ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব-০১

0
2096

#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা
#মৌমি_দত্ত
#সূচনা_পর্ব

৫ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতা,,, পড়নে ব্ল্যাক জ্যাকেট সাদা টিশার্ট,,, টাইট জিন্স,, মুখে মাস্ক,, মাথায় হুডি তোলা এক ছেলে । তাড়াহুড়ো করে সদ্য পাওয়া নিউজ বসের কানে দিতে তার রুমের দিকে ছুটছে ইনায়াত চাঁদ। দ্রুত দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লো। ” স্যার ” বলে ডাক দিতেই খাটের দিকে চোখ গেলো ইনায়াতের। খাটে একটা মেয়ের সাথে মিলিত হতে ব্যস্ত আফিম আহসান। বসকে এভাবে দেখেও ভাবান্তর হলো না ইনায়াতের। শুধু লজ্জায় মাথা নিচু করে এগিয়ে গেলো খাটের কিছুটা কাছে।
– স্যার!! মিস তানিয়া আপনার প্রোপোজাল রিজেক্ট করেছে।
কথাটা কানে হয়তো পৌছালো না আফিমের। তাই সব লাজ লজ্জা ভুলে ইনায়াত কাঁপা কাঁপা হাতে ছুঁয়ে দিলো আফিমের পিঠে। কারোর স্পর্শ পেয়ে আফিম বিরক্তি নিয়ে মাথা তুলে তাকালো। ইনায়াতকে দেখে বিরক্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো। হাত বাড়িয়ে বিছানার পাশের টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা মোটা টাকার বান্ডিল নিয়ে মেয়েটার গায়ে ছুড়ে দিলো। এরপর নেমে আসলো উলঙ্গ অবস্থায় খাট থেকে। ইনায়াত চোখ মুখ চেপে বন্ধ করে রাখলো। হার্টবিট এতো দ্রুত হচ্ছে যেন সে এক্ষুনি হার্ট এট্যাক করবে। ইনায়াতের এমন মেয়েলি ব্যবহার দেখে বিরক্ত হলো আফিম। ওয়াসরুমের দিকে যেতে যেতে ছোট করে বললো,, ” ফলো মি “। ইনায়াত কাঁদো কাঁদো মুখ করে নিজের হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে নিলো। চোখ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল ওয়াসরুমের ভেতর। আফিম শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে না দেখেই বুঝে নিলো ইনায়াত।
– তুমি জয়েন করেছো সবে মাত্র ৩ সপ্তাহ। বাট তুমি এতো কাজ করেছো যে আমার পাস্ট কোন পিএ এতো কাজ করেনি। আমার সব ফাইল কমপ্লিট করে ফেলো,, আমার সব বলার আগে রেডি করে ফেলো। কেমনে ম্যান?? তোমার কি এঞ্জয় করতে মন চায় না?? আমি খাটে যে মেয়েটার সাথে ছিলাম,,, ঐ মেয়ে যে কারোর শরীরে আগুন লাগাতে যথেষ্ট। কিন্তু তুমি তাকালেও না ভালো করে। আরে ওর কথা বাদ দাও,, তুমি কাপড় ছাড়া আমার দিকেই তাকাতে পারো না।
এতোটুকু বলেই আফিম সুক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালো ইনায়াতের দিকে।
– তোমার নাম মেয়ের মতো,, কাজকর্ম মেয়ের মতো,, সামহাউ তুমি মেয়ে না তো??
এমন কথা শুনে ঝট করে মাথা তুলে তাকালো ইনায়াত। ফাঁটা ফাঁটা চোখে তাকালো আফিমের দিকে। আফিম ইনায়াতের দিকে ভ্রু নাচিয়ে তাকালো,,
– আই মিন টু সে,,, তুমি গে না তো?? ওহ শিট!! আমার মাথায় এলো না কেন তুমি গে হতে পারো।
ইনায়াত দ্রুত গলা খুকখুক করে কেশে পরিষ্কার করে বললো,,
– আমি গে না মোটেও স্যার।
আফিমের সন্দেহ ভরা দৃষ্টি এখনো আটকে আছে ইনায়াতের উপর। ইনায়াতের থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে মাথার চুলগুলোয় হাত চালিয়ে পেছনে ঠেলে দিলো আফিম।
– এখন জলদি বলো কি বলতে এসছো। তুমি তো কাজ ছাড়া কিছুর জন্য দেখা দাও না।
– স্যার!! মিস তানিয়া আপনার প্রোপোজাল রিজেক্ট করেছে। সে আমাদের সাথে ডিল করবে না জানিয়েছে। আর,,,
এটুকু বলেই থেমে গেলো ইনায়াত। ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো। কারণ এর পরবর্তী কথাগুলো বলতে তার যথেষ্ট সাহস প্রয়োজন।
– আর??
