ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব-০৮

0
871

#ছদ্মবেশে_লুকানো_ভালোবাসা
#মৌমি_দত্ত
#পর্ব_৮

ট্রেইনে থাকাকালীন আফিম ড্রাইভারকে ফোন করে কাওকে কিছু না জানিয়ে রেলস্টেশনে চলে আসতে বলে রেখেছিলো। ইনায়াত আর কোন কথা বলেনি বাকি পথে। কোন মুখেই বা বলতো?? যে মানুষগুলো তাকে বিশ্বাস করেছে,, ভালোবাসা দিয়েছে,, বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই মানুষগুলোর সাথেই সে কতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করে ফেললো। আফিমও আর ইনায়াতকে ঘাটায়নি। ইনায়াতকে স্বাভাবিক হবার জন্য সময় দেওয়া দরকার বলেই ভেবেছে আফিম। একটা ক্লাস টেনের মেয়ে,, উঠতি বয়স,, সেই সময়ে এতো মানসিক অত্যাচার?? আর টানা ৪ বছর ধরে সেই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করা অতো সহজ না।
ট্রেইন থামলো রাত ১১ টার দিকে। ইনায়াত দাঁড়িয়ে আফিমের পাশের সিট থেকে উইগ নিতে হাত বাড়াতেই খপ করে ইনায়াতের হাত ধরে ফেললো আফিম।
– কি করছো??
জানতে চাইলো আফিম। ইনায়াত অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,,
– উইগ নিচ্ছিলাম স্যার!!
– উইগ পড়তে হবে না।
– কিন্তু স্যার!!
– বললাম তো পড়তে হবে না।
– স্যার তাহলে তো,,
– লিসেন,,, তোমার আশিক তাহজিবের মতো মাফিয়া না হলেও অনেক বড় একটা বিজনেসম্যান আমি। তাই কিছুটা ক্ষমতা আমারও আছে। ওকে??
আফিম এটুকু বলেই জানলার বাইরে ছুড়ে ফেললো উইগটা। ইনায়াত হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো। অবশ্য তার খারাপও লাগলো ” তোমার আশিক তাহজিব ” কথাটা শুনে। এটা কেমন কথা?? সে কি কখনো তাহজিবকে মেনেছে?? নাকি ছেলেটাকে পছন্দ করেছে?? অনেকটা দিন মাস্ক,, উইগ আর হুডি পড়ে পড়ে বদঅভ্যেস হয়ে গেছে তার। এখন ট্রেইনের বাইরে যেতেও অস্বস্তি লাগছে ইনায়াতের। আফিম হয়তো ব্যাপারটা বুঝলো। তাই উঠে দাঁড়িয়ে হাইটে পিচ্চি ইনায়াতের দিকে হালকা ঝুঁকে পড়লো। বিষ্ময়ে ফাঁটা ফাঁটা চোখে তাকিয়ে থাকলো ইনায়াত। তা দেখে আফিম বাঁকা হাসলো। ইনায়াতের চুলগুলো কোনমতে ঠিক করে পিছনে নিয়ে মাথাায় হুডি তুলে দিলো। আর সাথে করে ইনায়াতের মাস্ক পকেট থেকে বের করে পড়িয়ে দিলো।
– আজকেই লাস্ট টাইম। কাল থেকে নো হুডি,, নো মাস্ক। ওকে মিস ইনায়াত??
ইনায়াত ভ্যাবলার মতো মাথা নাড়ালো। ট্রেইন থেকে নেমে এগিয়ে গিয়ে দুইজন কুলি ডেকে নিলো। সব জিনিসপত্র আফিমের কল করে আনানো গাড়িতে তুলে দেওয়া হলো। ইনায়াত সবশেষে কুলিদের টাকা দিয়ে ড্রাইভারের পাশের সিটে বসতে গেলেই আফিম খুকখুক করে কেশে উঠলো। ইনায়াত একবার আফিমের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভারের পাশের সিটের দরজা লাগিয়ে দিলো। আর গিয়ে আফিমের পাশের সিটেই বসে পড়লো।
গাড়ি চলতে লাগলো ধীর গতিতে। ইনায়াত জানলার বাইরে তাকিয়ে রইলো। আর আফিম মনে মনে হাসতে লাগলো এটা কল্পনা করে যে লাবিবা ইনায়াত মেয়ে এটা জানতে পেরে কি পাগলামী শুরু করবে??
