ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব-০৯

0
894

#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা
#মৌমি_দত্ত
#পর্ব_৯
#ধামাকা_৪

– নীলা আর আফিম। দুজনেই জমজ। আফিম নামটা আমার পছন্দের। আর নীলার নাম ঠিক করেছিলাম আফরা। কিন্তু নীলার নীল নীল চোখ দেখে জোসেফ ওর নাম নীলা রাখলো। এই দেখ নীলার কলেজ লাইফে তোলা ছবি।
লাবিবা ইনায়াতকে পাতা উলটে আরো একটা ছবি দেখালো। যেখানে নীল চোখের এক মেয়ে মুচকি হেসে আফিমকে জড়িয়ে ধরেছিলো। আর আফিম মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো। ইনায়াত অবাক হয়ে সবটা দেখছিলো আর শুনছিলো। ইনায়াতের মনে প্রশ্ন জাগলো। তাহলে কি সে নীলা অর্থাৎ আফরার জামা পড়েছে??
– নীলা কোথায় আন্টি??
ইনায়াতের প্রশ্নে ব্যথিত নজরে তাকালেন লাবিবা ইনায়াতের দিকে।
– ও আর নেই।
কথাটা শুনে চমকে উঠলো ইনায়াত। লাবিবা শাড়ির আঁচলে নিজের চোখ মুছলেন।
– এখন যে আফিমকে সবাই চেনে গম্ভীর,,, রুড,, অভদ্র। আমার ছেলে আগে অমন ছিলো না। আমার ঘরটা সারাদিন হাসিঠাট্টাতে ভরে থাকতো আফিম আর নীলার জন্য। উল্টো আফিম খুব দুষ্টু ছিলো। নীলাকে ঐ কাঁদাতো,, ঐ হাসাতো। নীলা ছিলো আফিমের কলিজার টুকরা। যদিও জমজ ছিলো ওরা। কিন্তু আফিম বড়ভাইয়ের মতো ভালোবাসতো নীলাকে। নীলাকে বোনু ডাকতো ও। আর নীলাও আফিমকে বড় ভাইয়ের মতো দেখতো। আমার মেয়েটা খুব সহজ সরল ছিলো রে। তাই হয়তো শেষ হয়ে গেলো ওভাবে।
ইনায়াত বুঝলো না কিছুই। কি শেষ হলো?? কি হয়েছিলো??
– কি হয়েছিলো আন্টি?? নীলার সাথে কি হয়েছিলো??
– ক্লাস ওয়ান থেকে আফিম আর নীলার দুটো ফ্রেন্ড জুটে গেছিলো। কণা আর মাহিম। ৪ টা ছেলে মেয়ে সারাদিন একসাথে থাকতো। ওদের ৪ জনকে দেখলেই সবাই বুঝে যেতো ওরা বেস্টফ্রেন্ড। দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিলো সবার। ৪ জনে স্কুলের গন্ডি পার করে কলেজে উঠলো। কলেজ লাইফের শেষের দিকে কণা আফিমকে পছন্দ করে বলে জানায়। আফিমও কণাকে পছন্দ করতো। তাই দুজন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। অসাধারণ সুন্দরী কণা সবার কাছে ছিলো অনেক ভালো একটা মেয়ে। কিন্তু কে জানতো ওটা ঐ মেয়ের ছলনা??