ইনায়াতকে থেমে যেত দেখে চোখ বন্ধ অবস্থায় জানতে চাইলো আফিম।
– আর বলেছে আপনাকে যেন বলে দিই যে,, আপনার খাট কাঁপানোর শক্তি যেমন আছে তার থেকেও বেশি উনার রূপের আগুন। আপনার *** যেন আরেকটু লম্বা করে নেন।
আফিম ধপ করে চোখ খুলে ফেললো। লালচে চোখগুলো স্পষ্ট জানান দিচ্ছে তার মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া রাগের। ইনায়াত ভয়ে ভয়ে দুই কদম পিছিয়ে গেলো। আফিম নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দেওয়ালে জোরসে এক ঘুষি মারলো।
– আমার টাকায় নিজের লাইফ লিড করতো যে মেয়ে,, আমার জন্য মডেলিংয়ে আসলো যে মেয়ে,, সেই মেয়ে আমাকে রিজেক্ট করে ওয়ার্নিং পাঠাচ্ছে কোন সাহসে?? কোন সাহসে ড্যামইট!!
আরো একটা ঘুষি মারলো আফিম জোরসে দেওয়ালে। বাধ্য হয়ে ইনায়াত এগিয়ে গেলো বাথরোব নিয়ে। শাওয়ার অফ করে বাথরোব পড়িয়ে দিলো একপ্রকার জোড় করে আফিমকে। অবশ্য এই কাজের জন্য আগে তার প্রচুড় সাহস যোগাড় করতে হতো। এখন করতে হয় না।
বাথরোব পড়িয়ে আফিমকে টেনে আনলো ওয়াসরুমের বাইরে। মাথা মুছে দিলো ভালো করে টাওয়েল দিয়ে। এরপর ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আফিমের হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগলো আফিমের পাশে বসে।
ধীরে ধীরে ফুঁ দিয়ে দিয়ে ব্যান্ডেজ করতে ব্যস্ত ইনায়াত খেয়াল করেনি আফিম তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু বাদে আফিমের দিকে চোখ পড়তেই একটা শুকনো ঢোক গিললো ইনায়াত।
– তুমি এতো ভালো কেন ইনায়াত?? আর ভালোই যখন হলে,, তখন মেয়ে হলে না কেন?? ওহ গড!! আমার বাবা মায়ের বিয়ে নামক প্যারা থেকে বাঁচতে আমি তোমাকে ইউস করতে পারতাম। আফসোস তুমি মেয়ে হলে না।
ইনায়াত শুকনো একটা ঢোক গিলে জলদি উঠে পড়লো আফিমের কাছ থেকে।
– স্যার!! প্লিজ এখন ঘুমাবেন না প্লিজ। আমি ডিনার আনছি,, করে নিন ডিনার। আমিও বাসায় ফিরবো।
– বাসায় ফিরবে মানে?? আজকে থেকে যাও।
ইনায়াত পানির গ্লাসে পানি ঢেলে নিচ্ছিলো খাওয়ার জন্য। কিন্তু আফিমের থেকে যাও কথায় হাত থেকে পানির গ্লাস পড়ে গেলো তার। আফিম দ্রুত উঠে দাঁড়ালো।
– কি হয়েছে ইনায়াত?? কোন সমস্যা??
