমার ব্যক্তিগত সেবায় নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তাব রেখেছিল সবার অন্তরালে। আমিও খুবই স্পষ্ট করে বলেছিলাম এই স্থান ও বিশ্বাস অর্জন করে নিতে হবে, হয়তো এমন কোনো তথ্য দ্বারা যা অন্য কেউ জানে না এবং আমার সাথে জড়িয়ে। সে তা করেছে।”

“মেয়েটা তাহলে কাজের। সামনে অনেক কাজে লাগবে। তবে এতো দ্রুতো কি ভরসা করা উচিত? যদি ধোঁকা দিয়ে বসে।”

যামিনী চোখ জোড়া খুলে। উঠে জানালার সম্মুখে যেয়ে দাঁড়ায়।

ফোঁস করে শ্বাস ফেলে শুধায়,
“জীবনটা বড্ড দ্রুতোই চলে যাচ্ছে দিলরুবা। আমিই পিছনে পড়ে আছি। আমি সব সহজ করে ভাবতে চাইছিলাম, সময় দিতে চেয়েছিলাম নিজেকে হুট করে আসা এই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে।। কিন্তু ভুল ছিলাম আমি।

এখানে সময় খুব বদলায়, সাথে পরিস্থিতিও। সবকিছু খুব বেশিই অনির্দিষ্ট। খাণিক ঢিল দিলেই হারিয়ে যায় সকল কিছু। ঝুঁকি নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। এই নবাববাড়িতে জীবন হলো একটা খেলা, প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা বাজি, এই হার, এই জিত।”

“আপনি ভাববেন না বেগম। যেভাবে শাহাজাদি নামক কাঁটা দূর হয়েছে আপনার পথ হতে। একে একে উপড়ে ফেলবেন আপনি সকল কাঁটাই।”

“আমিন, দিলরুবা। আমিন।”

দ্বার খোলার শব্দ শ্রবণগোচর হয়। পিছন ঘুরে তাকায় উভয় নারী। মোর্শেদা খাতুন প্রবেশ করেছেন। তাঁর মুখশ্রীতে উপচে পড়ছে আনন্দ।

“আসসালামু আলাইকুম চন্দ্রমল্লিকা। এখন সুস্থ বোধ করছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। তবে আপনার তো খোঁজই পাওয়া যায় না আজকাল আম্মাজান।”

“আমি হলাম কি না নীড় হারা পক্ষী, এদিক-ওদিক উড়ে বেড়াই চিন্তাহীন হয়ে। নেই নীড়ে ফেরার ভাবনা, নেই অপেক্ষা করার কেউ।”

যামিনীর নিকট উদাসীন শোনালো মধ্যবয়স্ক নারীর কণ্ঠ। যদিও অনুধাবন করতে পারলো না কীসের এতো দুঃখ তাঁর।

“এভাবে বলছেন ক্যানো আম্মাজান? আপনার পুত্রের নিকট কতোটা ভালোবাসাময় আপনি, তা কি আমার জানাতে হবে?”

আলতো করে চিবুক ধরেন মোর্শেদা খাতুন। আদুরে ভঙ্গিমা তাঁর।

“আল্লাহ তোমাদের সুখী করুক এই কামনাই করি। যেভাবে যাচ্ছো সেভাবেই যেয়ো চন্দ্রমল্লিকা। আমার ন্যায় কূলহারা যেন না হও।”

তিনি চলে যান।

“দিলরুবা, তুমি জানো মোর্শেদা খাতুন কে? আমার তো তাঁর কথাবার্তা, চালচলনে শুধুমাত্র একজন উচ্চপদস্থ খাদিম মনে হয় না। খুবই শালীন, মর্যাদশীল, আভিজাত্যপূর্ণ নারী মনে হয়।”

“এই অন্দরমহলে তাঁর বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। তাঁকে সকলে জমিদার বাবুর দুধমা স্বরূপই জানেন।”

