চেরি ব্লসমের সাথে এক সন্ধ্যা পর্ব-৫৩+৫৪

0
328

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫৩
____________

মিতুল চোখ ফিরিয়ে আনলো লিভিং রুম থেকে। মাথার ভিতরটা ভন ভন করছে। জোহান কীভাবে এখন ওদের বাসায় থাকতে পারে? এটা কি চোখের ভ্রম? না কি জেগে জেগে স্বপ্ন?
মিতুল আবারও একটু উঁকি দিলো। লিভিং রুমে বসে থাকা জোহানের পাশে চোখ পড়তে মিতুলের বিস্ময়ের ঘোর আরও বেড়ে গেল। জোহানের পাশেই রেশমী আন্টি, আর রেশমী আন্টির পাশে জায়িন। বিস্ময়ে মিতুলের মুখ হা হয়ে গেল। কিছুতেই না! জোহানরা কী করে বাংলাদেশ? এটা কি আসলেই চোখের ভ্রম? একসাথে এতজনকে দেখা চোখের ভ্রম হয় কী করে? না না এটা কিছুতেই চোখের ভ্রম হতে পারে না। যা দেখছে সব বাস্তব।
মিতুলের পাগল পাগল লাগছে। দিশা না পেয়ে রুমের দিকে দৌঁড়ে এলো। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো। মন আনন্দ, উদ্দীপনার জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। জোহানরা সত্যিই বাংলাদেশ? সত্যি সত্যিই ওদের ঘরে বসে আছে? কিন্তু কী করে? জোহান তো কিছু বলেনি ওকে! জোহান এমন একটা খবর না জানিয়ে কীভাবে থাকতে পারলো? এত ধৈর্যশীল কবে হলো জোহান? আর বাড়ির মানুষজনও তো কিছু বললো না। এত বড়ো একটা খবর ওকে না জানিয়ে পারলো কী করে সবাই? মিতুল ড্রেসিং টেবিলের দিকে ছুটে এলো। চেহারা দেখে চরম বিরক্তি লাগলো। জার্নির ফলে চেহারার একটু অবনতি হয়েছে। মাথার চুলের দিকে নজর পড়তে দেখলো চুলগুলো এলোমেলো। মিতুল দ্রুত চুল আঁচড়ে নিলো। একটা সাদা পাথরের চিকচিকে ক্লিপ বসালো চুলে। মেকআপ করবে ঠিক করলো। মুখে প্রাইমার লাগাতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো। মেকআপ করার সময় এখন নেই ওর কাছে। ইশ! জোহানরা আসবে সেটা ওকে আগে জানালে কী ক্ষতি হতো? সেজেগুজে সুন্দর করে বসে থাকতে পারতো ও। এখন এই তাড়াহুড়োর ভিতর কী করবে?
হঠাৎ পরনের থ্রি পিসের দিকে খেয়াল হলো। এই উটকো রংটা একেবারে বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে গায়ে। এত ড্রেস থাকতে আজকে কেন এই উটকো রঙের ড্রেসটাই পরতে ইচ্ছা করলো ওর? এটা পরে একদমই জোহানদের সামনে যাওয়া যাবে না। এখনই চেঞ্জ করতে হবে।
মিতুল ওয়ার্ডোবের ভিতর খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। খুব সুন্দর একটা ড্রেস দরকার।
মিতুল তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোনো সুন্দর ড্রেস চোখে ধরা দিচ্ছে না। ব্যাপারটা কী? ওর কি কোনো সুন্দর ড্রেস নেই? ওর সেই সাদা ড্রেসটা কোথায়? মিতুল ক্লোজেটের দিকে ছুটে এলো।
মিতুল ক্লোজেট খুললেই মাহিরা প্রবেশ করলেন রুমে। মিতুল দরজা লক ছাড়া এমনি চেপে বন্ধ করে রেখেছিল।
মাহিরা মুখে হাসি রেখে মিতুলকে ডাকলেন,
“মিতুল, লিভিং রুমে এসো তাড়াতাড়ি। দেখে যাও কারা এসেছে।”

মিতুল ক্লোজেটে ওর সাদা ড্রেসটার সন্ধান অব্যাহত রেখে বললো,
“কারা এসেছে মা?”
জেনেও না জানার ভাণ ধরলো মিতুল।

“এসেই দেখো না কারা।”

“আমি আসছি, তুমি যাও।” মিতুল হাত এবং চোখ অনুসন্ধানে ব্যস্ত রেখেই বললো।

“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো।”

মাহিরা চলে গেলেন।
মিতুল খুঁজতে লাগলো। ড্রেসটা তো বাড়িতেই রেখে গিয়েছিল। মনে আছে ওর। সময়ের কালে কোনো জিনিসই ঠিকঠাক ভাবে পায় না ও। এমনি সময় হলে সেই ড্রেস সবার আগে চোখের সামনে পড়তো।

অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকার পরও মিতুলকে দেখা গেল না। জোহান আবারও ম্যাসেজ পাঠালো।

‘কী হলো? আসছো না কেন তুমি?’

এবারের ম্যাসেজ সিনই হলো না।
মাহিরা এবং বাসার মেইড নাস্তা নিয়ে উপস্থিত হলেন লিভিং রুমে।
জোহান আর ধৈর্য ধরতে পারলো না। বসা থেকে দাঁড়িয়ে বললো,
“হুইস ইজ মিতুল’স রুম?”
জোহান আসার পরই মিলানের কাছ থেকে জেনে নিয়েছিল মিতুল রুমে আছে।

মাহিরা একটু অসম্মান বোধ করলেন। তার মেয়েটা বরাবর এক রকমই রয়ে গেল। এত বোঝানোর পরও কোনো কাজে সিরিয়াস হলো না। আসছি বলে আর কোনো খবর নেই।
মাহিরা মিলানকে বললেন,
“মিলান, মিতুলকে ডেকে নিয়ে আয়। ও এখনও জানে না ব্যাপারটা।”

জোহান বাংলা বুঝলো না ঠিকঠাক। তবে কয়েকটা শব্দ বুঝেই আন্দাজ করতে পারলো সবটা। বললো,
“আমি যাচ্ছি।”
জোহান মিলানের দিকে তাকালো। বললো,
“ব্রো, প্লিজ শো মি মিতুল’স রুম।”

জোহানের এই কথার পর আর কেউ কোনো কথা বলতে পারলো না।

মিলান বললো,
“কাম উইথ মি।”

মিলান জোহানকে মিতুলের রুম দেখিয়ে দিলো। কর্ণারের রুমটা মিতুলের। জোহান মিলানকে ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ জানালো।
মিলান আর রুমে ঢুকলো না। চলে এলো।
জোহান রুমে প্রবেশ করতেই আয়নার সামনে দাঁড়ানো দেখতে পেল মিতুলকে। পরনে হোয়াইট কুর্তি এবং ডার্ক ব্লু প্লাজো, ওড়না। জোহান রুমে প্রবেশ করেছে টের পায়নি মিতুল। জোহান টের পাওয়ানোর জন্য পিছন থেকে বলে উঠলো,
“হলো তোমার সাজগোজ?”

