চলো রোদ্দুরে পর্ব-০৬

0
623

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_6

লাল নীল আলো তে বসে রেড ওয়াইনে ঠোঁট ছোয়াচ্ছে নীলাশা। রেড ওয়াইন আর রাদ দুটো ই ওর ভীষন প্রিয়। তবে দুটো থেকে যে কোনো একটা কে চুজ করতে দিলে নির্বিঘ্নে রাদ কে চুজ করে নিবে। দীর্ঘ ছয় টি বছর যাবত রাদের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে নীলাশা। এই যে সন্ধ্যার পার্টি তে চলে এসেছে। এমন কি সাথে কোনো গার্ড ও নেই।এতো টাই পাগল সে।
সকলের সাথে হাসি মাখা গসিপে মেতে আসে রাদ। তদ্রূপ সেই হাসি তে মেতে আছে অন্য কেউ। সে আর কেউ নয় বরং নীলাশা ই। কথার ফাঁকে ফাঁকে রাদের গাঁয়ে স্পর্শ করছে সুপ্তি। যদি ও রাদের সাথে বন্ধুত্ব ছাড়া অন্য কোনো গভীর সম্পর্ক নেই মেয়েটার তবু ও সহ্য হয় না নীলাশার। দূর থেকে ও রাদের গাঁয়ে অন্য কারো স্পর্শ মেনে নিতে পারছে না।
রেড ওয়াইন এর গ্লাস টা সর্বশক্তি দিয়ে চেপে ধরে। হাতের তালু লাল বর্ন ধারন করে নিয়েছে। তবে ভাঙে না।এতো শক্তি দিয়ে ও তুচ্ছ গ্লাসের সাথে পেরে উঠে না। রক্ত গরম হয়ে যায়। গ্লাস টা কে মেঝে তে নিক্ষেপ করতে চাইলেই কেউ একজন টেনে নিয়ে যায় ওকে।

_তো যেটা ঠিক হলো আমরা ক্যাম্পেইন টা শেষ করে রাঙামাটি যাচ্ছি। [ রনিত ]

_ইয়াপ। [ ইয়ানা ]

_বাট আমি যাচ্ছি না।

_হোয়াট। কেন যাবি না তুই?

_ দেখ নাহিদ সব কিছুর জন্য একটা সময় প্রয়োজন। আমার কাছে এখন সেই সময় টা নেই।

_কামন ইয়ার। এটা মাত্র দুই দিনের ট্যুর।

_আই নো বাট তোরা যা।

পাশ থেকে থমথমে মুখে দ্বীপ বলে
_তুই না গেলে আমি যাবো না।

_ দ্বীপ না গেলে আমি কি করবো?

_রায়া তুই ওহ?

_দেখ ইয়ার, দ্বীপের সাথেই তো আমার আসা যাওয়া। ওহ না গেলে আমি কি করে যাই?

_ফালতু কাপল।

_আশ্চর্য!আমরা মোটে ও ফালতু কাপল নই।

_অবশ্যই ফালতু। বন্ধু যাবে না বলে তুই ওহ যেতে চাচ্ছিস না। আর এ দিকে যে গার্লফ্রেন্ড এর সাথে আলাদা করে সময় কাটানো যাবে সেটা ভুলে গেলি।

_ এক্সাকলি রাদ ঠিক ই বলেছে। তোরা যাচ্ছিস ইনফেক্ট আমরা সবাই যাচ্ছি। রাদ এর প্রবলেম থাকতেই পারে।

কৃতজ্ঞতার চোখে তাকায় রাদ। রনিত কিছু টা হাসে। রাদের কাছে এসে বলে
_নো প্যারা দোস্ত। আমি যাচ্ছি আমার গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে আর তুই এখানে টাইম স্পেন কর তোর গার্লফ্রেন্ড এর সাথে।

_রনিত।

_আরে মজা করছিলাম।

ইয়ানার বাহু তে হাত রেখে চোখ মারে রনিত। চাঁপা হাসে ইয়ানা। এদের কাপল গোল দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে সুপ্তি। রাগি চোখে বলে
_তোদের ফালতু রিলেশন এর জন্য কোনো পার্টি তে ও মজা নেই। ধ্যাত

