চৈত্রিকা পর্ব-৮+৯

0
319

#চৈত্রিকা (৮)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
___________

১৮.
গোধূলির সময় তখন। বিয়ের পর সাথীদের বাড়ির ঝামেলা মিটাতে মিটাতেই বিকেল পেড়িয়ে গেছে। জমিদার বাড়িতে চৈত্রিকার বরণ হয় গোধূলির সময়। চৈত্রিকা তখন শান্ত। প্রহর আর চৈত্রিকাকে বরণ করে ঘরে তুলে পল্লবী। দুজনকেই বসিয়ে দেয় হল রুমের সোফায়৷ চৈত্রিকা বিনাবাক্য বেয়ে সবার নিয়ম মেনে চলছে। দুতলা থেকে এক পলক চৈত্রিকাকে বউ সাজে দেখেছে পিয়াস৷ রাগে, ক্ষো’ভে দরজা আটকিয়ে বসে আছে৷ নীরা অসন্তুষ্ট মনে সকল কাজ করে যাচ্ছে। শায়লা বরাবরই এসবের থেকে দুরে। চয়ন, শিমুল দু ভাই নিজের ঘরে চলে গেছে বেশ অনেকটা সময় আগেই৷ প্রহর এখনো বসে আছে দেখে বেশ অবাক হয় চৈত্রিকা। লোকটা তো এখনো থাকার কথা নয় তাহলে! অর্পিতা, অর্থি, অয়ন এসে চৈত্রিকার পাশে বসে। বেশ অনেকটা সময় ওভাবে বসে থাকার পর পল্লবী এসে চৈত্রিকাকে প্রহরের ঘরে নিয়ে যায়। প্রহর একপলক সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। চিত্র এসে পাশে বসে। বেশ শান্ত স্বরে বলে,

‘তুমি ঠিক কি চাইছো বড় ভাইজান?’

প্রহর জবাব না দিয়ে চৈত্রিকার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো৷ চিত্রও তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকিয়ে থাকে। চৈত্রিকাকে প্রহরের ঘরে বসিয়ে দেয় পল্লবী। বলে,

‘রাতের সময় তো এখনো অনেক দেড়ি তাই তুমি চাইলে এগুলো বদলে নিয়ে বসতে পারো বড় বউ।’

চৈত্রিকা কোনো কথা বললো না। শুধু মাথা নাড়ালো। পল্লবী আলমারি থেকে শাড়ির প্যাকেট বের করে বেশ আফসোসের সুরে বললো,

‘ঘরটা আমার মহুয়া বউয়ের ছিলো। না জানি কার নজর পড়েছিলো আমার সংসারে! মেয়েটা অকালে চলে গেলো।’

‘এতো ভালোবাসতেন মহুয়া বুবুকে?’

পল্লবীর ঠান্ডা গলার প্রশ্নে পল্লবী মুখটা করুণ করলো। বেশ করুণ স্বরেই বললো, ‘বাসবো না? বাড়ির বড় বউ ছিলো ‘ও’। আমার বড় মেয়ে।’

চৈত্রিকা অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বলে, ‘সেই বড় মেয়েরই মৃ’ত্যুর ৩ মাসের মাথায় আপনার বড় ছেলে বিয়ে করলো তাও আবার আমার মতো এমন একটা মেয়েকে যার আগেও কেউ নেই, পরেও কেউ নেই৷ মামা তো সবচেয়ে খারাপ মানুষ যাকে আপনারা খুব ঘৃ’ণা করেন তারই ভাগ্নীকে বিনা দ্বিধায়, কি সুন্দর করে মেনে নিলেন! একটু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে না শ্বাশুড়ি মা?’

চৈত্রিকার বিচক্ষণ বুদ্ধি, চতুর প্রশ্নের কাছে ঘাবড়ে গেলো পল্লবী। ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বেশ ঝাঁঝালো স্বরে বললো, ‘আমার ছেলে তো আর আজীবন ম’রা বউয়ের শোক নিয়ে বসে থাকবে না তাই না! তুমি মেয়ে ছোট ছোটোর মতো থাকো। পাকামো করবে না একদম। ধরো! শাড়ি পড়ে নিও।’

চৈত্রিকার হাতে প্যাকেটটা দিয়ে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। চৈত্রিকা পল্লবীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হেঁসে ওঠে। বিড়বিড় করে বলে, ‘আহারে জমিদার গিন্নি! গোপন আতে বুঝি ঘা লাগলো!’