জোহানের কণ্ঠ কানে আসতেই মিতুলের কান খাড়া হয়ে উঠলো। মুখে আর ফেস পাউডার দেওয়া হলো না। কতদিন দিন পর এই গলা এত কাছ থেকে শুনছে! ফোনের এ প্রান্তে বসে ও প্রান্তের কথা শুনেছে এতদিন। আর আজ কাছাকাছি। একই জায়গায়। মিতুলের মন মিষ্টি শুভ্র অনুভূতিতে হারালো।
জোহান দরজার কাছ থেকে সরে মিতুলের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। মিতুল আয়নায় জোহানের মুখ দেখতে পাচ্ছে। কত কাছে এখন এই মুখ। ইচ্ছা হলেই ছুঁয়ে দেখা যাবে। হাত বুলানো যাবে ওই প্রিয় বাদামি চুলগুলোতে।
জোহান মিতুলের কাছে এসে মিতুলের এক হাত ধরে নিজের দিকে ফেরালো। মিতুলের হৃদয় দুলে উঠলো। জোহানের চোখে চোখ পড়তেই সকল ভাষা হারিয়ে গেল ওর। এই বাদামি চোখ জোড়াও কত আপন ওর!

জোহান মিতুলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মিতুলের হাতে দৃষ্টি রাখলো। মিতুলের বাম হাতটা তুলে নিলো নিজের হাতে। মিতুলের দেওয়া কলম দিয়ে মিতুলের হাতের তালুতে ছোট করে নিজের নাম লিখলো। আর লিখলো, ‘You are always mine!’
তারপর বললো,
“ইট’স মাই ফার্স্ট অটোগ্রাফ! বলেছিলাম ফার্স্ট অটোগ্রাফ তোমাকেই দেবো। কথা রেখেছি আমি।”

মিতুল নিজের বিমোহিত চোখ জোড়া তুলে তাকালো।
জোহান একটু হাসলো। কলমটা পকেটে ঢুকিয়ে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
“কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?”

মিতুল কিছু বলতে পারলো না। শুধু খুশিতে একটুখানি হাসলো। এমন খুশি মিশ্রিত হাসি হাসেনি বহু দিন হয়ে গেছে। সব খুশি যেন আজ ওর ঘরে এসে ভিড় জমিয়েছে।
কয়েক মিনিট নিশ্চুপ কেটে গেল। মিতুল কিছু বলতে পারলো না। বলতে পারলো না জোহানও কিছু। শুধু নীরবে তাকিয়ে থাকাই হলো।
জোহানকে দেখার এক বুক তৃষ্ণা মিতুলের। বহুদিন পর সামনা সামনি দেখছে জোহানকে। জোহানকে দেখার তৃষ্ণার্ত মন বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। হঠাৎই তা আতঙ্কে রূপ নিলো। মিতুল ভীত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“তুমি আমার রুমে এসেছো কেন? কেউ দেখে ফেললে কী হবে? এটা কি তোমাদের বাড়ি? যে মানুষের কোনো খোঁজ খবর থাকে না। দ্রুত চলে যাও এখান থেকে।”

“এটা কেমন আচরণ তুলতুল? এতদিন পর আমার সাথে তোমার দেখা হলো, কোথায় ভাবলাম আনন্দে আমাকে জড়িয়ে ধরবে, তা না! উল্টো আমাকে তাড়িয়ে দিচ্ছ! এটা কিন্তু মোটেই ঠিক নয়।”

“এটা মজা নয় জোহান। তোমাকে এখানে দেখলে সবাই সন্দেহ করবে।”

জোহান হেসে ফেললো।
“সন্দেহ করার কী দরকার? কনফার্মই হয়ে যাক সবাই। কোনো প্রবলেম নেই।”

“আমার আছে।”

“তুমি এখনও বড্ড বোকা আছো তো তুলতুল। সবকিছু নিয়ে এখনও বেশি ভাবো। আমি সবাইকে জানিয়ে, সবার সামনে থেকেই তো তোমার রুমে এলাম। তোমার ভাই তোমার রুম দেখিয়ে দিলো। কেউ ব্যাপারটা অন্য চোখে দেখেনি, অথচ তুমি…”

মিতুল বলার মতো কিছু খুঁজে পেল না। পাবেই বা কী করে, আছে কিছু পাওয়ার? আসলেই ও একটু বেশিই ভাবে। ঠিক কিছু ভাবে না, উল্টোটাই বেশি ভাবে সব সময়। জোহানের বাড়ি গিয়ে তিন মাস থেকে এসেছে, জোহান ওর পরিচিত একটা মানুষ, ওর সাথে দেখা করতে রুমে তো আসতেই পারে। এখানে সন্দেহ করার তো তেমন কিছু নেই। আর কেউ যদি সন্দেহ করেও থাকে, তাহলেও তো জোহানকে এভাবে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলতে পারে না ও। দীর্ঘ দশ মাস পর দেখা হলো দুজনের।

মিতুলকে নীরব দেখে জোহান দুষ্টমির সুরে বললো,
“হেই তুলতুল, একটা হাগ করবে না কি?”

মিতুল এই কথা শুনে একটু কঠিন থাকার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। মুখ ফুঁটে হাসি বেরিয়ে গেল।
জোহানও হাসলো।
মিতুল বললো,
“বাংলাদেশ এসেছো আগে জানাওনি কেন সেটা?”

“জানালে কি সারপ্রাইজ হতো?”

মিতুলের মনে হলো, ওকে ‘বলদ’ উপাধি দিলে মন্দ হবে না। জোহান ওকে এই সারপ্রাইজ দেবে বলেছিল। আর ও কি না কীসব…ধুর!
সারপ্রাইজ পেল সেটা না হয় ঠিক আছে। কিন্তু এই সারপ্রাইজের ব্যবস্থা কি সবাই মিলে করেছে? তা না হলে ঘরের কেউ জানায়নি ওকে, রেশমী আন্টিও বলেননি কিছু। দুই দিন আগেই রেশমী আন্টির সাথে কথা হয়েছে, তখন এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি তিনি। সবাই মিলে ওর কাছে গোপন রেখেছে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারটা। আর ওর বাড়িতে আসার জন্য মায়ের এত জরুরি তলবের ব্যাপারটাও বুঝতে পেরেছে এখন। রেশমী আন্টিরা আসবেন সে জন্যই ওকে এভাবে বাড়িতে এনেছে। মিতুল জিজ্ঞেস করলো,
“কবে এসেছো বাংলাদেশ?”