লাবিবা এটুকু বলেই কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও বলতে লাগলেন।
– তখন কণার সাথে আফিমের সম্পর্কের খুব সম্ভব ৩/৪ মাস চলছে। কণার জন্মদিন ছিলো সেদিন। কণার জন্য সারপ্রাইজ পার্টি আর আফিম ও কণার ক্যান্ডেলাইট ডিনার প্ল্যান করেছিলো নীলা। কণাকে আগে ভাগে না জানিয়েই চলে গেলো ওদের বাসায়। নীলা বাসায় ঢোকবার আগেই কণাকে দেখলো কোথাও যাওয়ার জন্য রিক্সায় উঠতে। নীলা ভাবলো চমকে দেবে কণাকে। তাই কণার পিছু নিলো। কণা সেদিন হোটেলে গেছিলো। তা দেখে অবাক হয় অনেক নীলা। কণার পিছু নিতে নিতে পৌছে যায় একটা রুমের ভেতর। এভাবে একটা হোটেলে কণা কেন এলো তা মাথায় আঘাত করতে লাগলো নীলার। ও ঐ রুমের দরজার সামনে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো। পরে আগপিছ না ভেবেই দরজায় টোকা দিলো। দুয়েকবার টোকা দিতে না দিতেই দরজা খুললো মাহিম খালি গায়ে। নীলা যেন আকাশ থেকে পড়লো। দরজা থেকেই স্পষ্ট দেখা গেলো খাটে চাদর পেঁচিয়ে শুয়ে থাকা কণাকে। মাহিম নীলাকে আশা করেনি,, কণাও না। নীলা পালিয়ে আসতে চাইছিলো। তখনই মাহিম ওকে পাকড়াও করে রুমের ভেতর নিয়ে যায়। কণাকে আফিমের সাথে টাইম স্পেন্ড করতে বলে পাঠিয়ে দেয় মাহিম। যাতে কিছু সময়ের জন্য নীলার কথা আফিমের মাথায় না আসে। কণা বেরিয়ে যেতেই ঐ জানোয়ার মাহিম আমার মেয়েটাকে,,,
আর কিছু বলতে পারলো না লাবিবা। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো। ইনায়াতের চোখেও জল। ইনায়াত লাবিবাকে বুকে জড়িয়ে নিলো। ফোঁপাতে ফোপাঁতে লাবিবা বললো,,
– আমার মেয়েটাকে শেষ করে দিয়েছিলো মাহিম। ওর বাজে ভিডিও বানিয়ে ওকে ব্ল্যাকমেইল করেছিলো যেন কাওকে কিছু না বলে। কিন্তু আমার মেয়েটা যে নিজের ভাইকে খুব ভালোবাসতো। আবার তার হারানো সম্মানের ধাক্কাটাও নিতে পারছিলো না কোনভাবে। আমার মেয়েটা এতোকিছু সহ্য করতে না পেরে সেদিন রাতেই আত্মহত্যা করলো ফাঁস খেয়ে।
ইনায়াতের বুকে একপর্যায়ে বাচ্চাদের মতো নাক টানতে লাগলো লাবিবা। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে সে। কিছুটা সময় চুপ থেকে আবারও বলতে শুরু করলো সে।
– আফিম খুব ভেঙ্গে পড়েছিলো নীলার মৃত্যুতে। এর উপর নীলার সুইসাইড নোটে লেখা পড়ে আরো ভেঙ্গে পড়েছিলো সে। মাহিমকে পাগলের মতো মারধর করেছিলো আফিম। মাহিমের মাথায় এতোজোড়েই আঘাত করেছিলো যে মাহিম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এখন মাহিমকে ওর বাবা মা লন্ডনে নিয়ে গেছে অনেক বছর। মাহিমের সবটা শুনে তারা মাহিমকে মেনেই নিতো না যদি মাহিম স্বাভাবিক হতো।
– আর কণা??