১৯.
অর্থি এই সাঁঝের বেলায় বেড়িয়েছে বাড়ি থেকে। উদ্দেশ্য নিবিড়ের বাড়ি। পেটের মধ্যে কথার ফুলকি ফুটছে কাকে বলবে ভেবে ভেবে শেষে পেয়েছে নিবিড়কে। চুপিচুপি বাড়ি থেকে বের হয়ে ছুটে গেলো গ্রামের পথ ধরে। বেশ খুশি মনেই এগোতে এগোতে নিবিড়ের বাড়ির সামনের রাস্তাতেই দেখা হয় দুজনের। এই সময় অর্থিকে দেখে নিবিড় ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অর্থি ছুটে এসে নিবিড়ের সামনে দাঁড়ায়। নিবিড় গম্ভীর স্বরে বলে,

‘এই মেয়ে! এই সময় এখানে কি করো? তোমার বাড়িতে জানে তুমি এই সময় বেড়িয়েছো? আজ না তোমার ভাইয়ের বিয়ে ছিলো!’

‘হ্যাঁ ছিলো তো। ওদের তো বিয়ে হয়ে গেছে। জানেন বড় ভাবীজানকে না অনেক সুন্দর লাগছিলো। আমি তো হা করে তাকিয়ে ছিলাম।’

‘তোমার মুখে হাতি ঢুকে যায়নি তো অর্থি?’

অর্থি কিছু বলতে নিয়েও চুপ করে যায়। কোমড়ে হাত রেখে বলে, ‘আমার মুখ কি অতো বড় নাকি যে মুখে হাতি ঢুকে যাবে! আপনাকে মাষ্টারমশাই কে বানিয়েছে বলেন তো! আপনার মাথা তো দেখি আমার মাথার থেকেও ফাঁকা।’

নিবিড় কেশে ওঠে। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকে অর্থির মুখের দিকে। মেয়েটা এতো গা’ধা কেন? ইচ্ছে করলো মেয়েটার মাথায় দুটো গাট্টা মা’রতে। কিন্তু নিজের ইচ্ছে দমিয়ে কপালে ভাজ ফেলে চোখ মুখ কুঁচকে বললেন,

‘কোথায় যাচ্ছো তুমি? যাও তো নিজের রাস্তায়! মাথা খারাপ করো না আর।’

অর্থি গাল ফুলালো। হাত বগলদাবা করে বললো, ‘আমি আপনার মাথা খারাপ করি মাষ্টারমশাই? এটা আপনি বলতে পারলেন? আমি তো আপনার কাছে একটা কথা বলতে আসছিলাম।’

‘আমাকে? তোমার আবার আমার সাথে কি কথা?’

অর্থি পেছনে ঘুরে তাকায়। অভিমানী স্বরে বলে, ‘আর বলবো না। আপনি ভীষণ পঁচা!’

নিবিড় পাত্তাই দিলো না। নিজের মতো রাস্তায় হাঁটা লাগিয়ে বললো, ‘তো বলো না। বাড়ি চলো যাও!’

অর্থি নিবিড়কে যেতে দেখে নিজেও ছুট লাগায়। নিবিড়ের হাত আঁকড়ে ধরে বলে, ‘আপনি তো দেখি খুব পঁচা! সত্যি সত্যিই আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছেন!’

‘তো কি করবো? আর তুমি যখন তখন আমার হাত ধরো কেন? ছাড়ো!’

অর্থি আলগোছে হাত ছেড়ে দেয়। মাথা নিচু করে পাশাপাশি হাঁটতে থাকে নিবিড়ের। নিবিড় জমিদার বাড়ির পথে হাঁটছে। এই সন্ধ্যা বেলা তো আর মেয়েটাকে একা ছাড়া যায় না। অন্তত নিবিড়ের পিছু পিছু হলেও নিজের বাড়ির দিকেই যাক। অর্থির চিন্তা ভাবনা অন্য জায়গায়। নিবিড়ের ধমকে সে মুখ ফুলিয়েছে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে আর কখনোই সে মাষ্টারমশাইয়ের সাথে কথা বলবে না। না মানে না। লোকটা শুধু শুধু তাকে বকে! সন্ধ্যার হালকা আলোয় অর্থির মুখ ফুলানো নিবিড় আড়চোখে দেখলো। সাথে সাথেই ঠোঁট কামড়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অর্থি জানেই না সে নিবিড়ের পিছু পিছু নিজের বাড়ির দিকেই যাচ্ছে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই নিবিড় প্রশ্ন করে,

‘কি বলতে এসেছিলে? কিছু হয়েছে?’