“চারদিন হলো।”

মিতুল অবাক হলো।
“চারদিন হলো এসেছো? অথচ আমাকে জানাওনি?”
মিতুল দ্রুত বেগে পা বাড়ালো লিভিং রুমে যাওয়ার জন্য। জোহানও পিছন পিছন যেতে লাগলো।
লিভিং রুমে এসে রেশমী আন্টি এবং জায়িনকে সালাম দিলো মিতুল।
রেশমী আন্টি সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
“আরে এদিকে এসো। কতদিন পর আবার তোমাকে দেখলাম বলো তো।”

মিতুল রেশমী আন্টির পাশে গিয়ে বসলো। রেশমী আন্টি মিতুলের কপালে স্নেহের চুম্বন এঁকে দিলেন।
মিতুল বললো,
“আঙ্কল আসেননি বাংলাদেশ?”

রেশমী উত্তর দিলেন,
“না ও আসতে পারেনি। কাজের জন্য আটকে গেল।”

“ও…” মিতুল ছোট করে উচ্চারণ করলো।

জায়িন চুপচাপই বসেছিল। হঠাৎ করে বললো,
“আগের থেকে তুমি অনেক সুন্দর হয়ে গেছো মিতুল।”

জায়িনের কথা কানে আসতে মিতুল চমকে উঠলো। কী বললো জায়িন? মা, ভাইয়েরা সবাই আছে এখানে। কী ভাবলেন তারা? মিতুল লিভিং রুমে উপস্থিত সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। রেশমী আন্টি এবং মাকে মুখ টিপে হাসতে দেখা গেল। বাকিরা স্বাভাবিক ভাবেই হেসে ফেললো। জোহান ভাইয়ের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
“লম্বাও হয়েছে একটু।”

মিতুল অপমানে শেষ। দুই ভাই মিলে কি ওকে আবারও অপমান করতে উঠে পড়ে লাগলো না কি? সবার সামনে এভাবে ছোট করতে পারলো কী করে? জায়িন পারলেও, জোহান পারলো কী করে? আবারও সেই খাটো নিয়ে মজা করলো জোহান। কোথায় লম্বা হয়ে গেছে ও? আছে তো সেই আগের মতোই। আর সুন্দর! কোথায় আগের থেকে সুন্দর হয়েছে? সুন্দর তো হয়ইনি বরং আরও কমেছে সৌন্দর্য। জার্নির ফলে চেহারার অবনতি হয়েছে। দুই ভাই মিলে এরকম অপমান না করলে কী পারতো না? সবার সামনে এটা কী করলো? মিতুলের মুডই নষ্ট হয়ে গেছে।

সবার কথাবার্তা চলতে লাগলো।
মিতুল আর নিজের আনন্দঘন মুডটি ফিরে পেল না। কথাবার্তা চললেও ও সেই কথাবার্তায় সামিল হলো না। চুপচাপ বসে রইল। খতিয়ে দেখতে লাগলো সবাইকে। সবাই হাসছে, কথা বলছে। অথচ এই দুই ভাই ওর মুখ থেকে হাসি, কথা কেড়ে নিয়েছে। ওর হাসি কেড়ে নিয়ে এখন নিজেরা হাসছে। মিতুলের বিরক্ত লাগছে। ইচ্ছা করছে রুমে চলে যায়। কিন্তু এখানে এত মানুষ রেখে রুমে চলে গেলে সেটা কি ভালো দেখায়? মিতুল ধৈর্য ধরে বসে রইল।
সবার কথায় কথায় এক সময় শুনতে পেল, জোহান’রা না কি দুই দিন থাকবে ওদের বাড়িতে। কথাটা শুনে মিতুল পুলকিত হয়ে উঠলো। আনন্দঘন মুডটি আরও দ্বিগুণ আনন্দ নিয়ে ফিরে এলো ওর কাছে। দুই দিন থাকবে জোহান’রা? মিতুল নিজের আনন্দ ভাবটি কোনো রকম চেপে রাখলো।

কাকে কোন রুম থাকতে দেওয়া হবে তা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তিন জনের জন্য আলাদা আলাদা রুমই দেওয়া হলো। এর মাঝে নাবিলের রুমটা ছেড়ে দিতে হলো জোহানের জন্য। নাবিলের জায়গা হলো মিলানের রুমে।
মিতুল মনে মনে স্বস্তি অনুভব করলো। যাক জায়িন, জোহানকে এক রুম দেওয়া হয়নি। দুই ভাইয়ের ভিতর দূরত্ব চলছে অনেক বছর ধরে। এক রুমে, এক বেড শেয়ার করে থাকা দুজনের কাছেই কষ্টকর হতো। দুজনের কেউ-ই মানিয়ে নিতে পারতো না। আর ওর ভাইদের? ওর ভাইদেরও একটু সমস্যা হবে একসাথে থাকতে। তবে ওটা কোনো ব্যাপার না। ওদের ভাইদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই, খুব মিল।

_____________

ছাদের পরিবেশটা নাতিশীতোষ্ণ। ঝিরিঝিরি বাতাস বইছে। আকাশে অর্ধপূর্ণ চাঁদ। মাঝে মাঝে আবার মেঘ এসে চাঁদটাকে ঢেকে দিচ্ছে। আবার মেঘের কবল থেকে মুক্তি পাচ্ছে চাঁদটা। জোহান আর মিতুল পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে, ছাদের রেলিং ঘেঁষে। এখন ওরা দুজনই আছে ছাদে। তবে একটু পর ওর ভাইয়েরাও এসে যাবে। জায়িনকেও ডাকা হয়েছিল, কিন্তু আসলো না। অহংকারীটা হয়তো সবার সাথে সহজ হতে পারবে না। তাই আসেনি।

মিতুল আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। কতদিন পর আবার জোহান ওর পাশে। ভাবতেই ভালো লাগছে। একটু বেশিই ভালো লাগছে। মনে পড়ে যাচ্ছে কানাডায় থাকাকালীন দিনগুলোর কথা। তখন তো ও আর জোহান কতই পাশাপাশি ছিল। মাঝখান থেকে দশ মাসের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। কবে দুজন সব সময়ের জন্য এরকম পাশাপাশি থাকতে পারবে? ভালো লাগে না দূরত্ব। দূরত্ব মাঝে মাঝে ভিতরটাকে পুড়িয়ে মারে।

“তোমাদের বাংলাদেশের আবহাওয়াটা ভালো না। খুব গরম। ঘেমে যাচ্ছি আমি।”
পাশ থেকে হঠাৎ জোহানের কণ্ঠ কানে এলো।
মিতুল তাকালো।
“কী বলো? এই ঝিরিঝিরি বাতাস, নাতিশীতোষ্ণ পরিবেশের মাঝে তুমি ঘেমে যাচ্ছ?”