.
.
গাড়ি এসে পৌছালো আহসান মঞ্জিলে। গাড়ির আওয়াজ শুনে দুইজন সার্ভেন্ট দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। আফিম গাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের ইশারা করলো ডিকি থেকে জিনিসগুলো নিয়ে যেতে ভিতরে। তারা সেই কাজই করতে লাগলো। ইনায়াত নামছে না দেখে আফিম ভ্রু কুঁচকে মাথা নামিয়ে জানলা দিয়ে ইনায়াতকে দেখতেই বুঝলো ইনায়াত মুখ দুই হাতে চেপে কাঁদছে। আফিম বিরক্তির একটা শ্বাস ফেলে বললো,,
– এইইই মেয়ে!! এতো কান্না আসে কোথা থেকে তোমাদের??
এটুকু বলেই আফিম দরজা খুলে ইনায়াতের হাত টেনে বের করে আনলো। এরপর ধুপধাপ পা ফেলে ঢুকে গেলো বাড়ির ভেতরে। ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছেন জোসেফ ও লাবিবা। আফিম দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো লাবিবাকে।
– সারপ্রাইজ মা!!
– তোর মা আর আমি জানতাম তুই চলে আসবি। বেশিদিন মাকে ছাড়া থাকা তোর দ্বারা সম্ভব না। নেহায়েত আমার ছোট ছেলে ইনায়াতটা আছে বলে।
এই বলেই জোসেফ হেসে ফেললো। ইনায়াতকে ছেলে বলতে শুনে আফিম বাঁকা হাসলো।
– আচ্ছা শুনো!! তোমাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ এখনো বাকি আছে।
– আবার কি সারপ্রাইজ?? আর ইনায়াত?? তুই ওখানে দাঁড়িয়ে কেন?? আমার কাছে আসবি না??
জানতে চাইলো লাবিবা। ইনায়াত মাথা নিচু করেই চোখের জল ফেলছে। আফিম উঠে ইনায়াতের কাছে আসলো। ইনায়াত হালকা মাথাটা তুলে অসহায় ভাবে তাকালো আফিমের দিকে। কিন্তু লাভ হলো না।
– মা,, বাবা!! তোমাদের সারপ্রাইজ হলো এটা!!!
এই বলেই আফিম ইনায়াতের হুডি খুলে ফেললো,,, মাস্ক খুলে ফেললো। আর চুলগুলো বাইরে এনে দিলো। ইনায়াতের বেশে একজন মেয়েকে দেখে উত্তেজনায় দাঁড়িয়ে পড়লেন জোসেফ। লাবিবা হা করে তাকিয়ে আছে ইনায়াতের দিকে। দীপ খাবার টেবিলে সার্ভ করছিলো। বাইরে এসে এতোক্ষন সবটা শুনে যেই না মেয়েরুপী ইনায়াতকে দেখলো। অমনি তার হাত থেকে ধুপ করে চামচ পড়ে গেলো। সবাই ঘাড় ঘুড়িয়ে দীপের দিকে তাকাতেই। দীপ দ্রুত চামচটা তুলে একদৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে ধুয়ে আবারও নিয়ে এলো সবটা দেখবার জন্য।
– ইনায়াতের কাপড়চোপড় পড়া এটা কে আফিম??
প্রশ্ন করলো লাবিবা। জোসেফ একবার লাবিবার দিকে তাকিয়ে বললো,,
– ইনায়াত কোথায় আফিম??