“ঠিক আছে, বাদ দাও। তুমি এক কাজ করো। অর্থ দিয়ে হোক, ক্ষমতার জোর বা ভয় দেখিয়ে হোক শাহাজাদি মেহনূরের সাথে আমার সাক্ষাতের ব্যবস্থা করো।”

“আপনার ইচ্ছে, বেগম। আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব।”

___

বেগম লুৎফুন্নেসার কক্ষে এসেছে মেহমাদ শাহ। সে আকাশে ঘোর কালো আঁধার নামা অবধি অপেক্ষা করেছে দাদীজানের ডাক আসার। কিন্তু তাকে বিস্মিত করে তেমন কিছু যখন হয়নি তখন নিজেই এসেছে তাঁর দোয়ারে।

“আসসালামু আলাইকুম, দাদীজান।”

বেগম লুৎফুন্নেসা দাসীর হাতে চুলে তৈল দেওয়াচ্ছেন। তৈলের সুগন্ধিতে সারা কামরা মেতে আছে।

“ওয়ালাইকুম আসসালাম, আমার সিংহ। তা হুট করে এই বৃদ্ধার কথা মনে পড়লো কী করে?”

মৃদু হাসলো যুবক।
“আমার তো রোজই মনে পড়ে দাদীজান, আপনার চোখে তা ধরা দেয় না। আপনাকে আজ বেশ স্বস্তিতে দেখা যাচ্ছে। হয়তো অন্দরমহলে হওয়া তুলকালাম কাণ্ড এখনও কেউ কানে তুলে দেয়নি আপনার।”

“তুমিই সেদিন বলেছিলে তোমার হাজারটা কান থাকলে আমার তো নূন্যতম একশত কান আছে, তাই না? সবই শ্রবণগত হয়েছে আমার।”

“তাহলে নিশ্চয়ই জানেন আপনার পৌত্রীর বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাও জানেন। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি…”

“তোমার কোনো প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রয়োজন নেই। আমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেছি। তোমার ফুপিজানকে পত্র পাঠিয়ে দিয়েছি তার পুত্র মৃণ্ময়কে পাঠাতে বলে। হয়তো দিন দুয়েকের মাঝে এসে নিয়ে যাবে তাকে।

ততদিন পর্যন্ত নজরবন্দী থাকুক, তবে অন্দরমহলের বাহিরে যেন সে খবর না যায়। আমির হাওলাদারকে লোক হিসেবে তো চিনোই। তার কর্ণগোচর নাহলেই হলো। আর আজকাল বেলাল্লাপনা একটু অধিকমাত্রাতেই করছে সে।”

আজ বহুদিন পর নিজের পরিচিত দাদীজানকে যেন দেখলো মেহমাদ শাহ। এই নবাববাড়িতে এবং নিজের গোটা পরিবারে সবচেয়ে ন্যায়পরায়ণ ও বুদ্ধিমতী শাসক তার নিজের দাদীজানকেই মনে হতো।

দাদাজান ও বাকি সবাই শাসক ও জমিদার হিসেবে খুব মন্দ নাহলেও নির্দয় ছিল বেশ। সেক্ষেত্রে দাদীজান ক্ষেত্রবিশেষ ছাড়া নিঃসন্দেহে মানবিকও।

“আচ্ছা, দাদীজান। যা আপনার নিকট সঠিক মনে হয়। আজ উঠি তাহলে?”

“কীসের উঠি? এতোদিন পর আমার দরবারে এসেছে আমার সিংহ। এতো তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না। বসো এখানে। আজ তোমার মাথা তেল মালিশ করে দিতে দিতে গল্প-গুজব করবো আবার পূর্বের ন্যায়।”

যুবক ফেলতে পারে না দাদীজানের আবদার। বসে পড়ে দাদীজানের পদতলে। বেগম লুৎফুন্নেসাও আজ যেন গল্পের ঝুড়ি খুলে বসেছে।

___

সকলের আড়ালে শাহাজাদি মেহনূরের কক্ষে এসেছে যামিনী। দিলরুবা ও মোহিনী মিথ্যে বাহানায় ব্যস্ত রেখেছে প্রহরীদের।

অন্ধকারচ্ছন্ন কক্ষ। সাঁঝের বাতি জ্বালানো হয়নি।

“কেমন লাগছে অন্ধকারাচ্ছন্ন এ পরিবেশ শাহাজাদি?”