অর্থি জবাব দেয় না। নিজের গাল আরো ফুলায়। সে কোনোমতেই কথা বলতে রাজি নয়। নিবিড় ভ্রু কুঁচকে হাঁটা থামিয়ে দেয়। অর্থি একবার নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে। নিবিড় বোঝে অর্থির অবস্থা। নিঃশব্দে হাসে। অর্থির পাশাপাশি হেঁটে যখন জমিদার বাড়ির সামনে আসে। তখন ফের বলে,

‘বড় ভাইজানের বিয়ে দেখে কি তোমারও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে নাকি অর্থি? তোমার আব্বাজানের সাথে কথা বলবো?’

অর্থি ফট করে মাথা তুলে তাকায়। নিজের মনে মনে করা প্রতিজ্ঞা ভুলে গিয়ে গড়গড় করে বলে, ‘আপনি সত্যিই কথা বলবেন আব্বাজানের সাথে? আপনি আমাকে বিয়ে করবেন মাষ্টারমশাই?’

সাথে সাথেই নিজে নিজের মুখ চেপে ধরে। চোখ বড় বড় করে একবার নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে দৌড়ে নিজের বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে অর্থি। নিবিড় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি বললো এটা অর্থি? এই মেয়ের মাথায় আসলে চলছে টা কি?

২০.
গভীর রাতে যে যার কক্ষে ঘুমে বিভোর। শুধু চৈত্রিকার চোখে ঘুম নেই। প্রহর এখনো আসেনি নিজের ঘরে। চৈত্রিকা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে বাতাস অনুভব করছে। মাথার মধ্যে হাজারও চিন্তা ভাবনা। সে সময় দরজা খোলার শব্দ পেয়েও চৈত্রিকা কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ করে নাহ। চুপচাপ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। পুরো ঘরে চৈত্রিকাকে না দেখতে পেয়ে প্রহর উঁকি দেয় ব্যালকনিতে। সেখানে কারো অবয়ব দেখেই বুঝে যায় ওটা চৈত্রিকা। নিঃশব্দে সে নিজেও এসে দাঁড়ায় চৈত্রিকার পিছে। চৈত্রিকা টের পায় কারো উপস্থিতি। নিজের খুব কাছে কারো উষ্ণতা টের পেয়ে চমকে পেছনে তাকাতে নিলে ধাক্কা খায় প্রহরের সুঠাম বক্ষের সাথে। চৈত্রিকা মাথাটা সরাসরি প্রহরের বুক বরাবর পড়ে। চৈত্রিকা মাথা উঁচিয়ে তাকিয়ে প্রহরের গম্ভীর মুখ দেখে নিজেকে সামলায়। সরে আসতে নিলে প্রহর টেনে ধরে। হাত ঠেকায় চৈত্রিকার উদরে। চৈত্রিকা কেপে উঠে চোখ বড় বড় করে তাকায়। দ্রুত কন্ঠে বলে,

‘কি করছেন?’

প্রহরের ঠোটের কোণে হাসি৷ চৈত্রিকার চোখের দিকে তাকিয়েই বললো, ‘কি করছি?

চৈত্রিকা কোনোরকমে বলে, ‘দুরে সরুন!’

‘সদ্য বিবাহিত নতুন স্ত্রীর কাছ থেকে দুরে সরবো? বিষয়টা ভালো দেখায় না চৈত্রিকা। তাছাড়া বিয়ে করেছি কি বউয়ের থেকে দুরে থাকার জন্য?’

চৈত্রিকা প্রহরের কথায় ভেতর ভেতর বেশ চমকায়। তবুও নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে বলে, ‘বিয়ে তো করেছেন লুকিয়ে! গ্রামের কেউও বোধহয় ঠিক মতো জানে না যে আপনি ২য় বিয়ে করেছেন। সেখানে আবার বউয়ের কাছে, দুরে থাকা নিয়ে কি সমস্যা!’

প্রহর ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে তাকায়। বুঝলো না চৈত্রিকার কথার মানে। তবে ধরে থাকা হাতটা ঠিকই আলগা করে দিলো। চৈত্রিকা মনে মনে হাসলো। দুরে সরে এসে বেশ ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বলে,

‘জমিদারের বড় পুত্র ২য় বিয়ে করেছে অথচ তেমন কেউই জানে না। এই বিয়ের কি মূল্য?’