– কুল ডাউন গাইজ!! মিট মাই পিএ,, মিস ইনায়াত মির্জা চাঁদ। ডটার অফ ইরশাদ মির্জা।
এই কথা শুনে লাবিবা দাঁড়িয়ে পড়লো। আর জোসেফ ধপ করে বসে পড়লো। দীপ আবারও হাত থেকে চামচ ফেলে দিলো। সবারই এমনটা অবস্থা হবে তা জানা ছিলো আফিমের। কিন্তু এতোটাও ওভার একটা ব্যাপার হবে তা জানা ছিলো না। ইনায়াত মুখ চেপে কেঁদে ফেললো। হিচকি তুলতে লাগলো সমানে কাঁদতে কাঁদতে। দীপের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো আফিম। দীপ চামচটা আবারও তুলে রান্নাঘরে দৌড়ে নিয়ে গিয়ে ধুয়ে আনলো। আফিম এবার বিরক্ত হয়ে তাকালো জোসেফ আর লাবিবার দিকে। ইনায়াতের কান্না থামছে না। আফিম ইনায়াতের হাত টেনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলো। নিজের পাশের রুমটার দরজা খুলে ইনায়াতকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। ইনায়াতের হাত ছেড়ে কাবার্ড খুলে দেখিয়ে বললো,,
– এগুলো সব আফরার জামাকাপড়। এখান থেকে নিয়ে গোসল করে চেঞ্জ করে নাও। ওকে?? নিজেকে স্বাভাবিক করে নিচে আসো।
এই বলেই আফিম রুম থেকে বের হয়ে এলো। ইনায়াত খাটে ধুপ করে বসে পড়লো কাঁদতে কাঁদতে। ইরশাদ আর রানার কথা মনে পড়ছে তার খুব। তাহজিব তাদের কি অবস্থা করেছে কে জানে!! ইনায়াতের ভয় হচ্ছে এখন। লাবিবা আর জোসেফ তাকে ভুল বুঝবে না তো?? তাদের স্নেহ মায়া মমতা যা এতোদিন পেয়ে এসেছে। সব হারিয়ে ফেলবে না তো ইনায়াত?? আর আফিম??
– কে কি করবে জানিনা। বাট স্যারকে আমি একটু হলেও তো চিনেছি। আমার বিশ্বাস স্যার আমাকে ভুল বুঝবে না। উনি তো আমার পাশে থাকবেন বলেছেন। উনি আমাকে ভুল বুঝবেন না আমি জানি।
অদ্ভুত এক আশা আর ভরসা নিয়ে চোখের জল মুছে নিলো ইনায়াত। কিন্তু কেন?? কিসের এই বিশ্বাস আর ভরসা একটা চরিত্রহীন মানুষের জন্য?? আফিমের বিচ্ছিরি চরিত্র সম্পর্কে জানা আছে ইনায়াতের। তাহলে তার কি ভয় পাওয়া উচিত নয় নিজের ইজ্জত নিয়ে? দেখা যাক আগে আগে কি হয়!!
ইনায়াত চোখের জল মুছে কাবার্ডের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তখনই মাথায় ভেসে আসলো আফিমের বলা কথা।
– আফরা?? আফরা কে??
বিড়বিড়িয়ে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলো ইনায়াত। কিন্তু বেশিক্ষন সে প্রশ্নটা তার মাথায় ঘুরলো না। অনেকটা সময় থেকে থেকে কান্না করাতে চোখগুলো ব্যাথা করছে তার। একটা কালো জর্জেটের গাউন থ্রিপিস সেট নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো।
.
.
আফিম রুমে এসেই দ্রুত ফ্রেশ হয়ে নিলো। ইনায়াত নিচে যাবার আগে লাবিবা আর জোসেফকে সবটা জানাতে হবে তার। যাতে লাবিবা আর জোসেফ বুঝতে ভুল না করে কিছু। এসব ভাবতে ভাবতে ওয়াসরুমের দিকে যেতে গিয়েও থেমে গেলো আফিম। অনেকদিন বাদে আজকে আফরার রুমে ঢুকেছে। আফরার কথা মনে হতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো আফিমের।
– এতো জেদ তোর বোন?? তোকে দূরে রাখতে পারিনা বলেই তো সেদিন বকেছিলাম। তাই বলে এই ৩ সপ্তাহে একটা কল করলি না??
নিজেকেই নিজে বিড়বিড়িয়ে বললো আফিম। পরক্ষনেই মুখ ফুলিয়ে বললো,,
– ঠিক আছে!! আমিও তোর বড় ভাই। আমিও দেখি কার জেদ বেশি!!
ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো আফিম।
যে আফিমের ফ্রেশ হতে ৪০/৫০ মিনিট লেগেই যেতো। আজ সেই ছেলেই মাত্র ২০ মিনিটের মাথায় ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এসেছে দেখে ডাইনিং টেবিলে বসে থাকা লাবিবা আর জোসেফ হা হয়ে গেলো। দীপ আবারও চামচ ফেলে দেবার ভয়ে এবার চামচটা বুকপকেটে ঢুকিয়ে নিলো। আফিম এসে বসলো নিজের চেয়ার টেনে। লাবিবা,, জোসেফ আর দীপ উৎসুক চোখে তাকিয়ে আছে আফিমের দিকে সবটা জানতে।
– আমি জানি তোমাদের কৌতুহল হচ্ছে খুব। আমি সবটা বলছি। জাস্ট ভুল বুঝো না ইনায়াতকে!!