“কে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মেহনূর। কাঁদতে কাঁদতে তার শোচনীয় দশা।

“আমি বাবু মশাইয়ের সর্বপ্রথম ও সর্বশেষ স্ত্রী, বেগম চন্দ্রমল্লিকা। যার জন্য এই অন্ধকারের স্বাদ গ্রহণ করতে হলো আপনাকে। তবে আমার কী দোষ?

বারবার বুঝিয়েছিলাম আমার পথে আসবেন না, আপনি শুনেননি। দেখেন পরিণাম স্বরূপ কী হাল হয়েছে আপনার? এখনও সময় আছে মেনে নিন বাবু মশাই আমাকে ভালোবাসে, শুধু আমাকে।”

ক্রুব্ধ হলেও নিজেকে সামলে হো হো করে হেসে উঠে শাহাজাদি মেহনূর। কিশোরী বিড়ম্বিত হয়।

“তোমার মনে হয় শাহ তোমায় ভালোবাসে? তবে আমার নিকট এসেছিলেন কেন? আমায় বিবাহ কর‍তে রাজি হয়েছিলেন কেন? তোমার ভালোবাসার রঙ যদি শাহের গোটা হৃদয়ে লেগে থাকে, তবে আমার ভালোবাসার রঙও এক কোণে লেগেছিল। তুমি আসার বহু পূর্বে তিনি আমায় ভালোবেসে নাম দিয়েছিলেন চন্দ্রপ্রভা। এর কোনোটাই মিথ্যে নয়, তুমিও জ্ঞাত সে সম্পর্কে।”

যামিনী উত্তর দেয় না। সত্যিকার অর্থে উত্তর দেওয়ার মতোন কিছু পাচ্ছে না সে। অগ্নিময় চাহনি ছুড়ে দিয়ে কামরা ত্যাগ করে সে।

___

গভীর রাত্রি, মেহমাদ শাহ নিজ কক্ষে ফিরেছে। সে আশা করছিল দ্বার খুললেই দেখতে পাবে প্রিয় মুখশ্রী। কিন্তু না, যামিনী নেই।

“মিনার! দাসী পাঠাও, বেগম চন্দ্রমল্লিকাকে আমার কক্ষে আসার আদেশ করো।”

তার কথামতোই দাসী পাঠানো হয় যামিনীর নিকট। রমণী তখনও ক্রোধের অনলে পুড়ছে। মেহনূরের বাণীগুলো যেন এখনও তার কানে বাজছে।

“আসসালামু আলাইকুম, বেগম। আপনাকে জমিদার নবাব শাহ তার কামরায় যাওয়ার আদেশ দিয়েছেন।”

“তাঁকে যেয়ে বলে দাও বেগম চন্দ্রমল্লিকা কোথাও যাবেন না।”

পৌঁছে যায় এই বাক্য মেহমাদ শাহের কানে। ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে সে।

বিড়বিড়ায়,
“আজকাল এই মহলের সবার মাথাতেই চড়াও হয়েছে ক্ষমতার দম্ভ! ঠিক আছে, নেশা কাটাতে কীভাবে হয়, তা আমিও জানি।”

মেহমাদ শাহ শক্ত মুখে হনহন করে চলে যায় যামিনীর কক্ষের দিকে। মিনার হুট করে মালিকের ভাব-ভঙ্গিমা পরিবর্তনের কারণ অনুধাবন করতে পারলো না।

যামিনী মেঝেতে উদাসীন ভঙ্গিমায় বসে। দিলরুবাকেও কামরা হতে বের করেছে সে। জোরালো শব্দে দরজা খুলে প্রবেশ করে মেহমাদ শাহ।