“যাচ্ছি তো। নিজেই দেখো…”
জোহান মিতুলের এক হাত নিয়ে নিজের গলায় স্পর্শ করালো।

মিতুল দেখলো জোহান সত্যিই ঘেমে যাচ্ছে। মিতুল ওর হাতটা সরিয়ে আনতে চাইলো। কিন্তু জোহান হাত ছাড়লো না। গলা থেকে সরিয়ে আনলো, কিন্তু মিতুলের হাতটা নিজের হাতের মাঝেই রাখলো। আরও ভালো করে হাতটা আঁকড়ে ধরে বললো,
“হেই মিতুল, খুব বেশি মিস করেছো আমায়?”

মিতুল জোহানের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না। ও খুবই মিস করেছে জোহানকে। কিন্তু সেটা মুখে প্রকাশ করা দায়। সব কথা মুখে বলা যায় না।
জোহানই আবার বললো,
“আমার মোটেই ভালো লাগেনি। একা একা লেগেছে সারাক্ষণ। এখন বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না একদম। তুমি কানাডা যাওয়ার আগে যতটা মন টিকতো বাড়িতে, কিন্তু তুমি কানাডা থেকে আসার পর আর এতটুকুও মন টিকে না। আগে অনেক সময় কাটাতাম টাইম হাউজে। কিন্তু এখন টাইম হাউজেও যেতে পারি না। ওখানে গেলে তোমার শূন্যতা বেশি অনুভব করি। তোমায় মিস করি ভীষণ”

মিতুল নীরব রইল। কিন্তু মনের অনুভূতিগুলো নীরব রইল না। অনুভূতিরা নিজেদের প্রাচুর্য খুলে বসলো। মিতুল তাকিয়ে থাকলো জোহানের মুখখানিতে।

জোহান বললো,
“এই একাকীত্ব নিয়ে আমি বেশিদিন থাকতে পারবো না। আমার খুব কষ্ট হয়। তুমি পারবে এরকম থাকতে?”

জোহানের প্রশ্নটা মিতুলের হৃদয় ছেদ করে গেল। এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না ও। মিতুল এখনকার এই গুমোট পরিবেশটা কাটিয়ে উঠতে বললো,
“তুমি ভীষণ হার্টলেস জোহান।”

মিতুলের কথায় জোহান অবাক হলো।
“আমি এতক্ষণ এতগুলো কথা বললাম, আমার অনুভূতি জানালাম, তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না সেটাও বললাম, তারপরও আমি হার্টলেস?”

“হ্যাঁ, তুমি হার্টলেস। তুমি পাঁচটা দিন আমার সাথে কথা বলোনি।”

“এটা সারপ্রাইজেরই অন্তর্ভুক্ত ছিল।”

“এটা আবার কেমন সারপ্রাইজ? তুমি বাংলাদেশ এসেছো সেটা না হয় নাই জানালে, কিন্তু তাই বলে কি কথা বলতে পারতে না? জানো, কত দুশ্চিন্তায় ছিলাম আমি! চিন্তায় চিন্তায় মাথাটা এলোমেলো হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছিল। তুমি আমার মন বোঝার চেষ্টা করোনি একদম! তুমি কীভাবে পারলে এমন?”

জোহানের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটলো। বললো,
“আসলে আমার অনেকগুলো কাজিন আছে। অনেক দিন পরে সবার সাথে দেখা হলো তো। তাদের নিয়েই বিজি ছিলাম। কথা বলার সময় পাইনি তাই।”
জোহান মনে মনে মিতুলকে রাগানোর বন্দোবস্ত করছে।

মিতুল সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো।
“কাজিন? কী রকম কাজিন? মেয়ে কাজিন না ছেলে কাজিন?”

“মেয়ে ছেলে উভয়ই। তবে মেয়ের সংখ্যাটাই বেশি। আমার মেয়ে কাজিনগুলো তো আমাকে চোখের আড়ালই হতে দিতে চায় না। সারাক্ষণ সাথে সাথে থাকে। এই যে তোমাদের বাসায় আসলাম, এখানেও তো আমার সাথে কয়েকজন চলে আসতে চাইছিল। অনেক বুঝিয়ে রেখে আসতে হয়েছে তাদের।”

মিতুলের প্রচুর রাগ হচ্ছে। রাগে গরম নিশ্বাস পড়ছে। এই ছিল তবে কল না দেওয়ার আসল কারণ। কতগুলো মেয়ে পেয়ে ওকে ভুলে গিয়েছিল! আর মেয়েগুলোই বা কেমন? গায়ে পড়া স্বভাবের। পৃথিবীতে কি ছেলের আকাল পড়েছে? অন্য আরেক জনের মানুষকে নিয়ে তোদের এত মাতামাতি কীসের?
মিতুল জোহানের দিকে তাকালো। দু চোখে রাগ ঝরে পড়ছে। সেই সাথে এবার কণ্ঠেও ঝরলো,
“যখন তারা আসতে চাইলো, তখন তাদের নিয়ে এলে না কেন? না না তাদের নিয়ে আসার তো কোনো দরকার নেই, তুমিই থেকে যেতে তাদের সাথে। তাদের রেখে তুমি কেন এসেছো এখানে? পুরো বাংলাদেশ চষে বেড়াতে তুমি তাদের সাথে। কেউ তো নিষেধ করেনি তোমায়। আমার সাথে পাঁচদিন কথা না বললেই বা কী, আর একমাস কথা না বললেও বা কী! তাদের সাথে সময় কাটানোটাই হলো আসল।”

মিতুল এত রেগে গেলেও জোহান রইল খুব শান্ত। কিছু সময় শান্ত চোখে চেয়ে থেকে বললো,
“তোমার রাগে ফুলো নাকটা দীর্ঘ দশ মাস দেখতে পাইনি। বিরাট একটা শূন্যতা ছিল। এখন দেখে নিলাম। রাগলে তোমায় খুব সুন্দর লাগে। তোমার রাগী মুখটা খুব প্রিয় আমার!”
জোহান আরেকটু কাছে এসে বললো,
“নাক ফুলো তুলতুল, তোমার এই রাগী মুখটি আমায় ছাড়া আর কাউকে দেখিও না। তোমার এত সুন্দর মুখটি অন্য কেউ দেখুক চাই না আমি। তোমার এই রাগী মুখটি শুধু আমিই দেখবো। তুমি শুধু আমার জন্যই রাগবে। করেছো না কি আবার কারো সাথে ঝগড়া-ঝাটি, রাগারাগি? সব জমিয়ে রাখতে বলেছিলাম তো আমার জন্য। রেখেছো তো?”