আফিম এক এক করে সবটাই খুলে বললো যা যা সে ইনায়াতের থেকে শুনেছে। লাবিবা,,,জোসেফ আর দীপ তো হা হয়ে গেলো একদমই। একটা মেয়ে এতোকিছু সহ্য করেছে?? কতোটা কষ্ট হয়েছে মেয়েটার নিজের আসল স্বত্তা লুকিয়ে এতোগুলো দিন কাটানোতে?? লাবিবার মনে পড়ে গেলো আফরার কথা। একবার আড়চোখে আফিমের দিকে তাকিয়ে দেখলো আফিম গম্ভীর মুখে বসে আছে। মুচকি হাসলো লাবিবা। একমাস হওয়ার আগেই যখন কাল হুট করে চলে আসবে আফরা,, তখন আফিম কতোটা বাচ্চামো করবে তা ভাবলেই হাসি পাচ্ছে তার।
– আশা করছি তোমরা ওকে ভুল বুঝবে না। প্লিজ মা,, প্লিজ বাবা!!
তখনই সিড়ি বেয়ে নেমে ডাইনিং টেবিলে কাছে এলো ইনায়াত। দীপের চোখ গেলো সবার আগে ইনায়াতের দিকে।
– ওয়াও ইনায়াত স্যার!!
দীপ হা করে তাকিয়ে রইলো। দীপের কথা শুনে সবাই ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালো ইনায়াতের দিকে। সবার মুখ হা হয়ে গেলো একদম। গুলুমুলু গোলাপী গোলাপী গাল,, ডাগর ডাগর চোখ,,, গোলাপী ঠোঁট,,, খুব আদুরি একটা মেয়ে দেখতে ইনায়াত। আফিমের চোখ ও ইনায়াতে স্থির। ভেজা চুলে সব মেয়েকেই স্নিগ্ধ লাগে। ইনায়াতকেও খুব পবিত্র আর মায়াময়ী লাগছে আফিমের। আফিম মূহুর্তেই ভ্রু কুঁচকে চোখ সড়িয়ে নিলো। অতিরিক্ত সুন্দরী মেয়েগুলো হয় মনের দিক দিয়ে নাহয় অন্য অভ্যেসের দিক দিয়ে খারাপই হয় বলে নিজেকে শাসাতে লাগলো রীতিমতো। লাবিবা উঠে ইনায়াতের কাছে গেলো। ইনায়াতের দুই গালে হাত রেখে কপালে চুমু খেলো।
– খুব আদুরি তুই মা!! একদম পুতুলের মতো!!
ইনায়াত চমকে উঠলো। সে তো ভাবছিলো লাবিবা আর জোসেফকে কিভাবে বোঝানো যায়। আর এখানে এদের এমন ব্যবহার যেন কিচ্ছু হয়নি। লাবিবা ইনায়াতের হাত টেনে এনে নিজের পাশের চেয়ারে বসালো। দীপ সবাইকে খাবার সার্ভ করে দিতে লাগলো। আফিম ইনায়াতের দিকে আর পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো খাচ্ছে। ইনায়াত খাচ্ছে না কিছুই। শুধুই চামচ নাড়ছে। তা দেখে লাবিবা বললো,,
– কি হলো মা?? খাচ্ছিস না কেন??