ইনায়াত জিজ্ঞেস করলো। লাবিবা ইনায়াতের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো।
– আল্লাহ কাওকে ছাড় দেন না। কণা ঘটনার পর পুলিশের কাছে ধরা পড়ে। ওর শাস্তি হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড । কিন্তু এর মাঝখানেই কণার ব্রেইনটিউমার ধরা পড়ে যা দীর্ঘ সময় ধরে কণার ছিলো কিন্তু সে বুঝতে পারেনি। কণা কারাগার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
ঘড়ির কাটায় ১২ টার জানান দিতেই হুশ ফিরে ইনায়াতের। চোখে পানি টলমল করছে তার। জোসেফ রুমে প্রবেশ করলো। ইনায়াত কোনভাবে চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়ালো।
– অনেক রাত হয়েছে। আমি আসছি আন্টি।
– কিন্তু মা,, এখন এতো রাতে যাবি তুই?? এতো রাতে বাইরে থাকা সেইফ না।
জোসেফ বলে উঠলো উদ্বিগ্ন কন্ঠে। ইনায়াত মুচকি হাসলো।
– কিন্তু আংকেল,,,
ইনায়াত আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো। তখনই দীপ এলো ছুটে।
– ইনায়াত স্যার!! উফফ সরি!! ম্যাম!! একটু কথা ছিলো।
জোসেফ আর লাবিবা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ইনায়াত এগিয়ে গেলো। দীপ ইনায়াতের কানে কানে বললো যে আফিম অন্যদিনের তুলনায় আজকে অতিরিক্ত নেশা করে ফেলেছে। দীপ সামলাতে পারছে না আফিমকে।
ইনায়াত দ্রুত বের হয়ে এলো জোসেফদের রুম ছেড়ে। আর আজকে থেকে যেতেও রাজী হলো। ইনায়াত ছুটলো আফিমের রুমের দিকে। আফিমের নেশা করা আর ঢিলা চরিত্রের কথা লাবিবা আর জোসেফ জানেনা। দীপই জানে আর ইনায়াতই জানে। দীপের আগে আফিমদের অনেক পুরানো এক ড্রাইভার ও সার্ভেন্ট ছিলো বয়স্ক। সে জানতো,, কিন্তু এখন সে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে।
.
.
– স্যার!! কি করছেন আপনি?? ওহ মাই গড!! ২ বোতল শেষ করে ফেলেছেন?? ইশশ!! স্যার ছাড়ুন বোতলটা।
আফিমের রুমে ঢুকেই দেখলো আফিম মদের বোতল হাতে নিয়ে তাকিয়ে আছে ঢুলতে ঢুলতে। ইনায়াত ছুটে গিয়ে তাই কাড়াকাড়ি শুরু করলো।
– হেই ইউ!! গেট আউট। তুমি এখন আর ছেলে ইনায়াত নেই যে আমি তোমাকে বন্ধু ভাববো বা কথা মেনে চলবো। ওকে?? তুমি এখন একটা মেয়ে!! আর আমি আমার মা,, আমার বোন নীলা আর আফরাকে ছাড়া কোন মেয়েকে সহ্য করতে পারিনা। মেয়েদের জায়গা আমার জন্য এই বিছানা পর্যন্তই। সো জাস্ট গেট আউট।
বিছানায় বাড়ি মেরে কথাগুলো বললো আফিম মাতাল কন্ঠে। দীপ তখন লেবুর শরবত করে এনেছে কোন চিনি বা লবন ছাড়া। ইনায়াত আফিমের রাগ বা কথার পাত্তা দিলো না। যদিও তার মনে ঘুরতে লাগলো একটাই প্রশ্ন নীলা আর আফরার নাম আলাদা আলাদা উচ্চারণ করলো কেন আফিম?? নেশায় আছে বলে??
ইনায়াত নিজের ওড়নাটা ভালো করে কোমড়ে পেঁচিয়ে দীপের থেকে গ্লাসটা নিলো। এরপর দীপকে ইশারা করলো আফিমকে চেপে ধরতে খাটে। দীপও গিয়ে আফিমকে চেপে ধরলো শক্ত করে। আফিম হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করলো।
– হেই!! কি করছো তোমরা?? হোয়াট ননসেন্স!! ছাড়ো বলছি আমাকে। ছাড়,,,
ছাড়ো বলবার আগেই ইনায়াত আফিমের নাক টিপে ধরে গ্লাসের শরবত আফিমের মুখে ঢালতে লাগলো। বাধ্য আফিম শ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় গিলে ফেললো সবটাই। আফিমকে ছেড়ে দিলো এরপর দীপ। গ্লাস নিয়ে চলে গেলো সে। ইনায়াত সবসময়কার মতো আফিমকে টেনেটুনে শুইয়ে দিলো। গায়ে কাঁথা টেনে দিয়ে আফরার রুমে চলে এলো। এই রুমেই থাকতে বলা হয়েছে তাকে। রুমে এসে বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগলো ইনায়াত।
– তাহলে কি স্যারের এমন নেশাখোড় আর মেয়েবাজ হবার কারণ এই মানসিক ধাক্কাগুলোই?? হুম!! হতে পারে। নাহয় একটু আগে ওসব হাবিজাবি কি বলছিলো?? তবে যাই হোক না কেন!! আমি এতোদিন ভাবতাম ছোট থেকেই বাবার টাকার হাওয়া লেগে বিগড়ে যাওয়া মানুষ উনি। কিন্তু উনি তো আর তেমন না। আচ্ছা!! উনাকে ভালো করা যায় না?? মদ,, মেয়েবাজি এসব ছাড়ানো কি খুব কঠিন?? ধ্যাত!! মাথাটাই ব্যাথা করছে। এখন ঘুমাই।
এসব ভেবেই ঘুমানোর মতো মহান কাজে মনোনিবেশ করলো আমাদের ইনায়াত।
.