রমণী নির্লিপ্ততা বজায় রাখে। যুবক আরও ক্ষুব্ধ হয়ে শীর্ণ হস্ত খানা শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড় করায়।

গাল চেপে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,
“তোমার স্পর্ধা কী করে হয় আমার আদেশের বাহিরে যাওয়ার? তুমি কি ভুলে যাচ্ছো আমি জমিদার, তোমার জন্যও আমি জমিদার মেহমাদ শাহই।”

মৃদু ধাক্কার সহিত মুক্ত করে তাকে। রমণী আহত ও অভিমানী হরিণীর ন্যায় ছলছল দৃষ্টিতে তাকায়। তার চাহনি ছুড়ি হয়ে আঘাত করে হয়তো প্রেমিকের হৃদয়ে।

“হ্যাঁ, আপনি জমিদার। আমি অযোগ্য আপনার। তাই তো ভালোবাসেননি আমায় পুরোপুরি। ভালোবেসেছেন মেহনূরকে, ভালোবেসে নাম দিয়েছেন চন্দ্রপ্রভা। ছুঁবেন না আমায়। যান আপনার অপরূপা চন্দ্রপ্রভার নিকটে।”

হতবাক হয় মেহমাদ শাহ। তার বাচ্চা হরিণী এই কারণে অভিমান করে বসেছিল। তবুও তার রাগ এখনও দমেনি।

সেই রাগ হতেই যামিনীকে আগলে ধরে। বন্দী করে তার অধর। আজ প্রথম অনুমতি ব্যতীতই আপন করে নেয় তাকে মেহমাদ, যদিও সঙ্গ না দিলেও বাধাও প্রদান করেনি রমণী।

___

বেগম নূর বাহার ও শাহাজাদি মেহনূর সবার গোপণে সাক্ষাৎ করে। রাতের আঁধারে চাপা পড়ে থাকে এই সাক্ষাৎ।

“এবার কী হবে মেহনূর? ঐ কন্যা তো তোমায় এমন ভাবে আটক করেছে, তুমি চাইলেও বের হতে পারবে না।”

“আপনি চিন্তা করবেন না মামীজান। আমি তারর এমন স্থানে আঘাত করছি, যে সে খুব শিঘ্রই সঙ্গ ছাড়া হবে নবাবের। তা আমি থাকি, আর না থাকি।”

ভাবুক হন বেগম নূর বাহার। জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই যুবতী হেসে জানায় তার ধূর্ত পরিকল্পনা।

শুনে খুশি হন মধ্যবয়স্ক নারী।
“তাহলে তো ঐ চন্দ্রমল্লিকার পতন নিশ্চিত। সেটা আজ হোক বা কাল হোক।”

“আমি তো তাই-ই চাই মামীজান। আমি চলে যাব ঠিকই, তবে তা পুনরায় ফিরে আসার জন্য আরও ক্ষমতাধর হয়ে।”

ললাটে চুমু খান বেগম নূর বাহার।
“মাশা আল্লাহ! কী বুদ্ধি তোমার আমার চাঁদের আলো! ঠিক আছে, আমি এখন যাচ্ছি। কেউ দেখে না ফেলে যেন।”

সে দ্রুতো ভঙ্গিমায় হেঁটে চলে যান। তাঁর মনে হলো কেউ যেন তাঁকে দেখছে। তবে পিছন ঘুরে কাউকে দেখতে না পেলে মনের ভুল ভাবলেন।

তিনি গমন করতে আড়াল হতে বেড়িয়ে এলেন এক আগুন্তক। তাঁর মুখশ্রীতে রহস্যময় হাসি।

___

মৃদু হলদে আলো জ্বলছে ঘরে। কেদারায় বসে মদ্যপান করছেন এক ব্যক্তি। তাঁর হস্তে একটি ছবি আঁকড়ে ধরে আছেন। চোখে-মুখে তীব্র ক্ষোভ।

“মনমোহিনী, যাদের জন্য তোমার হতে দূরে আমি তাদের সবাইকে ভোগ করাব নরকীয় শাস্তি। এ আমার ওয়াদা!”