ইনায়াত দ্রুত কাঁচ গুলো তুলতে গিয়ে হাঁত কেঁটে গেলো কাঁচে লেগে। আফিম সেদিকে তাকিয়ে দ্রুত ইনায়াতের কাছে এলো।
– হোয়াট ননসেন্স ইনায়াত!! সার্ভেন্ট আছে আমার ঘরে।
ইনায়াত দ্রুত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো আফিমের থেকে।
– স্যার!! আপনার ডিনার হলে আমাকে ফিরতে হবে। আমার একটা কাজ আছে।
আফিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইনায়াতের দিকে। এরপর দেওয়াল ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই দেখলো সময় রাত সাড়ে বারোটা।
– রাত সাড়ে বারোটায় কাজ??
ইনায়াত কপালের বিন্দু বিন্দু ঘামগুলো মুছে নিলো হাতের উল্টোপিঠে। আফিমের সন্দেহ ভরা দৃষ্টি তীক্ষ্ম হলো। রুমের মিনি বারের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আফিম বললো,,
– ইনায়াত!! আমি লাইফে কোন মানুষের সাথে এতো কথা বলিনা। তোমার সাথে বলছি কারণ আই ট্রাস্ট ইউ। তুমি আমার কেয়ার করো,, ছোট ছোট বিষয় খেয়াল রাখো,,, অলয়েজ আমাকে সামলে নাও,,, আমার রাগ মাথা নিচু করে সহ্য করো। এসেছো ৩ সপ্তাহ হয়ে গেলো। আমি এখনো তোমার মুখ দেখিনি। আমি জানিনা কেন!! আমার তোমার প্রতি জোড়টা আসে না। আশা করি তুমি তার মিসইউস করবে না।
কথাগুলো বলতে বলতে গ্লাসে মদ ঢেলে নিলো আফিম। ইনায়াত মাথা নিচু করে থাকলো স্বভাববশত। এমন সময় দরজায় টোকা পড়লো। আফিম পাত্তা দিলো না। সে মদ গিলতে ব্যস্ত। ইনায়াত এগিয়ে গেলো দরজার কাছে। দরজা খুলে সার্ভেন্টের থেকে ট্রলি নিয়ে ভিতরে আনলো ঠেলে। এরপর একটা প্লেইটে ডিনার রেডি করে এগিয়ে গেলো বারের কাছে। ইতোমধ্যেই এক বোতল শেষের পথে আফিমের। ইনায়াত গিয়ে বোতলটা ঢাকনা লাগিয়ে রেখে দিলো বারের তাকে। আফিম সেদিকে চোখ ছোট করে তাকালো একবার। হাতে থাকা গ্লাসটার মদগুলো খেতে যাচ্ছিলো সে। ইনায়াত গ্লাসটা নিয়ে নিলো দ্রুত। গ্লাসটা আফিমের নাগালের বাইরে রেখে হাতে ডিনারের প্লেইট তুলে নিলো। চামচে খাবার তুলে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করলো। এরপর এগিয়ে নিলো আফিমের মুখের কাছে। আফিম মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। ইনায়াত আফিমের মুখ চেপে ধরে মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো।
পুরো প্লেইট খাওয়ানো শেষে আফিমের মুখ মুছিয়ে দিলো ইনায়াত। এরপর আফিমকে ধরে নিয়ে গিয়ে খাটে শুইয়ে দিলো। আফিম একবার ইনায়াতের দিকে মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
– গুড নাইট স্যার!!
ইনায়াত রুমের নাইট লাইট অন করে বাদ বাকি সব আলো নিভিয়ে,, এসির পাওয়ার বাড়িয়ে,, বেড়িয়ে এলো।
.
.
দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ৩৮ মিনিটের রাস্তা ২১ মিনিটেই পার করে বাসায় এলো ইনায়াত। গাড়িটা আফিমের দেওয়া। লাইসেন্স আগেই ছিলো ইনায়াতের। দোতলা একটা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি পার্কিং এরিয়াতে পার্ক করে গেইট ঠেলে ঢুকে গেলো বিল্ডিংয়ের ভেতর। একদম ছাদে উঠে গেলো সিড়ি বেয়ে। ছাদের বিশাল একটা জায়গা জুড়ে বাসার মতো রুম বানানো। এই বাসায় থাকে ইনায়াত। মেইন দরজার তালা খুলে বাসায় ঢুকলো ক্লান্ত পায়ে। রুমের লাইট জ্বালালো হাত বাড়িয়ে। গোছানো খুব সুন্দর পরিষ্কার ড্রয়িং রুমটা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায় তার। মাথার থেকে হুডি নামিয়ে ছেলেদের হেয়ারকাটের নকল উইগটা খুলে নিতেই ঝড়ঝড় করে পিঠ ছড়িয়ে পড়লো একরাশ কালো চুল যা কোমড় ছুঁয়েছে। মুখের মাস্ক খুলে গুছিয়ে রাখলো র‍্যাকে। কাঁধে টাওয়েল নিয়ে ১৮ বছর বয়সী ইনায়াত ঢুকে গেলো ওয়াসরুমে। ওয়াসরুমের আয়নায় নির্বস্ত্র ইনায়াত নিজেকে খুঁটে খুঁটে দেখলো ভালো করে। ফর্সা গায়ের রঙ,,, গালে হালকা গোলাপী আভা বিদ্যমান,, ঘন চোখের পাপড়ি,, কোমড় ছাড়ানো চুল,, বিড়ালের মতো একজোড়া চোখ,, সরু নাক,, পাতলা সরু কিন্তু গোলাপী ঠোঁট। শরীরের আকার গঠনে অসাধারণ রূপের অধিকারী এক সুন্দরী মেয়ে ইনায়াত। অথচ ভাগ্যের কি উপহাস!! এই রূপের জন্যই যতো ভোগান্তি ভুগতে হলো তাকে। অচেনা,, অজানা একটা শহরে,, ছেলের বেশ ধরে থাকতে হচ্ছে তাকে। একজন নামকরা ব্যবসায়ীর মেয়ে আর নাতনী হওয়া স্বত্তেও সে অন্যের অধীনে ভুল পরিচয়ে চাকরি করছে।
এসব ভাবনার শেষে তাচ্ছিল্য হাসলো ইনায়াত। স্নান করে টাওয়েল জড়িয়ে বের হলো ইনায়াত। গায়ে একটা নাইট গাউন জড়িয়ে ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম করে নিলো ওভেনে। খাবার গরম হতেই খাবার নিয়ে ডাইনিংয়ে এসে বসে এক চামচ মুখ তুলে নিলো খাবার। একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে এলো বুক চিরে। ডুবে গেলো অতীতে,,

৩ সপ্তাহ আগের কথা,,,
কোনভাবে পালিয়ে নতুন শহরে চলে এসেছে ইনায়াত মির্জা চাঁদ । বাস থেকে নেমে আড়মোড়া ভাঙ্গলো সে। জীবনেও গাড়ি ছাড়া চলাচল না করা ইনায়াতের জন্য বাস চড়া ছিলো অনেক কষ্টের। আশপাশে চোখ যেতেই বুঝলো নতুন শহরে কিছুই চেনা নেই তার। এমনকি মানুষগুলোর ধরন ধারণও জানা নেই তার। একটা মেয়ে এভাবে থাকতে পারে না রাস্তায় রাস্তায়। যাবেই বা কোথায় ইনায়াত??
জিন্সের পকেট থেকে মোবাইল বের করে বাবার নাম্বারে কল করলো ইনায়াত। তার বাবা ইরশাদ মির্জা ফোনটা ধরলো না। বুক কেঁপে উঠলো ইনায়াতের। তার বাবা তাকে বাঁচাতে গিয়ে বিপদে পড়েনি তো?? ঐ মানুষরুপী জানোয়ার,, মাফিয়া তাহজিব খান তার বাবাকে বাঁচিয়ে রেখেছে তো?? ভেবেই কলিজা শুকিয়ে এলো ইনায়াতের। তখনই কল এলো ইরশাদের পিএ রানার নাম্বার থেকে দ্রুত রিসিভ করলো ইনায়াত কলটা।
– হ্যালো ইনু আপামনি!!
– হ্যালো,, রানা আংকেল। বাবা কোথায়?? ঠিক আছে তো সে?? তাহজিব খান বাবাকে কিছু করেনিতো??
– তোমার আব্বা ঠিক আছে। মাত্রই একটু ঘুমালো। তাহজিব খান এখনো আসেনি বিদেশ থেকে। তুমি ঠিক আছো তো মা??