_এক্সাকলি সুপ্তি। দেখ রায়া আর দ্বীপ প্রেম করছে , রনিত আর ইনায়া ও প্রেমে ডুবেছে এ দিকে আমি তুই আর রাদ সিঙ্গেল মরছি।

নাহিদের কথায় চাঁপা হাসির গুঞ্জন চলে। যেই হাসি তে যোগ দিতে পারে না রাদ। এদের কি করে বোঝাবে সবার থেকে এক ধাপ এগিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে ওহ। রাদের পিঠে চাপর পরতেই ধ্যান ভাঙে। নাহিদ বলে
_কি হয়েছে?

_তেমন কিছু না।

_দেখ ভাই আমরা হলাম তোর গলায় গলায়, আমাদের থেকে আড়াল করবি না কিছু। কোনো মেয়ে কে ভালো লাগলে সোজা বলে দিবি।

নাহিদের হাতের সাথে হাত মিলায় রাদ। বলে
_আগে তুই বল তোর রিলেশন এর কতো দূর।

_আহ এ জীবনে প্রেম আর হবে না।

_কেন?

কথার মাঝে ঢুকে পরে সুপ্তি। ব্যঙ্গ করে বলে
_ওর গার্লফেন্ড এর অভাব আছে?মেয়ে বাজ একটা।

_সুপ্তি।

_সুপ্তি, নাহিদ থাম তোরা। দুটো তে সারাক্ষন ঝগড়া করিস। এই মিল তো এই সাপ আর নেউল।

_ওর খুব জ্বলে বুঝেছিস।

_মোটে ও না। আমি এসব ফালতুমি তে নেই। আমি অলরেডি সবার উপরে। ভালো ছেলে পেলেই গলায় ঝুলে পরবো।

_দেখলি ওর কি চয়েজ আর ইনটেনশন।

নাহিদের কথায় পাত্তা দেয় না সুপ্তি। রাদের হাত ধরে টেনে নিয়ে, একটু দূরে সরে আসে। বলে
_মেয়েটা কে বল তো।

_চুপ কর এখন। পরে জানাবো সব।

_সিউর।

_পাক্কা সিউর।

দরজায় লাথি মেরে চলে যায় নীলাশা। কিছু তেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। নিজের প্রতি খুব রাগ হচ্ছে। রাদ কে যে করেই হোক নিজের করে নিতে হবে।
সুপ্তির অহেতুক স্পর্শ যেন ওর গাঁয়ে কাঁটার মতো বিঁধে।
.

_মরশুমি ম্যাম আমার সাথে শপিং এ যাবেন কাল?

_আমার সময় নেই নিতু।

_আমি ম্যানেজ করে নিবো।

_নেক্সট উইক এ দুদিন ছুটি নিয়েছিলে তুমি। ম্যানেজার স্যার ছুটি দিবেন না।

_আরে এতো টেনশন করছেন কেন? ম্যানেজার স্যার তো চশমা ওয়ালা স্যার। এম ডি স্যার এর কাছে যাবো সোজা।

কম্পিউটার থেকে মুখ সরিয়ে নেয় মৌশুমি। নিতুর চোখে কিছু টা অনুনয়। ছেলের জন্য কিছু দরকারি জিনিসের প্রয়োজন। সেই দিক থেকে নিতুর সহযাত্রী হলে ও মন্দ হয় না। দুটোই হলো। মৌশুমির সম্মতি পেয়ে খুশি হয় নিতু। কাজ কর্ম ফেলেই যায় অনুমতি নিতে।