‘এখন কি লোক গণনা করে বিয়ের মূল্য করবে নাকি? আল্লাহর কালাম পড়ে বিয়ে করেছো আর তুমি সেখানে কয়েকজন লোককে গণনা করে বিয়ের মূল্য দেখাচ্ছো!’

চৈত্রিকা পাত্তা দিলো না। চুপচাপ ঘরের মধ্যে এসে বসলো। প্রহর কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে চুপচাপ নিজেও রুমে আসলো। চৈত্রিকার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে বললো,

‘কি চাচ্ছো বলো তো!’

‘কি চাইবো? আমি যে আপনার স্ত্রী এটা পুরো গ্রামসহ আপনি আপনার সমস্ত আত্মীয়-স্বজন সবাইকে জানান। আমাদের বিয়ের বউভাতের অনুষ্ঠান করুন বড় করে। নাকি অতোটুকু সাহসও নেই? লোকসমাজে বুঝি বলতে পারবেন না যে আপনি ২য় বিয়ে করেছেন!’

প্রহর বেশ জ্বলে উঠে। তবে চৈত্রিকার উদ্দেশ্য ধরতে পেরে নিজেকে ভেতরে শান্ত করে বাঁকা হাসে। ধীর পায়ে চৈত্রিকার পাশে এসে বসে চৈত্রিকার চুলে ফুঁ দেয়। চৈত্রিকা বুঝে উঠে না প্রহরের এমন ব্যবহারের কারণ। প্রহর একদম কাছ ঘেঁষে বসে। চৈত্রিকা ফাঁকা ঢোক গিলে উঠে যেতে নিলে প্রহর আটকে দেয়। সরাসরি নাক, মুখ ডুবিয়ে দেয় চৈত্রিকার ঘাড়ে। চৈত্রিকা চমকে ওঠে। ফ্রিজড হয়ে যায় মুহুর্তেই। বেশ কয়েকবার ঢোক গিলে বড় বড় শ্বাস নেয়। প্রহরের হাত দৃঢ় হয়। হাতের বিচরণের সাথে সাথে সে ঠোঁট নাড়িয়েও বলে,

‘তুমি যদি এটাই চাও তবে হোক তা। কিন্তু অনুষ্ঠান হবে দুদিন পর। তাই বলে আমি কি আমার বাসর রাত মাটি করবো? উহু। কখনোই নাহ।’

চৈত্রিকা হাত দিয়ে সরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু প্রহর না সরে আরো চেপে ধরে। প্রহরের উদ্দেশ্য এতটুকুও টের পেলো না চৈত্রিকা। বার বার কেঁপে কেঁপে মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে। প্রহর বেশ মজা নেয়। একটা সময় যখন আরো খানিকটা ঘনিষ্ঠ হয় তখন প্রহর হুট করেই ছেড়ে দিয়ে উল্টো পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে। চৈত্রিকা আটকে রাখা শ্বাস ছেড়ে দেয়। বড় বড় করে শ্বাস নিয়ে আড়চোখে একবার প্রহরের দিকে তাকায়। মনে মনে বেশ করে বকা দেয়। তবে প্রহরের এহেন ব্যবহারের আগা মাথার কোনোটাই তার বুঝে আসলো না। কি মনে করে কাছে আসলো আর কি মনে করেই বা সরে গেলো! এই লোকটার মধ্যে এতো রহস্য কেনো? কি চলছে প্রহরের মনে!

চলবে..

#চৈত্রিকা (৯)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
_____________

২১.
সকাল বেলা গোসল সেড়ে রুমে থাকা একটা লাল শাড়ি পড়ে চৈত্রিকা। অর্থি সেই ভোর বেলা থেকে ডেকে ডেকে চৈত্রিকাকে তুলেছে। প্রহর নিশ্চিন্ত মনে তখনো ঘুমাচ্ছে। চৈত্রিকা চোখ মুখ কুঁচকে একবার প্রহরের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ মাথায় ঘোমটা টেনে ঘরের দরজা খুলে বের হয়। ভেজা চুলগুলো তখন এলোমেলো করে রাখা। অর্থির ঘর কোনটা তা জানেনা চৈত্রিকা। তবে ভাগ্যবশত ঘর থেকে বের হওয়ার পর সামনে পরে অর্পিতা। অর্পিতাকে দেখে সৌজন্যমূলক হেঁসে বলে,

‘আপু অর্থির ঘর কোনটা? আসলে ‘ও’ আমাকে ডেকে আবার চলে গেছে তো!’