মিতুল নীরবের থেকেও অধিক নীরব। এই মুহূর্তে শুধু একটা ইচ্ছাই ভিতর জুড়ে শব্দ তুলছে। বাতাসেরাও যেন সেই শব্দের সাথে সহমত পোষণ করছে। কানে কানে এসে বলছে,
‘হ্যাঁ, তোমার জোহানের বুকে মুখ লুকাও তুমি। জোহানের ওই উষ্ণ বক্ষ শুধু তোমারই।’

মিতুলের এই মুহূর্তে এটাই ইচ্ছা করছে। জোহানকে জড়িয়ে ধরে, ওর বুকে মুখ লুকাতে ইচ্ছা করছে। চাইলে এখনই ইচ্ছাটা পূরণ করতে পারে। কিন্তু করবে না। এই ইচ্ছাটা তুলে রাখবে। যখন এটি পূরণের সময় হবে, তখন পূরণ করবে। পূরণের সেই ক্ষণ যে এখনও আসেনি। কখন আসবে সেই ক্ষণ? অপেক্ষায় আছে ও!

(চলবে)

#চেরি_ব্লসমের_সাথে_এক_সন্ধ্যা
#লেখা: ইফরাত মিলি
#পর্ব: ৫৪
____________

মেহরিনের সাথে কথা হলো মিতুলের। জোহান’রা ওদের বাড়িতে এসেছে বলেছে সেটা। মেহরিন শুনে তো প্রথমে বিশ্বাসই করেনি। পরে করতে হলো। মেহরিনকে আজকেই ঢাকা আসতে বলেছিল মিতুল। কিন্তু চাইলেই তো আর রাজশাহী থেকে ঢাকা চলে আসা যায় না এক দৌঁড়ে। মেহরিন সবকিছু ঠিকঠাক করে কালকে চলে আসবে। মেহরিনের বাড়ি রাজশাহী। ওর বাবার চাকরির জন্য ঢাকা এসেছিল ফ্যামিলিসহ। যখন ক্লাস সেভেনে পড়ে তখন ঢাকা এসেছিল, আর ইন্টার পাশের পরে আবার রাজশাহী চলে গিয়েছে। মেহরিনের জন্য মিতুলও ইন্টারের পর রাজশাহীতে ভর্তি হয়েছে। মেহরিনদের বাড়ি ভার্সিটি থেকে অনেক দূরে হওয়ায় জন্য মিতুল আর মেহরিন একটা ফ্ল্যাট রেখে থাকে।
মেহরিনের সাথে কথা বলা শেষে মিতুল মায়ের রুমে এলো। মা কিছু জামা কাপড় ভাঁজ করছেন। মিতুল এসেই বেডের উপর বসে পড়ে বললো,
“বাজারে কে যাবে?”

“বাজারে তো গেছে মিলান আর নাবিল।”

“চলেও গেছে ইতোমধ্য? কী কী আনতে বলেছো?”

“যা যা লাগবে সবই আনতে বলেছি।”

“দেশি মাছ আনতে বলেছো?”

“হ্যাঁ, বড়ো মাছ নিয়ে আসতে বলেছি।”

“আর দেশি ছোট মাছ?”

মাহিরা ভাঁজ করা জামা কাপড় ওয়ার্ডোবে রাখতে গিয়েছে, মেয়ের কথা শুনে সেখান থেকেই ঘাড় ঘুরিয়ে চেয়ে বললেন,
“ছোট মাছ দিয়ে কী করবে তুমি?”

“দরকার আছে। পুঁটি, ট্যাংরা, শিং এই মাছগুলো লাগবে।”

“কেন? বড়ো মাছ রেখে এসব ছোট মাছ কেন দরকার?”

“ওনাদের জন্য।”

মাহিরা মেয়ের কথা শুনে বিস্মিত না হয়ে পারলেন না।
“অতিথিদের তুমি পুঁটি, ট্যাংরা দিয়ে খাওয়াবে?”

“ওনারা এই মাছ-ই বেশি পছন্দ করে। বিদেশে থাকেন না, এসব মাছ কি আর সেখানে পায়?”

“তাই বলে পুঁটি, ট্যাংরা? এই ছোট ছোট মাছ কাটবে কে? এমনিতেই আজকে ব্যস্ত একটা দিন। অনেক কিছু রান্না করতে হবে। ওই ছোট ছোট মাছ নিয়ে পড়ে থাকার সময় আছে কারো?”

“কেন সুরভী খালা(মেইড) আছেন না? তিনি কাটবেন এই মাছ।”

“সে কি কম ব্যস্ত থাকবে? এই ছোট মাছ নিয়ে পড়ে থাকার সময় তার নেই।”

“ঠিক আছে, যদি সবারই এই মাছ কাটতে সমস্যা থাকে, তাহলে আমি কাটবো।”

“তুমি কাটবে মাছ?” মাহিরা বিস্ময়ের দীঘল প্রান্তে।

“হ্যাঁ, আমি।”

“জীবনে যে একটা মাছ ছুঁয়ে দেখেনি, সে কাটবে মাছ। তাও আবার পুঁটি, ট্যাংরা, শিং!”

“আগে ভাইয়েরা মাছ নিয়ে আসুক, তারপর দেখো মাছ কাটতে পারি কি না। চেষ্টা করলে সব সম্ভব। এখন দ্রুত ফোন লাগাও। বলো দেশি বড়ো মাছের পাশাপাশি ছোট মাছও নিয়ে আসতে।”

“আমি পারব না। তুমিই ফোন দিয়ে যা যা লাগবে বলো।”

মিতুল আর সময় নষ্ট করলো না। নিজের রুমে এসে ভাইদের কাছে কল দিলো। মলা, ট্যাংরা, শিং অন্যান্য যে সকল ছোট মাছ পাবে তা নিয়ে আসতে বলেছে। ভাইয়েরা শুনে প্রথমে একটু ক্ষেপে গিয়েছিল। মলা, ট্যাংরা, শিং এসব পাওয়া কি মুখের কথা? এই মাছ খুঁজতে খুঁজতে পুরো বাজার তন্নতন্ন করে ফেলবে তারা? মিতুল ভাইদের মুখের উপর বলে দিয়েছে,
“দরকার হলে তাই করবে। তবুও ছোট মাছ চাই আমার।”
বলেই ফোন কেটে দিয়েছে।

এখন একটু জোহানের খোঁজ নেওয়া দরকার। রাতে ঘুম ঠিকঠাক হয়েছে কি না কে জানে। মিতুল একবার সবাইকে যাচাই করে দেখলো। রেশমী আন্টি মায়ের রুমে আছে সম্ভবত, আর জায়িন নিজের রুমে। মিতুল লিভিং রুমের সাথে লাগানো একটা দরজায় এসে নক করলো। এই রুমেই থাকতে দেওয়া হয়েছে জোহানকে। ভিতর থেকে কারো কোনো সাড়া পাওয়া গেল না। জোহান কি এখনও ঘুমে? মিতুল আবারও নক করলো। দরজা খুললো না, সাড়াও পাওয়া গেল না। মিতুল দরজার গায়ে মৃদু ঠ্যালা দিলো। দরজা খুলে গেল। দরজা লক না করে ঘুমাচ্ছে?
ভিতরে প্রবেশ করলো মিতুল। জোহানকে দেখতে পেল বিছানায় শোয়া। চোখের পাতা বন্ধ। ঘুমাচ্ছে! সারারাত বোধহয় ঘুমাতে পারেনি। এখন একটু ঘুমাচ্ছে। মিতুল ডিস্টার্ব করলো না। চুপিচুপি আবার বেরিয়ে আসতে চাইলো। দরজার দিকে পা বাড়াতেই জোহানের গলা শোনা গেল,
“এসেই আবার চলে যাচ্ছ কেন? আমার কাছে একটু থাকলে কী সমস্যা?”