চোখ দুটো ছলছল করছে। চাঁপা কষ্টে বুক ভারী হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ। দুপুরে ফোন করেছিলো রাদ। বলেছে কোনো একটা কাজে আটকে গেছে তাই কাল সকালে নিয়ে যাবে। তাতেই যেন অভিমানের পাল্লা হয়েছে ভার। এই দুটো দিনেই যেন রাদ এর প্রতি আলাদা অধিকার বোধ কাজ করছে। সামান্য তম বিষয় টা ও অসামান্য মনে হচ্ছে। অথচ এমন শত দিন আছে যেদিন নিজের মা বাবার থেকে সময় পায় নি। আজ কাল বলে বলে বছরের অর্ধেক পেরিয়েছে অথচ বই কিনে দেওয়ার নাম গন্ধ আসে নি।
দরজায় নক পরে। কাউচ থেকে উঠে দাঁড়ায় ভোর। দরজা খুলতেই সকালের মেয়েটা রুমে প্রবেশ করে। কিছু টা মাথা নত করে বলে

_শুভ সন্ধ্যা ম্যাম।

_শুভ সন্ধ্যা।

_ম্যাম আপনার সেল ফোন টা সম্ভবত অফ। স্যার ফোন করেছিলেন তাই আপনাকে জানাতে এলাম। কাইন্ডলি একটু ফোন করবেন ওনাকে।

ফোন হাতে নিয়ে সামান্য ঠোঁট প্রসারিত করে। দুপুরের বিষয় টার জন্য রাগ হয়েছিলো খুব। সেই কারনেই ফোন টা সুইচ অফ করে দিয়েছিলো। ফোন অন করে রাদের নাম্বার ডায়াল করে কল করে। ফোন রিসিভ করেই রাদ বলে
_ তিন্নি কে দাও।

_তিন্নি কে?

_তোমার পাশে যে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ওহ।

_ওহ।

তিন্নির হাতে ফোন বাড়িয়ে দেয় ভোর। বুঝতে পারে না যদি তিন্নি কেই দরকার ছিলো তবে ওকে কল করতে কেন হলো?
আড়চোখে তিন্নির দিকে তাকিয়ি থাকে। মেয়েটা হেসে হেসে কথা বলছে। বিরক্তি তে গা গুলিয়ে আসে। এই মুহুর্তে মেয়েটা কে আফিম দিয়ে অজ্ঞান করে দিতে পারলে শান্তি অনুভব হতো। ভোরের হাতে ফোন দিয়ে চলে যায় তিন্নি। ফোন রাখতে যাবে তখনি ওপাশ থেকে রাদের কন্ঠ কানে আসে। চাঁপা অভিমান মিশ্রিত কন্ঠে বলে
_জি।

_ফোন সুইচ অফ কেন করেছো?

_এমনি।

_আর কখনো সুইচ অফ রাখবে না। আর শোনো কাল সকাল সকাল পিক করবো তোমায়। নাস্তা করার প্রয়োজন নেই। আজকের জন্য স্যরি। একটু কাজ ছিলো অফিসে।

_অফিস।

_ দুপুরে ড্যাড এর অফিসে গিয়েছিলাম। অনেক দিন ধরেই বলছিলো যাতে করে হসপিটাল আর অফিস দুটো তেই নজর দেই। বাট আমি পড়াশোনা তে ফোকাস করতেই স্বাচ্ছন্দ্য করি। এখন তো পড়াশোনা থেকে এক প্রকার ছুটিই বলা যায়। সেই কারনেই ড্যাড ফোর্স করেছে।

_ওহ।

_আচ্ছা রাখছি। আমি ড্রাইভ করছি।

কল কেঁটে দেয় রাদ। ভোরের ছোট ছোট উত্তর বেশ মজাদার মনে হয়। কখনো কাউ কে সেভাবে জবাব দিহিতা করা হয় নি। তবে ভোরের কাছে করে চলেছে ওহ। মন্দ নয় বিষয় টা। যদি ও এসব বর্ননা করে না বললে ও চলতো তবে কোনো রকম আশংকায় ফেলতে চায় না ওকে। এমনি তে ও সেদিনের একটা বাক্য নিয়ে বেশ চিন্তাগ্রস্ত। কি এমন বোঝাতে চেয়েছিলো মেয়েটা?

চলবে