অর্পিতা কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে চৈত্রিকার মুখপানে। কি স্নিগ্ধ মেয়েটার মুখ! গোসলের পর যেনো মেয়েটার সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ ধরা দিয়েছে। অর্পিতা মুচকি হেঁসে চোখের কাজল নিয়ে চৈত্রিকার ঘাড়ে লাগিয়ে দেয়। চৈত্রিকা খানিকটা চমকালেও পরমুহুর্তে অর্পিতা কি করছে বুঝতে পেরে নিজেকে সামলে নেয়। অর্পিতা হেঁসে বলে,

‘মাশাল্লাহ। কারো নজর না লাগুক! অবশ্য আপনি যতটা সুন্দর তাতে সবার নজর লেগে যাবেই। আর আমাকে আপু বলে ডাকছেন কেনো বড় ভাবীজান? আমি তো সম্পর্কে আপনার ছোট ননদ!’

‘সম্পর্কে আপনি আমার ছোট হলেও বয়সে তো বড়! তাই আপু বলতে সমস্যা নেই৷’

অর্পিতা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। নাহ! মেয়েটার আচার-আচরণও বেশ ভালো। সে ভেবেছিলো এতো সুন্দরী মেয়ের নিশ্চয় অনেক অ’হং’কার হবে! কিন্তু তাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে মেয়েটা খুবই মিশুক এবং ভালো মনের বের হলো। দুজনে আরো কিছুটা গল্প করে একসাথেই অর্থির ঘরে আসে। অর্থি তখন বিছানার ওপর সবগুলো বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিয়ে বসে আছে। অর্পিতা ফিক করে হেঁসে দিলেও চৈত্রিকা খানিকটা ভ্রু কুঁচকালো। অর্থির মুখের অবস্থা দেখে তার ভালো ঠেকে না। অর্থি চৈত্রিকা আর অর্পিতাকে দেখেই ঠোঁট ফুলায়। কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে,

‘ওহ ভাবীজান দেখুন নাহ আম্মাজান আমারে বই নিয়ে বসিয়ে দিয়েছে! আপনিই বলেন তো বড় ভাইজানের বিয়ের সময় কেউ পড়তে বসে?’

অর্পিতা অর্থির মাথায় গাট্টা মে’রে বলে, ‘বিয়েটা তো তোর ভাইয়ের তোর তো আর না! তাহলে পড়তে সমস্যা কি?’

চৈত্রিকাও এগিয়ে এসে অর্থির পাশে বসে। অর্থি অর্পিতার কথা পাত্তা না দিয়ে বেশ উত্তেজিত স্বরে বলে, ‘এটাই! এটাই তো আমার সমস্যা। পড়া!’

চৈত্রিকা বুঝতে পেরে নিজেও ফিক করে হেঁসে দেয়। হাসতে হাসতেই বলে, ‘পড়াটাই তোমার সমস্যা? তবে তোমার ভাইজানকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করি?’

‘হ্যাঁ! করো করো, আমার সমস্যা নেই।’

অর্থির ফট করে এমন কথায় চৈত্রিকা খানিকটা ঘাবড়েই যায়। অর্পিতা অর্থির মাথায় ফের গাট্টা মে’রে বলে, ‘বিয়ে বিয়ে না করে পড়! এতো আগে জেঠাই তোর বিয়ে দেবেন না। তাই পড়ে পড়েই শহিদ হও ছোট বোন।’

অর্থি এবার বেশ বড় সড় করে গাল ফুলালো। তার গাল ফুলানো দেখে চৈত্রিকা আর অর্পিতা দুজনই শব্দ করে হাসে। অর্থি হা করে তাকায় চৈত্রিকার দিকে। গালে হাত দিয়ে সেদিকে তাকিয়েই বলে,

‘আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর ভাবীজান।’

চৈত্রিকার হাসি বন্ধ হয়ে যায়। মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়। অর্পিতা নিঃশব্দে হাসে। তারপর অর্থিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে, ‘তোমার ভাবীজানের শুধু হাসি কেনো? সে পুরোটাই সুন্দর। এখন তুমি পড়ো নয়তো বড় আম্মুকে পাঠাচ্ছি আমি!’

‘আজ না পড়লে কি হয়? ভাইজান তো কেবল কাল বিয়ে করলো তাহলে আর দুদিন পর থেকেই না হয় পড়ি!’

‘জ্বি নাহ। এখনই পড়! তুই এমনেই ফাঁকিবাজ তারওপর কিছু পারিস না। একদম ফাঁকি দিবি না। সব পড়া পড়বি। আমি এসে পড়া নিবো! বড় ভাবীজান চলুন নিচে যায়!’