মিতুল থমকে দাঁড়ালো। পিছন ফিরে দেখলো জোহানের চোখ খোলা।
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে না?”

জোহান শোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বললো,
“ঘুম আসলে তো ঘুমাবো! ঘুমাতেই পারিনি আমি।”

মিতুলের একটু দুঃখ লাগলো। আহারে সারারাত ঘুমাতে পারেনি জোহান! রেশমী আন্টি এবং জায়িনের কী খবর? তারা ঘুমাতে পেরেছে তো?

“তোমাদের ফ্যামিলিটা কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং তুলতুল।”

জোহানের কথা শুনে মিতুল চোখ তুলে তাকালো।
“ইন্টারেস্টিং কেন?”

“ইন্টারেস্টিংই তো। তোমাদের তো MN ফ্যামিলি।”

“MN ফ্যামিলি মানে?”

“বুঝলে না? মানে হলো তোমার ফ্যামিলির প্রত্যেকের নামের শুরু M, N দিয়ে। M ফর মিতুল, মিলান, মাহিরা। আর N ফর নাহিদ, নাবিল। দ্যাট’স সো আমেজিং!”
জোহান একটু থামলো। তারপর আবার বললো,
“আমাদের ফ্যামিলিতে এমন নেই। শুধু আমার এবং ব্রাদারের নামের মিল আছে। J দিয়ে শুরু।”

মিতুল কিছু বললো না। এই কথায় কী বলা উচিত সেটা তো বুঝতে পারছে না।

জোহান ফের বললো,
“বাই দ্য ওয়ে, তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি। তোমার ড্যাডকে কিন্তু আমার খুব পছন্দ হয়েছে।”

মিতুল অবাক হলো। ওর আব্বুকে পছন্দ হয়েছে জোহানের? কীভাবে?
ওর আব্বু একটু গম্ভীর স্বভাবের। আর একটু কঠোরও। জোহান যে রকম তাতে আব্বুর সাথে জোহানকে মেলে না কোনো ভাবে। মিল না থাকলে আবার পছন্দ হয়?

মিতুল বললো,
“আমার আব্বুকে কী দেখে পছন্দ হলো তোমার? তিনি তো গম্ভীর আর কঠোর স্বভাবের।”

“সে জন্যই তো আরও বেশি পছন্দ হয়েছে। আমি এমন গম্ভীর স্বভাবের ফাদার ইন ল’ই চাইছিলাম।”

জোহানের কথা মিতুলের ভিতরকে ভীত করে দিলো। মিতুল এদিক ওদিক সন্দ্বিগ্ন দৃষ্টি বুলালো। জোহানের কথার কোনো লাগাম নেই। এরকম কথা কী আর এমন করে বলে দেওয়া ঠিক? দেয়ালেরও যে কান আছে।

“এদিক ওদিক কী দেখছো?” মিতুলকে এদিক ওদিক তাকাতে দেখে বললো জোহান।

মিতুল জোহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এরকম কথা ফারদার আর বলবে না। যদি কেউ শোনে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”

“সেটাই তো ঘটাতে চাই আমি। বিশাল আকারে একটা কেলেঙ্কারি হোক।”

মিতুল সন্দিহান দৃষ্টিতে দেখলো জোহানকে।

“এবার একটা কেলেঙ্কারি সত্যিই ঘটাবো আমি। বিয়ে করে নিয়ে যাব তোমায়।”
বলেই এক চোখ টিপে হাসলো জোহান।

মিতুল শুধু ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইল।

________________

এ বাড়িতে থাকতে জায়িনের অস্বস্তির শেষ নেই। কোথাও এক দণ্ড বসে থাকতেও বিরক্ত লাগে। মমকে কত করে বলেছিল এখানে থাকবে না। মম কোনো কথা শোনেনি। থাকতে বাধ্য করলো। কিন্তু সত্যিই আর থাকা সম্ভব নয় এখানে। আজকেই দাদা বাড়ি চলে যাবে। জায়িনের দাদা বাড়ি গুলশানে।
আজকে বিকেলে সেখানে চলে যাবে সে। মম এখন কিচেনে। রান্নায় টুকিটাকি সাহায্য করছে। জায়িন এইমাত্র ডেকে এসেছে মমকে।
এখানে যে আর থাকতে পারবে না সেটা জানাতে হবে মমকে। মমকে না জানিয়ে এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কিছুতেই একা নেওয়া সম্ভব নয়।

রেশমী কিচেন থেকে লিভিং রুমে এসে গেলেন অল্পতেই।
“কী ব্যপার ডেকেছো কেন?”

জায়িন কিছুটা নিচু স্বরে বললো,
“এখানে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয় মম। অস্বস্তিতে শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি। আজকে বিকেলেই দাদা বাড়ি চলে যেতে চাই।”

রেশমীও জায়িনের মতো গলার স্বর নিচু করে বললো,
“দাদা বাড়ি চলে যেতে চাও মানে? তোমার কি মাথা খারাপ? এরকম পাগলামি করো না। মাহিরা শুনতে পেলে কী ভাববে! দু দিন এখানে থাকবো বলেছি। এখানে থাকতে সমস্যাটা কী তোমার? জোহান তো মানিয়ে নিয়েছে, তাহলে তুমি পারছো না কেন? ওদিক তাকিয়ে দেখো জোহান কীভাবে মানিয়ে নিয়েছে। সবার সাথে কীভাবে তাল মিলিয়ে চলছে ও।”

মমের কথায় জায়িনের চোখ নাবিলের রুমের দিকে চলে গেল। যে রুমে জোহানকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রুমের দরজা বন্ধ। ভিতর থেকে জোহানের গানের সুর ভেসে আসছে। এবং সেই সাথে মাঝে মাঝে জোহান, মিলান এবং নাবিলের একই সাথে হাসাহাসি, কথাবার্তার শব্দ।
জায়িনের হঠাৎ রাগ হলো। কিন্তু নিজের রাগকে দমিয়ে রাখলো। মমের দিকে তাকিয়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বললো,
“ঠিক আছে, থাকবো দুই দিন।”