টেলিফোনটা বেজে উঠে। চোখে সম্মুখে ঢুলছে সকল দৃশ্য, নেশাটা আজ অধিকই হয়েছে তাঁর। কোনোরকম টেলিফোনটার কল রিসিভ করে সে।

অপরপাশ হতে ব্যক্তিটি এক লোমহর্ষক তথ্য প্রকাশ করেন। তথ্যটি কীভাবে যেন তৃপ্তি দেয় তাঁকে।

মনে মনে ভাবেন,
“প্রলয় হয়ে আমি তো সব ধ্বংস করতে এগিয়ে আসছিই। তবে তার চাইতে বড়ো ধ্বংসও অপেক্ষা করছে শেরপুরের জমিদারির জন্য। যাতে আমার কোনো হস্তক্ষেপ নেই।”

___

প্রতিদিন মিষ্টি রোদে নিদ্রা ভঙ্গ হলেও আজ মেহমাদ শাহের নিদ্রার রেশ কাটে ফোঁপানোর আওয়াজে। পাশে তাকালে দেখতে পায় যামিনী ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

বিরক্তিমাখা গলায় সে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,
“আমি কি তোমাকে মেরেছি চন্দ্রমল্লিকা? শুধু শুধু অশ্রু ফেলছো ক্যানো?”

“আমি কাঁদলে আপনার কী? গতকাল তো বললেন আমায় ভালোবাসেন না। ভালোবেসেছিলেন শাহাজাদি মেহনূরকে, বাধ্য হয়ে বিবাহ করছেন আমায়।”

যুবক ভাবে সত্যিই তো…

চলবে…

#চন্দ্রপুকুর
||৩৩তম পর্ব||
– ঈপ্সিতা শিকদার
যুবক ভাবে সত্যিই তো এ কথা ভোরে শেষদিকে বলেছিল সে। তবে কথাটি শতভাগ মিথ্যে তাও নয়। একপ্রকার অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনিচ্ছাকৃত ভাবে বিবাহ হয়েছিল তাদের।

তার ভাবনার মাঝে আরও শব্দ করে কেঁদে উঠে যামিনী। মেহমাদ শাহ বিচলিত হয়ে সেদিকে তাকায়। তার বাচ্চা হরিণী নয়নযুগল রক্তিম, যেন টোকা দিলেই রক্ত ঝরবে। শুভ্র রঙা হলে নির্ঘাত এতোক্ষণে গাল, নাক, কানও লালচে হয়ে পড়তো।

“আপনি আমাকে ভালোবাসেন না, তাই তো? আমি আপনার পথের কাঁটা। তবে আল্লাহর নিকট দোয়া করি আমার মৃত্যুতে আপনি আপনার ভালোবাসা পান।”

ক্রুব্ধ হয় যুবক। গণ্ডদেশ শক্ত হাতের ছোঁয়া পড়ে যায় দ্রুতোই।

শীতল কিন্তু হুমকির সুরে শুধায়,
“সাহসটা আজকাল অধিক হয়েছে তোমার যামিনী। স্পর্ধা কী করে হয় আমার উপস্থিতিতে এরূপ বাণী মুখ হতে বের করার?”

কষ্ট হয় রমণীর। তবুও চোখজোড়া স্থির রাখে মানুষটির দিকে।

“সত্যি বৈকী মিথ্যে তো বলিনি। আপনি তো নিজ মুখে স্বীকারোক্তি দিয়ে সত্যতার প্রমাণ দিয়েছেন।”

এই নারীর অভিমানী, ছলছল চাহনির সামনে কোনো এক নিয়মবিরুদ্ধ কারণে ক্রোধ ধরে রাখতে পারে না মেহমাদ শাহ। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না।

বস্তুত, সে রাগের মাথায় কথাটি বলে ফেলেছিল। ক্লান্ত ও তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে যামিনী ফ্যাচফ্যাচ করে বৃথা কান্না শুনে বিরক্ত ও রাগ হওয়া ব্যতীত কোনো প্রতিক্রিয়াই সেই মুহূর্তে আসেনি।