অর্পিতা উঠে দাড়ালে চৈত্রিকা নিজেও ওঠে। অর্থিকে বেশ নরম স্বরে বলে, ‘পড়া শেষ করে তুমিও নিচে আসো। কেমন!’

অর্থি গাল ফুলিয়েই মাথা নাড়ে। চৈত্রিকা হেঁসে নিজের মাথার আঁচল আরও একটু টেনে নিয়ে অর্পিতার পিছু পিছু নিচে নামে। চৈত্রিকাকে দেখে খানিকটা সময় তাকিয়ে থাকে পল্লবী। মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে। নিজের কাজ করতে করতে বিড়বিড় করে বলে, ‘মেয়েটা খুব চতুর! এর থেকে সাবধানে থাকতে হবে।’

চৈত্রিকা নিজেও তাকায় পল্লবীর দিকে। মনে মনে হাসে সে। বেশ মজাও পায়। হল রুমের সোফায় চয়ন, পিয়াস, চিত্র বসে ছিলো। অর্পিতা আর চিত্র দুজনেই একপলক নিজেদের দিকে তাকায়। চয়ন নিজের মতো চা পান করছে। পিয়াসের চোখ তখন চৈত্রিকার দিকে। চৈত্রিকার দিকে থমকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয়। তাদের ক্রস করে যখন চৈত্রিকা রান্নাঘরের দিকে যায় তখন পিয়াসের চোখ পড়ে চৈত্রিকার ভেজা চুলে। ব্যাস! হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রক্তচক্ষু নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রয়। যেনো চোখ দিয়েই সবটা ভ’স্ম করা গেলে সে এমুহূর্তে তাই করতো! তার এই রুপ সবার নজর এড়িয়ে গেলেও এড়ালো না চৈত্রিকা আর নীরার চোখ। নীরার মনের ক্ষো’ভ বাড়লেও চৈত্রিকা মনে মনে কু’টিল হাসি হাসে। বিড়বিড় করে আওড়ায়,

‘এ তো কেবল শুরু পিয়াস রেনওয়াজ। বড় ভাইয়ের সুখ সহ্য হয় না বুঝি! তোমরা যত নিজেদের মধ্যে লড়বে আমি তত এগিয়ে যাবো নিজের লক্ষ্যে। শক্তিতে নয় বুদ্ধিতেই একটু একটু করে মা’রবো তোমাদের। একটাও পা’প করে পাড় পাবে না।’

২২.
সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই যখন নিজেদের নিজেদের কাজে বেড়িয়েছে তখন চিত্রও বাড়ি থেকে বের হয়। বেশ অনেকদিন গ্রামের কিছুই দেখা হয় না। অনেক কিছুর কি পরিবর্তন ঘটেছে নাকি আগের মতোই আছে! মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে। একটু শান্তি দরকার। তাই চুপচাপ পকেটে হাত গুজে বের হয়ে এলো বাড়ি থেকে। পেছন পেছন অর্পিতাও বের হয়ে আসে। পেছন থেকে বেশ নিচু স্বরেই ডাকে চিত্রকে। চিত্র ঘাড় বাকিয়ে পিছু তাকাতেই অর্পিতাকে চোখে পড়ে। পুরোপুরি পেছনে ফিরে ভ্রু নাঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কি?’

‘কোথায় যাচ্ছো চিত্র ভাই?’

‘কোথাও না। আমি এমনিই বের হয়েছি। গ্রামটা অনেকদিন ঠিক মতো দেখা হয় না। এবার যখন অনেক দিন আছি তখন না হয় একটু ঘুরে দেখি!’

‘তুমি এবার অনেকদিন থাকবে?’

‘হুম।’

চিত্রর ছোট্ট জবাবে চুপ করে যায় অর্পিতা। চিত্র নিজের রাস্তায় ঘুরে যেতে যেতে বলে, ‘বাড়ির মধ্যে যা!’

অর্পিতা সাহস নিয়ে ফট করে বলে, ‘আমি আসি তোমার সাথে?’

পা থেমে যায় চিত্রর। কপালে ভাজ ফেলে পিছু তাকিয়ে বলে, ‘তুই কেনো যাবি?’

‘এম-এমনি। তুমি যাচ্ছো তাই ভাবলাম যাই! আসলে আমিও তো অনেকদিন থেকে গ্রামে আসি না। তাই আরকি!’