রেশমীর মুখে একটু হাসি দেখা গেল। জায়িনের মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
“ওহ মাই লাভলি বয়, মন খারাপ করো না। কষ্ট হলেও একটু মানিয়ে নাও।”

“বুঝতে পারছি আমি।”

রেশমী আনন্দিত বোধ করলেন। ছেলের কপালে চুমু খেয়ে আবার কিচেনে চলে গেলেন সবার মাঝে।

________________

মিতুলের মন খারাপ। জোহানকে নিজের হাতে রান্না করে পুঁটি, ট্যাংরা এবং শিং মাছ খাওয়াতে চেয়েছিল। কিন্তু ওর সেই চাওয়া আর পূরণ হলো না। বাজারে মলা, ট্যাংরা মাছ পাওয়া যায়নি। শুধু শিং মাছ আর পাবদা মাছ পাওয়া গেছে। শুধু শিং আর পাবদা মাছ খাইয়ে তো মিতুলের তুষ্টি মিটবে না। ও তো আরও অনেক মাছ খাওয়াতে চেয়েছিল জোহানকে। ট্যাংরা মাছ তো লাগতো সবার আগে। জোহানের ট্যাংরা প্রিয়!

কোনো মাছ মিতুলের কাটতে হয়নি। সুরভি খালা সব মাছ কেটেছে। তবে এই শিং, পাবদা রান্না করবে ও নিজ হাতে। কাউকে হাত লাগাতে দেবে না। সকল রান্না-বান্না ইতোমধ্যে শেষ। এখন কেবল শিং আর পাবদা মাছ রান্না বাকি। ও রান্না করছে। কেউ এখন নেই কিচেনে। ফ্রেশ হচ্ছে সবাই।
একটু পর জোহানকে দেখা গেল কিচেনে। হাতে আইসক্রিম। চামচ দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে।
জোহান মিতুলের পিছনে দাঁড়িয়ে বললো,
“এই গরমে তুলতুল আমার জন্য রান্না করছে, কষ্ট হচ্ছে না তুলতুলের?”

“না, হচ্ছে না।”

“আমার হচ্ছে। তোমাদের কিচেনে একটা এসি রাখা উচিত ছিল। প্রত্যেক রুমে এসি আছে অথচ কিচেনে নেই।”

“কিচেনেও ছিল। এক মাস আগে নষ্ট হয়ে গেছে।”

“ভেরি ব্যাড!” জোহানের যেন এসিটার উপরই রাগ হলো।

“তোমার বিগ ব্রো দোকান থেকে আইসক্রিম এনেছে। খাবে?”
হঠাৎ করে বললো জোহান।

“না, তুমি খাও। আমার জন্য ফ্রিজে রাখা আছে।”

“তাতে কী? আমি আমার আইসক্রিম থেকে খাওয়াবো তোমায়। দেখি, তাকাও আমার দিকে।”

মিতুল ফিরলো জোহানের দিকে। জোহান মিতুলের জন্য চামচে আইসক্রিম উঠিয়ে বললো,
“হাঁ করো।”

“আমি তোমার হাতে খাবো? যদি কেউ দেখে ফেলে?”

“কে আসবে এখন আমাদের বিরক্ত করার জন্য? তোমার ভাইয়েরা? তারা তো শাওয়ার নিচ্ছে।”

মিতুল কী যেন একটু ভাবলো। তারপর বললো,
“ঠিক আছে, দাও।”

মিতুল হাঁ করলো। জোহান কেবল চামচটা মিতুলের মুখের কাছে নিয়ে এলো, এর মাঝেই কিচেনের দিকে কারো এগিয়ে আসার পদধ্বনি হলো। পদধ্বনিটা খুবই ক্ষীণ। তাও মিতুলের মস্তিষ্ক নাড়িয়ে দিলো। মিতুল চকিতে জোহানের থেকে উল্টো ঘুরে অযথাই কড়াইয়ে খুন্তি দিয়ে নাড়াচাড়া শুরু করলো।
পিছনে শুনতে পেল মায়ের গলা,
“আরে, তুমি এখানে এই গরমের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছো কেন বাবা?”

জোহান যেহেতু বাংলা ঠিকঠাক বোঝে না তাই মাহিরাকে ইংলিশেই বলতে হলো।

জোহান মিতুলের জন্য চামচে ওঠানো আইসক্রিমের অংশটুকু নিজে মুখে পুরে নিয়ে বললো,
“আসলে কী রান্না হচ্ছিল সেটাই দেখতে এসেছিলাম।”

মাহিরা একটু হেসে বললেন,
“সব রান্না তো শেষ। শুধু এই মাছ বাকি আছে। এ মাছও এতক্ষণে রান্না করা হয়ে যেত যদি আমরা রান্না করতাম। কিন্তু এ মাছ আমাদের রান্না করতে দিলো না মিতুল। বললো নিজে করবে। কী রান্না যে করছে তা তো নিজেই দেখতে পাচ্ছ। রান্না করতে করতে বোধহয় বিকেল বানিয়ে ফেলবে মেয়েটা।”
মাহিরা আরেকটু হাসলেন।
জোহানও হাসলো। তবে মনটা একটু খারাপ।
একবার মিতুলের দিকে তাকালো। মিতুল যে সেই ওদিক ঘুরে রান্নায় মন দিয়ে খুন্তি নাড়াচাড়া শুরু করেছে, আর পিছন ফেরেনি। খুন্তি দিয়ে সেই থেকে কী নাড়াচাড়া করছে কে জানে। জোহান মাহিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
“ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি। শাওয়ার নেওয়া হয়নি এখনও আমার।”
জোহান চলে গেল।

মিতুলের হাত থামলো এবার। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করছে। ভয়ে শেষ ও। মা যদি কিছু দেখে ফেলতো তাহলে কী হতো?

“তোমার রান্না কতদূর?”