.
– ইরশাদ!! তোর ভালোর জন্যই বলছি। বলে দে কোথায় আমার চাঁদ। নাহয় তোকে মারতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না।
তাহজিবের এমন কথা শুনে ইরশাদ ভয় পাওয়ার জায়গায় হো হো করে হেসে উঠলো। তাহজিব হাত মুঠো করে ফেললো রাগে।
– তোকে তো আমি নিজের হাতেই মারবো। আগে আমার চাঁদকে খুঁজে নিই।
এই বলেই তাহজিব হনহন করে রুম ছেড়ে বেরিয়ে এলো। আজকে রাতে বড্ড ঘুম পাচ্ছে তার। কেন তা জানা নেই। তার তো ঘুম পায়নি এতোদিন। একরাশ নীরব হাহাকার নিয়ে সময় পার করেছে সে তার চাঁদকে দেখে। কিন্তু আজ ঘুম পাচ্ছে কেন তার?? তাহজিব নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
– রানা!! সে কি এখনো আসেনি??
– জানিনা স্যার!!
– আমাকে ছাদে নিয়ে চলো। এতোক্ষনে তো তার চলে আসবার কথা।
রানা হুইলচেয়ার ঠেলে ছাদে নিয়ে গেলো ইরশাদকে। ছাদে একটা সোফায় বসে আছে এস.এ,, ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়া। আর তাছাড়াও একজন ডাক্তার। ফর্সা গায়ের রঙ,, মুখে চাপ দাঁড়ি,, ঘন চুলগুলো বাতাসে দুলছে। চাহনীতে তার অসাধারণ এটিট্যুড। এস.এ’র পিছনেই দাঁড়িয়ে আছে কামাল। ইরশাদের চেয়ার ঠেলে রানা সোফার কাছে নিয়ে গেলো।
– হ্যালো এস.এ। আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।
– কাজের কথায় আসি??
– বাহ!! বেশ,, বেশ। সবটা তো জানেনই। তাহজিবকে সড়িয়ে দিতে হবে। ইনায়াতের জন্য ওর পাগলামী সীমা ছাড়িয়ে গেছে যা আমার উদ্দেশ্য পূরণে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ও শেষ হয়ে গেলেই আমি ইনায়াতকে নিয়ে আসবো। প্রোপার্টি পেপারসে সাইন করিয়ে নিয়ে আমার কাজ শেষ। এখন ডিলের কথায় আসা যাক!! টাকা আপনার অঢেল আছে। তাই আপনাকে টাকা দিয়ে ছোট করবো না। এর বদলে আপনাকে সম্পূর্ন ভার্জিন,, অপরুপ সুন্দরী আমার মেয়েটাকে দিতে পারি। এবার বলুন!! আপনি রাজি তো এস.এ।
কামাল আর রানা হা হয়ে তাকিয়ে আছে। কামাল যা জেনে এস.একে ইনফর্ম করেছিলো তার সাথে তো এখনের ইরশাদের কথার কোন মিলই নেই। আর রানা ভাবছে ইরশাদ কি বলছে এসব?? নিজের কলিজার টুকরা মেয়েকে নিয়ে এমন কথা কোন মুখে বলছে ইরশাদ??
– স্যার!! আপনি এসব কি বলছেন?? আপনি ঠিক আছেন??