ললাটে আদুরে স্পর্শ পায় যামিনী। খেয়াল করে পুরুষটি একেবারে শান্ত এখন।

“শোনো যামিনী যতো যাই হোক বাস্তবতা তো এটাই তোমাকে বাধ্য হয়ে বিয়ে করেছি। বাধ্য হয়েও বলা ঠিক হবে না। জেদ ও নিজের দম্ভ বজায়ে করেছিলাম। তবে হ্যাঁ, বিবাহের পর আমি তোমাকে পূর্ণরূপে নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছি। দেহ, মন ও মস্তিষ্ক সবকিছুর ক্ষেত্রেই।

মেহনূরকে আমি ভালোবাসি না। বরং, তাকে আমি ফুপাতো বোন বৈকী অন্য কোনো চরিত্রে কল্পনা করিনি। এ কথাটা ছিল বিরক্তির প্রকাশ মাত্র। বাকি রইলো তাকে চন্দ্রপ্রভা ডাকার কারণ। মেহনূর অর্থ চাঁদনি বা চন্দ্রপ্রভা। ছোটোবেলায় ও জন্মের পর বোন হিসেবে এ নাম দিয়েছিলাম, এতোটুকুই।

নিজের মাথায় এ কথাগুলো পরিস্কার ভাবে এঁটে নেও। আমি বারবার তোমায় সংশোধন করব সে কল্পনা কোরো না। আর হ্যাঁ, তোমার এই আচারণে প্রচুর পরিমাণ ক্ষুব্ধ আমি। সম্পর্কে বিশ্বাস না থাকলে সম্পর্ক টিকে না।”

মেহমাদ যামিনীকে রেখে গায়ে পোশাকটা কোনোরকম পরে বেড়িয়ে যায়। রমণী এবার প্রশান্ত নিজের ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়। তবুও যুবকের বলা কথায় থাকা চাপা ক্রোধের অনল তাকে ভীতিগ্রস্তও করছে।

___

যামিনী শিক্ষিকার হতে পড়ার পাঠ চুকিয়ে ফিরে আবার বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছে। তাকে অবাক করে বেগম লুৎফুন্নেসা তার সাথে যথেষ্ট পরিমাণ ভালো আচারণ করেছেন।

অবশেষে দুপুরের ভোজন শেষে কক্ষে ফিরে সে। ফিরে যার কথা তার পূর্বে মনে হয় সে হলো চাঁদনি। তার অতিপ্রিয় পোষা চন্দনা টিয়া পক্ষীটি।

“চাঁদনি! চাঁদনি! কোথায় তুমি?”

নিস্তব্ধ পরিবেশ। কোনো সাড়া নেই চাঁদনির। অথচ, যামিনী বা মেহমাদ শাহের কণ্ঠ শুনলেই সে উচ্চস্বরে ডাকে।

তবুও কিশোরী ধ্যান দেয় না তাতে। আনন্দিত মনে পা বাড়ায় বারান্দার দিকে। কিন্তু এ কী মর্মান্তিক দৃশ্য দেখতে পায় সে! খাঁচা তো বিদ্যমান, তবে পাখি দু’টো অদৃশ্য।

“দিলরুবা! দিলরুবা! আমার চাঁদনি কোথায়? কে নিয়ে গিয়েছে তাকে?”

তার অশান্ত ও উত্তেজিত কণ্ঠ শুনে দিলরুবা ও মোহিনী তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায় সেদিকে। সেও অবাক।

“ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন বেগম। কিন্তু আমরা তো চাঁদনিকে দেখিনি। আপনার সাথেই তো ছিলাম আমরা।”

যামিনী ক্রুব্ধ হয় নিজের কক্ষ হতে বের হয়। চেঁচাতে শুরু করে সে।

“আমার চাঁদনিকে কে নিয়েছো? ফিরিয়ে দাও, বলছি। আমার নজরে পড়লে আল্লাহর শপথ জান নিয়ে নিব।”

সকল দাস-দাসী মাথা নত করে রাখে। তার একজন বাঁদী ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয়,

“বেগম আমাদের মাঝে তো কেউ নেয়নি। আর আমরা দেখিনিও ঐ পক্ষীকে।”

“তাহলে বসে বসে কী কাজ করছিলে তোমরা! ধ্যান কোথায় থাকে তোমাদের? আর প্রহরীরা কোথায়?”