চিত্র কিছু বলে না। অর্পিতাকে ‘আয়!’ বলে নিজে হাঁটা লাগায়। অর্পিতা নিজেও ঠোঁট এলিয়ে হেঁসে চিত্রর পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করে। দুজনে বেশ অনেকটা পথ নীরবতা নিয়েই হাঁটে। গ্রামের শেষের দিকে একটা নদী রয়েছে। দুজনে ঠিক সেখানেই আসে। চৈত্র মাসের রোদের তাপে নদী শুকিয়ে গেছে প্রায়। ভ্যাপসা গরমে জান যায় যায় অবস্থা। অথচ এ রোদের মধ্যেই দুজন দাঁড়িয়ে আছে নদীর পাড়ে। চিত্র বেশ নরম স্বরে ডাকে, ‘অর্পি!’

অর্পিতা চমকে তাকায়। কতগুলো দিন পর চিত্রর মুখে সেই আগের মতো আদুরে ডাক শুনে চোখ বন্ধ করে নেয়। ভেতরটা শীতলতায় ভরে ওঠে। চিত্র আড়চোখে অর্পিতার প্রশান্তি ভরা মুখ দেখে চোখ ফিরিয়ে নেয়। নিজেকে প্রস্তুত করে অর্পিতার মন ভাঙার জন্য। চোখ দুটো অন্যদিকে নিয়ে বেশ দ্রুত স্বরে বলে,

‘তুই আমার কাছে যা চাচ্ছিস তা সম্ভব না অর্পি। আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি৷ তাই তোর জন্য এটাই মঙ্গলের যে তুই আমার থেকে দুরে থাক!’

২৩.
বিকেলের দিকে চয়নের ঘরে যায় প্রহর। চোখে মুখে তার ভীষণ গম্ভীরতার ছাপ। শার্টের হাতা গুটিয়ে নিয়ে চয়নের সামনে যায়। চয়ন প্রহরকে এই সময় নিজের ঘরে দেখে ভ্রু কুঁচকায়। ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘এই সময় তুমি! কিছু হয়েছে প্রহর?’

প্রহর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। তারপর রয়ে শয়ে বলে, ‘আমাদের বউভাতের ব্যবস্থা করুন আব্বাজান। গ্রামের সকল মানুষ সহ যত আত্মীয়-স্বজন আছে সবাইকে দাওয়াত করুন!’

চয়ন অবাক দৃষ্টিতে তাকায় নিজের বড় ছেলের দিকে। সাথে ভেতরে ভেতরে বেশ চমকেও যায়। হঠাৎ প্রহরের এহেন সিদ্ধান্তের কিছুই বুঝে ওঠে নাহ। তবে কিছু বলতে নিলে প্রহর তাকে থামিয়ে দিয়ে নিজেই আবারও বলে,

‘আমি যা বলেছি ভেবেই বলেছি। আপনি সবকিছুর ব্যবস্থা করুন।’

‘তুমি আসলেই ভেবে বলছো প্রহর? এতে কি হতে পারে তা তুমি বুঝতে পারছো?’

‘জ্বি আব্বাজান। আর হ্যাঁ! কোনো আত্মীয়কে বাদ দিবেন না। আমার জানামতে আপনার নিমন্ত্রণ কেউ ফেলতে পারবে না তাই কাউকে বাদ দিবেন না।’

চয়ন গম্ভীর দৃষ্টিতে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার বুঝতে বাকি নেই তার ছেলে তাকে কি বুঝিয়ে গেলো! তবে এমন সিদ্ধান্তের আগা মাথা কিছুই তার মাথায় ঢুকলো না। প্রহর নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে চুপচাপ কক্ষ ত্যাগ করে। প্রহরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে কেউ খুব গোপনে শ’য়’তা’নী হাসি হাসে।

প্রহর নিজের ঘরে এসে দেখে চৈত্রিকা আর অর্থি বসে আছে। দুজনে জমিয়ে গল্প করছে। প্রহরকে দেখে অর্থি ছুটে আসে তার কাছে। নিজের হাত বাড়িয়ে দিতেই প্রহর হেঁসে পকেট থেকে চকলেট বের করে দেয়। অর্থি বেশ খুশি মনেই ঘর ছেড়ে বের হয়ে যায়। চৈত্রিকা নিজের মতো তখনো ঠায় বসে রয়েছে। প্রহর কোনো শব্দ না করে নিজের জামাকাপড় নিয়ে গোসলখানায় ঢুকে পড়ে। বেশ অনেকটা সময় পর এসেও সে চৈত্রিকাকে নিজের জায়গাতে বসে থাকতে দেখে বলে,

‘বাহ! এখনো আছো? আমি তো ভেবেছিলাম আমি আসতে আসতে তুমি পালিয়ে যাবে!’