– উফফ!! সব কিছুতে নাক গলিয়ো না রানা। আমি ঠিক আছি। আর তাই আমার এতোদিনের উদ্দেশ্য এখনো ভুলিনি।
রানার বিষ্ময় ভাব কাটলো না। এস.এ’র কোন ভাবান্তর হলো না।
– আপনার কি মনে হয়?? আমি সত্যিই মেয়েবাজ?? লিসেন!! বিয়ে,, ভালোবাসা,, সম্পর্ক,,, বন্ধন এসবে আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু মেয়েরা পিছু ছাড়ে না। তাই নিজের নামে এই গুজব রটিয়েছি। যদিও এতে কাজ হয় না কোন। বাট সব কথার শেষ কথা এই যে এসব মিথ্যে। তাই আমার আপনার মেয়েকে লাগবে না। তবে হ্যাঁ!! আমি সবটা জানতে চাই। কেন আর কি জন্য আপনি এমন করছেন। নাহয় আমি কাজটা রিফিউস করছি।
ইরশাদের মুখটা শুকিয়ে গেলো। তবুও শুকনো একটা ঢোক গিলে বলতে শুরু করলো,,
– আরে!! ও তো আর আমার রক্ত না!! ওর মা ছিলো খুব পার্টিবাজ এক মহিলা। সংসার ধর্মে মন ছিলো না তার। ঘরে দশবছরের ছেলেকে রেখে সে পার্টিতে মত্ত থাকতো। স্বামীর ঘরের বেশ ধন দৌলত সে ভালোবাসার নাটক করে পেয়েইছে। বাপের ঘরেরও কম ছিলো না একমাত্র মেয়ে হওয়াতে। বেশ কয়েক পার্টিতে আমি ওর মায়ের পিছু নিয়েছিলাম। এরপর ভাবলাম একে নিজের জালে ফাঁসাতে পারলে জীবন সেট। যেই ভাবা সেই কাজ!! ওর মা আমার প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলো। নিজের স্বামী সন্তানকে ফেলে আমার কাছে চলে এলো। কিন্তু আমার কাছে আসার পর পরই জানতে পারলাম ইনায়াত ওর পেটে আছে। কোন প্ল্যানিং করে না হলেও কনসিভ করেছিলো ও। আমার প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে সংসারের স্বপ্ন দেখা গাধা মেয়েটি বাচ্চাটাকে নষ্ট করলো না। আমিও জোড় দিলাম না। কেননা আমার লক্ষ্য ছিলো ওর প্রোপার্টি। ও কনসিভ করেছে। আমি ওর কাছে নিজেকে অনেক ভালো বাবা আর স্বামী তো দেখাতাম। কিন্তু বাইরে এঞ্জয়মেন্টও ফুল চলতো। কিভাবে কিভাবে যেন সন্দেহ হয়ে গেলো ওর। ডেলিভারির দিন থেকে ও আমার সাথে কথা বলা,,, থাকা কমিয়ে দিলো। আমি চেষ্টা করতাম ওকে আমার নকল ভালোবাসায় বাঁধতে। কিন্তু কাজ হতো না। ইনায়াতের তখন দুই বছর। একদিন ঘরে যাওয়ার পর ও আমার মুখে ছুড়ে দিলো কিছু ছবি। আমারই ছবি,, অন্য মেয়েদের সাথে বিভিন্ন হোটেল রুমে এঞ্জয় করবার সময়। আমি ঘাবড়ে গেলাম। ওকে বশ করতে চাইলাম। কিন্তু হলো না। সেদিনই রাগের মাথায় ওর থেকে জানতে পারলাম ও নিজের সব সম্পত্তি ইনায়াতের নামে করে দিয়েছে। যা ১৮ বছর বয়সে ইনায়াতের নামে হবে। তবে ইনায়াত কখনো যদি বিয়ে করে তাহলে তার অর্ধেক সম্পত্তি ইনায়াতের স্বামীর নামে চলে যাবে। এতোগুলো দিনের কষ্ট বৃথা কিভাবে যেতে দিতাম?? তখন আর ওর দরকার ছিলো না আমার। তাই ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই আমি ওকে। ইনায়াতের হাতে আর পায়েও পাথরের ঘষা দিয়ে কেটে দিই। আর সবার কাছে বলি অসাবধানতার কারণে ও ইনায়াতকে নিয়েই পড়ে গেছে। ইনায়াতকে বাঁচিয়ে রাখি। আর ডাক্তারকে বলে মেরে ফেলি ঐ পাগল মহিলাকে।
এটুকু বলেই থামলো ইরশাদ। এস.এ এতোক্ষন চোখ বন্ধ করে শুনছিলো সবটা। রানা মেঝেতেই ধুপ করে বসে পড়েছে।
– একি সর্বনাশ করলাম আমি?? এই জন্যই আপনি তাহজিবের সাথে মেনে নিতে পারছিলেন না ইনায়াতকে। কারণ তাহজিব সত্যিই খুব ভালোবাসে ইনায়াতকে। হা খোদা!! এ কি পাপ করলাম আমি??