– আমি ঠিক আছি আংকেল। কিন্তু আমি কোথায় যাবো?? কিছু চিনি না। টাকাও নেই। কার্ডও ইউস করতে পারবো না টাকা তুলতে। তাহজিব ঠিক বুঝে যাবে।
– আপামনি!! মন দিয়ে শুনো। আমি তোমাকে একটা ঠিকানা পাঠাচ্ছি। ঐ ঠিকানায় যাও। ঐ বাড়ি আমার তৈরি। তুমি ওখানে থাকবে। আর শুনো এই সিম ভেঙ্গে নতুন সিম নাও। আমি আমার মানুষকে কল দিচ্ছি। সে টাকা দিয়ে দিবে। আর আমি কল না দিলে কখনো কল দিবা না। ওকে?? সবাই জানবে আমাদের এটাই লাস্ট যোগাযোগ।
সেদিনের দেওয়া ঠিকানায় চলে এসেছিলো ইনায়াত। দোতলা বাড়িটার কেয়ারটেকার জিদান ইনায়াতকে টাকা তুলে দিয়েছিলো। সেদিন থেকেই ছেলে বেশে ঘুরছিলো ইনায়াত রাস্তায় রাস্তায় একটা চাকরির জন্য।
শহরে আসার দুই কি তিনদিনের দিন একটা পার্কে গেছিলো ইনায়াত সন্ধ্যের দিকে। কখন যে রাত হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি সে। রাতে ফিরবার সময় দেখলো একটা লোক আহত অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তার ধারে। বুঝায় যাচ্ছে ড্রাংক অবস্থায় কোন গাড়ির সাথে টক্কর লেগেছে। এখনো মাতলামি করছে শুয়ে শুয়ে। ইনায়াত লোকটাকে সাবধানে হাসপাতালে ভর্তি করে দিলো। হাসপাতালে নিতেই সবাই এক দেখায় চিনে গেলো আফিম আহসানকে। নামকরা বিজনেসম্যান আর মডেল বলে কথা।
ব্যস!! আফিমের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে ইনায়াতের কথা জানতে পারলো। ইনায়াতকে চাকরি দিলো নিজের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট হিসেবে। অবশ্য এমন হঠকারিতার কাজ একমাত্র আফিমেরই হতে পারে।

বর্তমানে,,

খাওয়া শেষে ইনায়াত নিজের লম্বা চুলগুলো আঁচড়ে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো আজকে আফিমের সাথে দেখা নতুন মুখটা। গা শিউরে উঠলো ইনায়াতের। দ্রুত বালিশ আর চাদর নিয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।
.
.
নামকরা বড়লোক ব্যবসায়ী জোসেফ আহসানের একমাত্র ছেলে আফিম আহসান। মায়ের নাম লাবিবা আহসান। বাবা মায়ের আদরের ছেলে বড়লোক হওয়ার অহংকারে ডুবে গেছে সেই ছোটবেলাতেই। বড় হতে হতে মদ আর মেয়ের নেশায় পুরোপুরি বিগড়ে গেছে আফিম। তবে একজন ভালো ব্যবসায়ী আর মডেল হিসেবে তার সম্মান রয়েছে। নিজের মনের মর্জি মতো জীবন কাটিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য আছে এই জনাবের। কিন্তু বাবা মায়ের প্রতি ভালোবাসার কারণে বিরক্তি স্বত্তেও ” বিয়ে করে নে না ” কথাটা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে সে। কোন বন্ধু নেই তবে শত্রু হাজার। লাবিবা আহসান আর এখন ইনায়াত ছাড়া কেও তাকে সামাল দিতে পারে না।
আফিম মনমর্জি করে বেড়ায় আর ইনায়াত বাবার আজ্ঞাকারী। আফিম মেয়েবাজি করে আর ইনায়াত ছেলেদের নিয়ে ভাবতেও লজ্জা পায়। আফিম বিশ্বাস করে জীবন এঞ্জয় করাতে। আর ইনায়াত বিশ্বাস করে ভালোবাসায় জীবন পার করাতে। কি হবে দুজনের ভবিষ্যত??ইনায়াতই কি আফিমের জীবনে ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা??

চলবে।