ছুটে আসে তার দোয়ারের প্রহরীরা।
“ক্ষমা করুন বেগম। ক্ষমা করুন। আমরা দুপুরের আহার করতে গিয়েছিলাম।”

“আজকে আমার পোষা প্রাণীকে অপহরণ করা হয়েছে, তোমরা কেউ সাড়া অবধি পেলে না। কাল আমাকে অপহরণ করলেও তো তোমরা হাতে হাত রেখে বসে থাকবে।”

সবার আড়ালে কেউ হাসে তৃপ্তির হাসি। বিড়বিড়ায়,
“তোমার ঐ প্রিয় পক্ষীটিকেও যেমন নিজের অধীনস্থ করেছি, তেমন তোমার সবকিছুই আমার হবে।”

চেঁচামেচি শুনে বেড়িয়ে আসেন নবাব পরিবার। মেহমাদ শাহও কাছে আসে।

“কী হচ্ছে এখানে?”

যুবকের কণ্ঠ শুনে অনুভূতি পূর্ণরূপে বাঁধনহারা হয়ে পড়ে রমণী। ছুটে যেয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে।

ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অভিযোগ করে,
“দেখেন না বাবু মশাই, আমার চাঁদনিকে কে যেন অপহরণ করেছে। আমি পাচ্ছি না তাকে কোথাও। ওকে এনে দেন না।”

যামিনীর পিঠে হাত রাখে সে। দিলরুবাকে আদেশ করে,
“চন্দ্রমল্লিকাকে কক্ষে নিয়ে যাও।”

আদেশ মোতাবেক কর্ম করে দিলরুবা। মোহিনীও পিছন পিছন যায় তার।

মেহমাদ শাহ এবার মিনারকে ডাকায়।
“চাঁদনিকে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করো। আর কে এই অপকর্ম করেছে তার নাম আমার চাই।”

“যথা আজ্ঞা, জমিদার বাবু।”

এদিকে যামিনী নিজের কক্ষে মন খারাপ করে বসে কামরায় বসে আছে। পোষা পক্ষীটির সাথে তার সখ্যতা গড়েছিল, গড়েছিল মায়ার এক অনড় বন্ধন। ব্যথিত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

“বেগম চন্দ্রমল্লিকা, আপনি অনুমতি দিলে আমি একটা কথা বলতে চাই।”

ভ্রু কুঁচকে সেদিকে দৃষ্টিপাত করে। ইশারায় অনুমতি দেয়।

“ভুল-ত্রুটি মার্জনা করবেন বেগম। তবে আমার মনে হয় এ কাজ শাহাজাদি মেহনূর ছাড়া অন্য কারো করার নয়।”

“এ কী করে সম্ভব? তিনি তো নজরবন্দী আছেন।”

“বেগম, আপনার যেমন এ অন্দরমহলে খাস বাঁদী আছে, নিজস্ব লোক আছে। তেমন তাঁরও আছে হয়তো আপনার হতেও অধিক।”

কিশোরী কিছু একটা ভাবে। অতঃপর তার মুখশ্রীতে ফুটে উঠে ভয়ংকর এক হাসি, যা আগে কখনও দেখা যায়নি তার মাঝে। তবে কি ভয়ংকর কিছুই অপেক্ষা করছে শাহাজাদি মেহনূরের উদ্দেশ্যে?