হাহাকার করে উঠলো রানা আকাশের দিকে তাকিয়ে। কামালও আশ্চর্য হয়েছে অনেক। একটা মানুষ এতো নিকৃষ্ট হতে পারে তা জানা ছিলো কামালের। কিন্তু নিজের চোখে দেখা হাতে গুনা দুয়েকজনের মধ্যে সবথেকে বেশি নিকৃষ্ট যে ইরশাদ তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই কামালের কাছে। এস.এ উঠে দাঁড়ালো সোফা ছেড়ে।
– আমি আপনার কাজটা করছি না। সরি!! এমনিতে আমার দয়ার শরীর তাই কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই কাজটা করে দিতাম। তবে এখন হাজার জিনিসের বিনিময়েও আমি এই কাজ করবো না।
এই বলেই এস.এ উঠে নিজের শার্টের হাতা ফোল্ড করতে লাগলো। কামাল গর্বে বুক ফুলিয়ে তার স্যারের দিকে শ্রদ্ধাপূর্ণ নজরে তাকালো। এস.এ ছাদ থেকে বের হওয়ার জন্য সিড়ির কাছে এগিয়ে যাচ্ছিলো,,
– ভেবে দেখো এস.এ। তুমি যদি এই কাজ না করো তাহলে অন্য কেও করবে ঐ মেয়ের বিনিময়ে। আর এখন যেহেতু আমার সবটা সত্যি তুমি জেনেই গেছো। তাই তোমার ব্যাপারটাও আমার কাওকে না কাওকে দিয়ে সামাল দিতে হবে।
কামাল তেড়ে যাচ্ছিলো ইরশাদের দিকে। এস.এ হাতের ইশারায় মানা করলো। এরপর পিছু ফিরে একটা ডেভিল হাসি দিলো৷ অন্ধকারে অতোটাও স্পষ্ট বোঝা না গেলেও হাসিটা আবছা দেখেই গা শিউরে উঠলো ইরশাদের। এস.এ কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিলো। তখনই রানা ছুটে গিয়ে এস.এ’র পা ধরলো।
– আপনাকে আমি কিছুই দিতে পারবো না স্যার। আমার উপর দয়া করুন। ইনায়াত মামনিকে বাঁচিয়ে দিন। প্লিজ স্যার!!
– রানা??
এক হুংকার ছাড়লো ইরশাদ। রানা পাত্তা দিলো না। এস.এ নিচু হয়ে রানাকে তুললো। এরপর ইরশাদের দিকে একনজর তাকিয়ে বের হয়ে এলো ছাদ থেকে। এস.এ এসেছে সবাই অচেতন হবার পর মেইন দরজা দিয়ে। যাবেও সেভাবেই।

তোহ!! আফিম বিদ্বেষী মানুষগুলা কোথায় আছো?? সামনে আফিমের প্রেমেই তোমাদের ডুবিয়ে ছাড়বো। এবার বুঝেছেন কেন তাহজিব পা কাটলো ইরশাদের?? এখন প্রশ্ন আসবে রানা কি দোষ করেছে,, ওর আঙ্গুল কেন কাটলো?? ওটার উত্তরও জেনে যাবেন। এস.এ কি নায়িকার প্রেমে পড়বে?? তার উত্তরও কয়েক পার্ট পর জানবেন। আর হ্যাঁ,, কনফিউসড হবেন না প্লিজ। নায়ক আসলে কে তাই হচ্ছে গল্পের রহস্য।

চলবে,,,