চৈত্রিকা ভ্রু কিঞ্চিত কুঁচকে বলে, ‘পালাবো কেনো? আমি কি চো’র নাকি ডা’কাত জমিদার সাহেব? যে পালাতে যাবো!’

‘সে তো তুমিই ভালো জানো। কাল রাতে যেভাবে পালাই পালাই করলে তাতে তো আমার মনে হলো তুমি আমার ঘরের বউ না কোনো শ’ত্রু!’

চৈত্রিকা চমকায়। প্রহরের ঠোঁটে হাসি৷ চৈত্রিকা নিজেকে সামলাতে সামলাতেই প্রহর এসে শুয়ে পড়ে তার কোলে। চৈত্রিকা আরো এক দফা চমকে সরে যেতে নিলে প্রহর আটকে দেয়। হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে উদরে মুখ গুঁজে দেয়। চৈত্রিকা জমে যায়। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,

‘আপনি এমন চিপকে আসছেন কেনো? দুরে সরুন!’

প্রহর পাত্তাই দিলো না। নিজের মতো শুয়ে থেকেই বললো, ‘আমার ঘুম পাচ্ছে। ঘুমাবো! এভাবেই থাকো।’

‘এই অবেলায় কে ঘুমায়? আর ঘুমাবেন নিজের বালিশে ঘুমান। আমাকে ছাড়ুন!’

প্রহর ছাড়ে না। প্রহরের ভেজা চুলের পানিতে চৈত্রিকার শাড়ি ভিজে লেপ্টে যায়। চৈত্রিকা তা খেয়াল করে সব ভুলে খ্যাক করে ওঠে। রাগী স্বরে বলে,

‘চুল না মুছে শুয়ে পড়েছেন কেন আপনি? আপনার চুলের পানিতে আমার শাড়ি ভিজে যাচ্ছে। উঠুন এক্ষুণি! ছাড়ুন আমাকে! চুল মুছে এসে বিছানায় মাথা দিয়ে ঘুমান।’

প্রহর কপালে ভাজ ফেলে মাথা উচু করে তাকায় চৈত্রিকার দিকে। কিছুক্ষণ চৈত্রিকার মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ গম্ভীর স্বরে বলে, ‘সমস্যা কি মেয়ে? এতো পটর পটর কেনো করো? মুখটা একটু বন্ধ রাখতে পারো না? আমার চুলের পানি নিয়ে সমস্যা হলে নিজে মুছে দাও।’

‘আমি আপনার চুল মুছবো?’

‘হ্যাঁ। কারণ সমস্যাটা তোমার, আমার না। তোমার শাড়ি ভিজে যাচ্ছে, আমার না।’

চৈত্রিকা কটমট করে তাকায়। প্রহর ফের নিজের মতো মুখ গুজে দিয়ে এক হাতে তোয়ালে এগিয়ে দেয় চৈত্রিকার কাছে। চৈত্রিকা কিছুতেই প্রহরের চুল মুছবে না। নিজের শাড়ি ভিজছে ভিজুক তবুও সে নিজ ইচ্ছায় এই লোককে ছুঁয়েও দেখবে না। ক্ষো’ভ নিয়েই মনে মনে আওড়ায়,

‘নিজ ইচ্ছায় আপনার মতো প’শুকে আমি ছুঁবো না প্রহর রেনওয়াজ। বাধ্য না হলে আপনাকে নিজের এতোটা কাছে কখনোই আসতে দিতাম না। নেহাৎই আপনি আমার নামমাত্র স্বামী।’

তাচ্ছিল্যের সুরে হাসে চৈত্রিকা। ভেতরের আগুন যেনো দাউদাউ করে জ্ব’লছে। প্র’তিশোধের নেশায় বুদ হওয়া হৃদয়টা জ্ব’লছে তখনো। প্রহরের দিকে চেয়ে চৈত্রিকা মনে মনে কিছু ভাবে। তখনই ভেসে আসে প্রহরের কন্ঠের দু লাইন বাক্য,

‘ভেতরের আগুন ভালোবাসায় না নিভে যায় চৈত্রিকা!
ভালোবাসা কিন্তু বড্ড খারাপ জিনিস, সবকিছু এক নিমিষেই না জ্বা’লিয়ে দিতে পারলে শান্তও করে দিতে পারে। সাবধান বউ!’

চলবে..