___

মেহমাদ শাহ বেগম লুৎফুন্নেসার কক্ষে বসে আছে। উদ্দেশ্য তার দাদার মরহুম নবাবের উদ্দেশ্যে মিলাদ ও দান করার কথাবার্তা বলা।

যদিও এতে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তার। নিজের দাদীজানের আদেশ পালনে উপস্থিত হয়েছে শুধু।

“ভাবছিলাম পনেরোটা গরু কুরবানি দিব গোটা শেরপুর বাসীকে আহার করাতে। আর পাঁচটা ছাগল মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করে দিব। এগুলো তো যথেষ্ট হবে, তাই না আমার সিংহ?”

“হ্যাঁ, দাদীজান।”

“আর গরীব-মিসকিনদের মাঝে কতো পরিমাণ অর্থ বিলিয়ে দেওয়া যায় না কি কাপড়-চোপড় বা অন্ন দিব? এ নিয়ে বড়োই বিড়ম্বনায় ভুগছি।”

“জী, বেগম।”

বিরক্ত হন বেগম লুৎফুন্নেসা। ধমক দিয়ে বলে উঠেন,
“এমন হ্যাঁ, জী করছো ক্যানো মেহমাদ? তোমাকে আলোচনা ও নিজের মতামত দিতে ডাকানো হয়েছে, আমার সাথে সায় দিতে নয়।”

এবার আর নিজেকে সামলে রাখতে পারে না মেহমাদ শাহ, উঠে দাঁড়ায় নরম গদি হতে। চোখজোড়া হতে উপচে বিরক্তি, তিক্ততা, ক্রোধ।

“আমার কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই দাদীজান, এমন একজন নির্দয় মানুষের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করার। যা ইচ্ছে করুন আপনি।”

“মেহমাদ! তোমার দাদাজান হন তিনি! এরূপ তাঁর উদ্দেশ্য অসম্মানজনক বাণী উচ্চারণ কীভাবে করো তুমি? আজও গ্রামবাসীর মুখে মুখে আমাদের বংশ ও তোমাদের দাদাজানের প্রশংসাবাণী থাকে।”

“এই নবাব বাড়ির বাস্তবতা জানলে এই গ্রামবাসী থুঁথু ছিটাতে আসবে। আর তিনি হয়তো শাসক হিসেবে খুব মন্দ কেউ ছিলেন না তার লোকদের নিকট। তবে তার বাস্তবতা আমার দেখেছি। কতোটা নির্দয় ছিল আমি নিজ চোখে দেখেছি।

যে নিজের পুত্রকে খুন করে তা মাটি চাপা দিতে পারে তার চাইতে জঘন্য ব্যক্তি আর হয় না। আর কোনো না কোনো ভাবে না বুঝে আমিও এই অপরাধে অংশীদার হয়েছি।”

অপেক্ষা করে না যুবক। দ্রুতো পদচারণায় বেড়িয়ে যায়। তার অপছন্দের যদি তালিকা করা হয়, তবে প্রথম নামটি তার দাদাজানেরই হবে।

বেগম লুৎফুন্নেসা স্তব্ধ হয়ে আছেন। তাঁর আঁখিজল ভিজিয়ে দেয় গণ্ডদেশ। যে সত্য সে ভুলে থাকতে চায় তা আবার ক্যানো মনে করিয়ে দিলো মেহমাদ?

পুত্রের কথা মনে করে গা কাঁপিয়ে কেঁদে উঠেন। শেষবারের জন্য ছেলেকে ছুঁয়েও দেখতে পারেননি। স্বামী নামক মানুষটি সেই সময় টুকুই দেননি। এতোটাই অভাগী তিনি যে স্বীয় পুত্রের কবর কোথায় তাও জানা নেই। শুধু জানে জঙ্গলের কোনো এক প্রান্তে মাটির তলে নিদ্রারত তাঁর মানিক রতন।

“লুকমান! আমার লুকমান! আমার রত্ন!”

তাঁর ক্রন্দন গ্রাস করে নীরবতাকে। এ আর্তনাদ শুধু চার দেওয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ। তবে কী এমন পাপ করেছিলেন লুকমান, যার জন্য এতো বড়ো শাস্তি পেতে হলো তাঁকে?

চলবে…