মায়ের প্রশ্নে মিতুল একটু হকচকিয়ে গেল।
“হ্যাঁ, এই তো হয়ে গেছে।” কথাটা বলতে একটু থতমত খেতে হলো।

______________

বিকেলে সবাই মিলে ধানমন্ডি লেক ঘুরতে গিয়েছিল। সবাই বলতে মিতুল, ওর ভাইয়েরা, জায়িন, জোহান এবং মিতুলদের নিচ তলার ভাড়াটিয়া দুই ভাই, বোন।
জায়িন প্রথমে যাবে না বলেছিল। কিন্তু পরে আবার রাজি হয়। সন্ধ্যার একটু আগে ওরা বাড়ি ফেরে। মিতুলের এইটুকু যেতেই আজকে খুব ক্লান্ত লাগলো। অন্য কারো ভিতর এই ক্লান্তিটা লক্ষ্য করেনি। সবাই বেশ চঞ্চলাই ছিল। অথচ ওর ক্লান্ত লাগছে। মিতুলের ধারণা ও দিন দিন আলসে হয়ে পড়ছে। মিতুল চায় না ওকে এই আলসেমিতে ধরুক। ও একটিভ থাকতে চায়।
মাগরিবের নামাজের একটু পরই মাহিরা মিতুলকে ডাকতে এলো। লিভিং রুমে আসতে বললো দ্রুত। মা যখন এরকম করে ডাকছে তার মানে সবাই মিলে নিশ্চয়ই এখন আড্ডা দেবে লিভিং রুমে। মিতুল নিজের অগোছালো চুলগুলো সুন্দর করে আঁচড়ে নিয়ে, পরিপাটি হয়ে লিভিং রুমে এলো। যা ভেবেছিল, ঠিক তাই। সবাই আছে এখানে। মিতুলের চোখ জোহানকে দেখে নিলো একটু ভালো করে। জোহান মোবাইল ঘাটছে ওর ভাইদের পাশে বসে। ওপাশের সোফায়।
এপাশের সোফায় মা, রেশমী আন্টি এবং জায়িন। ওপাশের সোফায় একপাশে আব্বু, তারপর ভাইয়েরা এবং জোহান। সবাই এমন ভাবে বসে আছে যে জায়গার পরিমাণ খুব কম অবশিষ্ট আছে। মিতুল বুঝতে পারছে না ও কোথায় বসবে।
মিতুল একটা টুল এনে মায়ের পাশে বসলো।

খাবারের ব্যবস্থাও আছে এখানে। চা, কফি, বিস্কিট, স্যান্ডউইচ, সিঙ্গারা। মাহিরা মিতুলকে এক কাপ কফি এগিয়ে দিলো। মিতুল নিলো।

রেশমী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটু আয়েশ করে বললেন,
“বাচ্চারা এদিকে মনোযোগী হও।”

রেশমীর কথা শুনে সবাই তার দিকে মনস্থির করলো। জোহান বাংলা বুঝতে পারেনি। কিন্তু তাকেও মোবাইল রেখে মায়ের দিকে তাকাতে দেখা গেল। রেশমী বললেন,
“যে কারণে তোমাদের এখানে ডাকা হয়েছে…যদিও আমরা বড়ো’রা এই ব্যাপারটা অনেক আগে থেকেই জানি। এ নিয়ে আমাদের মাঝে কথাবার্তা হয়েছে অনেক। কিন্তু তোমাদের জানানো হয়নি…”

মিতুল কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে রেশমী আন্টির দিকে। এটা তাহলে আড্ডা দেওয়ার আসর নয়। আড্ডার জন্য ডাকা হয়নি, ডাকা হয়েছে কোনো অজানা ব্যাপার জানানোর জন্য। কিন্তু কী সেটা? কী এমন কথা যেটা তারা জানে অথচ ওরা জানে না? মিতুলের চোখ হঠাৎ জোহানের উপর পড়লো। জোহানও হঠাৎ করে তাকালো ওর দিকে। ওকে তাকাতে দেখে নিজের ভ্রু নাড়লো।
মিতুলের হঠাৎ হাসি পেল, দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেললো। তারপর আবার মনোযোগ দিলো রেশমী আন্টির কথায়।

রেশমী বললেন,
“শুধু আমি একা নই, আমরা অভিভাবকরা সবাই মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটা হলো…”
রেশমী বলতে গিয়েও একটু থামলেন। তার মাঝে একটা আনন্দঘন উত্তেজনা। একবার উপস্থিত সবার ভাব ভঙ্গি দেখে নিয়ে বললেন,
“সেটা হলো মিতুলকে আমি আমার পুত্রবধূ করে নেবো।”

রেশমী আন্টির বলা কথাটা কয়েক বার প্রতিধ্বনিত হলো মিতুলের কানে। প্রথমে বুঝতে একটু কষ্ট হলো, কিন্তু যখন বুঝলো তখন লজ্জায় লাল হয়ে গেল একেবারে। মাথা নুইয়ে ফেললো। হায় আল্লাহ! এ কেমন পরিস্থিতি? এই জোহানটা সত্যিই…মিতুলের চাপা উত্তেজনা ভাব। লজ্জা, আনন্দ মিলেমিশে একাকার। কী করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। জোহান কী করে বলে দিলো এটা? কী করে? উহ! সত্যিই জোহান একটা পাগল! লজ্জা শরমহীন একটা ছেলে। এত তাড়াতাড়ি এই কথাটা মমের কাছে জানিয়ে দেওয়ার কী দরকার ছিল?
মিতুলের মাথায় হঠাৎ ‘সারপ্রাইজ’ শব্দটি উদিত হলো। মাথায় ভাবনার সুতো প্যাঁচাতে লাগলো। এটাই কি তাহলে জোহানের দ্বিতীয় সারপ্রাইজ? এই সারপ্রাইজ দেওয়ার কথাই বলেছিল জোহান? ইশ! এই জোহানটাকে নিয়ে সত্যিই ও আর পারে না। এত তাড়াতাড়ি ওদের কথা রেশমী আন্টিকে জানিয়ে দিলো। মিতুলের আনন্দ, উত্তেজনায় দিশেহারা লাগছে। ইচ্ছা করছে এক ছুটে রুমে চলে যায়। এখানে বসে থাকা ওর জন্য দুষ্কর হয়ে পড়ছে। নিজের এই লজ্জা মাখা মুখ তুলে তো কিছুতেই তাকাতে পারবে না। কী করবে? মিতুল মাথা নিচু করেই বসে রইল ধৈর্য ধরে।
এর মাঝে শুনতে পেল আবারও রেশমী আন্টির কণ্ঠ,
“মিতুলকে আমি আমার জায়িনের বউ করে ঘরে তুলবো।”

মিতুলের লজ্জা মিশ্রিত আনন্দঘন অনুভূতি যেন দমকা হাওয়ার তান্ডবে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল! দু কান ঝাঁ ঝাঁ করে উঠলো। থমকে গেল ও। কী বলছেন রেশমী আন্টি এটা? মিতুল চকিতে চোখ তুলে তাকালো রেশমী আন্টির মুখের দিকে। রেশমী আন্টির মুখে মুচকি হাসি। সেই সাথে মা, আব্বুরও। মিতুলের মনে হলো ও কোনো এক দুঃস্বপ্নের সাগরে ভাসছে। ভাসছে না ঠিক, ও তলিয়ে যাচ্ছে সাগরের নিচে। দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর! ভালো করে একটুখানি নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য বুকটা হাহাকার করছে!
মিতুল আতঙ্ক, বিস্ময়গ্রস্ত চোখ নিয়ে জোহানের দিকে তাকালো।

(চলবে)
______________