ইনায়াত চমকে তাকালো লাবিবার দিকে। আফিমের দিকে তাকাতেই আফিম চোখে চোখে ইনায়াতকে আস্বস্ত করলো যে সব ঠিক আছে। ইনায়াত মাথা নিচু করে নিলো। সব ঠিক থাকলেও তার যে অপরাধবোধ হচ্ছে খুব। মিনমিনে স্বরে ইনায়াত বললো,,
– সরি আন্টি,, সরি আংকেল। আমি সত্যিই হ্যাল্পলেস ছিলাম। আমি ইচ্ছে করে আপনাদের সাথে এমন অন্যায় করিনি। আপনাদের কাছে আমি অনেক আদর,, স্নেহ পেয়েছি। সব জায়গায় আপনারা আমাকে নিজের আরেক ছেলে বলে পরিচয় দিতেও দ্বিধা করেননি। আর আমি,,,
ইনায়াত চুপ হয়ে গেলো। চোখ বেয়ে পড়লো এক ফোঁটা জল। আফিম একবার সেদিকে তাকিয়ে আবারও নিজের খাওয়ারে মনোযোগ দিলো।
– ইনায়াত যেহেতু একটা মেয়ে। সেহেতু ওকে আমার থেকে দূরে তাড়াতে হবে। ওকে এখন ভালো মনে হচ্ছে। আবার পড়ে রূপ বদলাতেও পারে। সুন্দরী মেয়েরা সব পারে।
মনে মনে এসব ভাবলো আফিম।
– তো কি হয়েছে মা?? এতোদিন তোকে সবার কাছে ছেলে হিসেবে পরিচয় দিতাম। এখন মেয়ে হিসেবে পরিচয় দেবো।
ইনায়াত ঝট করে মাথা তুলে তাকালো জোসেফের কথা শুনে। জোসেফ মিষ্টি হেসে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে ইনায়াতের পাশের চেয়ারে বসলো।
– আমরা তোর সাথে আছি মা। আমরা দেখে নেবো ঐ তাহজিবের কি ব্যবস্থা করা যায়। তোর বাবাকেও ছাড়িয়ে আনবো। ততোদিন নাহয় আমাকে তুই ও আফরার মতোন বাপি বলে ডাকবি। কি?? ডাকবি না??
আফরা নামটা শুনে অবাক হলো ইনায়াত। এটা আবার কে তা ভাবতে লাগলো। আর এদিকে আফরা নামটা শুনেই মুখ ফুলিয়ে ফেললো আফিম। ধুপধাপ পা ফেলে উঠে গেলো সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে। খাবার বাদবাকিটা পড়ে রইলো প্লেইটে। সেদিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো লাবিবা। ইনায়াত কিছুই বুঝতে না পেরে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। জোসেফের একটা কল আসাতে সে উঠে চলে গেলো। ইনায়াত লাবিবার দিকে তাকালো কৌতুহলী চোখে। লাবিবা মৃদু হাসলো,,
– আফরা কে ওটাই ভাবছিস তো??
ইনায়াত মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো।
– খেয়ে আমার রুমে আয়। সব বলবো তোকে!!
.
.
লাবিবার রুমে বসে আছে ইনায়াত। লাবিবা আলমারি থেকে একটা ফ্যামিলি এলবাম বের করে ইনায়াতের পাশে বসলো।
– এটা আমাদের ফ্যামিলি এলবাম। আয় দুজনে দেখি। তারপরে আফরাকে নিয়ে বলছি।
এলবামের শুরুতেই লাবিবা আর জোসেফের সিঙ্গেল দুটো ছবি। পড়ের পৃষ্ঠায় লাবিবা আর জোসেফের কাপল ছবি। এরপরে দুয়েক পাতাতেও লাবিবা আর জোসেফের কাপল ছবি। এরপরের পাতা উল্টে ইনায়াত হা হয়ে গেলো। ছবিটা হাসপাতালে তোলা। খাটে শুয়ে থাকা লাবিবার হাতে একটি বাচ্চা। আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জোসেফের হাতেও একটা বাচ্চা। ইনায়াতকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে লাবিবা তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো।
– দুটো বাচ্চা দেখে অবাক হচ্ছিস?? এই যে আমার কোলে,, ওটা আফিম। আর জোসেফের কোলের বাচ্চাটা নীলা। আফিমের জমজ বোন।
ইনায়াতের কানের কাছে যেন বজ্রপাত হলো। সে তো জানতো আফিম বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। এমনকি পুরো পৃথিবীও তাই জানে। তাহলে এই নীলা কে??

হ্যালো!! নীলা কে,, নীলা কে?? প্রশ্নের অবসান পরের পর্বে হবে। সাথে থাকুন,, পাশে থাকুন ❤️ আর হ্যাঁ ভাই হ্যাঁ!! আমি হিন্দু 😑 একই প্রশ্ন আশা করি আর করবেন না।

চলবে,,,